দ্বীন প্রতিষ্ঠার সাথে সম্পর্কিত সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ সংক্রান্ত দায়িত্ব বহন শরী’আহ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় জ্ঞানভিত্তিক হতে হবে। এটি একারণে যে, আমরা ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি জ্ঞান ছাড়া কোন কাজের মূল্য নেই এবং জ্ঞান ও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার প্রতি আন্তরিক সদিচ্ছা ছাড়া কোন ইবাদতের মূল্য নেই।
সুতরাং দলের জন্য প্রয়োজনীয় শরীয়া জ্ঞানের সীমা কতটুকু? কোন বিকাশ প্রক্রিয়ার (culturing process) মাধ্যমে দলটি গঠিত হবে এবং কিসের ভিত্তিতে এর শাবাবগন ও উম্মাহ তৈরি হবে?
উপযুক্ত শরীয়া জ্ঞানের ভিত্তিতে সৎ কাজের আদেশ প্রদান ও অসৎ কাজের নিষেধ সংঘটিত হয়, যা দলটিকে গ্রহণ করতে হবে। যদি দলটি এমন কিছু গ্রহণ করে যা শরী’আর সাথে সাংঘর্ষিক, তাহরে সে ব্যাপারে সদুপদেশ দিতে হবে। যদি বিচ্যুত হয় তাহলে সংশোধন করতে হবে। যে শরীয় বাধ্যবাধকতা দলটির জন্য বাধ্যতামূলক তা অন্যদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মূল বিষয় হল গ্রহণ ও অনুসরণ, বিচ্যুতির কোন সুযোগ নেই। উপদেশ প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রত্যেকের জন্য আসা উচিত।
এ পর্যায়ে এটা বলে রাখতে হবে যে, যে কোন শরীয় হুকুম বের করবার জন্য রয়েছে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি, এটা হতে পারে দাওয়াত, ইবাদত (উপাসনা), মু’আমালাত (লেনদেন), উকুবাত (শাস্তি), মাত’উমাত (খাদ্যদ্রব্য), মালবুসাত (পরিচ্ছদ) অথবা আখলাক (নৈতিকতা)…..
মুসলিমদের প্রজ্ঞা বা বুদ্ধিদীপ্ততার জন্য নয়, বরং ইসলাম এবং এর প্রকৃতির দ্বারা এই সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিটি নির্দেশিত হয়েছে। এটা এ কারণে যে, ইসলামী আক্বীদার নির্দেশ হচ্ছে, একজন মুসলিম শরীয়ার বাইরে থেকে একটিমাত্র হুকুমও গ্রহণ করবে না। কিতাবের (shariah text) সিন্ধান্তঅনুযায়ী যে সীমারেখা টানা আছে তাকে অবশ্যই সে সীমারেখার মধ্যে অবস্থান করতে হবে। সুতরাং ইসলামের এমন পদ্ধতি থাকা দরকার যা এই নির্দেশনাকে সুরক্ষা দিবে, উপলদ্ধিকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রন করবে যাতে যা নাজিল হয়েছে তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, যাতে এর আক্বীদার দৃষ্টিভঙ্গি ফিকহের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং এর শর্তসমূহ হচ্ছে সমন্বিত।
ইজতিহাদের এই সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, তা দলের বিকাশের (culturing process) সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকা উচিত। এই পদ্ধতি আইন অবরোহনের ক্ষেত্রে নির্দেশনা প্রদান করে। যদি অবরোহণের পদ্ধতি সঠিক হয় তাহলে এমন শরীয়া হুকুম পাওয়া যাবে যেখানে সবচেয়ে কম সন্দেহ থাকবে এবং একজন এর জন্য পুরষ্কৃত হবে। অন্যথায় সঠিক শরীয়া পদ্ধতির ভিত্তিতে গড়ে না উঠা মতামত শরীয়া মতামত বিবেচিত হতে পারে না, যদিও বা কেউ ভুলভাবে একে শরীয়া মতামত বলে আখ্যা দিতে পারে। এর কারণ হলো, বিবেচ্য বিষয় নাম নয়, বরং বাস্তবতা। সুতরাং এটা বাধ্যতামূলক।
অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে আজকে এ পদ্ধতির অনুসরণ করা বড়ই প্রয়োজন। এটা মুসলিমদের পশ্চিমা চিন্তাধারা ও এর পদ্ধতি দ্বারা প্রভাবিত হওয়া থেকে বিরত রাখবে। এটা এ সময়ের একটি ব্যধি যা দ্বারা অনেকে আক্রান্ত হয়েছে। আর এদের একটি অংশ হল উলেমাগণ। এ কারণে তাদের ইজতিহাদ ও ফতওয়া মূল নিয়ন্ত্রক (dawaabit (regulators)) থেকে অনেক দূরে, যেখানে তারা ঐশী নির্দেশনার দাসত্ব না করে পশ্চিমা খেয়ালখুশীর দাসত্ব করে।
সুতরাং শরীয়ার দৃষ্টিতে ইজতিহাদের একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে এবং এর উপর মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে যদিও তাদের ইজতিহাদ ভিন্ন হতে পারে। এখানে আমরা বিষয়টি সার্বজনীনভাবে উপস্থাপন করব। এটা সালাফ বা পূর্ববতীর্দের পদ্ধতি ছিল, একই ধারায় ক্বিয়ামতের আগ পর্যন্ত খালাফ বা পরবতীর্দেরও এবং তার পরবতীর্দেরও পদ্ধতি হিসেবে থাকবে।