দলটি শরী’য়াহ’র উৎস সুনির্দিষ্ট করবার পর কীভাবে এসব উৎস থেকে শরী’য়াহ গ্রহণ ও এগুলোকে ব্যবহার করবে তা উপলদ্ধি করবে। অন্য কথায়, এটি এমন নীতিমালা (কাওয়া’ইদ) বুঝার দিকে মনোনিবেশ করবে যেগুলোর মাধ্যমে একজন উৎস থেকে আহকাম বের করে নিয়ে আসতে পারে। এটা নিঃসন্দেহাতীত যে, যখন একজন ইসলামী চিন্তাবিদ একটি শরী’য়া হুকুম বের করবার জন্য মনস্থির করে তখন তার মনে উসুলের নীতিমালাসমূহ থাকে যেগুলোর ভিত্তিতে সে একটি হুকুম প্রণয়ন করে। এমন কোন জ্ঞান নেই যার কোন মূলনীতি নেই, হতে পারে সেটি লিখিত অথবা অলিখিত।
শরীয়া যে কোন বর্ণণা হতে পারে আম বা সার্বজনীন, খাস বা সুনির্দিষ্ট, মুজমাল বা সংক্ষিপ্ত, মুফাসসাল বা বি¯তৃত, মুতলাক বা চূড়ান্ত, মুক্বায়েদ বা সীমিত, আওয়ামীর বা নির্দেশ, নাওয়াহী বা নিষেধাষ্ণা, মাফহুম আল মুয়াফাক্বাহ বা সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থ, মাফহুম আল মুখালাফাহ বা বিপরীতার্থক অর্থ, মানতুক বা প্রকাশিত অর্থ, মাফহুম বা অপ্রকাশিত অর্থ, বর্ণিত বিষয়ের মা’কুল বা যুক্তি, খবর আল ওয়াহিদ বা একক বর্ণণা এবং কখন তা দলিল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে আর কখন যাবে না ও এরকম অনেককিছু। দলটি তার আইনগত মূলনীতিকে চূড়ান্ত করবে, গ্রহণ করবে এবং অন্যদের কাছে উপস্থাপন করবে।
উল্লেখিত ঊসুলের মূলনীতিসমূহের অধিকাংশই বিতর্কিত। এটা সর্বজনবিদিত যে, প্রতিটি মূলনীতির আবার অনেক শাখা প্রশাখা রয়েছে। যেহেতু এগুলো বিতর্কিত সেহেতু এগুলোকে বিতর্কিত অবস্থা থেকে দূরে রাখতে হবে। দলটি যা সঠিক মনে করে এর ভিত্তিতেই এগুলো করতে হবে। উসুলের মূলনীতি বুঝবার পর শাখাসমূহ মূলনীতি অনুসারে উপলদ্ধি করা যায়।
উসুল ও এর মূলনীতি সম্পর্কে জানবার পর দলটি শরীয়াকে এর উৎস থেকে বুঝবার মত সক্ষমতা অর্জন করবে। এর পর ইজতিহাদের পরিচিত পদ্ধতি ব্যতিরেকে আর কিছু গ্রহণের কোন সুযোগ দলটির নেই। এটিই দলটিকে অন্যদের থেকে আলাদা করবে। আর এটাকে দলটি তার শাবাবদের বিকশিত (Culturing) করবার মাধ্যমে লোকদের কাছে নিয়ে যাবে। আর এটিই প্রথম জিনিস যার উপর দলটি প্রতিষ্ঠিত হবে।
অবশ্যই একজন মুজতাহিদের কাজ অনেকটা ডাক্তারের মত। প্রথমে তাকে রোগীর হাল, তবিয়ত সম্পর্কে জানতে হবে এবং তার অবস্থা বর্ণণা করতে হবে। অতপর তিনি রোগীর ভাষ্য অনুসারে মৌলিক অসুস্থতা নির্ণয় করবেন এবং এক্ষেত্রে অন্যান্য উপসর্গ দ্বারা বিভ্রান্ত হবেন না। অতপর তার শিক্ষা অর্জনের সময়কার জ্ঞানের শরণাপন্ন হবেন এবং এমন বইপত্রের দ্বারস্থ হবেন যেগুলো তাকে সমাধান বের করবার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। এরপরই তিনি সমাধান তথা ঔষধ দিবেন। অন্য কথায়, তিনি বর্ণিত বিষয়ের সাহায্য নিয়ে সমাধানটি বিধৃত করবেন। যদি কোন দল পরিবর্তন চায় এবং এটি ইসলামী হয় তাহলে অবশ্যই তারা ইসলামের ভিত্তিতে পরিবর্তনের জন্য কাজ করবে। পরিবর্তন অবশ্যই শরীয়া দলিলের ভিত্তিতে হতে হবে এবং কোন ব্যক্তিগত খেয়ালখুশী, মতামত, যৌক্তিকভাবে প্রাপ্ত সুবিধাদি, বাস্তবতা বা অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নয়। বরং একমাত্র শরী’য়াহই হবে যা দলের জন্য হুকুম শরীয়াহকে নিয়ন্ত্রন করবে। মুসলিমদের স্বার্থ শরী’আহ দ্বারা সংজ্ঞায়িত; কারণ শরীয়াহ একে সংজ্ঞায়িত করেছে। একারণে মাসলাহাহ বা স্বার্থের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে একটু বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা অত্যন্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।