খিলাফত প্রতিষ্ঠায় তরুণদের ভুমিকা কী?

১৯২৪ সালে বৃটিশ পররাষ্ট্র সচিব লর্ড কার্জন অনেক দম্ভসহকারে বলেছিলেন “বাস্তবতা এমন যে তুরস্ক আজ মৃত, আর কখন শক্ত হয়ে দাড়াতে পারবে না। কারণ আমরা তাঁর নৈতিক শক্তিকে ভেঙ্গে দিয়েছি আর তা হলো খিলাফত ও ইসলাম। (The situation now is that Turkey is dead and will never rise again, because we have destroyed its moral strength, the Caliphate and Islam)

খিলাফত, মুসলিম উম্মাহর সোনালী অতীত। খিলাফত মুসলিম উম্মাহ এর গৌরব,তার ঐতিহ্যের নাম। ১৯২৪ সালে মুস্তফা কামাল পাশা দ্বারা ধ্বংস হয়ে যায় খিলাফত। এখন প্রায় ৯০ বছর পর ২০১৪ সালে এসে বিশ্বের সব যায়গায় দাবি উঠেছে খিলাফত এর। এখন মুসলিম উম্মাহ এর একটা বিরাট অংশ হিসেবে আমাদের জানা দরকার খিলাফত প্রতিষ্ঠায় তরুণদের ভুমিকা কী।

খিলাফত কী– 

যে রাষ্ট্রব্যবস্থা আহকামে শরীয়াহ এর প্রয়োগ ও ইসলাম প্রচারের জন্য দায়িত্বশীল তাই হচ্ছে খিলাফত। ইসলামী শাসনব্যবস্থাককেই খিলাফত নামে অভিহিত করা হয়। ইমামত বললেও একই ব্যবস্থাকে বুঝায়। এই প্রসংগে শাইখ তাকীউদ্দীন আন-নাবাহানী বলেন, “খিলাফত হলো সকল মুসলিমদের জন্য সাধারন নেতৃত্ব। এর দায়িত্ব হচ্ছে ইসলামী শরীয়াহ এর আইন বাস্তবায়ন করা এবং সারাবিশ্বের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌছে দেয়া।” (আল খিলাফাহ)

খিলাফাহ কেন জরুরি
আল্লাহ আমাদের পবিত্র কুর’আনে বলেছেন,

“আর আপনি আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা দিয়ে তাদের মাঝে ফয়সালা করুন, এবং আপনার কাছে যে সত্য এসেছে তা ছেড়ে দিয়ে তাদের ইচ্ছার অনুসরন করবেন না। (সূরা মায়িদা- ৪৮)

আল্লাহ যা অবতীর্ণ করে তা অনুযায়ী যারা শাসন করে না তারাই কাফের,ফাসেক এবং জালেম। (মায়িদা- ৪৪, ৪৫, ৪৭) 


উপরোক্ত আয়াতসমুহসহ আরো বহু আয়াতে আল্লাহ মুসলিমদের আল্লাহ এর আইন বাস্তবায়ন এর নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে আদেশদিয়েছেন যে সমাজে মানুষের সমস্ত বিষয়গুলো বাস্তবায়ন এর জন্য একজন খলিফা থাকবেন যিনি এগুলার বাস্তবায়ন করবেন। খলিফা ছাড়া হুদুদ তথা ইসলামী আইন বাস্তবায়নকরা সম্ভব না। তাই আল্লাহ’র আদেশ অনুসারে যেহেতু ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করা ফরজ, তাই খিলাফত ব্যবস্থা থাকা এবং খলিফা থাকাও ফরজ।

রাসূল (সা) বলেন “যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মারা যাবে যার কাঁধে কোনো খলিফার বাইয়াত নাই তবে তার মৃত্যু হলো জাহেলিয়াত এর মৃত্যু” (মুসলিম)

হাদীসে আমরা দেখতে পাই যে, খলীফার বাইয়াত ছাড়া মারা যাবে তার মরণ হবে জাহেলিয়াত এর আমলের মতো। অর্থাৎ সে মুসলিম হলেও তার মরণ হবে একজন জাহেল এর মতো। তাই খলিফার উপস্থিতি তথা খিলাফত থাকা ফরজ।

আরেকটি ঘটনায় আমরা বুঝতে পারি যে, খিলাফত মুসলিমদের জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ।

রাসূল (সা) এর ওফাতের পর উনার লাশ খলিফা নির্বাচিত হওয়া পর্যন্ত দাফন করা হয় নাই। অথচ রাসূল(সা)-কে দাফনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কোনো কাজই হতে পারে না। তাই এই ঘটনা থেকেই বুঝা যায় খলিফা নির্বাচন করা এবং খিলাফত থাকা কত গুরুত্বপূর্ণ।

আলী(রা) বলেন, “একজন আমীর ছাড়া জনগন কখনো পরিশুদ্ধ হয় না- সেই আমীর ভালো বা মন্দ (যাই হোক না কেনো)।” (কানজুল উম্মাল)
 

সুতরাং এর থেকে দেখা যায় যে মুসলিমদের জন্য খিলাফত কত গুরুত্বপূর্ণ। তাই মুসলিমদের মাঝে খিলাফত না থাকাকালে তা প্রতিষ্ঠা করা প্রত্যেক মুসলিমদের জন্য ফরজ হয়ে পড়ে। যদি মুসলিমরা তাদের মাঝ থেকে খলিফা নির্বাচন করা থেকে বিরত থাকে তাহলে সবাই কবীরা গুনাহ এর কাজ করবে। যদি মুসলিমদের মাঝে কোনো দল খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে এবং অন্যরা তা থেকে বিরত থাকে তাহলে যারা খিলাফাহ এর জন্য কাজ করছে তারা ব্যতীত অন্য সবাই গুনাহগার হবে। এভাবে তারা দুনিয়া এবং আখিরাতে চরম শাস্তির সম্মুখীন হবে।

খিলাফতবিহীন সময় মুসলিমদের অবস্থা

খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হয় ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে,রাসূল(সা)-কে মদীনার আওস এবং খাজরাজ গোত্র বাইয়াত দেয়ার মাধ্যমে। এবং খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যায় ১৯২৪ সালের ৩ রা মার্চ পশ্চিমা দালাল মুস্তফা কামাল পাশার মাধ্যমে। এরপর কেটে গেছে ৯০বছর। এই ৯০ বছরে মুসলিম উম্মাহ এর উপর অত্যাচার, অবিচার হয়েছে অসংখ্য। আজ প্রতিনিয়ত আমাদের চারিপাশে মুসলিমরা অত্যাচার নির‍্যাতন এর শিকার হচ্ছে। বার্মায় মুসলিমরা মারা যাচ্ছে। সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ এর হাতে অসংখ্য নারীপুরুষ মারা যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত অত্যাচার আর নির্যাতন এর শিকার হচ্ছে মুসলিমরা। অথচ শাসকগোষ্ঠী নিশ্চুপ। এই অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীরা প্রতিনিয়ত আমেরিকা-বৃটেনের পদলেহন করে যাচ্ছে আর উম্মাহ এর উপর অত্যাচার করছে। খিলাফতবিহীন মুসলিম উম্মাহ’র অবস্থা যে কি ভয়াবহ তা একটি ঘটনার মাধ্যমে বুঝা যায়।

১ম বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির কাছে উসমানীয় খিলাফত হারার পর যখন উসমানীয় খিলাফতের একেবারে ভঙ্গুর অবস্থা তখন ১৯২০ সালে ব্রিটেন এবং ফ্রান্স সরকার রাসুল(সা)-কে নিয়ে ব্যাংগাত্মক নাটক করার পরিকল্পনা করে, সে সময় ঐ নাটকের টিকেট ও বিক্রিহয়ে গিয়েছিলো। সেই সময় খলিফা ২য় আব্দুল মাজিদ ব্রিটেন এবং ফ্রান্সকে অনুরোধ করেছিলো সেই নাটকটি মঞ্চস্থ না করতে। জবাবে ব্রিটেন এবং ফ্রান্স বলে এইটা তাদের দেশের মত প্রকাশের অধিকার। জবাবে খলিফা দ্বিতীয় আব্দুল মাজিদ বলেন, আপনারা যদি ঐ নাটক মঞ্চস্থ করেন তাহলে আমি জিহাদে আকবর ঘোষণা করবো। খলিফার এই কথা শুনে ব্রিটেন এবং ফ্রান্স এই নাটক আর মঞ্চস্থ করে নাই। অথচ এখন রাসুল(সা)-কে নিয়ে ব্যাংগাত্মক নাটক সিনেমা বানাচ্ছে কাফেররা, রাসূল(সা)-কে ব্যাংগকারীদের সম্মাননা দিচ্ছে,অথচ মুসলিম উম্মাহ কিছুই করতে পারছে।

খিলাফত বিহীন সময়ে তরুণরা হয়ে যাচ্ছে আজ নষ্ট। বর্তমানের অত্যাচারী শাসকরা তরুনদের মাঝে থাকা নিত্যনতুন আবিষ্কারের নেশাকে মেরে ফেলছে, তার হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে মেয়ের নাম্বার,গাজার পুরিয়া। যে তরুণ খিলাফত এর সময়ে দেখতো নিত্য নতুন ভূমি জয়ের কথা, যে তরুণ খিলাফত এর সময় চিন্তা করতো জ্ঞান-বিজ্ঞান এ উন্নতির চরম শিকড়ে উঠার কথা আজ সে তরুন চিন্তা করে কিভাবে একটি মেয়ের নাম্বার জোগার করা যায়, কিভাবে হিপহপ গান এর তালে নাচা যায় কিভাবে প্রেম করা যায়, কিভাবে লিটনের ফ্ল্যাটে যাওয়া যায়।

খিলাফতবিহীন সমাজে আজ তরুনদের নিয়ে ব্যবসা করছে মাল্টিন্যশনাল কোম্পানীগুলো। আজ থেকে কয়েক বছর আগেও ভালোবাসা দিবস এত পপুলার ছিল না। কিন্তু এই কয়েক বছরে বিশেষ করে ২০১০-১৩ সালেরদিকে ভালোবাসা দিবস অত্যন্ত পপুলার করে তুলে কোম্পানীগুলো। কারণ এর পিছনে তাদের কোটি কোটি টাকার বিজনেস হচ্ছে। কার্ডের ব্যবসা, রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ইত্যাদি অনেক ব্যবসা।

তারা আমাদের তরুণদের পুঁজিপতিরা শিখাচ্ছে কিভাবে প্রেম করতে হয়, কিভাবে শারীরিক সম্পর্কে জড়ালে কোনো ক্ষতি হবে না। এর পিছনে রয়েছে তাদের সুদূরপ্রসারী ব্যবসায়িক পরিকল্পনা। “Friends with Benefits” নামক সিনেমা বানিয়ে তারা তরুণ-তরুণীদের শিক্ষা দিচ্ছে, কিভাবে একটি বিপরীত লিংগের মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে হয়, কিভাবে তাকে ব্যবহার করে নিজের শারিরিক ক্ষুধা মেটাতে হয়।

আজ তরুনদের রাস্তায় পাগলের মতো “ফ্ল্যাশ মব” নামক প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে নাচিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে পুঁজিপতিরা। তরুনদের মাঝে অশ্লীলতা, আর নোংরামী ছড়িয়ে দিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করছে আর মুসলিম উম্মাহ এর মূল চালিকাশক্তি তরুণদের বানিয়ে ফেলছে নপুংশক। এর ফলাফল হিসেবে তৈরী হচ্ছে “ঐশীর” মতো তরুন তরুনী, যারা নিজের বাসনাকে পূর্ণ করার জন্য নিজের মা-বাবাকে খুন করতেও দ্বিধা করছে না।  অথচ দেশের লক্ষ লক্ষ ইঞ্জিনিয়ার আজ চাকরী পায় না, দেশের হাজার হাজার তরুণ আজ বেকারত্বের কষাঘাতে জর্জরিত। কিন্তু সেইদকে কোনো সরকারের কোনো খেয়াল নেই। দেশের শিল্পবিভাগে কোনো উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ নেই,নেই কোনো অনুদান। চাকরি না পেয়ে হাজারহাজার তরুন আজকে আত্মহত্যা করছে, কেউবা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

এভাবে সমাজের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে আজ শোষিত হচ্ছে মুসলিম উম্মাহ আর আজ আমাদের সম্পদ ব্যবহার করে, আমাদের শোষন করে, আমাদের অত্যাচার করে সুপার পাওয়ার আমেরিকা ও অন্যান্য কুফর রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে কোটিপতি। 

সমাধান কী?? –

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা ততক্ষন পর্যন্ত পরিবর্তন করেন না যতক্ষন পর্যন্ত তারা নিজে তা পরিবর্তন করতে সচেষ্ট না হয়। (সূরা রা’দ- ১১)
 

আমরা যদি বর্তমান সময়ে উম্মাহ এর উপর ঘটিত অত্যাচার, অবিচার থেকে উম্মাহকে মুক্তি দিতে চাই তাহলে আমাদের পুনরায় খিলাফাহ ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করতে হবে যেভাবে রাসূল(সা) ও তাঁর সাহাবীরা করেছিলেন। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা নিজেই আমাদের বলেছেন,

তোমাদের মাঝে একটি দল থাকা উচিৎ যারা মানুষকে কল্যাণের পথে ডাকবে, সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজে নিষেধ করবেএবং তারাই হবে সফলকাম” (আল ইমরান-১০৪)

খিলাফাহ ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের ঠিক সেভাবেই কাজ করতে হবে যেভাবে রাসূল(সা) খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছিলেন। রাসূল(সা)-এর পথ ছাড়া আর কোনো পথেই খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা সহীহ নয়। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

“রাসূল (সাঃ) তোমাদের যাদেন তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা করতে নিষেধ করেন তা বর্জন করো।” (হাশর-৭)

এ থেকে বুঝা যায় যে, রাসূল(সা) এর দেখানো পথ ছাড়া আর কোন পথই আল্লাহ এর কাছে গ্রহনযোগ্য হবে না। তাই আমাদের পুনরায়খিলাফাহ ফিরিয়ে আনার জন্য রাসূল(সা) এর দেখানো পথেই কাজ করতে হবে।

তরুণদের ভুমিকা কী?-
 
তারুণ্য, এক অমীয় সম্ভাবনার নাম। প্রতিটা সমাজ পরিবর্তনে তরুণদের ভূমিকা সবসময় বেশী থাকে। কারণ তরুণরা চায় সবসময় শোষনমুক্ত সমাজ গড়তে। এমনকি রাসূল (সা) এর সময়ে ইসলাম প্রচারে এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠার কাজে সবচেয়ে বেশী সহায়তা করেছিলেন এই তরুণরা। রাসূল (সা) নিজেই বলেছিলেন, তরুণরা আমাকে সহায়তা করেছে এবং বৃদ্ধরা  আমার বিরোধিতা করেছে। ইসলামের ইতিহাসের পাতা ঘুরে দেখলেই আমরা দেখতে পাই যে এতে তরুন মুসলিম বীরদের সংখ্যাই বেশী। কিন্তু  বর্তমানে খিলাফাহ বিহীন সময়ে কুফফাররা তরুণদের ব্যস্ত করে রেখেছে বিভিন্ন রকম মোহ দিয়ে যাতে করে তরুণরা তাদের আসল কাজ, তাদের আসল দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে না পারে ।

একটা ছোট উদাহরন দিলেই বুঝা যাবে খিলাফত প্রতিষ্ঠায় তরুণদের ভূমিকা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ। স্পেন যখন মুসলিমদের অধীনে ছিলো তখন ব্রিটিশ রাজা প্রতি বছর গোয়েন্দা পাঠাতো সেখানকার অবস্থা দেখার জন্য। গোয়েন্দা স্পেন এর গেইটে এসে দেখলো একটি ১৭-১৮ বছরের ছেলে কাঁদছে। সে তাকে জিজ্ঞেস করলো, তুমি কাঁদছো কেনো? তখন ছেলেটি বললো “আমার ছোড়া ১০ টি তীর এর মাঝে ৯ টী নিশানায় লেগেছে কিন্তু একটি নিশানায় লাগেনি। তাই আমি কাঁদছি। তখন গোয়েন্দা বললো, তো কী হয়েছে! আমি তো একটা তীরও নিশানায় লাগাতে পারি নাহ। তখন ছেলেটিসাথে সাথে জবাব দিলো, “আমার একটা নিশানা ব্যর্থ হবার কারণে একটা কাফির সেনা বেঁচে যাবে। যা আমি কখনোই মেনে নিতে পারি না। তখন গোয়েন্দা ব্রিটেনে ফিরে এসে রাজাকে বললো “স্পেন আক্রমন করার সময় এখন হয়নি। রাজা এর কারণ জিজ্ঞেস করলে গোয়েন্দা তাঁর এবং সেই মুসলিম তরুণটির মাঝে কথোপকথনের ঘটনা তুলে ধরলো।

বহু বছর পর যখন আবার সেই গোয়েন্দা স্পেন গেল সে তখন দেখতে পেলো যে স্পেন এর গেটের সামনে একটি তরুন দাঁড়িয়ে আছে এবং কাঁদছে। তখন সে তরুণটির কাঁদার কারণ জিজ্ঞেস করলে তরুণটি জবাব দিল যে তাঁর প্রেয়সী আরেক ছেলের সাথে পালিয়েছে। এখন তাঁর বেচে থাকার কোন মানে হয় নাহ। তখন গোয়েন্দা খুব উৎসাহের সাথে তাকে বললো “তাতে কি হয়েছে? তুমি আরেকটি জোগাড় করে ফেলবে”।

এরপর সে ব্রিটেন এসে সাথে সাথে রাজাকে বললো ‘স্পেন আক্রমণের সময় এখনই।” এবং সে বছর মুসলিমরা স্পেন এর দখলদারিত্ব হারিয়েছিলো। এই ঘটনা থেকেই বুঝা যায় মুসলিম তরুণদের ভুমিকা কত গুরুত্বপূর্ণ খিলাফত প্রতিষ্ঠায়। তাই প্রত্যেক তরুণকেই খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতে হবে। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা নিজেই বলেছেন,

“তোমরাই হলে সর্বোত্তম জাতি, মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। অতঃএব তোমরা সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহতে বিশ্বাস রাখবে।” (আল ইমরানঃ ১১০)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আরো বলেন,

 “তোমরা যদি ঈমান আনো এবং সৎকর্ম কর আল্লাহ তোমাদের ওয়াদা করেছেন পৃথিবীতে তোমাদের শাসনক্ষমতা দান করবেন যেমনটি দান করেছিলেন পূর্ববর্তীদের…………। (আন নূর- ৫৫)”

তরুণদের ইসলামের জন্য কাজ করা যে কত দরকার তা রাসূল (সা) এর এই হাদিস থেকেই বুঝা যায়। রাসূল (সা) বলেন,

“কিয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছাড়া কাউকেই সামনে আগাতে দেয়া হবে না।এর মাঝে একটী হলো তুমি তোমার যৌবনকাল কি কাজে ব্যায় করেছো?” [তিরমিযি]

অর্থাৎ আল্লাহ প্রত্যেক তরুনকেই তাঁর যৌবন কাল সম্পর্কে জিজ্ঞেসকরবেন।

তাই প্রত্যেক তরুণকেই বর্তমান সময়ে মুসলিমদের এই দুরাবস্থা থেকে মুক্ত করার জন্য খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে হবে।

রাসূল(সা) বলেন,

“ইসলাম এসেছে অপিরিচিত অবস্থায় এবং তা আবার অপরিচিত অবস্থায় ফিরে যাবে। সুতরাং অপরিচিতদের জন্য সুসংবাদ।” তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, অপরিচিত কারা ইয়া রাসুলাল্লাহ? তিনি বললেন, “অপরিচিত তারাই যারা মানুষকে ঠিক করবে, কিংবা সমাজব্যবস্থাকে ঠিক করবে যখন তা দুষিত অবস্থায় থাকবে।” (তাবারানী)

রাসূল (সা) আরো বলেন,

“নিশ্চয়ই আল্লাহ পৃথিবীর সব প্রান্ত আমাকে এক করে দেখিয়েছেন।আমি তার পূর্ব থেকে পশ্চিম অংশ দেখেছি। নিশ্চয়ই আমার উম্মতের কর্তৃত্ব তাতে পৌছাবে যা আমার জন্য এক করা হয়েছিলো তা হতে।” (আবু দাউদ)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের সবাইকে দুনিয়ায় নব্যুয়ত এর আদলে খিলাফাহ ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করার তৌফিক দান করুক, যাতে করে আমরা সেই গুরাবাদের একজন হতেপারি যাদের অন্তর থেকে কিয়ামতের দিন নূর ছড়াবে। এই দুয়া করি। আমীন।

রাকিব ইশরাক মুহাম্মদ ইরতিজা

 Torch Bearer 

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply