তরীকাহ (পদ্ধতি) এবং উসলূব (ধরন)

এখন যে প্রশ্নটি উত্থিত হয়, তা হল, রাসূলুল্লাহ (সা) মক্কায় যা বলেছিলেন এবং করেছিলেন তা কি ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কিনা এবং একারণে এটা মানতে আমরা বাধ্য অথবা এমন কোন কাজ বা কর্ম করেছেন কিনা যা ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয় এবং যেগুলো একজন অনুসরণ করতে বাধ্য নয়?

এ দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই পদ্ধতি, উপকরণ ও ধরনের প্রশ্ন আসে।

আরেকটি প্রশ্ন উত্থিত হয়, তা হল, পদ্ধতি (যা হল কিছু শর’ঈ হুকুমের সমষ্টি কিন্তু উপকরণ নয়) নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো যাবে কিনা এবং যদি পরীক্ষার পর এটা কোন ফল দেয় তাহলে এটা সঠিক, অন্যথায় নয়?

প্রথম বিষয়টির ক্ষেত্রে

আমরা নিম্নোক্তভাবে বলতে পারি, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মুসলিমদের রাসূলুল্লাহ (সা) কে অনুসরণ করতে বলেছেন অর্থাৎ তিনি যা বলেছেন এবং করেছেন। তিনি সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

‘এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। এটি ওহী, যা প্রত্যাদেশ হয়।’
(সূরা আন নাজম: ৩-৪)

এবং তিনি বলেন,

” রাসূল তোমাদেরকে যা (‘মা’) দেন তা গ্রহণ কর এবং যা (‘মা’) তিনি নিষেধ করেন তা বর্জন কর ”
(আল কুরআন, ৫৯:৭)

এখানে ‘মা’ শব্দটি সাধারণ অর্থে (সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) ব্যবহৃত হয়েছে। অথার্ৎ রাসূল (সা) আমাদের জন্য কোন কিছু নিয়ে এসেছেন কিন্তু তা আমাদের পালন করা লাগবে না এমন কিছুই নেই; যতক্ষণ না শারী’আহ কোন ব্যতিক্রম নির্দেশ করে।

নির্দিষ্ট রকমের কিছু কথা এবং কাজের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রয়েছে যেসব ক্ষেত্রে রাসূল(সা) কে অনুসরণ না করলেও চলে বলে প্রমাণ রয়েছে। যেমন:

– রাসূলুল্লাহ (সা) নিম্নের হাদীস:

‘দুনিয়াবি বিষয়ে তোমরা আমার চেয়ে বেশী জ্ঞান রাখ।’

সুতরাং দুনিয়াবি বিষয়, যেমন: কৃষি, উৎপাদন, আবিষ্কার, চিকিৎসাশাস্ত্র ও প্রকৌশল ইত্যাদি বিষয়ক technical জ্ঞান ওহীর অন্তর্ভুক্ত নয়। রাসূলুল্লাহ (সা) এর মাধ্যমে আমাদের বুঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, এসব ক্ষেত্রে তিনি যে কোন সাধারণ মানুষের মতই। খেজুর গাছের পরাগায়ন সম্পর্কিত তাঁর ঘটনাটির মধ্য দিয়েই বিষয়টি আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়।

  • কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো একান্তভাবেই তাঁর জন্য এবং অন্য কেউ এ ব্যাপারে অংশীদার নয়। যেমন, তাহাজ্জুদ পড়া তাঁর উপর ফরয ছিল, রাতের বেলাতেও রোযা অব্যাহত রাখা এবং চারের অধিক বিয়ে করবার অনুমতি ছিল। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা) কে অনুসরণ করা অনুমোদিত নয়।
  • যেসব কাজ মানুষ হিসেবে তাঁর স্বাভাবিক প্রবণতা ছিল, যেমন: দাড়ানো, বসা, হাটা, খাওয়া, পান করা ইত্যাদি। এটা নিঃসন্দেহাতীতভাবে সত্য যে, এসবই উম্মাহর জন্য মুবাহ (অনুমোদিত) হিসেবে পরিগণিত।
  • বিভিন্ন শরঈ হুকুম বাস্তবায়নের জন্য রাসূল (সা) উপযুক্ত ধরন (উসলূব) এবং উপকরণ (ওয়াসিলা) ব্যবহার করতেন। শরঈ হুকুম হচ্ছে আল্লাহর হুকুম অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু এই শরঈ হুকুম কিভাবে অর্থাৎ কোন ধরন এবং উপকরণের সাহায্যে বাস্তবায়ন করতে হবে তা একজন মানুষ হিসেবে রাসূল (সা) এর ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেওয়া হয়; যাতে সে ধরন ও উপকরণ বাস্তবসম্মত হয় এবং যদি কোন হারামের দিকে পরিচালিত না করে। 

উদাহরণস্বরূপ, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) যখন বলেন:

“অতএব আপনি প্রকাশ্যে শুনিয়ে দিন যা আপনাকে আদেশ করা হয় এবং মুশরিকদের পরোয়া করবেন না।”
(সূরা আল হিজর: ৯৪)

একটি শরঈ হুকুম যাকে অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু কিভাবে তা বাস্তবায়ন করতে হবে সে বিষয়টিকে শরীয়া স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করেনি। আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) হুকুমের সাথে সামঞ্জস্য রেখে রাসূল (সা) প্রকাশ্যে ঘোষণার কাজটি সম্পাদন করেছিলেন, কারণ এই হুকুমের বিরুদ্ধে যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিলনা। কিন্তু যে উপায়ে তিনি (সা) প্রকাশ্যে ঘোষণার কাজটি সম্পাদন করেছিলেন সেটা তাঁর জন্য বাধ্যতামূলক ছিলনা। অতএব ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাসূলকে (সা) অনুসরণকারী দলের জন্যও এই কাজটি বাধ্যতামূলক নয়। রাসূল (সা) সাফা পাহাড়ের উপরে উঠে লোকদের আহ্বান করেছিলেন, লোকজনকে খাবারের দাওয়াত দিয়েছিলেন, মুসলিমদেরকে সাথে নিয়ে দুটো সারিতে করে কাবা প্রদক্ষিণ করেছিলেন, এগুলো ছিল মূলত শরঈ হুকুম বাস্তবায়নের সাথে সম্পর্কিত কিছু ধরন অর্থাৎ এগুলো ছিল প্রকৃত (আসল) হুকুম ‘প্রকাশ্যে ঘোষণা দান’ এর সাথে সম্পর্কিত কিছু সহায়ক কাজ। নীতিগতভাবে এ জাতীয় ধরনসমূহ অনুমোদিত। বিষয়টিকে শরীয়া স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত না করে  দলের হাতে ছেড়ে দিয়েছে যাতে তারা সবচেয়ে উপযুক্ত ধরনসমূহকে বেছে নিতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) যখন বলেন :

“আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যা কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজেদের শক্তি-সামর্থের মধ্য থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে যাতে আল্লাহ এবং তোমাদের শত্রুদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত করতে পার।”
(সূরা আনফাল: ৬০)

তখন প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য তাঁর এই নির্দেশ হচ্ছে একটি শরঈ হুকুম যার আনুগত্য করতে হবে অর্থাৎ বিষয়টি ফরয এবং এর বিরুদ্ধে যাওয়া হারাম। এই আয়াতে প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তার ইল্ল­হ (শরঈ কারণ) হচ্ছে  শত্রুদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তোলা। কিন্তু উপকরণের(ঘোড়া) বিষয়টি এখানে বাধ্যতামূলক নয়। যেকোন উপকরণ যা এই উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবে সেটাই এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে। জিহাদের জন্য উপযুক্ত উপকরণ যুগের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়ে আসছে। এজন্য শরঈ হুকুম বাস্তবায়নের জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপকরণ বেছে নিতে হবে। জিহাদের জন্য বা আল্লাহর শত্রু এবং  মুনাফিকদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত  করে তোলার জন্য বর্তমান সময়ে প্রয়োজন হচ্ছে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের (শরীয়া নির্ধারিত সীমার মধ্যে)। অতএব শরঈ হুকুম হচ্ছে আল্লাহর হুকুম অর্থাৎ নির্দিষ্ট বিষয়টিতে আল্লাহর সরাসরি মন্তব্য রয়েছে বলে এটিই হচেছ প্রকৃত (আসল) হুকুম। আর ধরন (উসলূব) হচ্ছে  প্রকৃত (আসল) হুকুমকে বাস্তবায়নের সাথে সম্পর্কিত আংশিক হুকুম। এ বিষয়টি হচ্ছে মুবাহ এবং উপযুক্ত ধরনকে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত আমাদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

উপকরণ হচ্ছে সেই বস্তু যার সাহায্যে শরঈ হুকুম বাস্তবায়ন করা হয়। নীতিগতভাবে বিষয়টি মুবাহ (অনুমোদিত) এবং উপযুক্ত উপকরণ বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত আমাদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

অতএব উপরোক্ত ব্যতিক্রমসমূহ এবং এ জাতীয় অন্যান্য বিষয় ছাড়া মতাদর্শ  বা শরঈ হুকুম বাস্তবায়ন সংক্রান্ত অন্য যেকোন বিষয় যা রাসূল (সা) এর সাথে সম্পর্কিত সেটা মক্কায় নাযিল হোক অথবা মদীনায়, সেটা আক্বীদার সাথে সম্পর্কিত হোক অথবা ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত সবকিছুকেই ওহী হিসেবে গণ্য করতে হবে এবং এগুলোকে তা’সী (অনুসরণীয়) বিষয় হিসেবে মেনে নিতে হবে।

যদি কেউ রাসূল (সা) এর মক্কী জীবনের দাওয়াতকে ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করে তাহলে দেখতে পাবে তিনি শরঈ হুকুম হিসেবে বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করেছিলেন যেগুলোকে বর্তমানে বাদ দেওয়ার কোন সুযোগ নেই বরং এগুলোকে অবশ্যই আদায় করতে হবে। অনুরূপভাবে তিনি(সা) এমন অনেক কাজ করেছেন যেগুলোকে উসলুব বা ধরনের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে গণ্য করা যায়। পাশাপাশি তিনি (সা) শরঈ হুকুম বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন উপযুক্ত উপকরণও ব্যবহার করেছেন। অতএব কোন বিষয়গুলো পদ্ধতি (তরীকাহ) এবং কোন বিষয়গুলো ধরন (উসলূব) বা উপকরণ (ওয়াসিলা), এ দু’ধরণের বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য বুঝা প্রয়োজন, যাতে দল বুঝতে পারে কোন বিষয়টি তাকে আবশ্যই পালন করতে হবে এবং কোন বিষয়টি তার সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

পুরো পদ্ধতিকে (তরীকাহ) ধরন হিসেবে গণ্য করার কোন সুযোগ নেই যার ফলে মনে হবে পরিস্থিতির আলোকে দল যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কারণ এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির ফলে পদ্ধতির সাথে সম্পর্কিত শরঈ হুকুমকে তাচ্ছিল্য করা হবে এবং শরঈ হুকুমকে মনগড়া কার্যক্রম দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হবে। বিষয়টিকে আরো ভালভাবে পরিষ্কার করার জন্য নিচে কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো:

– আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন:

“অতএব আপনি প্রকাশ্যে শুনিয়ে দিন যা আপনাকে আদেশ করা হয়”
(সূরা আল হিজর: ৯৪)

প্রকাশ্যে দাওয়াত দেওয়া, আল্লাহর তরফ থেকে রাসূল (সা) এর প্রতি একটি নির্দেশ। এই নির্দেশটি দুটো শরঈ হুকুমকে উপস্থাপন করছে। প্রথমটি হচ্ছে এই আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রকাশ্য দাওয়াতের অনুপস্থিতি এবং দ্বিতীয়টি হচেছ এই আয়াত নাযিল হওয়ার সাথে সাথে প্রকাশ্য দাওয়াতের সূচনা। প্রকাশ্যে দাওয়াতের ঘোষণা দেওয়া বা না দেওয়ার বিষয়টিকে রাসূল (সা) এর ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেওয়া হয়নি। বরং প্রকাশ্যে দাওয়াতের ঘোষণা দেওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম মান্য করা ছিল রাসূল (সা) এর জন্য বাধ্যতামূলক। এটিই হচ্ছে শরঈ হুকুম, যা শরী’আহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে। এই কাজটি করার সিদ্ধান্ত  রাসূল (সা) তাঁর নিজস্ব ইচ্ছার কারণে গ্রহণ করেননি, অতএব এই কাজের অনুসরণ করা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)র এই কথা “যা আপনাকে আদেশ করা হয়” এর মাধ্যমে বুঝা যাচ্ছে বিষয়টি আল্লাহর তরফ থেকে এসেছে।

আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন:

“তুমি কি সেসব লোককে দেখনি, যাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, তোমরা নিজেদের হাতকে সংযত রাখ (যুদ্ধ করা থেকে) এবং সালাত কায়েম কর”
(সূরা আন নিসা: ৭৭)

আবার কাফিরদের দুর্ব্যবহারের জবাবে অস্ত্রের মাধ্যমে তাদের মোকাবেলা করার অনুমতি প্রার্থনা করলে আব্দুর রাহমান বিন আল আওফ (রা)-কে রাসূল(সা) বলেন, “প্রকৃতপক্ষে আমি ক্ষমার জন্য আদিষ্ট অতএব তোমরা লোকজনের সাথে যুদ্ধ করোনা।”
[ইবনে আবি হাতিম,আন-নাসাঈ এবং আল-হাকিম থেকে বর্ণিত]।

পরবতীর্তে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের সময় আল্লাহর তরফ থেকে ওহী নাজিল হয়,

“যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হল তাদেরকে যাদের সাথে কাফিররা যুদ্ধ করে; কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে (মুমিনদেরকে) সাহায্য করতে অবশ্যই সক্ষম।”
(সূরা হজ্জ:৩৯)

উপরোক্ত দলিলগুলো থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে প্রথমে যুদ্ধের অনুমতি ছিলনা, কিন্তু পরবতীর্তে তা দেওয়া হয়; যেহেতু এই অনুমতি আল্লাহর তরফ থেকে দেওয়া হয়েছে, সেহেতু এটি একটি শরঈ হুকুম যার আনুগত্য করা আবশ্যক। স্বেচ্ছায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে রাসূল (সা) সশস্ত্র পন্থা অবলম্বন করা থেকে বিরত ছিলেন বিষয়টি এরকম কিছু ছিলনা বরং বিষয়টি ছিল ওহীর মাধ্যমে নির্ধারিত যার আনুগত্য করা ছিল আবশ্যকীয় কর্তব্য। রাসূল (সা) যেভাবে একাজ করা থেকে বিরত ছিলেন ঠিক তেমনিভাবে তাঁর অনুসরণে নিজেদেরকে বিরত রাখাটা আমাদের জন্যও বাধ্যতামূলক। 

  • অনুরূপভাবে রাসূল (সা) যখন বিভিন্ন গোত্রের নিকট নুসরাহ (খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় বস্তুগত সাহায্য) খুঁজতে  যেতেন তখন তিনি (সা) বলতেন :

“হে অমুক এবং অমুক গোত্র, প্রকৃতপক্ষে আমি আল্লাহর তরফ থেকে প্রেরিত একজন রাসূল। তিনি তোমাদেরকে আদেশ করছেন যাতে তোমরা তাঁর ইবাদত কর এবং এ ব্যাপারে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না কর, তোমরা তাঁকে ব্যতীত অন্য যেসব মূর্তির পূজা কর সেগুলোকে পরিত্যাগ কর, আমার উপর তোমরা ঈমান আন এবং আমাকে তোমরা সুরক্ষা প্রদান কর (অন্য এক বর্ণনায় ‘সমর্থন কর’) যাতে আল্লাহ আমাকে যা দিয়ে প্রেরণ করেছেন তা আমি পৌঁছে দিতে পারি।’
[সীরাতে ইবনে হিশাম]

এই হাদীসের মাধ্যমে রাসূল(সা) পরিষ্কার করে দিচেছন যে বিষয়টি ছিল আল্লাহর তরফ থেকে একটি হুকুম; অর্থাৎ এক্ষেত্রে রাসূল(সা) ওহীর অনুসরণ করছিলেন মাত্র। গোত্রগুলোর কাছ থেকে অসংখ্যবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরও এবং অত্যন্ত রূঢ় ও কর্কশ ব্যবহার পাওয়া সত্ত্বেও নুসরাহ খোঁজার ক্ষেত্রে রাসূল(সা) এর অটল থাকাটাই প্রমাণ করে যে, এ বিষয়টি ছিল আল্লাহর তরফ থেকে একটি হুকুম।

এগুলো হচ্ছে পদ্ধতির সাথে সম্পৃক্ত শরঈ হুকুমের কিছু উদাহরণ। যেসব উপকরণ এবং ধরনের সাহায্যে শরঈ হুকুম বাস্তবায়ন করা হয় সেগুলোকে সুনির্দিষ্টভাবে অনুসরণ করার ব্যাপারে নীতিগতভাবে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। বরং এক্ষেত্রে শরঈ হুকুম বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত ধরন এবং উপকরণ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আমরা স্বাধীন।                                                   

সুতরাং দাওয়াতী কাজের উপযুক্ত লোক করে গড়ে তোলার জন্য রাসূল (সা) মুমিনদেরকে নিয়ে দারুল আরকামে অথবা তাঁদের কারো বাসায় অথবা উপত্যকায় গিয়ে বসতেন এবং তাঁদেরকে ইসলামের শিক্ষায় দীক্ষিত করতেন। একটি শরঈ হুকুম হিসেবে আমাদেরকেও অবশ্যই এই দায়িত্বটি পালন করতে হবে। এবং এ কাজের জন্য উপযুক্ত ধরন প্রয়োগ করতে হবে। এজন্য উপযুক্ত ধরন হিসেবে একদল লোক অথবা কোন পরিবারকে বেছে নিতে হবে যাতে তাদেরকে ইসলামের সুষ্ঠু শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা যায়। তাদের জন্য সাপ্তাহিক একটি সময় নির্ধারিত করতে হবে এবং সেই নির্দিষ্ট সময়ে পরিবার অথবা দলটির নির্দিষ্ট লোকজনকে একত্রে জড়ো হতে হবে। দাওয়াতী কাজে নিযুক্ত তরুণদের মনে যাতে ইসলামের শিক্ষা সুষ্ঠুভাবে গেঁথে দেওয়া যায় সেজন্য উপযুক্ত ধরন বেছে নিতে হবে। এ সমস্ত বিষয়গুলো নির্ধারণের দায়িত্ব আমাদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। দাওয়াতী কাজের উপযুক্ত লোক করে গড়ে তোলার শরঈ হুকুমের বাস্তবতার আলোকে আমরা এ বিষয়গুলো নির্ধারণ করব যাতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।

রাসূল (সা) নিজেকে এবং তাঁর দাওয়াতকে মক্কার বাজারে প্রকাশ্যে উপস্থাপন করতেন। এ কাজটি করার সময় আমাদেরকে উপযুক্ত ধরন বেছে নিতে হবে; যেমন যথার্থ বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে অথবা বিভিন্ন সামাজিক সমাবেশ, উৎসব বা আনন্দ-বেদনার সময় জনগণের কাছে নিজেদের ধ্যান-ধারণাগুলোকে ছড়িয়ে দিতে হবে। বই, ম্যাগাজিন, লিফলেট, ক্যাসেট অথবা সরাসরি কথা বলার মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন করা যায়, এসমস্ত ধরন বা উপকরণের প্রত্যেকটিই জায়েয।

অনুরূপভাবে রাসূল (সা) যখন নুসরাহ খোঁজার জন্য তায়েফে গিয়েছিলেন তখন তিনি পায়ে হেঁটে গিয়েছিলেন, নাকি ঘোড়ার পিঠে চড়েছিলেন নাকি অন্য কোন উপায় অবলম্বন করেছিলেন সেগুলোর অনুসরণ করাটা আমাদের জন্য আবশ্যক কিছু না। এ জাতীয় উপকরণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে শরীয়া কোন স্পষ্ট নির্দেশনা না দিয়ে বরং আমাদের সিদ্ধান্তের উপর তা ছেড়ে দিয়েছে।

আমাদের জানা আবশ্যক যে রাসূল (সা) এর তরীকাহ ছিল মূলত ওহী দ্বারা নিধার্রিত অনেকগুলো শরঈ হুকমের সমষ্টি যা থেকে চুল পরিমাণ বিচ্যুত হওয়াও তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিলনা। শরঈ হুকুমের প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে যে বিষয়গুলো পরিবর্তিত হয় সেগুলো হল ধরন বা উপকরণ। এ বিষয়গুলোকে নিধার্রণ করা যেমন রাসূল(সা) এর সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, বর্তমানে ঠিক তেমনিভাবে এ বিষয়গুলোকে নিধার্রণ করাটা আমাদের সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে দারুল ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করা একটি শরঈ হুকুম। এমন অনেক লোক আছে যারা ভাবে যে দারুল ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার তরীকাহ ব্যাপারটি ধরনের অন্তর্ভুক্ত এবং এজন্য তারা যেকোন ধরনের কাজ করার ব্যাপারে স্বাধীন। উদাহরণস্বরূপ দারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠার উপায় হিসেবে তারা গরীবদেরকে সাহায্য করে, মানুষের আখলাক ঠিক করার কথা বলে, হাসপাতাল বা স্কুল তৈরি করে, ভাল কাজ করার কথা বলে, কেউ শাসকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের ডাক দেয় আবার কেউ বিদ্যমান শাসনব্যবস্থায় অংশগ্রহণের দাবী তোলে। এ সমস্ত কাজের প্রত্যেকটাই হচ্ছে খিলাফত প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আল্লাহর সরাসরি নির্দেশনার মাধ্যমে পরিচালিত রাসূল (সা) এর কর্মকাণ্ডের অনুসরণ থেকে সুস্পষ্ট বিচ্যুতি। আল্লাহর হুকুমের সাথে সামঞ্জস্য রেখে রাসূল (সা) যেভাবে প্রকাশ্যে ঘোষণাদানের কাজটি সম্পন্ন করেছিলেন ঠিক তেমনিভাবে প্রকাশ্যে ঘোষণাদানের কাজ করাটা আমাদের জন্যও ফরয;যদি তা না করি তাহলে আমরা পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভূক্ত হব। রাসূল (সা) যেভাবে অস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত ছিলেন এবং মুসলিমদেরকে অস্ত্র বহনের অনুমতি দেননি ঠিক তেমনিভাবে আমাদেরকেও তা মেনে চলতে হবে। পরিস্থিতি যদি ভিন্নও হয় তবু আমাদেরকে ঠিক তেমনিভাবে নুসরাহ খঁুজতে হবে যেমনভাবে রাসূল (সা) তা খুঁজেছিলেন। সাধারণভাবে বলা যায় পদ্ধতির ধাপসমূহ যেভাবে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) তাঁর রাসূলকে নির্ধারিত করে দিয়েছিলেন সেগুলো আমাদের জন্যও অপরিবর্তিত থাকবে। সেগুলোর সাথে সাংঘর্ষিক কাজ করা অথবা সেগুলোর অনুসরণ না করা হবে শরঈ হুকুমের লঙ্ঘন।

তরীকাহর ব্যাপারে নিজেদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোন সুযোগ আমাদেরকে দেওয়া হয়নি। উদ্দেশ্য কি হবে এবং সেই উদ্দেশ্যে পৌঁছার জন্য তরীকাহ কি হবেÑদুটো বিষয়ই শরীয়া নির্ধারিত করে দিয়েছে; অতএব এসব বিষয়ে আনুগত্য করা ছাড়া আমাদের অন্য কোন বিকল্প নেই।

পদ্ধতির ধাপসমূহ নির্ধারণ করার এখতিয়ার কেবলমাত্র শরঈ দলীলসমূহেরই (কুরআন ও সুন্নাহ) রয়েছে। এ ধাপসমূহ নির্ধারণ করার জন্য আমরা নিজেদের মন, পরিস্থিতি অথবা জনস্বার্থকে বিবেচনা করার অধিকার রাখি না।

মানুষের খেয়াল-খুশী বা ইচ্ছা-অনিচ্ছা থেকে নয়,বরং শরঈ দলীলসমূহের অর্থ বুঝতে হয় তার ভাষাগত নির্দেশনা থেকে। আমাদের ইচ্ছাগুলোকে শরঈ হুকুমের অনুসরণে সাজাতে হবে; কারণ বাধ্যতামূলকভাবে সেগুলো অনুসরণের মধ্য দিয়েই কেবল আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারব।

রাসূল (সা) এর তরীকাহকে বুঝা, এ তরীকাহ নিয়ে তিনি (সা) যেভাবে অগ্রসর হয়েছিলেন তার পুরো আনুগত্য করা এবং তাঁর কাজের ধাপসমূহকে এবং প্রত্যেকটি ধাপে কৃত কাজগুলোকে সঠিকভাবে আদায় করা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক।

সুতরাং দল গঠনের পর্যায়ে রাসূল (সা) বিভিন্ন কাজ সম্পাদন (ব্যক্তিগতভাবে লোকজনের সাথে দেখা করা, তাঁর উপর যারা ঈমান আনতেন তাঁদেরকে গোপনে একত্রে জড়ো করে তাঁদের চিন্তা—চেতনা গঠনের দিকে মনোযোগ দেয়া) করেছিলেন। এ সমস্ত কাজের ভিত্তিকে(আসল) অনুসরণ করা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক। কারণ শরঈ হুকুম হিসেবে তা আল্লাহর তরফ থেকে এসেছে। পাশাপাশি এ সমস্ত কাজ বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত ধরন এবং উপকরণ আমাদেরকে বেছে নিতে হবে।

একইভাবে জনমত গঠনের পর্যায়ে রাসূল (সা) বিভিন্ন কাজ সম্পাদন (প্রকাশ্যে দাওয়াতের ঘোষণাদান, কুফরী চিন্তা এবং প্রথার বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক শতশত আয়াত নাযিল হওয়া, নাম সহকারে অথবা পরোক্ষ বর্ণনার মাধ্যমে কুরাইশ নেতাদেরকে আক্রমণ (মৌখিকভাবে) করা এবং বিভিন্ন গোত্রের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করা) করেছিলেন। এক্ষেত্রেও শরঈ হুকুম হিসেবে এসব কাজের ভিত্তিকে (আসল) অনুসরণ করা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক। দ্বিতীয় পর্যায়ে আমাদেরকে প্রথম পর্যায় অর্থাৎ দল গঠনের পর্যায়ের কর্মকাণ্ডের সাথে আরো নতুন কিছু কর্মকাণ্ড যোগ করতে হবে, যেমন বুদ্ধিবৃত্তিক এবং রাজনৈতিক সংগ্রামের সূচনা করা, ইসলামের ভিত্তিতে উম্মাহর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে জোরালো অবস্থান গ্রহণ, ঔপনিবেশিক বা সাম্রাজ্যবাদী কাফির শক্তিসমূহ এবং তাদের আস্থাভাজন দালাল শাসকদের ষড়যন্ত্রগুলোকে উম্মাহর সামনে তুলে ধরা প্রভৃতি। কারণ রাসূল (সা) ঠিক এরূপই করেছিলেন। এ সমস্ত কর্মকাণ্ড সম্পাদনের জন্য তখন আমরা প্রয়োজনীয় ধরন ও উপকরণ বেছে নিব।

প্রকৃতপক্ষে, খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদেরকে রাসূল (সা) এর মক্কী জীবনের (শরঈ তরীকাহর) অনুসরণ করতে হবে। রাসূল (সা) যখন তাঁর এই তরীকাহর সূচনা করেছিলেন এবং এই তরীকাহর আলোকে কর্মকাণ্ড শুরু করেছিলেন তখন তিনি অনেক অপমান, দুর্বলতা, সন্ত্রাস এবং ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। তবুও তিনি দৃঢ় সংকল্পের সাথে অবিরাম কাজ করে গিয়েছিলেন। রাসূল (সা) এর নিকট আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) এর হুকুম আসত এবং তা বাস্তবায়নের জন্য তিনি কঠোর সংগ্রাম করতেন। কোন ব্যক্তি নবীর (সা) সঠিক পথের অনুসরণ থেকে অনেক দূরে সরে যায় যখন আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) এর এই আয়াত সে শুনে

“অতএব আপনি প্রকাশ্যে শুনিয়ে দিন যা আপনাকে আদেশ করা হয়”
(সূরা আল হিজর: ৯৪)

যেখানে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) তাঁর রাসূলকে (সা) নির্দেশ দিচ্ছেন যাতে তিনি  শুধুমাত্র আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) এর আদেশ অনুযায়ী প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন এবং সেই ব্যক্তি দেখে যে রাসূল (সা) তাঁর নিজের ইচ্ছানুসারে নয় বরং আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) এর আদেশ অনুযায়ী প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন; তারপরও সে বলে:“এই তরীকাহর অনুসরণ করাটা বাধ্যতামূলক কিছুনা।” যদি এই তরীকাহর অনুসরণ করাটা বাধ্যতামূলক কিছু না’ই হতো তবে রাসূল (সা) কেন সে অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন যেখানে তিনি (সা) কাফিরদেরকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এবং তাদের উপাস্য দেব-দেবীদের,তাদের নেতৃবৃন্দের,তাদের প্রথার এবং তাদের চিন্তাসমূহের বিরোধিতা প্রকাশ্যে করেছিলেন যার প্রতিটা বিষয়ই কুরআনের নির্দেশনার মাধ্যমে সম্পাদিত হয়েছে। অথচ তিনি চাইলে তোষামোদের মাধ্যমে শাসকদের সন্তুষ্ট করতে পারতেন অথবা বিদ্যমান প্রথায় নিজেকে সমর্পণ করতে পারতেন যার ফলে তাদের কাছ থেকে তিনি মর্যাদা লাভ করতে পারতেন। যদি তিনি (সা) তা করতেন তাহলে প্রকৃতপক্ষে তিনি (সা) তাঁর রবের হুকুমের অবাধ্য হতেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কুরআন নাযিল হত এবং রাসূল (সা) নিজেকে তার মধ্যে সমর্পণ করতেন। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন:

“উঠুন এবং সতর্ক করুন!”
(সূরা আল মুদ্দাসির:২)।

তিনি (সা) নেতৃবৃন্দকে আক্রমণ (মৌখিকভাবে) করলেন যা পূর্বে বর্ণিত হয়েছে।

“আবু লাহাবের হস্তদ্বয় ধ্বংস হোক এবং ধ্বংস হোক সে নিজে!”
(সূরা লাহাব : ১)

আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে রাসূলের (সা) পক্ষাবলম্বন করলেন:

“আপনার পালনকর্তার অনুগ্রহে আপনি পাগল নন।”
(সূরা আল কলম: ২)

কুরআনে কাফিরদের মানসিক অবস্থার কথা বর্ণনা করা হয়েছে:

“তারা চায় যদি আপনি নমনীয় হন তবে তারাও নমনীয় হবে।”
(সূরা আল কলম: ৯)

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) তাঁর রাসূলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন এবং উম্মুল-কুরা অর্থাৎ মক্কা এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের লোকজনকে সতর্ক করেন। পাশাপাশি তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) তাঁর রাসূলকে (সা) এবং যাঁরা তাঁর (সা) সাথে ছিলেন তাঁদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন দাওয়াতের কাজে অস্ত্র বহন না করতে। আমাদেরকে বুঝতে হবে যে তখন কুরআন নাযিল হচ্ছিল এবং রাসূল (সা) সে অনুযায়ী আমল করছিলেন মাত্র। যে বলে এই তরীকাহর অনুসরণ করাটা বাধ্যতামূলক কিছু না তার জন্য কি এর চেয়ে বেশি প্রমাণের প্রয়োজন আছে?

কেউ যদি বলে এই তরীকাহর অনুসরণ করাটা বাধ্যতামূলক কিছু না বরং ঐচ্ছিক তাহলে তার মানে দাঁড়াবে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) নাযিলকৃত আয়াতের মাধ্যমে যা কিছু হুকুম করছিলেন রাসূল (সা) সম্পূর্ণরূপে অথবা আংশিকভাবে সেসব আয়াতের অবাধ্য হয়েছিলেন। কারণ সেক্ষেত্রে যা কিছু নাযিল হচ্ছিল তিনি তাঁর অনুগত ছিলেন না। অতএব তখন বিষয়টি আমাদের জন্যও ঐচ্ছিক বলে বিবেচিত হবে যে, আমরা কি রাসূল(সা) এর তরীকাহ অনুসরণ করব নাকি অন্য কোন তরীকাহ? প্রকৃতপক্ষে এটি হচ্ছে এমন এক দৃষ্টিভঙ্গি যা রাসূল (সা) এর কর্মকাণ্ড এবং তাঁর সমাজ পরিবর্তনের পদ্ধতির সঠিক উপলদ্ধি থেকে অনেক দূরে।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply