শরী’য়াহর উৎস

যেহেতু প্রতিটি হুকুমকে একটি সঠিক উৎস থেকে আসতে হবে সেহেতু উৎস অধ্যয়ন করবার পর সে সম্পর্কে যথার্থ উপলদ্ধি তৈরির পরই তা গ্রহণ করতে হবে। এটা সর্বজনবিদিত যে, ইসলামি আইনের প্রধান উৎস হল কুরআন ও সুন্নাহ, যেগুলোর ব্যাপারে কোনরূপ মতানৈক্য নেই। লদ্ধ উৎসসমূহ হল, ইজমা, ক্বিয়াস, ইসতিহসান (আইনগত প্রাধান্য), মাজহাব আস সাহাবা (সাহাবীদের মতামত), শা’রা মান কাবলানা (পূর্ববর্তীদের শরীয়াহ), এ সবগুলোর ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে । উৎস সম্পর্কে অন্তর্নিহিত দৃষ্টিভঙ্গি দলের শরীয়া গ্রহণ সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়।  

এটা সর্বজনবিদিত যে, লদ্ধ উৎসসমূহ নির্ভর করে সুনির্দিষ্ট প্রমাণাদির উপর। সুতরাং, যদি কোন কিছু চূড়ান্তভাবে শরীয়ার উৎস হিসেবে পরিগণিত হয়, তাহলে এটাকে কোরআন ও সুন্নাহ থেকে আসতে হবে। অন্য কথায়, দু’টি প্রধান উৎস অন্য একটি বিশেষ উৎসকে গ্রহণের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে। শরীয়া উৎস তাক্বলীদের মাধ্যমে গ্রহণ করা যথেষ্ট নয়। শরীয়া উৎস মৌলিক বিষয়, এবং একারণে এগুলোকে চূড়ান্ত হতে হবে এবং আমরা জানি তাক্বলীদ নিশ্চয়তার দিকে পরিচালিত করে না।

উৎস সুনির্ধারিত হবার পর আমরা বুঝতে পারব জলের কোন ধারা থেকে তারা পান করতে পারবে এবং পারবে না। উৎসকে সংজ্ঞায়িত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা উৎস নির্ধারণে একটি ভুল হলে পুরো হুকুমের মধ্যে গলদ চলে আসবে। শরীয়া উৎস সংজ্ঞায়িত হবার পর দলটি তার কাজের সাথে বিজড়িত শরীয়া হুকুম অবরোহণ করবে। শরীয়া উৎস নির্ধারণ না করে দাওয়াতের কাজ করা যে কোন দলের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।

ভাল মনে করে সব লদ্ধ শরীয়া উৎস গ্রহণ করাও গ্রহণযোগ্য নয়। যদি দলটি এরকম কিছু করে তাহলে তারা ভাল ও মন্দ দু’টোই গ্রহণ করবে। এতে করে শরী’আহ বাস্তবতা, মানুষের মন, প্রবৃত্তি, আবেগ ও স্বার্থের কাছে দায়বদ্ধ হয়ে যায়। এমতাবস্থায় দলিল সমূহ কেবলমাত্র এইসব লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যই ব্যবহার করা হয় এবং শরী’য়াহর দাবীর বিপরীতে অবস্থান নেয়।

নীতিগতভাবে, বাস্তবতা পরিবর্তনের জন্য মতামত প্রদানের আগে দলটিকে অবশ্যই উৎসসমূহ সুনির্দিষ্ট করা উচিত। উৎসের ক্ষেত্রে কখনওই বাস্তবতা দ্বারা প্রভাবিত হওয়া চলবে না। বরং উৎসসমূহকে প্রতিষ্ঠা অথবা ভুল প্রমাণ করবার জন্য কেবলমাত্র নাজিলকৃত ওহী ও এদের চূড়ান্ত নির্দেশনা দ্বারা প্রভাবিত হওয়া উচিত। তাছাড়া যেসব উৎসকে দলটি প্রতিষ্ঠিত করবে সেগুলোকে তার নিজের জন্য উসুল হিসেবে গ্রহণ করবে এবং অন্যদের এ ব্যাপারে বাধ্য করবে না। বরং তারা অন্যদের সাথে প্রমাণ ও উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে তাদের কাছে চূড়ান্ত বলে বিবেচিত মতামত নিয়ে আলোচনা করবে। যদি দলটি নিজেদের উৎসকে অন্যদের জন্য বাধ্যতামূলক ভাবে, তাহলে সেটি তাদের এবং অন্যদের সমস্যার কারণ হবে।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply