আশুরা শুধুমাত্র শোক আর বিশ্লেষণের জন্য নয়

:: আশুরা শুধুমাত্র শোক আর বিশ্লেষণের জন্য নয়; বরং নব্য ফিরাউন (আমেরিকা) ও মুসলিম ভূমিসমূহে তার সহকারী হামান আর কারুনদের উৎখাত করে খিলাফত প্রতিষ্ঠার মধ্যেই নিহিত রয়েছে এই দিনের মূল শিক্ষা ::

মহররম মাস এবং বিশেষ করে আশুরার দিনটি মুসলিম উম্মাহর জন্য খুবই পবিত্র এবং পাশাপাশি ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যপুর্ন। বেশ গুরুত্বপূর্ণ অনেক ঘটনার অবতারনা এই মাসেই হয়েছিল যা চিরকাল মুসলিম উম্মাহর জন্য শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে। আশুরা বলতে আমরা অনেকেই শুধু কারবালার মর্মান্তিক ঘটনাকেই স্মরণ করি কিন্তু এই ঘটনা সম্পর্কে অবগত নই যে এই মহররমেই আল্লাহ সুবহানাওয়াতা’লা মুসা (আ) কে বিজয় দান করেছিলেন অত্যাচারী যালেম ফিরাউনের বিরুদ্ধে। তাই এটি শুধু শোকের মাস নয়, বরং যুলুমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সংকল্পবদ্ধ হওয়ার মাস। ঐতিহাসিক কারণ ছাড়াও কুরআন এবং সুন্নাহতে এই মাসকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন:

“১২ মাস এর বছরের ভেতর ৪টি হল পবিত্র। ধারাবাহিক তিনটি মাস – যু’ল কা’দা, যু’ল হিজ্জা এবং মহররম, এবং রজব মুদার যেটি জুমাদিল আখির এবং শা’বান এর মাঝখানে অবস্থান করে” [বুখারি # ২৯৫৮] 

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কুরআনে মহররম সহ উপরোক্ত মাসগুলোকে গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করে বলেন:

“অতএব তোমরা এই মাসগুলোতে (দ্বীনের বিরুদ্ধাচরণ ও এই মাসগুলোর সম্মানহানি করে এমন কাজ করে) নিজেদের ক্ষতিসাধন করো না” [সুরা তওবাহ: ৩৬]

ইবনে আব্বাস (রা) এই “নিজেদের ক্ষতিসাধন করো না” আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন এই চারটি মাসকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পবিত্র ঘোষণা করেছেন। তাই এই মাসগুলোতে নিজেদের (আল্লাহর বিরুদ্ধাচার করার মাধ্যমে) ক্ষতি করা হবে খুবই গুরুতর অপরাধ এবং অন্যদিকে ন্যায়ের কাজের সাওয়াবও হবে অনেক বেশী। তাই এই আশুরার দিনে যেমন আমরা রোজা রেখে সাওয়াব হাসিল করার চেষ্টা করছি, ঠিক তেমনি খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার মতো গুরুত্বপূর্ণ ফরয কাজে গাফিলতি করে আমরা নিজেদের ক্ষতিসাধন করছি। 

আমরা যখন কারবালা প্রান্তরে ইমাম হুসেইন (রা) এর করুণ ঘটনা নিয়ে মর্মাহত হই, আমাদের এই চিন্তা করা উচিৎ কী কারণে আল্লাহর রাসুলের (সা) কলিজার টুকরা হুসেইন (রা) নিজের জীবন বিলিয়ে দিলেন। যেখানে শুধুমাত্র ভুলভাবে খলীফা নিয়োগ দেয়ার কারণে প্রিয় হুসাইন নিজের জীবন আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করে দিলেন সেখানে আমরা আজ ৯০ বছর পার করে দিয়েছি খিলাফত বিহীন অবস্থায়; ভুলভাবে খলীফা নিয়োগ তো পরের বিষয়! খিলাফত যে প্রকৃতপক্ষে মুসলিম উম্মাহর জন্য জীবনমরণ (Life and Death) একটি বিষয় সেটির শিক্ষা আমরা আশুরার দিনে ইমাম হুসেনের আত্মত্যাগ থেকে পাই। খিলাফত যাতে কলুষিত না হতে পারে তার জন্য তিনি শুধু নিজের নয় বরং তার সন্তানকেও আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করেছিলেন কিন্তু তারপরও পিছপা হননি। তাই কারবালা আমাদের শিক্ষা দেয় যালিমের শাসনের বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সাথে খিলাফতের পক্ষে লড়তে এবং প্রয়োজনে নিজেদের সর্বস্ব উৎসর্গ করতে।

মহররমের এই মাস আমাদের আরও স্মরণ করিয়ে দেয় মুসা (আ) এর সংগ্রাম ফিরাউন ও তার সহকারী হামান-কারুনদের বিরুদ্ধে। তাদের যুলুমের মাত্রা যখন বেড়ে গিয়েছিল এবং তারা যখন নিজেদের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ভাবা শুরু করেছিল, ঠিক তখনি মুসা (আ) বনি ইসরায়েলিদের নিয়ে ফিরাউনের শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিলেন। ফিরাউন যেভাবে নিজেকে খোদা ভাবতো ঠিক সেভাবে আজকের নব্য-ফেরাউন আমেরিকাও আবির্ভূত হয়েছে যুলুমের খড়গ নিয়ে। আর আমেরিকার হামান-কারুনদের ভেতর রয়েছে মুসলিম ভূমিসমূহের শাসকরা। বাংলাদেশের দিকে যদি তাকাই তাহলে দেখবো খুনি হাসিনাও আজ দেশকে ধ্বংসের মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে এবং তার খোদা আমেরিকার বলে বলীয়ান হয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তাই মহররম ও আশুরার শিক্ষা এই হওয়া উচিৎ যে আমরা সেই একই পথে হাঁটবো যে পথে মুসা (আ) হেঁটেছিলেন এবং বনী ইসরায়েলকে জুলুমের নাগপাশ থেকে মুক্ত করেছিলেন। নব্য-ফেরাউনি শাসনব্যবস্থা তথা পুঁজিবাদী গণতন্ত্রকে উৎখাত করে খিলাফত প্রতিষ্ঠার মধ্যেই রয়েছে মহররমের শিক্ষার বাস্তব প্রতিফলন।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply