সেনাবাহিনী ও গণতান্ত্রিক রাজনীতি সমাচার !!

সেনাবাহিনী নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কেউ কেউ এটাকে অগণতান্ত্রিক সরকার আনার চক্রান্ত হিসেবে দেখছেন। অতীতের মতো বর্তমানেও বাংলাদেশের রাজনীতি সেনাবাহিনী নিয়ে সরগরম হয়ে ওঠছে। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনী প্রভাব বিস্তার করেছে। ক্ষেত্র বিশেষে সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক ভূমিকা জনগণ কতৃক প্রশংসিত হয়েছে। তাই দেখা যায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটে সেনাবাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা। এটাও ঠিক বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের মতো সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক ভূমিকার পেছনে ছিল মূলত এই দেশের স্বার্বভৌমের প্রতীক মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এবং আধিপত্যবাদী ভারতের সক্রিয় সমর্থন, বিশেষ করে ওয়ান ইলেভেনের সময় মার্কিন-ভারত-বৃটেন এর ভূমিকা ছিল দেখার মতো।

কাজে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিল সেনাবাহিনী। বিগত গণতান্ত্রিক সরকার গুলোর লুঠপাট, দূর্নীতি আর ক্ষমতার দ্বন্ধে জনগণ যখন প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতায় ভূগছে তখন সেনাবাহিনীকে সে ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য রাজনৈতিক ভূমিকায় ব্যবহার করা হয়েছে। ওয়ান ইলেভেন এর মতো আগামী দিনেও সেনাবাহিনীকে একই ভূমিকায় দেখা যেতে পারে আর তা হবে মার্কিন ভারতের সমর্থনে। দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী নিয়ে খালেদার বক্তব্য এবং এ নিয়ে সরকার প্রধান থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্য, সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক ভূমিকাকে সামনে নিয়ে এসেছে । তাছাড়া পিলখানা হত্যাকান্ড নিয়ে এই দেশের সাধারণ জনগণ এবং সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ভারত বিরোধী ক্ষোভ বিরাজ করছে। মূলত পিলখানা হত্যাকান্ড ছিল সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ভারত বিরোধী কর্মকর্তাদের প্রতি ভারতের শক্তিশালী সংকেত, যার মাধ্যমে এদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কে ধ্বংস করা হয়েছে। কাপুরুষজনোচিত এই হত্যাকান্ডের পেছনে আমেরিকার ছিল মৌন সমর্থন, আওয়ামীলীগ সরকার ও ছিল পূর্ণ সচেতন, আরেক মার্কিন দালাল বিএনপি ছিল নিশ্চুপ।

এই হত্যাকান্ড সংঘটিত করেই থেমে থাকেনি ভারত, সেনাবাহিনীর উপর তার কর্তৃত্ব কে দৃঢ় করার জন্য সেনাবাহিনীর সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে পরিকল্পনা নিয়েছে। বিগত কয়েক বৎসর ধরে সেনাবাহিনীর সাথে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সম্প্রতি নামক সামরিক মহড়া সে পরিকল্পনারই অংশ। তাছাড়া ভারতের ট্রেনিং কলেজ গুলোতে বাংলাদেশের সেনা ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। আর এটা ঘটছে দীর্ঘদিন ধরে সেনাবাহিনীর উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাকারী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সমর্থনে। আমেরিকারএশিয়ান পিভট নীতির গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মিত্র ভারত। আমেরিকা দুইটি লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে তার নীতি কে শক্তিশালী করছে আর তা হলো চীনের উত্থান কে ঠেকানো তথা এর প্রভাবকে নিয়ন্ত্রন করা এবং দক্ষিণ এশিয়ায় পুঁজিবাদ বিরোধী ইসলামের রাজনৈতিক উত্থান কে দমন করা। কাজেই আমেরিকার দক্ষিণ এশিয়া নীতি মূলত ভারত কেন্দ্রিক নীতি।

দক্ষিণ এশিয়া কে কেন্দ্র করে মার্কিন-ভারতের রাজনৈতিক সামরিক অর্থনৈতিক সমঝোতা, তারই আলোকে সেনাবাহিনীর উপর মার্কিন-ভারতের কর্তৃত্ব ও প্রভাবকে দেখতে হবে। আমেরিকা-ভারত সন্ত্রাসবাদ ঠেকানোর নামে ইসলামের রাজনৈতিক উত্থান ঠেকাতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে। তাই সেনাবাহিনীর সাথে সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা ও মুশরিক আধিপত্যবাদী শক্তি ভারতের সামরিক মহড়া, সামরিক সংলাপ এবং সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ভারত বিরোধী ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের পিলখানায় হত্যাকান্ড, গুম, খুন, গৃহবন্দী, চাকরি থেকে বহিষ্কার একিই সূত্রে গাঁথা।

সোমবার থেকে শুরু হওয়া সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়ার ভারত সফরকে ও ভিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। এটা নিছক কোনো সামরিক সফর বলে মনে হচ্ছে না, পত্রিকার বরাতে যতটুকু জানা গেছে তাতে সেনাপ্রধান শুধুমাত্র ভারতের সেনাপ্রধানের সাথে দেখা করবেন না সে সাথে ক্ষমতাসীন সরকারের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাথে বিশেষ করে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অ্যান্টনিওর সাথেও বৈঠক করবেন। তাছাড়া সাম্প্রতিক ভারতের আগ্রাতে দ্বিতীয় রাউন্ড “সম্প্রতি” মহড়া সম্পন্ন হয়েছে, যা গত বৎসর থেকে প্রথম বারের মতো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে শুরু হয়েছে। এছাড়া এপ্রিল-মে মাসে ঢাকাতে আমেরিকার সাথে বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদ দমন ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় পররাষ্ট্র পর্যায়ে নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যার আগে বৈঠকটি হয়েছিল আমেরিকায়। এছাড়া একের পর এক মার্কিন বাহিনীর সাথে সামরিক মহড়া টাইগার শার্ক, নৌ মহড়া সংঘটিত হচ্ছে। খুব শীঘ্রই আমেরিকা বাংলাদেশ নৌ বাহিনী কে একটি যুদ্ধজাহাজ উপহার দিতে যাচ্ছে। আর এসব কিছু করার একটাই কারণ তা হলো সেনাবাহিনীর উপর মার্কিন নেতৃত্ব বজায় রাখা ও ভারতের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা যাতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মতো বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকেও তথাকথিত সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধে মার্কিন-ভারতের ভূকৌশলগত স্বার্থে ব্যবহার করা যায়।

নিঃসন্দেহে ভূকৌশলগত অবস্থান এবং ইসলামী আকীদার কারণে বাংলাদেশ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। মার্কিন-ভারতের সমঝোতার উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের আগামী দিনের রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হবে। আর আগামী দিনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতায় তারাই আসবে যারা এই দুই শক্তির স্বার্থকে রক্ষা করতে পারবে। কাজেই এই দেশের মুসলিমদের সাম্রাজ্যবাদ-আধিপত্যবাদ বিরোধী লড়াই শুধু মাত্র তাদের তল্পিবাহক দালাল বিএনপি-আওয়ামী জোটের বিরুদ্ধে নয় সে সাথে এই সব দালাল তৈরির কারখানা ঔপনিবেশিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কে অপসারণ এবং সে সাথে মুসলিম ভূখন্ডের উপর সাম্রাজ্যবাদীদের কর্তৃত্বকে নিশ্চিন্ন করার জন্য খিলাফত রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার দিকে এগিয়ে নিতে হবে। আর সেনাবাহিনীর উচিত দুর্নীতিগ্রস্থ ঘুণে ধরা ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা গণতন্ত্রকে উৎখাতে নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদদের সহায়তা করা যাতে উম্মাহ কুফর থেকে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা খিলাফতে প্রত্যাবর্তন করতে পারে। উম্মাহ খালিদ বিন ওয়ালিদের উত্তরসূরী সেনাবাহিনীকে মার্কিন-ভারতের স্বার্থের পাহারাদার নয় বরং শাহাদাতের কালিমা বহনকারী বাহিনী হিসেবে দেখতে চায়।

এম. মোরশেদ আলম

প্রথম প্রকাশঃ ২ এপ্রিল ২০১৩

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply