পুঁজিবাদি গণতন্ত্রের থাবায় শিক্ষা

১) বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলো কিছুদিন পর পর বন্ধ করতে হয় কারণ আধিপত্য বিস্তার, হল দখল, এক সংগঠন কর্তৃক অন্য সংগঠন এর ছাত্রকে হত্যা, শিক্ষককে লাঞ্চনা, পরীক্ষা বাতিল ও পেছানোর দাবিতে।

২) আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলো আদায় করছে অতিরিক্ত টিউশন ফি, সার্টিফিকেট বিক্রি, মানসম্মত শিক্ষকের অভাব, তার উপর সরকার সময়ে সময়ে যুক্ত করেছ বর্ধিত ভ্যাট ইত্যাদি।

৩) স্কুল কলেজে প্রশ্নপত্র ফাঁস, বেতন বৃদ্ধিতে শিক্ষকদের কর্ম বিরতি, অতিরিক্ত ফি আদায়, প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করা ইত্যাদি।

সমস্যার মূল কারণ:

“লেখা পড়া করে যে গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে সে”,“পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি”। এধরনের বাক্য ছোটবেলা থেকে পুঁজিবাদী এই শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের দিয়ে আমাদের বড় করেছে। তাই বড় হয়ে যখন আমরা বিভিন্ন দায়িত্ব পাই তখন সেই সাফল্য খুঁজে পেতে মরিয়া হয়ে উঠি। উপরে উল্লেখিত সকল সমস্যার মুল হচ্ছে পুঁজি বা অর্থ উপার্জন করার মানসিকতা। কারণ বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে সকলে দেখতে পাই, যার অর্থ বা ক্ষমতা আছে সেই সম্মানিত। তাই সকলে অর্থ বা ক্ষমতার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। আর তাইতো একটা জাতির উন্নয়ন এর মুল শক্তি জ্ঞানকে পর্যন্ত পুঁজির একটি মাধ্যম হিসেবে মুল্যায়ন করে। তাই শিক্ষা ব্যবস্থা আজ ধ্বংসের প্রহর গুনছে।

সমাধান:

সমস্যার মুল কারণ যেহেতু এই পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তাই এই ব্যবস্থার পরিবর্তন করে এমন একটি ব্যবস্থা আনতে হবে যে ব্যবস্থা জ্ঞান অর্জনকে জাতির উন্নয়ন হিসেবে বিবেচনা করবে। আর এটা হল খিলাফাহ ব্যবস্থা। খিলাফাহ ব্যবস্থায় জ্ঞান অর্জন এর মুল লক্ষ্য হল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, অর্থ বা সম্মান না। কারণ এই ব্যবস্থায় শিক্ষার মুলনীতি হবে ইসলামী আকীদা এর উপর নির্ভর করে। পাঠ্যসূচী এবং শিক্ষার পদ্ধতি এমনভাবে সাজানো হবে যাতে এর মুল ভিত্তি থেকে বিচ্যুত হবার কোন সুযোগ না থাকে। ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার যাবতীয় খরচ বহন করবে রাষ্ট্র নিজে (উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত, সম্ভব হলে উচ্চতর শিক্ষা পর্যন্ত) এবং খলীফা এটার পর্যবেক্ষন করবে। তাই কোন প্রকার অনিয়মের সুযোগ নেই। আল্লাহ তা’আলাহ বলেন,

যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান?” (সুরা যুমার- ৯)

যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে বহু মর্যাদায় উন্নত করবেন”। (সুরা মুজাদিলা- ১১)

তাই মানুষ নিজের মর্যাদা বাড়াতে বা আল্লাহর কাছে সম্মানিত হতে, আল্লাহকে বুঝতে ও সঠিক উপায়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য জ্ঞান অর্জন করবে, অর্থের জন্য নয়। এটি একটি ফরজ দায়িত্ব হিসেবে সবাই পালন করবে। আল্লাহর রাসূল (সা) বলেন,

প্রত্যেক নর-নারীর জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরজ”।

তাই আমাদের উচিত জাতি ধ্বংসের এই শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তন করতে, জাতিকে প্রকৃত মুল্যায়ন করে সেই খিলাফাহ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার কাজে নেমে পড়ি। একমাত্র এই ব্যবস্থাই পারবে একটি উন্নত জ্ঞান সমৃদ্ধ জাতি উপহার দিতে।

রোকন উদ্দিন

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply