৫ই অগাস্ট গণঅসন্তোষ থেকে সৃষ্ট রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জালিম হাসিনার ১৬ বছরের দুঃশাসনের অবসান ঘটল। চারিদিকে এখন পরিবর্তনের ডাক। দেশের মানুষ আশা করছে যে এবার তারা রাষ্ট্রকে এমনভাবে মেরামত করবে যে পুনরায় যেন এইধরনের জালিম শাসকের জন্ম এবং অসহনীয় পরিস্থিতির উদ্ভব না হয়। আমাদের সংবিধানে যে মারাত্মক কোন সমস্যা আছে তা সবাই বুঝে, তাই পরিবর্তনটা সেখান থেকেই শুরু করার দাবী জোরাল হচ্ছে। অথচ শাসক ও সুশীল সম্প্রদায় – “পশ্চিমা নয় প্রাচ্য ধাচের বা inclusive society উপযোগী” ইত্যাদি নানা term এ ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে মূল সমস্যাকে আড়াল করে সেই সেকুলার গণতান্ত্রিক সংবিধান আমাদের ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। তাই ইউনুস সরকার সংবিধান সংস্কারের আলোচনার টেবিলে আসার শর্ত দিয়েছে যে সেকুলার গণতান্ত্রিক সংবিধানকে ভিত্তি ধরে আলোচনা হতে হবে।
অক্সফোর্ড ডিকশেনারী অনুযায়ী সেকুলার বা ধর্ম নিরপেক্ষতা হল, “The belief that religion should not be involved in the organization of society, education etc. অর্থাৎ সমাজের গঠন/সংগঠন ইত্যাদিতে ধর্ম যুক্ত হবে না। তৎকালীন ইউরোপের চার্চ কেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থার পোপদের দ্বারা ধর্মের নামে নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে ঐ অঞ্চলের মানুষ এই বিশ্বাসে ঐক্যবদ্ধ হয় যে মৃত্যু পরবর্তী জীবন থাকতেও পারে বা নাও পারে, যার যা খুশি ভাবুক কিন্তু দুনিয়া, যেখানে আমরা আছি সেখানে সৃষ্টিকর্তা কোন কথা বলবে না। এই ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের দেওয়া একটা সীমারেখার (খুবই ব্যক্তিগত কিছু আমল, আখলাক, রীতিনীতি) মধ্যে কেউ চাইলে ধর্ম পালন করতে পারবে কিন্তু রাষ্ট্রীয় কোন বিষয়াদিতে (শাসন ও বিচার ব্যবস্থা, পররাষ্ট্র নীতি, অর্থনীতি, শিক্ষানীতি ইত্যাদিতে) স্রষ্টার কোন বিধান আনা যাবে না। মানুষই মানুষের জন্য আইন তৈরি করবে যা পুরোপুরি আমাদের বিশ্বাস বিরোধী। এই বিশ্বাসই মানুষকে আইন বানানোর ক্ষমতা দেয় আর বিশ্বজুড়ে হাসিনার মত দানবদের উত্থান ঘটায় আর আমদের মাথার উপর মার্কিন-ব্রিটিশ উপনিবেশবাদিদের কর্তৃত্ব বজায় রাখে, যা আমাদের দুরবস্থার জন্য দায়ী।
মূল সমস্যা জিয়িয়ে রেখে শাখায় পরিবর্তন কোন নতুন সমাধান নয়। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এ পর্যন্ত আমাদের দেশে সংবিধান সংশোধন হয়েছে মোট ১৭ বার। কিন্তু আমরা প্রতিবার নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর হয়েছি আর শাসক ও শাসকদের মদদপুষ্ট গোষ্ঠী আরও ফুলেফেপে উঠেছে। আগে দুর্নীতি শত কোটি, এখন হাজার কোটি। রুপপুর পরমানু প্রকল্প থেকে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা একাই নিয়েছে ৫.৬ বিলিয়ন টাকা, তার পিয়নের আছে ৪০০ কোটি টাকা। আর বাংলাদেরশের একজন সাধারন ভুমি মন্ত্রি কয়েক বছরে London এ ৩৬০ টি বাড়ি বানিয়ে ফেলেছে। আর সাধারনের দুরবস্থা এমন যে একটা মোবাইল ফোন কিনতে তাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায় আর তা চুরির জন্য পিটিয়ে হত্যা করে। এই হল আমাদের সেকুলার গণতান্ত্রিক সংবিধানের স্বাভাবিক ফলাফল। মানব রচিত এই সেকুলার সংবিধান কখনই আমাদের দারিদ্র দূর করবে না, কর্মসংস্থান তৈরি করবে না। চিকিৎসা সেবা সহজলভ্য করবে বা শিক্ষাকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া নিয়ে মার্কিন-ব্রিটেনের কোন মাথা ব্যথা নেই, কখনই ছিল না। তাদের serve করার জন্য আমাদের যতটুকু দেয়া দরকার ততটুকু দিয়ে বাকিটা তারা smoothly নিয়ে নিবে এমন শাসক, সুশীল জায়গা মত রাখতে পারাটাই এই সংবিধানের মূল লক্ষ্য। তারপরও আমাদের মানব রচিত গণতান্ত্রিক সংবিধান দিয়েই চলতে হবে, মূলে হাত দেয়া যাবে না, কেন? এমনত না যে বিশ্ব এই সেকুলার সংবিধান দিয়ে চলে খুব ভালো আছে। আপনারা জানেন মাত্র ৮ জন বাক্তির হাতে পৃথিবির ৯৯% সম্পদ, বাকি ১% সম্পদ নিয়ে বাকি ৯৯% মানুষ কামরা কামড়ি করে ।
যারা সেকুলার ব্যবস্থার ধারক ও বাহক, তাদের ভয় বোধগম্য। মানুষের হাতে আইন তৈরির ক্ষমতা না থাকলে তাদের নিয়োগকারি মার্কিন-ব্রিটিশের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে না, জনগণকে তাদের নীতি মানতে বাধ্য করা যাবে না, জনগণকে নিঃস্ব করে তাদের নিজেদের রুজি রুটি আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাবে। তাই তারা তাদের সমস্ত মেধা প্রয়োগ করে উম্মাহকে নতুন মোড়কে পুরোন মাল গছিয়ে দিতে চায়। এই ব্যাপারে তাদের অন্যতম সহায়ক ইসলামের সংবিধান নিয়ে সাধারন অজ্ঞতা। ইসলামের ব্যাপারে আমাদের আবেগ আছে কিন্তু এই সেকুলার শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে যেন আমরা ইসলামকে ধর্মীয় গণ্ডির বাইরে ভাবতে না পারি।
তাই রাষ্ট্র পরিচালনায় আল্লাহর বিধান প্রয়োগের কথা আসলে জনসাধারনের মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়, ইসলাম আধ্যাত্মিক বিষয়, আধুনিক রাষ্ট্র পরিচালনার মত জটিল কার্যক্রম ইসলাম দিয়ে কিভাবে সম্ভব? তাদের মনে ভীতির সঞ্চার হয় এই ভেবে যে পরে দেখা যাবে রাসুল (সা)-এর অবর্তমানে আল্লাহর নামে হুজুররা তাদের মন মত আইন বানিয়ে সাধারনকে অন্ধকার যুগে প্রবেশ করাবে। আর উদাহরণ হিসেবে আফগানিস্তানের নাম তো আসেই। তাই বর্তমানে মানব রচিত সংবিধানের মধ্যে ইসলামের কিছু বিধান ঢুকিয়ে সকলের গ্রহণযোগ্য সংবিধান রচনার দাবী জোরাল হয়েছে। কিন্তু মানুষের বিধানের সাথে ইসলামের বিধান ঢুকিয়ে দিলে তা আর ইসলামের সংবিধান থাকে না, মানব রচিত হয়ে যায়, আল্লাহর দাস থেকে মানুষের দাসে পরিনত হই আমরা। তাই একমাত্র ইসলামের সংবিধানের প্রতি জোরাল দাবির জন্য আমাদের ইসলামের সংবিধান সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা থাকা দরকার।
ইসলাম একটি পূর্ণ জীবন বিধান। আর আমি তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছি প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা, হিদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ [নাহল: ৮৯]। অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা সহ প্রতিটি বিষয়ে ইসলামের দিক নির্দেশনা আছে। আল্লাহ বলেছেন,”যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি জানেন না? অথচ তিনি অতি সূক্ষ্দর্শী, পূর্ণ অবহিত” [সুরাহ মুলক: ১৪]। ইসলামের সংবিধানের মূল ভিত্তি লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহ। মানে হল রাষ্ট্রের প্রতিটি কার্যক্রম পরিচালিত হবে শুধু মাত্র আল্লাহ দেয়া বিধান অনুযায়ী। নির্বাচিত খালিফা কেবল তার প্রয়োগ করবে। আল্লাহ সুবহাসানাহু ওয়া তা’আলা কর্তৃক নাযিলকৃত সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করে শেষ নবী রাসুল (সা) ১০ বছর তার ছোট্ট মদিনা রাষ্ট্র শুধু পরিচালনা করেন নি বরং, বিশ্ব নেতৃত্বের ভীত গড়ে দিয়ে গেছেন আর আমাদের জন্য রেখে গেছেন বিধান। এত ডিটেইলে যে, যেকোনো রাষ্ট্রীয় সমস্যার সমাধানের মূলনীতি সেখানে পাওয়া যায়। সেই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী খালিফারা ব্রিটিশ কূটকৌশলের কারণে ১৯২৪ সালে খিলাফাহ ধ্বংসের আগ পর্যন্ত শত শত বছর বিশ্ব নেতৃত্বর দিয়েছেন।
মূল উৎস কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস থেকে প্রয়োজনীয় হুকুম বের করে আনার সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রাসুল (সা) আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গেছেন যেন তাঁর (সা) অবর্তমানে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)’র বিধান দিয়ে চলতে আমাদের কোন অসুবিধা না হয়। কারণ তাঁর পরে আর কোন নবী আসবে না, আর ইসলাম অনুযায়ী জীবন পরিচালনা না করলে আমাদের জবাবদিহিতা ও শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। যদি ইসলাম নিয়ে নুন্যতম ফিকহি বুঝও আমাদের দেয়া হত যা এই সেকুলার ব্যবস্থা ইসলামকে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনার অংশ হিসাবে আমাদের দেয়নি, তাহলেও এই প্রক্রিয়া বোঝা আমাদের জন্য কঠিন হত না। এই process কে বলা হয় ইস্তিনবাত। যোগ্যতা সম্পন্ন scholar যারা মুজতাহিদ, তারা ইজতিহাদ করে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে হুকুম বের করে আনে। শেখ তাকিউদ্দিন আন নাবহানি এমনি একজন উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন মুজতাহিদ, যিনি ১৯৫৩ সালে ইসলামি জীবন বিধান দুনিয়াতে ফিরিয়ে আনার জন্য ইসলামি রাজনৈতিক দল হিযবুত তাহরীর গঠন করেন। তার কাজের অংশ হিসেবে উম্মাহ যেন ইসলামকে ব্যবস্থা হিসাবে visualize করতে পারে সেই জন্য খিলাফার রুপরেখা তথা একটি সংবিধান তৈরি করে যা ইসলামের বিশুদ্ধতম উৎস কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস থেকে উদ্ভূত। সেই সাথে তিনি এর ব্যাখ্যা প্রদান করে দেখিয়ে দেন যে এর প্রতিটি বিধান শারিয়ার বিশুদ্ধ উৎস থেকে উঠে এসেছে যেখানে কোন ব্যক্তির কোন নিজস্ব মতামত নাই। তাই এর অধীনে শাসিত হওয়া মানে ইসলামের অধীনে থাকা। প্রতিটা সেক্টরের জন্য সব মিলিয়ে ১৯১ টি ধারা নিয়ে তৈরি সেই constitution ভবিষ্যৎ খিলাফাহ রাষ্ট্র যা প্রয়োগ করবে ইনশাআল্লাহ। বোঝার সুবিধার্থে কয়েকটি ধারা আলোচনা করছি।
পররাষ্ট্রনীতি বিভাগে ১১ টি ধারা আছে। সুরা নিসা: ১৪১, সুরা ছফ: ৯ (তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্যদ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি সকল দ্বীনের উপর তা বিজয়ী করে দেন, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে) , সুরা মায়িদা: ৫১ ইত্যাদি এরকম অসংখ্য আয়াত এবং সুন্নাহ থেকে এটা স্পষ্ট যে খিলাফাহ রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির মূলভিত্তি হল ইসলামের বানী ও ন্যায় বিচার দুনিয়ার বাকি সব জাতির কাছে পৌছে দেয়া। এই ultimate উদ্দেশ্য পূরণের জন্য কোন রাষ্ট্রের সাথে কী আচরণ করা হবে তা নির্ধারণ করতে ধারা ১৮৯ এ শারিয়ার ভিত্তিতে অমুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। শত্রু রাষ্ট্র – যারা মুসলমানদের সাথে সরাসরি যুদ্ধরত আছে, যেমন – আমেরিকা, ইসরাঈল, ভারত ইত্যাদি; সম্ভাব্য শত্রু রাষ্ট্র – যারা ইসলামের বিরোধিতা করতে পারে কিন্তু এই মুহুর্তে সরাসরি যুদ্ধে নাই – সুইজারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড ইত্যাদি।
এখন যদি আরও specific হই, ভারতের সাথে সম্পর্ক কী হবে? এটা নির্ভর করবে অমুসলিম রাষ্ট্র হিসাবে ভারতের status কি তার উপরে। কাশ্মির দখলকারি, মুসলিম নিপীড়নকারি, রাসুল (সা) এর অপমানকারি আর আমাদের ব্যপারে আগ্রাসি ও সীমান্তে হত্যাকারি ভারত আমাদের শত্রু রাষ্ট্র। এই definition একমাত্র আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত এবং এই শারিয়া অনুসারে ভারতের সাথে সম্পর্ক ঠিক হবে। রাষ্ট্রের খালিফারও এখতিয়ার নাই তার ইচ্ছামত সম্পর্কের ভিত্তি ঠিক করার। গণতান্ত্রিক সংবিধানের দোহাই দিয়ে মার্কিন ভারতের দালালেরা যেমন আমাদের বোঝায় সমস্যায় জর্জরিত ভারতের সাথে আমরা পারব না, সে শুকনা মৌসুমে পানি দিবে না, বর্ষায় ডুবাবে, সীমান্তে পাখির মত মানুষ মারবে, তবু আমাদের জী হুজুর বলতে হবে, না খেয়ে আমাদের ইলিশ দিয়ে দিতে হবে, বিনা শুল্কে আমাদের ভিতর দিয়ে তাদের যা খুশি তা নিয়ে যাবার স্বাধীনতা দিতে হবে একারণে ভারতের শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হতে হল। মোটকথা আমাদের সাথে যাই করুক না কেন তার সাথের বন্ধুত্ব মানে তাদের দাসত্ব মানতেই হবে, এসব জালিয়াতির সুযোগ ইসলামে নাই। শত্রু রাষ্ট্র হিসাবে তাদের সাথে নতজানু সব চুক্তি বাতিল হবে, তাদের নাগরিকদের এখানে আসলে ভিসা লাগবে এবং তাদের উপর নজর থাকবে। ধারা ১৯০ অনুসারে ভারতের সাথে কোনরকম সামরিক চুক্তি, সন্ধি, সমঝোতা, গুরুত্বপূর্ণ ঘাটি লীজ দেয়া সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ। বর্তমান এন্টিটেরোরিজম চুক্তি, যৌথ সেনা মহড়া, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়সহ নিরাপত্তা নষ্টকারী সব চুক্তি বাতিল হবে। ধারা ১৮২ অনুযায়ী শত্রুরাষ্ট্র ভারতের সাথে dealings শুধু মাত্র রাষ্ট্রীয়ভাবে হবে, ব্যবসায়ী বা সাংস্কৃতিককর্মী নাম দিয়ে এদেশের কোন ব্যক্তি, দল কিংবা প্রতিষ্ঠান ভারতের সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে না। এপার বাংলা ওপার বাংলা সংস্কৃতি বিনিময়ের মাধ্যমে আমরা দেখেছি আকিদা বিরোধী অশ্লীল সংস্কৃতি আমাদের দেশে আমদানি করা, আর এর আড়ালে টাকা পাচার করা যাবে না।
অর্থনীতি বিভাগের ধারা ১৬৫ অনুযায়ী যেকোনো ধরনের বিদেশি বিনিয়োগ (FDI) নিষিদ্ধ। ভারত বা আমেরিকার বিশেষ বানিজ্য সুবিধা, অর্থনৈতিক এলাকা বরাদ্দ নিষিদ্ধ। তাই ঋন সহায়তা, বানিজ্য সহায়তার নামে Donald Loo আর বিদেশি শকুনরা ২০০ কোটি ডলার দিয়ে আমাদের বঞ্চিত করে ১০০০ কোটি তুলে নিয়ে যাবে, তা হবে না। ধারা ১৩৭ অনুযায়ী বিদ্যুৎ ও জ্বালানি গণ মালিকানাধীন সম্পত্তি, এই খাত দেশি বা বিদেশি ব্যক্তি বা কোম্পানির মালিকানায় দেয়া যাবে না, এগুলোর মালিক আমরা জনগণ। এই ধারা অনুযায়ী ভারতের আদানি বা কুইক রেন্টালের ফাঁদে আমাদের কেউ ফেলতে পারবে না। বণিক বার্তা নিউজে এসেছে GSB (ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর) অনুসারে বাংলাদেশে ২.৬ ট্রিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদ মজুদ আছে। এগুলো উত্তোলন করে আমাদের বণ্টন করলে আমাদের এই দারিদ্র্য আর বিদেশ নির্ভরতা থাকে? প্রতিবছর বিপদসংকুল সমুদ্র পথে দালাল দিয়ে বিদেশ যাবার পথে আমাদের কত ভাই বোন অসহায়ের মত ডুবে মারা যায় আর আমদের সম্পদ বিদেশিরা লুটে খায়। বর্তমান গণতান্ত্রিক সংবিধানের মাধ্যমে বিভিন্ন চুক্তি করে এই সম্পদ নিয়ে যাচ্ছে নব্য উপনিবেশবাদীদের কোম্পানি নাইকো, গেটকো, কনকো, ফিলিপ্স, শেভরন, এক্সনমবিল। ইসলামের সংবিধানের মাধ্যমে যখন বিদেশি আধিপত্য বন্ধ করে, সম্পদের পাচার রোধ, সম্পদের সুষম বন্টন সর্বোপরি উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাষ্ট্র হওয়াতে খিলাফা রাষ্ট্রে কর্মসংস্থান এমনিতেই তৈরি হবে, বেকার থাকবে না, বৈষম্য হবে না। ধারা ১৫৩- রাষ্ট্র সকল নাগরিকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে। ধারা ১৫৪ অনুযায়ী আমাদের পোশাক কর্মী ভাই বোনদের সহ সকলে ঘাম শুকানোর আগে উপযুক্ত বেতন পেয়ে যাবে। দলিল: হাদিস কুদসি- কিয়ামতের ময়দানে ঐ তিন ব্যাক্তির প্রতিপক্ষ আল্লাহ হবেন, যার একজন হল সে যে শ্রমিকের কাজের সাথে সাথে তাকে মজুরি প্রদান করে না। ধারা ১৫৫- প্রত্যেকের কাজের দক্ষতা অনুসারে কাজের বেতন নির্ধারিত হবে। এসব ধারা কেউ চাইলেই পরিবর্তন করতে পারবে না, একে বলে পবিত্র সংবিধান। জেনারেল মইন কিছুদিন আগে অত্যাচারী পুঁজিপতি, শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা বঞ্চিতকারী গার্মেন্টস মালিকদের আশ্বস্ত করল যে তাদের সবারটা দেখে রাখবে কারণ তাদের করের টাকায় নাকি সেনাবাহিনীর বেতন হয়। যদিও এরা সব সময় প্রনোদনা আর কর সুবিধা পায় আর এই দরিদ্র শ্রমিক রা VAT এর মত oppressive tax এর কারণে ঐ মালিকদের সমান কর দিয়ে এদের পালে। ধারা ১৪৬ অনুযায়ী এমন সব কর হারাম।
এই হল আমাদের বিশ্বাস থেকে উঠে আসা ইসলামি সংবিধান, যার প্রতিটি আইন আল্লাহ সুব কর্তৃক রচিত আর রাসুল (সা) দ্বারা প্রণীত। আমরা যখন এই বিধান দিয়ে চালিত হয়েছি তখন যাকাত দেয়ার লোক পাওয়া যায়নি, এই সেদিন শায়েস্তা খার আমলে টাকায় ৮ মন চাল পাওয়া যেত, আর একজন রোগীর জন্য ৩ জন নার্স, শিক্ষায়- সভ্যতায় আমরা বিশ্বকে পথ দেখিয়েছি।
এই সংবিধান বা ব্যবস্থার প্রয়োগের সাথে আমাদের উপর পশ্চিমাদের খবরদারি শেষ হয় যাবে, জন সাধারনের প্রকৃত মুক্তি মিলবে আর অল্প কিছু জালিম দুস্কৃতিকারী তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, জ্ঞানীগুণী নামধারী মূর্খ ব্যক্তিগণের যারা তাদের প্রভুদের বানানো সংবিধান আমাদের গিলতে বাধ্য করে নিজেদের জীবিকা উপার্জন করে তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। জালিম হাসিনা সহ মধ্য প্রাচ্যর আমেরিকা ইসরায়েলের পদলেহি সকল গাদ্দার শাসক যাদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে আমাদের চোখের সামনে ফিলিস্থিনি ভাই বোনদের হত্যা করা হচ্ছে, তাদের কে ইসলামের বিধান অনুযায়ী বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এবার বলুন, কেন তারা তাদের সর্ব শক্তি নিয়োগ করবে না যেন এই ব্যবস্থা আর সংবিধান আমরা দূরে রাখি? কেন তারা এই ধরনের সংবিধান নিয়ে কোন আলাপ করতে চাইবে? তারা ভয় পায়, দুনিয়া হারানোর ভয় আর তাই আমাদের ভয় দেখায় যে আমরা আফগানিস্তান হয়ে যাব যেই আফগানিস্তানে আমেরিকা শক্তিতে না পেরে বুদ্ধিতে হারিয়ে দেয় আর মোল্লাতান্ত্রিক শাসন প্রবর্তন করে যা ইসলাম থেকে আসেনি।
এটা স্পষ্ট যে বর্তমান এই ব্যবস্থা, সংবিধান আমাদের না। ‘ধর্মনিরপেক্ষ বিশ্বাস’ পশ্চিমাদের বিশ্বাস। আমাদের মুসলিমদের না। পশ্চিমারা তাদের এই ভ্রান্ত বিশ্বাসের উপর একমত। তাই তো পর্ন ইন্ডাস্ট্রি হলো ওয়েস্টদের ২য় সর্বোচ্চ রাজস্ব আয়ের মাধ্যম। এই কুফফার সেকুলার সংবিধানের উপর এই খাইরে উম্মত কখনই ঐক্যবদ্ধ হবে না, ২০০১ সালে যখন হাইকোর্টের এক রুলে বলা হয়, “পতিতাবৃত্তি বাংলাদেশে আইনগত স্বীকৃত একটি পেশা” আমি আপনি কি তা মেনে নিতে পেরেছি? নাকি সমকামিতার মতো স্পষ্ট কুফররকে যখন রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেয়, পাঠ্য বইয়ে “শরীফ থেকে শরিফা” এর মাধ্যমে সমকামিতা অন্তর্ভুক্ত করে তখন তা কি আমরা মেনে নেই? এটা আমাদের আকিদা বিরোধী। কেন এই ব্যবস্থা, এই সংবিধান আমাদের মুসলিমদের মেনে নিতেই হবে যাদের উপর আল্লাহ ইসলাম নাযিল করেছে মানব জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোকে বের করে আনার জন্য (ইব্রাহিম: ১)।
তাছাড়া এখন ইনক্লুসিভ সোসাইটির বরাত দিয়ে সংবিধানে সকল ধরম-বর্ণ-লিঙ্গের মতামতের ভিত্তিতে সমাজের কথা যদি বলি, তা কি এই secular system দিতে পেরেছে? তাহলে, পিউ রিসার্চ অনুযায়ী বাংলাদেশের ৮১%মানুষই তো শরীয়া আইন তথা আল্লাহর বিধান দিয়ে চলতে চায়। ইসলামকে আলোচনার টেবিলের বাইরে রেখে গণতন্ত্র দিয়ে রাষ্ট্র চালানোর সিদ্ধান্ত কিভাবে ইনক্লুসিভ হয়? মাত্র ১৯% মানুষের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তের ভার কেন সকলে বহন করবে? তাই চলুন আমরা ইসলামের সংবিধান, ইসলামি ব্যবস্থার সাথে পরিচিত হই আর অন্য সকল প্রস্তাব প্রত্যাখান করি।