ম্যাকার্থিজমের পুনঃঅনুমোদন

ফরেন ইন্টেলিজেন্স সার্ভিলেন্স অ্যাক্ট (FISA) এর ৭০২ ধারা পুনঃঅনুমোদিত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের সাম্প্রতিক অনুমোদন নাগরিক স্বাধীনতা ও জাতীয় নিরাপত্তাকে ঘিরে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই বিতর্কিত নজরদারি কর্মসূচি দীর্ঘদিন ধরে নাগরিক স্বাধীনতা সংস্থাগুলির মধ্যে উদ্বেগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে বিচারিক ওয়ারেন্ট ছাড়াই ইলেকট্রনিক নজরদারি পরিচালনা করতে সুযোগ করে দেয় ৷ ৬০-৩৪ ভোটে বিলটির পাস, জাতীয় নিরাপত্তা এবং মার্কিন নাগরিক স্বাধীনতার মধ্যে চলমান উত্তেজনাকে তুলে ধরছে।

ম্যাককার্থিজম, যা Second Red Scare নামেও পরিচিত, যা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৪০-৫০ সাল মধ্যকার রাজনৈতিক দমন-নিপীড়ন এবং ৫০এর দশকের শেষের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মার্কিন প্রতিষ্ঠানের উপর কথিত কমিউনিস্ট ও সোভিয়েত প্রভাব এবং সোভিয়েত গুপ্তচরবৃত্তির ভয় ছড়ানোর একটি প্রচারণা। অসংখ্য শিক্ষক, শিল্পী, বিজ্ঞানী, প্রযোজক ও পরিচালকদের এই উইচহান্ট এর শিকার হতে হয়েছিল। ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝির পরে, মার্কিন সিনেটর জোসেফ ম্যাককার্থি, যিনি প্রচারণার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, ধীরে ধীরে সে তার জনপ্রিয়তা ও বিশ্বাসযোগ্যতা হারায় যখন তার বেশ কয়েকটি অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। প্রধান বিচারপতি আর্ল ওয়ারেনের অধীনে ইউএস সুপ্রিম কোর্ট নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের উপর একাধিক রায় দেয় যা বেশ কয়েকটি মূল আইন এবং আইন প্রণয়ন নির্দেশকে বাতিল করে এবং Second Red Scare এর অবসান ঘটাতে সাহায্য করে। পরবর্তীতে অন্যান্য মার্কিন সরকারও একই ধরণের গুপ্তচরবৃত্তির প্রচেষ্টা অব্যহত রেখেছে। তারই ধারাবাহিকতা Section 702 এর আলোচনা এসেছে।

বর্তমানে, ধারা ৭০২ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে মার্কিন ভূখণ্ডের বাইরে মার্কিন নাগরিকরা বিদেশিদের সাথে কিভাবে যোগাযোগ করে তার উপর নজরদারির কর্তৃত্ব দেয়। মূলত, এই বিধানটি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে মার্কিন নাগরিক এবং অ-নাগরিকদের মধ্যে যোগাযোগ আটকাতে এবং সংগ্রহ করতে সুযোগ করে দেয়, সেক্ষেত্রে মার্কিন নাগরিক নজরদারির লক্ষ্য হোক বা না হোক। এর মধ্যে ফোন কল, ইমেল, টেক্সট মেসেজ বা অন্য যেকোনো ধরনের যোগাযোগ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

অনিয়ন্ত্রিত নজরদারি, অপব্যবহার এবং গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একেবারেই নতুন নয়; বরং, এটাই মূল ধারা। “নিরাপত্তার উদ্বেগ” দেখিয়ে ৭০২ ধারা পুনঃঅনুমোদিত করার সিদ্ধান্তটি মার্কিন নাগরিকদের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হওয়ার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ন্যাশনাল কাউন্টার টেরোরিজম সেন্টারের ডিরেক্টর ক্রিস্টিন আবিজাইদ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিষয়ক সিনেট কমিটিকে সম্বোধন করে বলেন, “গত মাসের ঘটনাগুলো থেকে প্রমাণিত যে, সন্ত্রাসবাদের হুমকির পরিধি অত্যন্ত ডাইনামিক এবং আমাদের দেশকে [সন্ত্রাস এর বিরুদ্ধে] অবশ্যই মৌলিক বিষয়গুলো রক্ষা করতে হবে।” তিনি ‘ইসরায়েল’-এর উপর হামাসের আক্রমণের কথা বারবার উল্লেখ করেছেন এবং কংগ্রেসকে “এই গুরুত্বপূর্ণ কর্তৃপক্ষকে পুনঃঅনুমোদিত করার” আহ্বান জানিয়েছেন।

অতএব, ৭০২ ধারা তাদের ধর্ম, জাতিগত কিংবা রাজনৈতিক অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীগুলির নজরদারী করার জন্য প্রয়োজনীয় অজুহাত প্রদান করা অব্যাহত রাখবে, এবং এটি  ব্যক্তি স্বাধীনতাকে যে পদদলিত করে তার ব্যপারে তারা উদ্বিগ্ন নয়। যখন নির্বাচিত কর্মকর্তারা প্যালেস্টাইনপন্থী গোষ্ঠীগুলির ব্যাপারে তদন্তের আহ্বান জানান তখন সরকারের নজরদারি ক্ষমতা বাড়ানোর চাপ আরো বাড়তে থাকে। ইতোমধ্যে ভার্জিনিয়ায়, অ্যাটর্নি জেনারেল ফিলিস্তিনের তহবিল সংগ্রহের কার্যক্রমের তদন্ত শুরু করেছেন, এতে অভিযোগ রয়েছে যে এটি হামাসকে সমর্থন করে। স্পষ্টতই, পুনঃঅনুমোদনের পিছনে রয়েছে ভিন্নমতকে চুপ করিয়ে দেওয়া এবং বিরোধিতাকে দমন করার প্রচেষ্টা, বিশেষ করে গাজায় চলমান ঘটনাগুলির বিষয়ে। মার্কিন প্রশাসনের প্রতি ক্রমবর্ধমান হতাশা এবং গাজায় গণহত্যায় তার ভূমিকার মধ্যে সাম্প্রতিক ভোটটি আসে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনিয়ন্ত্রিত সরকারী নজরদারি বজায় রাখতে হবে এবং এটি তারা যেকোনো মূল্যে করবে। এটি হল আমেরিকার নীতি এবং ইসলামের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে মুসলমানদের বশীভূত করার একটি উপায়। মুসলিম হিসেবে, আমরা এই কঠোর পদক্ষেপগুলোকে আমাদের ভীত করবার অনুমতি দিতে পারি না এবং আমাদের অবশ্যই হক কথা বলতে হবে। ইসলামের আলো অবশ্যই বিরাজ করবে।

আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

[إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُواْ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ لِيَصُدُّواْ عَن سَبِيلِ اللّهِ فَسَيُنفِقُونَهَا ثُمَّ تَكُونُ عَلَيْهِمْ حَسْرَةً ثُمَّ يُغْلَبُونَ وَالَّذِينَ كَفَرُواْ إِلَى جَهَنَّمَ يُحْشَرُونَ]

নিঃসন্দেহ যারা কুফরী করে তারা তাদের ধনসম্পত্তি খরচ করে আল্লাহ্‌র পথ থেকে বাধা দেবার জন্যে। তারা এটা খরচ করবেই, তারপর এটি হবে তাদের জন্য মনস্তাপের কারণ, তারপর তাদের পরাজিত করা হবে। আর যারা কুফরী করে তাদের জাহান্নামের দিকে একত্রিত করা হবে [আনফাল: ৩৬]

উৎস: হাইছাম বিন ছাবিত কর্তৃক লিখিত প্রবন্ধ

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply