প্রশ্ন-উত্তর: ইসলামী ব্যাংকের সাথে Profit Sales (মুরাবাহা) প্রক্রিয়ায় লেনদেন করা সম্পর্কিত হুকুম

নিচের অনুবাদটি সম্মানিত মুজতাহিদ ও মুফাচ্ছির শাইখ আতা ইবন খলীল আবু আল-রাশতা (আল্লাহ তাকে হেফাজত করুন) কর্তৃক দেয়া এক প্রশ্নের জবাব 

প্রশ্ন: আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

সম্মানিত শাইখ, আমি ইসলামী ব্যাংকের সাথে profit sales (মুরাবাহা) প্রক্রিয়ায় লেনদেন করা সম্পর্কিত হুকুমটি স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি, উদাহরণস্বরুপ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়ায় গাড়ি বা বাড়ি ক্রয় করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। আমি জানি যে এটা হারাম কিন্তু যখন কাউকে এ ব্যাপারে উপদেশ দেই তখন বিস্তারিত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করতে পারিনা। আমি এমন একটি বাস্তবসম্মত উদাহরণ দিচ্ছি যার ব্যাপারে অনেকের ধারণা হচ্ছে তারা ইসলামী ব্যাংকের সাথে যেভাবে লেনদেন করছে এটা তার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ…নিজেদের জমিতে একটি পূর্ণাঙ্গ বসতবাড়ি তৈরি করে দেওয়ার জন্য যদি আমরা কোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে এভাবে চুক্তিবদ্ধ হই যে আমরা কিস্তিতে (চেক) তাদের প্রাপ্য শোধ করব এবং তারা ওয়েল্ডার, মিস্ত্রি, সিমেন্ট…প্রভৃতির যোগান দিবে এসবের উপর একটি নির্দিষ্ট হারে (উদাহরণস্বরুপ ১৫%) লাভের ভিত্তিতে যদিও এক্ষেত্রে তারা বাড়ির মালিক নয়, এই দুটো চুক্তির মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি?

উত্তর:

ওয়া আলাইকুম আস-সালামু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

১। ইসলামী ব্যাংকের সাথে profit sales প্রক্রিয়ায় কৃত লেনদেন শরীয়াহর সাথে সাংঘর্ষিক, যা নিচে ব্যাখ্যা করা হল:

প্রথমত: ব্যাংক এখানে গাড়ি বা ফ্রিজ কেনার আগেই তা বিক্রির জন্য ক্রেতার সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হচ্ছে। রাসূল (সা) আমাদেরকে এমন কিছু বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন যার মালিকানা আমাদের নেই, হাকিম ইবনে হিযাম থেকে বর্ণিত:

قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، يَأْتِينِي الرَّجُلُ يَسْأَلُنِي الْبَيْعَ، لَيْسَ عِنْدِي مَا أَبِيعُهُ، ثُمَّ أَبِيعُهُ مِنَ السُّوقِ فَقَالَ: «لَا تَبِعْ مَا لَيْسَ عِنْدَكَ»

আমি বললাম: “ইয়া রাসূলাল্লাহ, একজন লোক আমার কাছে আসলেন (একটি পণ্য) কেনার জন্য, কিন্তু তা আমার কাছে ছিলনা, আমি সেটা পরে বাজার থেকে এনে তার কাছে বিক্রি করে দিলাম। তিনি (সা) বললেন: এমন কিছু বিক্রি করবেনা যার মালিক তুমি নও। ” [আহমাদ থেকে বর্ণিত]

লোকটি রাসূল (সা) এর কাছে ঐ ক্রেতার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন যিনি তার কাছ থেকে এমন কিছু কিনতে আসলেন যা তার কাছে ছিলনা, তাই তিনি বাজার থেকে তা কিনে আনলেন এবং ক্রেতার কাছে বিক্রি করলেন।

রাসূল (সা) এরূপ করতে নিষেধ করলেন, যদিনা পণ্যটি তার কাছে বর্তমান থাকে এবং সে তা বিক্রেতাকে প্রদর্শন করে, যাতে বিক্রেতা পণ্যটি ক্রয় করা বা না করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

ব্যাপারটি আরেকটু ব্যাখ্যা করা যাকঃ যদি কেউ ব্যাংকের কাছ থেকে অর্থ ধার চায় তাহলে ব্যাংক তার কাছে এর কারণ জানতে চায়। ঋণগ্রহীতা তখন একটি ফ্রিজ বা গাড়ি বা ওয়াশিং মেশিন কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করলে ব্যাংক পণ্যটি কিনে দেওয়ার জন্য তার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় এবং কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য একটি নির্দিষ্ট মূল্যের বিনিময়ে তার কাছে বিক্রি করে।

এক্ষেত্রে ব্যাংক ক্রেতার জন্য ফ্রিজটি ক্রয় করার পূর্বেই সম্পাদিত চুক্তিটি মানতে ক্রেতা বাধ্য হয়ে পড়েন; ফলে ক্রেতা ব্যাংক থেকে ফ্রিজটি কেনার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার সুযোগ পাচ্ছেননা, কারণ ফ্রিজটি ব্যাংকের মালিকানায় আসার আগেই ব্যাংকের সাথে তার মতৈক্য হয় এবং এই অবস্থায়ই চুক্তিটি সম্পাদিত হয়।

যদি বলা হয় যে পণ্যটি কেনার পরে ব্যাংক তা ক্রেতার কাছে বিক্রি করেছে তাহলে সেটা হবে ভুল, কারণ ব্যাংক এবং ক্রেতার মধ্যে একটি বাধ্যবাধকতা হিসেবে চুক্তিটি সম্পাদিত হয়েছে ব্যাংক ফ্রিজটি ক্রয় করার পূর্বেই; প্রমাণ স্বরূপ বলা যায় যে ব্যাংক ক্রেতার জন্য ফ্রিজটি ক্রয় করার পর তিনি তা কিনতে কোনোভাবেই অস্বীকৃতি জানাতে পারবেননা, কারণ ব্যাংক ফ্রিজটি ক্রয় করার পূর্বেই একটি বাধ্যবাধকতা হিসেবে চুক্তিটি সম্পাদিত করেছে।

যদি ব্যাংকের কোন গুদাম থাকে এবং তাতে উদাহরণস্বরুপ যদি প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে ফ্রিজ থাকে এবং ক্রেতা অন্য যেকোনো বিক্রেতার সাথে লেনদেন করার মত করে পণ্যটি কেনা বা না কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তাহলে এক্ষেত্রে নগদে অথবা কিস্তিতে পণ্য বিক্রি বৈধ বলে বিবেচিত হবে।

দ্বিতীয়তঃ ক্রেতা যদি কোন কিস্তির মূল্য পরিশোধ করতে দেরি করেন তাহলে সে কিস্তির মূল্য অর্থাৎ ঋণের মূল্যমান বাড়ানো অবৈধ, কারণ এটা হচ্ছে রিবা (সুদ) যাকে বলা হয় রিবা আন-নাসি’য়া (accrued interest)। জাহিলি যুগে যখন ঋণ পরিশোধের সময় আসত তখন ঋণগ্রহীতা যদি নির্ধারিত সময়ে তা শোধ করতে না পারতেন তখন এরূপ প্রচলন ছিল। ইসলাম ঋণের মূল্যমান বাড়ানোকে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে এবং দুঃসময়ে থাকা ঋণগ্রহীতাকে ঋণের মূল্যমান কোন রকম বৃদ্ধি ছাড়াই পরিশোধের সুযোগ করে দিয়েছে।

((وَإِن كَانَ ذُو عُسْرَةٍ فَنَظِرَةٌ إِلَىٰ مَيْسَرَةٍ وَأَن تَصَدَّقُوا خَيْر لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ))

“যদি ঋণগ্রহীতা অভাবগ্রস্ত হয়, তবে তাকে সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত সময় দেয়া উচিত। আর যদি ক্ষমা করে দাও, তবে তা খুবই উত্তম যদি তোমরা উপলব্ধি কর।” [আল বাক্বারাহ : ২৮০]

উপরের আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে ব্যাংকের সাথে এই ধরনের লেনদেন অবৈধ।

২। বিল্ডিং কনট্রাক্টরদের সাথে সাদৃশ্যতার যে বিষয়টি আপনি উল্লেখ করেছেন তা ঠিক নয়। কনট্রাক্টর এমন কোন বাড়ি বিক্রির চুক্তিতে আবদ্ধ হচ্ছেননা যা তার মালিকানায় নেই, বরং জমির মালিক এখানে কনট্রাক্টরের সাথে একটি লিজিং কনট্রাক্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যার ফলে কনট্রাক্টর তার কাজ সম্পন্ন করার জন্য বাড়ির মালিকের কাছ থেকে কিস্তিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পাবেন যা পারিশ্রমিকের বাস্তবতা অনুযায়ী বাড়ির মালিক কনট্রাক্টরকে দিতে সম্মত হয়েছেন। এটি এমন কোন অস্পষ্ট বিক্রয় চুক্তি নয় যেখানে বাড়ির মালিকানা পর্যন্ত বিক্রেতার নেই।

বাস্তবতা যদি এমন হয় যে কোন একটি ফ্ল্যাটের নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার আগেই তা বিক্রির চুক্তি সম্পাদন হচ্ছে অথচ কনট্রাক্টরের মালিকানাও যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত নয় তাহলে তার বিক্রি অবৈধ।

আপনাদের ভাই আতা’ ইবনু খলীল আবু আল-রাশতাহ

২৪ রজব, ১৪৩৪ হিজরী
৩ জুন, ২০১৩ খৃষ্টাব্দ

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply