প্রশ্ন: বর্তমান ব্যবস্থায় মানুষ কোন কোন অধিকারগুলো আদায় করার জন্য প্রচলিত আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবে?
উত্তর: কোনো অধিকার পুনরুদ্ধার বা ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে, শরীয়াহ স্বীকৃত অন্যায় অপসারণের ক্ষেত্রে তা জায়েয; অর্থাৎ অধিকারটি ইসলামী শরীয়াহ দ্বারা স্বীকৃত এবং যে অন্যায়টি করা হয়েছে তাও ইসলামী শরীয়াহ দ্বারা অন্যায় বলে স্বীকৃত। সুতরাং, যে অধিকারটি ইসলামী শরীয়াহ দ্বারা স্বীকৃত নয় তা পুনরুদ্ধার বা ফিরিয়ে দেবার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হওয়া যাবে না। যদি কোনো শ্রমিক প্রচলিত আইন অনুসারে কোন অধিকার দাবি করে যা শরীয়াহ অনুসারে অধিকার হিসেবে স্বীকৃত না, তবে তার পক্ষে তা করা জায়েয নয়। আর কেউ যদি প্রচলিত আইন অনুসারে কোন অধিকার দাবি করে, যা শরিয়াহ অনুসারেও অধিকার হিসেবে স্বীকৃত তবে তা দাবি করার অনুমতি শরীয়াহতে তাকে দেয়া হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, সত্যি কথা বলা এবং তার উপর অবিচল থাকার কারণে যদি কোনো ব্যক্তির উপর অবিচার করা হয় এবং তাকে কারাবাসের মুখোমুখি করা হয়, তবে ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ীও এটা অবিচার ও অন্যায় হিসেবে গৃহীত এবং এক্ষেত্রে ইসলাম তাকে রক্ষা করে এবং তাকে কারাগার থেকে মুক্ত করে। সুতরাং তাকে অন্যায়–অবিচার থেকে মুক্ত করে কারাগার থেকে বের করে আনার জন্য তার নিজের পক্ষ হতে কাউকে নিয়োগ দেয়া তার জন্য শরীয়াহ কর্তৃক অনুমোদিত।
উদাহরন স্বরুপ, আরো বলা যায়, কেউ যদি ছিনতাই এর স্বীকার হয় তবে তার জন্য ইসলাম প্রদত্ত অধিকার হচ্ছে তার চুরি হওয়া বা ছিনতাই হওয়া অর্থ তাকে ফিরিয়ে দেয়া। সুতরাং, চুরি যাওয়া অর্থ ফিরে পাওয়ার জন্য ছিনতাই বা চুরির স্বীকার হওয়া ব্যাক্তি, আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার জন্য নিজের পক্ষ হতে যে কাউকে নিযুক্ত করতে পারে যা শরীয়াহ দ্বারা অনুমোদিত।
আবার, যদি কোনো বিক্রেতা তার বাড়িটি ক্রেতার সাথে এই চুক্তিতে বিক্রি করে যে, ক্রেতা প্রাথমিক ডাউন পেমেন্ট দিবে এবং বাকী টাকাটা পরিশোধের একটি পরিকল্পনার মাধ্যমে (কিস্তি) ধীরে ধীরে দিবে এবং এক্ষেত্রে, ক্রেতা যদি কেবল ডাউন পেমেন্ট প্রদান করে, এবং বাকী অর্থ প্রদান করতে অস্বীকার করে, যদিও সে ঘরটি সত্যিই কিনেছে এবং এইখানে সে বাস করে। সেক্ষেত্রে, ইসলাম ক্রেতার কাছ থেকে বিক্রেতার অধিকার পুনরুদ্ধার করবে। এবং এক্ষেত্রে বিক্রেতা বাকি টাকা যা ক্রেতা দিতে অস্বীকার করেছিল উদ্ধার করার জন্য নিজের পক্ষ থেকে কাউকে নিযুক্ত করে আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে।
সুতরাং, যে শ্রমিক তার এবং তার নিয়োগকর্তার মধ্যে কাজের চুক্তি অনুসারে একটি নির্দিষ্ট বেতনে কাজ করে এবং নিয়োগকর্তা যদি তার বেতন কমিয়ে দেন, ইসলাম, শ্রমিককে তার পুরো বেতন দিতে বাধ্য করে এবং তাই শ্রমিকের পক্ষে এটি অনুমোদিত যারা তার পুরো বেতন আদায় করার ব্যাপারে তাকে সাহায্য করতে সক্ষম, তাদের সহায়তা নেয়া।
অর্থাৎ, যদি তার জন্য নির্ধারিত অধিকার ইসলামি আইন দ্বারাও অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হয় এবং কেউ যদি এটা হরণ করে তবে তার এই হৃত অধিকার পুনরুদ্ধার করার জন্য তিনি নিজের পক্ষ থেকে কাউকে নিযুক্ত করে আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবে। এর বিপরীতে, যদি মানব –রচিত আইন দ্বারা তার অধিকার নির্ধারিত হয় এবং তা যদি ইসলামী শরীয়াহ’র সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তবে এই অধিকার পুনরুদ্ধার করার জন্য কারো সহায়তা নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হওয়া তার জন্য জায়েজ হবে না।
উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ শরীয়াহ দ্বারা অনুমোদিত নয় এমন চুক্তিতে গঠিত একটি যৌথ স্টক সংস্থায় শেয়ারের মালিক হন এবং যখন শেয়ারহোল্ডারদের কাছে লভ্যাংশ বিতরণের সময় আসে তখন যদি সে লক্ষ্য করে যে তার লভ্যাংশের অংশটি, চুক্তিগতভাবে তার যে পরিমান পাওয়ার কথা তার চেয়ে কম। এক্ষেত্রে, এই অধিকার আদায়ের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হওয়া তার জন্য বৈধ নয়, কারণ এই অধিকারটি মানব-রচিত আইন দ্বারা নির্ধারিত হয়েছে এবং এটি শরীয়াহ’র পরিপন্থী। কারণ, যেহেতু কোম্পানির গঠন প্রক্রিয়াটাই শরীয়াহ অনুযায়ী বাতিল (অবৈধ) সেহেতু এই কোম্পানীর মাধ্যমে পাওয়া কোনো কিছুই তার জন্য শরীয়াহ দ্বারা অনুমোদিত হবে না, লাভ তো দুরের কথা। সুতরাং এ জাতীয় সংস্থার কাঠামো থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া মুসলমানের উপর ওয়াজিব।
উদাহরণস্বরূপ আরো বলা যায়, যদি কেউ একটি নির্দিষ্ট সুদের হারে একটি সুদ ভিত্তিক ব্যাংকে তার টাকা জমা রাখে কিন্ত ব্যাংক যখন তাকে তার শেয়ার দেয়, তখন যদি সে আবিষ্কার করে যে তার নিজস্ব হিসাবে যে টাকাটা ব্যাংকের কাছ থেকে তার পাওয়ার কথা ব্যাংকের দেয়া টাকাটা তার থেকে কম। এক্ষেত্রে, এই সুদের বাকি টাকা দাবি করার জন্য আদালতের সহায়তা অবলম্বন করা তার জন্য বৈধ নয়, কারন, এই অধিকারটি মানবসৃষ্ট আইন দ্বারা নির্ধারিত হয়েছে এবং এটি শরীয়াহ’র পরিপন্থী, যা এই পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তিতে এই সুদ ভিত্তিক ব্যাংকগুলিতে অধিকার হিসেবে অনুমোদিত কিন্তু ইসলামি আইন অনুযায়ী এটি তার জন্য অনুমোদিত নয়। সুতরাং ব্যাংকের সাথে এই সুদের চুক্তি বাতিল করা মুসলমানদের উপর কর্তব্য (ওয়াজিব)।
সংক্ষেপে, যদি প্রচলিত আইন অনুসারে শ্রমিকের দাবি করা অধিকারগুলি ইসলামী শরীয়াহ অনুসারেও অধিকার হয় বা শরীয়াহ দ্বারা নির্দেশিত হয় অথবা যদি তার কাজের চুক্তিতে শরীয়তের পরিপন্থী শর্তাদি না থাকে তবে, প্রচলিত আইন অনুসারে শ্রমিকদের তাদের অধিকার দাবি করা অনুমোদিত। তবে, যদি শ্রমিকের দাবি করা অধিকারগুলি মানব-রচিত আইন অনুসারে অধিকার হয় এবং শরীয়াহ দ্বারা নির্ধারিত অধিকার না হয়, তবে শ্রমিকদের আদালতের সামনে তাদের দাবি উত্থাপন করা শরীয়াহ দ্বারা অনুমোদিত হবে না।
মূল: শায়খ আতা ইবন খলীল আবু রাশতা কর্তৃক এক প্রশ্নোত্তর
উৎস: Claiming a Right Stipulated by Non-Islamic Law
আরো পড়ুন: প্রশ্ন-উত্তর: অনৈসলামিক ব্যবস্থায় নিজেদের অধিকারের দাবী করা কি বৈধ?