মুআইকিব ইবন আবী ফাতিমা (রা)

মুআইকিব ছিলেন দাওস গোত্রের সন্তান। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে তিনি দাসে পরিণত হয়ে মক্কার সাঈদ ইবনুল আসের নিকট উপনীত হন। (আনসাবুল আশরাফ-১/২০০)।

অন্য একটি বর্ণনামতে তিনি আযদ গোত্রের সন্তান এবং মক্কার বনী আবদি শামসের হালীফ বা চুক্তিবদ্ধ ছিলেন। ইসলামী দাওয়াতের সূচনা পর্বেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং হাবশাগামী দ্বিতীয় দলটির সাথে হাবশায় হিজরাত করেন। হাবশা থেকে খাইবার যুদ্ধের সময় মদীনায় আসেন। একটি বর্ননামতে তিনি আবু মূসা আশআরীর সাথে মক্কা থেকে মদীনায় আসেন এবং খাইবার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। আবার কোন কোন বর্ণনায় তার বদর যুদ্ধ ও বাইয়াতে রিদওয়ানে যোগদানের কথা পাওয়া যায় এই বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায়, তিনি খাইবার যুদ্ধের পূর্বে মদীনায় আসেন। তাদের মতে তিনি হাবশায় হিজরাত করেননি। তবে ওয়াকিদী বলেন: যারা বলে তিনি হাবশায় হিজরাত করেছিলেন, আমি তাদের কাছে শুনেছি, ‍মুআইকীব হাবশা থেকে জাফর ইবন আবী তালিবের সাথে সরাসরি মদীনায় চলে যান। (আনসাবুল আশরাফ-১/ ২০০)।

তবে এ কথা সঠিক যে তিনি খাইবার যুদ্ধের পর মদীনায় আসেন। বদর ও খাইবারে তিনি অংশগ্রহণ করতে পারেননি। ইবন সাদও তাকে ঐ সকল সাহাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন যারা সূচনা পর্বে ইসলাম গ্রহণ করলেও বদরে যোগদানের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

হযরত রাসূলে কারীমের জীবদ্দশায় নবুওয়াতের ‘খাতাম’ বা মোহর তারই দায়িত্বে থাকতো। এ কারণে রাসূল সা: ওফাতের পর হযরত আবু বকর ও হযরত উমার (রা) তাকে বিশেষ সম্মান দেখাতেন। উপরোক্ত দুজনের খিলাফতকালে অর্থ বিষয়ক সকল কর্মকান্ড দেখাশুনা ও বাইতুল মালের রক্ষকের দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন।

খলীফা হযরত উমার সা: তাকে খুব ভালোবাসতেন। শেষ বয়সে তিনি কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হন। খলীফা তার চিকিৎসার সব রকম চেষ্ঠা করেন। কোথাও কোন ভাল চিকিৎসকের সন্ধান পেলে তাদেরকে ডেকে তিনি তার চিকিৎসা করাতেন। কিন্তু কোন উপকার হয়নি। তবে ভবিষ্যতে আরও বেড়ে যাওয়ার আশংকা দূর হয়। মানুষ সাধারণত কুষ্ঠ রোগীদের সাথে ওঠা বসা ও পানাহার পরিহার করে চলে; কিন্তু হযরত উমার (রা) তাকে সংগে নিয়ে একই দস্তরখানে খেতে বসতেন। একবার খলীফা উমার (রা) ও তার সঙ্গীদের রাতের খাবার দেওয়া হলো। খলীফা ঘর থেকে বেরিয়ে মুআইকিব ইবন আবী ফাতিমাকে তাদের সাথে খাবারের জন্য ডাকলেন। উপস্থিত লোকেরা ভীত হয়ে পড়লো। উমার (রা) মুআইকিবকে বললেন: তুমি আমার কাছে বস। আল্লাহর কসম, তোমার ছাড়া এ রোগ অন্য কারও হলে আমি তার সাথে এক থালায় খেতাম না। তুমি তোমার দিক থেকে খুশীম খাও। মুআইকিব তাদের সাথে বসে এক থালায় আহার করেন। (হায়াতুস সাহাবা-২/৪৫৮)। অন্য একটি বর্ণনামতে উমার বলেন: সে যদি রাসূলুল্লাহর সাহাবী না হতো আমি তার সাথে খেতাম না। (আনসাবুল আশরাফ-১/২০০)।

খলীফা হযরত উমারের (রা) পর খলীফা হযরত উসমান (রা) তার প্রতি একই রকম আচরণ করতে থাকেন। রাসূল সা: মোহর শেষ পর্যন্ত তারই জিম্মায় ছিল। এ মোহরটি তারই হাত থেকে ‘বীরে মাউনা’ বা মাউনা নামক কূপে পড়ে যায়। যে বছর মোহরটি পড়ে যায় সেই বছরের শেষ দিকে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। বালাজুরী বলেন: খলীফা উসমানের যুগে যে বছর আফ্রিকা অভিযান চালানো হয় সেই বছর তিনি ইনতিকাল করেন। (আনসাবুল আশরাফ-১/২০০)

ইতিহাসে মুহাম্মাদ ইবন মুয়াইকিব নামে তার এক পুত্রের সন্ধান পাওয়া যায়। তিনি তার পিতা মুআইকিব থেকে হাদীসও বর্ণনা করেছেন।

শিক্ষার ক্ষেত্রে তিনি এমন কোন বিশেষ ব্যক্তি ছিলেন না। তবে লেখাপড়ায় তার দক্ষতা ছিল। হযরত উমার (রা) যখন নিজের সম্পত্তি ওয়াক্বফ করেন তখন সেই ওয়াকফ নামাটি মুআইকিব রচনা করেন। রাসূলুল্লাহর সা: হাদীসেও তিনি ছিলেন পারদর্শী। হাদীস গ্রন্থসমূহে তার থেকে বর্ণিত বেশ কিছু হাদীস পাওয়া যায়। তার মধ্যে দুটি মুত্তাফাক আলাইহি অর্থাত বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন এবং একটি ইমাম মুসলিম এককভাবে বর্ণনা করেছেন।

হিশাম ইবনুল আস (রা)

আবান ইবন সাঈদ ইবনুল আস (রা)

Leave a Reply