জাতি-রাষ্ট্র বনাম খিলাফত রাষ্ট্র

জাতি-রাষ্ট্র: কুফর সাম্রাজ্যবাদীদের ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও উম্মাহকে বিভক্তি করার ফসল 

খিলাফাহ রাষ্ট্র : নবী-রাসূলদের দেখানো পথ যা উম্মাহকে একত্রিত করে

গত ৪৭ বছর ধরে, আমরা প্রতিবছর তথাকথিত স্বাধীনতা দিবস পালন করে আসছি যা আমাদের জন্য আনন্দের (!) উৎসব হিসাবে পরিগনিত হচ্ছে। এ দিবস পালনের সময় আমদের প্রশ্ন করা উচিত এ রাষ্ট্রের বাস্তবতা কী, কে এটা তৈরি করেছে, কেন এবং কিইবা পেলাম?

রাসূল (সা) মক্কা থেকে মদীনায় হিযরত করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার ইচ্ছায় ইসলামী জীবনব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য প্রথম ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন যার মাধ্যমে ইসলাম বাস্তবায়িত ছিলো ও সমগ্র পৃথিবীতে দাওয়ার কার্য সম্পাদিত হয়েছিল। তথন থেকেই কুফর ও হক্ব এর দ্বন্দ শুরু হয় যার ফলশ্রুতিকে ১৩০০ বছর পর পশ্চিমা কুফর সাম্রাজ্যবাদী শক্তি খিলাফত ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল যা মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ রাখতো। তার পরিবর্তে ৯ই মে সাইকস-পিকো (ব্রিটেন ও ফ্রান্স এর দুই পররাষ্ট্র মন্ত্রী) চুক্তির মাধ্যমে ক্ষুদ্র জাতি রাষ্ট্র তৈরি করলো যার ফলে মুসলিম রাষ্ট্রগুলি তাদের করায়ত হলো ও তাদের তাবেদার শাসক তৈরির ভুমি হিসাবে ব্যবহৃত হতে থাকলো। অন্যদিকে রেডক্লিফ লাইন এর মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান নামের দুই দেশ তৈরি পরবর্তীতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান নামের দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা একই ধারাবাহিকতার ফসল।

তাই আমাদের সত্যটা উপলব্দি করতে হবে আর তা হলো খিলাফত রাষ্ট্র মুসলমানদের ঐক্যবব্ধ করে আর জাতি রাষ্ট্র মুসলমানদেরকে বিভক্ত করে যা মুসলমানদের শত্রু কাফির সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কার্যফল। জাতি রাষ্ট্রের বর্তমান বাস্তবতা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। 

১. জাতি রাষ্ট্র তৈরির মাধ্যমে কুফর শক্তি মানবখচিত রাষ্ট্রীয় সীমানা তৈরি করেছে যা সমুন্নত রাখতে আমারা একে অপরের সাথে যুদ্ধ করতেও পিছপা হই না হোক সে আমার মুসলিম ভাই যে সীমানার অপর প্রান্তে থাকে। তাছাড়া অন্য প্রান্তে কুফরের বোমার আঘাতে প্রতিনিয়ত মুসলমান মা বোন, শিশু, বৃদ্ধ মারা যাচ্ছে যা আমরা দেখেও না দেখার ভান করছি কারন তারা আমাদের জাতি রাষ্ট্রের নাগরিক নয়। যার বাস্তবতা আমরা দেখছি সিরিয়াতে নারী শিশু হত্যা, আরাকানের মুসলিমদের উপর অত্যাচার, কাশ্মির সমস্যা ইত্যাদি। সর্বোপরি আমরা সাম্রাজ্যবাদীদের সৃষ্ট জাতি রাষ্ট্রের সীমাকে রক্ষা করে মুসলিমদেরকে একত্রিত হতে বাধা দিচ্ছি। এবং এই বিভক্তিকে ধরে রাখার জন্য প্রত্যেক জাতি রাষ্ট্রের নিজস্ব জাতীয় দিবস, পতাকা আছে যা মিথ্যা বাস্তাবতাকে (!!) প্রকাশ করে। 

রাসূল (সা) বলেছেন, “সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয়, যে জাতীয়তাবাদের দিকে আহ্বান করে, এর জন্য লড়াই করে এবং এর জন্য মারা যায়

২. জাতি রাষ্ট্রগুলো তাদের জনগনের জন্য কুফর আইন বাস্তবায়ন করে তারা শরীয়াহ আইনের কোন প্রয়োগ করে না যা ইসলামি জীবন ব্যবস্থা থেকে আমাদেরকে দূরে সরিয়ে নেয়। আর এই তাগুত বাস্তবায়নের পদ্ধতি হলো বেশিরভাগ লোকের সম্মতি (যদিও বা তা ইসলামী নিয়ম নীতির বিরুদ্ধে হয়) নিয়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে তা বাস্তবায়ন। যেখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ও তাঁর ঐশী বানীর কোন মূল্য নেই (নাউযুবিল্লাহ)। যা আমাদেরকে দেশে দেশে খুবই মানবেতর জীবন যাপনের জন্য ঠেলে দিচ্ছে। 

যে আমার স্মরণে বিমুখ তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি তাকে কিয়ামতে দিন উত্থিত করবো অন্ধ অবস্থায়। ” (ত্ব-হা-১২৪)

৩. জাতি রাষ্ট্রগুলো “সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” এর ব্যানারে ইসলামের উত্থানকে ঠেকাতে কাজ করে যা বাস্তবিকভাবে ইসলামকে জীবন ব্যবস্থা হিসাবে বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। দেশে দেশে আজ সাম্রাজ্যবাদীদের যে চাপানো যুদ্ধ চলছে তা তারা সিদ্ধ করতে চায় “সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” এর শ্লোগান তুলে বাস্তবিক ভাবে তারা সবাই মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে যার বলি হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের সাধারন মানুষ।

বস্তুত: তাদের মুখ থেকে শত্রুতা প্রকাশিত হয় এবং তাদের অন্তর যা গোপন করে তা গুরুতর…” [আলে ইমরান: ১১৮]

সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সম্পর্কে পশ্চিমাদের (র‍্যান্ড কর্পোরেশান) ব্যাখ্যা হলো, “সন্ত্রাসী তারা যারা শরীয়াহ আইন বাস্তবায়নের দাবী তোলে”, কারণ তারা মনে করে মুসলিম মাত্রই সন্ত্রাসী যারা ইসলামি আইন বাস্তবায়নের দাবী তোলে।”

৪. মুসলিম অধ্যুষিত জাতি রাষ্ট্রগুলো ক্ষুদ্র রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃত কারন রাষ্ট্র হিসাবে যে সকল গুনাবলী থাকা দরকার তাদের তা নেই যার কারণে সকল ক্ষেত্রে তারা কুফর সাম্রাজ্যবাদীদের নিয়ন্ত্রেনে থাকে। যখনই কোন সমস্যা হয় এই জাতি রাষ্ট্রগুলো কাফিরদের স্মরনাপন্ন হয় এবং কাফিররা সময় সময় তাদের সাক্ষাত অব্যাহত রাখে। আরাকানে মুসলমানদের সমস্যার জন্য বিভিন্ন কুফর ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশে আসে যাদের মধ্যে রাজনীতিবিদ, মানবাধিকার কর্মী, ধর্মীয় নেতা অন্যতম। অ্যডভেন্টিস্ট ডেভেলপমেন্ট এন্ড রিলিফ অ্যজেন্সির সভাপতি জনাথন ডাফি, প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, বারাক ওবামা অন্যতম, অথবা পোপ ফ্রান্সিস এর আগমন। তাছাড়া জাতি রাষ্ট্রসমূহের রাষ্ট্রপ্রধানরা সব সময় মুখিয়ে থাকে বিদেশী শক্তির সাথে দেখা করার জন্য যার উদাহরন হলো মুসলিম বিশ্বের শাসকদের কুফর রাষ্ট্রগুলোতো কিছুদিন পরপর সফর। তাছাড়া আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোও ঐ জাতিরাষ্ট্রগুলোকে নিয়ন্ত্রনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যাবস্থাপত্র দিয়ে থাকে যা জাতি রাষ্ট্র হিসাবে সবাই নতচিত্তে মেনে নেয়। তাছাড়া গত ১৬, ১১, ২০১৭ তারিখে ইউ এস ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট এর খার্তুম সফর ও তার ১৭.১২.১৭ তারিখের বক্তব্য এবং ২০.১২.২০১৭ তারিখে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট প্রতিনিধির দেশ ত্যাগ যা কাফিরদের জাতিরাষ্ট্রগুলোর নিয়ন্ত্রনের একটি চিত্র মাত্র। IMF, WB, ADB’র ব্যবস্থাপত্র মুসলিম বিশ্বের জাতিরাষ্ট্রে অবস্থানরত মুসলিমদের জীবন মানকে মারাত্মক ভাবে প্রভাবিত করছে। 

৫. জাতি রাষ্ট্রগুলো মুসলিম দেশগুলোর ক্ষুদ্র একক যারা নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারে না । কুফর সাম্রাজ্যবাদী শক্তিও আধিপত্যবাদী শক্তিগুলো ক্রমাগত তাদেরকে শোষন করে যাচ্ছে। উদাহরনস্বরুপ, ভারত কর্তৃক ফারাক্কা বাধঁ, টিপাইমুখ বাঁধ, পদ্মার পানি প্রত্যাহার, সীমান্তে পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা তারপর কাটাতারে ঝুলিয়ে রাখা অথবা আন-নাহদা বাঁধকে আত্মসমর্পন করা যার মাধ্যমে সুদান ও মিশরের মুসলমানদের স্বার্থ বহুগুনে ক্ষুন্ন হচ্ছে। 

রাসূল (সা) বলেছেন, “মুসলমানরা সমগ্র মানবজাতির মধ্যে এক অনন্য উম্মাহ” অর্থাৎ, তাদের এক দেশ, এক যুদ্ধ, শান্তি ও সম্মান এক, বিশ্বাসও এক“।

হে মুসলিমগন, এই হলো জাতি রাষ্ট্রের স্বরূপ ও ফলাফল যা কেবল আমাদেরকে জাতি হিসাবে করেছে দুর্বল, পর্যুদস্ত, ব্যর্থ এবং আমাদের পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠী হিসাবে স্বীকৃতি দান করেছে। এ থেকে বের হওয়ার একটাই সমাধান, তা হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার দেয়া জীবন ব্যবস্থা ইসলামকে নবুওয়াতের আদলের খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা। যা রাসূল (সা) এর ব্যানার আল-উক্কাব সুউচ্চে তুলে ধরবে, মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ করবে, ইসলামি শরীয়াহ বাস্তবায়ন করবে, কাফেরদের পরাজিত করবে এবং সমগ্র মানবজাতির কাছে আল্লাহর হেদায়েত সম্বলিত বানী পৌছে দিবে ইন শা আল্লাহ।

এতে রয়েছে বানী সেই সম্প্রদায়ের জন্য যারা ইবাদত করে।” [সূরা আম্বিয়া-১০৬]

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply