মা’রূফ ও মুনকারের জ্ঞান

মা’রুফের আদেশ ও মুনকারের নিষেধের জন্য এর জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যকীয়। জ্ঞান সবসময় বিধিনিষেধের আগে আসে। জ্ঞান ব্যতিরেকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ সম্ভবপর নয়। সুতরাং একজন মুসলিমের জন্য শরীয়ার দৃষ্টিভঙ্গিতে কতটুকু জ্ঞান অর্জন করা অপরিহার্য?

এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, কাজের আগে কাজের ব্যাপারে জ্ঞান অগ্রগন্য। আবার কাজটিও শরীয়া জ্ঞান অনুসারে হতে হবে। আর না হয় কাজ আল্লাহর ইবাদত হবে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা একজন মুসলিমকে মা’রুফাত পালনের নির্দেশ দিয়েছেন এবং একারণে এ সর্ম্পকিত জ্ঞান থাকা বাঞ্চণীয়। একইভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা একজন মুসলিমকে মুনকারাত থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন এবং একারণে এ সর্ম্পকিত জ্ঞান থাকা বাঞ্চণীয়।

সুতরাং উপাসনা, আনুগত্য ও পালনের জন্য জ্ঞানের অপরিহার্যতা অপরিসীম। নিছক জ্ঞানার্জনের জন্য জ্ঞানার্জন নয়, বরং আনুগত্য ও ইবাদতের জন্য জ্ঞানার্জন জরুরী। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:

‘বস্তূত: আমি একমাত্র এই উদ্দেশ্যেই রসূল প্রেরণ করেছি, যাতে আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী তাঁদের আদেশ-নিষেধ মান্য করা হয়।’ (সূরা নিসা: ৬৪)

আবদুল্লাহ বিন আল মুবারক (র) এর মতে, ‘আমরা সাধারণত জ্ঞানার্জনের জন্যই জ্ঞান অন্বেষন করি। কিন্তু স্বয়ং জ্ঞানই আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন কিছুর নিমিত্তে হতে নারাজ।’ উপাসনা ও আনুগত্য কেবলমাত্র এ জন্যই। এ দু’বিষয়ের জ্ঞান এর সর্বনিম্ন সীমার মাধ্যমে অর্জন করা যায়, যেমন: তাকলীদ এবং এর সর্বোচ্চ সীমা হল ইজতিহাদ। উভয়ই ভাল যখন তা পালিত হয় ও আনুগত্যের জন্য উপলদ্ধি করা যায়। যে ব্যক্তি সালাত আদায় করে, সে সালাতের রুকন ও শর্তসমূহ পালন করে এবং এ ইবাদতকে প্রতিষ্ঠিত করে সেভাবে যেভাবে করতে বলা হয়েছে। যাহোক বাস্তবতা হচ্ছে, যে ব্যক্তি নিজস্ব ইজতিহাদ এবং জ্ঞান অর্জনের পন্থায় ইবাদত করেনি সে জ্ঞানের উৎকর্ষতা থেকে সীমাবদ্ধ করবে: এই উৎকর্ষই হচ্ছে জ্ঞান যার মাধ্যমে আল্লাহ্ মুসলিমদের বিভিন্ন মাএায় উথান ঘটান। মুকাল্লীদ হিসেবে ইবাদত সম্পন্ন করার অর্থ হল সম্পন্নকারী ব্যক্তি মুত্তাকী ও শরীয়ার জ্ঞানসম্পন্ন যাকে মনে করবে তার কাছ থেকে হুকুম গ্রহণ করবে। অর্থাৎ তার ঐ ইসলামী চিন্তাবিদের প্রতি সন্দেহমুক্ত ধারণা থাকবে যে, তিনি সঠিক ও আল্লাহর আনুগত্যের অধিকতর নিকটবর্তী। একইভাবে একজন মুতাব্বী হিসেবে যিনি ইবাদত করেন তিনি দলিলসহ আরেকজনকে অনুসরণ করেন এবং একারণে তিনিও একজন মুকাল্লীদ। তবে তিনি একজন আম্মী অর্থাৎ দলিল ব্যতিরেকে তাকলীদকারীর চেয়ে উচুস্তরের মুকাল্লীদ। উভয়েই অন্যের কাছ থেকে হুকুমটি গ্রহণ করেছেন এবং আনুগত্য ও ইবাদতকে উপলদ্ধি করেছেন। মুজতাহিদের স্থান সর্বোচ্চ ও পদমর্যাদায় অগ্রগামী। তিনি নিজেই আল্লাহ প্রদত্ত বাণী ও শরীয় দলিল থেকে হুকুম বের করে নিয়ে আসেন।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply