আক্বীদাহ’র গুরুত্ব

যেহেতু ইসলামী আক্বীদাহ হচ্ছে দলটির কাজের প্রেরণা এবং আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয়াদি দিয়ে শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা এর উদ্দেশ্য সেহেতু দলটির জন্য বাধ্যতামূলক নিজের বিকাশক্রিয়া (culture) কে এমনভাবে গ্রহণ করা যার সঙ্গে আক্বীদাহ’র জোরোলো সম্পর্ক থাকবে। যার লক্ষ্য হবে দলের কর্মীদের মধ্যে দায়িত্ববোধ, উদ্বেগ, আন্তরিকতা, তীব্র ভালোবাসা, আগ্রহ এবং ত্যাগের মানসিকতা গড়ে তোলা। এটি মুসলিমদের মধ্যে চলার পথে দুঃখ যন্ত্রণা সহ্য করার ক্ষমতাও জাগিয়ে তুলবে । দাওয়াত বহনকারীকে এটি এমনভাবে গড়ে তুলবে যাতে সে লোকজনের প্রশংসার জন্য বসে থাকবে না বরং সে তার রব ও সেইদিনের ভয় করবে যেদিন দুশ্চিন্তায় মানুষের চেহারা বিমর্ষ হবে। রবের সন্তুষ্টি ও আখিরাতের পরম সুখ লাভের জন্য সে পার্থিব যন্ত্রণা গ্রহণ করতে এবং দুনিয়ার সুখ ও আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে প্রস্তুত থাকবে। বিকাশক্রিয়ার ভিত্তি হিসেবে আক্বীদাহ’কে গ্রহণ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে লোকজনের মধ্যে পরিবর্তন সূচিত করতে আক্বীদাহ’কে ব্যবহার করা এবং এক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে কৃত অত্যাচারের বিরুদ্ধে জন্মানো ঘৃণা, অবজ্ঞা থেকে মুক্তি অথবা পরিস্থিতিকে উন্নত করার মানসিকতাকে ব্যবহার না করা। বরং যে বিষয়টি মুসলিমদেরকে দাওয়াত দিতে এবং অন্যান্য মুসলিমদেরকে তা গ্রহণ করতে চালিত করবে তা হচ্ছে তাদের ঈমানের চিন্তা এবং এটাই ইসলামের প্রকৃত পথ। 

উপরন্তু ঈমানের চিন্তাসমূহকে (পরিবর্তন সূচিত করার জন্য যা দলটি ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে) এবং দলের গ্রহণকৃত বিকাশক্রিয়াকে (culture) এমনভাবে পৌঁছে দিতে হবে যাতে উদ্দেশ্য পূরণ সম্ভব হয়। 

আক্বীদাহ’কে এমনভাবে পৌঁছাতে হবে যাতে তা এই উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক হয়।

গ্রহণকৃত শরঈ হুকুমকে এমনভাবে পৌঁছাতে হবে যাতে এগুলোর উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে উপস্থাপিত হয়।

বাস্তবতা সম্পর্কিত জ্ঞান এমনভাবে পৌঁছাতে হবে যাতে উদ্দেশ্য উপলব্ধির ক্ষেত্রে তা সহায়ক হয়।

সংক্ষেপে বলতে গেলে দলের বিকাশ প্রক্রিয়াকে ইসলামী আক্বীদাহ’র সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হতে হবে। শরীআহ’র দলীলাদি দ্বারা এগুলো সমর্থিত হতে হবে এবং এমনভাবে পৌঁছাতে হবে এগুলোকে যাতে এরা শরঈ উদ্দেশ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। আর তা (শরঈ উদ্দেশ্য) হল ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাস্তবে আল্লাহর দাসত্বের অনুভূতি অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি প্রদান। আর দলের শাবাবদেরকে এই উপলদ্ধির ভিত্তিতেই গড়ে তুলতে হবে।  

যেহেতু ইসলামী আক্বীদাহ’র দৃষ্টান্ত হচ্ছে শরীরের জন্য মাথাস্বরূপ এবং অঙ্গসমূহের মধ্যে হৃদপিণ্ডস্বরূপ; যেহেতু এটি হচ্ছে সমস্ত বিষয়ের ভিত্তিস্বরূপ এবং এর উপরেই সবকিছু নির্ভরশীল সেহেতু একে এমনভাবে পৌঁছাতে হবে যাতে তা নিম্নোক্ত লক্ষ্যসমূহ অর্জন করতে পারে:

— আল্লাহকে ইবাদাতের যোগ্য একমাত্র সত্তা হিসেবে এবং বিধানের উৎস হিসেবে মেনে নিতে তা মানুষকে পরিচালিত করবে। তিনি বাদে অন্য কারো এই অধিকার নেই। তিনিই একমাত্র রব এবং একমাত্র খালিক (সৃষ্টিকর্তা)। তিনি সর্বজ্ঞানী, সর্বজ্ঞাত ও বিধানদাতা যিনি সমস্ত বিষয়কে পরিচালনা করেন। যেহেতু প্রকৃতিগতভাবে মানুষ নিজেকে দুর্বল, সীমাবদ্ধ, চাহিদাসম্পন্ন এবং নির্ভরশীল বলে অনুভব করে সেহেতু সে তাকে সঠিকপথে পরিচালিত করার জন্য এবং গভীর অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসার জন্য এই ইলাহের নিকট আত্মসমর্পণ করে। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে একজনকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন এবং বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাঁকে (সা) মনোনীত করেছেন যিনি তাঁর রবের ইচ্ছানুযায়ী তাদেরকে শান্তির পথে পরিচালিত করেন। তিনি (সা) তাঁর রবের পক্ষ থেকে যা কিছু আমাদেরকে পৌঁছে দেন তার আনুগত্য করতে আল্লাহ আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি (সা) নিষ্পাপ, যার প্রতি আল্লাহ পুরো মানবজাতির জন্য একটি বার্তা হিসেবে কুরআন নাযিল করেছেন। এটি এসেছে অন্তরসমূহের জন্য পথনির্দেশনা, আলোকবর্তিকা, রহমত, তিরস্কার এবং নিরাময়কারী হিসেবে। যারা ঈমান আনে ও আনুগত্য করে তাদের জন্য তিনি (আল্লাহ) অনন্তসুখের প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন এবং যারা প্রত্যাখ্যান করে তাদেরকে জাহান্নামের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন। অতএব, রাসূলুল্লাহ (সা) যে বার্তা নিয়ে এসেছেন সে অনুযায়ী আল্লাহর ইবাদাত করার জন্যই কেবল মানুুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে।

— জীবনের পূর্বে কী ছিল, সেই বিষয়টি মুসলিমদের কাছে পরিষ্কার করতে হবে কারণ এর মাধ্যমে ইসলাম মানবজাতিকে একটি বন্ধনে আবদ্ধ করে যা হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা এবং সমস্ত বিষয়ের পরিচালনাকারী হিসেবে আল্লাহর উপরে ঈমান। জীবনের পরে কী আছে তার মাধ্যমেও তাকে ঈমানের বন্ধনে আবদ্ধ করে যা হচ্ছে বা’থ (পুনরুত্থান), নুশূর (একত্রিতকরণ), হিসাব, সাওয়াব এবং ইকাব (শাস্তি)। এ বিষয়গুলো এমনভাবে পৌঁছাতে হবে যাতে এগুলোর মধ্যকার সম্পর্কটি উপস্থাপিত হয়। এই বন্ধনকে যে ছিন্ন করে এবং আলাদা করে ফেলে তার মন্তব্য কোনো স্পষ্ট প্রমাণ বা তথ্যের উপরে ভিত্তিশীল থাকবেনা। বরং এগুলো হবে কুফরী মন্তব্য।

— একে এমনভাবে পৌঁছাতে হবে যাতে তা উম্মাহকে পুনর্জাগরিত করে এবং বিশ্বে ইসলাম ছড়িয়ে দিতে তাকে চালিত করে।

— সমসাময়িক কুফর চিন্তাসমূহের মোকাবেলায় এই চিন্তার যথার্থতা মুসলিমদের কাছে বুঝাতে হবে। পঁুজিবাদ, জাতীয়তাবাদ, অথবা দেশাত্মবোধ থেকে জন্ম নেওয়া বর্তমান চিন্তাসমূহের ভ্রান্তি উন্মোচন করার মাধ্যমে এটি অর্জিত হবে। ইসলাম ও এসব চিন্তার মধ্যকার পার্থক্য বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে এটা সম্ভব হবে; ফলে আমরা দুটো বিষয় অর্জন করতে পারব: প্রথমত; এসব চিন্তা ও এগুলোর উপরে ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে থাকা অন্যসব চিন্তার খণ্ডন এবং দ্বিতীয়ত; এই বিষয়টিকে তুলে ধরা যে ইসলাম হচ্ছে পুরো মানবজাতির জন্য একমাত্র উপযুক্ত সমাধান (এর আক্বীদাহ ও ব্যবস্থার সার্বজনীন প্রকৃতির কারণে)। পরবর্তীতে সেই রাষ্ট্রকে প্রতিষ্ঠিত করার মধ্য দিয়ে আমরা ইসলামের সঠিকত্ব প্রমাণ করতে পারব যা ইসলামকে উপস্থাপন করবে। এক্ষেত্রে কাফেরদের বিভিন্ন শ্লোগান, চমকপ্রদ প্রপাগাণ্ডা ও বিলবোর্ড এবং কাফের ঔপনিবেশিক শক্তি কর্তৃক মুসলিমদের মনে স্থাপিত ভ্রান্ত দাবীসমূহকে দূর করার জন্য দলটি কাজ করবে। উদাহরণস্বরূপ কিছু শ্লোগান তুলে ধরা হল: ‘চিন্তা ও সংস্কৃতির স্বাধীনতা’, ‘সীজারের প্রাপ্য সীজারকে দাও এবং সৃষ্টিকর্তার প্রাপ্য সৃষ্টিকর্তাকে’, ‘আমাদের মাতৃভূমি সবসময় সত্যের উপরেই থাকে’, ‘নির্যাতনকারী হোক অথবা নির্যাতিত নিজের ভাইকে সাহায্য কর’ (প্রাক ইসলামী যুগের ধারণা অনুসারে) প্রভৃতি। মুসলিমদের মন ও জীবন থেকে পাশ্চাত্য চিন্তাসমূহের প্রভাবকে দূর করতে হবে। এজন্য ‘শরীআহ’র উন্নয়ন’, ‘শরীআহ’র আধুনিকায়ন’, ‘যুগের চাহিদা পূরণে শরীআহ’র নমনীয়তা’ (পাশ্চাত্যের ধারণা অনুযায়ী) এবং ‘জীবন থেকে দ্বীনের পৃথকীকরণ’, ‘দ্বীনের মধ্যে কোনো রাজনীতি নেই,’ ‘এই বিষয়টি প্রত্যাখ্যাত নয় যে, সময় ও স্থানের সঙ্গে হুকুম পরিবর্তিত হয়’ প্রভৃতি ধারণার ভিত্তিতে গড়ে উঠা চিন্তাগুলোকে প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমে উদ্দেশ্য অর্জন করতে হবে। এসমস্ত শ্লোগান দূর করার পাশাপাশি দলটিকে বিকল্প চিন্তাভাবনা প্রোথিত করতে হবে যেগুলো ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল’ এর ভিত্তিতে এবং এ থেকেই উৎসারিত।

শরীয়াহ থেকে স্পষ্টভাবে জানা যায় যে ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল’ এই কথাটি জ্ঞান ও কর্মের দিকে দিয়ে ততক্ষণ পর্যন্ত বিশুদ্ধ হবেনা যতক্ষণ না অন্যসব চিন্তাকে পরিত্যাগ করা হচ্ছে। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) বলেন;

“যারা গোমরাহকারী তাগুতদেরকে মানবে না এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল যা ভাঙ্গবার নয়।”
(আল কুরআন ২:২৫৬)

প্রথমে আল্লাহ তাগুতের সঙ্গে কুফর (অস্বীকার) করতে বললেন, যাতে কুফর বা শিরকের কোনো ছাপ অন্তরে না থাকে এবং তারপরে বিশুদ্ধ অবস্থায় অন্তরে ঈমান আসে যাতে তার অবস্থা এমন হয় যে ব্যক্তি কোনো বিশ্বস্ত হাতকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরেছে। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) বলেন:

“জেনে রাখুন (হে মুহাম্মাদ), আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই।”
(আল কুরআন ৪৭:১৯)

‘কোনো ইলাহ নেই’ এর অর্থ হচ্ছে জ্ঞানার্জন ও চিন্তাভাবনার মাধ্যমে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে যে ইলাহ কেবলমাত্র একজনই রয়েছেন যার একক আনুগত্য করতে হবে। এছাড়া তিনি (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) যখন বলেন, 

‘আল্লাহ ছাড়া’ তখন এর মানে হচ্ছে ইলাহ হিসেবে একমাত্র আল্লাহকে মেনে নেওয়া। এটি এককভাবে আল্লাহকে ইলাহ হিসেবে মেনে নিতে এবং অন্য সবাইকে প্রত্যাখ্যান করতে বলে। আরবি ভাষায় এটি হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী ধরনের দৃঢ়তাসূচক বাক্য যাকে এখানে ‘সীমিত করা’ অর্থে বুঝানো হয়েছে। ফলে সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও দেশাত্মবোধের চিন্তা আমাদেরকে রক্ষা করতে পারবে না অথবা এগুলো কোনো সঠিক চিন্তাও নয়। বরং এগুলো হচ্ছে নষ্ট ও ভ্রান্ত চিন্তা। এগুলো মানুষের শান্তি নিশ্চিত করতে পারে না বরং দুর্দশা বয়ে আনে। আল্লাহর দ্বীন ও শরীআ’হ ব্যতীত হিদায়াত, আলোকিত পথ ও নিরাময়কারী অন্যকিছু নেই।

দলের কর্মীদেরকে ইসলামী ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তাদেরকে সঠিক ইসলামী বৈশিষ্ট্য (criteria) শেখাতে হবে, শরীআহ’র আনুগত্যের প্রতি ভালোবাসা এবং এর সঙ্গে বিরোধপূর্ণ বিষয়ের প্রতি ঘৃণা দ্বারা এদের অন্তরকে পূর্ণ করতে হবে এবং কোনো সিদ্ধান্তের জন্য এর দিকে ফিরে আসার প্রতি ভালোবাসা এবং অন্যকিছুর দিকে ফিরে যাওয়ার প্রতি ঘৃণা দ্বারা এদের অন্তরকে পূর্ণ করতে হবে। ফলে কোনো বিষয় বুঝার ক্ষেত্রে তারা যেন শরীয়াহ’র বৈশিষ্ট্য (criteria) ও চিন্তা দ্বারা পরিচালিত হয় এবং তাদের প্রবৃত্তিসমূহ ইসলামের অনুগামী হয়। ইসলাম যা পছন্দ করে তারা যেন তা পছন্দ করে এবং ইসলাম যা ঘৃণা করে তারা যেন তা ঘৃণা করে।

এই বিকাশক্রিয়ার (culture) দ্বারা শাবাবদেরকে গড়ে তোলার জন্য দলটিকে বিভিন্ন পাঠচক্র আয়োজন করতে হবে যাতে এর শাবাবরা নেতৃত্বের জন্য এবং বাস্তবিক ক্ষেত্রে দাওয়াতের জন্য প্রস্তুত হতে পারে যার ফলে লোকজন সেসব চিন্তাকে গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ হবে। দলটি চিন্তার সাহায্যে বাস্তবতাকে বুঝবে এবং শাবাবদের কাছে সেই বুদ্ধিবৃত্তিক প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করবে যার মাধ্যমে সে চিন্তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে। এটা তখন শাবাবদের জন্য পথনির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে কীভাবে বাস্তবতা নিয়ে ভাবতে হয় এবং কীভাবে বিভিন্ন বুদ্ধিবৃত্তিক সংজ্ঞা যেগুলো বাস্তবতার ব্যাখ্যাদানকারী এবং মানাত যার উপরে শরঈ হুকুম প্রযোজ্য হবে সেগুলো নির্ধারণ করা যায়। দলটি যখন চিন্তা, প্রবৃত্তি, জৈবিক চাহিদা, পুনর্জাগরণ, সমাজ, সংস্কৃতি ও সভ্যতা প্রভৃতি বিষয়কে সংজ্ঞায়িত করে তখন সে তা এজন্য করে যাতে সে এগুলোর বাস্তবতা বুঝতে পারে, কারণ এসব বিষয়ের সঙ্গে অনেক শরঈ হুকুম জড়িত।  

শর’ঈ দলীল থেকে শর’ঈ হুকুম বের করার জন্য দলটি প্রচেষ্টা নিবে। বাস্তব সমস্যার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন বিষয় সে বের করবে এবং সেগুলোর সমাধান দিবে। এজন্য দলটিকে সেসব বিষয়ের প্রত্যেকটাই গ্রহণ করতে হবে যেগুলোর মাধ্যমে সে শর’ঈ গ্রন্থসমূহ বুঝতে এবং দলটি নিজের জন্য প্রয়োজনীয় আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার হুকুম বুঝতে সক্ষম হবে। ইসতিদলাল (হুকুম বের করা) এর পদ্ধতি স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করতে হবে দলটিকে যাতে এর শাবাব ও মুসলিমগণ তা শিখতে পারে এবং শরীয়াহ’কে বোঝা ও আহকাম বের করার সঠিক ইসলামী পদ্ধতি তারা অনুধাবন করতে পারে। 

গ্রহণকৃত বিকাশক্রিয়া (culture) শাবাবদের কাছে পৌঁছানোর জন্য দলটিকে সবোর্চ্চ প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে যাতে বিষয়টি যেন ব্যবহারিকভাবে বাস্তবায়িত হয়। কারণ নিছক জ্ঞানার্জন, তথ্যবহুল হওয়া অথবা শাবাবদেরকে প্রচণ্ড শিক্ষিত করে তোলা এক্ষেত্রে উদ্দেশ্য নয়। বরং এসব চিন্তাভাবনার উদ্দেশ্য হচ্ছে বৃদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামের সূচনা করা এবং উম্মাহর মধ্যে এসব চিন্তাকে বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করা যাতে এগুলোকে উপস্থাপনকারী একটি কর্তৃপক্ষ সে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। 

এসব বিকাশক্রিয়াকে (culture) বিস্তারিত ও ব্যবহারিকভাবে যথার্থ উপায়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য দলটিকে চেষ্টা করতে হবে। কথা ও কাজের মধ্যে গরমিল করা যাবে না। কারণ দলটি যদি সত্যের শিক্ষা দেয় কিন্তু বিপরীত কাজ করে তাহলে তাতে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার ক্রোধের উদ্রেক ঘটাবে।

গ্রহণকৃত বিকাশক্রিয়ার (culture) আলোকে শাবাবদেরকে গড়ে তুলতে হবে এবং এসব চিন্তা তাদের অন্তরে বদ্ধমূল করে দিতে হবে। ইসলামের মৌলিক চিন্তাসমূহ গ্রহণ করার পরে উম্মাহর মধ্যে এগুলোকে ছড়িয়ে দিতে হবে যাতে ওয়াঈ আম (সাধারণ সচেতনতা) এর ভিত্তিতে ফিকরাহ (চিন্তাভাবনা ও ধ্যানধারণা) এর জন্য রায় আম (জনমত) গড়ে ওঠে। আক্বীদাহ’র চিন্তাভাবনাসমূহ এবং উম্মাহর সঙ্গে সম্পৃক্ত শর’ঈ হুকুমের মৌলিক নীতিমালাসমূহ এমনভাবে গ্রহণ করতে হবে দলটিকে যাতে তা উম্মাহকে একটি লক্ষ্যের উপরে এক করে যা হচ্ছে আল্লাহর শরীআহ’র সার্বভৌমত্ব। এভাবেই উম্মাহ সঠিক পথে যাত্রা শুরু করবে এবং নিজের ব্যক্তিত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য পুনরায় অগ্রসর হবে যা সে অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছে।

এসব মৌলিক চিন্তা এবং শরঈ হুকুমের মৌলিক নীতিমালার ফলে আইন প্রদান ও ইবাদাতের বিষয়টি কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই সংরক্ষিত হবে এবং অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকার কেবলমাত্র রাসূল (সা)-এর জন্যই সংরক্ষিত হবে। এসব মৌলিক বিষয় লোকজনের মধ্যে জান্নাতের আগ্রহ ও জাহান্নামের ভয় সৃষ্টি করবে এবং তাদেরকে এটা বুঝতে সাহায্য করবে যে ইসলামের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অন্যতম একটি ফরয হচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা; কারণ এর উপরে অনেকগুলো ফরয নির্ভরশীল। এতে উম্মাহ বুঝতে পারবে যে অন্যসব লোকের বাইরে তারা একটি উম্মত এবং কোনো বংশ বা রাষ্ট্রের সীমানা তাদেরকে পৃথক করতে পারেনা। মুসলিমরা একটি ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ যাকে কোনো জাতীয়তাবাদী বা দেশাত্মবোধক বন্ধন ছিন্ন করতে পারে না। আল্লাহর শরীয়াহ’র প্রতি অবহেলার ফলেই মুসলমানরা বর্তমানে অপমানিত ও লজ্জিত অবস্থায় রয়েছে। মুসলিমদেরকে তাদের রবের শরীয়াহ’র আনুগত্য করতে হবে এবং দলীল না জেনে তাদের পক্ষে কোনো কাজ করা উচিত হবেনা।

ইসলামী হুকুমতের অস্তিত্বে আসা এবং তাতে ফলধারণের জন্য এসব চিন্তা উর্বর ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে।

যেসব বিষয় আমরা উল্লেখ করেছি তার সবগুলোই দলের বিকাশক্রিয়ার (culture) অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। শরীয়াহ’র নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে একটি উপযুক্ত রাস্তা তৈরি করা যাতে আমরা চিন্তাভাবনাগুলোকে নির্ধারণ করতে পারি এবং সেই ভিত্তি ঠিক করতে পারি যার আলোকে এসব বিকাশ প্রক্রিয়াসমুহ (culture)  গ্রহণ করা হবে।

যথেষ্ট শক্তিশালী চিন্তা, মতামত ও শর’ঈ হুকুম দলটিকে নির্ধারণ করতে হবে যাতে সে নিজেকে বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন ও রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য নিয়ে যেতে পারে এবং দাওয়াতের দায়িত্ব বহনকারীদের মধ্যে পূর্ন মনোযোগের সৃষ্টি করতে পারে। উম্মাহর মধ্যে জনমত গড়ে তোলার জন্যও এসব চিন্তাও প্রয়োজনীয়। দলটি যে ফিকরাহ (ধারণা) এর উপরে প্রতিষ্ঠিত তা উম্মাহকে গ্রহণ করাতে এগুলো কাজে লাগবে।

উল্লিখিত পরিকাঠামো দলটিকে বজায় রাখতে হবে। এই বিষয়গুলো নির্ধারণ করতে যদি দলটি সমর্থ হয় তাহলে মৌলিক বিষয়ের শাখা-প্রশাখা থেকে উদ্ভূত কম গুরুত্বপূর্ণ হুকুমসমূহ নির্ধারণের ক্ষেত্রে সে কিছু ভুল করলে, অথবা অন্যান্য দলের সঙ্গে সে মতভেদ করলে অথবা অন্যান্য দল তার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করলে তা তেমন ক্ষতিকর হবেনা। কারণ এটি একটি অপরিহার্য এবং অনিবার্য বিষয়।

আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার শরীআহ’র সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত করা এবং বিশ্বের বাকি অংশে দাওয়াতকে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য অর্জনের জন্য এসমস্ত বিকাশক্রিয়া (culture) দলটির জন্য অপরিহার্য। প্রকৃতপক্ষে সফলতা দেয়ার মালিকতো কেবলমাত্র আল্লাহ সুবহানাাহু তায়ালা। 

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply