এটা হল সামষ্টিক বাধ্যবাধকতা যা মুসলমানদের মধ্য হতে যে কেউ সম্পন্ন করলেই হবে। প্রত্যেকের সম্পন্ন করা প্রয়োজনীয় নয়। এ অপরিহার্যতাটি থাকবে কিছু সংখ্যক বা অনেকের উপর । যদি তারা তা না করেন তবে সকল মুসলিম ততক্ষন পর্যন্ত গুনাহগার হবেন যতক্ষন না কাজটি সম্পন্ন হয়। তবে যারা এটি বাস্তবায়নের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করেছে ও পরিশ্রম বিনিয়োগ করেছে তারা এ গোনাহ থেকে মুক্ত হবে। এ কথা কারো মনে করার সুযোগ নেই যে অপর মুসলমানের সাথে গুনাহ্ ভাগাভাগি করার ফলে গুনাহ্ হাল্কা হয়ে যাবে তাই সে সামষ্টিক বাধ্যবাধকতা থেকে রেহাই পেয়ে যাবে। এটা সত্য নয়, বরং ক্বিয়ামতের দিন তাকে একাই আল্লাহর সম্মুখে দন্ডায়মান হতে হবে। সেকাণে তার অপরাধ তাকেই বহন করতে হবে। এ কারণে আল্লাহ বলেন,
‘কেয়ামতের দিন তাদের সবাই তাঁর কাছে একাকী অবস্থায় আসবে।’ (সূরা মারইয়াম-৯৫)
বাস্তবতা হচ্ছে, যখন উম্মাহ তার সাথে গোনাহে পতিত হয় তখন এটা ভেবে হয়ত তিনি দুনিয়াতে সন্তুষ্ট ভোগ করবেন, তবে তার আখেরাতের শাস্তি এতে সামান্য পরিমাণেও হালকা হবে না। সুতরাং, আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান এবং চক্ষু ও মন নিশ্চুপ হবার পূর্বে যারা কোন অসম্পাদিত বা অপ্রতিষ্ঠিত ফরযে কিফায়ার ব্যাপারে উদাসীন তাদের অনতিবিলম্বে তা সম্পাদন ও প্রতিষ্ঠা করতে আত্মনিয়োগ করতে হবে। সুতরাং যেসব মুসলিম আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলায় বিশ্বাস করে এবং তার সতর্কতায় ভয় করে, সে অবশ্যই তাকে (আল্লাহ) সন্তুষ্ট করতে, জান্নাত লাভ করতে ও জাহান্নামের আগুন থেকে বাচার চেষ্টা করবে। এ ধরনের মুসলমান সামষ্টিক বাধ্যবাধকতাকে তার দায়িত্ব মনে করবে ও তা সম্পাদন করবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালনে ঐ ব্যক্তি ব্রতী হবে ততক্ষণ সে গোনাহগার হতে থাকবে। তবে কিছু লোক যদি কাজটি সম্পন্ন করে ফেলে তাহলে তিনি সে দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে যাবেন। সেকারণে মুসলিমদের আল্লাহর প্রদত্ত দায়বদ্ধতা পালনের জন্য ব্যক্তিগত বাধ্যবাধকতার পাশাপাশি সামষ্টিক বাধ্যবাধকতার ব্যাপারে সচেষ্ট হতে হবে। যেমন: আল্লাহ প্রদত্ত আইন দ্বারা শাসন করা, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা, ইজতিহাদ করা, সৎ কাজের আদেশ প্রদান করা ও অসৎ কাজে নিষেধ করা। এসবই হল সামষ্টিক বাধ্যবাধকতা-যা মুসলিমগন সম্পাদন করবার জন্য চেষ্টা করবে এবং অন্যথায় তারা গোনাহগার হবে। যদি উম্মাহের ভেতরে কেউই ইজতিহাদ না করে, তাহলে যে ব্যক্তি ইজতিহাদ ফিরিয়ে নিয়ে আসবার চেষ্টা করছে সে ব্যতিত বাকী সবাই গুনাহগার হবে। ইজতিহাদ ফিরিয়ে নিয়ে আসবার জন্য কর্মরত লোকদের কাজ অন্যদের পাপমুক্ত করবে না-ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ ইজতিহাদ বাস্তবায়িত না হয়। যখন ইজতিহাদ শুরু হবে তখন সবাই এ ব্যাপারে পাপমুক্ত হয়ে যাবে। একই কথা ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্র বাস্তবায়নের ব্যাপারে প্রযোজ্য। খিলাফত প্রতিষ্ঠার কাজের সাথে যুক্ত নয় এমন প্রত্যেক ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে গোনাহগার হবে। এসময় প্রতিষ্ঠার কাজে রত ব্যক্তিদের প্রচেষ্টার কারণে অন্যরা পাপমুক্ত হবে না-যতক্ষণ না খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়। ’আল ফিকরুল ইসলামী’ (ইসলামী চিন্তা) নামক বইয়ের ‘ফরযে কিফায়া সব মুসলিমের উপর ফরয’ শীর্ষক অধ্যায়ে এ বিষয়ে যে আলোচনা করা হয়েছে তা নিম্নরূপ:
‘যতক্ষণ না যে কাজের জন্য বাধ্যবাধকতা রয়েছে সে কাজটি সম্পন্ন হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত বাধ্যবাধকতা থেকে দায়মুক্ত হওয়া যাবে না। যে ব্যক্তি একে অবহেলা করল সে পরিত্যাগের কারণে শাস্তি ভোগ করবে। যখন সে দায়িত্ব পালন করবে তখন দায়মুক্ত হবে। এক্ষেত্রে ফরযে আইন ও ফরযে ক্বিফায়ার মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না। সব মুসলিমের উপর এটি তখন ফরয হয়ে যায়। এ ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,
‘তোমরা বের হয়ে পড় স্বল্প বা প্রচুর সরঞ্জামের সাথে………’ (সূরা তাওবাহ: ৪১)
এটি একটি ফরযে ক্বিফায়া এবং এই আমলটি সিদ্ধান্তগ্রহণকারী (তালবান যাজিমান)। সুতরাং ফরযে আইন ও ফরযে ক্বিফায়ার মধ্যে পার্থক্য করা একটি অপরাধ এবং আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার নামান্তর ও আল্লাহর হুকুম মানার ক্ষেত্রে আত্মতুষ্টি থেকে উদ্ভুত প্রবঞ্চণা। ব্যক্তির উপর দায়িত্বের অব্যাহতির দৃষ্টিতে বলতে গেলে, ফরযে ক্বিফায়া ও ফরযে আইনের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কাজটি যতক্ষণ না সম্পন্ন হবে ততক্ষণ কোন ব্যক্তি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাবে না হোক তা ব্যক্তি পর্যায়ের যেমন: দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা অথবা সব মুসলিমের উপর যেমন: খলিফার প্রতি বায়াত প্রদান করা। এদের কোনটি থেকে দায়মুক্ত হওয়া যাবে না যতক্ষণ না এগুলো প্রতিপালিত হয়, অর্থাৎ নামাজ প্রতিষ্ঠিত হয় ও খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একজন খলিফাকে বায়াত প্রদান করা হয়। সুতরাং ফরযে ক্বিফায়ার দায়বদ্ধতা থেকে প্রত্যেক মুসলিম ততক্ষণ পর্যন্ত অব্যাহতি পাবে না যতক্ষণ কিছু লোক চেষ্টা করতে থাকে এবং পরবর্তীতে সেটি সম্পন্ন হয়ে যায়। কাজটি যতক্ষণ না সম্পন্ন হবে ততক্ষণ প্রত্যেক মুসলিম গোনাহগার হতে থাকবে। সুতরাং ফরযে ক্বিফায়া হল সে ইবাদত যা কেউ আদায় করলে অন্যরা গোনাহমুক্ত হয়ে যাবে-এ কথা বলা স¤পূর্ণরূপে ভুল। বরং ফরযে ক্বিফায়া হল সে ইবাদত যা কেউ সম্পন্ন করবার পর বাকী সবাই গোনাহমুক্ত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ফরযে ক্বিফায়া হল ফরযে আইনের মতই। সুতরাং খিলাফত প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব সব মুসলিমের অর্থাৎ প্রত্যেক মুসলিমের উপর এটা ফরয। খিলাফত বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত এ দায়িত্ব থেকে কোন মুসলিম অব্যাহতি পেতে পারে না। এ ব্যাপারে দায়িত্ব প্রত্যেক ব্যক্তি মুসলমানের উপর ও গোনাহগারও প্রত্যেক ব্যক্তি মুসলিম হবে। যে কাজের মাধ্যমে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে সে কাজে অংশগ্রহণের আগ পর্যন্ত একজন মুসলিম গোনাহমুক্ত হবে না এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত তাকে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সুতরাং যে কোন ফরয়ে ক্বিফায়া ততক্ষণ পর্যন্ত ফরযে আইন থাকে যতক্ষণ না উক্ত কাজটি সুসম্পন্ন হয়।’
ফরযে আইন ও ফরয়ে ক্বিফায়ার বিষয়টি আমাদের কাছে সুস্পষ্ট হওয়ার পর আল্লাহসুবহানাহু ওয়া তা’আলার সামনে দোষমুক্ত অবস্থায় দন্তায়মান হবার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তি মুসলিম ফরযে আইন যেমনি বাস্তবায়ন করবে তেমনি ফরযে কিফায়া বাস্তবায়নের জন্যও নিজেকে শরীক করবে।