লাইলাতুল কদরের তাৎপর্য

মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন:

إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ * وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ * لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ * تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ * سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ

আমি একে নাযিল করেছি কদর রাত্রি। কী আপনাকে জানাবে কদর রাত্রি কী? কদর রাত্রি এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। একটি নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। [সূরা আল-কদর]

আমরা এখন রমজানের শেষ তৃতীয়াংশে প্রবেশ করেছি এবং আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই শেষ ১০ দিন সম্পর্কে বলেছেন,

«تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْوِتْرِ مِنَ الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ»

“রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত তালাশ করো।”

সূরা আল কদরে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এবং অনেক হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লায়লাতুল কদরের মহিমা, ‘শক্তির রাত’ সম্পর্কে কথা বলেছেন। এটি আমাদের রবের পক্ষ থেকে মহান রহমত, পুরস্কার এবং আশীর্বাদের একটি রাত; এমন একটি রাত যেখানে উপাসনা এবং সম্পাদিত সৎকাজ এক হাজার মাসের (তথা ৮৩ বছর) ইবাদতের চেয়েও বেশি মূল্যবান – যা কিনা সারা জীবন ইবাদত করার সমতুল্য; এবং আমাদের গুনাহের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে মহান ক্ষমার একটি রাত এটি, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِ»

“যে ব্যক্তি (খাঁটি) ঈমানের সাথে এবং (আত্মপর্যালোচনাসহ) আল্লাহর কাছে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে নামাজের জন্য দাঁড়ায়, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়…”

তাই মুসলিম হিসেবে আমরা লাইলাতুল কদরের সন্ধান করি, বেশি বেশি নামায, কুরআন তেলাওয়াত, যিকির, দুআ, তওবা চাওয়া, ইসলামের আলোচনা এবং আমাদের রব, আল্লাহ আজ্জা ওয়াজ্জালকে সন্তুষ্ট করার মতো অন্যান্য কাজ করার চেষ্টা করি। তবে, রমজানের এই শেষ ১০ দিনে, আমাদের কিছু সময় ব্যয় করা উচিত যে মহান আল্লাহ তায়ালা ‘লাইলাতুল কদর’ কে কত গুরুত্ব ও ওজন দিয়েছেন তা অনুধাবণ করা এবং আমাদের দ্বীনের জন্য এই রাতের তাৎপর্যের কারণ সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করা।

প্রথমত, এই রাতটির জন্য যে নামটি উল্লেখ করা হয়েছে – “শক্তির রাত” আল্লাহর দৃষ্টিতে এই রাত কতটুক মহিমাময় তা প্রতিফলিত করে। সূরাতুল কদরে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ

কী আপনাকে জানাবে (বোঝাবে/ব্যখ্যা করবে) কদর রাত্রি কী?

মূলত আমাদের বলছেন, “এই শক্তির রাত কী তা পৃথিবীর কোন জিনিস আপনাকে ব্যাখ্যা করতে পারে? আপনি কীভাবে এই রাতের ওজনের প্রশংসা বা কল্পনা করতে পারেন?”, এর মহিমা এবং গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে।

তারপর তিনি আমাদের জানান যে ফেরেশতারা এই রাতে প্রচুর পরিমাণে রহমত ও বরকতের  সাথে অবতরণ করেন – যারা ফজর পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকে তাদেরকে সালামের জবাবে সালাম প্রদান করে। মুফাসসিরীনরা তাদের সূরা আল-কদরের তাফসীরে বর্ণনা করেছেন, এই রাতের এত বরকত যে পৃথিবী ফেরেশতা দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে যায়। অতঃপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের জানিয়ে রাতটিকে আরও বেশি বরকতময়  করেন যে ‘রুহ’ তথা জিবরাঈল (আ.) – এর মত সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরেশতাও এই রাতে অবতরণ করেন – যিনি নবীদের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন; যিনি আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কুরআনের বাণী নিয়ে এসেছিলেন, যার ব্যপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন যে তার ৬০০টি ডানা রয়েছে, যার প্রতিটি ডানা পুরো দিগন্তকে পূর্ণ করে (অর্থাৎ পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত যতদূর চোখ যায়) – এটি এই রাতের মর্যাদাকে আরও বৃদ্ধি  করে।

কিন্তু কোন জিনিসটি এই রাতের এত বেশি  মর্যাদা, ওজন ও গুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়? কারণ এটিই সেই রাত যা আল্লাহ তায়ালা মহান কুরআন নাযিলের জন্য বেছে নিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ * فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ * أَمْرًا مِّنْ عِندِنَا إِنَّا كُنَّا مُرْسِلِينَ * رَحْمَةً مِّن رَّبِّكَ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

আমি একে নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। আমার পক্ষ থেকে আদেশক্রমে, আমিই প্রেরণকারী। আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। [সূরা আদ-দুখান ৩-৬]

সুতরাং লাইলাতুল কদরের মহান মর্যাদা সরাসরি সেই মহান মর্যাদার সাথে জড়িত যা আল্লাহ তায়ালা কুরআন ও এর মধ্যে থাকা বাণীকে দান করেছেন। এবং এই রাতের মহিমা একটি নতুন জীবনধারার মহিমার সাথে যুক্ত যা সেই রাতে বিশ্বের জন্য জন্ম হয়েছিল যা মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে যাবে। তাই শক্তির রাতকে সত্যিকার উপলব্ধি করার অর্থ হচ্ছে কুরআনের বিষয়বস্তুর প্রকৃত মূল্যকে উপলব্ধি করা।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এই কুরআন সম্পর্কে বলেন,

وَلَوْ أَنَّ قُرْآنًا سُيِّرَتْ بِهِ الْجِبَالُ أَوْ قُطِّعَتْ بِهِ الأَرْضُ أَوْ كُلِّمَ بِهِ الْمَوْتَى بَل لِّلّهِ الأَمْرُ جَمِيعًا

যদি কোন কুরআন এমন হত, যার সাহায্যে পাহাড় চলমান হয় অথবা জমিন খণ্ডিত হয় অথবা মৃতরা কথা বলে, তবে কী হত? বরং সব কাজ তো আল্লাহর হাতে। [আর-রা’দ: ৩১]

এই আয়াতে, বিশ্বজগতের পালনকর্তা আমাদের কুরআনে বর্ণিত বাণীর সেই গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে জানাচ্ছেন – যে এত বিশাল কাঠামো হওয়া  সত্ত্বেও এই পাহাড়গুলো এই মহিমান্বিত গ্রন্থটিতে থাকা বানী, এর সমাধানের ভারে চলমান হয়ে যেত।

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,

وَلَوْ أَنَّمَا فِي الْأَرْضِ مِن شَجَرَةٍ أَقْلَامٌ وَالْبَحْرُ يَمُدُّهُ مِن بَعْدِهِ سَبْعَةُ أَبْحُرٍ مَّا نَفِدَتْ كَلِمَاتُ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

পৃথিবীতে যত বৃক্ষ আছে, সবই যদি কলম হয় এবং সমুদ্রের সাথেও সাত সমুদ্র যুক্ত হয়ে কালি হয়, তবুও তাঁর বাক্যাবলী লিখে শেষ করা যাবে না। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। [লুকমান: ২৭]

এই সুন্দর আয়াতে, তিনি আমাদেরকে শক্তিশালীভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে পৃথিবীর সমস্ত গাছ কলম হলেও এবং সমস্ত সমুদ্র তাদের মতো আরও সাতটি দিয়ে কালি হয়ে গেলেও – তারা এর বিষয়বস্তুর সাথে তাল মেলাতে সক্ষম হবে না, অর্থাৎ জীবন ও মানবতার জন্য সমাধান যা আল্লাহর বাণী কুরআনে এসেছে। প্রকৃতপক্ষে, রাজনীতি, অর্থনীতি, আইন, সমাজবিজ্ঞান এবং পারিবারিক জীবনের মতো বিষয়ের সমস্ত বই যদি গ্রন্থাগার, বাড়ি ও প্রতিষ্ঠান হতে একত্রিত করা হয় তবে কুরআনের তুলনায় তা ম্লান হয়ে যাবে। প্রকৃতপক্ষে, এটি সৃষ্টিকর্তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞাকে সৃষ্টির সাথে তুলনা করার মতো হবে – একেবারেই কোন তুলনা নেই।

অতএব, এই কুদরতি রাতের তাৎপর্য হল যে এতে মহিমান্বিত কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে এবং একটি ব্যাপক দ্বীনের উত্থান ঘটেছে যা মানবজাতির ব্যক্তি হিসাবে, সমাজ হিসাবে কিংবা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যে সমস্ত সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে তার সমাধান নিয়ে এসেছে। হোক তা আধ্যাত্মিক, নৈতিক, অর্থনৈতিক, পারিবারিক, সামাজিক, আইন বা রাজনৈতিক – এমন সমাধান যা মানবজাতি যা তৈরি করতে পারে তার সাথে তুলনাহীন; এবং মানুষের আইনের বিপরীতে কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই এটি সমস্ত প্রজন্ম, স্থান, কাল ও পাত্রের জন্য প্রযোজ্য। এটি একটি অপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবস্থার উত্থানকে চিহ্নিত করে যা একজন ব্যক্তির হৃদয় ও মনে প্রশান্তি আনবে এবং যা দুর্নীতিগ্রস্ত ও অন্যায় ধারণা, ঐতিহ্য ও আইনকে উপড়ে ফেলবে, মানুষকে বিভ্রান্তি, বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি এবং দুর্দশা থেকে মুক্ত করবে। একটি ব্যবস্থা যা সকল মানুষের জন্য তাদের সমাজ ও রাষ্ট্রে ঐশী মূল্যবোধ দ্বারা ন্যায়পরায়ণতা ও ভারসাম্য নিশ্চিত করে, মানবতার জন্য এটি সত্যিকারের রহমত ও আলো।

এবং এটি এমন একটি ব্যবস্থা ছিল যা ১৩০০ বছর ধরে প্রয়োগ করা হয়েছিল – মদীনায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় থেকে শুরু করে এবং তাঁর পরে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত খিলাফাহ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হয়েছিল – – ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও চিকিৎসায় শ্রেষ্ঠত্বের বিস্তার, নিরাপত্তা, মহিলাদের জন্য মর্যাদা, এবং স্পেন থেকে চীন পর্যন্ত মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে সম্প্রীতি।

কিন্তু আজ, এই খিলাফাহ রাষ্ট্রের অনুপস্থিতিতে, মহিমান্বিত কুরআনের আইনগুলি আর আমাদের মুসলিম ভূমিতে সামগ্রিকভাবে প্রয়োগ করা হয় না, ইসলাম এই পৃথিবীর মানবতার জন্য যে আলো ও করুণার ব্যবস্থা এনেছিল তা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এর অতুলনীয় সমাধানগুলো – যা বিশ্বের সমস্ত গ্রন্থের বিষয়বস্তুর চেয়ে উচ্চতর – যার অনুপস্থিতি এই উম্মাহ ও মানবজাতিকে অন্ধকার, ব্যাপক দারিদ্র্য, অসম্মান, নিরাপত্তাহীনতা ও দুর্ভোগে নিমজ্জিত করেছে।

দারিদ্র্য দূরীকরণ:

আজ মানবতার মধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ দরিদ্রতার আত্মা-ধ্বংসকারী পঙ্গু জ্বরে ভুগছে এবং এমনকি আমরা মানুষকে অনাহারে মারা যেতে দেখছি যদিও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা প্রতিটি ব্যক্তির জন্য এবং এর বাইরেও একটি ভাল জীবনযাপনের জন্য যথেষ্ট সম্পদ তৈরি করেছেন। তিনি বলেন,

وَبَارَكَ فِيهَا وَقَدَّرَ فِيهَا أَقْوَاتَهَا فِي أَرْبَعَةِ أَيَّامٍ

তিনি পৃথিবীতে উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, তাতে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন এবং চার দিনের মধ্যে তাতে তার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন…। [ফুস্সিলাত: ১০]

আর আজ আমরা দেখছি আমাদের ভাই-বোনরা রুটি ও নোংরা পানির উপর বেঁচে আছে এবং রোগে আক্রান্ত বস্তিতে বসবাস করছে, আমাদের মায়েরা তাদের পরিবারের খাওয়ানোর জন্য আবর্জনা থেকে খাবার তুলেছে, এবং আমাদের দাদিরা রাস্তায় ভিক্ষা করছে যদিও আল্লাহ আমাদের মুসলিম ভূমিগুলোকে তার নিয়ামতে পরিপূর্ণ করেছেন। আমাদের রয়েছে বিশ্বের সিংহভাগ তেল, গ্যাস, স্বর্ণের মজুদ এবং কোটি কোটি একর পৃথিবীর সবচেয়ে উর্বর ভূমি – যাতে আমাদের উম্মাহকে একটি দিনও আর্থিক কষ্ট করতে না হয়। প্রকৃতপক্ষে আমরা যদি মুসলিম বিশ্বের একটি নমুনা দেখি যে, পাকিস্তানের মাত্র ২০ জন ধনী ব্যক্তির কাছ থেকে যদি যাকাত সংগ্রহ করা হয় তবে এটি $৬০০ মিলিয়নেরও বেশি উপার্জন হবে এবং পাকিস্তানের কয়লা ক্ষেত্রগুলির মাত্র ২% মজুদ আগামী ৪০ বছরের জন্য দেশটির জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে, জনগণকে এক সেকেন্ড ব্ল্যাকআউটের শিকার হতে হবে না; বাংলাদেশে কুইক রেন্টালের জন্য যে পরিমান অতিরিক্ত অর্থ খরচ হয় তা দিয়ে একাধিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছানো সম্ভব এবং যদি এককভাবে নাইজেরিয়ায় সঠিকভাবে চাষ করা হয় তবে এটি সমগ্র আফ্রিকাকে খাওয়াতে পারে। সুবহানাল্লাহ!

আমাদের উম্মাহর আজ যে ভয়াবহ অর্থনৈতিক অবস্থা, তা হল কুরআনে  বর্ণিত আইনের রহমত এবং কিভাবে আমাদের দেশের সম্পদকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নির্দেশ অনুযায়ী সংগঠিত করা যায় তা পরিত্যাগ করার ফল। কিন্তু যখন এই আইনগুলো তাঁর سبحانه وتعالى-এর ব্যবস্থা তথা খিলাফতের অধীনে বাস্তবায়িত হয়েছিল, তখন তা ছিল একেবারেই ভিন্ন বাস্তবতা। এই রাজ্যের অধীনে, ৮ম শতাব্দীতে, যখন উমর বিন আবদুল আজিজ মুসলমানদের খলিফা ছিলেন, তিনি একবার ইরাকে তার এক কর্মকর্তা আবদুল-হামিদ ইবনে আবদুর-রহমানকে চিঠি লিখেছিলেন, যাতে তিনি তাকে জনগণের পাওনা পরিশোধ করতে বলেছিলেন। ‘আব্দুল-হামিদ জবাবে  তাঁকে লিখেছিলেন, “আমি জনগণের পাওনা পরিশোধ করেছি এবং বায়তুল-মাল (কেন্দ্রীয় কোষাগার)-এ এখনও অর্থ রয়েছে।” অতঃপর উমর (রা.) তাকে লিখেছিলেন যে যারা টাকা ধার করেছে এবং তার ঋণ পরিশোধ করেছে তাদের প্রত্যেককে খুঁজে বের করতে। আবদুল-হামিদ তাকে আবার লিখেছিলেন, “আমি তাদের ঋণ পরিশোধ করেছি, এবং বায়তুল-মালে এখনও টাকা আছে”। উমর তাকে আবার লিখেছিলেন যে প্রত্যেক সেই পুরুষকে খুঁজতে যার কাছে টাকা নেই কিন্তু বিয়ে করতে চায় এবং তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে এবং তার জন্য মাহর পরিশোধ করতে। আবদুল-হামিদ তাকে আবার লিখেছিলেন, “আমি যাদের খুঁজে পেয়েছি তাদের প্রত্যেককে বিয়ে করিয়েছি এবং মুসলমানদের বায়তুল-মালে এখনও অর্থ রয়েছে।” উমর তখন তাকে চিঠি লিখে বলেছিলেন যে যাদের খারাজ (জমি কর) পাওনা ছিল এবং জমি চাষের জন্য সাহায্যের প্রয়োজন ছিল তাদের সন্ধান করতে এবং তাদের এটি করতে সাহায্য করার জন্য যা যা প্রয়োজন তা তাদের ধার দিতে।

সুবহানাল্লাহ! এটা কোন স্বপ্ন নয়। এটি একটি ভূমিতে কুরআন ও সুন্নাহর মধ্যে থাকা ইসলামী অর্থনৈতিক আইন বাস্তবায়নের করুণা ও ফল – যা সমৃদ্ধি তৈরি করতে পারে এবং প্রত্যেকের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা নিশ্চিত করতে পারে।

রাজনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা:

আজ মুসলিম বিশ্ব রাজনৈতিক দমন-পীড়নে জর্জরিত – তা গণতন্ত্র দ্বারা শাসিত হোক বা একনায়কতন্ত্র দ্বারা। আমাদের এমন নেতৃত্ব আছে যারা ভয় দিয়ে শাসন করে – তাদের নাগরিকদের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করে, মিডিয়াকে তাদের দুর্নীতি ও অন্যায্য কাজের জবাবদিহি করতে বাধা দেয় এবং যারা তাদের অত্যাচারী শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলে তাদের গ্রেফতার, কারাগারে, নির্যাতন এবং এমনকি দায়মুক্তির মাধ্যমে হত্যা করে। তারা এমন শাসক যারা নিজেদেরকে আইনের ঊর্ধ্বে দেখেন, সংবিধান পরিবর্তন করেন এবং জনগণের অধিকার ক্ষুণ্ন করেন, উম্মাহর সম্পদ লুট করেন এবং যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন তাদের হিসাব-নিকাশের কাজগুলো হয়ে ওঠে অপরাধমূলক। 

এটি ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবস্থা, খিলাফতকে পরিত্যাগ করার এবং আল্লাহ প্রদত্ত বিধানের এর পরিবর্তে আমাদের ভূমিগুলিকে পরিচালনা করার জন্য অনৈসলামিক ধর্মনিরপেক্ষ বা ধণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেখানে মানুষ আইন প্রণয়ন করে তার প্রত্যক্ষ ফলাফল। এবং এর ফলস্বরূপ, আমাদের এখন এমন নেতৃত্ব রয়েছে যারা জনগণের চাহিদা এবং ভোগান্তির প্রতি উদাসীন বরং তাদের স্বার্থ ও ক্ষমতার আসন রক্ষা তাদের গ্রাস করে আছে।

এর সম্পূর্ণ বিপরীতে, কুরআন ও সুন্নাহ থেকে প্রাপ্ত আইন দ্বারা গঠিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার অধীনে, খিলাফত, রাজনৈতিক ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা, শাসনে স্বচ্ছতা, আইনের শাসন নিশ্চিত করে এবং এতে নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নাগরিকদের উপর গুপ্তচরবৃত্তি কিংবা নির্যাতন নিষিদ্ধ। এবং এসব শাসনের অবিচ্ছেদ্য নীতি।  প্রকৃতপক্ষে, ইসলামী রাজনৈতিক ব্যবস্থা তাকওয়াপূর্ণ শাসকদের তৈরি করেছে যারা তাদের নাগরিকদের তাদের দায়িত্বের জন্য তাদের কাছে জবাবদিহি করবে এবং তাদের সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজের নিষেধের ইসলামী দায়িত্ব পালনে তাদের উৎসাহিত ও সহায়তা করবে।

উদাহরণস্বরূপ, উমর বিন আল-খাত্তাব (রা.), খলিফার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর জনগণকে একত্রিত করেন এবং তাদের দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত হলে তাকে তাদের শাসক হিসেবে জবাবদিহী করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আমার দায়িত্ব পালনে আমি পবিত্র গ্রন্থ থেকে নির্দেশনা নেব এবং মহানবী (সা.) ও আবু বকর (রা.) এর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করব। এ কাজে আমি আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি। যদি আমি সঠিক পথে চলি তবে আমাকে অনুসরণ করবেন। যদি আমি সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হই তবে আমাকে সংশোধন করবেন যাতে আমরা বিপথগামী না হই। একবার জনসভায় জনৈক ব্যক্তি তাকে চিৎকার করে বলল, “হে উমর! আল্লাহকে ভয় কর!” শ্রোতারা তাকে নীরব করতে চেয়েছিলেন কিন্তু উমর এটিকে বাধা দিয়েছিলেন, বলেছিলেন: “যদি লোকেদের দ্বারা এই ধরনের অকপটতা দেখানো না হয়, তাহলে তারা কোন কিছুর জন্যই ভালো নয় এবং, যদি আমরা তাদের কথা না শুনি, তাহলে আমরা তাদের মতই হব (অর্থাৎ কিছুই ভালো হবে না)।” এটা শুধু মুখের কথাই ছিল না, প্রতি বছর হজের সময় তিনি রাষ্ট্রের সকল উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে তার কাছে রিপোর্ট করতে বলতেন এবং এই সময়ে যে কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাদের যে কোনো অভিযোগ তুলে ধরতে পারতেন। একবার একজন ব্যক্তি অভিযোগ করলেন যে একজন গভর্নর তার কোন দোষ না থাকায় তাকে বেত্রাঘাত করেছেন। তদন্তের পর, গভর্নরকেও প্রকাশ্যে একই সংখ্যক বেত্রাঘাত করা হয়েছিল।

রাজনৈতিক ন্যায়বিচারের প্রতি এই গুরুত্ব দেওয়া এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনে জনগণকে সমর্থন করা এবং শাসকের জবাবদিহিতা ইসলামী শাসনের শতাব্দী জুড়ে অব্যাহত ছিল। উদাহরণস্বরূপ, মামুন আর-রশিদ, আব্বাসীয় খলিফদের একজন, বিশেষভাবে তার জনসাধারণের শ্রোতাদের অভিযোগ শোনার জন্য রবিবার আলাদা করে রাখতেন। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত, প্রত্যেকেই – নারী-পুরুষ – খলিফার কাছে তাদের অভিযোগ পেশ করতে পারত, যা তাৎক্ষণিকভাবে মেনে নেওয়া হতো। একদিন এক দরিদ্র বৃদ্ধা অভিযোগ করলেন যে একজন নিষ্ঠুর ব্যক্তি তার সম্পত্তি হস্তগত করেছে। “কে সেই ব্যক্তি?” খলিফাকে জিজ্ঞেস করলেন। “তিনি আপনার পাশে বসে আছেন,” খলিফার ছেলে আব্বাসের দিকে ইশারা করে বৃদ্ধ মহিলা উত্তর দিলেন। আব্বাস দ্বিধাগ্রস্ত সুরে তার পদক্ষেপকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিল যখন বুড়ি তার যুক্তিতে আরও জোরালো হচ্ছিল। খলিফা বলেন যে এটি তার মামলার সততা যা তাকে সাহসী করে তুলেছিল এবং পরবর্তীতে তিনি তার পক্ষে এবং তার নিজের ছেলের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিলেন।

এগুলো কুরআন ও সুন্নাহর আইন দ্বারা পরিচালিত সমাজের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত অপ্রতিদ্বন্দ্বী ন্যায়বিচারের কয়েকটি উদাহরণ মাত্র।

মুসলমানদের জীবন ও ইজ্জত রক্ষা:

আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে আমাদের উম্মাহর রক্ত, জীবন ও সম্মানের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি – তা সিরিয়া, ফিলিস্তিন, মায়ানমার, আফগানিস্তান, মধ্য আফ্রিকা, চীন এবং তার বাইরে যেখানেই হোক। আমাদের ভাই-বোনদের রক্ত পানির চেয়েও সস্তা হয়ে গেছে এবং এমন কোনো রাষ্ট্র বা ব্যবস্থা নেই যা তাদের রক্তকে রক্ষা করতে পারে কিংবা তাদের জন্য অভয়ারণ্যের ব্যবস্থা করতে পারে যেখানে তারা মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে, নাগরিকত্বের পূর্ণ অধিকার ভোগ করতে পারে।

এটি আজ আমাদের দেশে সেসব নেতৃত্ব থাকার ফলাফল যারা কুরআনে থাকা আইন ও সমাধানের পরিবর্তে তাদের নিজস্ব ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা অনুসারে শাসন করে। এইসব অনৈসলামিক শাসনব্যবস্থা আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী উম্মাহ ও দ্বীনের স্বার্থে তাদেরকে একত্রিত করার পরিবর্তে উম্মাহর সৈন্যবাহিনীকে তাদের স্বার্থপর জাতীয় স্বার্থ বা ক্ষমতার সিংহাসন রক্ষার জন্য ব্যবহার করে। এইসব নেতৃত্ব কুরআনের আয়াতের চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন করে, যেখানে বলা হয়েছে,

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ

মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও। [সরা আল-হুজুরাত: ১০]

এবং যেমনটি বলা হচ্ছে,

إِنَّ هَذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاعْبُدُونِ

নিঃসন্দেহ তোমাদের এই সম্প্রদায় একই সম্প্রদায়, আর আমিই তোমাদের প্রভু, সুতরাং আমাকেই তোমরা উপাসনা করো। [আল-আনবিয়া: ৯২]

এবং যেমনটি বলা হচ্ছে,

وَاعْتَصِمُواْ بِحَبْلِ اللّهِ جَمِيعًا وَلاَ تَفَرَّقُواْ وَاذْكُرُواْ نِعْمَةَ اللّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاء فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىَ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا

আর তোমরা সবে মিলে আল্লাহ্‌র রশি দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো, আর বিচ্ছিন্ন হয়ো না, আর স্মরণ করো তোমাদের উপরে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ, — যথা তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু, তারপর তিনি তোমাদের হৃদয়ে সম্প্রীতি ঘটালেন, কাজেই তাঁর অনুগ্রহে তোমরা হলে ভাই-ভাই। আর তোমরা ছিলে এক আগুনের গর্তের কিনারে, তারপর তিনি তোমাদের তা থেকে বাঁচালেন। এইভাবে আল্লাহ্ তোমাদের জন্য তাঁর নির্দেশাবলী সুস্পষ্ট করেন যেন তোমরা পথের দিশা পাও। [সূরা আলে ইমরান: ১০৩]

যাইহোক, যখন কুরআন সেই ব্যবস্থার ভিত্তি ছিল যা আমাদের জমিন শাসন করেছিল, তখন এই উম্মাহ তার অগণিত আশীর্বাদগুলির মধ্যে একটি হিসাবে এই সত্যিকারের ইসলামী ব্যবস্থা তথা খিলাফতের নেতৃত্বে পূর্ণ সুরক্ষা, সুরক্ষা এবং অভিভাবকত্ব উপভোগ করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, ৯ম শতাব্দীতে খলিফাহ আল-মুতাসিম বিল্লাহর শাসনামলে, একজন মুসলিম নারী একজন রোমান সৈন্য দ্বারা বন্দী এবং লাঞ্ছিত হয়েছিল। ভীত ও অসহায় সেই নারী দুঃখে সাহায্যের জন্য খলিফার নাম ডাকলেন; “[ওয়া মু’তাসিমা] হায় মু’তাসিম (কোথায় তুমি?)।” ঘটনার খবর মুতাসিমের কাছে পৌঁছালে তিনি জবাব দেন, “লাব্বাইক [আমি আপনার ডাকে সাড়া দিচ্ছি]।” এবং তিনি বললেন, “ওয়াল্লাহি (আল্লাহর শপথ), আমি এমন একটি বাহিনী পাঠাব যেটি এত বড় যে যখন এটি তাদের কাছে পৌঁছাবে তখনও তারা আমাদের ঘাঁটি ছেড়ে যেতে থাকবে। এবং আমাকে এই রোমানদের সবচেয়ে শক্তিশালী শহরটি বলুন এবং আমি সেই শহরে সেনাবাহিনী পাঠাব।” রমজান মাস হলেও তিনি এ কাজে দেরি করেননি। বরং তিনি অবিলম্বে মহিলাটিকে উদ্ধার করার জন্য রোমানদের সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গ আমুরিয়া শহরে ৯০,০০০ শক্তিশালী একটি সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। শহরটি তার অত্যাচারীদের হাত থেকে মুক্ত হয়েছিল এবং ইসলামের শাসনের অধীনে এসেছিল, এবং আল-মু’তাসিম তার নিজের হাতে মহিলাটিকে মুক্ত করেছিলেন, এমনকি তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ক্ষমা চেয়ে বলেছিলেন, “প্রিয় বোন, আমি আরো আগে আসতে পারলাম না, কারণ বাগদাদ থেকে তোমার পথ অনেক দূর ছিল।” তাই, শুধুমাত্র একজন নারীকে উদ্ধার করার জন্য একটি সম্পূর্ণ সেনাবাহিনী পাঠানো হয়েছিল কারণ ইসলামী শাসন তার রাষ্ট্রের নাগরিকদের সম্মান ও সুরক্ষা প্রদান করে; এবং খিলাফতের দায়িত্ব ও সামর্থ্য এরূপই ছিল যে সে তার উম্মাহকে রক্ষা করতে তার বিশাল ভূখণ্ড থেকে সম্পদ ও সৈন্যদের একত্রিত করতো, বিনা দ্বিধায়।

তাই আবার বলছি, এটি কোনো স্বপ্ন নয়। এটি মহিমান্বিত কুরআনে থাকা আইন ও সমাধান অনুসারে আমাদের ভুমি শাসন করার মাধ্যমে এই উম্মাহর জন্য রহমত ও সুরক্ষা।

সুতরাং, আমরা রমজানের এই শেষ ১০ দিনে লাইলাতুল কদরের সন্ধান করার জন্য, আমাদের প্রভুর কাছে তাঁর ক্ষমা, রহমত ও পুরস্কারের জন্য প্রার্থনা করছি এবং মহিমান্বিত কুরআনের তেলাওয়াত সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করছি, আসুন আমরা চিন্তা করি যে এই ক্ষমতার রাতটি কেন তাৎপর্যপূর্ণ – অর্থাৎ আল্লাহর কিতাব এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে তার অবতীর্ণ হওয়া। এবং এর সাথে, আসুন আমরা নিজেদেরকে জিজ্ঞাসা করি যে আমরা এই কুরআনকে আমাদের জীবনে এবং পৃথিবীতে এমন মর্যাদা দিয়েছি কিনা যা এর প্রাপ্য – এমন এক মর্যাদা যা বিশ্বপালনকর্তা سبحانه وتعالى কর্তৃক বর্ণিত যা তা প্রতিফলিত করে এই কুরআন যে রাতে অবতীর্ণ হয়েছিল সেই রাত ১০০০ মাসের চেয়েও উত্তম! কারণ এই মহিমান্বিত কুরআন নিছক তেলাওয়াতের জন্য একটি আধ্যাত্মিক গ্রন্থ নয়, বা এমন কিছু নয় যা কেবল কিছু নিয়ম-কানুন সংজ্ঞায়িত করে যা আমরা অনুসরণ করি। না! বরং এটি মানবজাতির স্রষ্টা سبحانه وتعالى কর্তৃক তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি অবতীর্ণ একটি গ্রন্থ যা আমাদের সমগ্র জীবনকে গঠন করতে এবং আমাদের সমস্ত বিষয়গুলিকে পরিচালনা করে – রাজনৈতিক অর্থনৈতিক, বিচারিক, সামাজিক এবং এর বাইরে যা কিছু রয়েছে – এবং এমনভাবে পরিচালনা শেখায় যা আল্লাহর রহমত নিয়ে আসে। মানবতার জন্য তার দ্বীনের আলো নিয়ে আসে এই পৃথিবীতে। এই গ্রন্থকে অন্যথায় মনে করা বা এর চেয়ে কম কিছু মনে করা আমাদের হাতে থাকা এই রত্নটির মূল্যকে অবমূল্যায়ন করা, অথচ এর নিদর্শন তাদের কাছে প্রকাশিত হলে পাহাড়গুলোও সরে যেত!

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِنَّ اللَّهَ يَرْفَعُ بِهَذَا الْكِتَابِ أَقْوَامًا، وَيَضَعُ بِهِ آخَرِينَ»

আল্লাহ্ এই কিতাবের মাধ্যমে কিছু জাতিকে উন্নীত করেন এবং অন্যদেরকে এর দ্বারা অধঃপতন করবেন” [মুসলিম]

মূল: ডা. নাজরিন নওয়াজ কর্তৃক প্রবন্ধ, ঈষৎ পরিমার্জিত

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply