১৬তম অধ্যায়: খন্ডিত সংস্কার ও আমূল সংস্কার

মুসলিমদের আজকের এ করুণ দশায় অবস্থার পরিবর্তন ও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মত উত্তম বিকল্পের জন্য কাজ করতে অনেক ইসলামী আন্দোলনের উন্মেষ ঘটেছে। এ আন্দোলনগুলো মূলত দু’ধরনের। প্রথম ধরনের আন্দোলন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার দাওয়াহ্’র ক্ষেত্রে সংস্কারমূলক পদ্ধতির উপর নির্ভর করে। সুতরাং তারা, যা ধ্বংস হয়েছে তা ঠিক করার চেষ্টা করে এবং যা দূষিত হয়ে গেছে তার সংস্কার সাধনের চেষ্টা করে। দ্বিতীয় ধরনের আন্দোলন পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পথের উপর নির্ভর করে এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গী হল, ভিত্তিমূল যেখানে দূনীর্তিগ্রস্ত হয়ে গেছে সেখানে সংস্কার সাধন করে বাস্তবে তেমন কোন সুফল পাওয়া যাবে না, তাই খন্ডিত সংস্কার আদৌ কোন কাজে আসবে না।

এ দুই আন্দোলনের চিন্তার পার্থক্যের দরুণ বাস্তবতাকে বিশ্লেষণের ও এর প্রতি আচরণের প্রক্রিয়া ভিন্ন হয়ে গেছে। ফলত: কাজের প্রক্রিয়া ও দাওয়াহ্’র পদ্ধতিও ভিন্ন ।

সুতরাং এ ব্যাপারে শারী’আহ্’র দৃষ্টিভঙ্গি কী?

শারী’আহ্ আইন উপলদ্ধি করতে হলে আমাদের ইসলামী চিন্তার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। এর কারণ হল ভিত্তি নিয়ে আলোচনা না করলে শারী’আহ্ হুকুমের ব্যাপারে জ্ঞানার্জন সম্ভব নয়।

শারী’আহ্ পদ্ধতি অনুযায়ী অগ্রসর হতে হলে আমাদের সামনের উপস্থিত বাস্তবতা সম্পর্কে আমাদের সুস্পষ্ট ধারনা থাকতে হবে, সেই বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ শারী’আহ্ দলিলসমূহ অনুসন্ধান করতে হবে এবং অতঃপর এগুলোকে আইনগত প্রক্রিয়ায় বুঝতে হবে।

এটা সর্বজনবিদিত যে, পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলাম সংস্কার পদ্ধতির কথা বলে যখন সংস্কার কার্যত অপরিহার্য হয়ে পড়ে এবং পরিবর্তন পদ্ধতির কথা বলে যখন পরিবর্তন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। সুতরাং শারী’আহ্’র দৃষ্টিতে বর্তমান বাস্তবতায় কি করা প্রয়োজন?

আমাদের কী সংস্কার প্রয়োজন নাকি আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন?

উভয়ক্ষেত্রে রায় নিতে হবে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র কাছ থেকে এবং এর ভিত্তি হতে হবে শারী’আহ্ দলিল। যে বাস্তবতাকে পরিবর্তন বা সংস্কার করা হবে তার উপর মুলতঃ দাওয়াহ্’র প্রকার (সংস্কার নাকি পরিবর্তন) নির্ভর করে।

পরিবর্তনের ক্ষেত্রে হোক সেটা ব্যক্তির চিন্তা পরিবর্তন অথবা তার অবস্থা পরিবর্তন অথবা সমাজের পরির্বতন অথবা মানুষের বা জাতির পরিবর্তন, মুলতঃ এটা শুরু হওয়া উচিত মানুষ, সমাজ ও তার অবস্থা যে ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত সেটা থেকে। কারণ এই ভিত্তি থেকেই মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রনকারী সকল বিশ্বাস ও চিন্তা উদ্ভুত হয়। এই ভিত্তি এবং তা সংশ্লিষ্ট আংশিক ও পারিপার্শ্বিক সকল চিন্তার উপর নির্ভর করে মানবজাতির সুখ-দুঃখ, পুনর্জাগরণ কিংবা অধঃপতন।

মুসলিম ও ইসলামী সমাজ যে ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত তা হল ইসলামী আক্বীদা। মুসলিমের অথবা ইসলামী রাষ্ট্রের কোন কার্যক্রম এই আক্বীদা এবং এর আওতা থেকে একচুল বিচ্যুত হওয়ার সুযোগ নাই।

ইসলাহ্ বা সংস্কারের মধ্যে তাগীর বা পরিবর্তনও অন্তর্ভুক্ত। যদি ভিত্তি ঠিক থাকে তবে এটা কেবলমাত্র শাখা-প্রশাখা নিয়ে কাজ করে, মৌলিক ভিত্তি নিয়ে নয়। অন্যথায় এটা ভিত্তিকেই সঠিক ও পরিশুদ্ধ করার কাজ করে।

যদি ভিত্তি ঠিক থাকে কিন্তু এতে কিছু অস্পষ্টতা থাকে অথবা কোন চিন্তা দ্বারা এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও তা প্রাধান্য বিস্তার করে, সেক্ষেত্রে কাজটি হবে সংস্কারমূলক কিন্তু পরিবর্তনমূলক নয়। মূল ভিত্তিতে পরিপূর্ণ বিশুদ্ধতা ফিরিয়ে আনাই হবে আসল কাজ এবং এর মাধ্যমে এটি শক্তিশালী হবে। এতে করে শাখাপ্রশাখাসমূহেও এ পরিবর্তনের ছোঁয়া টের পাওয়া যাবে। উদাহরণস্বরূপ, পশ্চিমা চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত একজন মুসলিমকে দাওয়াহ্’র বেলায় তার ঈমানকে বিশুদ্ধ করা এবং তার ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করার দাওয়াহ্ করতে হবে যাতে সে সঠিক পথে আসে এবং তার চারিত্রিক ত্রুটি দূর হয়। আবার গুনাহগার মুসলিমকে দাওয়াহ্ প্রদানের ক্ষেত্রে তার ঈমান বৃদ্ধির দিকে শ্রম দিতে হবে যাতে তার ভেতর আবেগের সঞ্চার ঘটে যা তাকে তাক্বওয়া বৃদ্ধির দিকে ধাবিত করে এবং গুনাহ্ দিকে ধাবিত হওয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। কোন মুসলিমের জন্য যা প্রযোজ্য ইসলামী রাষ্ট্রের জন্যও তা প্রযোজ্য। উদাহরনস্বরূপ যখন আমরা কোন কাফিরকে ইসলামের দাওয়াহ্ দিব তখন তা হবে পরিবর্তনের দাওয়াহ্। কারণ তার বিশ্বাসের ভিত্তি এবং তার উপর প্রতিষ্ঠিত ও উৎসারিত সবকিছুই ভুল। সুতরাং সঠিক ভিত্তি দিয়ে একে সরাতে হবে। তাই ভিত্তিকে পাশ কাটিয়ে শুরুতেই আমরা একজন কাফিরকে নামাযের দাওয়াহ্ দেই না। এটাই রাসূলুল্লাহ্ (সা) করেছেন এবং এটাই বাস্তবতায় পরিলক্ষিত। একজন কাফিরের সকল কাজই আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র নিকট অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য, তা এখন যত ভালোই হোক না কেন এবং কোন কাফিরই তার কর্মগুণে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না কারণ তার কোন কর্মই আল্লাহ্ প্রদত্ত ঈমানের উপর ভিত্তি করে সম্পাদিত হয়নি। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন,

“এবং আমি তাদের (কাফির, মুশরিক) কৃতকর্মের প্রতি মনোনিবেশ করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলিকণারূপ করে দিব।”
(সূরা আল-ফুরকান: ২৩)

একইভাবে যদি একজন মুসলিম ঈমান ত্যাগ করে মুরতাদ হয় তবে তার সমস্ত কর্মই বৃথা হয়ে যাবে। সুতরাং, ঈমান হচ্ছে সমস্ত কর্মের মূল ভিত্তি।

যখন আমরা একজন মুসলিমকে দাওয়াহ্ করব তখন তা হবে সংস্কারমূলক। কারণ তার মূল ভিত্তি ঠিক আছে। তাকে দাওয়াহ্ করতে হবে যাতে সে ত্রুটিমুক্ত হয় এবং যে কারণে সে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং নিষ্ঠা দূর্বল হয়েছে, সে কারণ দুর করা যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত ভিত্তি ঠিক আছে ততক্ষণ পর্যন্ত এর উপর নির্ভর করে তাকে বিকশিত করা, শক্তিশালী করা, ফলপ্রসূ করা ও বিশুদ্ধ করা সম্ভব হবে।  এর ফলে সে সঠিক পথে যাবে এবং প্রকৃত নিষ্ঠা অর্জন করবে। যদি কোন মুসলিম মদ খায়, যিনাহ্ করে, চুরি করে, সুদ খায় এবং ইসলামী জীবনব্যবস্থা পুণঃপ্রতিষ্ঠার দাওয়াহ্’কে অবহেলা করে তাহলে তার ঈমানকে পরিশুদ্ধ করলেই সে পরিশুদ্ধ হবে। সে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্কে স্মরণ করবে, যিনি জীবনের সবকিছুর পরিচালক, যাকে উপাসনা ও মান্য করা হয়। তার অপরাধ কত ছোট সেদিকে সে লক্ষ্য করবে না, বরং লক্ষ্য করবে যে স্রষ্টা কত মহান। দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে সে স্রষ্টার আদেশ-নিষেধ মান্য করবে। তাকে অবশ্যই খারাপ কাজের পরিমাণ সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে, অর্থাৎ প্রজ্জলিত আগুনের কথা। অন্যদিকে, ভাল কাজের পুরষ্কারের কথাও স্মরণ করিয়ে দিতে হবে অর্থাৎ পরকালে আল্লাহ্’র সন্তুষ্টি অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পুরষ্কারের কথা। সুতরাং একজনকে বিচার দিবসের ভয়াবহতা ও জাহান্নামের কঠিন আযাব এবং জান্নাতের নেয়ামত সম্পর্কে মনোযোগী হতে হবে। এভাবে তার মধ্যে ঈমানের ভাব জাগ্রত হবে এবং আনুগত্যের দিকে ছুটে যাওয়া ও গুনাহ্ থেকে মুক্ত হবার জন্য সে তৎপর হবে। এ পদ্ধতি ছাড়া মুসলিমদের সংশোধন করা যাবে না। সে কারণে আজকে আমাদের দাওয়াহ্’র মধ্যে ব্যক্তি মুসলিমকে মুসলিম বিবেচনায় এনে তাদের চিন্তাকে পরিশুদ্ধ করতে হবে এবং আচরণকে সংস্কার করতে হবে।

রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হয় সংবিধানের মাধ্যমে এবং এই সংবিধান একটি উৎসের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে এবং এই উৎস আবার একটি ভিত্তির উপর অবস্থান করছে। এ বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে। রাষ্ট্র কি ইসলামী আক্বীদার উপর নির্ভর করে দাঁড়িয়ে আছে এবং কেবলমাত্র কুর’আন ও সুন্নাহ্তে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেটি কী আইনের উৎস হিসেবে নেয়া হয়েছে? সংবিধানের কানুনসমূহ কী নাযিলকৃত আদেশ থেকে বিচ্যুত হয়েছে কিনা? যদি এগুলোর উত্তর ইতিবাচক হয় তাহলে রাষ্ট্রটি ইসলামী রাষ্ট্র।

যদি ইসলামী রাষ্ট্রে দূনীর্তি ও অপপ্রয়োগ ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে তখন সে অবস্থায় পরিবর্তন নয়, সংস্কার প্রয়োজন। এ অবস্থা ওসমানিয়া খিলাফতের শেষের দিকে দেখা গিয়েছিল। এর সংস্কার অপরিহার্য এবং এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে পশ্চিমা কুফরদের তা ধ্বংসে সহযোগিতা করা কোনক্রমেই অনুমোদিত নয়। কিন্তু এটাই করেছিল (হিজাযের) তথাকথিত শরীফ হুসেইন।

কিন্তু রাষ্ট্র যদি ইসলামী আক্বীদা’র ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত না হয় এবং এই অনৈসলামী আক্বীদা’র উপর ভিত্তি করে যদি তার সংবিধান, ব্যবস্থা ও আইন প্রতিষ্ঠিত হয় তবে সংস্কার নয়, পরিবর্তন প্রয়োজন। মুসলিমগণ আজকে এ ধরনের রাষ্ট্রে বসবাস করছে। এ রাষ্ট্রসমূহ অনৈইসলামি। কারণ তাদের ব্যবস্থাপনা ইসলামী শারী’আহ্ থেকে উৎসারিত হয়নি, যদিও তারা বলে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। কেননা এক্ষেত্রে কোন নাম বা উক্তি বিষয় নয় বরং এর অর্থ ও বাস্তবায়নই মুখ্য।

সুতরাং মুসলিমদের পরিচালনাকারী রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সংবিধান, কেবলমাত্র কুর’আন ও সুন্নাহ্’র উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত নয়। এই কারণে বাস্তবতা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক করেছে সার্বিক পরিবর্তনে ধাবিত হতে, আংশিক নয় এবং এই পরিবর্তন হচ্ছে শাসনব্যবস্থার মূল ভিত্তি ও বুনিয়াদের মৌলিক পরিবর্তন। এই বাস্তবতাকে কখনওই দায়সারা গোছের সংস্কারমূলক কাজ দিয়ে পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না, বরং এটা সামগ্রিক, মৌলিক ও বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ভিত্তিতে হতে হবে। অন্যকোন ভিত্তির উপর নির্ভর করে অন্যকোন পথে এটা করা অনুমোদিত নয়। প্রকারান্তরে এটা কুফরী ব্যবস্থাকে মেনে নেয়ার শামিল এবং বাস্তবতার নিরীখে শারী’আহ্ বিবর্জিত দাবি কেননা বাস্তবতা হল আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন তা বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে শাসনকার্য পরিচালিত হচ্ছে। সেই কারণে আমরা দেখতে পাই, বর্তমান প্রচলিত শাসনব্যবস্থার সাথে অংশগ্রহণকৃত দলসমূহ মূলত সহাবস্থান করছে ও সেখানে নিজেদের একটি অবস্থান করে নেয়ার জন্য প্রচেষ্টায় রত। যে বাস্তবতায় তারা  সংস্কার সাধন করতে চায় তাতে এই প্রচেষ্টা নেহায়েত আংশিক; কেননা তাদের কর্মসূচী আংশিক। তারা সাদৃশ্যপূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক তৈরি করে এবং এটাকে তাদের ও ব্যবস্থার মধ্যে সংলাপের সূচনা হিসেবে মনে করে। তারা ইসলামী রঙে দেশকে রাঙানোর চেষ্টা করে যদিও এর নির্যাস হচ্ছে অনৈসলামী আর একে তারা ইসলামের ছদ্মাবরনে প্রদর্শন করে যদিও এই রং এর নির্যাসের কাছাকাছি পৌঁছে না।

পরিবর্তনের জন্য দাওয়াহ্ বহনকারীগণ অন্যদের থেকে সবদিক থেকে আলাদা, তাদের আচরণ এবং যে বাস্তবতা পরিবর্তনের জন্য তারা কাজ করছে। কারণ তাদের সকল চিন্তা তাদের বিশ্বাসের সাথে যুক্ত। ভিত্তির (ভিন্নতার) কারণেই বর্তমান বাস্তবতাকে তারা প্রত্যাখান করে। ভিত্তিকে প্রত্যাখ্যানের কারণে যা কিছু এই ভিত্তি থেকে উৎসারিত হয় তাও তারা প্রত্যাখ্যান করে, যদিও কিছু আংশিক বিষয়ে উভয়ের মধ্যে সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।

তাই তারা সরাসরি এ প্রক্রিয়াকে উপস্থাপন করে, এই মডেলের সামগ্রিক চিত্র জনগণের কাছে তুলে ধরে যা তাদের মন-মগজে বিদ্যমান। এই মডেল তাদেরকে রাসূলুল্লাহ্ (সা) ও সাহাবীদের সময়ে নিয়ে যায়। তারা যে বাস্তবতায় বসবাস করে সেটাকে এর ভিত্তিসহ সমালোচনা করে। সেকারণে সব দেশে এ দলের আচরণ একই রকম। কারণ বিভিন্ন দেশে কাফের উপনিবেশবাদীরা মুসলিমদের যে বাস্তবতার দিকে ঠেলে দিয়েছে তা একই ও সাদৃশ্যপূর্ণ এবং এজন্য এর সমাধানও একই।

পশ্চিমারা তাদের উপনিবেশবাদের শুরু থেকেই মুসলিমদের কুর’আন ও সুন্নাহ্ যাতে তাদের আইনের উৎস হিসেবে কাজ করতে না পারে সেবিষয়ে সচেষ্ট ছিল। আর এটা তখনই সম্ভব হয়েছে যখন ইসলামী দ্বীনকে জীবনের বাস্তবতা ও এর সংগঠন থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে এবং এভাবে তারা সফলও হয়েছে। আর এই পরিণতি ছিল আমাদের জন্য ভয়াবহ। আজকে বিভিন্ন ইসলামী আন্দোলনগুলো যেভাবে পশ্চিমাদের তৈরি কৃত্রিম বিষয়গুলো নিয়ে ব্যস্ত নিয়ে তা ভাবতে অবাক লাগে; তারা সমূল এসবকে উৎপাটনের বদলে এগুলোকে সংস্কারের জন্য কাজ করে। অবশ্যই এ খন্ডিত সংস্কারমূলক কাজ বাস্তবতাকে পরিবর্তন করতে সক্ষম হবে না। যারা বাস্তবতাকে উপলদ্ধি করতে অক্ষম, তারা এর নিয়মকানুনও বুঝতে পারবে না। সেকারণে তারা অবশ্যই কাজের সত্যিকারের পদ্ধতি ও সুন্নাহ্ থেকে বিচ্যুত হবে।

যারা আজকের দিনে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র প্রতি মানুষকে আহ্বান করেন তারা অবশ্যই রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর এই হাদীসটি ভুলে যাবে না, যেখানে বলা হয়েছে:

“…. অতঃপর আবার আসবে খিলাফত নব্যুয়তের আদলে।”  
[মুসনাদে আহমদ]

যারা নব্যুয়তের আদলে খোলাফায়ে রাশেদীনের প্রত্যাবর্তন চায় তাদের অবশ্যই মানবশ্রেষ্ঠ রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সীরাত অনুসরণ করা ছাড়া আর কোন পথ নেই, যাঁর প্রচেষ্টায় আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র সাহায্য ফলদায়ক হয়েছিল এবং এর ফলে মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম এই উম্মাহ্ অস্তিত্ব লাভ করেছে। নবীদের (আ) জীবন এবং তাদের অনুসারীদের জীবন একই সুতায় বাঁধা। আমরা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র কাছে প্রার্থনা করি যেন আমরা এই সুঁতার একটি অংশ হতে পারি। সে কারণে আমরা আল মুস্তাফা (সা)-এর জীবনকে অনুসরণ করব এবং মানুষ আমাদেরকে এ বিষয়ে অনুসরণ করবে, আর আমরা সকলে মিলে একত্রিত হব সর্বোত্তম কাজ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের জন্য।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply