লুত (আ) ও তার জাতির বর্ণনা

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

وَكَأَيِّنْ مِنْ آيَةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَمُرُّونَ عَلَيْهَا وَهُمْ عَنْهَا مُعْرِضُونَ

আর আকাশ ও জমীনের কত নিদর্শনই না তারা অতিক্রম করে যায়, কিন্তু তারা তা হতে উদাসীন“। [সূরা ইউসুফ: ১০৫]

আমরা অনেকেই জানি ভু-মধ্যসাগরের কাছে এক উপসাগরে অবস্থিত সডম জাতিই পৃথিবীতে সর্বপ্রথম সমকামিতা নামক ব্যাধির জন্ম দেয়। এই সডম শব্দ হতে ইংরেজিতে সডমাইট শব্দটি এসেছে। সমকামিদের এজন্যই অনেকে ‘সডমাইটস’ (ٍsodomites) বলে অভিহিত করে থাকেন। এই পথভ্রষ্ট জাতির কাছেই প্রেরিত হয়েছিলেন আল্লাহর নবী লুত (আ)। তিনি ডেসপারেট চেষ্টা করেও তাদের পতন ঠেকাতে পারেন নি। এ জাতিকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কঠিনভাবে শাস্তি দেন, যার বিস্তারিত বর্ণনা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এসেছে।

বলা হয়ে থাকে এ জাতিকে শাস্তি দেয়ার ফলাফল হিসেবে মৃত সাগরের জন্ম, যা বর্তমান জর্ডানে অবস্থিত। যারা মৃত সাগর সম্পর্কে অবগত তারা জানে এটি প্রকৃতির সাধারন নিয়মবিরুদ্ধ একটি সাগর, এতে মানুষ ডুবে না। হতে পারে প্রকৃতির সাধারন নিয়মবিরুদ্ধ আচরনের শাস্তির নিদর্শন হিসেবে এই সাগরকে পরবর্তী জেনারেশনের জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে।

আসুন আমরা দেখি পবিত্র কুরআনে এ অভিশপ্ত জাতির ব্যাপারে কী বলা হচ্ছে:

وَلُوطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ أَتَأْتُونَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُمْ بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِنَ الْعَالَمِينَ ، إِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِنْ دُونِ النِّسَاءِ بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ مُسْرِفُونَ

আর লুতের কথা স্মরণ করো যখন সে তার জাতিকে বললো: তবে কি তোমরা এমন অশ্লীলতার দিকে যাচ্ছো যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বজগতের কেউ সম্পাদন করেনি। তোমরা তো নারীদের ছেড়ে পুরুষদের কাছে কামভাব প্রকাশ করে গমন করছো, নিশ্চিতভাবে তোমরা সীমা-অতিক্রমকারী জাতি“। [সূরা আ’রাফ: ৮০-৮১]

وَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهِ إِلَّا أَنْ قَالُوا أَخْرِجُوهُمْ مِنْ قَرْيَتِكُمْ إِنَّهُمْ أُنَاسٌ يَتَطَهَّرُونَ

আর তার জাতির জবাব কেবল এ-ই ছিল যে তারা বলছিল: (লুত ও তার সঙ্গীদের) এদেরকে তোমাদের এ শহর হতে বহিস্কার করো, এই লোকগুলো বেশি পবিত্র হতে চায়“। [সূরা আ’রাফ: ৮২]

فَأَنْجَيْنَاهُ وَأَهْلَهُ إِلَّا امْرَأَتَهُ كَانَتْ مِنَ الْغَابِرِينَ ، وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهِمْ مَطَرًا فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُجْرِمِينَ

অতঃপর আমি তাকে ও তার পরিবারকে উদ্ধার করলাম, তার স্ত্রী ব্যতিত, সে পেছনে পরে থাকা লোকদের মধ্যে রয়ে গেল। আর তাদের উপর আমি পাথরের বৃষ্টি বর্ষন করালাম, সুতরাং, দেখো ! অপরাধীদের শাস্তি কিভাবে হয়“। [সূরা আ’রাফ: ৮৩]
কুরআনের অন্যত্র আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَلُوطًا آتَيْنَاهُ حُكْمًا وَعِلْمًا وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْقَرْيَةِ الَّتِي كَانَتْ تَعْمَلُ الْخَبَائِثَ إِنَّهُمْ كَانُوا قَوْمَ سَوْءٍ فَاسِقِينَ، وَأَدْخَلْنَاهُ فِي رَحْمَتِنَا إِنَّهُ مِنَ الصَّالِحِينَ

আর লুত, তাকে আমি প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দান করেছিলাম এবং এমন শহর হতে উদ্ধার করেছিলাম যারা খবিশ (নোংরা) কাজ করতো, নিশ্চয়ই তারা জঘন্য এক পাপাচারি জাতি ছিল। আর লুতকে আমার রহমতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করলাম, নিশ্চয়ই সে নেক লোকদের মধ্য হতে ছিল“। [সূরা আম্বিয়া: ৭৪-৭৫]

অন্যত্র বলা হচ্ছে:

وَلُوطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ أَتَأْتُونَ الْفَاحِشَةَ وَأَنْتُمْ تُبْصِرُونَ، أَئِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِنْ دُونِ النِّسَاءِ بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُونَ

এবং স্মরণ করো লুত যখন তার জাতির উদ্দেশ্যে বলছিল: তবে কি তোমরা সজ্ঞানে এই অশ্লীল কাজের দিকে গমন করছো? তোমরা তো নারীদের রেখে পুরুষদের দিকে কামভাব প্রকাশ করে গমন করছো, নিশ্চিতই তোমরা এক অজ্ঞ জাতি“। [সূরা নামল: ৫৪-৫৫]

أَئِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ وَتَقْطَعُونَ السَّبِيلَ وَتَأْتُونَ فِي نَادِيكُمُ الْمُنْكَرَ فَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهِ إِلَّا أَنْ قَالُوا ائْتِنَا بِعَذَابِ اللَّهِ إِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِينَ

তোমরা কি পুংমৈথুনে লিপ্ত আছো, পথে-ঘাটে রাহাজানি করছো এবং নিজেদের সভা-সমাবেশে গর্হিত কর্ম করছো? তার সম্প্রদায়ের জবাব কেবল এ-ই ছিল যে তারা বলছিল: (পারলে) আল্লাহর শাস্তি নিয়ে আসো, যদি তুমি সত্যবাদীদের মধ্য হতে হও“। [সূরা ‘আনকাবুত: ২৯]

قَالَ رَبِّ انْصُرْنِي عَلَى الْقَوْمِ الْمُفْسِدِينَ

লুত বললো: হে আমার রব, ফাসাদ সৃষ্টিকারী জাতির ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করো“। [সূরা ‘আনকাবুত: ৩০]

وَلَمَّا أَنْ جَاءَتْ رُسُلُنَا لُوطًا سِيءَ بِهِمْ وَضَاقَ بِهِمْ ذَرْعًا

“যখন আমার প্রেরিত (পুরুষরুপী) বার্তাবাহকগণ লূতের কাছে আগমন করল, তখন (তার জাতি হতে) তাদের (সম্ভাব্য বিপদের) কারণে সে বিষন্ন হয়ে পড়ল এবং তার মন সংকীর্ণ হয়ে গেল…”। [সূরা ‘আনকাবুত: ৩৩]

وَقَالَ هَذَا يَوْمٌ عَصِيبٌ

এবং লুত বললো: আজ বড়ই কঠিন দিন” [সূরা হুদ: ৭৭]

وَجَاءَ أَهْلُ الْمَدِينَةِ يَسْتَبْشِرُونَ
শহরবাসীরা আনন্দ-উল্লাস করতে করতে এসে হাজির হল“। [সূরা হিজর: ৬৭]

وَجَاءَهُ قَوْمُهُ يُهْرَعُونَ إِلَيْهِ وَمِنْ قَبْلُ كَانُوا يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ

“আর তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা তাড়াহুড়ো করে তার (গৃহ) পানে ছুটে আসতে লাগল। আর এর আগে থেকেই তারা কুকর্ম করে যাচ্ছিল..”। [সূরা হুদ: ৭৮]

قَالَ يَاقَوْمِ هَؤُلَاءِ بَنَاتِي
“..(ব্যকুল হয়ে) লুত তাদের বললো: হে লোকসকল, এই তো আমার (শহরের) কন্যারা..”। [সূরা হুদ: ৭৮]

إِنْ كُنْتُمْ فَاعِلِينَ
..যদি তোমরা (একান্ত) কিছু করতেই চাও। [হিজর: ৭১]

هُنَّ أَطْهَرُ لَكُمْ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَلَا تُخْزُونِ فِي ضَيْفِي

তারাই তো তোমাদের জন্য পবিত্রতর, সুতরাং, আল্লাহর থেকে বেঁচে থাকো, আর আমার মেহমানের ব্যাপারে (কামাসক্ত হয়ে) আমাকে অপদস্থ করো না“। [সূরা হুদ: ৭৮]

أَلَيْسَ مِنْكُمْ رَجُلٌ رَشِيدٌ
তোমাদের মাঝে কি একজনও ভালো লোক নেই?” [সূরা হুদ: ৭৮]

قَالُوا أَوَلَمْ نَنْهَكَ عَنِ الْعَالَمِينَ
“তারা বললো: তোমাকে কি আমরা বিশ্ববাসীর (তথা বহিরাগতদের) ব্যাপারে নিষিদ্ধ করে দেইনি?

قَالُوا لَقَدْ عَلِمْتَ مَا لَنَا فِي بَنَاتِكَ مِنْ حَقٍّ وَإِنَّكَ لَتَعْلَمُ مَا نُرِيدُ
তারা বলল: (আর) তুমি তো জানই, তোমার (এ শহরের) কন্যাদের নিয়ে আমাদের কোন গরজ নেই। আর আমরা আসলে কি চাই, তাতো তুমি ভালোই জানো“। [সূরা হুদ: ৭৯]

لَعَمْرُكَ إِنَّهُمْ لَفِي سَكْرَتِهِمْ يَعْمَهُونَ
“(হে মুহাম্মাদ), আপনার জীবনের শপথ, তারা তাদের কামাসক্তের নেশায় বুদ হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছিল
“। [সূরা হিজর: ৭২]

قَالَ لَوْ أَنَّ لِي بِكُمْ قُوَّةً أَوْ آوِي إِلَى رُكْنٍ شَدِيدٍ
“লুত বললো: হায় ! তোমাদের মোকাবেলায় যদি আমার কোনো শক্তি থাকতো, অথবা কোনো শক্তি হতে আশ্রয় নিতে পারতাম
“। [সূরা হুদ: ৮০]

قَالُوا يَالُوطُ إِنَّا رُسُلُ رَبِّكَ لَنْ يَصِلُوا إِلَيْكَ
“মেহমানরা বলে উঠলো: হে লুত, নিশ্চয়ই আমরা তোমার রবের পক্ষ হতে প্রেরিত বার্তাবাহক, (চিন্তা করোনা) তারা তোমার কাছেও ঘেষতে পারবে না..”।
[সূরা হুদ: ৮১]

وَقَالُوا لَا تَخَفْ وَلَا تَحْزَنْ إِنَّا مُنَجُّوكَ وَأَهْلَكَ إِلَّا امْرَأَتَكَ كَانَتْ مِنَ الْغَابِرِينَ
“..তারা (বার্তাবাহক ফেরেশতাগণ) বলল, ভয় করবেন না এবং দুঃখ করবেন না। আমরা আপনাকে ও আপনার পরিবারবর্গকে রক্ষা করে ছাড়বই আপনার স্ত্রী ব্যতীত, সে ধ্বংস প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত থাকবে
“। [সূরা ‘আনকাবুত: ৩৩]

فَأَسْرِ بِأَهْلِكَ بِقِطْعٍ مِنَ اللَّيْلِ وَلَا يَلْتَفِتْ مِنْكُمْ أَحَدٌ
“সুতরাং, রাতের এক অংশে তোমার পরিবার নিয়ে বের হয়ে পড়, আর তোমাদের কেউ যেন পেছনে না ফেরে..
“। [সূরা হুদ: ৮১]

وَامْضُوا حَيْثُ تُؤْمَرُونَ
“(বরং) যেভাবে আদেশ দেয়া হয়, সেভাবে অগ্রসর হও
“। [সূরা হিজর: ৬৫]

إِنَّ مَوْعِدَهُمُ الصُّبْحُ أَلَيْسَ الصُّبْحُ بِقَرِيبٍ
“..আর তাদের জন্য রইল সকালের প্রতিশ্রুতি। সকাল কি খুব নিকটেই নয়?”
[সূরা হুদ: ৮১]

أَنَّ دَابِرَ هَؤُلَاءِ مَقْطُوعٌ مُصْبِحِينَ
“..সকাল হলেই তাদেরকে সমুলে বিনাশ করে দেয়া হবে
“। [সূরা হিজর: ৬৬]

إِنَّا مُنْزِلُونَ عَلَى أَهْلِ هَذِهِ الْقَرْيَةِ رِجْزًا مِنَ السَّمَاءِ بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ
“আমরা এই জনপদের অধিবাসীদের উপর আকাশ থেকে (আবর্জনাময়) আযাব নাজিল করব তাদের পাপাচারের কারণে
“। [সূরা ‘আনকাবুত: ৩৪]

فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ مُشْرِقِينَ ، فَجَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهِمْ حِجَارَةً مِنْ سِجِّيلٍ
“অতঃপর ভোরের আলো ফোটার সময় এক বিকট আওয়াজ তাদেরকে এসে পাকড়াও করল। অতঃপর আমি জনপদটিকে উপরকে নিচ করে উল্টে দিলাম এবং তাদের উপর কঙ্করের পাথর বর্ষণ করলাম
“।  [সূরা হিজর: ৭৩-৭৪]

مَنْضُودٍ ، مُسَوَّمَةً عِنْدَ رَبِّكَ
“স্তরে স্তরে, যার প্রতিটি (পাথর, কোনটি কার উপর পড়বে তা) তোমার পালনকর্তার নিকট চিহ্নিত ছিল
“। [সূরা হুদ: ৮২-৮৩]

وَلَقَدْ تَرَكْنَا مِنْهَا آيَةً بَيِّنَةً لِقَوْمٍ يَعْقِلُون
“আর নিশ্চয়ই চিন্তাশীল জাতির জন্য এর মধ্যে একটি নিদর্শন রেখে দিয়েছি
“। [সূরা ‘আনকাবুত: ৩৫]

وَتَرَكْنَا فِيهَا آيَةً لِلَّذِينَ يَخَافُونَ الْعَذَابَ الْأَلِيمَ
“আর যারা যন্ত্রনাদায়ক শাস্তিকে ভয় করে তাদের জন্য সেখানে আমরা নিদর্শন ছেড়ে এসেছি
“। [যারিয়াত: ৩৭]

– এই আয়াতটি মৃত সাগরের ব্যাপারে ইংগিত হতে পারে।

আল্লাহ আমাদের একবিংশ শতাব্দির নব্য কওমে লুত হতে আশ্রয় দান করুন, শক্তি দিয়ে সাহায্য করুন। আমীন।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply