মানুষ হতে হতাশ হয়ে পড়ার মারাত্মক পরিনতি

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মুমিনদের প্রতি উত্তম ধারণা রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলছেন,

তোমরা যখন একথা শুনলে, তখন ঈমানদার পুরুষ ও নারীগণ কেন নিজেদের লোক সম্পর্কে উত্তম ধারণা করনি এবং বলনি যে, এটা তো নির্জলা অপবাদ? [সূরা আন-নূর: ১২]

এছাড়াও আবু হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন,

যদি কোনো ব্যক্তি বলে যে, মানুষ ধ্বংস হয়ে গেছে, তবে সেই (ব্যক্তিই) মানুষকে ধ্বংস করে দিল (আরেক ভাষ্য অনুযায়ী – ‘সেই ব্যক্তিই মানুষের মধ্যে সবচেয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত’) [মুসলিম]

মুসলিমদের মধ্যে যে কল্যাণ রয়েছে এর গুরুত্ব আমাদের অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে। আর যদি তা না করে আমরা উম্মাহকে কল্যাণের তালিকা হতে বাদ দিয়ে দেই তবে তা আমাদের দাওয়ার ব্যর্থতার উপলক্ষে পরিনত হবে এবং দাওয়ার ফরযিয়্যাত অবহেলিত হবে। এবং তা আমাদের ভগ্ন হৃদয় ও সংকীর্ন দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন ব্যক্তিতে পরিনত করবে। ফলে আমরা বিজয় অর্জন করার ব্যপারে হাল ছেড়ে দিব যদিওবা বিজয় হয়তো আমাদের কল্পনার চেয়েও কাছাকাছি অবস্থান করছে। আমরা আমাদের দাওয়ার জীবন হতে ছিটকে পড়ব এবং শূন্য তরী হয়ে নিজেদের মধ্যেই ঘুরপাক খেতে থাকবো।

সুতরাং এটি আমাদের জন্য একটি অনিবার্য দায়িত্ব যে আমরা উম্মাহর মধ্যে কল্যাণের উপস্থিতি ও সাধারন মানুষের বাস্তবতা উপলব্ধি করব। আমরা জানি যে মানুষ তার কাছে থাকা চিন্তা (concept for life) অনুযায়ী কাজ করে। সুতরাং যদি তার চিন্তা কলুষিত হয় তবে তার কাজও ভূলভাবে পরিচালিত হবে। আবার যদি তার চিন্তা ন্যায়নিষ্ঠ হয়, তবে তার কাজও এমনভাবে পরিচালিত হবে যা তাকে নিয়ামতের জান্নাতের দিকে নিয়ে যার যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয় জলধারাসমূহ যেভাবে কুরআনে ওয়াদা করা হয়েছে।

আমরা যদি একইভাবে সারা ‍বিশ্বের অসংখ্য উম্মতের দিকে লক্ষ্য করি তবে দেখতে পাব যে তাদের ভুল কাজগুলো মূলত তাদের অধঃপতিত চিন্তারই ফলাফল। তবুও আমাদের বুঝতে হবে এই অসংখ্য উম্মত আল্লাহ তরফ হতে আসা নিয়ামতসরূপ ইসলামী আকীদাকে ধারণ করে এবং তাদের অধিকাংশই জেনে বুঝে কখনোই ইসলামী আকীদাকে অস্বীকার বা পরিত্যাগ করে না। মুসলিম জনগোষ্ঠির অভ্যন্তরে ইসলামের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস (শুধুমাত্র আবেগের কারণে হলেও তা) তাদের মধ্যে কল্যাণের উপস্থিতি নিশ্চিত করে এবং তা আমাদের উম্মতের মধ্যে অফুরন্ত সম্ভাবনার উপলব্ধিকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। এবং এ কারণে আমাদের তাদের থেকে নিজেদের পৃথক করা উচিত নয়। আমাদের চেষ্টায় রত থাকা উচিত তাদের আবেগি উত্থান-পতনের ইসলামকে গভীর চিন্তার ইসলামে পরিনত করার জন্য। এমনকি কেউ যদি ইসলামকে গভীরভাবে বুঝে থাকার পরও কোনো পরিস্থিতিতে এসে জীবনকে অন্য কোনোভাবে সাজিয়ে নেন, তাকেও আবার সঠিকভাবে বোঝালে তার মধ্যে ইসলামী গভীর চিন্তা ও আবেগের পূনঃর্সূচনা করা সম্ভব। এভাবে ক্রমান্বয়ে তার চিন্তার দিগন্তের ব্যপ্তি আমরা ঘটাতে পারব।

যেসব মুসলিম জীবনের কোনো প্রান্তে এসে আজ শক্তিশালীভাবে ইসলাম পালন করছেন তাদের অনেকেরই উপলব্ধি করা উচিত যে তা নিজেরাও একসময় এই অধঃপতিত অবস্থার একটি অংশ ছিলেন এবং তাদের আকস্মিক উত্থানও উম্মতের অভ্যন্তরে থাকা অফুরন্ত সম্ভাবনারই একটি ফলাফল।

পরিবর্তনের সম্ভাবনা উম্মতের মধ্যে সন্দেহাতীতভাবে রয়েছে। সুতরাং আমাদের ভুল-ভ্রান্তির দিকে বেশি চক্ষুপাত না করে উম্মাহর সম্ভাবনা অন্বেষন করা উচিত। সুতরাং যদি কোনো ভাই যদি ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ না করে কিন্তু সালাত আদায় করে এবং তার ভাইয়ের দিকে হাসিমুখে তাকায় তবে তা আমাদের ইসলামের অংশ হিসেবেই দেখতে হবে। পাশাপাশি এটাও দেখতে হবে যে কোন চিন্তার উপর ভিত্তি করে ভাইটি জীবনের অন্যান্য বিষয়গুলো সাজান এবং তার ভুলগুলো কী এবং কিভাবে সংশোধন করা যায়।

যদি কেউ একরোখা ও অহংকারী প্রকৃতির হয় কিন্তু আবার শিশুদের প্রতি কোমল আচরন করে, তাহলে আমাদের উপলব্ধি করা উচিত যে এটিও তার মধ্যে নিহিত সুপ্ত সম্ভাবনার দিকে আমাদের নির্দেশনা দেয় এবং এর মাধ্যমে তাকে তার অহংকার হতে সংশোধিত করে দেয়ার সুযোগ অন্বেষন করা উচিত আমাদের যা তাকে ইসলামের আরো কাছে নিয়ে আসবে।

এই মানসিকতা আমাদের ফলপ্রসু মানসিকতার চিন্তাশীল ব্যক্তিতে পরিনত করবে। ফলে আমরা সমাজের কোনো অবক্ষয় ও নৈতিক অধঃপতনের মোকাবেলায় পরাজিত হব না। বরং আমরা সমাজের প্রচলিত চিন্তা ও আবেগকে পরিবর্তন করার দিকে দৃষ্টিপাত করব এবং সমাজে সমস্যার আধিক্য হতাশার পরিবর্তে আমাদের জন্য একটি সুযোগে পরিনত হবে মানুষকে বোঝানোর জন্য যে পরিবর্তন কতটা প্রয়োজন। বাংলাদেশসহ মুসলিম দেশগুলোর জনগণের দিকে লক্ষ্য করলে আমরা ইসলামের জন্য তাদের সম্ভাবনার বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধি করি। এমনকি এসব দেশের দুর্নীতিগ্রস্থ রাজনীতিবিদরাও জনগণের মধ্যে বিদ্যমান ইসলামী আবেগকে তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে অত্যন্ত অগ্রসর। এসব দেশের সেনাবাহিনীর মুসলিম সদস্যদের অনেকের মধ্যেও ইসলামের প্রতি আবেগ লক্ষ্য করা যায়।

যথার্থই, ইসলামী আকীদা বহনকারী না হলেও একজনের পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। যদি এরকম না হতো তবে ইসলামের প্রসার ঘটতো না এবং তা রাসূল (সা) এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো। ঐতিহাসিকভাবে লক্ষ-কোটি মানুষের ইসলামে প্রবেশ করাটা মানুষের পরিবর্তনের প্রবল সম্ভাবনাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। রাসূলুল্লাহ (সা)ও দু’আ করেছিলেন যাতে দুই উমরের এক উমর তথা উমর বিন আল-খাত্তাব ও আমর বিন আল-হিশাম ইসলাম গ্রহণ করেন। আমরা সকলেই জানি যে উমর (রা) ইসলাম কবুল করেন এবং প্রচন্ড ইসলাম বিরোধী ব্যক্তি হতে পরিবতন হয়ে অত্যন্ত উঁচুমাপের একজন সাহাবী ও মুসলিমদের রক্ষকে পরিনত হন তিনি। যার ব্যপারে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছিলেন, যখন উমর রাস্তার এক দিয়ে হাটে, শয়তান তার উল্টো পথে হাটে

যদিওবা আবু জাহল কখনোই ইসলাম গ্রহণ করে নি, রাসূল (সা) নিশ্চয়ই তার মধ্যে কোনো সম্ভাবনা দেখেছিলেন নয়তো তিনি তাকে দাওয়াতও দিতেননা এবং তার জন্য দুআও করতেন না।

ইসলামী দাওয়াতের শক্তি এবং সমাজ ও মানুষের জীবনে দ্রুত আমূল পরিবর্তন আনার উপর এর প্রভাবের এরকম আরো অসংখ্য জলন্ত উদাহরন রয়েছে ইতিহাসে।

ইন শা আল্লাহ, এ বিষয়গুলো আমাদের বুঝলে আমরা আল্লাহর অনুমতিক্রমে মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোয়  বের করে নিয়ে আসতে পারব। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন। আমীন।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply