করোনা ও প্রতিক্রিয়াশীল ধার্মিকতা

করোনার ভয়ে ধর্ম চর্চা বৃদ্ধি ইসলামি আকিদাকে আমরা কতটুকু বুঝি??

করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু বৃদ্ধির সংবাদে আমরা অভ্যস্ত হতে শুরু করেছি? নিজের উপর করোনা বিপদ আসন্ন দেখছে সবাই। এই দুর্গতিতে নিজের অক্ষমতা বুঝতে পারছে। অনেকেরই আকড়ে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা সৃষ্টিকর্তাকে। মাঝে মাঝে মনে হয় শরীরে করোনার আসার ঐ ছিদ্রটি বন্ধ করলেই মনে হয় এই যাত্রায় রক্ষা। আবার পরক্ষণেই আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির খবর শুনে ভীত! যাব কি যাবনা, লকডাউন আর ছোঁয়াচের দোটানা। পরিসংখানের উত্থান পতনে নিয়মিত উঠানামা করছে ধর্ম চর্চার জ্বরের থার্মোমিটার!

দোটানা থেকে জগাখিচুড়ি টাইপ আচরনের বহিঃপ্রকাশ। প্রতিদিনকার মত আধ্যাত্মিক কিছু চর্চা ছাড়া, জীবনের বাকি সব কিছুতেই, ভয়ে আকড়ে ধরা সৃষ্টিকরতার কি কোন সম্পর্ক নেই?

এই কম্প্রমাইজ চিন্তার ভিত্তি কী?

উন্নত জাতি হিসেবে মনে করে কাফিরদের মুল চিন্তা সেকুলারিজমকে মুসলিমরা আকড়ে ধরে আছে। যারা দোটানায় পড়ে ধর্মকে জীবন থেকে আলাদা করে তারা আদতে সেকুলারিজম নামের একটি কম্পোমাইজড চিন্তাকে গ্রহণ করে। ব্যক্তির পছন্দমত রবিবার  জন্য তারা ধর্ম চর্চাকে নির্ধারণ করেছে। বাকি জীবনে সে নিজের বিধানই পালন করবে। অর্থাৎ সে নিজের বানানো আইন-কানুনে চলবে। নিজের পছন্দমত আইন তৈরি করবে, নিজের খেয়ালখুশি মত লাভ-লোকসান নির্ধারণ করবে এবং পরিচালিত হবে অর্থাৎ তার সমাজ জীবনের সাথে সৃষ্টিকর্তার কোন সম্পর্ক থাকবেনা!

অধঃপতিত জাতি হিসেবে এই অঞ্চলের মানুষও অন্ধভাবে সেকুলারিজমের এই ভিত্তিটা গ্রহণ করেছে। কারণ পশ্চিমা বিজয়ী এই চিন্তাকে তারা উত্তম মনে করে বা না বুঝে অনুকরণ করে।

যার ফলাফল হিসেবে আমরা করোনার ভয়ে ব্যক্তিগত ভাবে আধ্যাত্মিক চর্চা বৃদ্ধি করলেও দৈনন্দিন অন্য কোন কাজের ক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তার সাথে সম্পর্ক খুঁজে পাইনা। ইসলাম ও সেকুলারিজম মিশিয়ে এই বিভ্রান্ত চিন্তার জন্য আমাদের পার্থিব জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্গতি।

পার্থিব জীবনের দুর্গতিতো আমাদের চোখের সামনেই। তাছাড়া ফলাফল স্বরূপ নষ্ট চিন্তার সমাজ থেকে উঠে আসছে একের পর এক  দ্বায়িত্বহীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতা নে্তৃত্ব, চোরের খনি……………।

ইসলামী আকিদার স্বরূপ কী?

ইসলামী আকিদা একধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্বাস বা চিন্তার পদ্ধতি যা মানব জীবন মহাবিশ্ব সব ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর নির্দেশনাকে দৃঢ়তার সাথে গ্রহণ করা। মানব, জীবন মহাবিশ্বের আগে-পরে আল্লাহ, সে আল্লাহর কাছে ফিরে যাবে, এই আকিদা থেকে উঠে আসা অন্য চিন্তা গুলো দিয়ে সে জীবনকে পরিচালিত করবে। যার ফলে একজন মুসলিম যেমন আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে আল্লাহর ইবাদত করে তেমনে তার জীবনের সব ক্ষেত্রেও আল্লাহর বিধান দ্বারা পরিচালিত হওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করে তথা ইসলামী আকিদাকে গ্রহণ করে। সে সাময়িক ভীত হয়ে আল্লাহকে স্বরণ করেনা বরং তার আকিদা দ্বারা জীবনের সকল সমস্যার সমাধান করে। সেটা ব্যক্তিগত ইবাদত হোক, সমাজের সাথে তাঁর সম্পর্ক হোক বা আল্লাহ্‌ কর্তৃক নির্ধারিত রাষ্ট্রে ব্যবস্থা দ্বারা জীবন পরিচালনা।

এক কথায় মানব, জীবন ও মহাবিশ্বের সবকিছুতে ইসলামি আকিদাকে গ্রহণ করা।

যেমন আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেন-

…………আমি আত্মসমর্পণকারীদের (মুসলিম) জন্য প্রত্যেক বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যাস্বরুপ, পথ নির্দেশ, দয়া ও সুসংবাদ স্বরুপ, তোমাদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি। (১৬:৮৯)

……তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর আর কিছু অংশ অবিশ্বাস কর? তোমাদের মধ্যে যারা এরুপ করে তাদের পার্থিব জীবনে দুর্গতি ব্যতীত কিছুই নেই এবং উত্থান দিনে তারা কঠোর শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে……। (২:৮৫)

সুতরাং করোনার ভয়ে ভীত হয়ে ইসলামী আকিদাকে আমরা আধ্যাতিকতা কেন্দ্রীক দেখলে হবেনা। সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply