আমর ইবন সাঈদ ইবনুল আস (রা)

আমরের ডাক নাম আবু উকবা। পিতা সাঈদ ইবনুল আস। কুরাইশ বংশের উমাইয়া শাখার সন্তান। মা বনী মাখযুমের কন্যা। আমর হযরত খালিদ ইবনুল ওয়ালীদের ফুফাতো ভাই। (উসুদুল গাবা-৪/১০৬)। (আল ইসাবা-২/৫৩৯)।

সাঈদ ইবনুল আসের ৫ ছেলে- খালিদ, আবান, সাঈদ, আবদুল্লাহ, ও আমর। আগে পরে তারা সকলে ইসলাম গ্রহণ করেন। যুবাইর ইবন বাককার বলেন: সাঈদ ইবনুল আসের ছেলে আবু উহায়হা সাঈদ ইবন সাঈদ তায়িফ অবরোধের সময় শাহাদাত বরণ করেন। আবদুল্লাহ ইবন সাঈদের পূর্ব নাম ছিল হাকাম। রাসূল সা: তা পরিবর্তন করে আবদুল্লাহ রাখেন। আমর ইবন ‍সাঈদ আজনাদাইনের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। খালিদ অত:পর আমর ইসলাম গ্রহণ করেন। ইবন ইসহাক বলেন, আমরের কোন সন্তানাদি ছিল না। সাঈদ ইবনুল আসের অন্য ছেলে আবান সব শেষে শেষে ইসলাম গ্রহণ করেন। ভাইদের বিশেষত: খালিদ ও আমরের ইসলাম গ্রহণে আবান দারুন ক্ষুব্দ হন। খালিদ, আমর ও আবান তিনজনই কবি ছিলেন। আবার তার দুই ভাই খালিদ ও আমর ইসলাম গ্রহণ করার পর তিরষ্কার করে একটি কবিতা লিখেন। খালিদ ও আমর কবিতায় তার জবাবও দেন। আল ইসাবা, সীরাতু ইবন হিশাম, উসুদুল গাবা প্রভৃতি গ্রন্থে সেই কবিতার কিছু অংশ সংকলিত হয়েছে। আবান তার ভাইদের তিরষ্কার করে যে কবিতাটি রচনা করেন তার একটি পংক্তি এই রকম: ‘হায়! আমর ও খালিদ দ্বীনের (ধর্ম) ব্যাপারে যে কেমন মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে তা যদি ‘জাবীরা’র মৃত ব্যক্তি দেখতো!

তাদের পিতা সাঈদ ইবনুল আস ‘জাবীরা’ নামক স্থানে সমাহিত ছিল। এখানে সেই দিকেই ইংগিত করা হয়েছে। আমর কবিতায় জবাব দেন। তার একটি পংক্তি এমন: এখন ঐ মৃতদের কথা ছেড়ে দাও, যারা তাদের পথে চলে গেছেন। এখন সেই সত্যের দিকে এস যার সত্য হওয়াটা একেই সুস্পষ্ট।(আল ইসাবা-২/৫৩৯)। সীরাতু ইবন হিশাম-২/৩৬০)।

খালিদ ইবন সাঈদের হাবশায় হিজরাতের দুই বছর পর হাবশাগামী দ্বিতীয় দলটির সাথে আমর ইবন সাঈদ স্ত্রী ফাতিমা বিনতু সাফওয়ান সহ হাবশায় হিজরাত করেন। ফাতিমা বিনতু সাফওয়ান হাবশায় ইনতিকাল করেন। (সীরাতু ইবন হিশাম-২/ ৩৬০)। আর আমর হাবশা থেকে মুসলিম কাফিলার সাথে জাহাজ যোগে খাইবার যুদ্ধের সময় মদীনায় পৌঁছেন। মদীনায় আসার পর মক্কা বিজয় সহ হুনাইন, তায়িফ, তাবুক, প্রভৃতি অভিযানে তিনি রাসূলুল্লাহর সা: সাথে যোগ দেন।

হযরত রাসূলে কারীম সা: সাঈদের তিন ছেলে আবান, খালিদ ও আমরকে তিন অঞ্চলের শাসক নিয়োগ করেন। খালিদ ইয়ামন, আবান বাহরাইন এবং আমর মদীনার পশ্চিম অঞ্চল তথা তাবুক, খাইবার, ফিদাক ইত্যাদির শাসক ছিলেন। তারা সকলে রাসূলুল্লাহর সা: ইনতিকাল পর্যন্ত অতি দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। হযরত রাসূলে কারীম সা: এর ওফাতের পর তারা মদীনায় চলে আসেন। হযরত আবু বকর (রা) খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের পর সকলকে তাদের পূর্ব পদে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন: শাসন কাজ পরিচালনার জন্য আপনাদের থেকে অধিকতর হকদার ব্যক্তি আমি আর কাউকে দেখি না। (আল ইসাবা-২/৫৩৯)।

কিন্তু সাঈদ ইবনুল আসের ছেলেরা খলীফার এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন এই বলে: আমরা রাসূল সা: এর পরে আর কারও আমিন বা শাসক হব না।

হযরত আবু বকর খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের পর সিরিয়ায় রোমানদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। বিশিষ্ট সাহাবীদের একটি বৈঠকে এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা ও মতামত গ্রহণ করা হয়। একে একে সবাই মত প্রকাশ করছেন, আবার অনেকে নীরব রয়েছেন। এক সময় হযরত উমার (রা) সকলকে উতসাহিত করার উদ্দেশ্যে বলেন: যদি আশু ফল লাভের সম্ভাবনা দেখা যেত অথবা সফর নিকটবর্তী হতো, শুধু তাহলেই কি আপনারা বেরুতেন? উমারের (রা) এ বক্তব্যে আমর ইবন সাঈদ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, আপনি মুনাফিকদের সম্পর্কে প্রয়োগকৃত দৃষ্টান্ত আমাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলেন? আপনি নিজে চুপ করে বসে আছেন কেন? আপনিই প্রথম শুরু করুন না। এ পর্যায়ে উমারের সাথে তার বেশ কথা কাটাকাটি হয়। অত:পর খলীফা আবু বকর (রা) বলেন, আসলে উমারের বক্তব্যের উদ্দেশ্য হলো আপনাদেরকে অনুপ্রাণিত ও উতসাহিত করা। সাথে সাথে আমরের ভাই খালিদ উঠে দাড়ান এবং খলীফার বক্তব্য সমর্থন করে এক ভাষণ দেন। এ ভাবে বিষয়টির মীমাংসা হয়। (হায়াতুস সাহাবা-১৪৪০)

শাসনকর্তার পদ প্রত্যাখ্যান করে আমর একজন সাধারণ মুজাহিদ হিসাবে সিরিয়া অভিযানে যোগদেন। হিজরী ১৩ সনে আজনাদাইনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তিনি অত্যন্ত বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন। মুসলিম বাহিনীর একটু দূর্বলতা দেখলেই তিনি চিতকার করে নানা ভাবে মনোবল দৃঢ় করার চেষ্ঠা করেন। একবার অত্যন্ত আবেগের সাথে বলেন, যুদ্ধের ময়দানে আমি আমার সাথীদের দূর্বলতা মোটেই দেখতে পারিনে। এখন আমি নিজেই ঢুকে পড়বো। এ কথা বলে তিনি শত্রু বাহিনীর মধ্যভাগের ব্যুহ ভেদ করে ভেতরে চলে যান এবং অত্যন্ত দু:সাহসের সাথে লড়তে লড়তে শাহাদাত বরণ করেন। যুদ্ধের শেষে তার লাশ কুড়িয়ে দেখা গেল অসংখ্য আঘাতে সারা দেহ ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। গুণে দেখা গেল মোট ত্রিশটি চিহ্ন। অবশ্য ইবন ইসহাক ও মূসা ইবন উকবার মতে আমর ‘মারজ আস সাফার’ যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেন। (আল ইসাবা-২/৫৩৯)।

আবু আহমাদ ইবন জাহাশ (রা)

ওয়াকিদ ইবন আবদিল্লাহ (রা)

Leave a Reply