দীর্ঘ ১৫ মাসের ধংসযজ্ঞের পর গত ১৫ জানুয়ারী ইসরাঈল ও হামাস এর মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয় এবং গত ১৯ জানুয়ারী হতে তা কার্যকর হতে শুরু হয়েছে যা এখনো চলমান। আমরা জানি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর নেতৃত্বে তার ক্ষমতায় আসার খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে দেখা যাচ্ছে, যা থেকে পরিস্কারভাবে বোঝা যায় যে মার্কিনিরা ইচ্ছাকৃতভাবেই এ যুদ্ধ এতদিন জিইয়ে রেখেছিল, আরো অনেক পুর্বেই ধ্বংস ও গণহত্যা বন্ধ করা সম্ভব ছিল।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেছে, তারা তথা যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকা দখল করবে, সেটির মালিক হবে এবং গাজাকে পুনঃনির্মান করবে। এই লক্ষ্যে সে জর্ডান ও মিশরকে গাজার মুসলিমদেরকে ভাগ করে নেয়ার জন্য প্রস্তাব করে এবং বলে তারা তা করতে বাধ্য হবে। ট্রাম্পের এই ঘোষণা তখন আসলো, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল যুদ্ধ ও গণহত্যার মাধ্যমে গাজার মুসলিমদের মনোবলকে পরাজিত করতে পারে নাই। টানা ১৫ মাস ধরে ইসরায়েলি বোমা হামলায় হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলসহ গাজার ৬০ শতাংশের বেশি অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরও গাজার মুসলিমরা তাদের বরকতময় ভূমিতে ফেরত আসতে শুরু করেছে। ট্রাম্প এবং তার অনুসারীরা, যখন গাজার বাস্তুচ্যুত মানুষদের দক্ষিণ থেকে ধ্বংসপ্রাপ্ত উত্তরে ফিরে আসার দৃশ্য দেখছেন, তাদের হৃদয় ও মনে তাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য একটি অদম্য সংকল্প বহন করছেন, তখন তাদের বুঝতে হবে যে গাজার মানুষ তাদের ভূমিতে পাহাড়ের মতোই দৃঢ় এবং গাজা থেকে তাদের উচ্ছেদ করার জন্য ট্রাম্পের বক্তব্য বা পরিকল্পনা তাদের ভূমি এবং তাদের বিশ্বাসের উপর তাদের দৃঢ়তা এবং অধ্যবসায়ের পাথরে ভেঙে পড়বে। মুসলিম উম্মাহর অংশ এই গাজাবাসী তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ করেও পবিত্র ভূমি ও মুসলিমদের প্রথম কেবলা আল-আকসাকে তারা ঘিরে আছে। রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “আল-শাম কত বরকতময়! সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কেন এটা?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি আল্লাহর ফেরেশতাদেরকে আল-শামের উপর তাদের ডানা ছড়িয়ে দিতে দেখছি।’ ইবনে আব্বাস আরও বলেন, ‘আর নবীগণ সেখানে বসবাস করতেন। আল-কুদসে (জেরুজালেমে) এমন একটি ইঞ্চিও নেই যেখানে কোন নবী সালাত আদায় করেননি বা কোন ফেরেশতা দাঁড়াননি।“ (তিরমিযী, আহমদ)।
সুতরাং, যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও এ থেকে ভাবার কোনো অবকাশ নেই যে ট্রাম্প এর পলিসি মুসলিমদের পক্ষে যাবে। বরং ট্রাম্প এর নতুন পলিসি যেখানে সে গাজাকে আমেরিকান নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে চাইছে, গাজাবাসীদের আশেপাশের দেশগুলোতে পাঠিয়ে দিতে চাচ্ছে। যেখানে দীর্ঘ যুদ্ধের পর ক্লান্ত পরিশ্রান্ত গাজাবাসী তাদের অঞ্চলে ফিরে আসতে চাইছে, তখন এ ধরণের পলিসি বাস্তবায়নের কথা থেকে বোঝা যায় মার্কিনিরা ফিলিস্তিনের দুঃখ-কষ্টের ব্যপারে কতটা নির্বিকার!!
আমরা জানি গত প্রায় এক যুগ ধরে বিভিন্ন মেয়াদে ইসরাঈলের কারাগারে বন্দী হয়ে আছে অসংখ্য গাজাবাসি ও ফিলিস্তিনি মুসলিম। এসব কারাগারে দীর্ঘ সময় ধরে নির্যাতন ও অনাহারে থাকা বন্দীগণ মুক্তির কোনো আশা ছিল না। এছাড়াও যারা খোলা আকাশের নিচের গাজা নামক কারাগারে বন্দী জনগণ, তারাও নিত্যনৈমিত্তিকভাবে হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। এবং এই সিলসিলা গত ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন মাত্রায় ভোগ করে আসছে ফিলিস্তিনিরা। সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তিকামী গাজাবাসিরা এই যুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল এবং ইসরাঈলকে দেখিয়ে দিয়েছিল যে তাদের প্রতিরোধের মনোবল এখনও ভেঙে পড়েনি, ঠিক তখনই ইসরাঈল নামক বর্বর অবৈধ রাষ্ট্রটি গাজার মুসলিমদের উপর ইতিহাসের বর্বরোচিত গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো শুরু করে। ১৫ মাসের সেই যুদ্ধ যা আমরা তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে লাইভ দেখতে পেয়েছি, তাতে প্রায় ৭০ হাজারের মতো মানুষ ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে, যার একটি বড় অংশ ছিল শিশু। এছাড়া আরো অসংখ্যা লাশ যা ধ্বংসস্তুপের মধ্যে চাপা পড়ে থাকার কারণে এখনো গণনার বাইরে রয়েছে। এছাড়াও লক্ষাধিক মানুষ হতাহত হয়েছে কারো হাত চলে গিয়েছে, কারো পা চলে গিয়েছে, কারো চক্ষু চলে গিয়েছে, সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গিয়েছে অসংখ্য মানুষ। গাজা শহরের প্রায় পুরোটাই একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে হাসপাতাল থেকে শুরু করে, স্কুল থেকে শুরু করে কোন স্থাপনা কেই আর বাকি রাখা হয়নি ধ্বংস করার ব্যাপারে। উত্তর গাজার ৯০ শতাংশ মানুষ আজ ঘর ছাড়া অবস্থায় রয়েছে। এমনকি মুসলিম বিশ্ব থেকে আগত ত্রাণের গাড়িগুলোকেও ঠিকমতো ঢুকতে দেয়া হয়নি এই অবৈধ রাষ্ট্রের কারণে। দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমাদের ক্রমাগত মাসের পর মাস ধরে এ গণহত্যা দেখে যেতে হয়েছে।
আর এখন যখন যুদ্ধবিরতির কারণে গাজাবাসী তাদের ঘরে ফিরতে শুরু করেছে, তাদের নির্যাতিত বন্দীদের অনেকে যখন ফিরে আসতে শুরু করেছে – যারা অনেকেই ফিরে তাদের আপনজনদের আর জীবিত খুঁজে পাচ্ছেন না – অনাহারে অর্ধাহারে লক্ষাধিক গাজাবাসী যখন তাদের অঞ্চলে ফিরে তাদের জীবন পুনর্গঠন করার কথা চিন্তা করছেন, ঠিক সেই সময়ে মার্কিনিরা তাদের গাজা ত্যাগ করে চলে যেতে বলছে এবং গাজা দখল করে নেওয়ার কথা বলছে!!
আমাদের মনে রাখা উচিত, এই ডোনাল্ড ট্রাম্প, যারা মেয়ে একজন ধর্মান্তরিত ইহুদী, যার জামাতা একজন ইহুদী, যেই জামাতা ‘জ্যারেড কুশনার’কে দিয়ে তার ক্ষমতার গত টার্মে সে মধ্যপ্রাচ্যের শাসকদের “শতাব্দির শ্রেষ্ঠ চুক্তি” তথা “ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি” নামক একটি প্রজেক্ট বাস্তবায়নের আহ্বান দিয়েছিল যেখানে সে মাত্র ১৫ শতাংশ ভুমি ফিলিস্তিনিদের দিয়ে বাকি ৮৫ শতাংশ ইসরাঈলীদের হাতে তুলে দেওয়ার একটি মাল্টি বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব দিয়েছিল। যে প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বলে কিছুই থাকবে না, তারা একটি করদ রাজ্যে পরিনত হবে। জি ভাইয়েরা, এটাই পশ্চিমাদের তথাকথিত “টু স্টেট সলুশ্যন” তথা “দ্বি-জাতি সমাধান”, যেখানে আসলে থাকবে একটিই রাষ্ট্র যা হচ্ছে পশ্চিমাদের অনুগত অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল, যা মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্যবাদী রাজনৈতিক ও সামরিক ঘাঁটি হিসেবে কাজ করে।
১৯৪৮ সালে পশ্চিমাদের মাধ্যমের মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম ভূমির বুকে এই অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্রটির জন্ম হয়। লক্ষাধিক মানুষকে হারাতে হয় তাদের ভিটামাটি এবং আশ্রয় নিতে হয় পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের রেফিউজি ক্যাম্পে। মুসলিমদের কাছ থেকে তাদের ইসলামি ভূমিকে জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে এরপর পশ্চিমারা তাদেরই গৃহপালিত সংস্থা জাতিসংঘকে ব্যবহার করে এ রাষ্ট্রটিকে বৈধতা দেয়। তখন থেকে এখন পর্যন্ত ভাবে কোনো জবাবদিহিতা ছাড়াই একের পর এক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমাদের এই জারজ সন্তান। পশ্চিমা সাম্রোজ্যবাদী শক্তি সমূহ ক্রমাগতভাবে এই রাষ্ট্রকে মদদ জুগিয়ে গিয়েছে যুগের পর যুগ ধরে অর্থনৈতিক ভাবে সামরিক ভাবে, কূটনৈতিক ভাবে।
প্রিয় মুসলিমগণ! যেখানে ফিলিস্তিন ভূমি সামরিকভাবে শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্র দ্বারা পরিবেষ্টিত, আমরা পৃথিবীতে দুইশত কোটি মুসলিম জীবিত আছি, মুসলিমদের সামরিক বাহিনীর কয়েক কোটি সদস্য রয়েছে, সেখানে ট্রাম্প এই দুঃসাহস কীভাবে দেখাচ্ছে? কারণ সে জানে বর্তমান মুসলিম শাসকরা পশ্চিমাদের দালাল, তারা মুসলিমদেরকে জাতীয়তার ভিত্তিতে ভাগ করে রেখেছে এবং মুসলিম সামরিক বাহিনীকে ব্যারাকে আবদ্ধ করে রেখেছে। এসব দালাল গোষ্ঠী প্রকাশ্যে নিন্দা জানালেও মার্কিন নীতি বাস্তবায়নে তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অথচ আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন,
“নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই” [সূরা হুজুরাত: ১০]।
আমরা এও দেখছি পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিরা তাদের অর্থায়ন এবং তাদের অস্ত্র যোগানের মাধ্যমে এই গণহত্যার প্রক্রিয়াকে ক্রমাগত সাহায্য করে চলছে। এমনকি তাদের নিজেদের নির্বাচনের ক্ষেত্রেও কে কত বেশি এই গণহত্যার সমর্থনকারী সেটাকে ব্যবহার করে তাদের নির্বাচনে জেতার চেষ্টা করতে দেখেছি। সুতরাং তাদের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ডেমোক্রেট বলেন কিংবা রিপাবলিকান উভয়ই এই অবৈধ রাষ্ট্রের পক্ষে এবং মুসলিমদের স্বার্থের বিরুদ্ধে রয়েছে। যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় ছিল তখন আমরা দেখেছি সে জোরপূর্বক জেরুজালেমকে এই অবৈধ রাষ্ট্রের রাজধানী ঘোষণা করে। এরপর বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর সে নগ্ন ভাবে এই অবৈধ রাষ্ট্র কে সাহায্য করার জন্য প্রতিশ্রুত বদ্ধ হয়। এই সেই বাইডেন যে একসময় বলেছিল, যদি ইসরাইল নামক কোন রাষ্ট্র না থাকতো তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি ইসরাইল নামক রাষ্ট্র তৈরি করতে হতো। ভাইয়েরা, এ যেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কুরআনে বর্ণিত বক্তব্যের বাস্তব রূপ যেখানে তিনি সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,
<< ইহুদি ও খ্রিস্টানদের তোমরা বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না, তারা একে অপরের বন্ধু >>
মুসলিম বিশ্ব আজকে ৫৮ টির মত টুকরো ভাগ হয়ে আছে আমাদের এই বিভাজনের কারণে এবং আমাদের ঐক্যের অভাবের কারণে আজকে মুসলিম বিশ্ব অভিভাবকহীন। মুসলিম বিশ্বের শাসকরা কেবলমাত্র কিছু চটকদার বুলি, মায়া কান্না এবং নিন্দা প্রস্তাব ছাড়া ফিলিস্তিনের জন্য কিছুই করতে পারে না। ইদানিং তারা সেটাও তেমন করছে না। তাদের ফাঁপা বুলি এবং স্বল্প মেয়াদের ত্রাণ সহায়তা ফিলিস্তিনের জনগণের মুক্তির ক্ষেত্রে কোন কাজেই আসেনা। অথচ মুসলিম বিশ্বের রয়েছে প্রায় ৬০ লক্ষ প্রশিক্ষিত সেনা সদস্য। এরপরও এসব শাসকগোষ্ঠী কেবলমাত্র তোতা পাখির মত পশ্চিমাদের তৈরি করা “টু স্টেট সলিউশন”, “ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি” কিংবা “রিভেরিয়া অব মিডল ইস্ট” এর সমাধান আওড়ে চলছে। এই তথাকথিত সমাধান, যার কথা তারা বলে, তা যদি আদৌ বাস্তবায়িত হয়, সেক্ষেত্রে না থাকবে ফিলিস্তিনের কোন সার্বভৌমত্ব, না থাকবে তাদের কোন নিরাপত্তা। ফিলিস্তিন অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের একটি করদরাজ্যে পরিণত হবে, গোলামে পরিণত হবে। ভাইয়েরা আমরা দেখতে পাচ্ছি এই অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কোন দিকে আগাচ্ছে, তারা একটি বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠা করতে চায় মধ্যপ্রাচ্যে। সেজন্য এখন তারা আমাদের পার্শ্ববর্তী আধিপত্যবাদী রাষ্ট্র ভারতকেও তাদের সঙ্গে নিয়েছে। সেই ভারত, যারা ফিলিস্তিনের হত্যার প্রতিবাদে নিন্দা প্রস্তাব আসলে, সেখানে সাক্ষর করে না। যারা আমাদের বন্যার পানিতে ডুবিয়ে মারে, যারা সীমান্তে ক্রমাগত পাখির মত গুলি করে আমাদের জনগণকে হত্যা করে, সেই শক্তিকে আজকে ইহুদিরা তাদের দেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে মুসলিমদেরকে হত্যা করার জন্য সুযোগ করে দিচ্ছে। আমরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারছি, ভারতের সেনা সদস্যরা এই অবৈধ রাষ্ট্রে গিয়ে “শুধুমাত্র আনন্দ লাভ করার জন্য” মুসলিমদের হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে, যেমনটি তারা গত জুলাই মাসে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে এ দেশের সাধারণ মানুষকে জুলুমের প্রতিবাদ জানানোর কারণে নৃশংসভাবে বিভিন্ন জায়গায় হত্যা করে। এই সেই ভারত, যেই ভারতের হিন্দুত্ববাদী শক্তির প্রচারক রামগিরি মহারাজ কিছুদিন পুর্বেই আল্লাহর নবীকে অপমান করার স্পর্ধা দেখিয়েছিল এবং বিজেপির নেতা নিতেশ রানে তা সমর্থন করেছিল। যে অপমানের কারণে ভারতের মুসলিম জনতা জেগে উঠেছিল। এই সেই ভারত যেখানে বসে খুনী হাসিনা বাংলাদেশে ধ্বংস চালানোর জন্য উসকানীমূলক বক্তব্য দেয়। এসব কিছু হচ্ছে কারণ আজ মুসলিমরা অভিভাবকহীন এবং মুসলিমরা বিশ্বে বিভক্ত হয়ে আছে এবং এই সুযোগে ইহুদীবাদী শক্তি এবং হিন্দুত্ববাদী শক্তি পশ্চিমা মদদপুষ্ট হয়ে আজ জোট বেঁধেছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে। ভাইয়েরা, এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা আমাদের বলে গিয়েছেন,
<< ঈমানদারদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি শত্রুভাবাপন্ন হিসেবে আপনি যাদেরকে দেখতে পাবেন তারা হচ্ছে ইয়াহুদী এবং মুশরিকগণ >>
প্রিয় মুসলিমগণ! আপনারা প্রত্যক্ষ করেছেন, আমাদের দেশের একশ্রেণীর রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবিরা একটি উপনিবেশবাদি শক্তি এবং মুসলিমদের শত্রু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহন করেছে। যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য কামনা করে, যারা প্রেসিডেন্টের দাওয়াত পেলে গর্ববোধ করে তাদের কাছ থেকে আমরা কী আশা করতে পারি? আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না, তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ যালিমদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। [সূরা আল-মায়িদা: ৫১]। তাই ই*হু*দি*দের মদদ দাতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ত্যাগ করা এবং এদেশের মার্কিন দালাল গোষ্ঠীকে প্রত্যাখ্যান করা মুসলিমদের জন্য ইমানি দায়িত্ব।
হে মুসলিমগণ, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “ইমাম (খলিফা) হচ্ছেন ঢাল স্বরূপ, যার অধীনে তোমরা যুদ্ধ করো এবং নিজেদের রক্ষা করো” [হাদিস: মুসনাদ আহমদ]। মুসলিমদের একমাত্র অভিভাবক হচ্ছেন খলিফা। আজকে এই অভিভাবকের অনুপস্থিতিরে কারণে বিশ্বব্যাপী মুসলিমরা নির্যাতিত। এই বিষয়টি এখন প্রকাশ্য দিবালোকের মত পরিষ্কার। তাই আমাদের মুসলিম উম্মাহর প্রকৃত অভিভাবক-খিলাফত প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক বন্দোবস্তকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে, অন্যথায় বিচার দিবসে আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। নবুয়্যতের আদলে প্রতিষ্ঠিত খিলাফত রাষ্ট্র মুসলিম উম্মাহ এবং তার সামরিক বাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ করবে। ফলে খিলাফতের অধীনে মুসলিম সামরিক বাহিনীর গর্জনই মুসলিম উম্মাহর উপর সকল যুলুম বন্ধ করতে সক্ষম।
সম্মানিত মুসল্লিগন, আমরা জানি ইতিহাসের পাতা খুললে আমরা দেখতে পাই এই ফিলিস্তিন এক সময় ক্রুসেডারদের কর্তৃক দখল হয়েছিল। সে সময় মুসলিম বিশ্ব বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু সালাহউদ্দিন আইয়ুবী মুসলিম বিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা ও সমরনায়ক সেসময় মুসলিম জাহানকে ঐক্যবদ্ধ করে, মুসলিম সেনাবাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ করে ফিলিস্তিনকে সেই দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করেছিল। ঠিক একইভাবে বর্তমানেও যদি আমরা মুসলিম বিশ্বকে পশ্চিমাদের দখলদারিত্ব হতে মুক্ত করতে চাই ইহুদীবাদ হতে মুক্ত হতে চাই হিন্দুত্ববাদ হতে মুক্ত হতে চাই আধিপত্যবাদ হতে মুক্ত হতে চাই তাহলে আবার আমাদেরকে মুসলিম বিশ্বকে খিলাফতের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
সুতরাং আমাদের এই ঐক্যের জন্য এই খিলাফত ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আল্লাহর রাসূলের দেখানো কর্ম পদ্ধতি অনুযায়ী বুদ্ধিভিত্তিক ও রাজনৈতিকভাবে আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের মাঝে কিংবা আমাদের পরিচিতের মধ্যে সালাউদ্দিন আইউবির উত্তরসূরি সামরিক বাহিনিতে কর্মরত নিষ্ঠাবান অফিসারগন যারা রয়েছেন তাদের স্মরণ করা উচিত, জেরুজালেমকে মুক্ত করতে সালাউদ্দিন আইয়ুবই কীভাবে তার বাধাসমূহ অপসারণ করেছিলেন। আমাদের সামনে বাধা হচ্ছে, বর্তমান দালাল শাসকগোষ্ঠী এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। তাই দালাল গোষ্ঠীদেরকে প্রত্যাখ্যান করে আমাদের খিলাফত প্রতিষ্ঠায় অগ্রগামী হতে হবে। আমরা জানি, যখন মদিনায় সা’দ বিন মোয়াজের নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী কাফির নেতা আবু-ওবায়দা থেকে সমর্থন ও পাহারা প্রত্যাহার করে রাসুলুল্লাহ (সা) কে প্রটোকল দিয়েছিলেন, তখন ক্ষমতাহীন আবু-ওবায়দা টের পেয়ে সাধারণ দর্শকে পরিণত হয়েছিল। এছাড়া দেশের সর্বোস্তরের জনগণ বর্তমান দালালদের সার্কাসে অতিষ্ট। ইসলামের বিজয়ে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হবে এবং তাকবীর ধ্বনিতে তা উৎযাপন করবে। এই লক্ষ্য অর্জনে আমাদের উপনিবেশবাদি শক্তি কিংবা হিন্দুত্ববাদি রাষ্ট্র ভারতকে ভয় করার কোন কারণ নাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভ্যন্তরীণভাবে ভঙ্গুর ও আদর্শিকভাবে বিশ্বে দেউলিয়া, আর তারা দালাল গোষ্ঠীকে (হাসিনা গং) ছাড়া ভারত কতটা অক্ষম। আপনাদেরকে আরও স্মরণ রাখতে হবে, আমরা যখন অগ্রগামী হব আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আমাদের সাহায্য করবেন।
“নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলদেরকে ও মু’মিনদেরকে সাহায্য করব পার্থিব জীবনে এবং যেদিন (বিচার দিবসে) সাক্ষীগণ দন্ডায়মান হবে” [সূরা গাফির: ৫১] ।
বিভিন্ন চড়াই উতরাই পার হয়ে আজ আল্লাহর রহমতে খিলাফতের আহবান সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। এই আহবান কে আরো বুলন্দ করবার জন্য, আরও বেশি ছড়িয়ে দেবার জন্য আমাদের আরও সচেষ্ট হতে হবে এবং আল্লাহর কাছে আমাদের ক্রমাগত দোয়া করতে হবে যাতে আল্লাহ আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তৌফিক দান করেন এবং আমরা যেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুসলিম উম্মাহকে এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্ত করতে পারি ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ সুবহান ওয়া তা’আলা বলেন,
<< হে ঈমানদারগণ তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য করো তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবে এবং তোমাদের পা গুলোকে শক্তিশালী করবেন >>
একই সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম আমাদেরকে ভবিষ্যৎবাণী করেছেন,
জুলুমের শাসনের পর আবার ফিরে আসবে খিলাফত, নবুয়তের আদলে। [মুসনাদ আহমাদ]