ইলেকট্রনিক পেমেন্ট ওয়ালেট এ ক্যাশব্যাকের শর’ঈ বিধান

নিচের প্রশ্নোত্তরটি অনুদিত। মূল ফতওয়ার জন্য অরিজিনাল ভার্শনটি পড়ুন। 

প্রশ্ন: ইলেকট্রনিক ওয়ালেট অথবা পেমেন্ট ওয়ালেট এ ক্যাশব্যাক পাওয়ার ব্যাপারে হুকুম কী? অনেক ইলেকট্রনিক ওয়ালেট ৫% ক্যাশব্যাক দিচ্ছে এবং বেশি ব্যবহার তথা ইলেকট্রিসিটি বিল ইত্যাদি দেয়ার উপর ভিত্তি করে আরো বেশি দিচ্ছে, এই ক্যাশব্যাক কি সুদ বলে বিবেচিত হবে? উপরন্তু, কখনো কখনো এসব ওয়ালেট রিচার্জ করার পর যে এমাউন্ট পাই তা মুল এমাউন্ট হতে অতিরিক্ত হয়। উদাহরণসরূপ, যদি ১০০ রিয়াল রিচার্জ করি তাহলে আমরা ১১০ রিয়াল পাই ইলেকট্রনিক ওয়ালেটে। এই অতিরিক্ত পরিমান কি সুদ? এক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখতে হবে যে এসব ওয়ালেট ব্যাংক নয়।

উত্তর: ইলেকট্রনিক ওয়ালেট হচ্ছে ডিজিটাল এপ্লিকেশন যাতে পেমেন্ট এর ব্যাবস্থাপনা ডিজিটালি করা হয়, এ প্রক্রিয়ায় একটি ওয়ালেট থাকে যাতে বা যার সার্ভারে গ্রাহকের তথ্যাদি এনক্রিপটেড অবস্থায় থাকে। এসব ওয়ালেটের ব্যবহারকারীগণ এসব ওয়ালেট হতে অর্থ প্রদান ও গ্রহণ করতে পারেন এবং কিছু কিনতে বা বিল প্রদান করতে পারেন তা থেকে। 

এসব পেমেন্ট ওয়ালেট রিচার্জ ও এর দ্বারা পেমেন্ট এর ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট রয়েছে। 

প্রথমত, এসব ওয়ালেট দিয়ে বিল প্রদানের সময়, গ্রাহক ইনভয়েজ এর মূল্যের উপর ৫% থেকে ১০% ডিসকাউন্ট পাচ্ছে এবং এই ডিসকাউন্টকে বলা হয় ক্যাশব্যাক। এবং এই ডিসকাউন্ট কখনো ওয়ালেট কম্পানি কর্তৃক হয় আবার কখনো বিক্রেতা হতে হয়। 

দ্বিতীয়ত, যখন কেউ পেমেন্ট ওয়ালেট রিচার্জ করে, সে মাঝে মাঝে অতিরিক্ত পরিমান পায় তার ওয়ালেটে। উদাহরণস্বরূপ, সে ১০০ রিয়াল রিচার্জ করলে ১১০ রিয়াল পাচ্ছে। 

ওয়ালেট হতে পেমেন্ট করার পর অর্থের অংকটি সেন্ডার এর একাউন্ট হতে রিসিভারের একাউন্টে চলে যায় এবং সে চাইলে তা নগদে রূপান্তর করে নিতে পারে কিংবা ওয়ালেট দিয়ে তা তার ব্যাংক একাউন্টে পাঠিয়ে দিতে পারে। 

এটি হচ্ছে পেমেন্ট ওয়ালেট সমূহের বাস্তবতা এবং এসব পেমেন্ট ওয়ালেট এর শরঈ বিধান নিম্নরূপ: 

১. এসব পেমেন্ট ওয়ালেট এর বাস্তবতা হচ্ছে চেক বা শুকুক এর বাস্তবতার মতো, এবং যে অর্থ পেমেন্ট ওয়ালেট এ জমা আছে তা ব্যাংক একাউন্ট এ অর্থ জমা রাখার মতো। 

২. পেমেন্ট করার সময় যদি প্রদানকারী বিক্রেতার কাছ হতে মূল্যহ্রাস (ক্যাশব্যাক) পায় তবে তা বৈধ। 

এটি এ কারণে যে, পণ্য ও সেবার দাম নির্ধারিত হয় যারা কেনা বেচা করছে তাদের দ্বারা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, 

إلا أن تكون تجارة عن تراض منكم 

কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। [নিসা: ২৯] 

সুতরাং, যদি বিক্রেতা তার পন্য বা সেবা কম দামে বিক্রি করতে চায়, তবে তা বৈধ। ব্যবসার ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো তা হালাল। 

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, 

وأحل الله البيع 

আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন। [বাকারাহ: ২৭৫]

৩. পেমেন্ট ওয়ালেট ব্যবহার করে পেমেন্ট করার ক্ষেত্রে, যদি ডিসকাউন্ট (ক্যাশব্যাক) পেমেন্ট ওয়ালেট থেকেই আসে, তাহলে তা বৈধ নয় কারণ এই ডিসকাউন্ট বা ক্যাশব্যাক হচ্ছে সুদ। এ বাস্তবতা ব্যাংকে অর্থ রাখার ক্ষেত্রে আমানতকারী যে ইন্টারেস্ট পায় তার মতোই, যা অর্থের মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ এবং তা সুদ। 

৪. আর একাউন্ট রিচার্জ করার সময় ১০০ রিয়ালে ১১০ রিয়াল পাওয়া যায়, এই অতিরিক্ত প্রাপ্ত ১০ রিয়াল হচ্ছে সুদ। 

কারণ ওয়ালেটে প্রদত্ত ১০০ রিয়াল হচ্ছে গচ্ছিত রাখার উদ্দেশ্যে যা ব্যবহারকারী তার চাহিদা অনুযায়ী ব্যবহার করবেন। এবং কোনো গচ্ছিত অর্থের উপর অতিরিক্ত অর্থ প্রদান নিষিদ্ধ এবং তা সুদ বলে বিবেচিত হবে। 

এবং আল্লাহই ভালো জানেন 

আবু খালেদ আল হিজাজী 
মূল ভার্শন

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply