আজকের পদ্ধতিও হবে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পদ্ধতির অনুরূপ

সুতরাং, দলটিকে রাসূলুল্লাহ (সা) সে কর্মকান্ডসমূহের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে যেগুলো তাকে মদীনাতে প্রথম ইসলামী রাষ্ট্র বাস্তবায়নের দিকে নিয়ে গেছে। অবশ্যই পদ্ধতির বিভিন্ন ধাপসমূহ রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে নিতে হবে এবং দাওয়াতের নিয়মসমূহ সেসময়ের বাস্তবতা থেকে বুঝতে হবে। সুতরাং, দাওয়াত ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের সাথে এগিয়ে যাবে, শত প্রতিকূলতার মাঝে; কেউ এ প্রতিকূলতা থেকে পরিত্রাণ পাবে না। যখন রাসূলুল্লাহ (সা) এর উপর আয়াত নাজিল হচ্ছিল তখন ওয়ারাকা বিন নওফেল বলেছিলেন,

তুমি মিথ্যুক হিসেবে সাব্যস্ত হবে, ক্ষতির শিকার হবে, পরবাসে যেতে বাধ্য হবে এবং যুদ্ধের মুখোমুখি হবে। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, ‘তারা কি আমাকে তাড়িয়ে দেবে?’ ওরাকা বললেন, ‘তোমার আগে এমন একজন নবীও আসেনি যারা নির্বাসনে যেতে বাধ্য হননি।’

এ ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,   

‘আপনার পূর্ববর্তী অনেক পয়গম্বরকে মিথ্যা বলা হয়েছে। তারা এতে সবর করেছেন। তাদের কাছে আমার সাহায্য পৌছা পর্যন্ত তারা নির্যাতিত হয়েছেন। আল্লাহ বাণী কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। নিশ্চয়ই আপনার কাছে পয়গম্বরদের কাহিনী পৌছেছে।’ (সূরা আনআম: ৩৪)

আজকের পদ্ধতিও হবে রাসূলুল্লাহ (সা.) দেখানো সেই পদ্ধতি। তিনি (সা) মক্কায় দারুল কুফরে বসবাস করতেন। তিনি স্বতপ্রণোদিত হয়ে এমন কিছু কর্মসূচী হাতে নিয়েছিলেন যা তাকে মদীনাতে দারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠার দিকে নিয়ে গিয়েছিল। মক্কা থেকে মদীনাতে হিজরতের সময়টি ছিল দারুল কুফর থেকে দারুল ইসলামে পরিণত হবার ক্রান্তিকাল।

এখানে একটি প্রশ্ন উত্থিত হয় যে, তাহলে কী এখন দাওয়াত দু’টি পর্যায়ে পরিচালিত হবে, অর্থাৎ মক্কী ও মাদানী পযার্য় ?

উত্তর হল এই যে, রাসূলুল্লাহ (সা) এর সময় দাওয়াত বহন করা হয়েছিল দু’টি পর্যায়ে:

১. মক্কী পর্যায়ে বিশ্বাস ও সামান্য কিছু হুকুম রাসূলুল্লাহ (সা) এর উপর নাজিল হয়েছিল। আইনগতভাবে মুসলিমগন তখন যা নাজিল হত এর বাইরে আর কোন কিছুর জন্য দায়িত্বশীল ছিল না। রাসূলুল্লাহ (সা) কে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল লোকদের ক্ষমা করে প্রজ্ঞা ও উত্তম উপায়ে আহ্বানের করবার জন্য। নিষেধ করা হয়েছিল যে কোনধরনের হিংসাত্নক কর্মকান্ড থেকে বিরত থেকে প্রতিকূল পরিবেশে ধৈর্যধারণ করবার জন্য।

২. মাদানী যুগে বা পর্যায়ে বিশ্বাস সম্পর্কিত বাকী আয়াত ও আহকাম সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা সম্বলিত আয়াত নাজিল হয়। রাসূলুল্লাহ (সা) কে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল ইসলামি আইন বাস্তবায়নের, উকুবাত (শাস্তি) সম্বলিত হুকুমসমূহ প্রতিষ্ঠা করবার, জিহাদ ঘোষণা করবার, নতুন ভূমি জয় করবার এবং লোকদের দেখভাল করবার। এ অবস্থায় মুসলিমগন ইসলামের পূর্ণাঙ্গ অংশের জন্য দায়িত্বশীল হল।

আজকে আমরা মক্কা ও মদীনার হুকুম নির্বিশেষে পূর্ণাঙ্গ ইসলামের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। যে কোন আইনের অবহেলায় জবাবদিহীতার সম্মুখীন হতে হবে। সুতরাং তালাক, বিয়ে, ব্যবসা, জিহাদ, রোযা, হজ্জ্ব, শাস্তির বিধান, ভূমি, মালিকানা ইত্যাদির সাথে সম্পৃক্ত মদীনায় নাজিলকৃত আয়াত সমূহের ব্যাপারে মুসলিমদের জবাবদিহী করতে হবে। এমন আইন রয়েছে যেগুলো পালনের জন্য মুসলিমদের খলিফা অত্যাবশ্যকীয় এবং কোন মুসলিম ব্যক্তিগতভাবে তা গ্রহণের জন্য দায়িত্বশীল নয়, যেমন: শাস্তির বিধিবিধান, দাওয়াত প্রসারের জন্য আক্রমণাত্নক জিহাদ পরিচালনা, রাষ্ট্রীয় সম্পদের সাথে সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা ও খিলাফতের সাথে সংশ্লিষ্ট হুকুমসমূহ। আবার এমন হুকুম রয়েছে যেগুলো খলিফার সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এবং পরিস্থিতি নির্বিশেষে মুসলিমদের জন্য পালন করা বাধ্যতামূলক। এগুলো পালনে তারা ব্যর্থ হলে অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবে হোক সেটা মক্কা বা মদীনায় নাজিলকৃত; এবং ইসলাম সেসব মুসলমানদের জন্য হিজরতকে বাধ্যতামূলক করেছে যারা অবস্থানরত ভূমিতে ব্যক্তিপর্যায়ের হুকুমসমূহ পালন করতে পারছে না। তিনি সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

‘যারা নিজের অনিষ্ট করে, ফেরেশতারা তাদের প্রাণ হরণ করে বলে, তোমরা কি অবস্থায় ছিলে? তারা বলে: এ ভূখণ্ডে আমরা অসহায় ছিলাম। ফেরেশতারা বলে: আল্লাহ পৃথিবী কি প্রশস্ত ছিল না যে, তোমরা দেশত্যাগ করে সেখানে চলে যেতে? অতএব, এদের বাসস্থান হল জাহান্নাম এবং তা অত্যন্ত মন্দ স্থান। কিন্তু পুরুষ, নারী ও  শিশুদের মধ্যে যারা অসহায়, তারা কোন উপায় করতে পারে না এবং পথও জানে না।’ (সূরা নিসা: ৯৭-৯৮)

সুতরাং আজকের সময়ে মক্কীযুগ বা মাদানীযুগ নিয়ে আলোচনা করা অবান্তর। দাওয়াতের ক্ষেত্রে আমরা কেবলমাত্র মক্কীযুগে রাসূলুল্লাহ (সা) যে ধাপগুলো অতিক্রম করেছেন সেটা গ্রহণ করব যা কিনা পরবর্তীতে ইসলামি রাষ্ট্র বাস্তবায়নের পথকে সুগম করেছিল। আর ব্যক্তিগত হুকুম দারুল ইসলাম বা দারুর কুফর নির্বিশেষে সর্বাবস্থায় মুসলিমদের উপর বাধ্যতামূলক।

Leave a Reply