Home

  • খিলাফাহ কিভাবে মুসলিম বিশ্বে শিল্পায়ন ঘটাবে?

    খিলাফাহ কিভাবে মুসলিম বিশ্বে শিল্পায়ন ঘটাবে?

    ভূমিকা

    খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজ করতে গিয়ে আমরা প্রায়ই যে প্রশ্নটির সম্মূখীন হই তা হলো, খিলাফাহ কিভাবে এই একবিংশ শতকে ইউরোপ ও আমেরিকার সাথে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকবে? মুসলমানদের মধ্যে এ ধারণা প্রবল যে বর্তমান পরাশক্তিগুলো শুধু সামরিকভাবেই নয় বরং অর্থনৈতিকভাবেও খুবই শক্তিশালী। উম্মাহর মধ্যে প্রচলিত এ ধারণার কারণে ‘খিলাফাহ শুধুমাত্র স্বপ্ন… আজকের দুনিয়ায় এর বাস্তবায়ন কখনোই সম্ভব নয়’ এমন বোধ অনেকাংশেই শক্তিশালী হয়েছে।

    আমরা যদি উম্মাহকে খিলাফতের প্রয়োজনীয়তা তথা মুসলিম বিশ্বের যাবতীয় সমস্যা মোকাবেলায় খিলাফতের অপরিহার্যতার বিষয়টি বোঝাতে চাই তাহলে শুধুমাত্র ইসলামী শরীয়াহর দলীলই সব সময় যথেষ্ট নয়। উম্মাহর আস্থা অর্জনের জন্য আমাদেরকে খিলাফত কিভাবে বাস্তবে মুসলিম বিশ্বের সমস্যাগুলোর সমাধান করবে এবং সেই সাথে বর্তমান পরাশক্তিগুলোকে মোকাবেলা করে মাথা উঁচু দাঁড়িয়ে থাকবে সেই পরিকল্পনার কথাও জনগণকে জানাতে হবে।

    আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় খিলাফতের সামরিক শক্তির আলোচনা নয় বরং আজ আমরা খিলাফতের শিল্প ও অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে চিন্তা-ভাবনা উপস্থাপন করবো ইনশাআল্লাহ।

    আমরা যদি শিল্পায়নের মতো একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয় নিয়ে অর্থবহ আলোচনা করতে পারি তাহলে তা সংশয়বাদীদেরকে এমন ধারণাও দিতে পারে যে খিলাফত শুধুমাত্র শিল্পের প্রসার ঘটাবে না বরং আল্লাহর অনুগ্রহ থাকলে বিশ্বের তাবৎ জাতিসমূহের উপরেও নিজের অবস্থানকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।

    শিল্পায়ন বলতে কী বোঝায়?

    আজকের মুসলিম বিশ্ব শিল্পন্নোত দেশগুলো থেকে অবশ্যই অনেকদূর পিছিয়ে। যদিও পশ্চিমা দেশগুলো এখন থেকে দেড়শ দুইশ বছর আগেই শিল্পের প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে কিন্তু মুসিলম দেশগুলো এখনও প্রায় প্রাথমিক পর্যায়ে রয়ে গেছে এবং অনেকাংশেই উন্নত দেশগুলোর উপর নির্ভরশীল থেকে গেছে। তবে আলোচনার শুরুতে শিল্পায়ন তথা শিল্পোন্নত অর্থনীতি বলতে কি বোঝায় তা ব্যাখ্যা করা যাক। বাস্তবে যখন কোন অর্থনীতি ম্যানুফ্যাকচারিংকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে এবং ম্যানুফ্যাকচারিংই অর্থনীতির অন্য সেক্টরগুলোর চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে তখন সেই অর্থনীতিকে আমরা শিল্পোন্নত অর্থনীতি হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারি। আর ম্যানুফ্যাকচারিং বলতে কাঁচামালকে প্রক্রিয়াজাতকরণ করে ব্যবহার্য পণ্যে পরিণত করা বোঝায়। উদাহরণস্বরুপ আমরা বৃটিশ সম্রাজ্যের কথা বলতে পারি। ম্যানুফ্যাকচারিং ছিল তার অর্থনীতির মূল বিষয়। জাহাজ নির্মান, গোলাবারুদ উৎপাদন, খনিজ আহরনে তাদের দক্ষতা তাদেরকে পরাশক্তিতে পরিণত করেছিল। অর্থনীতির এই বৈশিষ্ট্যের কারণে তারা সহজেই যে কোন স্থানে যুদ্ধ সূচনা এবং উপনিবেশ স্থাপন করতে পারতো। শান্তিকালীন সময়ে এসব শিল্পকারখানা অসামরিক কাজে ব্যবহৃত হতো।

    একটি জাতি যখন বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনে দক্ষতা অর্জন করে এবং তার শিল্পভিত্তি মজবুত থাকে তখনই সেই জাতি স্বনির্ভর হয় এবং অন্য জাতির নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়। কিন্তু শিল্পায়ন না ঘটলে একটি জাতিকে অবশ্যই তার প্রতিরক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে অন্য জাতির উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। আর এই অবাঞ্ছিত বাস্তবতাতেই আজকের মুসলিম বিশ্ব নিমজ্জিত।

    কেন মুসলিম বিশ্বে শিল্পের প্রসার ঘটেনি?

    যে কোন নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকই মুসলিম বিশ্বের বর্তমান বাস্তবতায় হতাশ এবং অবাক হবেন। কেননা বিশাল খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডার নিয়েও এই দেশগুলো দরিদ্র এবং শিল্পের প্রসার ঘটাতে দারুনভাবে ব্যর্থ। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, ইরাক একাই পৃথিবীর মোট তেল রিজার্ভের ১০% এর অধিকারী। তেমনিভাবে ক্ষুদ্র কুয়েতও পৃথিবীর মোট তেলের ১০ শতাংশের মালিক। মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ মুসলিম বিশ্বের মানচিত্রের সর্বত্র একই দশা। সব জায়গাতেই চোখে পড়বে অব্যবস্থাপনা ও ভ্রান্তনীতির শত-সহস্র উদাহরণ।

    সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য এবং নীতি না থাকায় – মুসলিম দেশগুলোর শাসকরা সব সময়ই অদূরদর্শী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যস্ত। আর এ ধরণের প্রবণতা শুরু হয়েছে সেই ১৯২৪ সালে খিলাফত ধ্বংসের সময় থেকেই।

    তুরস্কের মধ্যে যে সম্ভবনা ছিল তা বিকশিত হয়নি বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এর বিতর্কিত এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত নীতি বাস্তবায়নের কারণে। তেমনি পাকিস্তানও এমনভাবে বিশ্বব্যাংকের নীতিকে বাস্তবায়ন করছে, যার ফলাফল হলো পাকিস্তান টেঙ্টাইল পণ্য রপ্তানি করছে ঠিকই কিন্তু তার শিল্পভিত্তি গড়ে উঠছে না। একই ঘটনা ঘটছে বাংলাদেশেও। আরব দেশগুলিও পণ্য উৎপাদনের জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ কারখানা গড়ে তুলতে পারেনি। এমনকি তেল উৎপাদনের জন্য যেসব স্থাপনা গড়ে উঠেছে সেগুলোও মূলত পশ্চিমা তেল কোম্পানিগুলোরই অবদান। আর পুঁজিবাদী এই কোম্পানিগুলো এ কাজটি করেছে মূলত অপরিশোধিত তেল উৎপাদন এবং তা রিফাইনিং এর ক্ষেত্রে তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য। এছাড়া তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোকে রাজনৈতিকভাবে বশে রাখাটাও তাদের এ সেক্টরে বিনিয়োগ করার অন্যতম উদ্দেশ্য। ২০০৬ সালে মধ্যপ্রাচ্য পৃথিবীর মোট অপরিশোধিত তেলের ৩১.২ শতাংশ উৎপাদন করে। কিন্তু এসময় তারা মাত্র ৩.২ শতাংশ তেল পরিশোধন করতে সক্ষম হয়।

    ইন্দোনেশিয়া পুরো ৮০ এবং ৯০ দশক জুড়ে অর্থনৈতিক উদারীকরণের নীতি বাস্তবায়ন করে এবং বিদেশী বিনিয়োগের জন্য সবকিছু উন্মুক্ত করে দেয়। কিন্তু তার ফল দাঁড়ায় ১৯৯৭ এর এশিয়া সংকট যা ইন্দোনেশিয়া এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আজ ইন্দোনেশিয়া ১৪০ বিলিয়ন ডলার ঋণের জালে বন্দী।

    মুসলিম দেশগুলো রাষ্ট্রীয় জীবনে যে সব নীতি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে তার বেশিরভাগই পরস্পরবিরোধী, যার কারণে রাষ্ট্রগুলোর পক্ষে জনগণের দৈনন্দিন প্রয়োজন পূরণ করা কোনভাবেই সম্ভব হয়ে উঠছে না। অর্থনৈতিক টানাপোড়ন এখানে এত প্রকট যে জনগণ শুধুমাত্র রুটি-রুজির ধান্ধা করতে গিয়েই দিন পার করে ফেলে; রাষ্ট্রকে পরাশক্তিতে পরিণত করার জন্য কাজ করার সময় তাদের হয়ে ওঠেনা। এজন্য কেউ যদি মুসলিম দেশগুলোকে শক্তিশালী তথা শিল্পোন্নত করতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই জনগণকে তার (শিল্পোন্নয়নের) প্রয়োজনীয়তা বুঝাতে হবে এবং এজন্য যে যে ত্যাগ স্বীকারের প্রয়োজন হবে সে ব্যাপারে জনগণকে রাজী করাতে হবে।

    ২য় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ভোগ্যপণ্য বিপননের অর্থনীতিকে পাশে সরিয়ে রেখে সমরাস্ত্র উৎপাদন ভিত্তিক শিল্পের প্রসার ঘটানোর নীতিতে মার্কিন জনগণের সহযোগীতা এক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত।

    সে সময়কার মার্কিন সরকার যুদ্ধ জাহাজ ও এরোপ্লেন নির্মান এবং সমরাস্ত্র উদ্ভাবন ও উৎপাদনের জন্য বিশাল বাজেট বরাদ্দ করেছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এর মাধ্যমে জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে প্রসারিত করা। যুদ্ধকেন্দ্রীক এই শিল্পায়ন দ্রুত মার্কিন অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করলো। রাতারাতি বেকারত্ব কমে গেলো। ১৯৪১ এর ডিসেম্বরে যখন আমেরিকা দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে জড়িত হলো তখন অর্থনীতির প্রত্যেকটি সেক্টর যুদ্ধের যোগান দিতে সক্ষম হলো। সে সময় এত দ্রুত শিল্প প্রবৃদ্ধি ঘটলো যে আমেরিকাতে বেকারত্বের বদলে শ্রমিক সংকট দেখা দিলো। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জনগণ ও শিল্পকে ক্রমাগত উৎসাহ দেয়ার ব্যাপারটিও সমান তালে চলতে থাকলো। ফলে ত্রিশ দশকের শেষাংশে মার্কিন ওয়ার ইন্ডাষ্ট্রি ৩ লক্ষ এরোপ্লেন, ৫ হাজার কার্গো জাহাজ, ৬০ হাজার ল্যান্ডিং ক্র্যফট এবং ৮৬ হাজার ট্যাঙ্ক তৈরী করে ফেলল। অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় মার্কিন অর্থনীতিতে নারীশ্রম সবচেয়ে বেশি পরিমাণে নিয়োজিত হলো।

    যুদ্ধ সরঞ্জাম তৈরীতে মার্কিন সরকারের এই বিশাল কর্মযজ্ঞের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করলো মার্কিন ব্যবসায়ীরা। দশক ধরে চলমান মন্দাকে উপেক্ষা করে তারা বড় বড় বিনিয়োগ করলো। ফলে বিশাল শ্রমবাজার সৃষ্টি হলো। জনগণ, পুঁজিপতি শ্রেণী এবং রাষ্ট্র সবাই একসাথে কাজ করে যুদ্ধের প্রয়োজন মেটাতে লাগলো। এই প্রথমবারের মত মার্কিন জনগণ রেশনিং ব্যবস্থা মেনে নিলো। যুদ্ধ অর্থনীতির একটি স্বাভাবিক নিয়ম হলো এখানে খরচ নয় বরং দ্রুত ও নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহই প্রাধান্য পেয়ে থাকে। ফলে কম সময়ে অনেক বেশী শ্রমের প্রয়োজন হয়। মার্কিন অর্থনীতিতেও তাই হয়েছিল, এমনকি রাস্তার ভিক্ষুক পর্যন্ত চাকরির বাজারে লাইন দিয়েছিল। সামরিক বাহিনীতে নিয়োজিত হয়েছিল ১ কোটি ১০ লক্ষ সক্ষম মানুষ। তাদের অনেকেই এর আগে বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত ছিলো; তাদের শুণ্যস্থান পূরণের জন্যও নতুন শ্রমিকের প্রয়োজন পড়লো। ওয়ার ইন্ডাষ্ট্রির টানে কৃষি, খনিজ উত্তোলণ, শিক্ষা-সংস্কৃতি সব জায়গায় নবগতির সঞ্চার হলো। যোগাযোগ ব্যবস্থায় রাতারাতি বিপ্লব সাধিত হলো, শ্রম বাজার ও সামগ্রিক বিপনন ব্যবস্থাও প্রভূত উন্নতি সাধন করলো। শিল্পে ও বাণিজ্যে দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজনে শিক্ষা ও সংস্কৃতির অঙ্গনকে দ্রুত বিকশিত হতে হলো।

    এসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সেরা বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের চিন্তাকে ব্যাপকভাবে কাজে লাগিয়েছিল। মার্কিন সরকার বুঝতে পেরেছিল তারা যদি পারমানবিক বিক্রিয়ার সূত্রকে কাজে লাগিয়ে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক অস্ত্র উদ্ভাবনে সক্ষম হয় তাহলে তা তাদেরকে কৌশলগত প্রাধান্য এনে দিতে পারবে। পরাশক্তিগুলোর সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের প্রতিযোগীতার এ পর্যায়েই ঐতিহাসিক ‘ম্যানহাটন’ প্রকল্পের জন্ম হলো।

    মুসলিম বিশ্বের বর্তমান ব্যর্থতা দিয়ে বোঝা যায় প্রাকৃতিক সম্পদের কী পর্যায়ের অব্যবস্থাপনা এখানে চলছে। আমাদের বর্তমান অর্থনৈতিক দূরবস্থা মূলতঃ দুটি কারণে সৃষ্ট; প্রথমত: শাসকদের আদর্শিক শূণ্যতা, দ্বিতীয়ত: আদর্শিক শূণ্যতার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অদূরদর্শীতা।

    যতদিন পর্যন্ত মুসলিম বিশ্বে এ দুটি বিষয়ে পরিবর্তন না ঘটবে ততদিন পর্যন্ত যত সম্পদই থাকুক না কেন আমরা রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উভয়ভাবেই পশ্চিমা শক্তিগুলোর আধিপত্যের শিকার হতে থাকবো। কোন শক্তিশালী আদর্শিক ভিত্তি না থাকলে কিসের উপর আমরা আমাদের অর্থনীতিকে গড়ে তুলবো? যখন কোন সুনির্দিষ্ট আদর্শিক ভিত অনুপস্থিত থাকে তখন রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায় যেসব নীতি ও কৌশল গ্রহণ করা হয় তা পরস্পর সাংঘর্ষিক হতে বাধ্য এবং এমতাবস্থায় কোন সুনির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে অর্থনীতিকে পরিচালনা করা কখনই সম্ভব নয়।

    নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে খিলাফতের শিল্পায়ন নীতি সাজানো উচিত:

    ১. প্রতিরক্ষা কেন্দ্রীক অর্থনীতি গড়ে তোলা:

    কোন অর্থনীতি যে সেক্টরে বেশি গুরুত্ব দেয় তার ভিত্তিতেই সে অর্থনীতির চরিত্র নির্ধারিত হয়। সেই সেক্টরটিই অন্যান্য সেক্টরের জন্য চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় ১৯৮০র দশক পর্যন্ত বৃটেনের অর্থনীতি ছিল মূলতঃ ম্যানুফ্যাকচারিং কেন্দ্রীক। কিন্তু ৮০র দশক থেকে সেখানে সেবাখাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে বৃটেনের অধিকাংশ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বিদ্যুৎ, পানি, পয়নিস্কাশন, টেলি কম্যুনিকেশন, তথ্যপ্রযুক্তি, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, এন্টারটেইনমেন্ট ইত্যাদি সেবাখাতকে ঘিরে আবর্তিত। এসব সেবাখাতের প্রয়োজনেই অন্যান্য অর্থনৈতিক সেক্টর নিজেকে গড়ে তুলছে। কিন্তু খিলাফতের অর্থনীতি হবে প্রতিরক্ষাশিল্প কেন্দ্রীক অর্থনীতি। উন্নত প্রতিরক্ষা কাঠামো গড়ে তোলা ও তার ক্রমাগত প্রবৃদ্ধি ও আধুনিকায়নই হবে অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। এধরণের অর্থনীতি যে শুধুমাত্র কর্মসংস্থান ও সম্পদ সৃষ্টি করবে তা নয় বরং বৈরী পরাশক্তিগুলোর আগ্রাসী পরিকল্পনা থেকেও খিলাফতকে রক্ষা করবে।

    প্রতিরক্ষা কেন্দ্রীক অর্থনীতির অপরিহার্য করণীয় হলো সমরাস্ত্র তৈরীর কারখানার পাশাপাশি সাপোর্ট ইন্ডাষ্ট্রি হিসেবে স্টীল, লোহা, কয়লা, যানবাহন নির্মান, খনিজ উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ইত্যাদি শিল্প গড়ে তোলা।

    রাষ্ট্রকে শিল্পোন্নত করতে হলে আরেকটি বিষয় প্রয়োজন আর তা হলো এমন একটি ফোরাম গড়ে তোলা যারা সুনির্দিষ্টভাবে শিল্পপতিদেরকে নিয়ে কাজ করবে এবং সব সময় তাদেরকে উৎসাহ যোগাবে। ভারী শিল্পের প্রয়োজনে সাপোর্ট ইন্ডাষ্ট্রি গড়ে তোলার কাজটি অনেকাংশেই শিল্প উদ্যোক্তাদেরকে করতে হবে এবং এক্ষেত্রে তাদেরকে বিশেষ সুবিধা প্রদান করার সুনির্দিষ্ট রাষ্ট্রীয় পলিসি থাকতে হবে। দরকার হলে লোহা, কেমিক্যাল ইত্যাদি শিল্পের জন্য উদ্যোক্তাদেরকে বিনামূল্যে সরকারী জমি বরাদ্দ দিতে হবে। খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও অন্যান্য কেমিক্যাল নিস্কাশনের জন্য যৌথ বিনিয়োগের নীতি গ্রহণ করা যেতে পারে; যেসব শিল্প রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তায় সরাসরি অংশগ্রহণ করছে তাদের ক্ষেত্রে কর রেয়াত ও ঋণ প্রদানসহ বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করতে হবে।

    ১৯৫২ সালে যখন জাপানে মার্কিন দখলদারিত্বের অবসান ঘটলো তখন জাপান ঠিক এ ধরণের নীতি গ্রহন করেছিল। উত্তর কোরিয়া পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া কমিউনিজমের হুমকি মোকাবেলায় জাপান তখন তার সেরা ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের কাজে লাগায়। আর স্বাভাবিকভাবেই এক্ষেত্রে তারা মার্কিনীদের কৌশলগত ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পেয়েছিল।

    শিল্পবিকাশের সুযোগ সৃষ্টির জন্য তখনকার জাপান সরকার অংশীদারী ব্যবসার শর্তসমূহ শিথিল করে এবং বড় বড় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট গড়ে তোলার অনুমোদন দেয়। সেসময় যে সব বিজনেস হাউসের জন্ম হয়েছিল এখনও তারা জাপানের অর্থনীতির নেতৃত্ব দিচ্ছে। বড় বড় শিল্পপতিরা তখন রাষ্ট্রের পরিকল্পনা পর্যালোচনা করে বুঝেছিল যে রাষ্ট্রের নীতি অনুযায়ী বিনিয়োগ করলে তারা স্বল্প সময়েই বড় পুঁজি সৃষ্টি করতে পারবে। এদিকে মার্কিনীরাও সেসময় জাপানের কাছ থেকে সামরিক রসদ কেনা শুরু করে, ফলে বিশ্ব বাজারে জাপানী পণ্যের বিশাল চাহিদা সৃষ্টি হয়। শিল্প স্থাপনের এই কর্মযজ্ঞের কারণে অর্থনীতিতে সম্পদের প্রবাহ বেড়ে যায় এবং অনেক বিনিয়োগকারী কৃষি এবং টেক্সটাইলের মতো মন্থর প্রকৃতির অর্থনৈতিক কর্মকান্ড থেকে পুঁজি সরিয়ে এনে অত্যাধুনিক কলকারখানা গড়ে তোলে।

    এভাবে উদ্যমী বিনিয়োগকারীদের প্রতিযোগীতামূলক অংশগ্রহণের ফলে জাপানের মন্থর প্রকৃতির শিল্পসমূহ এক সময় অত্যাধুনিক যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ তৈরীর শিল্প দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যায়। ১৯৭০ সাল নাগাদ জাপানের শিল্পপণ্যের তালিকার প্রথম দিকে স্থান করে নেয় রঙিন টিভি, এসি, পেট্রোকেমিকেলের মতো অনেক উন্নত প্রযুক্তির পণ্য যার কোন কোনটি এর ২০ বছর আগে জাপানের মানুষ চোখেই দেখেনি।

    অনুরূপ নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে খিলাফত ব্যক্তিমালিকানাধীন পুঁজিকে রাষ্ট্রের পরিকল্পনার সাথে সংযুক্ত করবে এবং প্রধান প্রধান শিল্পপতিদেরকে রাষ্ট্রের সমৃদ্ধির জন্য ঐক্যবদ্ধ করতে সচেষ্ট থাকবে। আমাদের এ কথা মনে রাখতে হবে যে এমনকি আজকের দুঃখজনক বাস্তবতায়ও মুসলিম বিশ্বে ধনাঢ্য শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীর কোন অভাব নেই। রাষ্ট্রের পরিকল্পনার মধ্যে বড় অর্থনৈতিক লাভের সম্ভাবনা দেখলে আমাদের বর্তমান সম্পদশালীরাও কৌশলগত শিল্পে বড় বিনিয়োগে অবশ্যই উৎসাহিত হবে। এছাড়া পুঁজি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তাদেরকে যদি লাভের পাশাপাশি দেশ ও জনগণের কল্যাণের বিষয়টিও বোঝানো যায় তাহলে তাদের উৎসাহ ও উদ্যাম নিঃসন্দেহে আরো বৃদ্ধি পাবে।

    ২. রাজনৈতিক আকাংখা:

    মুসলিম বিশ্ব শিল্পায়নের দিক থেকে পশ্চাৎপদ থাকার একটি মূল কারণ হচ্ছে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক আকাংখার অনুপস্থিতি। মুসলিম শাসকরা এতদিন আমাদের দেশগুলোকে শুধুমাত্র পশ্চিমা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বাজারে পরিণত করার নীতি বাস্তবায়ন করেছে। তথাকথিত মুক্তবাজার ও মুক্তবাণিজ্যের ধারণা সব সময়ই আমাদের দেশগুলোর শিল্প কারখানা ধ্বংসের কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। শিল্প কারখানা বলতে যা অবশিষ্ট আছে সেগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে মূলতঃ পশ্চিমাদের ভোগের সরবরাহ কেন্দ্র হিসেবে। সার্বিক আদর্শিক শূণ্যতার মাঝেও যখনই কোন মুসলিম রাষ্ট্র রাজনৈতিক পরিকল্পনাকে সম্পৃক্ত করে শিল্প স্থাপন করেছে তখনই তারা সরাসরি লভবান হয়েছে। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় পাকিস্তান আঞ্চলিক রাজনীতিতে টিকে থাকতে গিয়ে পারমানবিক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল এবং অবশেষে সে পারমানবিক শক্তির অধিকারী হতেও সক্ষম হয়েছে; মিশরও ৫০ এর দশকে অনুরূপ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল কিন্তু ১৯৬৭ সালে ইসরাইলের কাছে পরাজিত হওয়ার পর দেশটি তার পরিকল্পনা পরিত্যাগ করে।

    খিলাফাহ যখন আবার প্রতিষ্ঠিত হবে তখন তার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে অভিন্ন রাজনৈতিক লক্ষ্য ও আকাংখার ভিত্তিতে সমগ্র মুসলিম বিশ্বকে একতাবদ্ধ করা। যখন খিলাফাহ রাষ্ট্রের জনগণ একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্যের ব্যাপারে একমত হবে তখন তারা সবাই সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করতে থাকবে। এক সময় মুসলমানদের বাকী ভূ-খন্ডগুলোও এ ব্যাপারে একমত হবে এবং তারাও খিলাফাহ্‌র সাথে একাত্ম হওয়ার জন্য অগ্রসর হবে। বর্তমানে বিদ্যমান পরিকল্পনাহীনতা থেকে খিলাফাহ উম্মাহকে বের করে আনবে এবং সুনির্দিষ্ট নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রের সকল দক্ষ ও অভিজ্ঞ নাগরিককে একতাবদ্ধ করবে।

    বৃহত্তর জনগণের আস্থা সৃষ্টির জন্য যা সবচেয়ে কার্যকর তা হলো যথাযথ সামরিক সক্ষমতা। নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষা এবং শত্রুকে পরাজিত করার জন্য একটি বৃহৎ ও অত্যাধুনিক সামরিক বাহিনীর কোন বিকল্প নেই। এ ধরণের একটি সামরিক শক্তির আকাঙ্খা, যা এই মুহুর্তে মুসলিম বিশ্বে অনুপস্থিত, স্বাভাবিকভাবেই খিলাফতকে দ্রুত প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দিকে ধাবিত করবে যার জন্য প্রয়োজন হবে ব্যাপক শিল্পায়ন। আর শিল্পায়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে কারিগরি দক্ষতা আর কাঁচামালের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ। এ দুটি পূর্বশর্ত কিভাবে পূরণ হবে সে জন্যও আমাদের যথাযথ নীতি ও কৌশল থাকতে হবে।

    সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এ ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ। কমিউনিষ্টরা ক্ষমতায় আসার পর ১৯২৮ সালে ৫ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে যার উদ্দেশ্য ছিল দেশে ভারী শিল্পের শক্ত ভিত্তি গড়ে তোলা।

    সে সময় গৃহীত পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ছিল কতগুলো অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রার সমষ্টি মাত্র। ১৯২৮ থেকে ১৯৩২ এর মাঝামাঝি ইউএসএসআর- এর অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য এসব লক্ষমাত্রা গ্রহণ করা হয়েছিল, যেসকল পদক্ষেপগুলোর মধ্যদিয়ে জাতিটি শিল্প ও সামরিক দিক থেকে স্বনির্ভর হতে চেয়েছিল।

    সেই পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনীতির পদ্ধতিগত উন্নয়নের মধ্যদিয়ে ভারি শিল্পের দিকে ধাবিত হওয়া, তথা ভারি শিল্পের মাধ্যমে আদিম কৃষিভিত্তিক জাতি থেকে শিল্পোন্নত ও সামরিক দিক থেকে একটি শক্তিশালী জাতিতে রূপান্তরিত হওয়া। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে স্টালিন তার শাসনামলে রাষ্ট্রের সমস্ত ক্ষমতা ও সম্পদকে কয়লা, লোহা, স্টিল ও রেলওয়ের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি উৎপাদনে নিয়োগ করেছিলেন। ম্যাগনিটোগোর্সকের মতো ইউরালের অন্তর্গত নতুন নতুন শহরগুলোতে উৎসাহী তরুণ কর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর চেষ্টাও চালানো হয়েছিল।

    ৩. খনিজ প্রক্রিয়াকরণ:

    নিজস্ব খনিজ ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উপর পূর্ণ নিযয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য ও অন্য জাতির উপর নির্ভশীলতা কমানোর লক্ষ্যে খিলাফত রাষ্ট্র তার খনিজদ্রব্য উত্তোলন, প্রক্রিয়াকরণ ও শোধনাগার তৈরি করবে। যেহেতু কাঁচামাল শিল্পের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, কাঁচামালকে ঘিরে আমাদের মূল উদ্দেশ্য থাকবে পরনির্ভশীলতা কমানো।

    প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধশালী একটিমাত্র দেশ পাকিস্ত্মানের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সম্পদ হলো- তেল, গ্যাস, সোনা, ক্রোমিয়াম, লোহা, কয়লা, বক্সাইট, কপার, এন্টিমনি, সালফার, লাইমস্টোন, মার্বেল, বালি, রক-সল্ট এবং সিরামিকের ক্লে বা কাদামাটি। যেহেতু খিলাফত অন্যান্য মুসলিম ভূ-খণ্ডগুলোকেও একীভূত করার মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠিত হবে, তাই অন্যান্য দেশ গুলোর সম্পদগুলোও খিলাফতের আওতায় আসবে। যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই খিলাফতের অভ্যন্তরীণ সম্পদগুলোর উত্তোলন ও প্রক্রিয়াকরণের নীতি বিদেশী কারিগরি দক্ষতার উপর নির্ভশীল রাখা হবে না।

    মুসলিমদের বেশিরভাগ সম্পদই প্রক্রিয়াকরণ করা হয় বিদেশী কম্পানিগুলোকে দিয়ে তথা আমেরিকান কম্পানিগুলোকে দিয়ে। উত্তোলনের নামে এসব সম্পদের বেশিরভাগ অংশই এসকল পশ্চিমা কম্পানিগুলোকে দিয়ে দেওয়া হয়। কখনও কখনও দেশীয় তেল কম্পানিগুলোকেও বেসরকারিকরণের নামে বিক্রি করে দেয়া হয় ঐসব কম্পানিগুলোর কাছে।

    খনিজ প্রক্রিয়াকরণে স্বনির্ভশীল হওয়ার জন্য বেশকিছূ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। যেসকল সম্পদ খিলাফতের মধ্যে থাকবে না সেগুলো অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করে আনা হবে। ইদানিং চীনও একই নীতি গ্রহণ করেছে। চীন তার তেলের প্রয়োজন মেটাতে আফ্রিকান দেশগুলোতে তেলের বিনিময় প্রচুর পরিমানে অন্যান্য সাহায্য প্রদান করে চলেছে। পাশ্চাত্য নীতির অনুসরণেই চীন এখন আফ্রিকায় প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠানসহ দরকারী রাস্তা-ঘাট, স্কুল, হাসপাতাল ও অফিস-আদালত গড়ে তুলেছে। সাম্প্রতিক ইন্দো-আফ্রিকান সম্মেলনও এ নীতির একটি সুন্দর উদাহরণ। একই ধরণের নীতি খিলাফত রাষ্ট্রও প্রয়োজনে গ্রহণ করবে, যদিও আল্লাহর রহমতে মুসলিম ভূ-খণ্ডগুলো পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর।

    মুসলিম বিশ্বে বিদ্যমান পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর ব্যাপারেও খিলাফতকে কিছু নীতি নির্ধারণ করতে হবে। তারা মুসলিম বিশ্বে থাকলে আমাদের কি সুবিধা, আর কি সমস্যা, তা গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। বর্তমানে তারা চরম স্বাধীনতা ভোগ করছে; বিশেষ করে খনিজ সম্পদের বিষয়টিতে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা শ্রম ও দক্ষতার মজুরি হিসেবে খনিজ সম্পদের অংশীদারিত্ব পেয়ে থাকে, এছাড়া মুসলিম বিশ্বের দূর্নীতিপরায়ন শাসকগোষ্ঠী ও অভিজাতশ্রেণী ব্যক্তিগত স্বার্থের বিনিময়ে জনগণের সম্পদ বিদেশীদের হাতে তুলে দিচ্ছে; যার কারণে খনিজ সম্পদের প্রকৃত অধিকারী হয়েও তা থেকে জনগণ তেমন কোন সুবিধা পাচ্ছে না।

    সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এসব কোম্পানি কোন দক্ষতা বা প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর কাছে হস্তান্তর করছে না। খিলাফতের অভ্যন্তরে কোন বিদেশী কোম্পানীকে কাজ করতে হলে অবশ্যই মুসলমানদের সাথে প্রযুক্তি হস্তান্তর চুক্তি করতে হবে। পারস্পারিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যবসা বানিজ্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। যদি দুটি দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বানিজ্যিক সম্পর্ক থাকে তাহলে তাদের পক্ষে সহজে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া সম্ভব হয় না। বর্তমান বিশ্বে চীন-মার্কিন সম্পর্কের দিকে তাকালে বিষয়টি সহজেই বোঝা যায়। পরস্পর বৈরী এই দুটি দেশ অর্থনৈতিকভাবে একে অপরের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তাদের পক্ষে হঠাৎ করে সংঘর্ষে জড়ানো খুবই কঠিন। প্রযুক্তি বিনিময়ের ক্ষেত্রে পাকিস্তান সম্প্রতি একটি ভাল নজির স্থাপন করেছে। সম্প্রতি ফ্রান্স ও পাকিস্তানের মধ্যে সাবমেরিন নির্মান ও সরবরাহের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ চুক্তি বলে ফ্রান্সের কাছ থেকে পাকিস্তান ৩টি সাবমেরিন কিনবে, কিন্তু শর্ত হলো এর একটি নির্মিত হবে ফ্রান্সে আর বাকী দুটি ফ্রান্সের তত্বাবধানে পাকিস্তানের প্রযুক্তিবিদদের হাতে তৈরী হবে। এ ধরণের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সম্বলিত নির্মান চুক্তি অবশ্যই উন্নত শিল্প বিকাশে সহায়ক হবে।

    খিলাফাহ রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার নিজস্ব কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা সম্পর্কে গতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে। যে সব প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি আমাদের নেই তা দ্রুত বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে সংগ্রহ করে নিজেদের সক্ষমতাকে যুগোপযোগী করে রাখতে হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় পাকিস্তানে বর্তমানে চিনি ও সিমেন্ট নির্মানের প্লান্ট, কৃষি যন্ত্রাংশ উৎপাদন কারখানা, সড়ক নির্মানের জন্য রোলার তৈরীর কারখানা ইত্যাদি ক্ষুদ্র ও ভারী শিল্পের কারখানা আছে। এসব কারখানাকে সামান্য পরিবর্তন করেই সেখানে ভারী লৌহ ও ইস্পাতজাত সামগ্রী তৈরী করা সম্ভব। এসব লৌহ ও ইস্পাতজাত পণ্য আবার অন্যান্য শিল্প, যেমন গাড়ী নির্মান, সমরাস্ত্র নির্মান ইত্যাদিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

    ৪. খিলাফত তিনভাবে শিল্পে বিনিয়োগ করবে:

    – সরাসরি বিনিয়োগ: যে সব শিল্প সাধারণত লাভজনক ভিত্তিতে চালানো সম্ভব নয়, কিন্তু রাষ্ট্রের অন্যান্য শিল্পের বিকাশ ও নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য সেগুলোকে অবশ্যই রাষ্ট্রের নিজস্ব বিনিয়োগে স্থাপন করতে ও চালু রাখতে হবে। যেমন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র, সাবমেরিন ও যুদ্ধ জাহাজ নির্মান, রেলওয়ে ইত্যাদি।

    – যৌথ বিনিয়োগ: যেসব ক্ষেত্রে পরবর্তীতে রাষ্ট্র তথা জনগণ লাভবান হবে, অথবা যেসব শিল্প সরকারের অংশগ্রহণ ছাড়া গড়ে উঠতে পারবে না, যেমন তেল উত্তোলন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা ইত্যদিতে রাষ্ট্র ব্যক্তিখাতের সাথে যৌথ বিনিয়োগ করবে।

    – ব্যক্তিখাতের শিল্পে ভর্তুকি বা সুবিধা প্রদান: যারা রাষ্ট্রের চাহিদা মতো পণ্য উৎপাদন করবে, যেমন কোন গাড়ি কারখানা যদি সামরিক যান বা ট্যাঙ্ক উৎপাদন করে তবে তাকে যথাযথ আর্থিক সুবিধা দিতে হবে। যারা অন্যান্য শিল্পের জন্য কাঁচামাল উৎপাদন করে তাদেরকে ভর্তুকি বা ঋণ সুবিধা দেয়া যেতে পারে। রাষ্ট্রের অর্থনীতি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বৃহৎ ইন্ডাষ্ট্রি (যেমন অস্ত্র কারখানা ইত্যাদি) স্থাপনকারীদেরকে বিনামূল্যে সরকারী জমি বরাদ্দ দিতে হবে।

    খিলাফতের কর্তব্য হবে প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগের জন্য সম্পদশালী উদ্যোক্তাদেরকে উৎসাহিত করা। ইতিমধ্যেই মুসলমানদের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণ পরমানু বিজ্ঞানী এবং পেট্রোলিয়াম বিশেষজ্ঞ তৈরী হয়েছে; কিন্তু রাষ্ট্রের যথাযথ রাজনৈতিক লক্ষ্য ও কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় তারা বিদেশে চাকরী খুঁজে নিচ্ছে; যার কারণে মুসলিম বিশ্বে দক্ষ জনশক্তির সংকট ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ১৯৬৭ তে যখন মিশর তার পারমানবিক কর্মসূচি বন্ধ ঘোষণা করে তখন সেখানকার বিজ্ঞানীরা সাদ্দাম হোসেনের সামরিক প্রকল্পে যোগ দেয়। পাকিস্তানের পরমানু প্রকল্পের স্থপতি আব্দুল কাদির খাঁন এখন বেকার।

    শিল্পায়নের গতি ধারাকে যদি অব্যাহত রাখা যায় তাহলে তা সামগ্রিক অর্থনীতিতে অবশ্যই ব্যাপক গতি সঞ্চার করবে। আমরা আগেই উল্লেখ করেছি, যে জন্য শিল্পে এই গতি অর্জন করা যাচ্ছে না তা হলো যথাযথ রাজনৈতিক আকাংখা ও পরিকল্পনার অভাব। মুসলিম দেশগুলোর বর্তমান অর্থনীতিতে সত্যিকারের কোন চালিকা শক্তি নেই এবং অধিকাংশ ধনী দেশ শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সম্পদ বিক্রির টাকায় ভোগ-বিলাস করছে।

    আমরা যদি বিশাল আকারের প্রতিরক্ষা ইন্ডাষ্ট্রি গড়ে তোলার কাজে হাত দিই তাহলে ব্যক্তিখাত থেকে অবশ্যই বড় ধরণের বিনিয়োগ আসবে কারণ সরকারের তৈরী করা বড় ধরণের চাহিদা যে সুযোগ সৃষ্টি করবে তাকে কাজে লাগাবে প্রাইভেট সেক্টর। সবার আগে যে ভাল ফলটি দৃশ্যমান হবে তা হলো ব্যাপক কর্মসংস্থান। যদিও মুসলিম বিশ্বে দক্ষ জনবলের অভাব নেই তার পরও হঠাৎ করে শিল্পায়ন ঘটলে আমাদেরকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে প্রশিক্ষণ সুবিধা চালু করতে হতে পারে।

    কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেলে স্বাভাবিকভাবেই দৈনন্দিন পণ্যের ব্যবহার ও চাহিদা বাড়বে, কেননা অনেক মানুষের হাতে তখন খরচ করার মত টাকা আসবে। পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে অর্থনীতির অন্যান্য সেক্টরেও কাজ ও উৎপাদনশীলতা বাড়বে। নিত্য পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি বিলাসী পণ্যের চাহিদা, ব্যবহার ও উৎপাদন বাড়বে, সেখানে আবার নতুন শিল্প গড়ে উঠার সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ আরো সম্প্রসারিত হবে; বাড়বে অর্থনীতিতে সম্পদের প্রবাহ।

    ৫. কৃষি:

    একটি টেকসই শিল্পায়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা। জাতি যাতে খাদ্যের জন্য বিদেশী শক্তির উপর নির্ভরশীল না থাকে এটা নিশ্চিত করা অতীব জরুরী। সকল উন্নয়নই অর্থহীন হয়ে পড়বে যদি জনগণের মৌলিক খাদ্য নিরাপত্তা না থাকে। তাই খিলাফতকে স্রষ্টা প্রদত্ত বিশাল উর্বর ভূমিকে কৃষি উৎপাদনে যথাযথভাবে ব্যবহার করার জন্য একটি সুষম নীতি প্রনয়ণ করতে হবে।

    ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর তুরস্ক শিল্পের পাশাপাশি একটি মোটামুটি শক্তিশালী কৃষিভিত্তি তৈরী করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু ১৯৮০ সালের পর আইএমএফ এর ধ্বংসাত্মক প্রেসক্রিপশন তার কৃষিখাতকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। তার পরও তুরস্ক এখনও খাদ্যপণ্য, গবাদি পশু এবং পোল্ট্রি রপ্তানীকারক দেশ।

    খিলাফতের উচিত হবে কৃষি ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও কৌশল প্রয়োগ করা। এখানে উল্লেখ্য করার মতো একটি বিষয় হলো ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর উত্তর কোরিয়া ‘যাচ্‌ ফিলসফি’ নামে একটি সুষম কৃষিনীতি বাস্তবায়ন করে। কমিউনিস্ট চিন্তাধারার অনুসরণে এটি ছিল একটি তিন স্তরের কর্মসূচী। উত্তর কোরিয়া এখন তার কৃষি সারঞ্জাম ও প্রযুক্তি অন্যান্য দেশে রপ্তানি করতে আগ্রহী কিন্তু ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন শর্তের কারণে তা এই মুহুর্তে সম্ভব হচ্ছে না। আগামী দিনে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হলে উত্তর কোরিয়ার সাথে কৃষি উন্নয়ন চুক্তি করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে খিলাফত নিশ্চয়ই এমন বাণিজ্য সমঝোতায় পৌঁছবে যাতে করে আমরা তাদের কৃষি প্রযুক্তি ও কৌশল থেকে লাভবান হতে পারি।

    উপসংহার

    এ নিবন্ধে যে আলোচনা হল তা মূলতঃ মোটাদাগের নীতি ও কৌশল। খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর যে সব ভূমি খিলাফতের অন্তর্ভূক্ত থাকবে সেগুলোর বাস্তব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই আসল কৌশল স্থির করতে হবে। আজকের মুসলিম বিশ্ব সম্পদ, দক্ষতা ও জনশক্তিতে সমৃদ্ধ। খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হলে আমাদের এই দক্ষ জনগোষ্ঠীই খিলাফতের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কাজ করবে।

    আমাদের বর্তমান শাসকরা পশ্চিমা উপনিবেশবাদী শক্তিগুলোর এজেন্ট। এরা কখোনই রাষ্ট্রের সামর্থ ও সম্ভাবনাকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাবে না। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে জার্মানি দ্রুত শিল্পায়ন করে বাকী ইউরোপের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়, যার প্রেক্ষাপটে ১ম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়। মাত্র ৬ বছরের শিল্প বিপ্লব পৃথিবীর শক্তির ভারসাম্যকে জার্মানীর অনুকুলে নিয়ে এসেছিল এবং তাকে রুখতে পৃথিবীর বাদবাকি পরাশক্তিগুলোকে একতাবদ্ধ হতে হয়েছিল। মাত্র ২০ বছরের শিল্পায়ন সোভিয়েত ইউনিয়নকে পরবর্তী ৫০ বছর ধরে মার্কিন পরাশক্তির মোকাবেলায় সামর্থ যুগিয়েছিল। এই উদাহরণগুলো থেকে এটা স্পষ্ট যে, যদি প্রবল ইচ্ছা শক্তি থাকে তাহলে যে কোন জাতি শিল্পোন্নত হতে পারে এবং নিজেকে রক্ষা করতে পারে। আর শিল্প ক্ষমতা না থাকলে প্রত্যেকটি জাতিকেই হতে হবে অন্যজাতির অনুগ্রহ নির্ভর।

    তবে খিলাফতের শিল্প ক্ষমতা অর্জন আর এতক্ষণ ধরে আলোচিত জাতিগুলোর শিল্প ক্ষমতা অর্জনের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য আছে। কুফর ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত জাতিগুলো শিল্পায়ন ঘটিয়েছে অন্য জাতিকে পদানত করা, উপনিবেশ স্থাপন ও পরাশক্তি হওয়ার আকাঙ্খা বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে।

    অপরদিকে মুসলিম উম্মাহর শিল্প ক্ষমতা অর্জন ও প্রযুক্তিগত উন্নতি সাধনের যে চেষ্টা, তার পেছনের চালিকা শক্তি ও প্রেরণা হলো ইসলামী আক্বীদা। আর মুসলমানদের সকল কর্ম পরিকল্পনা অবশ্যই হবে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র আদেশ ও রাসূল (সা) এর মহান বাণীর আলোকে আলোকিত।

    “হে ঈমানদারগণ! যখন আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল এমনভাবে তোমাদেরকে ডাকেন যা তোমাদের মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করে তখন সেই ডাকে সাড়া দাও।” [আল কুরআন ৮:২৪]

    হানিফ মতিন
    এপ্রিল, ২০০৮

  • গণতন্ত্রে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রহসন

    গণতন্ত্রে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রহসন

    ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হল গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যা নিয়ে Secularist দের দম্ভের শেষ নেই। তারা দাবী করে Media একটি Shadow Goverment এর মত কাজ করে সরকারকে কঠিন জবাবদিহিতার মধ্য রাখে যেন তারা জনস্বার্থ বিরোধী কোন কাজ করতে না পারে। জনগণের কাছে ফাঁস হয়ে যাবার হুমকির ভয়ে তারা সঠিক কাজটি করবে এটাই আশা। তারা দাবী করে তাদের  স্বাধীন গণমাধ্যম একদিকে নানা জনস্বার্থমূলক বিষয়ে জনমত ও সরকারের অবস্থান তুলে ধরে তাদের মধ্যে সেতু হিসাবে কাজ করে, অন্যদিকে এসব বিষয়ে Expert দের মতামত এক করে সরকারকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে জনগণকে দেখভালের কাজে সরকারকে সহায়তা করে। তাই ভিন্ন মত প্রকাশের অন্যতম Platform হল মিডিয়া। এটা নাকি গণতন্ত্রের সৌন্দর্য, এই ব্যবস্থা ছাড়া নাকি অন্য কোন ব্যবস্থা বিশেষ করে ইসলামি ব্যবস্থা গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে দিবে না। তারা প্রচার চালায় যে ইসলামি কট্টর ব্যবস্থা সরকারের সমালচনার সব পথ বন্ধ করে মতপ্রকাশের স্বাধীনটাকে হরণ করে জনস্বার্থ বা ভিন্নমতের মিলন মেলার পথকে রুদ্ধ করে জনগণকে অন্ধকারে ফেলে রাখবে।  

    ইসলাম প্রসঙ্গে যাবার আগে দেখা দরকার তাদের এসব কিতাবি কথার কোন অস্তিত্ব বাস্তবে আছে কি নেই।  বাংলাদেশে যে নেই তা খুব দৃশ্যমান। শেখ হাসিনার আমলে দেশের ১০১টিরও বেশি গণমাধ্যম ফলাও করে সমুদ্র বিজয়ের প্রচার করলেও পরবর্তীতে জানা যায় বাংলাদেশের প্রাপ্ত ৩৫০ নটিকাল মহিসোপানের ২০০ নটিকাল নাকি ভারতের ইকনোমিক জোনে পড়েছে। অর্থাৎ ওই অঞ্চলে আমরা শুধু মাছ ধরতে যেতে পারব, কিন্তু মাটির নিচের তেল, গ্যাস ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের উপর আমাদের কোন অধিকার থাকবে। গণতন্ত্রে গণমাধ্যমের যে ভুমিকা দাবি করা হয় তা সত্য হলে তাদের উচিত ছিল বাস্তব ফ্যাক্টসগুলোকে ভেরিফাই করে মানুষের সামনে সত্যটা তুলে ধরা। বলা যেতে পারে  হাসিনা স্বৈরশাসক, কিন্তু জুলাই বিপ্লবের পর যদি গণতন্ত্র মুক্ত হয়, তাহলে এখন গণমাধ্যম কেন এই রমজানের ২য় সপ্তাহে যে বাংলাদেশ ও ভারতীয় নৌবাহিনীর অংশগ্রহনে যৌথ টহল ‘CORPAT’ ও দ্বি-পক্ষিয় মহড়া “বঙ্গোপসাগর” অনুষ্ঠিত হয়ে গেল তা কেন সামনে আনলোনা? আমাদের সেনা অফিসার ও জুলাইতে আমাদের  ছাত্র জনতার উপর আক্রমনে অভিযুক্ত ভারত যে নিয়মিত সীমান্তে গুলি করে আমাদের নাগরিক হত্যা করে সে যে আমাদের শত্রু বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়া লাগে না। সেই শত্রুরাষ্ট্র ভারতের সাথে যৌথ মহড়া করে আমাদের নৌবাহিনীর মত গুরুত্বপূর্ণ একটা বাহিনীর কী সক্ষমতা, কী সরঞ্জাম আছে তা জানান দেয়া দেশের জননিরাপত্তা আর সার্বভৌমত্বর জন্য বিরাট বড় হুমকি, তবুও মিডিয়া নীরব। অন্যদিকে খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠা দাবীতে আয়োজিত বিশাল গণ মিছিল দমনে সরকার কেন আরও অনেক কঠোর হল না তার সমালোচনায় এসব মাধ্যম এক যোগে ফেটে পড়ে, তাদের গণতান্ত্রিক জ্ঞান গায়েব হয়ে যায়।

    বলা যেতে পারে, তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ভুমিকা সীমিত হলেও উন্নত বিশ্বে ভিন্ন। কিন্তু মুক্ত বিশ্বের নেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমের অবস্থা তো আরও জটিল। আমেরিকার ট্রাম্পপন্থী ফক্স নিউজ একরকম নিউজ করে, আবার ডেমোক্রেটপন্থী এবিসি নিউজ একই বিষয়ে আরেকরকম নিউজ করে। ২০১৭ সালে ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই যখন কর্পোরেট ট্যাক্স কমানোর Law বানায় তখন এই মিডিয়াগুলো কিন্তু বিগত পাঁচটা বছর ধরে জনগণকে এই Narrative গেলায় যে এতে করে বিজনেসে আরও ইনভেস্টমেন্ট বাড়বে, প্রোডাক্টিভিটি বাড়বে। ২০২৪ সালে এসে বাইডেন পন্থী কিছু Capitalist তাদের পন্থী  মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করে দেয় যে ট্রাম্প এই Law শুধুমাত্র ক্যাপিটাললিস্টেদের কর ফাঁকি দেওয়ার জন্যই তৈরি করেছে। দুই পন্থী মিডিয়ার দলাদলির কারণে শেষ পর্যন্ত আসলে লাভ কী হল? পাঁচ বছর ধরেই কিন্তু এই ক্যাপিটালিসদের unpaid ট্যাক্সের বোঝা মিডল ও  লো ইনকাম ক্লাস ফ্যামিলিগুলো বয়ে বেরায়। তাইতো আমেরিকার জনগনের ৭৭% মনে করে যে তাদের মিডিয়া সোশাল ও পলিটিকাল ইস্যুতে সত্য খবর প্রচার করেনা।

    ব্রিটেনেরও একি অবস্থা।  British Law মতে,  তাদের কোন Talk show তে কেউ সরকারে ঘোষিত Policy এর বিরুদ্ধে কিছু বলতে হলে সেখানে সরকার পক্ষের Defender লাগবে। মানে ফিলিস্থিনের পতাকা উড়ালে প্রয়োজনে গ্রেফতার করা যাবে- সরকারের এই ধরনের ঘোষিত নীতির খোলামেলা সমালোচনা করা যাবে না। মানে হল সরকার ঠিক করে দিবে মিডিয়া কী বলবে। তাই তো কিছুদিন আগে কারিশমা প্যাটেল নামক একজন বি বি সি সাংবাদিক ফিলিস্থিন বিষয়ে অনবরত মিথ্যাচার করতে না পারায় চাকরি ছেড়ে দেয়। এই হল মুক্ত বিশ্বের মুক্ত গণমাধ্যমের ভুমিকা!

    প্রশ্ন আসতে পারে কেন গণমাধ্যম তার কাঙ্খিত ভুমিকা পালন করতে পারছে না? উত্তর হল তারা ঠিক সেই ভুমিকা পালন করছে যে জন্যে তাদের বানানো হয়েছে। এই প্রসঙ্গে  বিখ্যাত American Political Analyst Noam Chomsky একটা কথা বলেছিলেন “একটা স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেখানে সিক্রেট পুলিশ ব্যবহার করে জনগণকে কন্ট্রোল করে আর একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তাদের কর্পোরেট মিডিয়া ইউজ করে এই জনগণকে কন্ট্রোল করে।” অর্থাৎ তাদের বানানোই হয়েছে যেন জনগণকে বিভ্রান্ত করে সরকারকে সমর্থন বা চাপে ফেলে পুজিপতিদের স্বার্থ রক্ষা করা। যেমন ২০১০ সালে হাসিনা যখন সমস্ত জবাবদিহিতার রাস্তা বন্ধ করে বিদ্যুতের নতুন আইন বানায় তখন পত্র-পত্রিকাগুলো আমাদেরকে দেখায় হাসিনা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। আর এই সুযোগে Summit, United এর মত পুজিপতিরা জনগণের পকেট থেকে কুইক রেন্টাল এর নামে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা লোপাট করে নেয়। কাজ শেষ হলে মিডিয়ার তর্জন-গর্জন শুরু হয় আর দেখায় তারা সরকারের সমালোচনায় কতটা স্বাধীন! গত ডিসেম্বরেও আমেরিকার দা ফেমাস টাইমস ম্যাগাজিন ক্ষমতা আসার পূর্বে ট্রাম্পের মত একটা আনস্টেবল ক্যারেক্টার কে দ্যা পার্সন অফ দ্যা ইয়ার খেতাব দিয়ে কোটি কোটি মানুষকে ট্রাম্পের Marketing করে। Elon Musk তার X handle এ ট্রাম্পের পক্ষে প্রচারণা চালায়। আজকে ট্রাম্প ক্ষমতায় আর Musk গং বা অলিগারকরা ক্ষমতাধর। এইভাবে মিডিয়া পুজিপতিদের ফুলে ফেপে উঠতে সহায়তা করে, সেই ফান্ড দিয়ে তারা ঠিক করে সরকার কে হবে, আর সেই সরকার তাদের স্বার্থ আরও সুরক্ষিত করে, আর তাদের আরো ক্ষমতাধর বানায়, আর এই কাজে তাদের সহযোগিতা করে তাদেরই মালিকানাধীন মিডিয়া, এই এক অনবদ্য  চক্র, অসাধারন টিম ওয়ার্ক। সকলে মিলে জনগণকে লুটাই আসল কাজ। এ ব্যবস্থায় মিডিয়া পুঁজিপতিদের মুখপাত্র, এটাই তাদের প্রকৃত ভুমিকা, বাকিটা ধাপ্পাবাজি।

    কিছু কৌশল প্রয়োগ করে এই ব্যবস্থা পুজিপতিদের  মিডিয়া নিয়ন্ত্রন করতে দেয়।

    প্রথমতঃ মিডিয়া খুলতে ও পুষতে যে পরিমান টাকা লাগে তা কেবল পুজিপতিদের আছে। একটা চ্যানেল ওপেন করতে Studio, Camera, Staff সহ অনেক খরচ আর লাইসেন্স তো লাগেই যা নবায়ন করতে হয়। তাই মিডিয়াতে অনেকে কাজ করলেও মালিক কেবল কয়েকজন হতে পারে।

    দ্বিতীয়তঃ ফাঁক ফোকরে কোন তুলনা মূলক ছোট মালিকের কোন চ্যানেল জনপ্রিয় হয়ে গেলে বড়রা তা কিনে ফেলে। যেমন ২০১৩ সালে Jeff Bezos Washington Post ও অন্যান্য Local publications, Websites, and Real estate US $250 Million কিনে ফেলে, Businessman Elon Musk ২০২২ সালে American Social Media Company Twitter Inc. এর বেশির ভাগ শেয়ার কিনে নেয়। Mark Zuckerberg, the CEO of Meta, একই প্রক্রিয়ায় Instagram and WhatsApp এর মালিকানা পায়।

    এভাবে সারা দুনিয়ায় কয়েক জন পুঁজিপতি পুরো মিডিয়া সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করে। আমেরিকার 90% মিডিয়া Disney, Comcast, AT&T এর মত মাত্র ছয়টা কোম্পানির মালিকানাধীন! এই ছয়টা কোম্পানি, যাদেরকেবলা হয় ‘The big six’, এরাই ডিসাইড করে  আমেরিকার কোটি কোটি মানুষ তাদের টিভিতে কোন নিউজ দেখবে, কোন বয়ান গুলো তাদের গেলানো হবে এবং সর্বোপরি যেকোন বিষয়ে তাদের ভিউপয়েন্টটা কেমন হবে। এর মধ্যে মিডিয়া মুঘল নামে পরিচিত Rupert Murdoch একাই Wall Street Journal, The Times সহ শত শত পত্রিকা এবং Sky News, Fox সহ অনেক টিভি চ্যানেল-এর মালিক। এস আলম গ্রুপই কিন্তু বাংলাদেশের কয়েকটা মিডিয়া নিজেই Run করে। এছারা East West Media ও  Transcom Media নামে দুটি প্রকাশনা বসুন্ধরা গ্রুপের মালিক যারা কালের কণ্ঠ ও অন্যটি ট্রান্সকমের মালিক চালায় যেখান থেকে প্রথম আলো, Daily Star ইত্যাদি জনপ্রিয় মিডিয়া বের হয়। সারা দুনিয়ায় একই ব্যবস্থা, একই চিত্র।

    অনেকে মনে করে Social Media হয়তো এই প্রক্রিয়ার বাইরে। চ্যানেল খোলা তুলনামুলক সহজ বলে দলছুট সৎ সাংবাদিকরা এখানে মুক্তমনে সংবাদ প্রকাশ করতে পারে যা গণতন্ত্রের দাবির সাথে সংগতিপূর্ণ। এটা ঠিক গত ৭৫ বছর ধরে ফিলিস্থিনে গণহত্যার পক্ষে ইসরাইলের সমর্থনে তথাকথিত Western Free মিডিয়া যে ন্যারেটিভ তৈরি করে আসছিল, যার কারণে তাদের জনগণ মনে করত ফিলিস্তিনের মানুষরাই বেশি একরোখা, মিলেনিশে থাকতে চায় না, ৭ অক্টোবরের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় কল্যাণে প্রথমবার ফিলিস্থিনের নারকীয় পরিস্থিতি তারা জানতে পারে। ফলে মূলধারার মিডিয়াগুলোর আবাধ মিথ্যাচার বাধার মুখে পড়ে। তাই তাদের কাতার ভিত্তিক আলজাজিরার মত Creative হতে হচ্ছে। তারা একদিকে গাজা গণহত্যা বিরোধী জোরালো অবস্থান ধরে রেখেছে অন্যদিকে Two State Solution এর নামে দখলদার ইসরায়েলের উপস্থিতি জায়েজিকরণ, মানবাধিকার সংস্থার ঢাল দিয়ে গণতন্ত্রের ফেরি আর গণহত্যার মদদ কারি কাতারসহ মধ্য প্রাচ্যের শাসকদের বিরুদ্ধে নীরব, তার পক্ষে সাফাই গেয়ে যায় এমনভাবে যেন পাবলিক এই ব্যবস্থায় আশা জিইয়ে রাখে। রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায় আর ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার নিয়ে সংবাদ উপস্থাপনের পার্থক্য কিংবা ফিলিস্তিনির মৃত্যুকে has died আর ইজরাইলি মৃত্যুকে was killed কিংবা ফিলিস্থিনি বন্দিদের  prisoner আর ইসরাইলি বন্দীদের hostage বলে সম্বোধন ইত্যাদির মাধ্যমে  তাদের দ্বিচারিতা সাধারনের কাছে উন্মুক্ত করে দেয় এই Social Media ।

    কিন্তু সাদা চোখে না দেখা গেলেও এই মিডিয়াও দারুনভাবে নিয়ন্ত্রিত। পুরো সোশ্যাল মিডিয়ার কন্ট্রোল এলন মাস্ক, জাকারবারগ এর মত মাত্র দু-তিন জন পুঁজিপতির হাতে। আর তাদেরই দেওয়া গাইডলাইন মোতাবেক নিউজ হতে হয়। সেখানে ইসলাম ও রাসুল (সা) বিরোধী যা খুশি বলার স্বাধীনতা আছে; খিলাফাহ, ফিলিস্থিন সহ তাদের মানদণ্ডে আপত্তিজনক শব্দ লিখলে ফিল্টার করে আইডিকে রেস্ট্রিক্ট করে দেওয়া সহ এমনকি জঙ্গি সন্দেহে অনলাইন পুলিশিং এর নজরদারিতে পরার হুমকি থাকে। Violent Post এর নামে অধিকাংশ ফিলিস্থিনিদের video আমরা দেখতেই পাইনা, তাদের বিশেষ অ্যালগরিদম সেন্সর অনুযায়ী এসব নিউজ  তারা রিচ ই হতে দিবেনা। সালেহ, আবুদ, ইউসুফ, সুবিস দের প্রো-প্যালেস্টিনিয়ান পোস্টের কারণে ১৫ মিলিয়ন ফলোয়ারসহ পুরো ইন্সটা একাউন্টই নাই করে দেয়া হয়েছে!! তাই এখানে কাজ করা  দলছুট সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রন করা সহজ। তাদের মধ্যে খালেদ মহিউদ্দিন এর মত কাকে জনগণের সামনে আনবে আর জন অয়েন বা কারিস্মাদের মত কাকে আনবেনা, কোন চ্যানেলের রিচ আপ না ডাউন থাকবে নাকি পুরা পেইজই হাওয়া হয়ে যাবে এটাও ঠিক করে সেই সেকুলার পুজিপতিরাই। সম্প্রতি মার্কিন মন্ত্রনালয় catch and revoke নামে একটি AI app এআই চালু করেছে, যার কাজ ফিলিস্থিনের পক্ষে মন্তব্যকারিকে সনাক্ত করা। এমনকি যারা লাইক দিয়েছে তাদেরকেও ভিসা বাতিল করে দিচ্ছে। এভাবে রিচ কমিয়ে, আইডিকে রেস্ট্রিক্ট করে, বিভিন্ন আইন ও অনলাইন পুলিশিং এর মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়াগুলো নিয়ন্ত্রনে থাকে। এই কারণে ফিলিপাইনের সাংবাদিক মারিয়া রেসা বলছিলেন, “ইলন মাস্ক, মারক জাকারবার্গ এর মতো সোশ্যাল মিডিয়ার কর্তারাই বড় ফ্যাসিস্ট।” 

    তাই ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গণমাধ্যম আসলে স্বাধীনতার নামে পরাধীন। এরকম কাঁচের ঘরে বসে তারা ইসলামে গণমাধ্যমের ভুমিকাকে আক্রমন করে ঢিল ছুড়ার সাহস কিভাবে পায়? সাহস পায় কারণ ১০১ বছর খিলাফার অনুপস্থিতিতে এই মিডিয়া কাজে লাগিয়েই ইসলামকে তারা কেবল ধর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে আর খিলাফাহ প্রত্যাবর্তনের উপায় রাজনৈতিক ইসলামকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের সাথে যুক্ত করে এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যে সাধারন মানুষ তা ভয়ের চোখে দেখে। তাই পরিপুর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসাবে এখানে গণমাধ্যমের ভুমিকা কী হবে তা নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে সাধারন অজ্ঞতা বিরাজমান।  তারা Secular Media এর বাইরে কিছু ভাবতে পারে না। এই সুযোগে এই ব্যবস্থা ইসলামকে কট্টর আখ্যা দিয়ে সাধারন মানুষকে ভয় দেখায় যে ইসলামী ব্যবস্থা আসলে নাকে এই তথাকথিত স্বাধীনতা হারিয়ে যাবে, সমালোচনার সব দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। আর এসব প্রচারনায় আমরা এত লজ্জিত হয়ে পরি যে তাদের উন্মুক্ত ত্রুটি আমরা ধরার চেষ্টাই করি না, ইসলামকে বিকল্প না ধরে এই বাতিল ব্যাবস্থার সংস্কারের চিন্তা করি যা তাদের এই কাঁচের ঘর টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করছে। অথচ একমাত্র ইসলামি জীবন ব্যবস্থা পুঁজিপতিদের জিম্মি দশা থেকে মানবতাকে মুক্ত করার সক্ষমতা রাখে। এর অধীনে গণমাধ্যম মিথ্যাকে সত্য দিয়ে সজোরে আঘাত হানবে যেন মিথ্যার মগজ বের হয়ে যায় এবং মানুষ সত্যটা জানতে পারে।

    কেমন হবে ইসলামের মিডিয়া?

    রাসুল (সা) এর সময় তার প্রশাসন তখনকার Technology ব্যবহার করে মিডিয়ার কাজ করত। রমজান মাসে চাঁদ দেখা গেলে ঘোড়া ছুটিয়ে যতদুর যেতে পারে খবর পাঠান হতো। আমরা বিদায় হজ্জের ভাসনে দেখেছি  বিভিন্ন point এ বার্তা বাহক দাঁড়িয়েছিল, রাসুল (সা) ভাসন মুখে মুখে নির্দিষ্ট দূরত্বে দারিয়ে তারা হুবহু ভিড়ের শেষ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিলেন। সেই সময় যে নীতিমালা দিয়ে  মিডিয়া নিয়িন্ত্রিত হতো, একই নীতিমালায় বর্তমানে মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত হবে যদিও Science and Technology  এর উৎকর্ষের কারণে Satellite controlled Internet based সোশ্যাল মিডিয়া,  প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ অনেক ধরনের মিডিয়া এখন চালু আছে।

    কুরআন ও সুন্নাহ থেকে ভবিষ্যৎ খিলাফাহ রাষ্ট্রের জন্য যে সংবিধান তৈরি করা আছে সেখানে তথ্যনীতির অধীনে ১০৩ ও ১০৪ ধারায় বলা আছে:

    অনুচ্ছেদ ১০৩: মিডিয়া অফিস প্রতিষ্ঠানটি রাষ্ট্রের জন্য রাজনৈতিক মিডিয়া কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত, যাতে ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা করা যায়। অভ্যন্তরীণভাবে, এটি একটি শক্তিশালী ও সংহত ইসলামি সমাজ গঠনের জন্য কাজ করে, যা মন্দকে খণ্ডন করে এবং সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে। বাহ্যিক ক্ষেত্রে, এটি শান্তি ও যুদ্ধ উভয় অবস্থাতেই ইসলাম প্রচার করবে, এমনভাবে যে ইসলাম ধর্মের মহত্ব, এর ন্যায়বিচার এবং এর সেনাবাহিনীর শক্তি ব্যাখ্যা করা হবে এবং মানবসৃষ্ট ব্যবস্থার দুর্নীতি ও নিপীড়ন এবং তাদের সেনাবাহিনীর দুর্বলতা প্রকাশ করা হবে।

    অনুচ্ছেদ ১০৪: রাষ্ট্রের যে কোনো নাগরিকের মালিকানাধীন মিডিয়ার জন্য কোনো অনুমতির প্রয়োজন নেই; বরং তারা কেবল মিডিয়া অফিসকে অবহিত করবে, যাতে অফিসটি নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া সম্পর্কে জানতে পারে। যে কোনো মিডিয়া মাধ্যমের মালিক ও সম্পাদকরা তাদের প্রকাশিত প্রতিটি নিবন্ধের জন্য দায়ী থাকবে এবং তারা যদি শরীয়াহর বিরোধী কিছু প্রকাশ করে, তবে যে কোনো নাগরিকের মতো তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।

    ধারা ১০৩ ১০৪ অনুযায়ী, ইসলামী রাষ্ট্রের গণমাধ্যম বিভাগ দুই ভাগে বিভক্ত:

    প্রথম বিভাগ: এমন সংবাদ যা রাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত, যেমন সামরিক বিষয়, সামরিক শিল্প ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য স্পর্শকাতর বিষয় যেমন রাষ্ট্রের ইন্টারনাল সিকিউরিটি বিষয়, সেনাবাহিনীর তথ্য, যুদ্ধের প্ল্যান ও স্ট্রাটেজি, তা তারা খলীফার অনুমতি ছাড়া প্রচার করতে পারবে না। এই বিষয়ে দলিল হল, আল্লাহ্‌ বলেছেন, “আর যখন তাদের কাছে নিরাপত্তা বা আশঙ্কা সংক্রান্ত কোনো সংবাদ আসে, তখন তারা তা ছড়িয়ে দেয়। অথচ তারা যদি তা রাসুল (সা.) এবং তাদের মধ্যে যারা কর্তৃত্বশীল, তাদের কাছে পৌঁছে দিত, তবে যারা তা থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত বের করতে পারে, তারা তা জানতে পারত” (হুজুরাত:৬)।  রাসুল (সা)  আয়শা (রা.) কে বলেন, “আমাকে প্রস্তুত করো, এবং কাউকে এ ব্যাপারে কিছু বলো না… তারপর তিনি নির্দেশ দিলেন যেন মহাসড়কগুলোর পথ বন্ধ করা হয়, ফলে মক্কার জনগণ অন্ধকারে রয়ে গেল এবং তাদের কাছে কোনো সংবাদ পৌঁছেনি”। এই কারণে এ ধরনের খবর অনুমতি ছাড়া প্রচার করা যাবে না।

    দ্বিতীয় বিভাগ: অন্যান্য সংবাদ যেগুলোর উপর সরাসরি তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন নেই, এসব সংবাদ প্রচারের জন্য রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত গণমাধ্যমের অনুমতির প্রয়োজন নেই।

    এই নীতিমালা অনুযায়ী: সরকারি বা বেসরকারি যে কেউ মিডিয়া খুলতে পারবে। এর জন্য কোন বড় বড় ব্যবসায়ীদের দ্বারস্থ হওয়া লাগবে না, কারো সামর্থ্য না থাকলে  বায়তুল মাল থেকে সুদবিহীন ঋণ প্রদান করা হবে, মিডিয়ার খোলার ক্ষেত্রে  অনুমতিও লাগবেনা। একাধিক মিডিয়া হাউজ থাকবে কিন্তু কোটিপতিদের কন্ট্রোলে না, বরঞ্চ শরিয়ার কন্ট্রোলে। এক্ষেত্রে খলিফা একজন চীফ মিডিয়া অফিসারকে নিযুক্ত করবেন, যেটা হবে centralized. chief officer এর কাজ হবে সাধারণভাবে তদারকি করা, ইসলামের guidance ফলো করছে কিনা। তবে শুধু তদারকি পর্যন্তই, তাদের নিয়ন্ত্রন করার জন্য নয়। এই মিডিয়াগুলো সাধারনভাবে আকিদা ভিত্তিক গভীর আলোচনা ছাড়াও বিশ্বব্যাপী ইসলামী জীবন ব্যবস্থার superiority ও কুফর ব্যবস্থার অসারতা তুলে ধরবে, লাইফের বিভিন্ন  aspect  ইসলামের  সমাধান ও  কালচারগুলোকে তুলে ধরবে, অন্যান্য মুসলিম ভূখণ্ডগুলোকে খিলাফতের অধীনে ঐক্যবদ্ধ হতে উদ্বুদ্ধ করবে এবং ইসলামী দাওয়া সারা বিশ্বে পৌঁছে দিবে। এই মিডিয়া  আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ রোল হল সৎ কাজে আদেশ অসৎ কাজে নিষেধ করা। সাধারণভাবে,সৎ কাজে আদেশ অসৎ কাজে নিষেধ এবং শাসককে একাউন্ট করা ইসলামে ফরজ। তাই খলিফা, আমিল ও গভর্নর যে কোন পর্যায়ে দুর্নীতির সন্ধান পেলে, কোন গাফিলতি  হলে  খলিফা এবং সরকারের লোকদের বিরুদ্ধে Investigate ও প্রতিবেদন করবে। এই ব্যাপারে আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কাউকে পরোয়া করতে হবে না। ইবনে আব্বাস বর্ণিত, রাসুল (সা) বলেছেন, “(হাশরের ময়দানে) শহীদদের নেতা হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব এবং সেই ব্যক্তি যে জালিম শাসকের সামনে দাঁড়িয়ে তাকে সৎকাজের আদেশ দিবে এবং অসৎকাজে নিষেধ করবে আর একারণে তাকে হত্যা করা হবে।”  এছাড়াও জনগণের চাহিদার কথা হতে পারে কোন প্রত্যন্ত জায়গায় ভাঙ্গা রাস্তার মেরামত বা অন্য কোনো জনদুর্ভোগ, সরকারের কাছে মিডিয়া তুলে ধরবে, এইভাবে জনস্বার্থে  মিডিয়া  ব্যবহৃত হবে।  

    যদি ইসলামি বহির্ভূত কালচার, বা মিথ্যা নিউজ, twisted নিউজ, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য না হয় তা প্রচারে সাংবাদিকদের কোন বাঁধা থাকবে না। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: «আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করবো না?” সাহাবিরা বললেন, “অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসূল। “তখন তিনি বললেন: “আল্লাহর সাথে শরিক করা এবং বাবা-মায়ের অবাধ্যতা।” তিনি তখন হেলান দিয়ে ছিলেন, কিন্তু এরপর উঠে বসলেন এবং বললেন: “এবং মিথ্যা কথা ও মিথ্যা সাক্ষ্য।” তিনি এটি বারবার বলতে থাকলেন, যতক্ষণ না তিনি চুপ হয়ে গেলেন। তাই হলুদ সাংবাদিকতা শারিয়ার লঙ্ঘন।

    বর্তমান ব্যবস্থায় বাক স্বাধীনতার নামে পুঁজিপতিদের গোলামি চলে। ইসলাম আল্লাহ্‌ প্রেরিত শাসন ব্যবস্থা, এখানে বাইরে এক আর ভিতরে আরেক ধরনের আলাদা কোন চাতুর্যময় ব্যবস্থা নেই। পুরোটাই উন্মুক্ত। সেই অর্থে ইসলামে কোন স্বাধীনটাই নেই, আছে আল্লাহর অধীনতা যা দুনিয়াকে মানবজাতির জন্য বাসযোগ্য করবে আর  আখিরাতে উত্তম প্রতিদান দিবে। সেই আশায় মুসলিমরা journalism practice করবে, এর মাধ্যমে তারা সত্য প্রচার করে ইসলামের নেতৃত্বকে তুলে ধরে নেকি কামাবে। শারিয়ার অধীনে অমুসলিম সত্যবাদি সাংবাদিকরাও নির্ভয়ে সত্য ও তাদের চাওয়া পাওয়া তুলে ধরতে পারবে আর মানুষ জানতে পারবে সত্য, যা আজকে দুস্প্রাপ্য। ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাক স্বাধীনতার নামক প্রহসনের মাধ্যমে মানবজাতিকে মিথ্যার অন্ধকারে নিমজ্জিত করে রেখেছে। খিলাফাহ তার শক্তিশালী মিডিয়া ব্যবহার করে মানবজাতিকে সত্যকার অর্থে মুক্ত করবে, তাদের কাছে সত্য পৌঁছে দিবে ইনশাআল্লাহ।

  • ধর্ষণ: ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ নাকি বিকৃত যৌন আচরণ?

    ধর্ষণ: ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ নাকি বিকৃত যৌন আচরণ?

    ধর্ষণের মতো উদ্বেগজনক ঘটনাগুলো একটি ক্রমবর্ধমান সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা দুর্ভাগ্যবশত, কোনো ভয়াবহ ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পরেই কেবল মিডিয়ায় মনোযোগ আকর্ষণ করে। সাধারণত, এই ধরনের ঘটনা সামাজিক এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তীব্র বিতর্কের সূত্রপাত করে, যা পরে সরকারী কর্মকর্তা এবং শাসকদের এই বিষয়ে কয়েকটি বিবৃতি জারি করতে বাধ্য করে। যাইহোক, বিতর্কটা কিছুটা কমে গেলে, সরকার সমস্যাটি সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অজ্ঞ হয়ে পড়ে, যেন এটির কোনো অস্তিত্বই ছিল না। ধর্ষণের বিষয়টি কেবল বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং সমগ্র বিশ্বকে আক্রান্ত করে। এই সমস্যার তীব্রতা নিম্নলিখিত তথ্য দ্বারা বিচার করা যেতে পারে:

    ১. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যার ৭% – যাদের বেশিরভাগই নারী – যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাছাড়া, প্রতি বছর এই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।

    ২. ধর্ষণ, অপব্যবহার এবং অজাচার জাতীয় নেটওয়ার্ক (RAINN), বৃহত্তম আমেরিকান যৌন নির্যাতন বিরোধী সংস্থা, যা কখনো কখনো সরকারের জন্যও কাজ করে। এ সংস্থার অনুসারে, প্রতি ছয়জন মহিলার মধ্যে একজন এবং তেত্রিশজন পুরুষের মধ্যে একজন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এই পরিস্থিতির অবনতি ক্রমশ বাড়ছে।

    ৩. জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে পাকিস্তানে ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে প্রায় ১০,০০০ ধর্ষণের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে। এই সংখ্যাগুলিও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

    ৪. দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনালের মতে, ২০১৪ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বড় শহরগুলিতে ধর্ষণের ঘটনা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।

    ৫. বাংলাদেশে প্রতি ১ লাখ নারীর মধ্যে প্রায় ১০ জন ধর্ষণের শিকার হন। ২০২১ সালে গৃহীত এক হিসবে পাওয়া গেছে যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পূর্ববর্তী ৫ বছরে ৩০ হাজার ২৭২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী ২০১৯ সালে এক হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিলো ৭৩২ জন৷ অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় গত বছর ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে দ্বিগুণ যা ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি৷ ২০১৭ সালে ধর্ষণের শিকার হন ৮১৮ জন নারী৷ ২০১৯ সালে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭৬ জনকে৷ আর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১০ জন নারী৷ বাংলাদেশে গণ ধর্ষণের ঘটনাও অহরহ ঘটে থাকে। [তথ্য সূত্র: উইকিপিডিয়া]

    একটি সংখ্যালঘু, কিন্তু তবুও প্রভাবশালী গোষ্ঠী বিশ্বাস করে যে ধর্ষণের ঘটনাগুলি একটি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ফলাফল, যেখানে নারীদের পুরুষের সমান বিবেচনা করা হয় না। তারা যুক্তি দেয় যে এই সমাজ যৌন-হতাশ পুরুষদের জন্ম দেয় যারা নারীদের তাদের অধীনস্থ বলে মনে করে। তাই পুরুষরা বিশ্বাস করে যে তারা তাদের নিজস্ব যৌন তৃপ্তির জন্য যে কোনো উপায়ে এবং যেভাবে ইচ্ছা এই মহিলাদের ব্যবহার করার ক্ষেত্রে তারা স্বাধীন। এই গোষ্ঠীর লোকেরা বিশ্বাস করে যে ধর্ষণ সমাজে নগ্নতা বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত নয় বা পশ্চিমা দেশ থেকে আমদানি করা কোনো নির্দিষ্ট চিন্তা-ধারণা গ্রহণের ফলাফল নয়। প্রকৃতপক্ষে, এই গোষ্ঠী বিশ্বাস করে যে পুরুষ এবং মহিলাদের তাদের ইচ্ছামত যে কোনো উপায়ে নিজেদের মধ্যে সম্মতিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করার স্বাধীনতা থাকা উচিত। অতএব, যারা নগ্নতা বা পশ্চিমা আদর্শে প্রভাবিত নারীদের পোশাক পছন্দের সমালোচনা করে থাকেন, তাদের তারা ধর্ষণের কৈফিয়তদানকারী (rape apologists) হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন।

    তবে, এই কথিত বয়ানকে গভীরভাবে পরীক্ষা করলে দেখা যায় যে এটি প্রকৃতিগতভাবে একটি অগভীর চিন্তা, এবং এই ইস্যুটির সম্পূর্ণ বাস্তবতাকেও তুলে ধরে না। অধিকন্তু, এই কথিত বয়ানটি পশ্চিমা চিন্তাভাবনা দ্বারাও প্রভাবিত, যা সমাজকে মিথ্যা উদারনৈতিকতবাদ (Liberalism)-এর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখায়।

    সমাজে ধর্ষণ এবং অন্যান্য অপরাধের প্রকৃত কারণগুলি বুঝতে হলে, প্রথমে মানব প্রকৃতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জন করতে হবে, প্রথমে বুঝতে হবে মানব প্রকৃতি যা তাদের স্রষ্টার দ্বারা মানব সৃষ্টির ভিত্তি এবং দ্বিতীয়ত, সমাজ কীভাবে গঠিত হয়। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) সমস্ত মানুষকে, পুরুষ এবং মহিলাকে একটি নির্দিষ্ট প্রকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং মানব জাতির বেঁচে থাকা তাদের উভয়ের সহযোগিতা এবং একত্রিত হওয়ার উপর নির্ভরশীল করেছেন। পুরুষ এবং মহিলা উভয়ই মানুষ এবং তাই তাদের মধ্যে এমন সব বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা তাদেরকে মানুষ করে তোলে। এর মধ্যে একটি হল প্রতিটি মানুষের চিন্তা করার ক্ষমতা যা তাদের কর্মকে প্রভাবিত করে। আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল যে সমস্ত মানুষের কিছু জৈব চাহিদা রয়েছে, যেমন খাদ্য এবং জল গ্রহণের প্রয়োজন, বাতাসে শ্বাস নেওয়ার প্রয়োজন এবং নিজেকে ত্যাগ করার প্রয়োজন, যা জীবনের জন্য অত্যাবশ্যক। এই জৈব চাহিদাগুলি ছাড়াও, মানুষের কিছু প্রবৃত্তিও রয়েছে যা পূরণ না হলে উদ্বেগ এবং অসন্তোষের কারণ হতে পারে, যেমন প্রজনন প্রবৃত্তি। মানব প্রকৃতি সম্পর্কে এই তথ্যগুলি স্পষ্ট এবং ব্যতিক্রম ছাড়াই সত্য।

    আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মানুষের মধ্যে এই প্রবৃত্তি স্থাপন করেছেন। অধিকন্তু, তিনি মানুষকে এই প্রবৃত্তি পূরণের জন্য সঠিক উপায়ও প্রদান করেছেন। তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কেবল প্রবৃত্তিই সৃষ্টি করেননি বরং তিনি এর তুষ্টির জন্য উপায়ও প্রদান করেছেন। অধিকন্তু, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মানুষের প্রবৃত্তিকে সঠিকভাবে তুষ্ট করার জন্য শাসন পরিচালনার দিকেও নির্দেশনা দিয়েছেন, তা সেটা বেঁচে থাকার প্রবৃত্তি, প্রজনন প্রবৃত্তি কিংবা আধ্যাত্মিক প্রবৃত্তিই হোক না কেন। প্রবৃত্তি পূরণের জন্য যেকোনো পদ্ধতিই প্রকৃতপক্ষে সঠিক নয়।

    উদাহরণস্বরূপ, প্রতিটি ব্যক্তিরই একটি বেঁচে থাকার প্রবৃত্তি থাকে, যা তাকে জীবনে নিজের জন্য আরাম খুঁজে পেতে বাধ্য করে, যার জন্য একজন ব্যক্তি অর্থ উপার্জন করে এবং তারপর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং বিলাসদ্রব্য কিনে। তবে, এর অর্থ এই নয় যে নিজের প্রবৃত্তি তৃপ্ত করার জন্য, চুরি, লুটপাট, মজুদ, চোরাচালান বা মাদক বিক্রি সহ যে কোনো উপায়ে অর্থ উপার্জন করা সঠিক। স্পষ্টতই, এটি এমন নয়। তাহলে, কেন এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করা হচ্ছে যে একজন ব্যক্তির যে কোনো উপায়ে, অজাচার বা পশুত্বের মাধ্যমে, প্রজনন প্রবৃত্তির ক্ষেত্রে, তার যৌন ইচ্ছা পূরণের জন্য স্বাধীন হওয়া উচিত?

    তাহলে আসল প্রশ্ন হল: প্রবৃত্তি তৃপ্ত করার সঠিক উপায়গুলি নির্ধারণের মানদণ্ড কী হওয়া উচিত? মানদণ্ড কি এই হওয়া উচিত যে একই লিঙ্গের বা বিপরীত লিঙ্গের দুজন সম্মতিপ্রাপ্ত প্রাপ্তবয়স্ককে, বিবাহ বন্ধনের বাইরে, একে অপরকে অর্থ প্রদানের মাধ্যমে, অথবা অংশীদার হিসাবে, যে কোনো উপায়ে তাদের চাহিদা পূরণ করার অনুমতি দেওয়া উচিত? উদার পশ্চিমা চিন্তাধারার অনুসারীরা হ্যাঁ উত্তর দেবেন। যাইহোক, একইভাবে, কোনো ব্যক্তি যদি মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে অন্য কাউকে দাস বানিয়ে সেই অর্থ দিয়ে অন্য ব্যক্তি তার পরিবার এবং সন্তানদের জন্য উন্নত জীবিকার ব্যবস্থা করতে চায়- সেটা কি অনুমোদনযোগ্য হবে? স্বাধীনতার নামে কি ভিন্ন দেশের দুজন সম্মতিপ্রাপ্ত প্রাপ্তবয়স্ককে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিনিময়ে তাদের নিজ নিজ দেশের সংবেদনশীল গোপনীয়তা বিনিময় করার অনুমতি দেওয়া উচিত?

    অতএব, একজন ব্যক্তির জন্য কোনটি সঠিক এবং কোনটি সঠিক নয় তা নির্ধারণের জন্য কিছু মানদণ্ডের প্রয়োজন। তাহলে প্রশ্ন হল: এই মানদণ্ড নির্ধারণের কর্তৃত্ব কাকে দেওয়া উচিত? আর যদি মানবজাতির সত্যিই একজন স্রষ্টা থাকে, তাহলে কি সেই স্রষ্টার এই বিষয়ে কি কোনো বক্তব্য রাখা উচিত নয়?

    যখন আমরা মানুষের জৈবিক চাহিদা এবং প্রবৃত্তিগুলিকে আরো নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করি, তখন আমরা বুঝতে পারি যে প্রথমটির জন্য কোনো বাহ্যিক উদ্দীপনার প্রয়োজন হয় না। উদাহরণস্বরূপ, মানুষ কোনো সময়ে ক্ষুধার্ত হবে, তাদের সামনে ভাল খাবার থাকুক বা না থাকুক। অন্যদিকে, প্রবৃত্তির জন্য একটি বাহ্যিক উদ্দীপনার প্রয়োজন।  যাইহোক, যদি এই প্রবৃত্তিগুলো তুষ্ট না হয়, তবে ব্যক্তি অস্থিরতা ও অপূর্ণতায় ভুগে। উদাহরণস্বরূপ, একজন মাকে তার সন্তানের যত্ন নিতে দেখলে একজন নিঃসন্তান ব্যক্তির মধ্যে আবেগ জাগবে। যাইহোক, যখন মা ও শিশু সেই ব্যক্তির সামনে থাকবে না, তখন তাদের আবেগ কমে যাবে। যাইহোক, তা সত্ত্বেও, নিঃসন্তান ব্যক্তি অস্থির থাকবে এবং অনুভব করতে পারে যে তাদের জীবন থেকে কিছু একটা অনুপস্থিত। একই কথা প্রজনন প্রবৃত্তির ক্ষেত্রেও সত্য, যা উদ্দীপিত হয় যখন একজন ব্যক্তি যৌন উদ্দীপকের মুখোমুখি হয়, এমনকি যদি তা সেই ব্যক্তির কল্পনায়‌ও সৃষ্টি হয়।

    মানব প্রকৃতির আরেকটি দিক হলো জীবন সম্পর্কে একজন ব্যক্তির চিন্তাভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি যথাক্রমে তার প্রবণতা ও প্রবৃত্তিকে প্রভাবিত করার এবং গঠন করার ক্ষমতা। উদাহরণস্বরূপ, একজন মুসলিমের তার মা ও বোনদের প্রতি যৌন প্রবণতা থাকবে না, কারণ ইসলাম এবং তার চারপাশের সমাজ এই সম্পর্কগুলিকে সেভাবে পবিত্র করে রাখে। তবে, পশ্চিমে, অজাচার তুলনামূলকভাবে সাধারণ। তাই, ব্যক্তিদের সঠিক যৌন মনোভাব বিকাশের জন্য, সঠিক চিন্তাভাবনা প্রচার এবং সমাজে তা প্রতিষ্ঠিত করা প্রয়োজন। বরং, সমস্ত ব্যক্তির জন্য স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ঘোষণা করা কেবল তাদেরকে কেবল যেকোনো উপায়ে তাদের যৌন চাহিদা পূরণের জন্য ধাবিত করবে, এমনকি জোরপূর্বক এবং সহিংসতার মাধ্যমে হলেও।

    উপরে উল্লিখিত চিন্তাভাবনার আলোকে, আসুন এখন ধর্ষণের সমস্যাটি আরো গভীরভাবে দেখি। ধর্ষণ তিনটি কারণের ফলাফল:

    ১. ব্যক্তির যৌন চাহিদা পূরণের আকাঙ্ক্ষা।

    ২. পুরুষ ও নারীর মধ্যে সম্পর্ক কীভাবে সংগঠিত করা উচিত সে সম্পর্কে ব্যক্তির সঠিক ধারণার অভাব থাকা, অথবা তার আকাঙ্ক্ষাকে এর চেয়ে এগিয়ে রাখার প্রবণতা থাকা।

    ৩. ভুক্তভোগী যখন তার নাগালের মধ্যে থাকে তখন তার শারীরিকভাবে তাকে পরাভূত কিংবা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা থাকা।

    এই তিনটি বিষয় একত্রিত হলেই একজন ব্যক্তি ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ করে। উদারনীতিবাদ এই তিনটি বিষয়কেই উৎসাহিত করার চেষ্টা করে, যদিও এর দাবি ভিন্ন, যেখানে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা এগুলো বন্ধ করার কার্যকর উপায় প্রদান করে। অতএব, যে সমাজ সম্পূর্ণরূপে ইসলাম গ্রহণ করে সেখানে ধর্ষণের ঘটনা অত্যন্ত বিরল।

    প্রথম বিষয়টির ক্ষেত্রে, ইসলাম একজন ব্যক্তির প্রজনন (অথবা যৌন) প্রবৃত্তির জন্য বাহ্যিক উদ্দীপনা কমাতে চায়। অতএব, ইসলাম পর্নোগ্রাফিক সামগ্রীর অনুমতি দেয় না, এমনকি এমন বিলবোর্ডেরও অনুমতি দেয় না যা নারীদের বস্তুগত প্রচারের জন্য বস্তুগতভাবে উপস্থাপন করে। ইসলাম হাম স্টাইল অ্যাওয়ার্ডের মতো অনুষ্ঠানের মঞ্চে আংশিক নগ্ন মহিলাদের কুচকাওয়াজের অনুমতি দেয় না।

    অফিসের মতো জনসাধারণের স্থানে, পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে ইসলামী পোশাকের নিয়ম মেনে চলা এবং ইসলাম কর্তৃক নির্ধারিত সীমার মধ্যে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করাটা প্রত্যাশিত বিষয়। এটি সমাজকে আজ সারা বিশ্বে আমরা যে যৌন হতাশার মুখোমুখি হচ্ছি তা থেকে রক্ষা করবে।

    তবে এর অর্থ এই নয় যে ইসলাম কোনও ব্যক্তির সন্তান জন্মদানের প্রবৃত্তিকে স্বীকৃতি দেয় না বা দমন করে না। বিপরীতে, ইসলাম পুরুষ ও মহিলাদেরকে বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছানোর সাথে সাথে বিয়ে করতে উৎসাহিত করে, যাতে তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের যৌন চাহিদা পূরণ করতে পারে। এটি মানুষকে ব্যভিচার এবং সমকামিতার মতো যৌন অনৈতিক উপায়ের দিকে ঝুঁকতে বাধা দেয়। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) পবিত্র কুরআনে বলেন, وَمِنْ آَيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً “ “আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে একটি হলো: তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সাহায্যকারী সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা তাদের দ্বারা প্রশান্তি লাভ করতে পারো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও করুণা স্থাপন করেছেন। নিঃসন্দেহে এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।” [সূরা আর-রুম ৩০:২১] নবী মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন: «يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنْ اسْتَطَاعَ منكُم الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْلْجِرْ، وَأَحْلْبَصَرِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ» “হে যুবকরা, তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে, সে যেন তা পায়। বিবাহিত, কারণ এটি দৃষ্টিকে অবনত রাখতে এবং সতীত্ব রক্ষা করতে বেশি কার্যকর। যে ব্যক্তি এর সামর্থ্য রাখে না, সে যেন রোজা রাখে, কারণ এটি তার কামনা-বাসনাকে হ্রাস করে।” [মুত্তাফাকুন আলাইহি]

    দ্বিতীয় বিষয়টির ক্ষেত্রে, ইসলামী সমাজের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং গণমাধ্যম পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যে মানবিক প্রবৃত্তি এবং চাহিদা সম্পর্কে সঠিক ধারণা গড়ে তোলার কাজ করে। অতএব, একটি ইসলামী সমাজে, নারীদের সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে দেখা হবে, যাদের সম্মান জীবন ও মৃত্যুর বিষয় হিসেবে রক্ষা করা উচিত। একজন নারীকে মা, কন্যা, স্ত্রী এবং বোন হিসেবে সম্মান করা উচিত, বিজ্ঞাপনের জন্য তার যৌনতা এবং আকর্ষণকে কাজে লাগিয়ে বস্তুগতভাবে উপস্থাপন করা উচিত নয়। ইসলাম সমকামিতাকেও নিষিদ্ধ করে এবং এটিকে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য একটি জঘন্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে, যা পূর্বে সমগ্র সমাজের উপর আল্লাহর ক্রোধের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কুরআনে বলেন; ﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنَاً كَوْجَهَا وَبَثَّ مِنَاً وَنِسَاءً وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ) “হে মানবজাতি! তোমাদের প্রতিপালকের কথা স্মরণ রাখো, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকেই তার সঙ্গীনী সৃষ্টি করেছেন, এবং উভয়ের মাধ্যমে তিনি অসংখ্য পুরুষ ও নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। আর আল্লাহর কথা স্মরণ রাখো, যার নামে তোমরা একে অপরের কাছে প্রার্থনা করো।” [সূরা আল-নিসা ৪:১])। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, «خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ، وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِي» “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর কাছে সর্বোত্তম, আর আমি আমার স্ত্রীদের কাছে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম।” [তিরমিযী]

    তৃতীয় বিষয়টির ক্ষেত্রে, ইসলাম এমন সুযোগ কমাতে চায় যেখানে একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি সম্ভাব্য শিকারকে পরাভূত করতে পারে। অতএব, ইসলাম গায়রে মাহরাম পুরুষ ও মহিলাদের একসাথে নির্জনে থাকা নিষিদ্ধ করে, যেমন ভ্রমণের সময় নির্জন রাস্তায়, মাহরাম আত্মীয়দের অনুপস্থিতিতে বাড়িতে, অথবা কাজের সময় স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় বা অফিসে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেছেন যে তিনি নবী (সা)-কে এক খুতবার সময় বলতে শুনেছেন, «لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بامْرَأَةٍ إلَّا وَمعهَا ذُو مَحْرَمٍ» “কোন পুরুষ মাহরামের উপস্থিতি ব্যতীত কোন মহিলার সাথে নির্জনে থাকতে পারে না।” [সহীহ মুসলিম]।

    অনুরূপভাবে, রাসূলুল্লাহ (সা) আরো বলেছেন, «لا يَحِلُّ لاِمْرَأَةٍ تُؤْمِنُ باللَّهِ وَالْيَومِ الآخِرِ، تُسَافِرُ مَسِيرَةَ يَومٍ وَلَيْلَةٍ يَومٍ عَلَيْ مَيْلَةٍ إلَّا مع ذِيْمَ». “আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী নারীর জন্য মাহরাম ব্যতীত একদিন ও এক রাতের অধিক সময় সফর করা বৈধ নয়” [সহীহ মুসলিম])। উপরন্তু, ইসলাম কোনো বৈধ শরয়ী কারণ ছাড়া নারী-পুরুষের মিশ্র সমাবেশকেও নিষিদ্ধ করেছে। সুতরাং, গায়রে মাহরাম পুরুষ ও মহিলারা শিক্ষাগত বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে, তবে আনন্দ এবং বিনোদনের উদ্দেশ্যে একে অপরের সাথে সময় কাটানোর অনুমতি নেই। 

    যারা পশ্চিমা উদারনৈতিক চিন্তাধারার অনুসারী তারা ধর্ষণের দিকে পরিচালিত করে এমন প্রথম দুটি কারণকে উপেক্ষা করে এবং পরিবর্তে কেবল তৃতীয় কারণের উপর নির্ভর করে। তদুপরি, এই সমস্যা সমাধানের জন্য তারা যে সমাধান প্রস্তাব করে তা ইসলামের পরিবার ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক। তারা আরও যুক্তি দেয় যে এই সমস্যার সমাধান হল নারীদের ‘ক্ষমতায়ন’ করা, যারা নারীদের উদার অধিকারের জন্য তাদের কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করে এবং ইসলাম কর্তৃক নির্ধারিত সামাজিক ব্যবস্থার বিরোধিতা করে। এইভাবে, উদারনৈতিক চিন্তাবিদদের এই দলটি সমাজকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে, যেমন তারা ইতিমধ্যে পশ্চিমা সমাজকে ধ্বংস করেছে, জনসংখ্যার অর্ধেককে অন্য অর্ধেকের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে। অনেক নারীবাদী আন্দোলন সত্ত্বেও, পশ্চিমা সমাজ এখনও ধর্ষণের ঘটনাগুলির একটি কেন্দ্রস্থল। এটাও মনে রাখা উচিত যে তথাকথিত পুরুষ-আধিপত্য হ্রাস সত্ত্বেও, গত কয়েক দশকে পাকিস্তানে ধর্ষণের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

    ধর্ষণ কোন মানসিক ব্যাধি নয় যার জন্য কোন ধরণের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, অথবা এটি নিপীড়ন ও আধিপত্য বিস্তারের প্রবণতা থেকে উদ্ভূত হয় না। বরং, এটি সমাজে মানুষের মধ্যকার কলুষিত চিন্তাভাবনা, বিদ্যমান সামাজিক পরিবেশ, ধর্মপরায়ণতার অভাব এবং ইসলামী ব্যক্তিত্ব তৈরিতে রাষ্ট্রের কর্তব্য পালনে অবহেলার ফলাফল। একবার একজন ব্যক্তি তার যৌন চাহিদা পূরণের জন্য ভুল উপায় ব্যবহার করলে, তারা সেই পথেই হাঁটতে থাকে।

    এটা বলাও ঠিক নয় যে ধর্ষণ কেবল নারীদের ইসলামি পোশাকবিধি অনুসরণ না করার ফলেই ঘটে, কারণ যারা এই পোশাকবিধি অনুসরণ করে তারাও ধর্ষিত হয়। তবে, উদারপন্থী পুঁজিপতি শ্রেণীর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল নারী ও পুরুষদের যথাযথ ইসলামি পোশাকবিধি পালন না করার সুযোগ দেওয়া। সুতরাং, এই অসুস্থ মানসিকতার লোকেরা এই বিষয়ে স্পষ্ট ইসলামী আদেশ-নিষেধকে আক্রমণ করার জন্য ইসলামী পোশাকবিধি অনুসরণকারী নারীদের সাথে জড়িত ধর্ষণের ঘটনাগুলিকে ব্যবহার করে। এখানে বোঝার বিষয় হল যে ইসলামের আদেশ-নিষেধ বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে না। অতএব, শুধুমাত্র নারীদের উপর ইসলামী পোশাকবিধি প্রয়োগ করে ধর্ষণের সমস্যা সমাধান হবে না, এবং শুধুমাত্র এই ধরনের অপরাধের জন্য ইসলামী শাস্তি প্রবর্তন করেই এর সমাধান হবে না। প্রকৃতপক্ষে, বর্তমান ব্যবস্থার মধ্যে ইসলামী শাস্তি প্রবর্তন, নারীদের ব্যাপকভাবে বস্তুনিষ্ঠ করে তোলার মাধ্যমে, কেবল এই ধারণা তৈরি হবে যে তারা এই সমস্যার সমাধান করতে পারবে না এবং তাই তারা অকেজো। কারণ শুধুমাত্র ইসলামী শাস্তি, সমাজকে ধর্ষণের দিকে পরিচালিত করে এমন সমস্ত কারণ থেকে মুক্ত করে না, যার জন্য ইসলাম পৃথক নিয়ম দিয়েছে। অতএব, শুধুমাত্র ইসলামী শাস্তির দাবি একটি অসম্পূর্ণ দাবি। এই সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান হবে না যতক্ষণ না আমাদের সমাজ থেকে পশ্চিমা উদারনৈতিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা হয় এবং নবুওয়তের পদ্ধতির খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়, যা জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামকে ব্যাপকভাবে বাস্তবায়ন করবে। এটিই একটি পবিত্র ও সৎ সমাজ গড়ে তোলার একমাত্র উপায়, যা বিশ্বের বাকি অংশের জন্য আলোকময় বাতিঘর হবে।

  • ধর্ষণ মহামারীর একমাত্র প্রতিষেধক ইসলাম

    ধর্ষণ মহামারীর একমাত্র প্রতিষেধক ইসলাম

    বিশ্বব্যাপী চলছে ধর্ষণের মহোৎসব। UNICEF এর ২০২৪ অক্টোবরের সার্ভে মতে বিশ্বজুড়ে প্রতি ৮ জনে ১ জন নারী ১৮ বছর বয়স হবার আগে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। Irony হল, উন্নত বিশ্বে ধর্ষণের হার সবচেয়ে বেশি, যদিও টা উল্টো হবার কথা। প্রতি ৬৮ সেকেন্ডে আমেরিকাতে ১ জন ধর্ষিত হয়। লন্ডনে ২০২৩ সালে পুলিশের কাছে গড়ে প্রতিদিন ২৪ টি ধর্ষণের রিপোর্ট জমা হয়েছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশে ধর্ষণের হার এখনও কম হলেও পিছিয়ে নেই। ২০২৫ ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিদিন গড়ে ১২ টি ধর্ষণ মামলা হয়েছে। মনে রাখা প্রয়োজন, ধর্ষণ মানে কিন্তু শুধুই জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন নয়, বরং হিংস্র যৌন সহিংসতা। ছোট ছোট শিশুদের যৌনাঙ্গ চিরে ফেলা বা অন্তঃসত্তা নারীদের গণধর্ষণ-এর ভয়াবহতা ও বীভৎসতা স্বাভাবিক ভাবে আমদের ভারাক্রান্ত করে তুলছে। শেষ পর্যন্ত হত্যার শিকার না হলেও প্রতিদিন বিশ্বব্যাপী হাজারো Rape Victim ও তাদের পরিবারকে এই ধরনের চরম শারিরিক ও মানসিক যন্ত্রনার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।

    এ অবস্থায় সবাই চাইছে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে সমাজ বের হয়ে আসুক, কঠোর আইন, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, এমনকি প্রয়োজনে ধর্ষককে পাথর মেরে হত্যার দাবি তোলা হচ্ছে। আন্দোলনের মুখে আবার সরকার প্রচলিত আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে যদিও স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে বহুবার এই আইনে পরিবর্তন এনেও ধর্ষণ কমানো যায় নি। 

    বাংলাদেশে বিচার জটিলতা আছে একথা ঠিক। ২০১৮ সালের একটি জরিপে বলা হচ্ছে মোট ধর্ষণ মামলার ৩% এর কখনো সাজা হয় না। বাকি ৯৭% এর ক্ষেত্রে হয় আসামিরা গ্রেফতার হলেও জামিন নিয়ে বেরিয়ে যায় কিংবা মামলা খালাস হয়ে যায়। আর মামলা জট, মামলার দীর্ঘসূত্রিতায় আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়া, ব্যয়বহুল মামলা চালানোর অপারগতাসহ জেরার মুখে হেনস্তা ইত্যাদির কারণে মামলা বিমুখতা তো আছেই। কিন্তু বিচারহীনতা বা আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকাটাই যদি মূল সমস্যা হত তাহলে কিন্তু যেসব দেশে আইনের প্রয়োগ আছে সেখানে ভিন্ন চিত্র দেখতে পেতাম। যেমন: নর্থ কোরিয়া। সেখানে রেপের শাস্তি Death by Firing Squad। সেখানেও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর রিপোর্ট অনুসারে ৯০% মেয়ে কখনো না কখনো সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট এর শিকার হয়। চীনের বিচার বিভাগ অনেক দ্রুত কাজ করে। বেশিরভাগ ধর্ষণের মামলা ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। মৃত্যুদণ্ড কিংবা আজীবনের জন্য নপুংসক করে দেয়া হয় ধর্ষককে। কিন্তু সেখানেও দৈনিক ৮৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে যদিও বেসরকারি তথ্যমতে সেটা প্রকৃত সংখ্যার মাত্র ১০% । বাংলাদেশ যে বৃটেনের বিচার ব্যাবস্থাকে আদর্শ ধরে অনুসরণ করে, সেখানেও ৮১% মহিলা যৌন হয়রানির শিকার ।  

    তারপরও সমস্যার গোঁড়ায় না যেয়ে কেবল দ্রুত কঠোর আইন বাস্তবায়নের ব্যর্থ সমাধানকেই বার বার সামনে আনা হয়। যেন আর কিছু করার নাই। তবে এটা ঠিক ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থায় আসলেও কিছু করার নেই। কারণ সমস্যার গোঁড়াতে হাত দিলে গেলে দেখা যাবে উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য এই ব্যাবস্থাই দায়ী, এই ব্যবস্থাই ধর্ষণ রোগের কারণ ও পালনকারী। তাই কোনভাবে এই ব্যাবস্থার অধীনে থেকে এই সমস্যর সমাধান করা যাবে না।  

    কেন ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থা ধর্ষণ নামক মহামারীর জন্মদাতা ও পালনকারি?

    ১) স্রষ্টা বিবর্জিত ধর্মনিরপেক্ষ এই ব্যবস্থায় কোন সমাজ ব্যবস্থা নেই অর্থাৎ সমাজে নারী-পুরুষ কিভাবে মিলামিশা করবে বা কার দায়িত্ব কর্তব্য কী হওয়া উচিত ইত্যাদি। এটা তারা ছেড়ে দিয়েছে তাদের ব্যাক্তিগত খেয়াল খুশির উপর। যে যার মত Freedom practice করবে সর্বোচ্চ ইন্দ্রিয় সুখ প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে, আর এই ভিত্তিতেই নিজেদের করণীয় তারা নিজেরা ঠিক করে নিবে। শুধু শর্ত দিয়েছে যেন একজনের স্বাধীনতা চর্চা অন্যজনের স্বাধীনটাকে বাধাগ্রস্থ না করে। একটা রাস্তাতেও যদি কোন যান চলাচল ব্যবস্থা না থাকে, যে যার মত গাড়ি চালায়, সেই রাস্তা  চলাচল অনুপযোগী ও দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে পরবে, আর এখানে পুরো সমাজের কথা বলা হয়েছে। ফলে পুরো সমাজ আজ বিশৃঙ্খলাময়, সাধারনভাবে দুর্বলদের জন্য বিশেভাবে নারী ও শিশুদের জন্য আজ তা জঙ্গলে পরিনত হয়েছে যেখানে জান-মাল-সম্মান বাঁচাতে তাদের প্রতিনিয়ত ছুটতে হচ্ছে আর ধাক্কা খেতে হচ্ছে। নারী পুরুষের সম্পর্কের ভিত্তি “স্বাধীনতা” ঘোষণা দিয়ে এই ব্যবস্থা অনেকগুলো সমস্যার জন্ম দেয়:

    প্রথমতঃ স্বাধীনতার কোন সংজ্ঞা নাই। তাই যে যার যার মত তাঁর স্বাধীনতা ডিফাইন করবে। একটা ছেলে বা একটা মেয়ে সমাজে কী করবে তারা তা নিজেদের সুবিধা বা খেয়াল খুশি মত ঠিক করবে। কোন পুরুষ তাঁর পুরুষত্ব হিংস্রতার তীব্রতার উপর ভিত্তি করে ঠিক করতে পারে আর মেয়েরা Bold and Beautiful হওয়াকে সমাধান ভাবতে পারে। যার যার জায়গায় সে সে ঠিক। আমরা দেখতে পাই পরস্পরকে প্রমান করার চেষ্টায় তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপুর্ণ এক অসহিষ্ণু সমাজ যেখানে পারস্পরিক ঘৃণা, অসুস্থ প্রতিযোগিতা, অসম্মান আর সন্দেহ সবার জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। 

    দ্বিতীয়তঃ আছে পুঁজিপতিদের দৌরাত্ম। তারা মিডিয়া ও তাদের নিয়ন্ত্রিত এই ব্যবস্থা ব্যবহার করে বিশেষ করে কম বয়সী নারীদের স্বাধীনতার মুলা ঝুলিয়ে কৌশলে তাদের স্বাধীনতা হরণ করে। রুপালি পর্দায় ঝলমলে উপস্থিতির লোভ দেখিয়ে তাদের Beauty Product হিসেবে উপস্থাপন ও ব্যবহার করে। অল্প বয়সি মেয়েরা সহজেই এই ধূর্ত ভণ্ডদের থাবায় চলে আসে আর তারপর বের হতে পারে না। তাদের পরবর্তী অভিজ্ঞতা #metoo আন্দোলন ভাল ভাবেই সামনে নিয়ে এসেছে।  Beauty Industry থেকে ২০২৪ এ Officially ৭১৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, এর সাথে  Prostitution ও  Porno Industry থেকে আয় যোগ করলে এক অবিশ্বাস্য উপার্জন সংখ্যা পাওয়া যাবে। তাই তারা যে অন্যর স্বাধীনতা ভোগের উপকরণে পরিনত হয়েছে তা বুঝতে বুঝতেও অনেক দেরি হয়ে যায়।

    তৃতীয়তঃ তাছাড়া ইন্দ্রিয় সুখ বিশেষ করে যৌনতাকে এই ব্যবস্থা এমনভাবে উপস্থাপন করে যে খাদ্য-বস্ত্র-চিকিৎসা না হলেও চলবে কিন্তু নারী পুরুষের অবাধ মেলা মেশা আর যথেচ্ছা যৌনাচারের স্বাধীনতা ছাড়া চলবে না। সব ধরনের মিডিয়াতে বিবাহ পূর্ব আর বিবাহ বহির্ভূত ছাড়াও যেকোন লিঙ্গের যে কোন উপকরণের সব ধরনের শারীরিক সম্পর্ককে এমন Creative way  তে সবার সামনে উপস্থাপন করে যে Live Together এখন সামাজিক প্রথায় পরিণত হবার পথে। চলছে Pornography এমনকি Child পর্ণ কেন্দ্রিক রমরমা ব্যাবসা। এসব বিকৃত যৌনাচারের সহজ শিকার হয় শিশু, প্রতিবন্ধি, দুর্বল বা হাতের কাছে থাকা নারী।

    ২) এই ব্যবস্থা একটা অবাস্তব শর্ত দিয়েছে যে অন্যর স্বাধীনতা নষ্ট না করে যথেচ্ছা স্বাধীনতা ভোগ কর, রাষ্ট্র বাধা দিবে না। তারমানে সীমাবদ্ধ স্বাধীনতা, যা সবসময় মানুষ ছাড়িয়ে যাবার সুযোগ খুঁজবে, আইন কে ফাঁকি দিয়ে বা আইনের সুযোগ নিয়ে। অবাক হবার কিছু নাই যে মোট ধর্ষিতদের মধ্য একটা বড় অংশ তাদের আপনজন অর্থাৎ বাবা, শ্বশুর, মামা, চাচা, ভাই বা স্বামী দ্বারা আক্রান্ত। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে নালিশ করা কি সহজ কথা?

    তাছাড়া দিন শেষে কখনই ২ ব্যাক্তির স্বাধীনতা এক সাথে সংরক্ষিত হয় না, শুধু শক্তিশালী ব্যক্তির স্বাধীনটাই নিশ্চিত হয়। আমরা জানি Donald Trump or Bill Clinton or Bill gates দের  স্বাধীনতা সংরক্ষিত হয়েছে, Monica দের নয়, যতোই তারা আইনি লড়াই চালাক।

    ফলে দিনশেষে ধর্ম নিরপেক্ষ ব্যবস্থার অবাধ স্বাধীনতা নামক ঘোড়ার ডিমের চর্চার ভুক্তভোগী আসলে কারা হয়? যারা বড়লোক, প্রতিষ্ঠিত নারী বা পুরুষ তারা কিন্তু ভুক্তভোগী হয় না বরং প্রান্তিক নারী-শিশু-পুরুষ সহ তুলনামুলক দুর্বল মানব অংশ। সুযোগ সন্ধানিরা ওঁত পেতে থাকে শিকারের আশায়। ফলে এই ব্যবস্থায় ধর্ষণ একটি স্বাভাবিক পরিনতি। তাই এই ব্যবস্থার অধীনে কোন কঠোর আইন বা বিচার তা যদি ইসলাম থেকেও নেয়া হয়, তবু ধর্ষণ কোন ভাবে কমবে না, কমে নাই বরং বাড়ছে এবং বাড়বে। ধর্ষণ মহামারীর উৎস ধর্ম নিরপেক্ষ ব্যবস্থা থেকে যারা সমাধান বের করার চেষ্টা করছে তারা আসলে সত্যিকার ভাবে সমাধান চাইছে না, বরং মানুষের অসহায়ত্ব আর বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে তাদের অজ্ঞতাকে পূঁজি করে এই ব্যর্থ ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে চাইছে।

    সমাধান কী?

    শুধুমাত্র ইসলামী জীবন ব্যবস্থার সামগ্রিক বাস্তবায়ন ধর্ষণের এই মহোৎসব বন্ধ করতে পারে। ইসলামের জীবন ব্যবস্থা ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটা ইউনিক সিস্টেম, যেখানে ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা আল্লাহ থেকে কোন কিছু নিবেই না সেখানে ইসলাম আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ছাড়া আর কারও কাছ থেকে কিছু নিবে না। “আর আমি আপনাকে দ্বীনের বিধিবিধানের উপর প্রতিষ্ঠিত করেছি, অতএব আপনি তা অনুসরণ করুন এবং জ্ঞানহীনদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করবেন না” (সূরা আল-জাসিয়া, ১৮)। আর এই জীবনব্যবস্থা থেকে উঠে এসেছে ইসলামের সামাজিক ব্যবস্থা বা সোশ্যাল সিস্টেম। শুধুমাত্র এই ব্যবস্থাই নির্দেশ করেছে একটা সমাজে নারী পুরুষ কিভাবে চলবে, তাদের সম্পর্কে সীমারেখা গুলো কী রকম হবে, তাদের দায়িত্ব কর্তব্য, বিয়ে, তালাক অভিভাবক হিসেবে করণীয়সহ যাবতীয় নিয়ম কানুন যা তাদের মাঝে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও আক্রমণাত্মক সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে পারস্পরিক সম্মান ও সহযোগিতামূলক সহবস্থান নিশ্চিত করে। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কিভাবে শুধু মুসলিম নারী নয় বিশ্বজুড়ে সকল নারী-পুরুষ-শিশু আর দুর্বলকে নিরাপদ করবে তা বোঝার জন্য এই ব্যবস্থার কিছু দিক সংক্ষেপে তুলে ধরছি:  

    ১) ইসলামে  নারী মানেই সম্মান; একটা পুঁজিবাদী সমাজ, যেখানে নারীকে তাঁর সৌন্দর্য, সম্পদ, Family Status আর উপার্জনের ভিত্তিতে যাচাই করা হয়, সেখানে ইসলাম মুসলিম-অমুসলিম, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সুন্দর-অসুন্দর, ধনী-দরিদ্র, কর্মজীবি বা গৃহিণী প্রতিটি নারীর সম্মান ঘোষণা করেছে।  শুধুমাত্র একজন সম্মানিত ব্যক্তি নারীদের সম্মানের সাথে আচরণ করে, আর কেবল অজ্ঞ ও নীচ ব্যক্তি তাদের অবমাননা করে” ( আবু দাউদ)। কেউ তাদের ছোট করে কথা বলতে পারবে না ইভটিজিং তো অনেক পরের কথা। তবে এর মাঝে যার তাকওয়া বা আল্লাহ্‌ভীতি অর্থাৎ আল্লাহর আদেশ নিষেধ যথাযথ ভাবে মেনে চলার প্রবণতা যে নারীর মধ্যে যত বেশি সে তত সম্মানিত। বলা হয়েছে, পৃথিবীতে সকল কিছু মূল্যবান কিন্তু সবচেয়ে মূল্যবান হচ্ছে একজন তাকওয়াবান নারী। স্বয়ং আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এই Certificate দিয়েছেন।

    ২) এই ব্যবস্থায় ইসলাম নারী বা পুরুষ কাউকেই স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ দেয়নি। আল্লাহ্‌ নারী-পুরুষ উভয়ের স্রষ্টা আর তিনি প্রত্যেকের জন্য সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ, চলাফেরা, আচরন, এমনকি দৃষ্টি পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত হবে। যেমন, ঘরের বাইরে প্রত্যেক নারীকে আল্লাহ্‌ তায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত পোশাক পরতে হবে। পাশাপাশি পুরুষদের তাদের দৃষ্টি সংযত রাখতে আদেশ করেছেন। “মুমিন পুরুষদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থান সংযত রাখে” (সূরা আন-নূর, ৩০)।  আলি (রা) বলেছেন, পরনারীর প্রতি প্রথম দৃষ্টি ভুলবশত হতে পারে কিন্তু দ্বিতীয়টি শয়তানের পক্ষ থেকে। এই দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে যে কোন নারী আজকে সাক্ষ্য দিবে এমনকি পর্দা করার পরেও পুরুষদের লালসা পূর্ণ দৃষ্টি কিভাবে তাদের অপমান করে।

    ৩) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইসলামি সমাজে ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশাকে নিষিদ্ধ করেছেন। আবু হুরায়রা রা হতে বর্ণিত: রাসুল (সা) বলেছন, “পুরুষদের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট প্রথম সারি আর সর্বনিকৃষ্ট শেষের সারি আর নারীদের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট শেষের সারি আর সর্ব নিকৃষ্ট ১ম সারি।” এই দলিল থেকে বের হয়ে আসে পুরুষদের সারি নারীদের থেকে পৃথক ও দূরবর্তী হবে। এর ভিত্তিতে সমাজে নারী-পুরুষের পরিপূর্ণ পৃথকীকরণ নিশ্চিত করা হবে। ইসলাম কিন্তু মেয়েদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে বাধা দেয়নি আবার বাধ্যতামুলকও করেনি বরং রুজি-রুটি উপার্জন ছেলেদের জন্য ফরয আর মেয়ের জন্য ঐচ্ছিক করেছে কারণ তাকে পরিবার দেখাশোনার কষ্টসাধ্য কাজ সামলাতে হয়।প্রয়োজনীয় কারণে পবালিক প্লেসে নারী-পুরুষের কথাবার্তা হতেই পারে,  যেমন কেনা-কাটা, বানিজ্য, চাকুরি, লেখাপড়া, গবেষণা ইত্যাদি প্রয়োজনে তারা কথা বলবে এবং সহযোগিতা করবে কিন্তু বিয়ে-শাদি, সামাজিক অনুষ্ঠান, যানবাহনসহ যেখানে প্রয়োজন সেখানে তাদের পৃথকীকরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।   

    আবার ঘরের ভিতর বা ব্যক্তিগত স্থানে গায়ের মাহরাম (যাদের সাথে বিয়ে বৈধ) এর সামনে নিজেদের সৌন্দর্য এবং কণ্ঠস্বরের কোমলতা প্রকাশ না করার আদেশ দেয়া হয়েছে। তাদের সাথে এমনকি একা থাকার ব্যপারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। “কোনো পুরুষ যেন কোনো নারীর সঙ্গে নির্জনে অবস্থান না করে, কারণ তখন তাদের সঙ্গে তৃতীয় ব্যক্তি হয় শয়তান” (তিরমিজি ২১৬৫)। তাই যত তাকওয়াবান হিজাবি হোক না কেন, কিংবা যত বড় হুজুর আর মাদ্রাসার প্রিন্সিপালই হোক না কেন, কোন মেয়ের সাথে একাকী থাকা  নিষিদ্ধের মাধ্যমে  ছেলেদের  মিনিমাম Temptation তৈরির পথও আল্লাহ বন্ধ করে দিয়েছে ।   

    তবে অমুসলিম নর-নারী Public place এ আল্লাহর বিধান অনুযায়ী পোশাক ও মেলামেশা করলেও তারা তাদের নিজ গৃহ বা ব্যক্তিগত জায়গায় নিজেদের মত পোশাক বা খাওয়া-দাওয়া বা মেলামেশায় তাদের মত নিয়ম মানতে পারে, সে স্বাধীনতা ইসলাম তাদের দিয়েছে।

    ৪)  এই সমাজে যেভাবে যিনা বা বিয়ে হীন যৌন সম্পর্ক কে সহজ আর বিয়েকে কঠিন করা মাধ্যমে মানুষের যৌন চাহিদা পুরণকে একটি বিকৃতির পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে, ইসলাম ঠিক তার উল্টো। যিনা কে আল্লাহ্‌ হারাম করেছে “আর ব্যভিচারের নিকটেও যেও না, নিশ্চয়ই এটি একটি অশ্লীল কাজ এবং খুবই নিকৃষ্ট পথ” (সূরা বনী ইসরাইল: ৩২)। ইসলামে বিয়েকে উৎসাহী করা হয়েছে। রাসুল (সা) বলেছেন, “বিয়ে আমার সুন্নাহর অংশ। যে আমার সুন্নাহ অনুসরন করে না তাঁর সাথে আমার কিছু নাই। বিয়ে কর, কারণ আমি অন্য জাতির সামনে তোমাদের সংখ্যা নিয়ে গর্বিত হতে চাই” ইবনে মাজাহ। বিয়ের একমাত্র উদ্দেশ্য শারিরিক সম্পর্ক নয় বরং নেক সন্তানে দুনিয়া আবাদ করা। ইসলামী রাষ্ট্র দ্রুত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে যেন দ্রুত পরিবার গঠনে কাউকে বেগ পেতে না হয়। এভাবে আল্লাহ্‌ প্রয়োজন দিয়েছেন এবং সুন্দরভাবে টা পুরণের উপায় করে দিয়েছেন যা মানুষের Nature এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।  

    ৫) আজকে আমরা শুধু রেপ না, নারীদের সাথে ভয়াবহ Violence দেখতে পাই নিজের মাকে আঘাত করা, স্ত্রীকে যৌতুকের দায়ে মেরে ফেলা, কন্যা সন্তান কে এই যুগে এসেও বোঝা ভাবা হয়। অপরদিকে ইসলামী সমাজে স্ত্রী-মা—বোন-সন্তান – সকল পর্যায়ে নারীরা শুধু সম্মানের নয়, অত্যন্ত আদরের। রাসুল সা বলছেন “যে ব্যক্তির একটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে এবং সে তাকে জীবন্ত কবর দেয়নি, তাকে অপমান করেনি এবং তার পুত্রসন্তানের তুলনায় তাকে অবহেলা করেনি, আল্লাহ তাকে সেই কন্যার কারণে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন (Ahmad)। এ প্রিন্সিপাল থেকে একটা সমাজে ও পরিবারে মেয়েরা সব চাইতে আদরের এবং ভালোবাসার পাত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। তাদেরকে জান্নাতের টিকেট বিবেচনা করে তাকে তাঁর বাবা-ভাই-মামা-চাচা সকলে আগলিয়ে রাখে এবং দায়িত্বর সাথে সৎ পাত্রস্থ করে। যখন তার বিয়ে হয়ে যায়, তখন হাসবেন্ড তাকে  সম্মান ও ভালবাসার সাথে আগলিয়ে রাখে কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবনযাপন করো।” (সূরা আন-নিসা: ১৯)। আর মায়ের পায়ের নিচে জান্নাতের কথা তো সবাই জানি। এভাবে ইসলামী সমাজ নারীকে আদরে-সম্মানে সব সময় সিক্ত রাখে।

    ৬) মুমিন নারী ও পুরুষ আল্লাহর ভয়ে, আখিরাতে জবাব্দিহিতার চিন্তায় যা তাদের জান্নাত জাহান্নামের নির্ধারণকারি এই সীমা গুলো নিজেরাই মেনে চলবে এবং অন্যরা যেন মানে সে ব্যাপারে সামাজিক ভাবে সচেতন থাকবে। ফলে তাকওয়া ফ্রন্টলাইন ডিফেন্স হিসেবে কাজ করে। আর অমুসলিমরা দুনিয়াতে ভাল ও নিরাপদ থাকার আশায় এই বিধান গুলো মেনে চলবে। 

    ৭) তাই বলে নারীর নিরাপত্তাকে শুধু তাকওয়ার হাতে ছেড়ে দেননি বরং শক্তিশালী বিচারব্যবস্থা দ্বারা সুরক্ষিত করেছেন। পরস্পরের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে শুরু করে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে তাঁর অবস্থান সুক্ষাতিসুক্ষভাবে জানিয়ে দেয়ার পর, অপরাধের সকল দরজা বন্ধ করার পর কোন নারীপুরুষ কেউ এই সীমা রেখা অতিক্রম করলে মাত্রা অনুযায়ী আল্লাহ্‌ তায়ালা শাস্তির বিধান দিয়েছে যা খিলাফাহ রাষ্ট্র প্রয়োগ করবে। যেমন: যিনার শাস্তি ১০০ বেত্রাঘাত বা পাথর মেরে হত্যা, ধর্ষণের মাত্রা ভেদে বিভিন্ন শাস্তি, তাদের ভরণপোষণ, সম্পদের অধিকার লঙ্ঘিত হলে শাস্তি এমনকি নারীর বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন গুজব ছড়ালে এমনকি মুখের কথায় তাঁর সম্মান নষ্ট করলে উৎস নিশ্চিত করে তাকে জনসম্মুখে ৮০টি বেত্রাঘাত করা হবে। অপরাধি ব্যক্তি যে পদমর্যাদার বা পরিবারের হোক না কেন, জনসম্মুখে তাঁর শাস্তি নিশ্চিত করা হলে চুনোপুঁটিরা এমনিতেই সোজা হয়ে যাবে।

    ইসলামের এই ব্যবস্থা শুধু তাত্ত্বিক আলোচনা নয়। ১৯২৪ সালে খিলাফাহ ধ্বংস হয়ে যাবার আগ পর্যন্ত এই ব্যবস্থা নারীদের সুরক্ষা দিয়ে এসেছে। রাসুল (সা) একজন নারীর অসম্মানের জন্য পুরো বানু কাইনুকা গোত্রকে নির্বাসনে পাঠায়, মু’তাসিম বিল্লাহ একজন নারীকে উদ্ধার করতে আমুরিয়া দখল করে নেয়, এমনকি ১৯২০ সালে খিলাফাতের দুর্বলতম অবস্থায় তুরস্কের একজন ইমাম দখলদার ফরাসি বাহিনির এক সৈন্যকে গুলি করে হত্যা একজন নারীকে অসম্মান করার প্রতিবাদে যা মারাশের যুদ্ধ শুরু করে বলে অনেক ইতিহাসবিদ দাবি করেন। ১৩০০ বছর জুড়ে ১ জন নারীর সম্মানকে ইসলাম যেভাবে রক্ষা করে এসেছে কেন সেই ব্যবস্থা বাদ দিয়ে আমাদের সামনে নানা জোড়াতালি দিয়ে ঘুরে ফিরে সেই ধর্মনিরপেক্ষতা দিয়েই ধর্ষণ সমস্যার সমাধানের প্রতি আহ্বান করা হয়? আজকে প্রতি মুহূর্তে বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার নারী যে চরম অসম্মান ও নিরাপত্তাহিনতার মধ্য দিয়ে অসহায়ের মত জীবন পার করছে তাঁর দাওয়াই আল্লাহ্‌ তায়ালা মুসলমানদের উপর নাযিল করেছেন। তাই আমরা যদি সত্যি এই ধর্ষণ মহামারি থেকে মানবজাতিকে বের করে আনতে চাই তাহলে আমাদের এখন উচিত একই ভুল দাওয়াই বার বার না দিয়ে সমস্যার সমাধানে বিকল্প বিশ্ব ব্যবস্থা ইসলামের সামগ্রিক প্রয়োগে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। যারা ইসলামকে ধর্মীয় গণ্ডিতে আবদ্ধ করে নানা জোড়াতালি দিয়ে ঘুরে ফিরে সেই ধর্মনিরপেক্ষতা দিয়েই ধর্ষণ সমস্যার সমাধান ফেরি করেন তাদের জন্য একটি আয়াতই যথেষ্ট।

    তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে (বাকারা: ৮৫)।

  • মুমিনের জীবনে তাকওয়ার প্রভাব

    মুমিনের জীবনে তাকওয়ার প্রভাব

    আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) তার বান্দাদেরকে কুরআনের অনেক স্থানে তাকওয়া অবলম্বন করতে আদেশ দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে:

    ((يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُواْ رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ))

    “হে মানুষ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন।” [আন-নিসা: ১] এবং তিনি বলেন:

    ((وَاتَّقُواْ اللّهَ إِنَّ اللّهَ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ))

    “এবং আল্লাহকে ভয় করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের হৃদয়ের গোপন বিষয় ভালোভাবে জানেন।” [আল-মায়িদা: ৭] এবং তার এই বলা:

    ((وَاتَّقُواْ اللّهَ إِنَّ اللّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ))

    “এবং আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সব কাজের খবর রাখেন।” [আল-মায়িদা: ৮] এবং হাদিসে যা আহমদ আবু যার ও মু’আজ ইবন জাবাল থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

    «أوصيك بتقوى الله في سِرِّ أمرك وعلانيته»

    “আমি তোমাকে আল্লাহর ব্যপারে তাকওয়া বজায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছি, তোমার গোপন ও প্রকাশ্যে কাজগুলোর মধ্যে।” মু’আজ বলেন: হে রাসুলুল্লাহ আমাকে পরামর্শ দিন, তিনি বললেন:

    «عليك بتقوى الله ما استطعت»

    “তুমি যতটা পারো আল্লাহর প্রতি তাকওয়া বজায় রাখো।” [আল-মুজাম আল-কবীর]। এছাড়া তিনি (সা.) বলেছেন:

    «فاتقوا الله ولو بشق تمرة»

    “একটি খেজুরের টুকরো দিয়ে হলেও আল্লাহর থেকে বেঁচে থাকো।” [সহীহ মুসলিম]। যে ব্যক্তি এইসব টেক্সট মনোযোগ সহকারে পড়বে, সে উপলব্ধি করতে পারবে যে, তাকওয়া শব্দটি কুরআনে অসংখ্য স্থানে এসেছে, এর বিভিন্ন শাব্দিক রূপ কুরআনের ২৩৯টি আয়াতে উল্লেখিত হয়েছে, এবং এ ব্যপারে হাদিসের সংখ্যা গণনা করা কঠিন। এটি এত বেশি সংখ্যকবার উল্লেখিত হয়েছে যে এ ব্যপারে অবাক হওয়ার কিছু নেই, যে কেউ উপলব্ধি করবে যে তাকওয়া এই জীবনের ও পরকালের সুখের চাবিকাঠি।

    তাকওয়ার ভাষাগত অর্থ হলো – ভয় ও শ্রদ্ধা – যেমনটি আল-তাজে উল্লেখিত, এবং লিসান আল-আরব-এ উল্লেখিত – আমি কোনো কিছুতে ভয় পেয়েছি – মানে আমি সতর্ক ছিলাম। এটি কুরআন এবং সুন্নাহ-তে তার ভাষাগত অর্থে উল্লেখিত। তাই আল্লাহর প্রতি তাকওয়া অবলম্বন করা মানে তাকে ভয় করা, শ্রদ্ধা করা, তার আদেশ পালন করা এবং তার নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চলা।

    আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) বলেছেন:

    ((وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُونِ))

    “আমি শুধু জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি, যাতে তারা আমার উপাসনা করে।” [আল-যারিয়াত: ৫৬], এখানে উপাসনা মানে আনুগত্য, যা শুধুমাত্র আল্লাহর আদেশ পালন ও তার নিষেধাজ্ঞা পরিত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত হয়, এ কারণেই মানবজাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তার আনুগত্যের জন্য মানবজাতিকে পুরস্কৃত করেছেন, যখন আমরা এই আয়াতগুলি পর্যালোচনা করি, তখন আমরা লক্ষ্য করি যে পুরস্কার দু প্রকারের: একটি মৃত্যু পরবর্তী এবং অন্যটি দুনিয়াবী জীবনে, প্রথমটি হলো জান্নাত অর্জন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি, এবং তার চেয়েও বড় হচ্ছে পরকালে বিচার দিবসে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) বলেছেন:

    ((لِلَّذِينَ اتَّقَوْا عِندَ رَبِّهِمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ))

    “যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য তাদের রবের নিকট বাগান থাকবে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত হবে।” [আল-ইমরান: ১৫] এবং:

    ((إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ))

    “মুত্তাকিরা (বাগান এবং নির্ঝরিনীর মাঝে থাকবে।” [আল-হিজর: ৪৫] এবং:

    ((وَأُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِينَ))

    “মুত্তাকীদের জন্য জান্নাত নিকটে আনা হবে।” [আল-শুআরা: ৯০] এবং তিনি (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) আরো বলেছেন:

    ((إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٍ))

    “পবিত্ররা নিরাপদ স্থানেই অবস্থান করবে।” [আল-দুখান: ৫১]

    এখন দুনিয়াবী পুরস্কারের বিষয়ে, যা এই শব্দের মূল বিষয়, তা প্রচুর ও বহুবিধ। কুরআনের অসংখ্য দ্যর্থহীন আয়াতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে, যা বিশ্বাসীর জন্য তার জীবনে দুনিয়াবী পুরস্কারের প্রকাশ ঘটাবে, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) বলেন:

    ((وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا))

    “যারা আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তাদের কাজ সহজ করে দেন।” [আল-তালাক: ৪], অর্থাৎ আল্লাহ বিশ্বাসীর কাজ সহজ করে দেন এবং তার জন্য দ্রুত সমাধান তৈরি করেন। আল্লাহ আরো বলেছেন:

    ((وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ))

    “এবং যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য একটি পথ বের করে আনেন, এবং এমন জায়গা থেকে তাকে রিজিক প্রদান করেন, যা সে কল্পনা করতে পারে না।” [আল-তালাক: ২-৩]। এর মানে হলো, যিনি আল্লাহকে ভয় করেন, তার আদেশে ও নিষেধে, আল্লাহ তার জন্য একটি উপায় বের করবেন এবং তাকে এমন জায়গা থেকে রিজিক দেবেন যা তার কল্পনায় ছিল না, আল্লাহ বলেছেন:

    ((يا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَتَّقُوا اللَّهَ يَجْعَل لَّكُمْ فُرْقَانًا))

    “হে যারা ঈমান এনেছ! যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তবে তিনি তোমাদের জন্য সত্য-মিথ্যা চেনার একটি মাপকাঠি তৈরি করে দেবেন।” [আল-আনফাল: ২৯]

  • ধর্ষণ – সেকুলার বিষবৃক্ষের একটি অন্যতম ফল

    ধর্ষণ – সেকুলার বিষবৃক্ষের একটি অন্যতম ফল

    মাগুরায় বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে বোনের শ্বশুরের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় ৮ বছরের শিশু (আছিয়া)। গত ৮ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় শিশুটিকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে লাইফ সাপোর্টে থাকাকালীন অবস্থায় ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হয়। ওই সময় শিশুটি সম্পূর্ণ অচেতন অবস্থায় ছিল।  শিশুটির গলার সামনের দিকে গভীর ক্ষত এবং শরীরের অন্যান্য স্পর্শকাতর স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। পরীক্ষায় শিশুটির ডান ফুসফুসে বাতাস জমা হওয়া (নিউমোথোরাক্স), তীব্র শ্বাসকষ্ট সিনড্রোম, মস্তিষ্কে ব্যাপক ফোলা ধরা পড়ে। এ ঘটনায় দেশজুড়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা এখন মুখে মুখে। ধর্ষককে গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ভিন্ন ভিন্ন ব্যানারে আন্দোলন চলছে। 

    ধর্ষণের মতো বিকৃত মানসিকতার ঘটনা গত কয়েক বছরে ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েই চলেছে। যার কিছু মিডিয়াতে আসে কিছু আসে না। নারীর প্রতি যৌন হয়রানির ঘটনা বাড়ার পাশাপাশি ধরনের ক্ষেত্রেও এসেছে নিত্যনতুন মাত্রা। গত এক দশকে বিভিন্ন ধরণের যৌন হয়রানীর ঘটনা শুনেই আসছি। আমরা বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের সময় টিএসসিতে প্রকাশ্যে সবার সামনে যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটতে দেখেছি। এছাড়াও শুধু গণপরিবহনেই প্রতি বছর একাধিক নারী ধর্ষণ বা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে চলছেন। আমরা কুমিল্লার তনু হত্যার কথা শুনেছি যাকে ধর্ষন করে মেরে জঙ্গলে ফেলে রাখা হয়েছিল। রাজধানীতে এক গারো তরুণীকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে চলন্ত অবস্থায় গণধর্ষণ করার ঘটনা শুনেছি। রাজধানীর অদূরে সোনারগাঁর আড়াইহাজারে চলন্ত বাসে এক নারী শ্রমিককে বাস ড্রাইভার ও সহকারীসহ চারজন মিলে গণধর্ষণ করার কথা জেনেছি। টাঙ্গাইলের মধুপুরে একটি বাসে নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগ শুনেছি। কয়েক মাসের শিশুরাও রেহায় পাচ্ছে না বিকৃত মানসিকতার এই ধর্ষকদের হাত হতে। বিভিন্ন প্রতিবেদন ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছর নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। এবং বলা হচ্ছে অধিকাংশ নির্যাতন ও সহিংসতার ঘটনা নথিভুক্ত হয়না। এসব সহিংসতার মধ্যে রয়েছে, এডিস নিক্ষেপ, অপহরণ, ধর্ষণ, ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা, পাচার, খুন এবং যৌতুকের জন্য নির্যাতন। সর্বশেষ আমরা রাজশাহীতে ডাকাতদল কর্তৃক রাতভর নারীদের ধর্ষন করার খবর জানতে পেরেছি।

    বিষয়টি লক্ষনীয় যে, নারীর প্রতি যৌন হয়রানিসহ নির্যাতন যেমন পাল্লা দিয়ে ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি নারী নির্যাতন প্রতিরোধে তোড়জোড়ও তথা নারীবাদীদের কলাম লেখনী, নারী সংগঠনের সভা সেমিনার, সরকারের মহিলা ও শিশু মন্ত্রণলয়ের সচেতনতামুলক প্রকল্পের মাত্রাও বহুগুন বেড়েছে। সমাধান হিসাবে দেওয়া হচ্ছে পশ্চিমাদের কাছ থেকে ধার করা বুলিসমূহ – নারীকে শিক্ষিত হতে হবে, নারীর সমঅধিকার ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে, নারীদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে ও সর্বোপরি নারীর প্রতি সমাজের পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের মাধ্যমে ঐ নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব। এছাড়া নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। এই সমাধানসমূহ গ্রহণের ফলাফল হিসাবে দেখা যাচ্ছে, নব্বই এর গণঅভ্যত্থানের পর এদেশে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রীর পদ অলংকৃত করেছেন নারী। কিছুদিন আগ পর্যন্তও স্পীকারের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন একজন নারী। নারী শিক্ষার হারও বৃদ্ধি পেয়ে এখন প্রায় পুরুষের সমান। নারীরা দিনে দিনে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বীও হয়ে উঠছে। নারী অধিকার রক্ষাই প্রতিনিয়ত উৎপাদিত ও আমদানী হচ্ছে দেশী বিদেশী এনজিও ও মানবাধিকার সংস্থা যারা নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে প্রত্যেক সরকারই প্রণয়ন করছে ডজন ডজন আইন। পূর্বের আইন সমুহকে আরো কঠোর করা হচ্ছে। পশ্চিমা শক্তিগুলো আমাদের সমাজে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রগামীদের পুরস্কৃতও করছে তাদের অবদানের জন্য। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক নারী দিবসে দেশের অদম্য নারীদের হাতে সম্মাননা পুরস্কার তুলে দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (৮ মার্চ) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠান তিনি এ পুরস্কার তুলে দেন।

    কিন্তু এত কিছুর পরও নারীর প্রতি যৌন হয়রানিসহ নির্যাতন বন্ধ তো স্বপ্নের বিষয়, কমার কোন লক্ষনই আপাতত: দেখা যাচ্ছেনা। বরং এই নির্যাতনের গ্রাফটা দিন দিন আরো উর্ধ্বগামী হচ্ছে। কারণ আমরা নারীর প্রতি যৌন হয়রানিসহ নির্যাতনের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করতে ব্যর্থ হয়েছি। 

    প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান:

    একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় পশ্চিমাদের দেওয়া এই সমাাধানগুলো কত দুর্বল এবং মৌলিকভাবে কত অসার। পরিসংখ্যান বলছে, যেসব দেশ নারী উন্নয়ন সূচক হিসাবে- নারীদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতা, শিক্ষা, অধিকার সচেতনতা, নারী ক্ষমতায়নকে মাপকাঠি বিবেচনা করে তারা নারীকে উন্নত জীবন দেওয়াতো দূরের কথা, নিরাপত্তাই দিতে পারেনি। 

    ভারতে প্রতি ১৫ মিনিটে একজন নারী ধর্ষিত হয় (রিপোর্টেড)। ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইমস রিপোর্ট ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালে ৩১,৬৭৭ জন নারী হয়রানীর শিকার হয়েছেন (The Hindu)। নারী নির্যাতনের প্রতিযোগীতায় অগ্রগামী তারাই যারা যথারীতি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ সবচেয়ে উচ্চকণ্ঠ। যেমন USA এবং UK। পরিসংখ্যানের আলোকে, UK-তে প্রতিদিন ১৬৭ জন নারী ধর্ষিত হয়। USA-তে প্রতি ১৮ সেকেন্ডে ১ জন নারী, স্বামী কর্তৃক শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়। ২০২৪ এর RAINN-এর রিপোর্ট অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সে বছর ৪,৩৩,০০০ নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।

    UK ২.৫ হাজার স্বীকৃত Pedophiles (শিশু যৌন নির্যাতনকারী) লালন করেছে। বৃটেন এর ONS এর তথ্যমতে ২০২৪ সাল সেখানে ২০ লক্ষ নারী নির্যাতন কিংবা নির্যাতনের প্রচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। USA- তে প্রতিদিন ৩ জন নারী তার পার্টনার কর্তৃক হত্যা হয়। ইউরোপ প্রতি ১০ জনে ১ জন নারী যৌন হয়রানীর শিকার হয়। USA – তে প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে একজন নারী ধর্ষিত হয়। (সুত্র: মাইকেল প্যারেন্টি-২০০০ সালে প্রকাশিত The Ugly Truth)

    উপরোক্ত পরিসংখ্যানগুলো কি যথেষ্ট নয় এটা বুঝার জন্য যে নারী নির্যাতন বন্ধের যে দাওয়াই পশ্চিমা সমাজ থেকে গ্রহণ করছি তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।

    অর্থাৎ আমরা সহজে একটা লাইন টানতে পারি যে, ভারত পশ্চিমাদের মূল্যবোধ, ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা ও সংস্কৃতি অনুসরন করেছে যার ফলশ্রুতিতে আজকে ভারতে পশ্চিমা সমাজের ন্যায় নারীর প্রতি যৌন হয়রানিসহ নির্যাতন চরম পর্যায়ে যেখানে দিল্লীকে বলা হয় ধর্ষনের নগরী। ভারতের নাম Re-public of India থেকে Rape-public of India তে পরিবর্তন করা যেতে পারে। আর আমরাও পশ্চিমাদের অনুসরন করে ভারতের পথেই হাঁটছি। যার নমুনা বাসে গণধর্ষনের মত ঘটনা।

    একজন যুবক যখন দিনের পর দিন হলিউড-বলিউডের মুভি, কারিনা-ক্যাটরিনা-সানি লিওনদের আইটেম song, নাটক-সিনেমা-বিজ্ঞাপনে নারীকে খোলামেলা উপস্থাপন করাকে দেখে, স্মার্ট মোবাইলে কম রেটের ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যাবহারে সহজলভ্য পর্ণ সাইট গুলো বিচরণ করে এবং এরপর রাস্তায় বা ক্যাম্পাসে কোন নারীকে সে কোন দৃষ্টিতে দেখবে? যেখানে নারীরাও স্বাধীনতার নামে বা অধিকার আদায়ের নামে নিজেদের উপস্থাপন করছে আকর্ষণীয় রূপে। এক্ষেত্রে নারীদেরকেও বেশি দোষ দেওয়া যায় না। কারণ প্রতিনিয়ত নাটক-সিনেমা-বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নারীদেরকে উৎসাহিত করা হচ্ছে পশ্চিমাদের বা ভারতীয় নারীদের মত আধুনিক হতে। ফলশ্রুতিতে আমাদের সামনে একজন নারী উপস্থাপিত হচ্ছে একটি ভোগ্যপণ্য হিসাবে। ফলে পরকীয়া, ধর্ষন এমনকি ৬ মাসের শিশুটিও বাদ যাচ্ছে না পর্ণ দেখায় অভ্যস্ত যুবকটির লোলুপ হাত হতে। 

    পশ্চিমারা মুনাফা সর্বোচ্চকরন নীতির কারনে যেকোন উপায়কে সঠিক মনে করে। এর জন্য নারীর সম্মান বিক্রি করে মুনাফা আসলেও তারা তা বৈধতা দেয়। তাই পর্ণোগ্রাফি Industry কে West প্রতিষ্ঠা করেছে এবং সারা বিশ্বে এর প্রচার-প্রসার করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যবসা করছে। আর অন্যদিকে নারী মুক্তির বা নারী অধিকারের আন্দোলনকে উৎসাহিত করছে। এটা তাদের স্পষ্ট দ্বৈতনীতি। সর্বোপরি পশ্চিমারা ও আমাদের শাসকগোষ্ঠী নারীদের সম্মান ও নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।

    তাই বলা যা যে, নারীর প্রতি যৌন হয়রানিসহ হত্যা ও নির্যাতনের মূল কারণ হলো- 

    – পশ্চিমারা বাংলাদেশে তাদের দালাল শাসকগোষ্ঠী ও বুদ্ধিজীবিদের মাধ্যমে জীবন সম্পর্কে তাদের মূল্যবোধ (জীবনটাকে উপভোগ করা যেকোন উপায়ে), ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা ও সংস্কৃতির ব্যাপক প্রচার-প্রসার করেছে এবং সর্বত্র নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসাবে উপস্থাপন করেছে।

    – এবং আমরা জনগন না বুঝে তাদেরকে অন্ধ অনুসরণ করছি।

    সমাধান:

    সময় পার হয়ে যায় অথচ যৌন হয়রানির প্রকৃত অপরাধিরা গ্রেফতার হয় না! আর হলেও আইনের ফাক-ফোঁকর দিয়ে তারা কিছু সময় পর পার হয়ে যায়। তাই অনেকে মনে করছেন যে, প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দিলে এই ধরনের অপরাধ কমে যাবে। কিন্তু শুধুমাত্র কঠোর শাস্তিই এই সমস্যার সমাধান করবে না। যদিও দোষীদের সনাক্ত করা ও তাদের বিচারের আওতায় আনার ক্ষেত্রে বর্তমান পুঁজিবাদী ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ ব্যবস্থার বৃটিশ আমলের আইনের ব্যর্থতা অস্বীকার করার উপায় নেই। তথাপি এটা মূল কারণ নয়। অনেকেরই প্রতি বছর এমন অপরাধের জন্য যাবৎ জীবন কারাদণ্ড বা বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হচ্ছে। কিন্তু অপরাধ কমার কোন লক্ষন নেই। মূল কারণ বা সমস্যা এটাও না যে আমরা কত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ করতে পারলাম। নারীর নিরাপত্তার মুল সমস্যা চিহ্নিত করা না গেলে, প্রত্যেক নারীর জন্যও একজন পুলিশ নিয়োগ করলেও নারীর সম্ভ্রম রক্ষা করা যাবে না। যার উদাহরণ স্বয়ং নারী পুলিশ, পুরুষ পুলিশ কর্তৃক নির্যাতনের করুণ চিত্র আমেরিকা, বৃটেন, ভারত বা বাংলাদেশে, কোথাও এর ব্যতিক্রম নেই। 

    অনেকে মোল্লাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলছেন যে, পর্দা করলে নারীরা যৌন হয়রানিসহ নির্যাতন হতে রেহায় পাবে। কিন্তু যখন বোরকা পরার পরও  ধর্ষন হয় তখন অন্যরা বলছে – ‘পোষাকতো তাকে বাঁচাতে পারলনা’ বা ‘আরো কত পোষাক পরলে ধর্ষন করা হবে না’। আমরা ২০১৬’র ঘটনায় তনুকে হিজাব পরতে দেখেছি। এগুলো আসলে ইসলামকে ব্যঙ্গ করে বলা হচ্ছে। কিন্তু গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় যে, শুধুমাত্র পোষাক পরিবর্তন করে এই ধরনের অপরাধ বন্ধ হবে না। বরং সমাজ থেকে পশ্চিমাদের কাছ থেকে ধার করা মূল্যবোধ (জীবনটাকে উপভোগ করা যেকোন উপায়ে), ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা ও সংস্কৃতির আমূল পরিবর্তন করতে হবে।

    এবং সমাধান হিসাবে শুধুমাত্র ইসলামী পোষাক নয় বরং পরিপূর্ণ ইসলামকে গ্রহণ করতে হবে। ইসলামী মূল্যবোধ, ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা ও সংস্কৃতির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে যা কেবল একমাত্র ইসলামি রাষ্ট্র তথা খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই সম্ভব।

    ইসলাম মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে কিভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে অর্জনের জন্য। ইসলামই নারীকে দিয়েছে সম্মান, এবং নিরাপত্তা এবং এই উদ্দেশ্যে ইসলাম প্রথমত ব্যক্তি স্বাধীনতাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। দ্বিতীয়ত সমাজে আল্লাহ প্রতি আনুগত্য উৎসাহিত করা হয়েছে। যার মাধ্যমে নারীর প্রতি সঠিক মানসিকতারও দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিত করা যাবে। ইসলাম সমাজে যৌনতার বিস্তারকে নিষিদ্ধ করে, নারীর দেহের সকল ধরনের বস্তুকীকরন এবং শোষন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে। নারী পুরুষের মধ্যকার সম্পর্ককে কখনও সস্তা করেনা এবং সকল ধরনের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক সমাজ থেকে দূর করে। নারী ও পুরুষের একে অপরের প্রতি আকর্ষন বিষয়ক ও সকল চাহিদার পূরণের একমাত্র উপায় হিসাবে বিবাহকে নির্দেশ করে এবং বিবাহের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী করে। যা কিনা নারী-পুরুষ ও সমাজকে রক্ষা করে। ইসলাম নারীকে সর্বাধিক সম্মান দিতে উৎসাহিত করে। ইসলাম কখনোই সস্তা দামে নারীর সম্মান বিক্রি করে না। রাসুল (সা:) বলেন- এই বিশ্ব এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছুই মূল্যবান। কিন্তু সবচেয়ে মূল্যবান একজন পরহেযগার নারী।”

    ইসলাম নারীর সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। তিনি (সা:) আরো বলেন- “এমন একটা সময় আসবে যখন মহিলারা সানা থেকে হাজরে মাউত পর্যন্ত (নির্ভয়ে রাতের বেলা) পাড়ি দিতে পারবে, জীব-জন্তু ও আল্লাহর ভয় ছাড়া অন্য কোনো ভয় তাদের অন্তরে কাজ করবে না।” আল্লাহর রহমতে খলীফা ওমর (রা:) এর সময় এই হাদীসের বাস্তবতা দেখা গিয়েছিল। আব্বাসীয় খিলাফতের সময় রোমান সীমান্তে কিছু রোমান সৈন্য একজন মুসলিম নারীর কাপড় ধরে টানাটানি করে অপমানিত করলে, সেই নারীর অভিযোগ খলিফার কাছে পৌছলে খলিফা মু’তাসিম বিল্লাহ সৈন্য বাহিনী পাঠিয়ে দিয়েছিল একজন মুসলিম নারীর সম্মান ও নিরাপত্তার জন্য।

    এছাড়া খিলাফত রাষ্ট্র কঠোরভাবে কুরআন-সুন্নাহর আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবে। কেউ ব্যভিচার করলে তাকে পাথর মেরে হত্যা করা হবে। ফলে ঐ ব্যক্তি ২য়বার অপরাধ করার সুযোগ পাবে না এবং অন্যরা ঐ ধরনের অপরাধ করার সাহস পাবে না। ১৩০০ বছরের খিলাফতের ইতিহাসে পাথর মেরে হত্যার ঘটনা অনেক বেশি না। সুতরাং, বোঝা যাচ্ছে শাস্তির চেয়ে সমাজব্যবস্থা ও সমাজে ইসলামী মূল্যবোধ তথা তাকওয়ার পরিবেশ প্রতিষ্ঠার কারণেই ধর্ষনের পরিমান কমে আসে।

    তাই ইসলামি জীবন ব্যবস্থা তথা খিলাফতের অধীনে নারীর প্রতি যৌন হয়রানিসহ সকল ধরনের নির্যাতন বন্ধ হবে কারণ –

    – একজন মুসলিম কুরআন-সুন্নাহর সীমারেখা দ্বারা সীমাবদ্ধ। একজন মুসলিম একমাত্র আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) এর ভয়ে ভীত হয়ে সমাজে নিরাপত্তার হুমকি হতে পারে এরকম ঘৃণ্য কাজ সমূহ থেকে বিরত থাকে।

    – পাশাপাশি খিলাফত রাষ্ট্র কঠোরভাবে কুরআন-সুন্নাহর আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে ন্যায় বিচার চালু রাখে, যার ফলে সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা হয়।

    করণীয়:

    রাসূল (সা) বলেছেন,

    যারা আল্লাহর হুকুম মেনে চলে তাদের সাথে থেকে যারা সেগুলো (আল্লাহর হুকুম)-কে নিজেদের প্রবৃত্তির খেয়ালে লঙ্ঘন করে, (এরা উভয়ই) যেন তাদের মত যারা একই জাহাজে আরোহণ করে। তাদের একাংশ জাহাজের উপরের অংশে তাদের জায়গা করে নিয়েছে এবং অন্যরা এর নীচের অংশে নিজেদের জায়গা করে নেয়। যখন নিচের লোকদের পিপাসা নিবৃত্ত করার প্রয়োজন হয় তখন তাদেরকে জাহাজের উপরের অংশের লোকদের অতিক্রম করে যেতে হয়। (তাই) তারা (নিচের অংশের লোকেরা) নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে নিল, ‘আমরা যদি জাহাজের নীচের দিকে একটা ফুটো করে নিই তাহলে জাহাজের উপরের অংশের লোকদের কোন সমস্যা করব না।’ এখন যদি উপরের অংশের অধিকারীরা নিচের ডেক’এর লোকদেরকে এ কাজ করতে দেয় তবে নিশ্চিতভাবেই তারা সবাই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। অবশ্য তারা (উপরের অংশের লোক) যদি তাদের (নীচের লোকদের)কে এ কাজ থেকে বিরত রাখে, (তবে) তারা (উপরের অংশের লোক) রক্ষা পাবে এবং এভাবে (জাহাজের) সবাই রক্ষা পাবে।” (বুখারী ) 

    সমাজের কোনো ঘটনা বিচ্ছিন্ন কিছু না, পুরো সমাজ একটি ইউনিট এবং নির্দিষ্ট কিছু চিন্তা-ধারণা, চেতনা-আবেগ ও ব্যবস্থা দ্বারা চালিত হয়। সুতরাং সমাজ ব্যবস্থার একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে, সমাজকে এমন সব নির্দিষ্ট কার্যাবলী থেকে বিরত রাখা, যা ঘটলে তা হবে পুরো জাতির জন্য ক্ষতিকর। তাই ধর্ষনের মত বাজে ঘটনার শিকার আমার পরিচিত (মা-বোন-আত্মীয়স্বজন-সহপাঠী) কেউ হওয়ার আগে এ থেকে পরিত্রানের জন্য পশ্চিমা সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তরুণ সমাজকে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং প্রকৃত সমাধান ইসলামি রাষ্ট্র তথা খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে।

    আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

    তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসনকর্তৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববতীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার এবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে, তারাই অবাধ্য। [সূরা নূর: ৫৫]

  • ট্রাম্পের কথায় পশ্চিমাদের প্রকৃত ঔপনিবেশিক চরিত্র ফুটে উঠেছে

    ট্রাম্পের কথায় পশ্চিমাদের প্রকৃত ঔপনিবেশিক চরিত্র ফুটে উঠেছে

    মার্কিন নেতার লুণ্ঠনমূলক “গাজা দখল” এর ভাষা পশ্চিমাদের উপনিবেশ স্থাপনের আকাঙ্ক্ষাকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছে

    সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক গাজাকে দখল করে নেওয়া, এর মালিকানা নিয়ে নেওয়া, একে রিভেরা কিংবা রিসোর্টে পরিণত করা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তার বক্তব্য বিশ্বব্যাপী ঔপনিবেশিক ওদ্ধত্যের এক বহিঃপ্রকাশ হিসেবে সমালোচিত হয়েছে।

    এসব বক্তব্যের মাধ্যমে পশ্চিমাদের আসল চেহারা তথা তাদের ঔপনিবেশিক পুঁজিবাদী ডিএনএকেই কেবলমাত্র উন্মোচিত করে।

    যুদ্ধাপরাধী নেতানিয়াহু ও ট্রাম্প নির্লজ্জভাবে একে অপরকে শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে কাজ করার প্রশংসা করে প্রশংসা করেছেন।

    গাজায় তাদের গণহত্যা – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করার জন্য সহায়তা করেছে – তা-ই কি যথেষ্ট ছিল না?

    গাজা ও ফিলিস্তিন কোন ধ্বংসস্তূপের নাম না

    গাজাকে “বাসযোগ্য নয়” বলে দাবি করার এই অযৌক্তিক প্রস্তাবটি একটি পুরোন ঔপনিবেশিক কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়।

    এর উদ্দেশ্য হল বিভাজন, অস্থিতিশীলতা, ধ্বংস, অস্থিরতা তৈরি করা এবং তারপর নিজেকে এবং নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমাধান হিসাবে উপস্থাপন করা, এবং এই প্রক্রিয়ায় মূল ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে মুছে ফেলা।

    ইসরাইলের সীমানা বাড়ানোর আমেরিকান আকাঙ্ক্ষা

    কয়েক দশক ধরে, পশ্চিমা শক্তিগুলো ফিলিস্তিনের ভাগ্য নির্ধারণ করে আসছে, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নয় বরং জায়নবাদীদের শক্তিশালী করার জন্য এবং প্রতিরোধ দমন করার জন্য।

    গণহত্যা সমর্থনকারী এবং যুদ্ধবাজরা ‘তথাকথিত’ শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে কাজ করছে। প্রথমে ধ্বংসের জন্য অর্থায়ন করছে এবং এরপর পুনর্নির্মাণের দাবি তুলছে। এখন তারা গাজার সরাসরি মালিকানা নিতে চায়, এই প্রক্রিয়ায় ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়। যদিও তারা দাবি করে যে এটি সবই অস্থায়ী!

    এটি এমন কিছু নয় যা আমরা আগে কখনও দেখিনি, এটি মার্কিনিদের পুরনো উপনিবেশবাদ এবং পুঁজিবাদী আগ্রাসন যা বিদ্যমান জায়নবাদী দখলদারিত্বকে প্রসারিত করা এবং যেকোনো মূল্যে তাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষিত করা।

    কিছু মুসলিম শাসক অনেক আগেই ফিলিস্তিনকে বিক্রি করে দিয়েছে!

    ঔপনিবেশিকতাবাদকে সফল হতে হলে, ম্যালকম এক্স যেমন বলেছিলেন, তার জন্য দালাল, প্রক্সি তথা “গৃহপালিত নিগ্রোদের” প্রয়োজন।

    এই ধরনের এজেন্টরা তাদের ঔপনিবেশিক প্রভুদের পক্ষে কাজ করার জন্য রয়েছে এবং বর্তমান মুসলিম শাসকগণ – যারা তাদের পূর্বপুরুষদের মতো – সম্পূর্ণরূপে সহযোগী এজেন্ট।

    গাজায় গণহত্যা প্রত্যক্ষ করার সময় এসব মুসলিম শাসকদের লজ্জাজনক অবস্থান, তাদের “দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান” – যা প্রায় বিলোপ হতে বসেছে – এবং গণহত্যা-প্ররোচনাকারীদের সাথে “স্বাভাবিকীকরণ” এর রাজনৈতিক বিশ্বাসঘাতকতা আজ আমাদের চোখের সামনে পরিষ্কার।

    ট্রাম্প সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন যে, রিয়াদ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের দাবি ত্যাগ করেছে!

    এই শাসকরা আসলে যা ভয় পায় তা হলো তাদের নিজস্ব জনগণের ক্রোধ।

    যদি তারা গাজার জাতিগত নির্মূল এবং মার্কিন উপনিবেশবাদ মেনে নেয় – তাদের নিজস্ব ভূমি ইতিমধ্যেই বিশাল সামরিক ঘাঁটির মাধ্যমে মার্কিন উপনিবেশের অধীনে রয়েছে – তাহলে ভিন্নমত এবং অস্থিতিশীলতা তাদের অবস্থানের জন্য একটি বিশাল হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

    সত্য হলো ট্রাম্প, নেতানিয়াহু এবং গাজা গণহত্যা কখনোই এই শাসক এবং তাদের পূর্বপুরুষদের সহযোগিতা এবং সমর্থন ছাড়া ঘটতে পারত না।

    এই ধরনের শাসকরা:

    • তাদের নিজেদের নাগরিকদের বিক্রি করে দিয়েছে, যেমন, পাকিস্তান ড. আফিয়া সিদ্দিকীর সাথে করেছে
    • ভবিষ্যতের দোহাই তুলে ফিলিস্তিনকে বিক্রি করেছে, যেমন সৌদি আরবের এমবিএস
    • ইহুদিবাদীদের সাথে ক্রমাগত বাণিজ্য এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কের বিনিময়ে গাজা বিক্রি করেছে, যেমন তুর্কির এরদোগান এবং উপসাগরীয় শেখতন্ত্র।

    এটা কোন কারণ ছাড়া বলা হয় না যে কিছু মুসলিম শাসকদের ইসরায়েলের প্রতিরক্ষার প্রথম সারির সদস্য হিসেবে বর্ণনা করা হয়।

    কয়েক দশক ধরে, তারা পশ্চিমা নীতি প্রয়োগ করেছে, ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে এবং শান্তি নামে পরিচিত একটি বিভ্রম প্রচার করেছে।

    ফিলিস্তিনি স্বার্থের জন্য তাদের মুক্তি অনিবার্য

    উপনিবেশবাদীদের পূর্বপুরুষদের (ক্রুসেডারদের) দানবীয়তা হোক বা ইহুদিবাদীদের বর্ণবাদ, জাতিগত নির্মূল এবং গণহত্যা হোক না কেন, গাজা ও ফিলিস্তিন বরকতময় ভূমি এবং এর জনগণ অধ্যবসায়ী এবং প্রতিরোধ ও অটুট চেতনার অধিকারী, যারা আত্মসমর্পণ বা পরাজয় জানে না।

    পশ্চিম তীর, গাজা এবং বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ শরণার্থী শিবিরে বসবাস করেছে। দশকের পর দশক ধরে দখলদারিত্ব, গণহত্যা এবং অবরোধের মধ্যে বসবাস করা সত্ত্বেও, তারা তাদের অধিকারের জন্য সবরের সাথে পুনর্নির্মাণ ও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তারা তাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার এবং ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার জন্য কাজ করে চলেছে।

    দুটি বিষয় পরিষ্কারভাবে স্পষ্ট

    প্রথমত, ইসলামী উম্মাহ এবং ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার লক্ষ্য আগের চেয়েও শক্তিশালী হয়েছে।

    দ্বিতীয়ত, গাজা বা ফিলিস্তিন বিক্রির জন্য নয়। এই জমি নিয়ে দেন-দরবার করার, এটি দান করা বা কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই।

    ঠিক যেমন ১৯০১ সালে এটি বিক্রির জন্য ছিল না, যখন আধুনিক রাজনৈতিক ইহুদিবাদের প্রতিষ্ঠাতা থিওডর হার্জল ফিলিস্তিনে ইহুদি বসতি স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার জন্য জমির বিনিময়ে খলিফা দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের কাছে উল্লেখযোগ্য আর্থিক সহায়তা দিতে চেয়েছিল।

    খলিফা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন:

    “আমি এক ফুট জমিও বিক্রি করতে পারি না, কারণ এটি আমার নয়, বরং আমার জনগণের।

    আমার জনগণ তাদের রক্ত ​​দিয়ে এই সাম্রাজ্যের জন্য লড়াই করে জয়লাভ করেছে এবং তাদের রক্ত ​​দিয়ে এটিকে রঞ্জিত করেছে।

    আমরা এটিকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার আগে আবার আমাদের রক্ত ​​দিয়ে ঢেকে দেব।”

    আমি কীভাবে ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করতে পারি এবং ফিলিস্তিনের সেবা করতে পারি?

    ব্যক্তি পর্যায়ে

    আপনার কণ্ঠস্বরের শক্তিকে অবমূল্যায়ন করবেন না, চুপ থাকবেন না।

    আপনি যদি নীরব থাকেন, তাহলে আপনি নিপীড়নকে চ্যালেঞ্জ ছাড়াই ছেড়ে দিলেন। তাই আপনার পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং সহকর্মীদের সাথে কথা বলুন। গাজার বাস্তবতা এবং পশ্চিমা উপনিবেশবাদ সম্পর্কে তাদের সচেতন করুন।

    এবং যারা কিছুই বলেন না তাদের চ্যালেঞ্জ করুন। তাদের মনে করিয়ে দিন যে নীরবতা হল সহযোগিতা।

    আপনি যখন কথা বলেন, তখন আপনি নিপীড়কের বর্ণনাকে দুর্বল করে দেন এবং ন্যায়বিচারের কারণকে শক্তিশালী করেন!

    অন্যায়ের বিরুদ্ধে উত্থাপিত প্রতিটি কণ্ঠস্বর গুরুত্বপূর্ণ, এবং ইতিহাস দেখিয়েছে যে জনগণ যখন নীরব থাকতে অস্বীকার করে তখন সাম্রাজ্যের পতন হয়।

    প্রভাবশালী পর্যায়ে

    সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাবশালীরা: যদি আপনার কোন প্ল্যাটফর্ম থাকে, তাহলে তাদের মিথ্যা উন্মোচন  করে, সত্য প্রকাশ করে ফিলিস্তিনের পক্ষে তা ব্যবহার করুন!

    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজার “মালিকানা” নিতে পারে এই ধারণাটি ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমি থেকে বিতাড়িত করার এবং ইসরায়েলের আধিপত্যকে বৈধতা দেওয়ার আরেকটি পদক্ষেপ।

    ইহুদিবাদী রাষ্ট্রকে সমর্থনকারী মুসলিম শাসকদের ভণ্ডামি উন্মোচন করুন, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ব্যর্থতা উন্মোচন করুন এবং এই অঞ্চলে পশ্চিমা ঔপনিবেশিক প্রকল্প উন্মোচন করুন।

    আপনি বিশ্বকে দেখাতে পারেন যে এটি “রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন” সম্পর্কে নয় – এটি একটি জনগোষ্ঠীকে মুছে ফেলা এবং উপনিবেশবাদের সাথে সম্পর্কিত।

    এই বিপজ্জনক পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আপনার কণ্ঠস্বর ব্যবহার করুন এবং জনসাধারণকে জাগিয়ে তুলুন।

    আলেম পর্যায়ে

    ইমাম ও আলেমগণ, উম্মাহর কান আছে এবং কথা বলা কর্তব্য; জুমার খুতবায় এই বিষয়টির সমাধান আলোচনা করা উচিত।

    এটি কেবল রাজনৈতিক বিষয় নয় – এটি ন্যায়বিচার, নিপীড়ন এবং মুসলিম ভূমির পবিত্রতা সংক্রান্ত বিষয়।

    গাজার জনগণকে বহিষ্কার করা হচ্ছে, বিদেশী শক্তি তাদের ভূমি দাবি করছে এবং তাদের মর্যাদা ভুলুন্ঠিত করা হচ্ছে।

    মানুষকে মনে করিয়ে দিন যে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো একটি কর্তব্য, এবং নিপীড়নকে প্রত্যাখ্যান করা আমাদের দ্বীনের অংশ।

    যদি উম্মাহর মিম্বরগুলি নীরব থাকে, তাহলে তারা কী উদ্দেশ্যে কাজ করবে?!

    উম্মাহ পর্যায়ে

    এটি একটি মোক্ষম সময়; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে তার ঔপনিবেশিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ঘোষণা করেছে, কিন্তু জনগণকে এটি মেনে নিতে দেয়া যাবে না।

    আমাদের সম্মিলিত কর্তব্য হলো আমাদের আওয়াজ তোলা, এই প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করা এবং স্পষ্ট করে বলা যে গাজা ফিলিস্তিনের জনগণের!

    উম্মাহর রাজনৈতিক ঐক্যের মধ্যেই সমাধান নিহিত

    আমরা প্রতিটি সমাধান প্রত্যক্ষ করেছি, এবং একটি প্রকল্প ছাড়া সব প্রকল্প উম্মাহর জন্য ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের খেলাফতের প্রত্যাবর্তনকে আমাদের সত্যিকারের সমাধানের প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

    আল্লাহর প্রতিশ্রুতি থেকে আমাদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া উচিত নয়। আমাদের অবশ্যই প্রকাশ্যে এবং সাহসের সাথে আমাদের ঢাল – খেলাফত – ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানাতে হবে যা নিশ্চিত করবে যে কোনও মুসলিম ভূমি দখল হয়ে থাকবে না।

    শুধুমাত্র উম্মাহর ঐক্য এবং খেলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে গাজা এবং সমস্ত মুসলিম ভূমি ঔপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত থাকবে।

    উম্মাহ শক্তিহীন নয়। ইতিহাস দেখিয়েছে যে যখন জনগণ উত্থিত হয়, তখন সাম্রাজ্যের পতন হয়।

    ন্যায়বিচারের পক্ষে, ফিলিস্তিনের পক্ষে এবং নিপীড়িতদের মর্যাদার পক্ষে দাঁড়ান। গাজা বিক্রির জন্য নয়।

    প্রবন্ধটি ইংরেজি থেকে ভাবানুবাদ ও ঈষৎ পরিমার্জিত করা হয়েছে

  • ডোনাল্ড ট্রাম্প কি সত্যিই গাজার দখল নিতে চলেছে?

    ডোনাল্ড ট্রাম্প কি সত্যিই গাজার দখল নিতে চলেছে?

    মার্কিন রাষ্ট্রপতি তার অদ্ভুত বক্তব্যের জন্য পরিচিত, কিন্তু এই ধরনের মন্তব্যের চূড়ান্ত পরিণতি কী হবে তা এখনো দেখার বাকি আছে।

    ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতিত্বের একটি ভালো দিক আছে: সে যা আছে তা-ই বলে। এবং আমেরিকা যা ভাবে তা সে গোপন করে না।

    কয়েক দশক ধরে, হ্যারি ট্রুম্যান, বিল ক্লিনটন, বারাক ওবামা, অথবা জো বাইডেন যে-ই হোক না কেন, আমরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি “ন্যায়বিচার করার” কথা বলতে শুনেছি।

    আমরা বারবার “ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র” তৈরির প্রতিশ্রুতি শুনেছি যা রাষ্ট্রের প্রকৃত অর্থে বাস্তবসম্মত নয়!

    ট্রাম্প অবশ্যই তার ভেতরকার কথা বলে থাকে।

    কিন্তু এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমনভাবে কথা বলে থাকে ঠিক যেভাবে আমেরিকা ভাবে তাদের ক্ষেত্রে হওয়া উচিত।

    মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সে বলে,

    “আমেরিকা গাজা উপত্যকা দখল করবে এবং আমরা এতে কাজও করব।

    আমরা এর মালিক হব এবং এ অঞ্চলে থাকা সমস্ত বিপজ্জনক অবিস্ফোরিত বোমা এবং অন্যান্য অস্ত্র নিস্ক্রিয় করে ফেলার দায়িত্ব পালন করব।

    অঞ্চলটি সমতল করব এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনগুলো সরিয়ে ফেলব। এমন অর্থনৈতিক উন্নয়ন তৈরি করব যা এলাকার মানুষের জন্য সীমাহীন সংখ্যক কর্মসংস্থান এবং আবাসন সরবরাহ করবে।

    আমাদের এমন কিছু করার সুযোগ রয়েছে যা অসাধারণ হতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা (আকর্ষনীয় উপকূল)। এটি দুর্দান্ত কিছু হতে পারে।”

    যায়নবাদী রাষ্ট্র মূলত একটি ইউরোপীয় উপনিবেশ

    আমরা যারা কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্য পর্যবেক্ষণ করেছি তারা ভালো করেই জানি যে ফিলিস্তিনের ইহুদিবাদী দখলদারিত্ব মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা স্বার্থের প্রতিনিধিত্বকারী একটি উপনিবেশ ছাড়া আর কিছুই নয়।

    প্রকৃতপক্ষে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশরা মূলত এই দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল।

    কিন্তু এখন, ৭৫ বছরেরও বেশি সময় পর এই প্রথম ট্রাম্প প্রস্তাব করছে যে ফিলিস্তিনের অংশ, অর্থাৎ গাজা উপত্যকা, সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপনিবেশভুক্ত করা উচিত।

    এই বিষয়ে প্রতিটি সচেতন মহল – তা সে ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের মতো ইসরাইলপন্থী পশ্চিমা সরকার হোক কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের দালাল রাষ্ট্র হোক – এই প্রস্তাবের নিন্দা করেছে।

    তারা সকলেই জানে যে এটি অকার্যকর প্রস্তাব।

    মধ্যপ্রাচ্যের দালাল রাষ্ট্রগুলোও নড়েচড়ে উঠেছে

    মধ্যপ্রাচ্যের দালাল রাষ্ট্রগুলো – উপসাগরীয় ও আশেপাশের সরকারসমূহ, যেমন মিশরের সিসির শাসন – নিঃসন্দেহে তাদের সেরা সময়েও বিপজ্জনকভাবে ভঙ্গুর।

    যদি তারা গাজার জাতিগত নির্মূল এবং সরাসরি মার্কিন দখলদারিত্ব মেনে নেয়, সেইসাথে লক্ষ লক্ষ শরণার্থী তাদের দেশে প্রবেশ করে, তবে তারা নিশ্চিতভাবে জানে যে এর ফলে যে ভিন্নমত এবং অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে তা তাদের নিজস্ব অবস্থানের জন্য হুমকিস্বরূপ হবে।

    ট্রাম্পের চিন্তা প্রক্রিয়া বোঝা

    একটি সম্ভাব্য কারণ

    তাহলে উপরের কথা অনুযায়ী এই প্রশ্ন উঠে, ট্রাম্প কেন এই প্রস্তাব দিচ্ছে?

    এর একটা কারণ হতে পারে যে, ট্রাম্পের ব্যবসা করার ধরণই এটি। সে এমন একজন ব্যবসায়ী যে সে যা কিনতে চায় তা এত কম দামে কিনতে চায় এবং তার জন্য দর কষাকষি শুরু করে যে, এটি বিক্রেতার জন্য অপমানজনক হয়!

    কিন্তু একই সাথে সে এমন একজন ব্যবসায়ীও যার পেছনে শক্তি (muscle) আছে।

    সে বাজারের সেই সওদাগরদের মতো যে কৃষকদেরকে দিয়ে একেবারেই কম দামে সবজি বিক্রি করাতে পারে, এমনকি যদি তাদের দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিও থাকে… কারণ তাদের কাছে তা করার মতো আর্থিক শক্তি আছে।

    এবং আন্তর্জাতিক ময়দানে ট্রাম্পের ঠিক এটাই কর্মপদ্ধতি।

    সে আমেরিকার পক্ষে এতটাই দৃঢ়ভাবে এজেন্ডা স্থাপন করে যে এটি যে কোনও বহিরাগত পর্যবেক্ষকের কাছে অযৌক্তিক বলে মনে হবে।

    কিন্তু ফলাফল হল হয় সে যা চায় তা পায়, অথবা সে যা চায় তার একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পায়, এমনকি যদি তাকে তার দর কষাকষির অবস্থানের সাথে আপস করতে বাধ্যও করা হয়।

    এবং এটি কেবল এই কারণে যে সে একটি হাস্যকর জায়গা থেকে তার দর কষাকষি শুরু করেছিল।

    আরেকটি ব্যাখ্যা?

    আরেকটি সম্ভাবনা হল, ট্রাম্প সত্যিই মনে করে যে ইহুদিবাদী আক্রমণে গাজা এতটাই ধ্বংসপ্রাপ্ত যে কেউই এমন অঞ্চলে থাকতে চাইবে না।

    যদি তাই হয় (এবং আমার সন্দেহ আছে যে তা সত্য), তাহলে ট্রাম্প ফিলিস্তিনের জনগণ এবং গাজার জনগণকে চেনে না।

    এই জনগোষ্ঠীকে ১৯৪৮ সালে এবং তার আগে তাদের বাড়িঘর থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল এবং অনেকেই পশ্চিম তীর, গাজা এবং লেবাননের শরণার্থী শিবিরে অথবা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য স্থানে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করে আসছেন।

    ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের নতুন জীবনযাত্রাকে “সুন্দর” বলে মনে করে না। তাই, তারা তার সাথে একমত হবে না, এবং তারা আশা করবে না যে গাজা থেকে স্থানান্তরের তার প্রতিশ্রুতি আজ পর্যন্ত তাদের অভিজ্ঞতার চেয়ে ভালো কিছু হবে।

    ট্রাম্প বোকা না; সে মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে সরাসরি ভালোভাবে অবগত নাও হতে পারে, তবে সে নিজেকে এমন উপদেষ্টাদের সাথে ঘিরে রাখবে যারা বিষয়গুলো জানে এবং বুঝবে যে তার প্রস্তাবগুলি ইহুদিবাদী দখলদারদের বাদে অঞ্চলের যেকোনো গোষ্ঠীর কাছেই অগ্রহণযোগ্য হতে পারে।

    তৃতীয় সম্ভাব্য ব্যাখ্যা

    তৃতীয় সম্ভাবনা হলো, তার এবং যুক্তরাষ্ট্রের অহংকারের কারণে, সে সত্যিকার অর্থেই বিশ্বাস করে যে দেশটির এমন ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব রয়েছে যে এই অঞ্চলে একে একটি সৎ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দেখা যায়।

    সে এমনকি এও বিশ্বাস করতে পারে যে গাজা পুনর্নির্মাণ করে এবং মিশর ও জর্ডানকে শরণার্থীদের গ্রহণে উৎসাহিত করে আমেরিকা এই অঞ্চলে শান্তি আনতে পারবে, একই সাথে উপসাগরীয় দেশগুলোকে স্থানান্তরের জন্য অর্থায়নের জন্য চাপ দিতে হবে যাতে তারা কোনোরকম ভালো পরিস্থিতিতে (সেখানে) বসবাস করতে পারে।

    এই স্তরের অহংকার ও দম্ভ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বিপর্যয়ের বীজ বপন ছাড়া আর কিছু হিসাবে দেখা কঠিন।

    এটি অহংকারের এমন এক পর্যায় যা ইরাক যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে “স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র” আনতে চলেছে অথবা এটিকে স্বাগত জানানো হবে, এই ধারণার চেয়েও বড়!

    যায়নবাদী শাসনের প্রতি পশ্চিমাদের সমর্থন

    গত ১৫ মাস ধরে, গণহত্যা, ফিলিস্তিনের জাতিগত নির্মূল এবং অকথিত যুদ্ধাপরাধের সমর্থনে আমরা পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিটি পবিত্র মূল্যবোধ (sacred cow)-কে তাদের নিজস্ব হাতে জবাই করতে দেখেছি।

    আমরা দেখেছি যে পশ্চিমা নেতারা রাজনৈতিকভাবে এটিকে সমর্থন করেছে এবং সামরিকভাবে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের জন্য ইহুদিবাদী দখলদারদের অস্ত্র সরবরাহ করেছে। এই নতুন প্রস্তাব একই দিকের কেবল আরেকটি পদক্ষেপ।

    ট্রাম্প বিশ্বের অন্য অংশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দখলকে ন্যায্যতা দিচ্ছে, কারণ সে মনে করে আমেরিকা পারবে!

    উপসংহার

    আমার বিশ্বাস, হয় ট্রাম্প এই পরিকল্পনা থেকে সরে আসবে এবং কম কিছু পাবার জন্য আপস করবে – যদিও সেটাও নিঃসন্দেহে ফিলিস্তিনিদের জন্য ক্ষতিকর হবে – অথবা যদি সে এগিয়ে যায়, তাহলে সে ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধের চেয়েও অঞ্চলটিকে বেশি অস্থিতিশীল করবে।

    এবং যদি অঞ্চলটি অস্থিতিশীল হয়, তাহলে সে সেই দিনের জন্য অনুশোচনা করতে পারে যেদিন সে মধ্যপ্রাচ্যে ভঙ্গুর শাসনব্যবস্থার পতনের সূচনা করেছিল, যারা কয়েক দশক ধরে এই অঞ্চলের জনগণের স্বার্থের চেয়ে তাদের নিজস্ব এবং পশ্চিমা স্বার্থ সুরক্ষিত করে আসছে।

    প্রকৃতপক্ষে, এটিই হতে পারে ফিলিস্তিনের মুক্তি এবং এই অঞ্চলে আরও উন্নততর শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার দিকে প্রথম পদক্ষেপ, যা সকল মানুষের জন্য শান্তি, ন্যায়বিচার এবং নিরাপত্তা বয়ে আনবে।

    কেবলমাত্র ইসলামী শাসনের ইতিহাসেই মুসলিম, ইহুদি এবং খ্রিস্টানরা যে কোনও উল্লেখযোগ্য সময়ের জন্য শান্তি ও ন্যায়বিচারের সাথে বসবাস করতে পেরেছে এবং করেছে।

    আমরা দু’আ করি যে আমরা সেই সময়টি আবারও পুনরুদ্ধার হতে দেখতে পাব!

  • গাজার মুসলিমদেরকে বাস্তুচ্যুত করার ট্রাম্পের নীতিকে প্রত্যাখ্যান করা মুসলিমদের ঈমানি দায়িত্ব

    গাজার মুসলিমদেরকে বাস্তুচ্যুত করার ট্রাম্পের নীতিকে প্রত্যাখ্যান করা মুসলিমদের ঈমানি দায়িত্ব

    দীর্ঘ ১৫ মাসের ধংসযজ্ঞের পর গত ১৫ জানুয়ারী ইসরাঈল ও হামাস এর মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয় এবং গত ১৯ জানুয়ারী হতে তা কার্যকর হতে শুরু হয়েছে যা এখনো চলমান। আমরা জানি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর নেতৃত্বে তার ক্ষমতায় আসার খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে দেখা যাচ্ছে, যা থেকে পরিস্কারভাবে বোঝা যায় যে মার্কিনিরা ইচ্ছাকৃতভাবেই এ যুদ্ধ এতদিন জিইয়ে রেখেছিল, আরো অনেক পুর্বেই ধ্বংস ও গণহত্যা বন্ধ করা সম্ভব ছিল। 

    ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেছে, তারা তথা যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকা দখল করবে, সেটির মালিক হবে এবং গাজাকে পুনঃনির্মান করবে। এই লক্ষ্যে সে জর্ডান ও মিশরকে গাজার মুসলিমদেরকে ভাগ করে নেয়ার জন্য প্রস্তাব করে এবং বলে তারা তা করতে বাধ্য হবে।  ট্রাম্পের এই ঘোষণা তখন আসলো, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের  প্রত্যক্ষ মদদে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল যুদ্ধ ও গণহত্যার মাধ্যমে গাজার মুসলিমদের মনোবলকে পরাজিত করতে পারে নাই। টানা ১৫ মাস ধরে ইসরায়েলি বোমা হামলায় হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলসহ গাজার ৬০ শতাংশের বেশি অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরও গাজার মুসলিমরা তাদের বরকতময় ভূমিতে ফেরত আসতে শুরু করেছে। ট্রাম্প এবং তার অনুসারীরা, যখন গাজার বাস্তুচ্যুত মানুষদের দক্ষিণ থেকে ধ্বংসপ্রাপ্ত উত্তরে ফিরে আসার দৃশ্য দেখছেন, তাদের হৃদয় ও মনে তাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য একটি অদম্য সংকল্প বহন করছেন, তখন তাদের বুঝতে হবে যে গাজার মানুষ তাদের ভূমিতে পাহাড়ের মতোই দৃঢ় এবং গাজা থেকে তাদের উচ্ছেদ করার জন্য ট্রাম্পের বক্তব্য বা পরিকল্পনা তাদের ভূমি এবং তাদের বিশ্বাসের উপর তাদের দৃঢ়তা এবং অধ্যবসায়ের পাথরে ভেঙে পড়বেমুসলিম উম্মাহর অংশ এই গাজাবাসী তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ করেও পবিত্র ভূমি ও মুসলিমদের প্রথম কেবলা আল-আকসাকে তারা ঘিরে আছে। রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “আল-শাম কত বরকতময়! সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কেন এটা?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি আল্লাহর ফেরেশতাদেরকে আল-শামের উপর তাদের ডানা ছড়িয়ে দিতে দেখছি।’ ইবনে আব্বাস আরও বলেন, ‘আর নবীগণ সেখানে বসবাস করতেন। আল-কুদসে (জেরুজালেমে) এমন একটি ইঞ্চিও নেই যেখানে কোন নবী সালাত আদায় করেননি বা কোন ফেরেশতা দাঁড়াননি।“ (তিরমিযী, আহমদ)। 

    সুতরাং, যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও এ থেকে ভাবার কোনো অবকাশ নেই যে ট্রাম্প এর পলিসি মুসলিমদের পক্ষে যাবে। বরং ট্রাম্প এর নতুন পলিসি যেখানে সে গাজাকে আমেরিকান নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে চাইছে, গাজাবাসীদের আশেপাশের দেশগুলোতে পাঠিয়ে দিতে চাচ্ছে। যেখানে দীর্ঘ যুদ্ধের পর ক্লান্ত পরিশ্রান্ত গাজাবাসী তাদের অঞ্চলে ফিরে আসতে চাইছে, তখন এ ধরণের পলিসি বাস্তবায়নের কথা থেকে বোঝা যায় মার্কিনিরা ফিলিস্তিনের দুঃখ-কষ্টের ব্যপারে কতটা নির্বিকার!!

    আমরা জানি গত প্রায় এক যুগ ধরে বিভিন্ন মেয়াদে ইসরাঈলের কারাগারে বন্দী হয়ে আছে অসংখ্য গাজাবাসি ও ফিলিস্তিনি মুসলিম। এসব কারাগারে দীর্ঘ সময় ধরে নির্যাতন ও অনাহারে থাকা বন্দীগণ মুক্তির কোনো আশা ছিল না। এছাড়াও যারা খোলা আকাশের নিচের গাজা নামক কারাগারে বন্দী জনগণ, তারাও নিত্যনৈমিত্তিকভাবে হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। এবং এই সিলসিলা গত ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন মাত্রায় ভোগ করে আসছে ফিলিস্তিনিরা। সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তিকামী গাজাবাসিরা এই যুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল এবং ইসরাঈলকে দেখিয়ে দিয়েছিল যে তাদের প্রতিরোধের মনোবল এখনও ভেঙে পড়েনি, ঠিক তখনই ইসরাঈল নামক বর্বর অবৈধ রাষ্ট্রটি গাজার মুসলিমদের উপর ইতিহাসের বর্বরোচিত গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো শুরু করে। ১৫ মাসের সেই যুদ্ধ যা আমরা তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে লাইভ দেখতে পেয়েছি, তাতে প্রায় ৭০ হাজারের মতো মানুষ ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে, যার একটি বড় অংশ ছিল শিশু। এছাড়া আরো অসংখ্যা লাশ যা ধ্বংসস্তুপের মধ্যে চাপা পড়ে থাকার কারণে এখনো গণনার বাইরে রয়েছে। এছাড়াও লক্ষাধিক মানুষ হতাহত হয়েছে কারো হাত চলে গিয়েছে, কারো পা চলে গিয়েছে, কারো চক্ষু চলে গিয়েছে, সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গিয়েছে অসংখ্য মানুষ। গাজা শহরের প্রায় পুরোটাই একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে হাসপাতাল থেকে শুরু করে, স্কুল থেকে শুরু করে কোন স্থাপনা কেই আর বাকি রাখা হয়নি ধ্বংস করার ব্যাপারে। উত্তর গাজার ৯০ শতাংশ মানুষ আজ ঘর ছাড়া অবস্থায় রয়েছে। এমনকি মুসলিম বিশ্ব থেকে আগত ত্রাণের গাড়িগুলোকেও ঠিকমতো ঢুকতে দেয়া হয়নি এই অবৈধ রাষ্ট্রের কারণে। দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমাদের ক্রমাগত মাসের পর মাস ধরে এ গণহত্যা দেখে যেতে হয়েছে।

    আর এখন যখন যুদ্ধবিরতির কারণে গাজাবাসী তাদের ঘরে ফিরতে শুরু করেছে, তাদের নির্যাতিত বন্দীদের অনেকে যখন ফিরে আসতে শুরু করেছে – যারা অনেকেই ফিরে তাদের আপনজনদের আর জীবিত খুঁজে পাচ্ছেন না – অনাহারে অর্ধাহারে লক্ষাধিক গাজাবাসী যখন তাদের অঞ্চলে ফিরে তাদের জীবন পুনর্গঠন করার কথা চিন্তা করছেন, ঠিক সেই সময়ে মার্কিনিরা তাদের গাজা ত্যাগ করে চলে যেতে বলছে এবং গাজা দখল করে নেওয়ার কথা বলছে!!

    আমাদের মনে রাখা উচিত, এই ডোনাল্ড ট্রাম্প, যারা মেয়ে একজন ধর্মান্তরিত ইহুদী, যার জামাতা একজন ইহুদী, যেই জামাতা ‘জ্যারেড কুশনার’কে দিয়ে তার ক্ষমতার গত টার্মে সে মধ্যপ্রাচ্যের শাসকদের “শতাব্দির শ্রেষ্ঠ চুক্তি” তথা “ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি” নামক একটি প্রজেক্ট বাস্তবায়নের আহ্বান দিয়েছিল যেখানে সে মাত্র ১৫ শতাংশ ভুমি ফিলিস্তিনিদের দিয়ে বাকি ৮৫ শতাংশ ইসরাঈলীদের হাতে তুলে দেওয়ার একটি মাল্টি বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব দিয়েছিল। যে প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বলে কিছুই থাকবে না, তারা একটি করদ রাজ্যে পরিনত হবে। জি ভাইয়েরা, এটাই পশ্চিমাদের তথাকথিত “টু স্টেট সলুশ্যন” তথা “দ্বি-জাতি সমাধান”, যেখানে আসলে থাকবে একটিই রাষ্ট্র যা হচ্ছে পশ্চিমাদের অনুগত অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল, যা মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্যবাদী রাজনৈতিক ও সামরিক ঘাঁটি হিসেবে কাজ করে।

    ১৯৪৮ সালে পশ্চিমাদের মাধ্যমের মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম ভূমির বুকে এই অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্রটির জন্ম হয়। লক্ষাধিক মানুষকে হারাতে হয় তাদের ভিটামাটি এবং আশ্রয় নিতে হয় পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের রেফিউজি ক্যাম্পে। মুসলিমদের কাছ থেকে তাদের ইসলামি ভূমিকে জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে এরপর পশ্চিমারা তাদেরই গৃহপালিত সংস্থা জাতিসংঘকে ব্যবহার করে এ রাষ্ট্রটিকে বৈধতা দেয়। তখন থেকে এখন পর্যন্ত ভাবে কোনো জবাবদিহিতা ছাড়াই একের পর এক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমাদের এই জারজ সন্তান। পশ্চিমা সাম্রোজ্যবাদী শক্তি সমূহ ক্রমাগতভাবে এই রাষ্ট্রকে মদদ জুগিয়ে গিয়েছে যুগের পর যুগ ধরে অর্থনৈতিক ভাবে সামরিক ভাবে, কূটনৈতিক ভাবে।

    প্রিয় মুসলিমগণ! যেখানে ফিলিস্তিন ভূমি সামরিকভাবে শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্র দ্বারা পরিবেষ্টিত, আমরা পৃথিবীতে দুইশত কোটি মুসলিম জীবিত আছি, মুসলিমদের সামরিক বাহিনীর কয়েক কোটি সদস্য রয়েছে, সেখানে ট্রাম্প এই দুঃসাহস কীভাবে দেখাচ্ছে? কারণ সে জানে বর্তমান মুসলিম শাসকরা পশ্চিমাদের দালাল, তারা মুসলিমদেরকে জাতীয়তার ভিত্তিতে ভাগ করে রেখেছে এবং মুসলিম সামরিক বাহিনীকে ব্যারাকে আবদ্ধ করে রেখেছে। এসব দালাল গোষ্ঠী প্রকাশ্যে নিন্দা জানালেও মার্কিন নীতি বাস্তবায়নে তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অথচ আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন,

    “নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই” [সূরা হুজুরাত: ১০]। 

    আমরা এও দেখছি পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিরা তাদের অর্থায়ন এবং তাদের অস্ত্র যোগানের মাধ্যমে এই গণহত্যার প্রক্রিয়াকে ক্রমাগত সাহায্য করে চলছে। এমনকি তাদের নিজেদের নির্বাচনের ক্ষেত্রেও কে কত বেশি এই গণহত্যার সমর্থনকারী সেটাকে ব্যবহার করে তাদের নির্বাচনে জেতার চেষ্টা করতে দেখেছি। সুতরাং তাদের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ডেমোক্রেট বলেন কিংবা রিপাবলিকান উভয়ই এই অবৈধ রাষ্ট্রের পক্ষে এবং মুসলিমদের স্বার্থের বিরুদ্ধে রয়েছে। যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় ছিল তখন আমরা দেখেছি সে জোরপূর্বক জেরুজালেমকে এই অবৈধ রাষ্ট্রের রাজধানী ঘোষণা করে। এরপর বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর সে নগ্ন ভাবে এই অবৈধ রাষ্ট্র কে সাহায্য করার জন্য প্রতিশ্রুত বদ্ধ হয়। এই সেই বাইডেন যে একসময় বলেছিল, যদি ইসরাইল নামক কোন রাষ্ট্র না থাকতো তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি ইসরাইল নামক রাষ্ট্র তৈরি করতে হতো। ভাইয়েরা, এ যেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কুরআনে বর্ণিত বক্তব্যের বাস্তব রূপ যেখানে তিনি সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

    << ইহুদি ও খ্রিস্টানদের তোমরা বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না, তারা একে অপরের বন্ধু >> 

    মুসলিম বিশ্ব আজকে ৫৮ টির মত টুকরো ভাগ হয়ে আছে আমাদের এই বিভাজনের কারণে এবং আমাদের ঐক্যের অভাবের কারণে আজকে মুসলিম বিশ্ব অভিভাবকহীন। মুসলিম বিশ্বের শাসকরা কেবলমাত্র কিছু চটকদার বুলি, মায়া কান্না এবং নিন্দা প্রস্তাব ছাড়া ফিলিস্তিনের জন্য কিছুই করতে পারে না। ইদানিং তারা সেটাও তেমন করছে না। তাদের ফাঁপা বুলি এবং স্বল্প মেয়াদের ত্রাণ সহায়তা ফিলিস্তিনের জনগণের মুক্তির ক্ষেত্রে কোন কাজেই আসেনা। অথচ মুসলিম বিশ্বের রয়েছে প্রায় ৬০ লক্ষ প্রশিক্ষিত সেনা সদস্য। এরপরও এসব শাসকগোষ্ঠী কেবলমাত্র তোতা পাখির মত পশ্চিমাদের তৈরি করা “টু স্টেট সলিউশন”, “ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি” কিংবা “রিভেরিয়া অব মিডল ইস্ট” এর সমাধান আওড়ে চলছে। এই তথাকথিত সমাধান, যার কথা তারা বলে, তা যদি আদৌ বাস্তবায়িত হয়, সেক্ষেত্রে না থাকবে ফিলিস্তিনের কোন সার্বভৌমত্ব, না থাকবে তাদের কোন নিরাপত্তা। ফিলিস্তিন অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের একটি করদরাজ্যে পরিণত হবে, গোলামে পরিণত হবে। ভাইয়েরা আমরা দেখতে পাচ্ছি এই অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কোন দিকে আগাচ্ছে, তারা একটি বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠা করতে চায় মধ্যপ্রাচ্যে। সেজন্য এখন তারা আমাদের পার্শ্ববর্তী আধিপত্যবাদী রাষ্ট্র ভারতকেও তাদের সঙ্গে নিয়েছে। সেই ভারত, যারা ফিলিস্তিনের হত্যার প্রতিবাদে নিন্দা প্রস্তাব আসলে, সেখানে সাক্ষর করে না। যারা আমাদের বন্যার পানিতে ডুবিয়ে মারে, যারা সীমান্তে ক্রমাগত পাখির মত গুলি করে আমাদের জনগণকে হত্যা করে, সেই শক্তিকে আজকে ইহুদিরা তাদের দেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে মুসলিমদেরকে হত্যা করার জন্য সুযোগ করে দিচ্ছে। আমরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারছি, ভারতের সেনা সদস্যরা এই অবৈধ রাষ্ট্রে গিয়ে “শুধুমাত্র আনন্দ লাভ করার জন্য” মুসলিমদের হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে, যেমনটি তারা গত জুলাই মাসে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে এ দেশের সাধারণ মানুষকে জুলুমের প্রতিবাদ জানানোর কারণে নৃশংসভাবে বিভিন্ন জায়গায় হত্যা করে। এই সেই ভারত, যেই ভারতের হিন্দুত্ববাদী শক্তির প্রচারক রামগিরি মহারাজ কিছুদিন পুর্বেই আল্লাহর নবীকে অপমান করার স্পর্ধা দেখিয়েছিল এবং বিজেপির নেতা নিতেশ রানে তা সমর্থন করেছিল। যে অপমানের কারণে ভারতের মুসলিম জনতা জেগে উঠেছিল। এই সেই ভারত যেখানে বসে খুনী হাসিনা বাংলাদেশে ধ্বংস চালানোর জন্য উসকানীমূলক বক্তব্য দেয়। এসব কিছু হচ্ছে কারণ আজ মুসলিমরা অভিভাবকহীন এবং মুসলিমরা বিশ্বে বিভক্ত হয়ে আছে এবং এই সুযোগে ইহুদীবাদী শক্তি এবং হিন্দুত্ববাদী শক্তি পশ্চিমা মদদপুষ্ট হয়ে আজ জোট বেঁধেছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে। ভাইয়েরা, এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা আমাদের বলে গিয়েছেন,

    << ঈমানদারদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি শত্রুভাবাপন্ন হিসেবে আপনি যাদেরকে দেখতে পাবেন তারা হচ্ছে ইয়াহুদী এবং মুশরিকগণ >>

    প্রিয় মুসলিমগণ! আপনারা প্রত্যক্ষ করেছেন, আমাদের দেশের একশ্রেণীর রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবিরা  একটি উপনিবেশবাদি শক্তি এবং মুসলিমদের শত্রু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহন করেছে। যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য কামনা করে, যারা প্রেসিডেন্টের দাওয়াত পেলে গর্ববোধ করে তাদের কাছ থেকে আমরা কী আশা করতে পারি?  আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না, তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ যালিমদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। [সূরা আল-মায়িদা: ৫১]। তাই ই*হু*দি*দের মদদ দাতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ত্যাগ করা এবং এদেশের মার্কিন দালাল গোষ্ঠীকে প্রত্যাখ্যান করা মুসলিমদের জন্য ইমানি দায়িত্ব।

    হে মুসলিমগণ, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “ইমাম (খলিফা) হচ্ছেন ঢাল স্বরূপ, যার অধীনে তোমরা যুদ্ধ করো এবং নিজেদের রক্ষা করো” [হাদিস: মুসনাদ আহমদ]। মুসলিমদের একমাত্র অভিভাবক হচ্ছেন খলিফা। আজকে এই অভিভাবকের অনুপস্থিতিরে কারণে বিশ্বব্যাপী মুসলিমরা নির্যাতিত। এই বিষয়টি এখন প্রকাশ্য দিবালোকের মত পরিষ্কার। তাই আমাদের মুসলিম উম্মাহর প্রকৃত অভিভাবক-খিলাফত প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক বন্দোবস্তকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে, অন্যথায় বিচার দিবসে আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। নবুয়্যতের আদলে প্রতিষ্ঠিত খিলাফত রাষ্ট্র মুসলিম উম্মাহ এবং তার সামরিক বাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ করবে। ফলে খিলাফতের অধীনে মুসলিম সামরিক বাহিনীর গর্জনই মুসলিম উম্মাহর উপর সকল যুলুম বন্ধ করতে সক্ষম। 

    সম্মানিত মুসল্লিগন, আমরা জানি ইতিহাসের পাতা খুললে আমরা দেখতে পাই এই ফিলিস্তিন এক সময় ক্রুসেডারদের কর্তৃক দখল হয়েছিল। সে সময় মুসলিম বিশ্ব বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু সালাহউদ্দিন আইয়ুবী মুসলিম বিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা ও সমরনায়ক সেসময় মুসলিম জাহানকে ঐক্যবদ্ধ করে, মুসলিম সেনাবাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ করে ফিলিস্তিনকে সেই দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করেছিল। ঠিক একইভাবে বর্তমানেও যদি আমরা মুসলিম বিশ্বকে পশ্চিমাদের দখলদারিত্ব হতে মুক্ত করতে চাই ইহুদীবাদ হতে মুক্ত হতে চাই হিন্দুত্ববাদ হতে মুক্ত হতে চাই আধিপত্যবাদ হতে মুক্ত হতে চাই তাহলে আবার আমাদেরকে মুসলিম বিশ্বকে খিলাফতের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।

    সুতরাং আমাদের এই ঐক্যের জন্য এই খিলাফত ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আল্লাহর রাসূলের দেখানো কর্ম পদ্ধতি অনুযায়ী বুদ্ধিভিত্তিক ও রাজনৈতিকভাবে আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের মাঝে কিংবা আমাদের পরিচিতের মধ্যে সালাউদ্দিন আইউবির উত্তরসূরি সামরিক বাহিনিতে কর্মরত নিষ্ঠাবান অফিসারগন যারা রয়েছেন তাদের স্মরণ করা উচিত, জেরুজালেমকে মুক্ত করতে সালাউদ্দিন আইয়ুবই কীভাবে তার বাধাসমূহ অপসারণ করেছিলেন। আমাদের সামনে বাধা হচ্ছে, বর্তমান দালাল শাসকগোষ্ঠী এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। তাই দালাল গোষ্ঠীদেরকে প্রত্যাখ্যান করে আমাদের খিলাফত প্রতিষ্ঠায় অগ্রগামী হতে হবে। আমরা জানি, যখন মদিনায় সা’দ বিন মোয়াজের নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী কাফির নেতা আবু-ওবায়দা থেকে সমর্থন ও পাহারা প্রত্যাহার করে রাসুলুল্লাহ (সা) কে প্রটোকল দিয়েছিলেন, তখন ক্ষমতাহীন আবু-ওবায়দা টের পেয়ে সাধারণ দর্শকে পরিণত হয়েছিল। এছাড়া দেশের সর্বোস্তরের জনগণ বর্তমান দালালদের সার্কাসে অতিষ্ট। ইসলামের বিজয়ে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হবে এবং তাকবীর ধ্বনিতে তা উৎযাপন করবে। এই লক্ষ্য অর্জনে আমাদের উপনিবেশবাদি শক্তি কিংবা হিন্দুত্ববাদি রাষ্ট্র ভারতকে ভয় করার কোন কারণ নাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভ্যন্তরীণভাবে ভঙ্গুর ও আদর্শিকভাবে বিশ্বে দেউলিয়া, আর তারা দালাল গোষ্ঠীকে (হাসিনা গং) ছাড়া ভারত কতটা অক্ষম। আপনাদেরকে আরও স্মরণ রাখতে হবে, আমরা যখন অগ্রগামী হব আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আমাদের সাহায্য করবেন।  

    “নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলদেরকে ও মু’মিনদেরকে সাহায্য করব পার্থিব জীবনে এবং যেদিন (বিচার দিবসে) সাক্ষীগণ দন্ডায়মান হবে” [সূরা গাফির: ৫১] । 

    বিভিন্ন চড়াই উতরাই পার হয়ে আজ আল্লাহর রহমতে খিলাফতের আহবান সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। এই আহবান কে আরো বুলন্দ করবার জন্য, আরও বেশি ছড়িয়ে দেবার জন্য আমাদের আরও সচেষ্ট হতে হবে এবং আল্লাহর কাছে আমাদের ক্রমাগত দোয়া করতে হবে যাতে আল্লাহ আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তৌফিক দান করেন এবং আমরা যেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুসলিম উম্মাহকে এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্ত করতে পারি ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ সুবহান ওয়া তা’আলা বলেন,

    << হে ঈমানদারগণ তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য করো তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবে এবং তোমাদের পা গুলোকে শক্তিশালী করবেন >>

    একই সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম আমাদেরকে ভবিষ্যৎবাণী করেছেন,

    জুলুমের শাসনের পর আবার ফিরে আসবে খিলাফত, নবুয়তের আদলে। [মুসনাদ আহমাদ]

  • ইসকন-সহ সকল উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধকরণ: আইনী প্রেক্ষিত

    ইসকন-সহ সকল উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধকরণ: আইনী প্রেক্ষিত

    ইসকন-সহ সকল উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধকরণ: আইনী প্রেক্ষিত

    আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ, ইংরেজিতে International Society for Krishna Consciousness, সংক্ষেপে ISKCON/ইসকন-এর কার্যক্রম বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে ব্যাপক সমালোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে বিভিন্ন নামে কিছু উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন যেভাবে বিদ্বেষমূলক ও সহিংস কর্মকাণ্ড করে বেড়াচ্ছে, তাতে জনমনে ইসকনসহ অন্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম কোর্টে ইসকন সমর্থকদের সন্ত্রাসী হামলা ও ভাঙচুর এবং তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ-কে হত্যার ঘটনায় দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ইসকন-কে নিষিদ্ধ করার দাবি জোরালো হয়েছে।

    “ইসকন বাংলাদেশ”-এর নেতৃবৃন্দ অবশ্য ইতোমধ্যে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ইসকন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ফলে সংগঠনটির সঙ্গে বর্তমানে তার কোনো সম্পর্ক নেই। ফলে চিন্ময়ের কোনো কর্মকাণ্ডের দায় নেবে না ইসকন।

    বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ইসকনকে নিষিদ্ধ করার কোনো আলোচনা সরকারের মধ্যে হয়নি। …ব্যক্তির অপরাধের সঙ্গে সংস্থার অপরাধকে সরকার জড়িয়ে ফেলছে না।

    বাংলাদেশে ইসকন বা অন্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো আসলে ঠিক কী ধরনের কর্মকাণ্ড করছে? তাদের কার্যক্রম কি রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক? তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার আইনগত ভিত্তি আছে কী? আজকের সেমিনারে আমরা এই প্রশ্নগুলোরই জবাব দেওয়ার চেষ্টা করবো ইন-শা-আল্লাহ।

    ইসকনের পরিচয়:

    অফিসিয়ালি ইসকন (ISKCON) একটি আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, যা গৌড়ীয় বৈষ্ণব ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়। গৌড়ীয় বৈষ্ণব ঐতিহ্য হলো বৈষ্ণবধর্মের একটি বিশেষ শাখা, যা পঞ্চদশ শতাব্দীতে শ্রী চৈতন্য কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। “গৌড়ীয়” শব্দটি বঙ্গ বা গৌড় অঞ্চল (বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের কিছু অংশ) থেকে এসেছে, যা এই ঐতিহ্যের উৎসস্থান।

    ইসকন ১৯৬৬ সালের ১৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন অভয়চরণ দে (১ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৬ – ১৪ নভেম্বর, ১৯৭৭) নামের ভারতের পশ্চিম বঙ্গের একজন হিন্দু ধর্মগুরু, যিনি সাংগঠনিকভাবে “স্বামী অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত প্রভুপাদ” নামে পরিচিত। তিনি গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধারার হিন্দু ছিলেন। অফিসিয়ালি ইসকনের প্রধান লক্ষ্য হলো শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তি, বৈষ্ণবধর্ম প্রচার ও সনাতন ধর্মের মূল আদর্শ প্রচার করা। বিশ্বজুড়ে প্রায় ১০০টিরও বেশি দেশে ইসকনের লক্ষাধিক অনুসারী রয়েছে এবং তারা সেসব দেশে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। ইসকনের প্রধান কার্যালয় ভারতের পশ্চিম বঙ্গের মায়াপুরে অবস্থিত।

    ইসকনের বিবর্তন:

    প্রতিষ্ঠার প্রথম চার দশক ধরে ইসকন একটি বৈষ্ণব ভাব-আন্দোলন হিসেবে পরিচালিত হয়। তবে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ার হামলার পর বিশ্ব পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ায় সংগঠনটির কার্যক্রম ও উদ্দেশ্যে মৌলিক পরিবর্তন ঘটে। নাইন-ইলেভেনের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত “ওয়ার অন টেরর”-এ গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মিত্র হিসেবে ভারত আবির্ভূত হয়। এই প্রেক্ষাপটে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক আরও মজবুত করতে “বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আমেরিকা”-র উত্তরসূরি হিসেবে “হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন” গঠিত হয়।  [দেখুন: https://politicalresearch.org/2024/10/15/haf-way-supremacy] মূলত, এই ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য ছিল ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করা। এরই ধারাবাহিকতায় ইসকনের মতো হিন্দু সংগঠনগুলোকেও যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থে সম্পৃক্ত করা হয়। [দেখুন: www.hinduamerican.org/press/caste-statement-iskcon-communications]

    নাইন-ইলেভেন-পরবর্তী ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইসকন ভারতের জন্য “সফট পাওয়ার” হিসেবে কাজ করছে। ইসকনের সদস্য এবং সাবেক মার্কিন কংগ্রেস সদস্য তুলসি গ্যাবার্ড, যিনি মার্কিন কংগ্রেসে নির্বাচিত প্রথম হিন্দু, ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে বহু কাজ করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার পরিচালক হিসেবে মনোনীত তুলসি গ্যাবার্ড মার্কিন কংগ্রেসে তার কার্যকালীন সময়ে ভারত-মার্কিন কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

    পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে ইসকনের সক্রিয় উপস্থিতি রয়েছে।  [দেখুন: https://iskconnews.org/iskcon-pakistan-is-growing/] পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, ভারত বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে মদদ দিচ্ছে, এবং সেই অঞ্চলে ইসকনের কার্যক্রমকে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা হয়।

    বিশ্বব্যাপী, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রে, ইসকন ভারতের স্বার্থরক্ষার “সফট পাওয়ার” হিসেবে সফলতা অর্জন করেছে। ভারতের পর ইসকনের সর্বাধিক মন্দির ও ধর্মীয় কেন্দ্র রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং বাংলাদেশে। যেখানে ভারতের কৌশলগত স্বার্থ বেশি, সেই অঞ্চলগুলোতেই ইসকন সক্রিয়ভাবে কাজ করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় ইসকনের নেতারা হোয়াইট হাউজে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। [দেখুন: tinyurl.com/bdcvm6au

    ভারতের বিজেপি সরকার ও ইসকনের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। নরেন্দ্র মোদী ইসকনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তার মতে, “ইসকন বিশ্বকে জানিয়েছে যে ভারতের জন্য ধর্ম মানে উদ্দীপনা, মানবতার প্রতি বিশ্বাস এবং উদ্যম।” [দেখুন: tinyurl.com/3ew6fkxr] ইসকনের কার্যক্রম ও নেতাদের বক্তব্য বিজেপি-আরএসএসের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতও ইসকনের মন্দিরে গিয়ে কর্মীদের দীক্ষা গ্রহণে উৎসাহ দেন এবং সংগঠনের প্রশংসা করেন। [দেখুন: tinyurl.com/3aa9xh86]

    বাংলাদেশে ইসকন:

    বাংলাদেশে ইসকনের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮০-এর দশকে। তবে নাইন-ইলেভেন পরবর্তী সময়ে এর কার্যক্রম ও সদস্যসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। ২০০৯ সালের দিকে বাংলাদেশে ইসকনের মন্দির সংখ্যা ছিল ৩৫টি। শেখ হাসিনার সরকার (২০০৯-২০২৪) আমলে এই সংখ্যা বেড়ে ১০০টির বেশি হয়েছে। বর্তমানে ইসকনের মন্দির ও ধর্মীয় কেন্দ্রগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর ও সিলেট বিভাগে বেশি সক্রিয়।

    সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল নিজেই ইসকনের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। [দেখুন: www.youtube.com/watch?v=j8taQDKGQDY] তার মন্ত্রিত্বকালে বাংলাদেশের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকে কিছু বিতর্কিত হিন্দুত্ববাদী বয়ান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফ্যাসিস্ট শাসনামলে প্রশাসন ও পুলিশের অনেক শীর্ষ কর্মকর্তার ইসকনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার বিষয়টিও প্রকাশ্যে এসেছে।

    ইসকনের কার্যক্রম নিয়ে বিতর্ক:

    প্রাথমিকভাবে ইসকন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আধ্যাত্মিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসকন নেতারা রাজনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছে। চট্টগ্রামের প্রবর্ত্তক সংঘের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ এবং ইসকনের বিভিন্ন নেতার সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দেশটির ধর্মীয় সহাবস্থানের পরিবেশকে উত্তপ্ত করে তুলেছে। ২০২১ সালের জুন মাসে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রবর্ত্তক সংঘের নেতারা ইসকনের বিরুদ্ধে অর্থ লোপাট ও বিদেশে পাচারেরও অভিযোগ করেন। প্রবর্ত্তক সংঘের সাধারণ সম্পাদক তিনকড়ি চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, “ইসকনকে প্রবর্ত্তক সংঘ মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য জমি দান করে। সেখানে মন্দির তৈরি করে তা পরিচালনা করবে ইসকন। কিন্তু এখন তারা চুক্তির সব শর্ত ভঙ্গ করে প্রবর্তক সংঘের জমি দখলসহ সন্ত্রাসী ও জঙ্গি তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। ইসকন নামীয় জঙ্গিদের ক্রমবর্ধমান ভূমি আগ্রাসন চলছে। তারা প্রবর্ত্তক মন্দিরের নাম ব্যবহার করে ধর্মপ্রাণ ভক্তদের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করে অন্যত্র পাচার করছে। তারা মন্দিরে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের জড়ো করে তাদের জঙ্গি কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ করার চেষ্টা করছে। ইসকন জঙ্গিরা নিজেরা বড় ধরনের কোনো নাশকতামূলক ঘটনা ঘটিয়ে তা আমাদের নামে চালিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করছে বলেও আমরা জানতে পেরেছি। সনাতন ধর্মে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। এরা ধর্মকে কলঙ্কিত করেছে। আমরা আগেই বলেছি এরা সাধুবেশে সন্ত্রাসী।” [দেখুন: tinyurl.com/4jvr43rd]

    ২০১৯ সালে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিশ্বনাথ ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডার ও বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক শ্রী রনজিত চন্দ্র ধর অভিযোগ করেছিলেন যে, আদালতের নির্দেশনার পরেও অন্যের মালিকানাধীন ভূমিকে দেবোত্তর সম্পত্তি দাবি করে সিলেট ইসকন কর্তৃপক্ষ ভূমি দখল নেওয়ার পায়তারা করছে। [দেখুন: tinyurl.com/3aj63hxt]

    ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের শ্রীশ্রী রশিক রায় জিউ মন্দিরের জমির দখল নিয়ে হিন্দুধর্মের মূলধারা ও ইসকন অনুসারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছিল। ২০০৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রশিক রায় জিউ মন্দিরে দুর্গাপূজা নিয়ে অনুসারীদের সাথে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়। এ সময় ইসকন ভক্তদের হামলায় ফুলবাবু নামের একজন সনাতন ধর্ম অনুসারী নিহত হন। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উপজেলা প্রশাসন মন্দির সিলগালা করে কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব নেয়।

    ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে ওই মন্দিরের দখল নিয়ে মূলধারার হিন্দুদের সাথে ইসকন অনুসারীদের আবারও ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। ফলে স্থানীয় প্রশাসন সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করতে বাধ্য হয়। [দেখুন: www.amadershomoy.com/bn/2020/10/21/1233688.html]

    এভাবে বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশের মূল ধারার হিন্দুদের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়ার পর ইসকন তাদের কৌশল পরিবর্তন করে। ইসকন নেতারা নিত্য নতুন সাংগঠনিক নামের আড়ালে উগ্রবাদী রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে থাকেন। ইসকনের সাথে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের অন্যতম কেন্দ্রীয় মুখপাত্র হলেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, যিনি চট্টগ্রামের ইসকন পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ-সহ আরও কিছু সংগঠনের ছদ্মাবরণে ইসকনই বাংলাদেশে ভারতের উগ্রবাদী সংগঠন আরএসএসের গেরুয়া পতাকা ব্যবহার করা শুরু করে। এদের সাম্প্রতিক মিছিল ও সমাবেশগুলোতে আরএসএসের গেরুয়া পতাকা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন, গত ৪ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে “বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট“-এর নাম ব্যবহার করে আয়োজিত সমাবেশে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গেরুয়া পতাকা উড়ানো হয়। সেই সমাবেশে ইসকনের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময়কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী বলেছিলেন, “আপনারা বলেছেন, এ দেশে সহিংসতা হচ্ছে না, রাজনৈতিক নিপীড়ন হচ্ছে। তাহলে দুর্গাপূজায় কেন মাদ্রাসার ছাত্রদের নামিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন? এতেই প্রতীয়মান হয় এ দেশের সংখ্যালঘুরা কতটা অনিরাপদ।” প্রধান উপদেষ্টার ড. ইউনূসের উদ্দেশে চিন্ময়কৃষ্ণ বলেন, “পৃথিবীতে আপনি শান্তির বার্তা দিয়েছেন, শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা যদি নিরাপদ না থাকে, এ শান্তি স্থায়ীভাবে বিপন্ন হবে। এই দেশ সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হবে। রাজনীতি আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপিত হবে।” [দেখুন: www.prothomalo.com/bangladesh/9rwz8vu5xv]

    এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় মোড়ে “সম্মিলিত সনাতনী ছাত্র সমাজ” নাম ব্যবহার করে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে ইসকনের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময়কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী বলেছিলেন, “আমরা সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা অবিভক্ত ভারতের ভূমিপুত্র। আমরা কোনো দেশ থেকে এখানে আসিনি। …আমরা নিজেদের সুরক্ষার জন্য লড়তে জানি।” [দেখুন: bangla.bdnews24.com/ctg/aadfe522774d]

    গত ২৫ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে চট্টগ্রামের লালদিঘিতে আয়োজিত বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের সমাবেশেও বিপুল পরিমাণ গেরুয়া পতাকা ওড়ানো হয় এবং ওই সমাবেশে ইসকনের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময়কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী বলেন, “এ বঙ্গের উত্তরাধিকার আমরা। আমরা এ ভূমির ভূমিপুত্র, উড়ে আসিনি। আমরা মোগল, ব্রিটিশ,পর্তুগীজ নয়, আমরা এ ভূমির সন্তান। আমাদের উচ্ছেদের চেষ্টা করবেন না। কেউ যদি আমাদের উৎখাত করে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করেন, তাহলে এ ভূমি সাম্প্রদায়িকতার অভয়ারণ্য হবে। এ ভূমি আফগানিস্তান, সিরিয়া হবে। বাংলাদেশের কোনো গণতান্ত্রিক শক্তি রাজনীতি করার সুযোগ পাবে না।” [দেখুন: bangla.bdnews24.com/ctg/113f67e2f73e]

    লালদীঘির ওই সমাবেশের সঞ্চালক ছিলেন গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী, যিনি বাংলাদেশে ইসকনের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তিনি ইসকনের শীর্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা গভার্নিং বডি কমিশন (GBC)-এর সদস্য। ওই সমাবেশে ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারীও বক্তব্য রেখেছিলেন। দেখুন: www.prothomalo.com/bangladesh/district/jp9q1zmewi)

    ইসকন সমর্থকদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড:

    ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা। এই অমিত সাহা ছিল ইসকনের সদস্য। [দৈনিক ইত্তেফাক: tinyurl.com/4b5fftjn] শহীদ আবরার হত্যাকাণ্ডে কারাদণ্ড প্রাপ্ত হয়ে অমিত সাহা এখন কারাগারে আছে। 

    গত ৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে চট্টগ্রামের হাজারী গলিতে “ইসকন নিয়ে ফেসবুকে দেয়া পোস্ট”-কে কেন্দ্র করে এক মুসলিম ব্যবসায়ীর দোকানে হামলা করে ইসকন সমর্থকেরা। পরে পুলিশ-সেনাবাহিনীর যৌথদল ওই অবরুদ্ধ দোকানিকে উদ্ধার করতে গেলে যৌথবাহিনীর ওপর হামলা ও এসিড নিক্ষেপ করে ইসকন সমর্থকেরা। চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র উপ-কমিশনার (অপরাধ) রইছ উদ্দিন মিডিয়াকে পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় ইসকন সমর্থকরা জড়িত। [দেশ রূপান্তর: tinyurl.com/ye2xujvh]

    গ্রেফতারকৃত ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে আদালত জামিন না দেওয়ায় গত ২৬ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে চট্টগ্রামে আদালত প্রাঙ্গনে ইসকন সমর্থকেরা নজিরবিহীন হামলা ও ভাঙচুর চালায়। ওই দিনের হামলায় নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজনদের মধ্যে বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শুভ কান্তি দাশ একজন ইসকন অনুসারী। [দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড: tinyurl.com/bdfajas6]

    ইসকনকে নিষিদ্ধ করার আইনি প্রেক্ষিত:

    শহীদ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর দেশের সচেতন মহলে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার জোর দাবি উঠেছে।

    ইসকনের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনায় দেখা যায়, ইসকন সমর্থকরা সরাসরি খুন, সংঘাত, সংঘর্ষ, ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি সহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। কোনো সংগঠনের সদস্যরা এই ধরনের অপরাধে যুক্ত হলে সেই সংগঠনকে “সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯”-এর আওতায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করার বিধান রয়েছে। সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯-এর ৬(১) ধারায় “সন্ত্রাসী কার্য”-এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে:

    যদি কোন ব্যক্তি, সত্তা বা বিদেশী নাগরিক-

    (ক) বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি, জননিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করিবার জন্য জনসাধারণ বা জনসাধারণের কোন অংশের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে সরকার বা কোন সত্তা বা কোন ব্যক্তিকে কোন কার্য করিতে বা করা হইতে বিরত রাখিতে বাধ্য করিবার উদ্দেশ্যে-

    (অ) অন্য কোন ব্যক্তিকে হত্যা, গুরুতর আঘাত, আটক বা অপহরণ করে বা করিবার প্রচেষ্টা গ্রহণ করে; অথবা

    (আ) অন্য কোন ব্যক্তিকে হত্যা, গুরুতর জখম, আটক বা অপহরণ করার জন্য অপর কোন ব্যক্তিকে ষড়যন্ত্র বা সহায়তা বা প্ররোচিত করে; অথবা

    (ই) অন্য কোন ব্যক্তি, সত্তা বা প্রজাতন্ত্রের কোন সম্পত্তির ক্ষতি সাধন করে বা করিবার প্রচেষ্টা গ্রহণ করে; অথবা

     (ঈ) অন্য কোন ব্যক্তি, সত্তা বা প্রজাতন্ত্রের কোন সম্পত্তির ক্ষতি সাধন করিবার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র বা সহায়তা বা প্ররোচিত করে;

    …তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি, সত্তা বা বিদেশী নাগরিক ‘‘সন্ত্রাসী কার্য’’ সংঘটনের অপরাধ করিয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।”

    ইসকনের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনায় দেখা যায়, ইসকন সমর্থকরা সরাসরি খুন, সংঘাত, সংঘর্ষ, ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি সহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত।

    এখানে এই যুক্তি দেওয়া হাস্যকর যে, ইসকনের সমর্থকদের কর্মকান্ডের দায় সংগঠন হিসেবে ইসকনের উপর চাপানো যাবে না।

    কেননা সংগঠনের নেতা কর্মীদের কর্মকান্ডই সংগঠনের চরিত্রের মূল পরিচয়ক। যেমন, সম্প্রতি নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র বা ওয়েবসাইটে ছাত্রলীগের মূলনীতি হিসেবে শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির কথাই বলা আছে। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বিবেচনায় নিয়ে সরকার সংগঠন হিসেবেই ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে।

    একইভাবে ইসকনের ওয়েবসাইটে বা গঠনতন্ত্রে ভাব আন্দোলনের কথা লেখা থাকলেও সংগঠনটির কি নেতাকর্মীরা বর্তমানে স্পষ্টই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, বিদ্বেষমূলক প্রচারণা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত হয়ে পড়েছে।

    ইসকনের কার্যক্রম শুধু সন্ত্রাসী কার্যই নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ওপরও আঘাত:

    বাংলাদেশের ইসকন নেতারা কৌশলে চিন্ময় দাসকে বহিষ্কারের গল্প শোনালেও ইসকনের আন্তর্জাতিক কমিটির অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেল থেকে গত ২৫ নভেম্বরে চিন্ময় দাসকে “ইসকন নেতা” হিসেবে উল্লেখ করেই তার মুক্তি চাওয়া হয়েছে।

    সবচেয়ে ভয়াবহ কথাটি হলো, চিন্ময় দাসের মুক্তির বিষয়ে ইসকন সদর দপ্তর সরাসরিই ভারতের হস্তক্ষেপ চেয়েছে। [দৈনিক সমকাল: tinyurl.com/mpca6uw7]

    ইসকনের এই বিবৃতির পরদিনই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তার ও জামিন নামঞ্জুরের ঘটনায় অত্যন্ত আপত্তিকর ভাষায় উদ্বেগ জানানো হয়েছে।

    অর্থাৎ ইসকনের সদর দপ্তর থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে এবং ভারত কূটনৈতিক শিষ্টাচারের সীমা ছাড়িয়ে সেই হস্তক্ষেপ করেছেও।

    ইসকন সদর দপ্তরের এই বিবৃতি সুস্পষ্টভাবে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের উপর হস্তক্ষেপ করে এমন কোনো সংগঠন বাংলাদেশ কোনোভাবেই বৈধ থাকতে পারে না। বাংলাদেশে ইসকনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার জন্য এই একটি কারণই যথেষ্ট।

    ইসকনের সাংগঠনিক কার্যক্রমে বাংলাদেশী আইনের কমপ্লায়েন্স ইস্যু

    ইসকন তাদের সাংগঠনিক স্ট্যাটাসের বিষয়ে ধোঁয়াশা রেখেছে। তারা বাংলাদেশে কোন্ আইনের অধীনে নিবন্ধিত কিংবা আদৌ নিবন্ধিত কিনা—সেটাও স্পষ্ট নয়। মিডিয়ায় এসেছে, ইসকন নাকি একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান, কিন্তু এনজিও হিসেবে কার্যক্রম চালালেও তাদের একাউন্টগুলোর দীর্ঘদিন কোনো অডিট হয় না। তাদের আয়-ব্যয়ের উৎস কেউ জানে না। এক্ষেত্রে এনজিও ব্যুরোর সঠিক মনিটরিং প্রয়োজন।

    বিদেশী প্রতিষ্ঠানের ব্রাঞ্চ হিসেবে বাংলাদেশে কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক অনুমোদনগুলো ইসকন আদৌ নিয়েছে কিনা, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন, ২০১৬-এর আওতায় ইসকনের ফান্ডিং প্রক্রিয়া আইনসম্মত কিনা, সেটাও তদন্ত হওয়া উচিত।

    ইসকনের বাংলাদেশ শাখা ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একই কূটকৌশল অবলম্বন:

    লক্ষণীয় যে, ইসকন সদর দপ্তরের বিবৃতিতে ও ভারতীয় মিডিয়ায় চিন্ময় দাসকে “ইসকন নেতা” হিসেবে উল্লেখ করা হলেও ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে চিন্ময় দাসকে তথাকথিত “বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোট”-এর মুখপাত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিন্ময় দাসের ইসকন পরিচয়টি লুকাতে চায়, যেভাবে ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, চিন্ময় দাস নাকি ইসকন থেকে বহিষ্কৃত এবং বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের কর্মসূচির সঙ্গে ইসকনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই!

    এই দাবির হাস্যকর দিকটি হলো, ইসকনের নিউ ইয়র্ক সদর দপ্তর ২৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখেও চিন্ময়কে “ইসকন নেতা”ই বলেছে এবং গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত চিন্ময় চট্টগ্রামে ইসকনের অন্যতম প্রাচীন মন্দির পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

    মূলত এমন মিথ্যাচার ও ধোঁকাবাজিই ইসকন ও ভারতের কৌশল। তথাকথিত একটি “ভাব-আন্দোলন”-কে ব্যবহার করে তারা তরুণদেরকে রেডিকালাইজ করে, তারপর বিভিন্ন ভুঁইফোঁড় সংগঠনের নামে উস্কানিমূলক বক্তব্য ও কর্মসূচি দিয়ে সেই তরুণদেরকে ব্যবহার করে সংঘাত ও সংঘর্ষ সৃষ্টি করে। চট্টগ্রাম জেলা আদালতের তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে এভাবেই ভিন্ন সংগঠনের নামে উগ্র ও সশস্ত্র তরুণদেরকে জড়ো করে হত্যা করা হয়েছে।

    এভাবে ইসকনের নেতারা সাধুর ছদ্মবেশে বাংলাদেশে ক্রমাগত উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি, বিভাজনমূলক প্রচারণা ও সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী চট্টগ্রাম বিভাগ, রংপুর বিভাগ ও সিলেট বিভাগে ইসকন বেশি সক্রিয়। বাংলাদেশের এই বিভাগগুলো নিয়ে, বিশেষত চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগ নিয়ে, ভারতের কোনো কোনো মহলের বিশেষ ভূ-রাজনৈতিক প্রকল্প ও বিচ্ছিন্নতাবাদের উস্কানির কথা ব্যাপকভাবে শোনা যায়।

    চলতি মাসের শুরুর দিকে চট্টগ্রামের হাজারী গলিতে সহিংসতায় জড়িত ইসকন সমর্থকদেরকে গ্রেফতারের সাথে সাথেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। মার্কিন-ভারতের মদদে বাংলাদেশে ইসকনের গেরুয়া রাজনীতি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মূল উদ্দেশ্য আসলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে ধ্বংস করা এবং সর্বোপরি বাংলাদেশকে মার্কিন-ভারতের অধীনস্ত রাখা।

    উপসংহার

    সার্বিক আলোচনায় দেখা যায় যে, বাংলাদেশে ইসকন, বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ, বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট, সম্মিলিত সনাতনী ছাত্র সমাজ ইত্যাদি বিভিন্ন নামে আসলে একই ধরনের বিদ্বেষ ও বিভাজনমূলক কর্মকাণ্ড, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব বিরোধী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ইসকনের বিভিন্ন কার্যকলাপ বাংলাদেশের মূলধারার অনেক হিন্দুদের মধ্যেও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।

    সাধুর ছদ্মবেশে ইসকনের গেরুয়া রাজনীতি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে রাখতে ভারতের “সফট পাওয়ার” হিসেবে বাংলাদেশে ইসকন এসব উগ্রতা ছড়াচ্ছে—এমন ইঙ্গিত খুবই স্পষ্ট। তাই দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ইসকন-সহ সকল উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের উদ্যোগ নেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। সিঙ্গাপুর, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান-সহ বিভিন্ন দেশে ইসকনের কার্যক্রম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং করা হয়। বাংলাদেশেও অবিলম্বে একই ধরনের আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। ইসকন-বিরোধী হিন্দু নেতৃবৃন্দের পরামর্শ নিয়ে সরকার এক্ষেত্রে আগাতে পারে।

  • খিলাফত রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক পতাকা কী হবে?

    খিলাফত রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক পতাকা কী হবে?

    ইসলামি রাষ্ট্রের সরকারী পতাকাকে রাইয়াহ (الراية) বলা হয়। এটি একটি কালো আয়তক্ষেত্রাকার পতাকা যার উপর সাদা রঙে لا إِلٰهَ إِلَّا ٱلله مُحَمَّدٌ رَسُولُ ٱلله লেখা রয়েছে। এর পেছনের ইজতিহাদের পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা নিচে দেওয়া হলো।

    ঐতিহাসিকভাবে, পতাকাগুলো মূলত যুদ্ধক্ষেত্রে বিভিন্ন সেনাবাহিনীকে চিহ্নিত করার জন্য যুদ্ধে ব্যবহৃত হত। আধুনিক সময়ে বিভিন্ন দেশকে চিহ্নিত করতে পতাকা ব্যবহার করা হয় এবং কোনো জাতিকে একত্রিত করার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আমেরিকাতে, পতাকার জন্য একটি নির্দিষ্ট অঙ্গীকার রয়েছে এবং বেশিরভাগ পাবলিক স্কুলগুলিকে এর আবৃত্তির জন্য নিয়মিত সেশন নির্ধারণ করা বাধ্যতামূলক:

    “আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকার প্রতি আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এবং যে প্রজাতন্ত্রের জন্য এটি দাঁড়িয়ে আছে, ঈশ্বরের অধীনে এক জাতি, অবিভাজ্য, সবার জন্য স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারসহ।”

    তাহলে ভবিষ্যৎ খিলাফত নিজেকে চিহ্নিত করতে কোন পতাকা ব্যবহার করবে?

    খিলাফত একটি ইসলামী রাষ্ট্র এবং এর কাঠামো অবশ্যই ইসলামী গ্রন্থ (কুরআন ও সুন্নাহ) থেকে উদ্ভূত হতে হবে। অতএব, কোনো পতাকা ব্যবহার করার আলোচনার সূচনাবিন্দু হবে ইসলামি দলীলাদি। যদি নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবীদের দ্বারা ব্যবহৃত পতাকার কোনো নির্দিষ্ট বর্ণনা পাওয়া না যায়, তাহলে এটি কুরআনের শাসনের সাধারণ বাধ্যবাধকতা থেকে উদ্ভূত একটি সহায়ক নিয়ম হিসাবে শৈলী (উসলুব) এবং উপকরণ (ওয়াসিলাহ) এর আওতায় পড়বে।

    إِنِ الحُكمُ إِلّا لِلَّهِ

    “শাসন আল্লাহ ছাড়া কারো জন্য নয়।” [সূরা ইউসুফ, ১২:৬৭]

    রাষ্ট্র এবং সরকার সম্পর্কিত সমস্ত ইসলামি নিয়মগুলোর ক্ষেত্রে, বিশদ আলোচনা নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ (কর্ম, বাণী ও মৌনসম্মতি)’র মাধ্যমে এসেছে।

    আমরা হাদিসের দিকে তাকালে তাহলে আমরা ইসলামী সেনাবাহিনীর নেতা ও কমান্ডারদের দ্বারা ব্যবহৃত দুই ধরনের পতাকা দেখতে পাই। তারা হল লিওয়া’ (اللواء) এবং রায়াহ (الراية) যা পতাকা ও ব্যানার হিসাবে অনুবাদ করা হয়।

    عَنْ جَابِرٍ، رضى الله عنه أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ مَكَّةَ وَلِوَاؤُهُ أَبْيَضُ

    জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত যে, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাদা লিওয়া নিয়ে মক্কায় প্রবেশ করেন” (সুনানে নাসাঈ ২৮৬৬)

    لأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ الْيَوْمَ رَجُلاً يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ

    রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমি আজকে এমন এক ব্যক্তিকে (ইমাম আলী) রাইয়াহ দেব যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে।” (ইবনে মাজাহ)

    আল-কামুস আল-মুহিত অভিধানে লিওয়া’ এবং রায়াহ উভয়ের ভাষাগত অর্থকে ‘আলাম (العلم) হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে যার অর্থ একটি চিহ্ন বা ব্যানার।

    যদি হাদিসে লিওয়া’ এবং রায়াহর আর কোনো বর্ণনা পাওয়া না যেত তাহলে আমরা যে কোনো ধরনের পতাকা গ্রহণ করতে পারতাম যতক্ষণ পর্যন্ত এতে ইসলামি প্রতীক যেমন উসমানীয়রা অর্ধচন্দ্রাকৃতি ও তারা ব্যবহার করত।

    যাইহোক, যদি আমরা হাদিসের দিকে তাকাই তাহলে আমরা লিওয়া ও রায়াহ উভয়েরই বিশদ বর্ণনা পাই যার অর্থ এই শব্দগুলি একটি সাধারণ ভাষাগত অর্থ থেকে একটি নির্দিষ্ট বর্ণনাসহ একটি শরঈ অর্থে স্থানান্তরিত হয়েছে।

    লিওয়া’ এবং রায়াহ’র মধ্যে পার্থক্য কী?

    লিওয়া’ হল একটি নির্দিষ্ট পতাকা যা কর্প কমান্ডার (লেফটেন্যান্ট জেনারেল), বা কমান্ডার ইন-চীফ (খলিফা) এর জন্য একটি চিহ্ন হিসাবে ব্যবহৃত হয়, যেখানে রায়াহ সমগ্র সশস্ত্র বাহিনী এবং কিয়াসের মাধ্যমে তা সম্প্রসারণ করে তা সমগ্র জনগোষ্ঠীর দ্বারা ব্যবহৃত বিষয় হয়। রাষ্ট্র যুদ্ধের সময় রায়াহ উড্ডয়ন করবে এবং যদি প্রধান সেনাপতি (খলিফা)ও যুদ্ধ করেন তবে লিওয়া’ও রায়াহর পাশাপাশি উড্ডয়ন করা হবে। এটি নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নেতৃত্বে পরিচালিত যুদ্ধের উপর ভিত্তি করে, যিনি বদর ও উহুদের মতো যুদ্ধে প্রধান সেনাপতি ছিলেন। এটি খুলাফায়ে রাশিদার (সৎপথপ্রাপ্ত খলিফাদের) সময়কার যুদ্ধেও দেখা যায়।

    সিফফিনের যুদ্ধে, খলিফা আলী ইবনে আবি তালিব সরাসরি যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং তাই লিওয়া ও রায়াহ উভয়ই উড্ডয়ন করা হয়েছিল। আলী (রা), মুহাম্মদ ইবনে আল হানাফিয়াকে লিওয়া বহন করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন এবং হিশাম ইবনে উতবাহকে রায়াহ বহন করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। (মুহাম্মাদ আস-সাল্লাবী, আলী, ভলিউম ২, পৃ. ১৫৫)

    যুদ্ধের সময় রায়াহ বা লিওয়া’কে উঁচু করে রাখা সৈন্যদের প্রেরণার লক্ষণ। সাহাবীগণ পতাকা বহনকারীর দায়িত্বকে অবিশ্বাস্যভাবে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করতেন যেমনটি মুস’আব ইবনে উমাইর দেখিয়েছিলেন যখন তিনি তাঁর শাহাদাত পর্যন্ত উহুদ যুদ্ধে লিওয়া বহন করেছিলেন।

    يقول ابن سعد: أخبرنا ابراهيم بن محمد بن شرحبيل العبدري، عن أبيه قال:

    حمل مصعب بن عمير اللواء يوم أحد، فلما جال المسلمون ثبت به مصعب، فأقبل ابن قميئة وهو فارس، فضربه على يده اليمنى فقطعها، ومصعب يقول: وما محمد الا رسول قد خلت من قبله الرسل..

    وأخذ اللواء بيده اليسرى وحنا عليه، فضرب يده اليسرى فقطعها، فحنا على اللواء وضمّه بعضديه الى صدره وهو يقول: وما محمد الا رسول قد خلت من قبله الرسل..

    ثم حمل عليه الثالثة بالرمح فأنفذه وأندق الرمح، ووقع مصعب، وسقط اللواء

    ইবনে সা’দ বলেছেন: ইব্রাহীম ইবনে মুহাম্মদ ইবনে শারহাবিল আল-আবদারী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, যিনি বলেছেন: মুস’আব ইবনে উমাইর উহুদের দিনে লিওয়া বহন করেছিলেন। মুসলমানরা যখন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল, তখন তিনি দ্রুত দাঁড়ালেন যতক্ষণ না তিনি একজন যোদ্ধা ইবনে কামিয়াহ-এর মুখোমুখি হলেন। তিনি তাকে তার ডান হাতের উপর আঘাত করে কেটে ফেললেন, কিন্তু মুসআব বললেন, وما محمد الا رسول قد خلت من قبله الرسل “আর মুহাম্মাদ একজন রাসূল মাত্র, তাঁর পূর্বে রসূলগণ গত হয়েছেন” (আলে ইমরান, ৩:১৪৪)।

    তিনি বাম হাতে লিওয়া’টি বহন করলেন এবং তাতে ভর দিলেন। তিনি তার বাম হাতে আঘাত করে সেটি কেটে ফেলেন এবং তাই তিনি লিওয়া’র উপর ঝুঁকে পড়েন এবং তার উপরের বাহু দিয়ে এটিকে তার বুকের সাথে চেপে ধরেন, এবং বলতে থাকলেন, وما محمد الا رسول قد خلت من قبله الرسل “আর মুহাম্মদ কেবল একজন রাসূল, তাঁর পূর্বে রাসুলগণ গত হয়েছেন।” তারপর তৃতীয় একজন তার বর্শা দিয়ে তাকে আঘাত করল এবং বর্শাটি তার মধ্য দিয়ে বের হয়ে গেল, মুসআবের পতন হলো এবং এরপর লিওয়া’। (Men around the Messenger)

    পতাকার রং কী?

    রায়াহ কালো এবং লিওয়া’ সাদা। তাই আমরা উদাহরণস্বরূপ লাল বা সবুজ পতাকা ব্যবহার করতে পারি না।

    أخرج الترمذي وابن ماجه عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَتْ رَايَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَوْدَاءَ، وَلِوَاؤُهُ أَبْيَضَ

    আত-তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন, যিনি বলেছেন: “নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রায়াহ ছিল কালো এবং তাঁর লিওয়া ছিল সাদা।”

    পতাকার আকৃতি কেমন?

    রায়াহর চারটি কোণ রয়েছে তাই আমরা একটি ত্রিভুজাকার পতাকা ব্যবহার করতে পারি না। কিয়াসের মাধ্যমে এটি লিওয়াহর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

    أخرج أحمد، وأبو داود، والنسائي في سننه الكبرى عن يُونُسُ بْنُ عُبَيْدٍ مَوْلَى مُحَمَّدِ بْنِ الْقَاسِمِ، قَالَ: بَعَثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ الْقَاسِمِ إِلَى الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ يَسْأَلُهُ عَنْ رَايَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاهى؟ فَقَالَ: كَانَتْ سَوْدَاءَ مُرَبَّعَةً مِنْ نَمِرَةٍ

    আহমাদ, আবু দাউদ এবং আন-নাসায়ী তার আল-সুনান আল-কুবরা গ্রন্থে মোহাম্মদ বিন আল-কাসেমের দাস ইউনুস বিন ওবায়েদের কর্তৃত্বে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেন: মোহাম্মদ বিন আল-কাসেম আমাকে আল-কাসেমের কাছে পাঠিয়েছিলেন। বারা বিন আজেব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রায়াহ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে এটা কী? তিনি বললেন: “এটি ছিল একটি কালো চতুর্ভুজ (مُرَبَّعَةً) যা নমিরা থেকে তৈরি করা হয়েছিল”।

    পতাকার উপাদান কী?

    উপরের হাদিসটি সুনির্দিষ্ট করে যে রায়াহ’র জন্য ব্যবহৃত উপাদানটি ছিল নামিরা (পশম)। যাইহোক, এই উপাদান ব্যবহার করা একটি হুকম নয়, বরং উপকরণ (ওয়াসীলাহ) শ্রেণীতে পড়ে। আপনি জিজ্ঞাসা করতে পারেন কেন একে উপকরণ অর্থ হিসাবে বিবেচনা করা হবে, আর আকৃতিকে হুকম হিসাবে বিবেচনা করা হয়। উত্তর হল কারণ সাহাবীগণ তাদের সময়ের কাপড়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন যা প্রধানত উল ছিল এবং এ ব্যপারে অন্য সুযোগ ছিল না, যেখানে আকৃতি, রঙ এবং প্রতীকের জন্য তাদের সুযোগ ছিল, এরপরও একটি নির্দিষ্ট নকশা বেছে নেয়া হয়েছে।

    অতএব, আমরা পতাকার জন্য নাইলন বা সুতির মতো যে কোনো উপাদান ব্যবহার করতে পারি।

    পতাকার আকার কতটুকু?

    পতাকার মাপ টেক্সটে নির্দিষ্ট করা নেই তাই আমাদের ইচ্ছামত পতাকার যে কোন আকার থাকতে পারে।

    আশ-শাখসিয়্যা আল-ইসলামিয়া উল্লেখ করেছে “দলীল নিবিড় যাচাই-বাছাই স্পষ্ট করে যে রায়াহ লিওয়া’র চেয়ে ছোট” এবং আরো বলা হয়েছে “(এর চেয়ে) বৃহত্তর বা কম পরিমাপের রায়াহ এবং লিওয়া ব্যবহার করা অনুমোদিত।”

    বইটি পতাকার জন্য একটি আকারও নির্দিষ্ট করেছে। তবে ভবিষ্যতে এটি গ্রহণ করার বিষয়টি খলিফার উপর নির্ভর করে।

    লিওয়া = ১২০ সেন্টিমিটার x ৮০ সেন্টিমিটার

    রায়াহ = ৯০ সেন্টিমিটার x ৬০ সেন্টিমিটার

    আকৃতির অনুপাত কী?

    পতাকার আকৃতির অনুপাত নির্দিষ্ট করা নেই তাই আমরা আমাদের ইচ্ছামত যেকোনো অনুপাত ব্যবহার করতে পারি, তবে আশ-শাখসিয়া আল-ইসলামিয়া বর্তমানে বেশিরভাগ পতাকার সাথে সঙ্গতি রেখে একটি ২/৩ অনুপাত উল্লেখ করেছে। উদাহরণস্বরূপ অটোমান পতাকা একটি ২/৩ অনুপাত ব্যবহার করতো।

    পতাকায় কি প্রতীক আছে?

    রায়াহ ও লিওয়া’তে যা বর্ণনা করা হয়েছে তার ব্যপারে ইখতিলাফ (মতভেদ) রয়েছে। হাদীসের শক্তির পার্থক্যের কারণে এই মতভিন্নতা ঘটেছে যা রায়াহ ও লিওয়া’র উপর নির্দিষ্ট শব্দ উল্লেখ করেছে। যদি কোনো আলেম এই হাদীসটিকে দুর্বল বলে মনে করেন তাহলে এর অর্থ হল রায়াহ ও লিওয়া’র উপর যে কোনো প্রতীক বা লেখা একটি স্টাইল হয়ে যাবে এবং আমরা আমাদের ইচ্ছামত যে কোনো ইসলামি প্রতীক বেছে নিতে পারি। তবে যদি কোনো আলেম হাদিসটিকে ভালো মনে করেন তাহলে শব্দটি হুকমে পরিণত হবে এবং এক্ষেত্রে কোনো বিকল্প নেই। প্রশ্নবিদ্ধ হাদীসটি নিচে দেওয়া হলো।

    فقد أخرج الطبراني في الأوسط قال: حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ رِشْدِينَ قَالَ: نا عَبْدُ الْغَفَّارِ بْنُ دَاوُدَ أَبُو صَالِحٍ الْحَرَّانِيُّ قَالَ: نا حَيَّانُ بْنُ عُبَيْدِ اللَّهِ قَالَ: نا أَبُو مِجْلَزٍ لَاحِقُ بْنُ حُمَيْدٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: «كَانَتْ رَايَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَوْدَاءَ وَلِوَاؤُهُ أَبْيَضُ، مَكْتُوبٌ عَلَيْهِ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ». لَا يُرْوَى هَذَا الْحَدِيثُ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ إِلَّا بِهَذَا الْإِسْنَادِ، تَفَرَّدَ بِهِ: حَيَّانُ بْنُ عُبَيْدِ اللَّهِ

    এটি আল-আওসাতে আত-তাবারানী দ্বারা তাখরীজ করা হয়েছে: (আহমাদ বিন রাশদিন বর্ণনা করেছেন যে আব্দুল গাফফার বিন দাউদ আবু সালেহ আল-হাররানী বলেছেন: হায়ান বিন ওবাইদিল্লাহ আমাদেরকে বলেছেন যে আবু মিজলাজ লাহেক বিন হুমাইদ ইবনে আব্বাসের সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে বলেছেন: “ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রায়াহ ছিল কালো এবং তার ব্যানার (লিওয়া) সাদা ছিল যারা উপর লেখা ছিল: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ”.

    এই হাদীসটি ইবনে আব্বাস এই সনদ ব্যতীত বর্ণনা করেননি এবং এটি হাইয়ান বিন ওবাইদিল্লাহর জন্য একক বর্ণনা।

    বিতর্কটি হাদিস বর্ণনাকারী হাইয়ান বিন ওবাইদিল্লাহর সাথে সম্পর্কিত। শায়খ আতা আবু আল-রাশতা তার ফেসবুক প্রশ্নোত্তরগুলির মধ্যে একটিতে এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন:

    ১) ইবনে হিব্বান এটি আল-ছিকাতে উল্লেখ করেছেন এবং এটি তার গ্রন্থ আল-ছিকাত ভলিউম ৬/২৩০ এ রয়েছে:

    (৭৪৯১ – বনি ওদাইয়ের দাস হাইয়ান বিন ওবাইদিল্লাহ আবু জুহাইর আবু মিজলাজ ও তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন এবং মুসলিম বিন ইব্রাহিম ও মুসা বিন ইসমাইল তার থেকে বর্ণনা করেছেন)

    ২) আল-যাহাবী তার মিজান আল-ই’তিদাল (৬২৩/১) গ্রন্থে এটি উল্লেখ করেছেন:

    (২৩৮৮ – হায়্যান বিন ওবাইদিল্লাহ, আবু জুহাইর, আবি মিজলাজের কর্তৃত্বে বুসরার শায়খ। আল-বুখারি বর্ণনা করেছেন: আস-সালত তার (বর্ণনা) মিশ্রন করে ফেলার কথা উল্লেখ করেছেন)।

    3- আল-সালত হলেন বিন মোহাম্মদ আবু হাম্মাম, এবং আবু আল-হাজ্জাজ তার গ্রন্থ তাহজীব আল-কামাল ফী আসমা আল-রিজাল ৭৯/২-এ তাকে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন: আবু হাম্মাম আল-সালত বিন মোহাম্মদ আল-খারকি ওমানের নিকটবর্তী উপসাগরীয় অঞ্চলের একটি দ্বীপ খারেক থেকে এসেছেন এবং আল-বুখরী আল-সহীহ গ্রন্থে তার জন্য বর্ণনা করেছেন।

    4- বার্ধক্যজনিত কারণে হাদীসে তার মিশ্রণের কারণে, আল-উকাইলি তার গ্রন্থ আল-দুয়াফা’ আল-কবীর ৩১৯/১-এ তাকে দুর্বল বর্ণনাকারীদের থেকে বিবেচনা করেছিলেন যেখানে তিনি বলেছেন: হাইয়ান বিন ওবায়দিল্লাহ আবু যুহাইর বুসরা থেকে এসেছেন… এবং আদম বিন মূসা বর্ণনা করেছেন যে তিনি আল-বুখারীকে বলতে শুনেছেন: হায়ান বিন ওবাইদিল্লাহ আবু জুহাইরকে আল-সালত উল্লেখ করেছেন যে তিনি হাদিস মিশ্রিত করছেন…

    5- আল-যাহাবী তার আল-মুগনি ফী আদ-দুআফা ১৯৮/১ গ্রন্থে তার সম্পর্কে বলেছেন “আবু মিজলাজের কর্তৃত্বে হাইয়ান বিন ওবাইদিল্লাহ আবু জুহাইর আল-বসরী নির্ভরযোগ্য নয়।”

    তাই তিনি বিতর্কিত কারণ সেখানে এমন লোক রয়েছে যারা তাকে নির্ভরযোগ্য করে তোলে এবং অন্যরা যারা তাকে দুর্বলদের থেকে বিবেচনা করে কারণ তিনি বৃদ্ধ হওয়ার পরে মিশ্রন করে ফেলতেন। মনে হচ্ছে তিনি বুড়ো হয়ে যাওয়ার পর তার মিশিয়ে ফেলা শুরু হয়। যাইহোক, ইস্যুটি হল রায়াহ এবং লিওয়া’র উপর “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” লেখা, এবং হাদিস মিশিয়ে ফেলা এই লেখাকে প্রভাবিত করে না, বিশেষ করে যেহেতু তাঁর এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যে সনদে দুজন নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী রয়েছে। অর্থাৎ আবু মিজলাজ লাহেক বিন হামেদ ও ইবনে আব্বাস (রা.)। তাই আমরা রায়াহ ও লিওয়া’র উপর দুটি শাহাদাহ-এর লেখা গ্রহণ করেছি।

    আরবি হরফ/ফন্ট কী হবে?

    আরবি হরফ/ফন্ট নির্দিষ্ট করা নেই তাই আমরা যেকোনো আরবি হরফ বা ক্যালিগ্রাফি ব্যবহার করতে পারি। এটি শৈলী (usloob) এর অধীনে পড়ে।

    অন্য কোন পতাকা আছে?

    বিভিন্ন সেনা কর্পস, ডিভিশন এবং রেজিমেন্টগুলি রায়াহর পাশাপাশি তাদের নিজস্ব পতাকা ব্যবহার করতে পারে যেমনটি আমরা আজ যে কোনও সেনাবাহিনীতে পাই। এই হাদীস থেকে উদ্ভূত হয়েছে যেখানে বিভিন্ন ইউনিট বা গোত্র সরকারী রায়াহর পাশাপাশি যুদ্ধে তাদের নিজস্ব ব্যানার ব্যবহার করেছিল।

    وقد ورد عند الطبراني في الكبير عن مَزِيدَةَ الْعَبْدِيَّ، يَقُولُ: إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَقَدَ رَايَاتِ الْأَنْصَارِ فَجَعَلَهُنَّ صُفَرًا

    মাজিদা আল-আবদির সূত্রে আল-কাবীরে আত-তাবারানী কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে: “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল-আনসারদের পতাকাগুলোকে গিঁট দিয়ে হলুদ করেছেন।”

    وكذلك ورد عند ابن أبي عاصم في الآحاد والمثاني عَنْ كُرْزِ بْنِ سَامَةَ قَالَ: …وَإِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَقَدَ رَايَةَ بَنِي سُلَيْمٍ حَمْرَاءَ

    এবং এটি ইবনে আবি আসেম থেকে আল-আহাদ এবং আল-মাথানি থেকে কুরজ ইবনে সামা থেকে বর্ণিত হয়েছে, যিনি বলেছেন: “… এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী সুলাইমের পতাকাকে লাল করে দিয়েছিলেন“।

    The Ottoman 136th Infantry flag

    The Ottoman 136th Infantry flag

    উপসংহার

    খিলাফতের সরকারী পতাকা হল রায়াহ। এটি রূপকভাবে “যুদ্ধের জননী” (উম উল-হারব) নামে পরিচিত, এবং এটি খলিফার বাসভবন সহ রাজ্যের সমস্ত সরকারি ভবনের উপরে উড়ানো হবে। জনগণ এই পতাকার চারপাশে একত্রিত হবে এবং এটি তাদের বাড়ি, মসজিদ এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রদর্শন করবে। সশস্ত্র বাহিনী তাদের রেজিমেন্টাল ব্যানারের পাশাপাশি এটি প্রদর্শন করবে যাতে তাদেরকে খেলাফতের সরকারী সশস্ত্র বাহিনী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

    লিওয়া’ হল একটি বিশেষ পতাকা যা শুধুমাত্র খলিফার বাসভবনের উপরে রায়াহর পাশাপাশি উড়ানো হবে।