পুঁজিবাদের অলীক সুখ-স্বপ্ন

Capitalism তথা পুঁজিবাদ সুখের ডেফিনেশন দেয় consumerism তথা ভোগবাদের মাধ্যমে। ইন্দ্রিয়গত পরিতৃপ্তি সর্বোচ্চ বস্তুগত ভোগে, সবচেয়ে বেশি stuffs আর gadgets এর প্রাপ্তিতেই আমাদের সুখের definition খুঁজে ফেরা, এটা পশ্চিম পেয়েছে গ্রীক রোমানদের উত্তরসূরি হিসেবে।

কিন্তু এখন জীবন সম্বন্ধে এই concepts গুলো আইডোলজিকাল ফ্রেমওয়ার্কের মাধ্যমে, ইন্টেলেকচুয়ালি সব জায়গায় ডমিনেট করছে। দিনশেষে সবই যা খুশি তাই করার, ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তির মাঝেই জীবনের অর্থ খুজে নেওয়ার তাগিদ দেয়। এই পশ্চিমা ওয়ার্ল্ডভিউয়ের কারণে আমরা পেয়েছি একটা ডিপ্রেসড সিভিলাইজেশন।যারা অর্থপূর্ন কোন কিছুর দিকে ছুটছে না, বরঞ্চ অলীক সুখের ঘূর্নিপাকে পড়ে অতল গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে পরিবারের ভাঙনে, আত্মহত্যা নয়তো মানসিক বিকারে। হারিয়ে যাচ্ছে ড্রাগে, হারিয়ে যাচ্ছে ফুলানো ফাপানো স্ট্যাটাস, সৌন্দর্য, অর্থের শো অফের অলিগলিতে।

Capitalism এ তাই ব্যাবসায়ীরা মানুষের ‘অপূর্নতা’ নিয়ে ব্যাবসা করে। তাদের “পন্য” ভোগ করলেই আপনি “পূর্নতা” পাবেন। আইফোন ইউজ করলেই আপনি এমপাওয়ার্ড হবেন, হবেন ফ্রি। হবেন হ্যাপি। কেএফসিই ‘হ্যাপি মিল’ দেবে। আপনার দাগেভরা চেহারা আপনার অপূর্নতা। গার্নিয়ার নাহলে নিভিয়া ক্রিম লাগবেই। একটা পিম্পলের জন্যে তারা আপনাকে ঘুমোতে দেবে না। একটা ভুড়িওয়ালা পেট, অনাকর্ষনীয়। সিক্স প্যাক, ছাড়াও লাগবে নামী বেনামী ডাইট প্রডাক্টস। পূর্নতাই সুখ, পার্ফেক্টনেস। আর মানুষ এভাবেই বস্তুগত চাহিদার পেছনে তার সুখের ঘোড়া ছুটিয়ে দেয়। এক অসম অবাস্তব প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়ে পড়ে। এভাবে তার অপূর্নতাও কক্ষনও ঘোচে না, আর অতৃপ্তি থেকে যায়।

বনী আদম চাহিদার সাথে সুখকে বেধে ফেললেই সুখ আর কখনই পাওয়া সম্ভব না। কারণ তাকে এক সোনার পাহাড় দিলে আরেকটা সোনার পাহাড় চাইবে। পূর্নতা নিয়ে কেউ জন্মায় না, কেউ পূর্নতা নিয়ে মরতেও পারে না। চাহিদার পূর্নতা সারা জীবনেও মানুষ পেতে পারে না। দুনিয়ার সকল সম্পদ কাজে লাগিয়েও।

এইজন্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لَوْ كَانَ لاِبْنِ آدَمَ وَادِيَانِ مِنْ مَالٍ لاَبْتَغَى ثَالِثًا، وَلاَ يَمْلأُ جَوْفَ ابْنِ آدَمَ إِلاَّ التُّرَابُ، وَيَتُوبُ اللَّهُ عَلَى مَنْ تَابَ ‘

” যদি আদম সন্তানের দুটি উপত্যকাপূর্ণ ধনসম্পদ থাকে তবুও সে তৃতীয়টার আকাঙ্ক্ষা করবে। আর মাটি ছাড়া লোভী আদম সন্তানের পেট ভরবে না। অবশ্য যে ব্যাক্তি তওবা করবে আল্লাহ তা আলা তার তওবা কবুল করবেন।” [বুখারী, হাদিস নং ৫৯৯৩]

পুঁজিবাদ মানুষের এই বাস্তবতাটাই ধরতে ব্যর্থ। তাই “সুখ” অধরাই থেকে যায়, সোনার হরিন হয়ে।

 যারা দুনিয়ার বস্তুগত প্রাচুর্য আর সুখের দাসত্ববরন করে, এবং এসকল বিষয়ে মত্ত থেকে আখিরাতের চিরন্তন জীবনকে অবহেলা করে, দুনিয়ায় নিজের সুখ ও আনন্দের পূর্নতা কামনা করে মিথ্যা আশায় বুক বাধে তাদের অবিসম্ভাবী ধ্বংসের ঘোষনা এসেছে রাসুলুল্লাহ (সা) এর মুখ থেকেই,

تَعِسَ عَبْدُ الدِّينَارِ وَالدِّرْهَمِ وَالْقَطِيفَةِ وَالْخَمِيصَةِ، إِنْ أُعْطِيَ رَضِيَ، وَإِنْ لَمْ يُعْطَ لَمْ يَرْضَ

” দিনার, দিরহাম, রেশমী চাঁদর (শাল), পশমী কাপড়ের (চাদর) গোলামরা ধ্বংস হোক। যাদের এসব দেয়া হলে সন্তুষ্ট থাকে আর দেয়া না হলে অসন্তুষ্ট হয়।” [বুখারী ৫৯৯২]

এমনকি আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলাও তার নবীকে আদেশ করছেন,

ذَرْهُمْ يَأْكُلُوا وَيَتَمَتَّعُوا وَيُلْهِهِمُ الْأَمَلُ ۖ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ

 ” তাদেরকে ছেড়ে দাও তারা খেতে থাকুক, ভোগ করতে থাকুক এবং (মিথ্যা) আশা ওদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখুক, পরিণামে তারা বুঝবে।” [হিজর ৩]

মৃত্যুর মাধ্যমে তাদের সকল ভোগ ও আনন্দের অবসান ঘটবে। যা তাদের চিরন্তন এক জীবনের সামনে দাড় করিয়ে দিবে, যেখানে তাদের দিনার দিরহাম কোন কাজেই আসবে না। সুখ পার্থিব কোন বিষয় নয়। পার্থিব চাওয়া পাওয়ার সমীকরন সুখ নয়। সৃষ্টিকর্তার সাথে নাড়ছেড়া জীবন-দর্শন কখনই সুখের খোজ দিতে পারবে না। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমেই দুনিয়ার শত অপ্রাপ্তি নিয়েও সুখী হওয়া সম্ভব হয়। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যমে আখিরাতেই মানুষ ‘পূর্নতা’ লাভ করবে।

قَالَ اللَّهُ هَٰذَا يَوْمُ يَنفَعُ الصَّادِقِينَ صِدْقُهُمْ ۚ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۚ رَّضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

”আজকের দিনে সত্যবাদীদের সত্যবাদিতা তাদের উপকারে আসবে। তাদের জন্যে রয়েছে– উদ্যান; যার তলদেশে নির্ঝরিণী প্রবাহিত হবে; তারা তাতে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট। এটিই মহান সফলতা।” [সূরা মায়িদা, আয়াত: ১১৯]

আবু ই’য়ালা  

Print Friendly, PDF & Email

খিলাফত একমাত্র সমাধান

আল ক্বাদা ওয়াল ক্বদর

Leave a Reply