ওয়াকিদ ইবন আবদিল্লাহ (রা)

নাম ওয়াকিদ, পিতা আবদুল্লাহ। বনী তামিম গোত্রের হানজালী ইয়ারবূয়ী শাখার সন্তান। জাহিলী যুগে খাত্তাব ইবন নুফাইলের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন। (তাবাকাত-৩/৩৯০, আল ইসাবা -৩/৬২৮)।

মক্কায় ইসলামী দাওয়াতের সূচনালগ্নে হযরত রাসূলে কারীম সা: হযরত আরকাম ইবন আবিল আরকামের বাড়ীতে প্রবেশের পূর্বেই ওয়াকিদ ইসলাম গ্রহণ করেন। হিজরাতের নির্দেশ আসার পর তিনি মদীনায় হিজরাত করেন এবং হযরত রিফায়া ইবন আবদিল মুনজিরের অতিথি হন। মদীনায় রাসূল সা: বিশর ইবন বারা ইবন মারুর এর সাথে তার মুওয়াখাত বা ভাতৃ সম্পর্ক কায়েম করে দেন। (তাবাকাত-৩/৩৯০)।

হযরত রাসূলে কারীম সা: মদীনায় হিজরাতের সতেরতম মাসটি ছিল রজব মাস। এ মাসে তিনি কুরাইশদের গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্য হযরত আবদুল্লাহ ইবন জাহাশের নেতৃত্বে ১২ মতান্তরে ৯ সদস্যের একটি বাহিনীকে ‘নাখলায়’ পাঠান। এতে ওয়াকিদ ইবন আবদিল্লাহও ছিলেন। তারা নাখলায় পৌঁছে ওঁত পেতে আছেন। এমন সময় কুরাইশদের একটি ছোট্ট বাণিজ্য কাফিলা দৃষ্টিগোচর হয়। দিনটি ছিল রজবের একেবারে শেষ দিন। আর রজব মাসটি আরবে যুদ্ধ বিগ্রহ নিষিদ্ধ চার মাসের একটি। সুতরাং এ সময় আক্রমণ করা যাবে কি না, এ বিষয়ে মুসলিম বাহিনীর সদস্যরা পরামর্শ করেন। অবশেষে আক্রমণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ওয়াকিদ ইবন আবদিল্লাহ (রা) তীর নিক্ষেপ করেন। সেই নিক্ষিপ্ত তীরে শত্রুপক্ষের আমর ইবনুল হাদরামী নিহত হয় এবং উসমান ও হাকাম নামে দুই ব্যক্তি বন্দী হয়।

যেহেতু রক্তপাতের ঘটনাটি সংঘটিত হয় হারাম মাসে এ কারণে কুরাইশরা রাসূলুল্লাহ সা: ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানা ধরণের প্রচারণা চালাতে থাকে। তারা বলে, মুহাম্মাদ সা: ও তার অনুসারীরা কি আবহমান কাল ধরে মেনে আসা হারাম মাসগুলির পবিত্রতা মানে না? এমনকি রাসূল সা: নিজেও ঘটনাটি মেনে নিতে পারছিলেন না। তিনি বাহিনীর লোকদের ডেকে বললেন, আমি তো তোমাদের যুদ্ধের অনুমতি দেইনি, তবে কেন তোমরা যুদ্ধ করলে? এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সূরা আল বাকারার নীচের আয়াতটি নাযিল হয়:

‘হে মুহাম্মাদ, মুশরিকরা তোমার নিকট ‘হারাম’ মাসে যুদ্ধ করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তুমি তাদেরকে বলে দাও এ মাসে যুদ্ধ করা বড় পাপের কাজ। কিন্তু আল্লাহর রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, আল্লাহর কুফুরী করা, মানুষকে মসজিদে হারামে ইবাদাত করা থেকে বিরত রাখা এবং সেখান থেকে তার অধিবাসীদের বের করে দেওয়া আল্লাহর নিকট এ মাসে যুদ্ধ অপেক্ষা অধিকতর পাপ কাজ। আর অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টি করা হত্যা অপেক্ষা গুরুতর পাপ। (সূরা ‍বাকারা-২১৭)।’
(আল ইসাবা-৩/৬২৮), আসাহুস সীয়ার-১২৮)।

যাই হোক, আমর ইবনুল হাজরামী একজন মুসলমানের হাতে নিহত প্রথম কাফির, উসমান ও হাকাম ইসলামের ইতিহাসের প্রথম দুই কয়েদি এবং কুরাইশ কাফিলার নিকট থেকে প্রাপ্ত জিনিস ইসলামের প্রথম গণীমত। (আসাহুস সীয়ার-১২৮)।

এই ঘটনার পর বনী ইয়ারবু গর্ব করে বলে বেড়াতো আমাদেরই একজন ইসলামের ইতিহাসে সর্ব প্রথম একজন মুশরিককে হত্যা করেছে। হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব কাব্য করে বলতেন: ‘নাখলায় আমরা আমাদের তীরগুলিকে ইবনুল হাদরামীর রক্ত পান করিয়েছি, যখন ওয়াকিদ যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়ে দেয়। (আল ইসাবা-৩/৬২৮)

নাখলার পর বদর, উহুদ, খন্দক সহ সকল যুদ্ধে তিনি অংশ গ্রহণ করেন। দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমারের খিলাফতকালের প্রথম দিকে তিনি ইনতিকাল করেন। তার কোন সন্তানাদি ছিল ‍না। হাদীসের গ্রন্থ সমূহে তার থেকে বর্ণিত দুই/একটি হাদীস দেখা যায়।

Print Friendly, PDF & Email

আমর ইবন সাঈদ ইবনুল আস (রা)

আবদুল্লাহ ইবন মাখরামা (রা)

Leave a Reply