গত ৬ই জানুয়ারী থেকে আজ পর্যন্ত গণতন্ত্র রক্ষার নামে বিরোধী পক্ষের অবরোধ কর্মসূচীর জ্বালাও পোড়াও এবং সরকার পক্ষের দমন নিপীড়ন ও গণগ্রেফতারে আতঙ্কিত বাংলাদেশের জনমনে একটি প্রশ্ন উঠেছে যে এই গণতন্ত্র টা কি জিনিস? কিভাবে এটা রক্ষা হয়? এটা রক্ষার সাথে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সম্পর্কই বা কী? এবং এটা রক্ষার নামে যত নিরীহ মানুষ প্রান হারাচ্ছে এবং বিনা অপরাধে কারাবরণ করছে এর দায়ভার কার? এবং এর থেকে মুক্তির কার্যকর উপায় কী?
প্রথম কথা, আমরা প্রথম এই ধরণের রাজনৈতিক সংকট দেখছি না এর আগেও আমরা এই দেশে দুই পক্ষের ক্ষমতার লড়াইয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের বলি দেখেছি, বহুবার দেখেছি। এবং যখনি এ ধরণের সংকট দেখা গিয়েছে তখনি দেশের অনেক বুদ্ধিজীবী এবং তথাকথিত সুশীল সমাজের অনেক বরেণ্য নাগরিকদের বলতে শুনেছি ‘গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আমাদেরকে এখন এরূপ করতে হবে ঐরূপ করতে হবে ‘যার মানে দাড়ায় এই ধরণের সংকটে যেখানে মানুষের জীবন বিপন্ন সেখানেও সেই বিষয়টাকেই রক্ষা করতে হবে যা কিনা এই সমস্যা/ সংকটের মূল কারণ।
হ্যাঁ, এই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা যেখানে মানুষ বা তাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগতাদের ইচ্ছা অনুযায়ী যা ইচ্ছা তাই আইন তৈরি করে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে দেশ শাসন করে সেই আইন বা শাসনে জনগনের জীবন দুঃসহই কেন না হয়ে উঠে । আজ এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কারনেই শেখ হাসিনার মতো এমন জালেম ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত যে কিনা বিরোধী পক্ষকে দমনের নামে দেশের সাধারণ মানুষের উপর ষ্টীম রোলার চালিয়ে যাচ্ছে তার দল ও পুলিশ বাহিনীর মাধ্যমে , এবং এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কারনেই তার বিরোধী পক্ষও দেশের সাধারণ মানুষের জান মাল ধ্বংস করছে। এই সবই কি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ফলাফল নয়? তাহলে কার স্বার্থে এই গণতন্ত্র কে টিকিয়ে রাখার ধোঁয়া তোলা হচ্ছে? আমরা জানি এই দুই পক্ষই তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য মার্কিন ব্রিটেন ভারতের দালালি করে এবং তাদের এই দালালি কে টিকিয়ে রাখার জন্যই তাদের এই প্রভুদের নির্ধারিত পদ্ধতি এই জুলুমের হাতিয়ার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বাংলাদেশের ইসলামপ্রেমী আল্লাহ্ভীরু জনসাধারণের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শরিক করে এই উম্মাহকে হারামে নিমজ্জিত করেছে, কারন যখনই আমরা এই ব্যবস্থা, এই শাসকদের মেনে নিচ্ছি আমরা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সাথে শিরকে মত্ত হচ্ছি, কারন এই ব্যবস্থা মানুষের তৈরি আইন দ্বারা পরিচালিত হয় যার অধিকার মানুষকে দেওয়া হয়নি।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,
আইন দেয়ার একমাত্র মালিক আল্লাহ্ । [ সূরা ইউসুফ – ৪০ , আনআম – ৫৭]
তিনি আরও বলেন ,
আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন তা অনুযায়ী যারা বিচার ফয়সালা করে না তারাই তো কাফের। জালেম। ফাসেক । [আল মায়িদা – ৪৪,৪৫,৪৭]
তিনি আরও বলেন ,
আর আপনি আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করেছেন তা দিয়ে তাদের মাঝে ফয়সালা করুন এবং আপনার কাছে যে সত্য এসেছে, তা ছেড়ে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না । [সূরা আল মায়িদা – ৪৮]
এর মাধ্যমে আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছি যে এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা একটি কুফর ব্যবস্থা এবং এর সাথে সম্পৃক্ত থেকে আমরা নিজেদের কুফর এর সাথে জড়িয়ে ফেলছি । এবং দেশ জুড়ে যেই জুলুম অত্যাচার এবং হত্যাকাণ্ড চলছে তা এই কুফর ব্যবস্থারই ফলাফল এবং আমরা ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক এই কুফরের বেড়াজালে পড়ে গিয়েছি । আল্লাহ্ আমাদের জন্য কুফর ব্যবস্থার অধীনে থাকা, একে মেনে নেয়া, এবং আল্লাহ্র ভিন্ন অন্য কোনো জীবন ব্যবস্থা অনুযায়ী নিজেদেরকে পরিচালিত করা নিষিদ্ধ (হারাম) করেছেন । এবং একই সাথে একজন খলীফার অধীনে থাকাকে বাধ্যতামূলক করেছেন যিনি আমাদেরকে আল্লাহর দেয়া বিধি বিধান, কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী আমাদেরকে শাসন করবেন এবং মুসলিমদের জান, মাল ও সম্মান রক্ষার্থে সদা সচেষ্ট থাকবেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন,
আর যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলো যে তার কাঁধে (কোনো খলীফার) বায়’আত (আনুগত্যর শপথ) নেই তবে তার মৃত্যু হচ্ছে জাহেলি (যুগের) মৃত্যু । [মুসলিম]
তিনি আরও বলেন, যে (ব্যক্তি) কোনো ইমাম (খলীফা) ব্যতিত মারা গেল , সে জাহিলিয়াতের মৃত্যু বরণ করলো । [আহমদ]
তাই নিশ্চিত ভাবে এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আমরা যদি মৃত্যুবরণ করি তাহলে আমাদের মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু। তাই আমাদেরকে অবশ্যই এই কুফর ব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করতে হবে এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠার কাজে নিজেদের নিয়োজিত করতে হবে যেন একজন খলীফাকে বায়’আত দেয়ার মাধ্যমে নিজেদেরকে কুফর ও শিরকের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে এবং জাহিলিয়াতের মৃত্যু হতে বাঁচতে সক্ষম হই।
মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন