প্রশ্ন-উত্তর: মোটাতাজা বাছুর কুরবানি করা

আমজাদ আল-তামরির প্রশ্ন: আমাদের প্রিয় আমীর, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহ। আমি আল্লাহর কাছে আপনাকে সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করছি। আমার প্রশ্ন: মোটাতাজা বাছুর দুই বছরের কম বয়সী হলে কি কোরবানির জন্য গ্রহণযোগ্য?

হাইথাম আবু শিখাইদিম প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম। দুই বছরের কম বয়সী মোটাতাজা বাছুর কোরবানি করা কি জায়েজ?

উত্তর:

আপনাদের উভয়ের প্রশ্ন একই বিষয়ে, এবং এর উত্তর হচ্ছে:

ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহ

১) কুরবানী একটি ইবাদত এবং রাসূল (সা:) এর শর্তাবলী ব্যাখ্যা করেছেন। কোরবানির শর্তের মধ্যে রয়েছে এর বয়স।

রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন:

«لَا تَذْبَحُوا إِلَّا مُسِنَّةً، إِلَّا أَنْ يَعْسُرَ عَلَيْكُمْ، فَتَذْبَحُوا جَذَعَةً مِنَ الضَّأْنِ»

“শুধুমাত্র একটি পূর্ণ বয়স্ক পশু কোরবানি কর যদি না এটি তোমাদের পক্ষে কঠিন হয়, সেক্ষেত্রে একটি মেষশাবক কোরবানি দাও।” [মুসলিম বর্ণনা করেছেন]। গরুর বড় প্রাণী হওয়ার অর্থ দুই বছর বা তার বেশি বয়স হওয়া। মোটাতাজা এবং প্রচুর গোশত থাকলে যাদের বয়স দুই বছরের কম তাদের জন্য কুরবানী বৈধ বলে আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে যে বক্তব্য রয়েছে তা একটি ভুল বক্তব্য। এই যুগে কয়েকজন ফতোয়াদাতা ছাড়া যদি দুই বছরের কম বয়সী গরুর প্রচুর গোশত থাকে তবে তা কুরবানী করা জায়েজ বলে কেউ বলেনি, এবং তাদের ফতোয়া দলীল-প্রমাণের বিপরীত এবং যা সালফে সালেহীন আলেমদের বক্তব্যের খেলাপ।

শরীয়তে বৈধ শেয়ার ও পরিমাণের কোন ‘ইল্লাহ নেই, তাই শেয়ার বা পরিমাণ ‘ইল্লাহ’ প্রয়োগ ছাড়াই বিবেচনা করা হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীসটি স্পষ্ট:

«لَا تَذْبَحُوا إِلَّا مُسِنَّةً»

“শুধুমাত্র একটি পূর্ণ বয়স্ক পশু কোরবানি কর”, বয়স্ক গরু বলতে বোঝায় যা দুই বছর বয়স অতিক্রম করেছে এবং তৃতীয় বছরে প্রবেশ করেছে। এখানে নিষেধাজ্ঞা একটি কঠোর নিষেধাজ্ঞা, এবং টেক্সট-এর মধ্যে চুড়ান্ত ইঙ্গিত (কারীনা) স্পষ্ট, এবং এটি দরিদ্রদের জন্য একটি ব্যতিক্রম যাদেরকে ভেড়ার বাচ্চা তথা জাযা’আর কোরবানি করা জায়েয করা হয়েছে। আর তা হলো ভেড়ার বাচ্চা যা ছয় মাস পূর্ণ করেছে।

কুরবানী করা একটি ইবাদত, এটি একটি নির্ধারিত (তাওকীফিয়াহ) ইবাদত, অন্যান্য ইবাদতের মতো। এটি তার শর্ত ও কারণ অনুযায়ী সম্পাদিত হয়, যা শরীয়ত দ্বারা বর্ণিত হয়েছে। এসব শর্তে ‘ইল্লাহ’ নেই এবং এসব (শর্ত) ছাড়া কুরবানী বৈধ নয়।

2- “মাফাহিম” (কনসেপ্টস)-এর আরবি পৃষ্ঠা ৩৪-এ বলা হয়েছে: (ইসলামী ব্যবস্থাগুলি ‘ইবাদত, নৈতিকতা, খাদ্যদ্রব্য, পোশাক, মুআমালাত (লেনদেন) এবং দণ্ডবিধি সম্পর্কিত আহকাম শরীয়াহ দ্বারা গঠিত।

ইবাদত, নৈতিকতা, খাদ্যদ্রব্য, পোশাক-আশাক সম্পর্কিত খোদায়ী বিধি-বিধানকে ‘ইল্লাহ’ (আইনগত কারণ) দ্বারা যুক্তিযুক্ত করা যায় না।

রাসূল (সা) বললেন:

«حُرِّمَتِ الْخَمْرَةُ لِعَيْنِهَا»

“মদ (খামর) নিজের (বৈশিষ্ট্যের) জন্যই হারাম।”

তবে লেনদেন এবং দণ্ডবিধি সম্পর্কিত আহকাম শরাহ ‘ইল্লাহ’ দ্বারা যুক্তিযুক্ত। কারণ এসব বিষয়ে হুকম শারঈ একটি ‘ইল্লাহ’র ওপর প্রতিষ্ঠিত, যা বিধি-বিধান প্রণয়নের কারণ। অনেকেই শরীয়াহর সকল বিধি-বিধানকে সুবিধা (মাসলাহাহ) অনুসারে ন্যায্যতা দিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে, কারণ তারা পশ্চিমা মতাদর্শ এবং পশ্চিমা সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত, যা শুধুমাত্র উপযোগকেই কর্মের মাপকাঠি হিসাবে দেখে।

এই ধরনের বুঝ ইসলামী বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্বের সাথে সাংঘর্ষিক, যা রূহকে সকল কর্মের ভিত্তি বলে মনে করে; এবং বস্তুর সাথে রূহের মিশ্রণকে সমস্ত কর্মের নিয়ন্ত্রক করে তোলে। ইবাদত, নৈতিকতা, খাদ্যসামগ্রী ও পোশাকের সাথে সম্পর্কিত আহকাম শরীয়াহ একেবারেই যুক্তিনির্ভর নয়, কারণ এই নিয়মগুলির জন্য কোনো ‘ইল্লাহ’ নেই। সেগুলোকে সেভাবে নেওয়া উচিত যেমন ভাবে সেগুলো টেক্সটে এসেছে এবং ‘ইল্লাহ’র উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত নয়। নামাজ (সালাত), রোজা (সাওম), হজ, যাকাত, নামাজ পড়ার পদ্ধতি এবং এর রাকাতের সংখ্যা, হজের আচার এবং যাকাত প্রদানের জন্য ন্যূনতম সম্পত্তির পরিমাণ (যাকাতের নিসাব) এবং অনুরূপ, এসবকিছু নিতে হবে, গ্রহণ করতে হবে এবং এ ব্যপারে অনুগত হতে হবে যেমনভাবে তারা (তাওকিফি) টেক্সটে এসেছে এবং তাদের জন্য কোন ‘ইল্লাহ খোঁজা হবে না…)

সুতরাং কোরবানির বয়স অতিক্রম করা জায়েজ নয়, বাছুরটি মোটাতাজা হোক বা বয়স্ক না হোক না কেন, যেহেতু টেক্সটে কোনো ‘ইল্লাহ ছাড়া বয়স উল্লেখ করা হয়েছে, তাই এটি (অনুসরণ) বাধ্যতামূলক।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply