খিলাফতই নিপীড়িত মুসলিমদের একমাত্র সমাধান

গত ৮ই মে এখন পর্যন্ত থাইল্যান্ড, মালয়শিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার উপকূল থেকে অন্তত ২ হাজার ৭৩০ জন অভিবাসীদর উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের বাইরে সাগরে ভাসমান অবস্থায় আছে আরও প্রায়ই চার হাজার মানুষ, জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক সংস্থা (UNHCR), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (IMO) এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে জানা যায় ১১ দিনে প্রায় তিন হাজারেরও অধিক রোহিঙ্গা মুসলিমকে উদ্ধার করা হয়েছে যাদের মধ্যে অনেকেই মারা গেছে, অনেকে মরনাপন্ন অবস্থায়, অনেকে সাগরে নিখোঁজ হয়েছে এবং আরও চার হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম সাগরে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। যাদের মধ্যে ১০০ জনেরও বেশি শিশু রয়েছে এবং যাদের বয়স ১ বছরেরও নিচে। শত শত মুসলিমকে থাইল্যান্ড ও মালেশিয়াতে জীবন্ত কবর দেয়া হয়েছে, বহু নারীকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। 

আমাদের জানা উচিত, কারা এই রোহিঙ্গা এবং কেন তারা আজ সাগরে অজানা উদ্দেশ্যে পালিয়ে যাচ্ছে। মূলত, একহাজার বছর আগে সুদূর আরব থেকে আসা এই মুসলিমরা আজ রোহিঙ্গা নামে পরিচিত। ১৮০০ শতাব্দীর শেষের দিক থেকে ব্রিটিশ উপনিবেশের হাতে চলে যায় বর্তমান আরাকান অঞ্চল। যে জায়গায় মূলত সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের বসবাস ছিল। তখন থেকেই ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীরা বিভিন্নভাবে এই রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর নির্যাতন চালাতো এবং যা পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীরা উপমহাদেশকে ভাগ করে দিয়ে চলে যাওয়ার পর আরো প্রকটরূপ ধারন করে। তৎকালীন বার্মা সরকার না তাদেরকে স্বীকৃতি দিয়েছিল না ‘মুসলিমদের রাষ্ট্র’ নামধারী (!) তৎকালীন পাকিস্তান তাদের স্বীকৃতি দেয়। যার দরুন এই রোহিঙ্গা মুসলিমরা মাঝখানে পরে অভিভাবকহীন এক জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়। এক কঠিন কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করতে শুরু করে, যা আজ অবধি চলছে, না তাদেরকে ঐ সময় উপযুক্ত বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে না আজ কারা হচ্ছে। যার ফলে আজ তাদের এই পরিণতি। মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যে অজানা পথে পাড়ি দিচ্ছে। আর দীর্ঘদিন ধরে এই একই অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এই মুসলিম সম্প্রদায়। যখনই তাদের নিয়ে এই রকম সংকট তৈরি হয় তখনই আমরা দেখি জাতিসংঘের (UNHCR) কিংবা আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (IMO) বিভিন্ন দেশের প্রতি রোহিঙ্গাদের শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব দেয় কিন্তু কোন দেশই তা পাত্তা দেয়না। কিন্তু এর মাধ্যমে কি তারা মূল সমস্যার কোনো সমাধান করতে চায় নাকি তাদেরকে আরো জটিলতার দিকে ঠেলে দিতে চায় নাকি বিশ্বের কাছে মুরুব্বি সাজতে চায়। আর সম্প্রতি যখন হিংস্র বোদ্ধ ভিক্ষুরা রোহিঙ্গাদের অত্যাচার করতে লাগল, মায়ানমার সেনাবাহিনী তাদের পাইকারি হারে হত্যা করতে লাগল এবং সেসময় বাংলাদেশের যালিম সরকার যখন তাদের আশ্রয় দিতে রাজী হল না, তখন তারা থাইল্যান্ড, মালেশিয়া, ইন্দেনেশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করে এবং তারই ফলশ্রুতিতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণকবর থাইল্যান্ড-মালেশিয়াতে পাওয়া যাচ্ছে। তখনই মুসলিম বিশ্ব টের পেতে শুরু করে যে এই মুসলিমদের পরিণতি কী হচ্ছে। এমনকি বিশ্ব মুসলিম নেতা নামধারী মাহাতির মোহাম্মদের দেশ মালয়শিয়াও তাদের আশ্রয় দিলনা, দিলনা ইন্দোনেশিয়ার সরকার, যার কারণে হাজার হাজার মুসলিম মৃত্যু বরন করল। পরবর্তিতে যখন বিষয়টি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা-মিডিয়াতে মানবেতরভাবে উপস্থাপিত হলো, তখন ইন্দোনেশিয়া, মালয়শিয়া ও থাইল্যান্ড সরকার সাময়িক ভাবে তাদের আশ্রয় দেয় যা আদৌতে কোন সমাধান নয়।

তাহলে প্রশ্ন আসে সমাধান কোথায় এই মুসলিমদের সমাধান? এই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ সমাধান দেয় আল্লাহর প্রেরিত ও আমাদের জন্য মনোনীত জীবনবিধান ইসলাম। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

“তোমার আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” (আল ইমরান, ৩: ১০২)

অর্থাৎ ঐক্যবদ্ধ থাকা মুসলিম উম্মাহর জন্য ফরয এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়া হারাম। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার আয়াত ও রাসুল (সা) এর বহু হাদীস থেকে একথা স্পষ্ট যে, মুসলিমরা এক উম্মত অর্থাৎ ভাষা, জাতি-রাষ্ট্র ইত্যাদির ভিত্তিতে মুসলিমদের বিভক্ত করা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা)-এর নির্দেশনার সম্পূর্ণ পরিপন্থি। রাসূল (সা) জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে বলেন,

একে ত্যাগ কর, এটা পঁচে গেছে। (বুখারী)

তৎপরিবর্তে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, 

“আর এভাবেই আমরা তোমাদেরকে একটি ন্যায়পরায়ণ উম্মত করেছি যাতে তোমরা মানবজাতির জন্য সাক্ষী হতে পারো এবং রাসূ হবে তোমাদের জন্য একমাত্র সাক্ষী (সুরা বাকারা ২:১৪৩)

কিন্তু ভাইয়েরা আজ আমরা এই সবগুলো কুরআনের আয়াত ও হাদীসের বিপরীতে অবস্থান করছি যার দরুন আমাদের ভাইয়েরা যখন ধুকে ধুকে মরছে তখন আমরা কেউই তাদেরকে আশ্রয় দিচ্ছি না বরং আমরা জাতীয়তাবাদের ভিত্তি থেকে আমরা বলছি আমরা বাংলাদেশি, তারা রোহিঙ্গা অথচ তাদের বিশ্বাস আর আমাদের বিশ্বাসের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই আমরা উভয়ই এক আল্লাহ ও তার রাসূল (সা) কে বিশ্বাস করি।

তাই একমাত্র শাসনব্যবস্থা খিলাফত ফিরিয়ে আনার মাধ্যমেই আমরা সমগ্র মুসলমান জাতি আবার ঐক্যবদ্ধ হতে পারি এবং এক খলীফার নেতৃত্বে আমরা আমাদের সকল সমস্যার সমাধান আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলাম দিয়ে করতে পারি। কারণ, রাসূল (সা) বলেন, 

‘নিশ্চয়ই, ইমাম (খলীফা) হচ্ছেন ঢাল স্বরূপ যার পেছনে থেকে যুদ্ধ করা হয় এবং যার মাধ্যমে (জনগণ) সুরক্ষা পায়। [মুসলিম]

তিনি(সা) আরো বলেন, 

খলীফা হচ্ছে দুনিয়াতে আল্লাহর ছায়া”। (তাবারানী)

অর্থাৎ খলীফা রোহিঙ্গা মুসলিম ভাইদের বিপদে সবার আগে এগিয়ে যাবে এবং তাদের সকল মৌলিক চাহিদা পূরণ করবে যেভাবে অতীত খিলাফতের ইতিহাসে খলিফারা যখনি মুসলিম জনগণের সাথে অন্যায় হয়েছে তখনই তাদের রক্ষায় এগিয়ে গিয়েছে, এমনকি অমুসলিমদেরও পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। খলীফা এই রোহিঙ্গা মুসলিম ভাইদেরকে খিলাফাহ্ রাষ্ট্রের পূর্ণ নাগরিকত্ব প্রদান করবেন এবং তাদের উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন সেইভাবে মুসলিম বিশ্বের অব্যবহারিত ও অকার্যকর অবস্থায় পড়ে থাকা লক্ষ লক্ষ বর্গমাইল এলাকা বসবাসের জন্য তাদের মাঝে বণ্টন করে দিবেন, কারণ ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্রে প্রতিটি জমির মালিকের জন্য তার জমির যথাযথ ব্যবহার বাধ্যতামূলক। এ কাজের জন্য অভাবী ব্যক্তিদের বাইতুল মাল তথা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য দেয়া হবে। কেউ যদি তার জমি তিন বছরের অধিক সময় অব্যবহারিত অবস্থায় ফেলে রাখে তবে তার নিকট হতে তা নিয়ে অন্য ব্যক্তিকে দিয়ে দেয়া হবে।

ফয়সাল রহমান

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply