সুমাইয়া বিন্‌তু খুব্‌বাত (রা)-এর ঈমানী দৃঢ়তা

সুমাইয়া বিন্‌তু খুব্‌রাত (রা) আবু হুজাইফা ইবনুল মুগীরা আল মাখযুমীর দাসী ছিলেন। ইয়াসির (রা) ছিলেন ইয়ামানের অধিবাসী। একবার তিনি মক্কায় এসে এখানেই স্থায়ীভাবে থেকে যাবার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

বাইরের কেউ মক্কায় স্থায়ীভাবে থাকতে হলে কোনো না কোনো গোত্রের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ হতে হতো। ইয়াসির (রা) আবু হুযাইফা ইবনুল মুগীরার সঙ্গে মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ হন এবং মক্কাতে বসবাস শুরু করতে থাকেন।

আবু হুযাইফা তার দাসী সুমাইয়া (রা)-কে ইয়াসির (রা)-এর সঙ্গে বিয়ে দেন। সুখেই কাটছিলো তাঁদের দিনগুলো।

ইতোমধ্যে মুহাম্মাদুর রাসূল (সা) নবুয়্যত লাভ করেন। গোপনে তিনি ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন। ইয়াসির (রা) ও সুমাইয়া (রা) ইসলামের কথা অবগত হন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন।

এক সময়ে তাঁদের ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশ হয়ে পড়ে। আবু জাহল ও তার সঙ্গীরা তাঁদেরকে ইসলাম ত্যাগ করার জন্য চাপ দিতে থাকে। তাঁরা তাঁদের ঈমানের ওপর অটল থাকেন।

অতঃপর, তাঁদেরকে দিনের বেলা লোহার পোষাক পরিয়ে রোদে দাঁড় করিয়ে রেখে শাস্তি দেয়া শুরু হয়। খুবই যন্ত্রণাদায়ক ছিল এই শাস্তি। প্রচণ্ড উত্তাপে তাঁদের শরীর দুমড়ে যেতে থাকে। কিন্তু তাঁদের ঈমানে এতোটুকু চিড় ধরেনি।

একদিন আবু জাহল ইয়াসির (রা)-কে ধরে বেদম পিটুনি দেয়। আর বলতে থাকে ইসলাম ত্যাগের ঘোষণা দিতে। আল্লাহ্‌র প্রেমিক ইসলাম ত্যাগের ঘোষণা দিলেন না। অনবরত চলতে থাকে পিটুনি। আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়ে যায় তাঁর শরীর। এক পর্যায়ে এসে তিনি শহীদ হয়ে যান।

ইয়াসির (রা)-এর স্ত্রী সুমাইয়া (রা)-কে সারাদিন রোদে দাঁড় করিয়ে রেখে শাস্তি দেওয়া হতো। সন্ধ্যায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হতো।

একদিন শাস্তি ভোগ করে ক্লান্তদেহে তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। আবু জাহল তাঁকে দেখে গালমন্দ করতে থাকে। ইসলাম ত্যাগ করতে বলে। সুমাইয়া (রা) তার কথায় কান দিলেন না। ভীষণ ক্ষেপে যায় আবু জাহল। তার হাতে ছিল বল্লম। সে বল্লমটি ছুঁড়ে দেয় সুমাইয়া (রা)-কে লক্ষ্য করে। বল্লমটি তাঁর লজ্জাস্থান ভেদ করে পেছনের দিকে চলে যায়। প্রবল বেগে ঝরতে থাকে রক্ত। 

এই কঠিন অবস্থাতেও তিনি আঁকড়ে থাকেন ঈমানের ঐশ্বর্য। সুমাইয়া বিন্‌তু খুব্‌বাত (রা) শহীদ হন। আল্লাহ্‌র সন্তোষ অর্জন করে পৌঁছে যান জান্নাতের ঠিকানায়।

মূল: এ কে এম নাজির আহমেদ কর্তৃক লিখিত আসহাবে রাসূলের জীবনধারা

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply