কিছু মুসলিম মনে করে, (আনুষ্ঠানিক) ইবাদত করাটাই হলো প্রয়োজনীয় কাজ; ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা নয়

তারা আরও বলে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) লোকদের আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার প্রতি ইবাদতের দিকে আহ্বান করেছেন, কিন্তু ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে নয় অথবা আল্লাহর প্রতি ইবাদত হল কেন্দ্রীয় ইস্যু, ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নয়; কিংবা ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা জরুরী নয় যতটা জরুরী আল্লাহর ইবাদত করা। তাদের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে তারা এ জাতীয় আরো কিছু কথা বলে থাকে ।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অবশ্যই ইবাদতের বাস্তবতাকে সংজ্ঞায়িত করব এবং দেখাব কীভাবে তা অর্জন করতে হয়।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মানুষকে ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং মানুষকে সৃষ্টির অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হল ইবাদত করা। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ এর অর্থ হল, আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। আর এ কথার ব্যতিক্রম যে কোন কিছুই মিথ্যা ও অবশ্যই পরিত্যাজ্য এবং মানুষ এ ব্যাপারে অবশ্যই সাক্ষ্য দেবে। “Muhammad Rasoolullah”, means that the worship and obedience should be according to what only Muhammad (SAW), the Rasool of Allah, has brought and man must testify to this.

সুতরাং, ইবাদাহ বা উপাসনা হল কেবলমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার জন্য। আর এটা ততক্ষণ পর্যন্ত করা যাবে না যতক্ষণ না আল্লাহ সে ব্যাপারে নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা) তা প্রদর্শন করেছেন। আর এ বাণীটি আমাদের জীবনে যে কোন কথা ও কাজে মনে রাখতে হবে।

যখন একজন মুসলিম তার বাস্তবতায় নিজের কোন চাহিদা মেটাবার জন্য বা কোন মূল্যবোধের তাগিদে কোন কাজ করে তখন সে কেবলমাত্র তার চাহিদা ও প্রবৃত্তিকে সন্তুষ্ট করবার উদ্দেশ্য নিয়ে অগ্রসর হয়, এবং যা সম্পন্ন করা যায় একাধিকভাবে। 

শরীয়াগত পদ্ধতিতে এ চাহিদা পূরণ করা এবং এ সীমার মধ্যে অবস্থান করা ও এ কাজকে আল্লাহর বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কযুক্ত করার নামই হল ইবাদত।

প্রতিটি কাজের পিছনে কাজ করে ইচ্ছা ও চাহিদার সন্তুষ্টি, আর মানুষের প্রয়োজন নানাদিকের সাথে সম্পর্কযুক্ত, এটা সহজাত যে তার এ ক্রিয়াকলাপ জীবনের সবদিকই আচ্ছাদিত করে।

সুতরাং ইবাদত হল সে কাজ যা মানুষ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার আদেশ ও নিষেধ মেনে করে থাকে এবং এটা কেবলমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার প্রতি ঈমানের ভিত্তিতে হতে হবে। আর এর মাধ্যমেই ইবাদতের পূর্ণাঙ্গতা নিশ্চিত হয় এবং এ ইবাদত মানুষের সব কাজকে বেষ্টন করে।

কাউকে ‘আল্লাহর উপাসনা’ করতে বলার অর্থ কেবলমাত্র সালাত আদায়, যাকাত প্রদান, হজ্জ সম্পাদন বা ফকীহগন যেগুলোকে ইবাদত বলে সংজ্ঞায়িত করেছেন সেগুলো করা বুঝায় না, বরং সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ মেনে চলার নামই হল ইবাদত।

সুতরাং যে কোন কাজের মূল হল আল্লাহর প্রতি ঈমান। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের দিকে সব কাজকে ধাবিত করার জন্যই ইবাদত। সুতরাং পুরো দ্বীন হল ইবাদাহ এবং ইবাদাহ অর্থ হল সমর্পণ করা। আর আল্লাহর কাছে মানুষকে সমর্পণ করবার অর্থ হল তার ইবাদত করা, তার আদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা, তাকে সর্বজ্ঞ ও সর্বসচেতন হিসেবে মেনে নেয়া, সন্তুষ্টির সাথে সর্বান্তকরণে তার কাছে আত্মসমর্পণ করা।

সেকারণে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার ইবাদত করা ও তাঁকে মান্য করবার অংশ হল সালাত আদায়, যাকাত প্রদান ও ক্বিয়াম বা রাত জেগে ইবাদত করবার পাশাপাশি সৎ কাজের আদেশ প্রদান করা ও অসৎ কাজে নিষেধ করা, কুফর ও নিফাক (মুনাফেক) এর বিরুদ্ধে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে অংশগ্রহণ করা, মুসলিমদের জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করা, সব লোকদের কাছে দাওয়াতের প্রসার ঘটানো এবং মুসলিমদের সুরক্ষা প্রদান করা।

আল্লাহর প্রতি উপাসনার মধ্যে মানুষের সব কাজই অন্তর্ভুক্ত যা মানুষ তার বাস্তবতা অনুসারে পালন করে থাকে। যদি এমন হয় কোন মুসলিম সালাত আদায় করছে না, তাহলে তখন সালাতের দিকে আহ্বান করা হল ইবাদত। একইভাবে সাওম পালনের জন্য আহ্বান করা ইবাদত, শরী’আহ অনুযায়ী ক্রয় বিক্রয় করবার আহ্বান জানানোর নামও ইবাদত। আল্লাহর প্রতি ঈমানই হল সব ইবাদতের মূল। সেকারণে কাউকে যখন সালাত আদায় বা সাওম পালনের দিকে আহ্বান জানানো হয় তখন যাকে আহ্বান করা হয় তার ঈমানী চেতনাকে আগে জাগ্রত করতে হবে এবং এই ঈমানকে কাজের প্রতিশ্রুতি ও নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিণত করতে হবে।

একইভাবে লোকদের ইসলাম প্রতিষ্ঠা ও আল্লাহ যা নাজিল করেছেন তা দিয়ে শাসন করবার দিকে আহ্বান করাও আল্লাহর নির্দেশ এবং এগুলো আমাদের মানতে হবে। এগুলো সে-ই পালন করবে যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার উপর বিশ্বাস স্থাপন করে। সে কারণে এগুলোর দিকে আহ্বান করার আগে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের দিকে আহ্বান করতে হবে। এভাবে এ ব্যাপারে আল্লাহসুবহানাহু ওয়া তা’আলার ইবাদত উপলদ্ধি হবে।

মুসলিমরা আজকাল কুফরী ব্যবস্থার মধ্যে বসবাস করে যার হুকুমসমূহ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছ থেকে উৎসারিত নয় এবং এর মধ্যে থেকে তারা ইসলামী জীবনব্যবস্থা চর্চা করতে পারে না। এমতাবস্থায় দ্বীন প্রতিষ্ঠার আহ্বান অবশ্যই আল্লাহর ইবাদতের দিকে দাওয়াত দেয়া বুঝায় এবং এ দিকেই মনোযোগ আকর্ষণ করা ও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

সুতরাং আমাদের যুগের সমস্যার সাথে আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বানকে সম্পর্কযুক্ত করতে হবে। আর এটি প্রতিফলিত হয় যখন ইসলামি জীবনধারা পূণপ্রবর্তনের দিকে কেউ আহ্বান করে।  কেবলমাত্র তখনই আল্লাহর ইবাদত পূর্ণাঙ্গরূপে করা সম্ভবপর হবে। সুতরাং ইসলামী রাষ্ট্র বাস্তবায়নের দিকে আহ্বানের অর্থ হল দ্বীন প্রতিষ্ঠার দিকে আহ্বান করা যা একটি ইবাদত এবং এ দাওয়াতও একটি ইবাদতের দিকে আহ্বান। কারণ এটি আল্লাহসুবহানাহু ওয়া তা’আলার একটি হুকুম যার প্রতি আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আল্লাহর ইবাদতের ব্যাপারে আত্নতুষ্টি থেকে কোন মুসলিম এটাকে অবহেলা করে। সুতরাং বিভিন্ন লোক কতৃক এ বিষয়টি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা সঠিক নয়। কারণ তারা এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যে, খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা আল্লাহর ইবাদতের সাথে সাংঘর্ষিক। আর এ ধরনের মন্তব্য করা বা দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা কুরআনের একটি অংশের উপর আক্রমণের নামান্তর এবং এটা করা হারাম।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply