প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ বিভিন্নভাবে তার কাঙ্খিত সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণের চেষ্টা চালিয়েছে এবং অনাকাঙ্খিত সন্তানের জন্ম নিরোধ ও বর্জনের জন্য অতীতে প্রচলিত বহুবিদ উপায়ও অবলম্বন করেছে। আইয়্যামে জাহিলিয়ার যুগে, ছেলে সন্তান খুবই কাঙ্খিত ছিল কেননা সে যুদ্ধ-বিগ্রহে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে এবং তাদের গোত্রকে উন্নতি ও অগ্রগতির দিকে পরিচালিত করবে। অপরদিকে, কন্যা সন্তানকে জীবন্ত পথিত করে ধ্বংস করা হতো। যেমন: আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,
“আর যখন কন্যা সন্তানকে জিজ্ঞাসা করা হবে কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হলো।” [সূরা আত-তাকউইর: ৯]
যখন অনাকাঙ্খিত সন্তান নষ্ট করার অন্যান্য পদ্ধতি উদ্ভাবিত হলো, যেমন: মায়ের গর্ভাশয় পর্যবেক্ষণ করে সন্তানটির লিঙ্গের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা, মানুষ তখন সন্তানটি অযাচিত লিঙ্গের হলে গর্ভপাত ঘটিয়ে সন্তানটিকে ধ্বংস করার উপায় অবলম্বন করে।
পরবর্তীকালে যখন আধুনিক প্রযুক্তির অগ্রগতি হলো এবং সেই সাথে গর্ভাশয়ে অবস্থিত ভ্রুনটি সহজেই পর্যবেক্ষণ ও যাচাই-বাছাইয়ের পদ্ধতি সহজতর হলো তখন তারা উদ্ভাবন করলো যে, জিনের এসিডিক প্রবণতা চূড়ান্তভাবে কন্যা সন্তানের দিকে ধাবিত হয়, অপরদিকে এলকেলিন জিন পুত্র সন্তানের দিকে ধাবিত হয়। ফলে তারা সঙ্গমের পূর্বে নারীর যোনিপথে উপযুক্ত একটি ক্ষারযুক্ত (এলকেলিন) পরিবেশ তৈরীর চেষ্টা করলো। আর এভাবেই তার এলকেলিন ডুশ (Douch) নামে এক রাসায়নিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করল যা একটি ছেলে সন্তানের জন্ম নিশ্চিত করবে।
পরবর্তীতে তারা খাদ্যভ্যাস নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি অবলম্বন করলো যা নারীর দেহে এসিডিক বা এলকেলিন পরিবেশ তৈরীতে সহায়তা করবে। এই গবেষণার মাধ্যমে তারা অনুধাবন করতে পারল যে, খাদ্য প্রক্রিয়া গর্ভাশয়ে অবস্থিত ডিম্বকোষের লিঙ্গ নির্ধারণের প্রবণতাকে দুইভাবে প্রভাবিত করে।
প্রথমতঃ এই প্রক্রিয়া নারীর যোনিপথে ও গর্ভাশয়ে এসিডিক বা এলকেলিন পরিবেশ তৈরী করে। তারা দেখতে পেল যে, পটাশিয়াম ও সোডিয়াম গর্ভাশয়ের মৌলিক অবস্থাকে এলকেলিনে রূপান্তর করে যা পরবর্তীতে একটি পুত্র সন্তান জন্মের দিকে ধাবিত হয়। অপরদিকে ম্যাগনেশিয়াম ও ক্যালশিয়াম এমন একটি এসিডিক পরিবেশ তৈরী করে যা কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়।
দ্বিতীয়তঃ খাদ্য প্রক্রিয়া ডিম্বাণু প্রাচীরকে প্রভাবিত করে এবং একে নারী বা পুরুষ যেকোন শুক্রাণু গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। আর এভাবেই তারা দম্পতিদেরকে বিশেষ করে নারীদেরকে পুত্র সন্তান লাভের জন্য বিশেষ এক ধরনের ডায়েট (খাদ্যাভ্যাস) গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করে। যে ডায়েট এলকেলিনের পরিবেশ নিশ্চিত করে যেমনঃ লবনাক্ত গোশত খাওয়া, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার পরিহার করা, মসলাযুক্ত খাবার গ্রহণ করা, ফলমূল খাওয়া এবং পটাশিয়াম জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করা। এরূপ খাদ্যাভ্যাস শরীরে এলকেলিন পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
অপরদিকে যখন কন্যা সন্তানের আকাঙ্খা করা হয় তখন তারা এমন খাদ্য গ্রহণের পরামর্শ দেয় যা শরীরে এসিডিক উপাদান তৈরী করবে যেমনঃ দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ, কম লবন খাওয়া, গোশত পরিহার করা বিশেষ করে লবনাক্ত গোশত, ফলমূল, মসলাযুক্ত ও সুগন্ধিযুক্ত খাবার পরিহার করা এবং ক্যালশিয়াম জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করা। ঐ খাদ্যাভ্যাস শরীরে এসিডিক উপাদান তৈরী করে।
পরবর্তীতে তারা অন্য এক পদ্ধতি উদ্ভাবন করল যেখানে তারা দেখলো যে, যদি গর্ভাশয়ে নারীর ডিম্বাণুটি পুরুষের শুক্রাণুর আগে প্রবেশ করে অর্থাৎ যখন নারীর ডিম্বাণুটি নির্গত হয় এবং পুরুষের শুক্রাণুটি তার উপর পতিত হয়ে নিষিক্ত হয় তখন আশা করা যায় যে, সন্তানটি পুত্র সন্তান হবে। অপরদিকে যখন পুরুষের শুক্রাণুটি প্রথমে নির্গত হয় এবং নারীর ডিম্বাণুটি তার উপর পতিত হয়ে নিষিক্ত হয় তখন সন্তানটি কন্যা সন্তান হবে বলে ধরে নেয় যায়। উদাহরণস্বরূপ, যদি নারীর ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নির্গত হওয়ার ঠিক পরপরই সঙ্গম করা হয় তবে সন্তানটি খুব সম্ভব পুত্র সন্তান হবে। অন্যাথায় কন্যা সন্তান হবে। অর্থাৎ গর্ভাশয়ে ডিম্বাণু অবস্থানকালে যদি সঙ্গম করা হয় (ডিম্বাশয় থেকে ডিম্ব নির্গত হওয়ার একদিনের মধ্যে) তখন পুত্র সন্তান হবে। আর যদি ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নির্গত হওয়ার পূর্বেই সঙ্গম করা হয় তবে কন্যা সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। ফলে তারা পরামর্শ দেন যে, যদি নিষিক্ত ডিম্বাণুতে অনাকাঙ্খিত সন্তান জন্মের সম্ভাবনা থাকে তবে বীর্যপাতের ঠিক পূর্বমুহুর্তে সঙ্গমের বিরতি টানা বা ‘আজল’ করা (অথবা Contraception ব্যবহার করা) উচিৎ।
আর যদি কাঙ্খিত সন্তানের সম্ভাবনা থাকে তবে সঙ্গম চালিয়ে যাওয়া উচিৎ। ফলে আজল বা সঙ্গমে বিরতি এবং Contraception সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণের একটি মাধ্যমে পরিণত হলো।
এপদ্ধতি কার্যকর করার জন্য নারীর ডিম্বাণু নির্গত হওয়ার সময়ের উপর দৃষ্টি রাখতে হয় যাতে করে যদি পুত্র সন্তান কাঙ্খিত হয় তাহলে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নির্গত হওয়ার পূর্বে যেন সঙ্গম না করা হয় অর্থাৎ গর্ভাশয়ে পুরুষের শুক্রাণু প্রবেশের পর যেন স্ত্রীর ডিম্বাণু নির্গত না হয়। আর এজন্য এসময়ে আজল অথবা Contraception ব্যবহার করা হয় এবং পুরুষকে তার সঙ্গম নিয়ন্ত্রণ করতে হয় যেন গর্ভাশয়ে স্ত্রীর ডিম্বাণু বিদ্যমান থাকাবস্থায় পুরুষের শুক্রাণু নির্গত হয়।
অপরদিকে, কন্যা সন্তান কাঙ্খিত হলে স্ত্রীর ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নির্গত হওয়ার মুহুর্তে কিংবা তার ঠিক পরপরই যেন সঙ্গম না করা হয় বরং ডিম্বাণু নির্গত হওয়ার ঠিক পূর্বমুহুতেই যেন সঙ্গম করা হয়। কেননা যদি ডিম্বাণু নির্গত হওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময়ের অতি পূর্বেই সঙ্গম হয় তবে ডিম্বাণুটি নিষিক্ত হওয়ার পূবেই পুরুষের শুক্রাণুটি মারা যাবে।
এ সম্পর্কে রাসূলের (সা) একটি হাদীস আছে। রাসূল (সা) বলেন, “পুত্র সন্তানের ক্ষেত্রে পুরুষের বীর্যের পূর্বে নারীর বীর্য নির্গত হয় এবং কন্যা সন্তানের ক্ষেত্রে নারীর বীর্যের পূর্বে পুরুষের বীর্য নির্গত হয়।” [বুখারী]
এই হাদীসটি ইমাম মুসলিমও তার সহিহ গ্রন্থের ব্যাখ্যায় বর্ণনা করেছেন।
এই হাদীস ব্যাখ্যায় ইমাম মুসলিম (রহ.) হযরত ছাওবান (রা.) কর্তৃক বর্ণিত একটি হাদীস বর্ণনা করেন। বর্ণনাকারী বলেন, একবার এক ইহুদী ধর্মযাজক রাসূলের (সাঃ) এর নিকট এসে কিছু প্রশ্ন করল। একপর্যায়ে সে পুত্র সন্তানের প্রসঙ্গে আসলো তখন রাসূল (সা) বললেন, “যখন তারা (স্বামী/স্ত্রী) যৌনমিলন করে এবং পুরুষের সারবস্তু (শুক্র) নারীর সারবস্তুর (ডিম্ব) উপর বিজয়ী হয়, তখন তা পুত্র সন্তান হয় আর তা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার আদেশেই সৃষ্টি হয়। আর যখন নারীর সারবস্তু পুরুষের সারবস্তুর উপর বিজয়ী হয় তখন তা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার আদেশেই কন্যা সন্তান হয়।”
পুরুষের শুক্র নারীর ডিম্বের উপর বিজয়ী হওয়ার অর্থ হলো নারীর ডিম্বাণু নির্গত হওয়ার পর পুরুষের শুক্রাণু নির্গত হওয়া। আর এজন্য গর্ভাশয়ে এ দুটি উপাদানের (শুক্র ও ডিম্ব) মধ্যে যে কোন একটিকে আগে থেকেই বিদ্যমান থাকতে হবে। আর তখনই আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার নির্দেশে পুত্র সন্তান জন্মলাভ করবে অথবা বিপরীতে কন্যা সন্তান জন্ম নিবে। অর্থাৎ নারীর ডিম্ব পুরুষের শুক্রের উপর বিজয়ী হবে অর্থাৎ তা পুরুষের শুক্রের পরে ও তার উপর বর্তিত হবে।
অতঃপর তারা এক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অবতারণা করল, তা হলো সিলেক্টিভ স্পার্ম ভ্যাকসিনেশন। এই পদ্ধতিতে পুরুষের শুক্রের Y ক্রোমোজোম থেকে X ক্রোমোজোমকে পৃথক করে গর্ভাশয়ের বাইরে একটি টেস্টটিউবে রাখতে হয় এবং পরবর্তীতে তা গভীর পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়।
বিজ্ঞানীরা এই ধারণায় উপনীত হয়েছেন যে, পুরুষের শুক্রাণুতে Y এবং X উভয় ক্রোমোজোমই বিদ্যমান থাকে (Y পুরুষ ক্রোমোজোম আর X স্ত্রী ক্রোমোজোম) আর নারীর ডিম্বাণুতে শুধু XX ক্রোমোজোম থাকে। তারা উদ্ভাবন করলেন যখন পুরুষের শুক্রাণুর Y ক্রোমোজোমটি নারীর ডিম্বাণুর সংস্পর্শে এসে নিষিক্ত হয় তখন YX জিন গঠিত হয় যা পরবর্তীতে পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। অপরদিকে যখন পুরুষের শুক্রাণুর X ক্রোমোজোম নারীর ডিম্বাণুর সংস্পর্শে এসে নিষিক্ত হয় তখন একটি XX জিন গঠিত হয় যার ফলে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। সে অনুযায়ী X ও Y ক্রোমোজোমকে পৃথক করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। কেউ যদি পুত্র সন্তান চান তাহলে তারা নারীর ডিম্বাণুর সাথে পুরুষের Y ক্রোমোজোমকে নিষিক্ত করে একটি টেস্টটিউবে স্থাপন করেন। আর কন্যা সন্তান চাইলে নারীর ডিম্বাণুর সাথে X ক্রোমোজোমকে নিষিক্ত করে টেস্টটিউবে স্থাপন করেন।
এছাড়া আরও একটি পদ্ধতি আছে যা কিছুটা ভিন্ন মাত্রার। এই পদ্ধতিতে টেস্ট টিউবে ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার পর সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। নিষিক্ত ডিম্বাণুর সাথে YY ক্রোমোজমের সংস্পর্শে হয় কন্যা সন্তান আর XY ক্রোমোজমের সংস্পর্শে হয় পুত্র সন্তান। অতএব, পুত্র সন্তান চাইলে তার (স্ত্রী) গর্ভাশয়ে XY ক্রোমোজোম নিষিক্ত ডিম্বাণু স্থাপন করা হয়। অপরদিকে কেউ কন্যা সন্তান চাইলে তার মধ্যে XX ক্রোমোজোম নিষিক্ত ডিম্বাণু স্থাপন করা হয়।
উভয় পদ্ধতির উদ্দেশ্যই এক, তথাপি প্রথম পদ্ধতিতে নিষিক্ত করার পূর্বে পুরুষের শুক্রাণুটি প্রথমে পরীক্ষা করে X ও Y ক্রোমোজোম পৃথক করা হয় আর দ্বিতীয় পদ্ধতিতে নিষিক্ত ডিম্বাণু পরীক্ষা করে XX (স্ত্রী) বা XY (পুরুষ) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণের উপরোক্ত বাস্তবতা উপলদ্ধির পর নিম্নে ইসলামী শারী’আহ্’র হুকুম বর্ণনা করা হলো:
(ক) গর্ভাবস্থায় কোন সন্তান হত্যা করা হারাম কেননা তা উদ্দেশ্যমূলক ও ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয় যার শাস্তি হলো পরকালে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়া। আর পৃথিবীতে এর শাস্তি হলো নিহতের অভিভাবক যদি ক্ষমা না করেন তবে কিসাস কার্যকর করতে হবে আর নিহতের অভিভাবক ক্ষমা করে দিলে মুক্তিপন প্রদান করতে হবে।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুসলমানকে হত্যা করে তার পরিণাম হলো জাহান্নাম, সেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান করবে। তার উপর আল্লাহ্’র ক্ষোভ ও অভিশাপ আর তার জন্য রয়েছে ভয়ংকর শাস্তি।” [সূরা নিসা: ৯৪]
(খ) যদি পিতামাতা গর্ভাশয়ে অবস্থিত কোন ভ্রুনকে অনাকাঙ্খিত মনে করে হত্যা করে অর্থাৎ ভ্রুনটি হলো কন্যা আর পিতা পুত্র সন্তান কামনা করছেন অতঃপর তিনি ভ্রুনটি হত্যা করলেন। এটা সম্পূর্ণভাবে হারাম এবং শাস্তিযোগ্য পাপ।
বুখারী ও মুসলিম থেকে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, “একবার হুযাইল গোত্রের দুই মহিলার মধ্যে ঝগড়া বাধলো তখন একজন অপরজনকে লক্ষ্য করে একটি পাথর নিক্ষেপ করলো এতে সে মহিলার গর্ভপাত হয়ে গেল। তখন রাসূল (সা) বিচারের রায় দিলেন যে, ভ্রুন হত্যাকারীকে মুক্তিপন হিসেবে একজন পুরুষ বা স্ত্রী দাস/দাসী মুক্ত করতে হবে।”
(গ) সাময়িকভাবে যৌন মিলন থেকে বিরত থাকা বা যৌনলিমন করার সময় বীর্যপাতের পূর্বে আজল করা, নির্দিষ্ট কোন খাদ্য দ্রব্য গ্রহণ করা, এসিডিক বা এলকেলিন যেকোন ধরনের ঢুশ ব্যবহার করা বা যোনিপথ ধৌত বা পরিস্কার করা এইসব কিছুই জায়েয। এতে কোন ত্রুটি নেই।
স্ত্রীর যোনিপথের বাইরে বীর্যপাত বা আজল করা সম্পর্কে ইমাম বুখারী (রহ.) আ’তা কর্তৃক যাবির এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেন, “আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর সময়ে যখন কুরআন নাযিল হতো তখন আজল করতাম।” ইমাম মুসলিম কর্তৃক এরূপ আরেকটি বর্ণনা পাওয়া যায়, “আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর সময়ে আজল করতাম, তিনি (সা) তা জানতেন এবং আমাদেরকে তা করতে নিষেধ করেননি।”
খাদ্য বা ঢুশ গ্রহণের ক্ষেত্রে এগুলো খাদ্য, পানীয় ও গোসলের দলিলাদি দ্বারা প্রমাণিত।
(ঘ) পুরুষের শুক্রাণু থেকে পুরুষ ক্রোমোজোম ও স্ত্রী ক্রোমোজোম আলাদা করা অতঃপর স্ত্রীর ডিম্বাণুকে পুরুষের Y ক্রোমোজোমে রসাথে নিষিক্ত করা (পুত্র সন্তানের ক্ষেত্রে) অথবা X ক্রোমোজোমের সাথে নিষিক্ত করা (কন্যার ক্ষেত্রে) অথবা পুরুষ ও স্ত্রী ক্রোমোজোমকে পৃথক করে কাঙ্খিত লিঙ্গের ক্রোমোজোমকে গর্ভাশয়ে স্থাপন করা এসকল প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি জায়েয নাই। কেননা এগুলো গর্ভধারণে অক্ষম কোন নারীকে চিকিৎসা বা গর্ভধারণের উপযোগী করার কোন প্রক্রিয়া নয়। এবং এ পদ্ধতি স্বাভাবিকভাবে কোন পুরুষের শুক্রাণু দ্বারা স্ত্রীর ডিম্বাশয়কে টেস্টটিউবে নিষিক্ত করণের চিকিৎসা পদ্ধতি বলেও বিবেচিত নয়। এটা বরং নারী ও পুরুষ জিনকে পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া, এটা এমন কোন প্রক্রিয়া নয় যা স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণে অক্ষম কোন নারীকে গর্ভধারণে সক্ষমতা দিবে। সংক্ষেপে এটা কোন চিকিৎসা বা বন্ধাত্ব দূরীকরণের কোন উপায়ও নয়।
এ প্রক্রিয়াটির বাস্তবায়ন কারো গুপ্তাঙ্গ প্রদর্শন ব্যতিত সম্ভবপর নয়। কেননা স্ত্রী ডিম্বাণু সংগ্রহ করতে ও তা প্রতিস্থাপন করতে অবশ্যই যৌনাঙ্গ প্রদর্শন করতে হবে। এরূপ প্রদর্শন সম্পূর্ণ হারাম এবং শুধুমাত্র চিকিৎসার উদ্দেশ্যেই যৌনাঙ্গ প্রদর্শন অনুমোদিত অন্য কোন কারণে নয়। যেহেতু উপরোক্ত শুক্রাণু ও ডিম্বাণু পৃথকীকরণ ও নির্ধারণের বিষয়টি চিকিৎসা সংক্রান্ত কোন বিষয় নয় সেহেতু এই উদ্দেশ্যে যৌনাঙ্গ প্রদর্শন জায়েয নেই এবং তা হারাম।
পরিশেষে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা উচিৎ যা মূলতঃ ইসলামের আকীদা ও বিশ্বাসের সাথে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ এসকল পদ্ধতি ও গবেষণার মানে এই না যে মানুষের সৃষ্টি করার ক্ষমতা আছে, মানুষ শুধু নারী-পুরুষের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী এবং নিষিক্তকরণ প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষ্ণ করতে পারে, যেগুলো আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কর্তৃক সৃষ্ট ও নির্ধারিত এবং তিনি নারী-পুরুষের মধ্যে এই বৈশিষ্টগুলো সন্নিবিহিত করেছেন। মানুষ শুধু এই মহিমান্বিত সৃষ্টিপ্রক্রিয়া ও পদ্ধতির ব্যাখ্যা প্রদান ও পর্যালোচনা করতে পারে, সে তার তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে বিশেষ কোন খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে পারে। সে হয়তো পুরুষ ক্রোমোজোম থেকে স্ত্রী ক্রোমোজোমকে পৃথক করে স্ত্রীর গর্ভাশয়ের বাইরে নিষিক্ত করে তা গর্ভাশয়ে পুনঃস্থাপন করতে পারে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ সকল প্রক্রিয়া কোন আত্মা বা রুহ সৃষ্টি করতে পারবেনা কেননা তা সম্পূর্ণভাবে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার উপর নির্ভরশীল। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যখন কোন কিছু সৃষ্টি করতে মনস্থ হন শুধুমাত্র তখনই সে বস্তুটি অস্তিত্বে আসে আরআল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যদি ইচ্ছা পোষণ না করেন তবে মানুষের সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা সত্বেও কোন কিছুই সৃষ্টি হতে পারবে না। একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা যাকে অস্তিত্বে আনতে চান তাই আসে আর যাকে চান না তা অস্তিত্বে আসতে পারেনা।
অর্থাৎ আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা একমাত্র সৃষ্টিকর্তা এবং একমাত্র তিনিই নারী-পুরুষ সৃষ্টি করেন যা পবিত্র কুরআনের অকাট্য দলিলাদি দ্বারা প্রমাণিত; তন্মধ্যে কতিপয় হলো:
“তিনিই আল্লাহ্, তোমাদের প্রতিপালক, তিনি ব্যতিত অন্য কোন ইলাহ নেই। তিনি সকল বস্তুর সৃষ্টিকর্তা, অতএব তোমরা তাঁর ইবাদত কর। আর তিনি সকল বিষয়ের উপর অভিভাবক।” [সূরা আল-আনআম: ১০২]
“হে মানবজাতি! একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা হয়েছে। সুতরাং সতর্কভাবে তা শ্রবণ কর। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ্ ব্যতিত অন্য কোন উপাস্যের দিকে আহ্বান করে, যদি তারা সকলে একটি উদ্দেশ্যে একত্রিত হয় তবুও তারা একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না। আর যদি মাছিটি তাদের কাছ থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নেয় তাদের কোন ক্ষমতা নেই তারা মাছির কাছ থেকে তা উদ্ধার করবে। অনুসন্ধানকারী ও অনুসন্ধানের বস্তু উভয়ই দুর্বল।” [সূরা হজ্জ্ব: ৭৩]
“নিশ্চয়ই আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীর সর্বময় মালিক আল্লাহ্ তা’আলা, তিনি যাকে ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন, যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা যাকে ইচ্ছা পুত্র কন্যা উভয়ই দান করেন, যাকে ইচ্ছা বন্ধা করেন, নিশ্চয়ই তিনি মহাজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান।” [সূরা আশ-শূরা: ৪৯-৫০]
“নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক সর্বজ্ঞ সৃষ্টিকর্তা।” [সূরা হজ্জ্ব: ৮৬]
“যে সৃষ্টি করে আর যে সৃষ্টি করে না উভয়ই কি সমান? তবুও কি তোমরা বুঝো না।” [সূরা নাহল: ১৭]
“ইহাই আল্লাহ্’র সৃষ্টি। সুতরাং আমাকে দেখাও যে, তারা (আল্লাহ্ ব্যতিত তোমাদের অন্য উপাস্যগণ) কি সৃষ্টি করেছে? বরং জালিমরা (মুশরিক, পাপাচারী, আল্লাহ্’র একত্ববাদে অবিশ্বাসী) স্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত।” [সূরা লোকমান: ১১]
“হে মানবজাতি! যদি তোমরা কিয়ামতের ব্যাপারে সন্দিহান থাকো তবে ভেবে দেখ যে নিশ্চয় আমরাই তো তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর অপবিত্র পানি (শুক্র) থেকে, অতঃপর জমাট রক্ত থেকে, অতঃপর পূর্ণ ও অপূর্ণ মাংসপিন্ড থেকে, তোমাদের নিকট আমাদের কুদরত ব্যক্ত করার জন্য এবং আমরা আমাদের ইচ্ছামত জরায়ুতে নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত রাখি, অতঃপর তোমাদেরকে শিশুরূপে বের করি, অতঃপর তোমরা যৌবনে পদার্পন কর, অতঃপর তোমাদের কারো মৃত্যু হয় যৌবনের পূর্বেই আবার তোমাদের কেউ দুর্দশাগ্রস্থ বার্ধক্যে পৌঁছাও ফলে যে বিষয় তার জানা ছিল তাও সে ভুলে যায়, তোমরা ভূমিকে শুষ্কাবস্থায় দেখতে পাও অতঃপর যখন আমরা তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করি তখন তা শস্য-শ্যামল হয় এবং আমরা তাতে নানাবিধ সুন্দর উদ্ভিদ উৎপন্ন করতে থাকি।” [সূরা হজ্জ্বঃ ৫]
“আর নিশ্চয়ই আমরা মানুষকে মাটির সারবস্তু থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাকে শুক্রাণুরূপে নিরাপদ স্থানে রাখি, অতঃপর শুক্রবিন্দুকে জমাটবাঁধা রক্তে পরিণত করি, অতঃপর সেই জমাটবাঁধা রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করি, অতঃপর সেই মাংসপিন্ডকে অস্থিতে রূপান্তর করি, পরে অস্থিকে গোশত দ্বারা ঢেকে দেই, অতঃপর তাকে আমরা স্বতন্ত্র সৃষ্টিতে পরিণত করি। অতএব আল্লাহ্ মহান, উত্তম স্রষ্টা।” [সূরা মু’মিনুনঃ ১২-১৪]
“হে মানবজাতি! কিসে তোমাদেরকে মহান প্রতিপালকের কাছ থেকে বিরত রেখেছে? যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করে সুঠাম স্বাস্থ্য ও ভারসাম্য দান করেছেন। এবং তিনি যে আকৃতি চেয়েছেন সেই আকৃতিই দিয়েছেন।” [সূরা ইনফিতার: ৬-৮]
“তিনিই তার ইচ্ছানুযায়ী গর্ভাশয়ে তোমাদের আকৃতি দান করেছেন, তিনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই, তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আলি-ইমরান: ৬]
আকীদা ও বিশ্বাস সংক্রান্ত এ বিষয়গুলো প্রত্যেকেরই মনে রাখা উচিৎ যেন সে হেদায়েত ও সরল সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত না হয়। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদেরকে পথভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা করুন। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এই পৃথিবীকে বহুবিধ জ্ঞান ও চিন্তার উপকরণ দিয়ে সুসজ্জিত করে রেখেছেন যা মানুষ জানত না, আর আল্লাহ্ তা’আলা মানুষকেও বুদ্ধিমত্তা, চিন্তাশক্তি ও কোন বিষয় অনুধাবনের ক্ষমতা দান করেছেন যেন যারা আল্লাহ্’কে বিশ্বাস করে, তারা তাঁর নিকট থেকে উন্নত মর্যাদা লাভ করতে পারে আর যারা আল্লাহ্’কে অস্বীকার করে তারা এ পৃথিবীতে লাঞ্ছনা ও পরকালে ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করবে।
সবশেষে, সকল প্রসংশা বিশ্বজগতের মহান প্রতিপালন আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার জন্য।
খিলাফাহ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ