বাংলাদেশকে ঘিরে সাম্রাজ্যবাদীদের পরিকল্পনার সার সংক্ষেপ ও খিলাফতের সমাধান

বাংলাদেশকে ঘিরে সাম্রাজ্যবাদীদের সমস্ত পরিকল্পনা আজ জাতির সামনে দিবালোকের মতো স্পষ্ট। আমাদের অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে এসব পরিকল্পনার মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচন করতে হবে। এর সার সংক্ষেপ নিম্নরুপ:

১. ক্রুসেডারদের মোড়ল আমেরিকা এ অঞ্চলে ইসলামী খিলাফতের পুনরুত্থান ঠেকানোর পরিকল্পনা করছে এবং তার নিয়ন্ত্রণাধীন রাষ্ট্রসমূহের বলয় দ্বারা চীনকে ঘীরে রাখতে চাচ্ছে। এ অঞ্চলে তার ঘনঘন সামরিক মহড়া এবং নানা অজুহাতে সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি, এ পরিকল্পনারই অংশ, যা এখন তার পররাষ্ট্রনীতির প্রধান ভিত্তি, যা “এশিয়ান পিভট” (Asian pivot) নামে পরিচিত। বাংলাদেশের সাথে মার্কিনীদের কৌশলগত ও নিরাপত্তা সংলাপ, তার এ নীতি বাস্তবায়নের একটি অংশ।

২. তাছাড়া, ভারত যাতে তার হয়ে কাজ করে, এজন্য ভারতকে নিয়ে মার্কিন নীতি হচ্ছে – ভারতকে তার আওতাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করা; যাকে তারা “কৌশলগত অংশীদারিত্ব” বলে উল্লেখ করছে। অর্থাৎ, ভারতকে তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছাড় দেয়া কিংবা ফায়দা লুটের সুযোগ করে দেয়া, কারণ, আমেরিকা অনুধাবন করতে পেরেছে যে, এটা ছাড়া ভারতকে ঐতিহাসিকভাবে চলমান বৃটিশ প্রভাব বলয় (বিশেষতঃ কংগ্রেস পার্টির মাধ্যমে জারি রাখা) থেকে বের করে আনা যাবে না।

৩. কৌশলগত অংশীদারিত্ব এবং ভারতকে ফায়দা লুটের সুযোগ করে দেয়ার মার্কিন এ নীতির অর্থ হচ্ছে, ভারতের প্রতিবেশী দুই মুসলিম দেশ অর্থাৎ পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে, বশীভুত দাস রাষ্ট্রে পরিণত করা, যাতে এই দুই রাষ্ট্রের শাসকরা সবকিছু জলাঞ্জলী দিয়ে হলেও ভারতকে যেকোন সুবিধা কিংবা ছাড় দিতে কুণ্ঠাবোধ না করে। যেমন, ভারতের স্বার্থ রক্ষায় মার্কিন হুকুমে, পাকিস্তানের দালাল শাসকরা কাশ্মিরের মুসলিমদের পক্ষ ত্যাগ করেছে।

৪. এই নীতির বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই মার্কিনীরা, বৃটেন ও ভারতের সমঝোতায়, হাসিনাকে ক্ষমতায় বসায়। পাশাপাশি মার্কিনীরা এদেশের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বকে পুনর্গঠনের এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করে যাতে তা এই নীতি কার্যকরে সহায়ক হয়, তারা নির্বিঘ্নে তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে পারে, ভারতকেও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুবিধা কিংবা ছাড় দিতে পারে এবং এর মাধ্যমে মার্কিন-ভারত কৌশলগত সম্পর্ক সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারে।

মার্কিন-ভারত ষড়যন্ত্রে হাসিনার ভূমিকা:

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

“তারা যদি তোমাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারে, তাহলে তারা তোমাদের বিরুদ্ধে শত্রুতায় লিপ্ত হবে, এবং তাদের হস্ত ও রসনাসমূহ প্রসারিত করে তোমাদের ক্ষতি সাধন করবে, এবং তাদের আকাংখা, তোমরা যেন কাফিরদের কাতারে শামিল হও।” [সূরা আল-মুমতাহিনা : ২]

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সত্যই বলেছেন। হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানোর পর, ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রু, মার্কিন-ভারত, তাদের ঘৃণ্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনেক অগ্রসর হয়েছে। এবং দেশের সাথে গাদ্দারীতে কোনরকম সীমা ছাড়াই, হাসিনা এ ঘৃণ্য কাজে তাদের পূর্ণ সহযোগীতা করেছে। তার কিছু নমূনা হচ্ছে:

– পিলখানায় সেনাঅফিসারদেরকে নৃশংস হত্যাকান্ডে হাসিনা সহযোগীতা করেছে; এবং তারপর মার্কিন-ভারতের নির্দেশে ইসলাম, দেশ ও জাতীয় স্বার্থের পক্ষে অবস্থানকারী সেনাঅফিসারদেরকে নিশ্চিহ্ন করার নীতি বাস্তবায়ন করেছে।

– বাংলাদেশকে, নরঘাতক মার্কিন সেনাদের এমন ঘাঁটিতে রুপান্তর করেছে, যাতে তারা নির্দ্বিধায় নিজের মাটি মনে করে, যখন-তখন এদেশে সামরিক মহড়ার আয়োজন করতে পারে। এবং ACSA চুক্তি (সামরিক ব্যক্তি, মালামাল ও অস্ত্রের সরবরাহ, মজুদ, চলাচল ও বিনিময় চুক্তি) সইয়ের ব্যাপারে মার্কিনীদের সাথে গোপন সন্ধি করেছে, যাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি ডিভিশনে পরিণত হয় এবং মার্কিন যুদ্ধে নিজেদের আত্মনিয়োগ করে, যার নমূনা আমরা ইতোমধ্যে পাকিস্তানে দেখেছি যেখানে ঠিক এই রকমই একটি চুক্তির কারণে আজ পাকিস্তানের মুসলিম সেনাবাহিনী নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে মার্কিন যুদ্ধে নিজেদের আত্মনিয়োগ করেছে।

– বাংলাদেশের স্বার্থ বিবেচনায় না রেখে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য, “সেভেন সিস্টারস্‌”-এর স্বাধীনতাকামী আন্দোলনের নেতাদেরকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে, যা ভারতের জন্য অত্যন্ত এক গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সংশিষ্ট বিষয়।

– ট্রানজিট প্রদান করেছে, যা ভারতের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

– সীমান্ত হত্যা ও টিপাইমুখ বাঁধ-এর ব্যাপারে শুন্য-প্রতিরোধ (zero-resistance) বা কোন বাঁধা না দেয়ার নীতি গ্রহণ করেছে।

– গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনের প্রকল্পে সাম্রাজ্যবাদীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে, যা ভবিষ্যতে তাদের হীন স্বার্থে ব্যবহৃত হবে।

– মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানীর কর্তৃক দেশের তেল ও গ্যাস লুট করার রাস্তা সহজ করতে তাদের সাথে বিভিন্ন চুক্তি সম্পাদন করেছে, এবং দেশের ব্যবসাবাণিজ্যের উপর মার্কিন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায়, TICFA চুক্তি সম্পাদনের সন্ধি করেছে।

– রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে ইসলামের বিরম্নদ্ধে এবং রাজনৈতিক বিকল্প হিসেবে ইসলামী খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শামীল হয়েছে, যা মার্কিন, বৃটেন ও ভারতের এক নম্বর এজেন্ডা।

সুতরাং, মার্কিন ও ভারতের সেবায় বিশ্বাসঘাতক হাসিনা চেষ্টার কোন কমতিই রাখেনি। কিন্তু তারপরও, যা আমরা ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছি, সাম্রাজ্যবাদীদের নিকট এটা কোন মূখ্য বিষয়ই নয়, কে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলো, বরং, তাদের কাছে মূখ্য বিষয় হলো, পুরো শাসনব্যবস্থাকে এমনভাবে সাজানো, যা তাদের নীতি বাস্তবায়নে সহায়ক হয়; এজন্য প্রয়োজনে সে তার এক দালাল শাসককে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আরেক দালালকে ক্ষমতায় বসাবে, যারাও একইভাবে তাদের সেবায় ব্যস্ত থাকবে।

মার্কিন-ভারতের দাসত্বে খালেদা জিয়ার ভূমিকা একই:

একথা কারও অজানা নয় যে, খালেদা জিয়া হচ্ছে, বহু বছর ধরে পুষে রাখা মার্কিনীদের বিশ্বস্ত এক দালাল, যার ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। আর এজন্যই অর্থাৎ, মার্কিন স্বার্থের কারণেই, তার ভারতবিরোধী ছদ্দবেশ, “দেশের প্রতি ভালবাসার” মুখোশ। তার সাম্প্রতিক ভারত সফরে তা আরও সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যেখানে সে ভারতের স্বার্থ হাসিলে সব রকম সেবা প্রদানের অঙ্গীকার করেছে, যা সে মূলতঃ মার্কিন হুকুমেই, মার্কিন নীতির কারণেই করেছে যাতে ভারতের সাথে মার্কিনীদের কৌশলগত সম্পর্ক আরও এগিয়ে যায়। খালেদা জিয়া বলেছে, সে অতীত ভুলে যেতে চায়! সে কোন অতীত ভুলে যেতে চায়, এই মুশরিক শত্রুরাষ্ট্রের কোন কুকর্ম সে ভুলে যেতে চায়? সেনাঅফিসারদের বীভৎস লাশ? নাকি ফেলানীর ঝুলন্ত লাশ? নাকি ফারাক্কা?…

এবং তাকে যদি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা হয়, তবে ভবিষ্যতে সে কোন পথে হাটবে?

– সে পিলখানা হত্যাকান্ড ভুলে যাবে এবং সেনাহত্যাকারীরা পার পেয়ে যাবে। এবং মার্কিন-ভারতের স্বার্থের বিপক্ষে অবস্থানকারী এবং ইসলাম ও জাতীয় স্বার্থের পক্ষে অবস্থানকারী নিষ্ঠাবান অফিসারগণের জন্য সামরিকবাহিনীতে কোন জায়গা থাকবে না।

– সে দেশের সেনাবাহিনীর উপর মার্কিন নিয়ন্ত্রণ আরও সুদৃঢ় করতে সহায়তা অব্যাহত রাখবে, যেমনটি সে পূর্বে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ও করেছিল।

– “সেভেন সিস্টারস্‌”-এর স্বাধীনতাকামী আন্দোলনের ইস্যুতে তার অবস্থান জানিয়ে দিল্লী সফরে খালেদা জিয়া, হাসিনার মতো একই ভাষায় বলেছে, “বাংলাদেশের মাটিকে আমি ভারতের বিরম্নদ্ধে ব্যবহার হতে দিব না।”

– ট্রানজিট ইস্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার অবস্থান জানাতে গিয়ে খালেদা জিয়া, হাসিনার ভাষাই ব্যবহার করেছে, “আমরা আঞ্চলিক সংযোগের অংশ হিসেবে ট্রানজিটকে সমর্থন করি।”

– সীমান্ত হত্যাকান্ড এবং টিপাইমুখ বাঁধ ইস্যুতেও তার অবস্থান একই অর্থাৎ হাসিনার মতো শুন্য-প্রতিরোধ (zero-resistance) বা কোন বাঁধা না দেয়ার নীতি গ্রহণ করবে, যা তার সফরসঙ্গীর এই বক্তব্যে পরিষ্কার: “তিনি [খালেদা জিয়া] এসব বিষয় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নিকট উপস্থাপন করেছেন!”

– আন্তর্জাতিক শক্তিসমুহের অংশগ্রহণে গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরির ব্যাপারেও খালেদা জিয়া একমত হয়েছে।

– মার্কিন তেল এবং গ্যাস কোম্পানীর সাথে চুক্তি সই করার ব্যাপারে ও TICFA চুক্তির ব্যাপারেও তার গৃহীত নীতি হাসিনার মতোই।

– এবং রাজনৈতিক বিকল্প হিসেবে খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া তার প্রভুদের সন্তুষ্টির লক্ষে যুদ্ধ অব্যাহত রেখে হাসিনার পথই অনুসরণ করবে।

সুতরাং, খালেদা জিয়া যে হাসিনার মতোই অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদীদের একনিষ্ট দাস, তা দিবালোকের মতো পরিষ্কার। এদেশের মানুষ বহুপূর্বে এই আশা ছেড়ে দিয়েছে যে, হাসিনা-খালেদা কোনদিন দেশের আভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধান করবে। কিন্তু তারপরও, কিছু লোক খালেদা জিয়ার আড়ম্বরপূর্ণ ভারতবিরোধী বক্তব্যে বিশ্বাস করার কারণে ভাবতো যে, খালেদা এইক্ষেত্রে অন্ততঃ হাসিনা থেকে ভিন্ন। কিন্তু, তারা এটা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছেন যে, হাসিনা এবং খালেদা হচ্ছে একই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ফসল, যা এমন শাসকের জন্ম দেয় যারা একদিকে দেশের ভিতরে মানুষের জন্য দুঃখ-কষ্ট বয়ে আনে এবং অপরদিকে বিদেশের মাটিতে তাদের প্রভুদের দালাল হিসেবে কাজ করে।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হচ্ছে সেই কারখানা যা এমন দালালদের তৈরি করে

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

“নিশ্চয়ই, আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকের নিকট ফিরিয়ে দিবে; এবং যখন শাসনকার্য পরিচালনা করবে তখন অবশ্যই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে।” [সূরা আন-নিসা : ৫৮]

এই হচ্ছে শাসকদের উপর আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা প্রদত্ত হুকুম। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি হচ্ছে তার ঠিক উল্টো অর্থাৎ আল্লাহ্‌’র হুকুম অমান্য করা। এতে শাসক প্রতিনিয়ত জনগণের বিরুদ্ধে অন্যায় শাসন ও বিশ্বাসঘাতক কর্মকান্ড পরিচালনা করে। ঔপনিবেশিকতাবাদ আগমণের পূর্ব পর্যন্ত, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা মুসলিমদের কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত ছিল। খিলাফতের বিলুপ্তির পর, কাফির সাম্রাজ্যবাদীরা মুসলিম উম্মাহ্‌’কে নিজেদের মধ্যে টুকরো-টুকরো করে ভাগ করে নিয়ে, সরাসরি মুসলিম দেশগুলোকে শাসন করতে থাকে। যখন অবস্থার প্রেক্ষিতে তারা সরাসরি শাসন থেকে বিদায় নেয়, তখন তাদের দালালদের সে স্থানে বসিয়ে যায়, যাতে তাদের স্বার্থ হাসিলের পথ অব্যাহত থাকে। বেশিরভাগ দেশে তারা রাজাবাদশা ও স্বেচ্ছাচারী শাসকদের শাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়, যেমন মধ্যপ্রাচ্যে। যখন এসব দালালদের অন্যায়-অবিচার এবং বিশ্বাসঘাতক কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে, জনগণ পরিবর্তনের দাবীতে সোচ্চার হয়, তখন এই পশ্চিমা শক্তিরা গণতন্ত্রের শ্লোগাণ নিয়ে হাজির হয়ে নতুন দালালদের ক্ষমতায় বসায়, আরববিশ্বে যার সুস্পষ্ট কিছু নমূনা এখন আমাদের চোখের সামনেই বিদ্যমান। কিছু কিছু জায়গায় উপনিবেশবাদী শক্তিরা বিদায় নেয়ার সময়ই স্বেচ্ছাচারী শাসক নিয়োগের পন্থা অবলম্বন না করে “গণতান্ত্রিক” ব্যবস্থা রেখে গেছে, কিন্তু এই বিষয়ে নিশ্চিত হবার পরই যে, এর দ্বারা ক্ষমতা তার দালালদের হাতেই কুক্ষিগত থাকবে, ঠিক যেমনটি ঘটেছিল ভারতে নেহরু এবং পাকিস্তানে জিন্নাহ্‌’র মাধ্যমে। কখনওবা সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের নিজেদের পারস্পরিক প্রতিযোগীতার কারণে, গণতন্ত্রের শ্লোগাণকে ব্যবহার করেছে ও করছে, প্রতিদ্বন্দ্বীর দালালকে অপসারণ করে নিজেদের দালালকে ক্ষমতায় বসানোর কাজে। কোথাও কোথাও তারা “ই৫২” বোমা মেরেও গণতন্ত্রের ফেরী করেছে, যেমন ইরাক ও আফগানিস্তান।

সুতরাং, মুসলিম দেশগুলোতে (এবং তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে) সবসময়ই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা আর পশ্চিমা দালালদের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া পারস্পরিকভাবে সম্পর্কিত, যা পূর্বেও ঘটেছে, এখনও ঘটছে এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে। এটা হচ্ছে নব্য-উপনিবেশকতাবাদের ধোঁকাবাজীর এমন এক ঘৃণ্য উপকরণ, যেখানে জনগণ মনে করে সে তারা শাসককে ভোট দ্বারা নির্বাচিত করেছে, অথচ প্রকৃতপক্ষে শাসক হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদীদের একনিষ্ঠ দালাল। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও, তার চিত্র একই রকম। স্বাধীনতার পর তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, যারা ছিল বৃটেনের দালাল, তারাই দেশের শাসক হয়েছিল। তারপর জিয়াউর রহমান, যে ছিল মার্কিন দালাল এবং তারপর এরশাদ, যে ছিল বৃটেন-ভারতের দালাল, তারা দেশ শাসন করেছে। এরপর এরশাদের পতনের পর, মার্কিনীদের মদদপুষ্ট খালেদা এবং বৃটিশ-ভারতের মদদপুষ্ট হাসিনা তথাকথিক গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশ নেয় এবং তারপর থেকে আজ পর্যন্ত এই দুই দালালের মধ্যে ক্ষমতার হাত বদল হচ্ছে, আর তাদের সাথে থাকছে তাদের জোটভুক্ত বড় মিত্ররা।

হে মুসলিমগণ! কতবার আমরা প্রতারিত হব? মুজিব, জিয়া এবং এরশাদের ধোকাবাজীর কথা না হয় বাদই দিলাম; শুধুমাত্র হাসিনা-খালেদার কথাই ধরুন, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮; মাত্র ২০ বছরে ৪ বার! একই ব্যক্তিদের কাছে!!

রাসূল (সা) বলেছেন,

“মুমিনগণ কখনও একই গর্তে দুইবার পড়ে আঘাত প্রাপ্ত হয় না।”

৫ম বারের মতো প্রতারিত হবেন না। হাসিনা ও খালেদাকে প্রত্যাখ্যান করুন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অপসারণ করুন এবং খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠা করুন। খিলাফত, আপনাদের মা, বোন, স্ত্রী ও কন্যাদের গার্মেন্টস্‌ ফ্যাক্টরীর ভেতরে তালাবদ্ধ অবস্থায় পুড়ে মরতে দেবে না। খিলাফত, নিম্নমানের ফ্লাইওভারের মতো মৃত্যুফাঁদ নির্মাণ হতে দিবে না। খিলাফত, আপনাদের সকল বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখবে, আপনাদের উপর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে এবং আপনাদের আস্থার মর্যাদা রাখবে; এবং দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, সম্পদ এবং সেনাবাহিনীর উপর মার্কিন-বৃটেনভারতের নিয়ন্ত্রণের পথ চিরতরে রুদ্ধ করবে।

হে ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তিবর্গ! আপনাদের চোখের সামনে সংঘটিত, হাসিনা-খালেদার অপরাধমূলক কর্মকান্ডের ব্যাপারে আপনারা নিশ্চয়ই সচেতন আছেন। দ্বিতীয়ত, আপনারা এটাও ভালো করে জানেন যে, তথাকথিত গণতান্ত্রিক নির্বাচন হচ্ছে এদেরকে কিংবা এদের মতো কাউকে ক্ষমতায় বসানো এবং নিষ্ঠাবান ও সচেতন রাজনীতিবিদদের ক্ষমতা হতে দূরে রাখার এক প্রক্রিয়া মাত্র। মুসলিম হিসেবে এ বাস্তবতা উপেক্ষ করে চোখ বন্ধ করে রাখার কোন সুযোগ নাই। কারণ, আপনাদের রয়েছে বস্তুগত সামর্থ্য, যার দ্বারা আপনারা নিষ্ঠাবান ও সচেতন রাজনীতিবিদদের নুসরাহ্‌ প্রদান করতে পারেন, যাতে এসব শাসকরা অপসারিত হয় এবং খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।

ইসলামী খিলাফত বিশ্বে এক নম্বর রাষ্ট্রের অবস্থান অর্জন ও উম্মাহ্‌’র হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করে কিভাবে আঞ্চলিক ও বিশ্বমন্ডলে শক্তির ভারসাম্যের মধ্যে স্থায়ী পরিবর্তন আনবে, তার রোডম্যাপ তৈরিতে সক্ষম। সুতরাং সাড়া দিন, আল্লাহ্‌’র হুকুম পালনে সবচেয়ে অগ্রগামী হউন এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য নুসরাহ্‌ প্রদান করুন।

“এবং (বিশ্বাস ও সৎকর্মে) অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই হবে (জান্নাতে)। তারাই (আল্লাহ্‌’র) নৈকট্য পাবে। আহ্লাদপূর্ণ উদ্যানসমূহে। তাদের (অগ্রবর্তীগণ) অধিকাংশ হবে পূর্ববর্তীদের (মুসলিমদের) মধ্য থেকে; এবং অল্পসংখ্যক পরবর্তীদের মধ্যে থেকে।” [সূরা আল-ওয়াক্বি’য়া : ১০-১৪]

Leave a Reply