বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসনই কর্মপদ্ধতি বিষয়ক হুকুমগুলোকে ঢেকে দিয়েছে

বাস্তবতার নিরীখে আমরা দেখতে পাই যে, মুসলিমগন ব্যাপক বুদ্ধিবৃত্তিক আক্রমণের শিকার হয়েছে এবং পশ্চিমা কাফেররা এক্ষেত্রে যথেষ্ট সফলতার পরিচয় দিয়ে মুসলিমদের ইসলামের সঠিক উপলদ্ধি থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। একারণে মুসলিমরা ইসলামকে পশ্চিমা বুদ্ধিবৃত্তিক মূলনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে ব্যাখ্যা দিতে শুরু করে যা হল দ্বীনকে জীবন থেকে আলাদা করা। যা পশ্চিমাদের জন্য পরবতীর্ ধাপ নিয়ে কাজ করবার পথকে সুগম করেছে, অর্থাৎ তারা ইসলামী খিলাফতকে ধ্বংস করে মুসলিমদের জীবন থেকে ইসলামকে আলাদা করে ফেলল এবং ৫০ টিরও বেশী ক্ষুদ্র অকার্যকর স্বাধীন রাষ্ট্রে বিভক্ত করে ফেলল। তারপর পশ্চিমারা প্রতিটি রাষ্ট্রে একজন করে তাদের প্রতি আজ্ঞাবহ শাসক বসাল যারা সেসব দেশের সম্পদকে পশ্চিমের প্রয়োজন মেটানোর তাগিদে পাহারা দিতে শুরু করল ও এমন ব্যবস্থা করল যাতে জনগন তাদের উদ্দেশ্য বুঝতে না পারে। তারা এ জনগনকে পরিচালনা করবার জন্য নানা ব্যবস্থা প্রদান করল, প্রচারযন্ত্রেকে তাদের চিন্তা প্রসারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করল, ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে পশ্চিমাদের বুদ্ধিবৃত্তিকে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করবার জন্য পাঠ্যসূচী প্রণয়ন করে দিল। এসবকিছু মুসলিমদের উপরে পশ্চিমাদের আধিপত্যকে সুনিশ্চিত করল এবং বাস্তব জীবন থেকে ইসলামকে পুরোপুরি সরিয়ে দিতে সমর্থ হল।  

এর ফলশ্রম্নতিতে মুসলিমগন আল হাক্ব বা সত্যের সাথে আল বাতিল বা মিথ্যাকে পার্থক্য করবার ক্ষেত্রে সন্দিহান হয়ে পড়লো। তাদের চিন্তা পশ্চিমা চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হল এবং তাদের জীবনব্যবস্থা পশ্চিমা মডেল অনুযায়ী গড়ে উঠল যেখানে বৈষয়িক স্বার্থ জীবনের প্রধান দৃষ্টিভঙ্গী হয়ে উঠল। তাদের আবেগ জাতীয়তাবাদ, দেশপ্রেম ও আধ্যাত্মিক আবেগের মিশেলে তৈরি হল। একারণে মুসলিমদের পারস্পরিক বন্ধন ছিন্ন হল। মুসলিমগন নিজেদের কুফর ব্যবস্থার কাছে অর্পন করল এবং ইসলামি রাষ্ট্র না থাকার বিষয়টি মেনে নিল। ফলে ইসলাম কিছু ব্যক্তিসর্বস্ব শরীয়া নিয়মনীতিতে পরিণত হল। অন্যকথায় তখন মুসলিমদের জীবনযাত্রা পশ্চিমাদের আদলে গড়ে উঠল যেখানে জীবন হতে দ্বীন বিচ্ছিন্ন। একারণে দুনিয়ার প্রতি মোহ বৃদ্ধি পেল এবং জান্নাত লাভের আকাঙ্খা তিরোহিত হল।

ফলস্বরূপ আল্লাহর বিধান (গজব) মুসলিমদের উপরে পতিত হল। দারিদ্রতা, জুলুম, বঞ্চণা, দ্বীন ও দুনিয়া সম্পর্কে অজ্ঞতা, হানিকর নৈতিক চরিত্র ও অসুস্থ সম্পর্ক এসবই মুসলিমদের জীবনকে দূর্বিসহ করে তুলল। 

এই বাস্তবতায় সঠিক দলটিকে অসুস্থতার মূল কারণ ও এর উপসর্গসমূহের মধ্যে পার্থক্য করতে জানতে হবে। যারা এই পার্থক্য করতে পারবে না তারা মনে করে যে, দারিদ্রতাই অসুখের মূল কারণ অথবা অসৎ নৈতিক চরিত্র, অজ্ঞতা ইত্যাদিও হতে পারে। তাই তারা সমস্যা সমাধানের জন্য যখন এগিয়ে আসবে তখন সেই সমাধান হবে আংশিক এবং তিনি রোগের মূল চিকিৎসা বাদ দিয়ে কেবল রোগের উপসর্গের চিকিৎসা করবেন। যদি কোন ব্যক্তি গভীরভাবে মুসলিমদের বর্তমান অবস্থা উপলদ্ধি করবার চেষ্টা করেন, তাহলে দেখবেন যে, ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার অনুপস্থিতির কারণেই মুসলিদের জীবনে পূর্ণাঙ্গ ইসলামের অনুপস্থিতি ঘটেছে। এই রাষ্ট্র না থাকায় তারা আজ অধপতিত, কাফেররা মুসলিমদের উপর আধিপত্য বিস্তার করেছে এবং অজ্ঞতা, দারিদ্র ও জুলুমের মত উপসর্গসমূহ ব্যাপকতা লাভ করেছে। ইসলামের পূণর্জাগরণ ঘটাতে হলে দলটিকে অনুধাবন করতে হবে যে, মুসলিমরা যে দারুল কুফরে এখন বসবাস করে সেটিকে দারুল ইসলামে পরিণত করতে হবে যেখানে মুসলিমগন কেবলমাত্র ইসলামি আইন কানুন দ্বারা শাসিত হবে। এছাড়াও বর্তমান অৈইসলামি সমাজকে ইসলামি সমাজে পরিণত করতে হবে যেখানের মানুষগুলো ইসলামি চিন্তায় বিশ্বাস করে এবং এই আবেগের উপর ভিত্তি করে একীভূত থাকে। ইসলাম দিয়ে তারা শাসন করে ও বিচারের জন্য ইসলামি ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে। আর তখনই ইসলাম পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়িত হয়।  

এভাবে লক্ষ্য সুস্পষ্ট হয় যা হল ইসলামি আক্বীদার উপর ভিত্তি করে দারুল ইসলাম তথা ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করা যেখানে মুসলিমগন ইসলামি জীবনব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত হয় এবং যার ভিত্তি হলো আল্লাহ কতৃক প্রদত্ত হুকুম পালন ও নিষেধাজ্ঞা বর্জন।

দলটি তার লক্ষ্য নির্ধারণের পর এবার সে লক্ষ্য অর্জনের শরীয়া পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে যা মেনে দলটিকে অগ্রসর হতে হবে। এটা বুঝতে হলে আমাদের রাসূলুল্লাহ (সা) এর মক্কীযুগে ফিরে যেতে হবে যখন সেটা ছিল দারুল কুফর এবং রাসুল (স:) তার দাওয়াতকে জনসমক্ষে আনার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন। সেখান থেকেই দলটি তার পথের মাইলফলক, কর্মধারা ও এর বিভিন্ন পর্যায় সম্পর্কে ধারণা নেবে। 

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply