বিশ্ববাসীর উপর আমেরিকার গুপ্তচরবৃত্তি

কিছুদিন পূর্বে সি.আই.এ (central intelligence agency) এবং এন.এস.এ (national security agency) এর সাবেক পরামর্শক এডওয়ার্ড স্লোডেন কর্তৃক ফাঁস করা তথ্যের মাধ্যমে জানা যায় যে আমেরিকা সারা বিশ্বের সাধারণ নাগরিকদের ব্যাক্তিগত ইমেইল, ছবি, ফোনালাপ এবং তাদের পাঠানো ক্ষুদ্র বার্তার (SMS) উপর গোপন নজরদারি করার জন্য প্রিজম (PRISM) নামে একটি গোপন কর্মসূচি পরিচালনা করছে। মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের এই ঘৃণ্য কর্মসূচির জন্য আমেরিকা শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সবার কাছ থেকে কঠিন প্রতিবাদের মুখে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী আমেরিকার নানা অপকর্মের দোসর ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর জাস্টিস কমিশনার আমেরিকার এ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে একটি প্রতিবাদ লিপি পাঠায়, যেখানে সে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর নাগরিকদের ব্যক্তিগত অধিকার সুরক্ষা সম্পর্কিত সাতটি প্রশ্নের উত্তর দাবি করে। তাছারা চীনও আমেরিকার এই ঘৃণ্য দ্বিমুখী নীতির তীব্র সমালোচনা করেছে। চীনের একটি জাতীয় দৈনিক (The China Daily) চীনের পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লী হেইডং (Li Haidong) এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, “দীর্ঘদিন যাবত আমেরিকা চীনকে ইন্টারনেট ভিত্তিক গুপ্তচরবৃত্তির জন্য দায়ী করে আসছে। কিন্তু এখন এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সবচেয়ে বড় শত্রু হলো এই আমেরিকা সরকারের লাগামহীন ক্ষমতা।”

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা স্বভাবসুলভভাবেই এই কর্মসূচির পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছে বিশ্ববাসীর উপর নজরদারি করার অধিকার তার সরকারের রয়েছে, কারণ আমেরিকার জনগণকে সন্ত্রাসবাদের হুমকি থেকে রক্ষা করা তার সরকারের দায়িত্ব। ওবামার এই বক্তব্য এটাই প্রমাণ করে যে আমেরিকার তথাকথিত ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ কোন কিছুই অলঙ্ঘনীয় নয়। এবং এখন পুরো বিশ্বই আমেরিকার কপটতা ও দ্বিমুখী আচরণে অতিষ্ঠ এবং চরমভাবে বিরক্ত।

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যুদ্ধ মূলতঃ পুরো বিশ্বের বিরুদ্ধে আমেরিকার যুদ্ধ। এর আওতায় আমেরিকা যেখানে খুশি এবং যার উপর খুশি গোপন নজরদারি করে চলেছে। এক্ষেত্রে তারা শত্রু কিংবা মিত্র তোয়াক্কা করছে না, কোন আইন তারা মানছে না এবং মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করে চলার অধিকারকেও বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়েছে। বস্তুতঃ এর ফলে দেশে কিংবা দেশের বাইরে কেউই প্রকৃত নিরাপদ কিংবা স্বাধীন নয়।

২০০৯ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী আমেরিকা ৬১,০০০ হ্যাকিং অপারেশন পরিচালনা করেছে। এর জবাবে মুসলিম বিশ্বের শাসকরা বরাবরের মতই নিরবতা পালন করে। তাদের এই নিরব দর্শকের ভুমিকা কোন অংশেই আমেরিকার প্রিজম কর্মসূচির চেয়ে কম জঘন্য নয়। কারণ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যুদ্ধের মূল প্রতিপক্ষ হলো মুসলিমরা। আর তাই আমেরিকার এই গোপন নজরদারি কর্মসূচির মূল লক্ষবস্তু হলো মুসলিম বিশ্ব এবং বিশেষতঃ রাজনৈতিক ইসলামের উত্থান ঠেকানো। কিন্তু মুসলিম বিশ্বের ‘শাসকেরা’ হলো পশ্চিমাদের দাস, আমেরিকার দুর্গন্ধযুক্ত পঁচা আদর্শের অনুসারি ক্রীড়নক, বিশ্বব্যাপী তাদের মিথ্যা বুলির মুখপাত্র এবং ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রু। এ কারণেই মুসলিমদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় আমেরিকার এই হিংস্র থাবা সত্ত্বেও তাদের নিরবতা কোন আশ্চর্যজনক ঘটনা নয়। এই মেরুদন্ডহীন ‘শাসকরা’ ইতিমধ্যে আমেরিকা কর্তৃক তাদের আকাশ সীমার উপর দখল মেনে নিয়েছে, যেখানে মালি, ইয়েমেন, সুদান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরাক ও অন্যান্য মুসলিম ভূখন্ডে চালকবিহীন ড্রোন ব্যবহার করে আমেরিকা সাধারণ নিরস্ত্র মানুষদের পাখির মত হত্যা করে চলেছে। এই নির্লজ্জ, বেহায়া ‘শাসকরা’ একত্রে জড়ো হয়ে আমেরিকার খাতিরে ইসলামের পূণ্যভূমি আল-শাম এ খিলাফতের উত্থানকে ঠেকানোর জন্য সিরিয়ার মুসলিমদেরকে নির্বিচারে হত্যা করার পক্ষে মত দিয়েছে। আর তাই যেখানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের শাসকরা তাদের নিজেদের জনগণের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে সোচ্চার সেখানে মুসলিম বিশ্বের শাসকদের এহেন নিরবতা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

আমরা জানি, বিজয় সুনিশিচতভাবে আল্লাহ্‌’র পক্ষ থেকেই আসে এবং বিশ্ববাসীর উপর আমেরিকার এই অত্যাচারী আগ্রাসনের অবসান খুবই নিকটে। সুতরাং খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের প্রচেষ্টাকে বেগবান করতে হবে এবং আমাদের রক্ষক হিসেবে একজন খলীফাকে নিয়োগ করতে হবে যিনি আমাদের শত্রুর বন্দুকের নল এবং ক্ষেপনাস্ত্রের নিশানা থেকে রক্ষা করবেন। যিনি আমাদের মর্যাদা, সম্মান ও আবাসস্থলের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবেন এবং আমাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করবেন। আমাদের মুসলিম ভাই যারা পৃথিবীর বুকে ইসলামকে আবার ফিরিয়ে আনার জন্য সংগ্রাম করছে, তাদের সাথে আমাদের আহ্বান ও প্রচেষ্টাকে একত্রিত করে বলতে হবে: “আমাদের এই কাজ শুধুমাত্র আল্লাহ্‌’র জন্য, আমাদের এই কাজ শুধুমাত্র আল্লাহ্‌’র জন্য।” এবং “আপনি ছাড়া আমাদের আর কোন সাহায্যকারী নেই, হে আল্লাহ্‌!

আসুন খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করি যাতে করে কুফরের অন্ধকার থেকে বের হয়ে, ইসলাম ও ন্যায়পরায়ণতার আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে আবার পৃথিবীর নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারি।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply