কান্ডারী: নৈরাশ্যতা পেরিয়ে আশার আলোয়

নৈরাশ্য:

১) রিকশায় চড়ছিলাম। রিকশার চালকের বয়স ষাটোর্ধ্ব। হঠাৎ মনে প্রচন্ড এক ভাবনা এলো; রিকশা চালাতে সক্ষম এমন বয়সে আমি যাত্রী আর জীবনের শেষপ্রান্তে অবসরে সময়কাটানোর বয়সে ওই ব্যক্তি রিকশা চালানোর মতো পরিশ্রমের কাজ করছেন। হঠাৎ এ পরিস্থিতির সাথে মুসলিম উম্মাহ্’র বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে ভাবছিলাম। কয়েকদিন আগেও সিরিয়ায় এক বয়োবৃদ্ধ যিনি ইউটিউবে তার ভিডিও শেয়ার দিয়েছিলেন; শাহাদাহ [ইনশা’আল্লাহ] বরন করেছেন কিংবা এমন হাজারো বয়োবৃদ্ধ যাদের রক্ত কেবল তাদের প্রতিপালক আল্লাহ্; এই স্বীকারোক্তি দানের কারনে প্রবাহিত হচ্ছে অথচ এক্ষেত্রে তরুণদের নির্বিকার আচরণ পীঁড়া দেয়।

২) মাসজিদে ইকামাত আস-সলাত দানের তাৎপর্য বেশ। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই দেখি মাসজিদে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটির আন্জাম দেন বয়োজেষ্ঠরা; যাদের কন্ঠস্বর বয়সের সাথে সাথে ক্ষীনতর হয়ে এসেছে। এসব কাজে তরুণদের অগ্রগামী দেখতে মন বড়ই আনচান করে।

৩) সমাজের সার্বিক পরিবর্তনে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড; যার পূঁজি করে অসৎ রাজনীতিবিদরা লোকচক্ষুকে ধুলি দেয় আর তথাকথিত সমাজতন্ত্রী ও কমিউনিস্টের ধ্বজ্জাধারীরা সহানুভূতির আর সহমর্মিতার অভিনয়টুকু মঞ্চস্থ করতে কার্পন্য করে না। সেই তুলনায় মুসলিম জাতি; যাদের উত্তরণ ঘটানোই হয়েছে ভাল কাজের আদেশ আর মন্দের নিষেধ করার জন্য, তাদের তরুণ প্রজন্মকে অপেক্ষাকৃত কম যুক্ত দেখেও মনটা ভারী হয়। সমাজে ন্যায়ের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর আর অন্যায়ের প্রতিবাদে পর্বতসম বাধা তো এই উম্মাহ’র তরুণদেরই হতে হবে।

আশার আলো:

১) যখন দেখি সদ্য ইন্টারমেডিয়েট পাশ করা তরুণরা ইসলামকে তাদের জীবনের সার্বিক বিধান হিসেবে মানতে অগ্রগামী হচ্ছে আর পারিপার্শ্বিকতার চাপকে উপেক্ষা করে ইসলামের প্রথম যুগের লোকদের অনুসরণের প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালায়; তখন বুকটা আনন্দে ভরে উঠে। এসব তরুণরাই যখন নিজের যৌবনের সবচেয়ে আবেগঘন সময়ে নিজের চোখের হিফাজত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে তখন কেবল এই ভেবে লজ্জায় মাথা নিচু করি তার বয়সে তো আমি লজ্জাশীলতার ব্যাপারে গাফিল ছিলাম। আর এসব তরুণদের জন্যই তো রাহমানের আরশের ছায়ার প্রতিশ্রুতি।

২) এ সকল তরুণদের দ্বীনের প্রতি ভালবাসা, আরবী শিখার প্রতি আগ্রহ আর নিষ্ঠা দেখে আমিও উৎসাহ পাই। সত্যিই আল্লাহ্ তা’আলা প্রস্তুত করছেন এমন এক প্রজন্মকে যারা ইসলামী ব্যক্তিত্ববোধ আর নেতৃত্বের মশালকে প্রজ্জলিত করবে।

৩) রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন দ্বীনের দাওয়াহ্ দিচ্ছিলেন তখন প্রথম থেকেই তরুণদের সাড়া ছিলো স্বতঃস্ফুর্ত। মাক্কী জীবনে আবদুল্লাহ্ ইবন মাসঊদ, মুসাইব ইবন উমায়র কিংবা আলী রাযিআল্লহু আনহুমা তো তারই উদাহরণ। অনুরূপভাবে মাদানী জীবনে আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার, আবদুল্লাহ্ ইবনু যুবাইর, আবদুল্লাহ্ ইবনু আমর ইবনু আস কিংবা আবদুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস রাযিআল্লহু আনহুদের উদাহরন কেবল শিহরিতই করে। বর্তমান সময়ে তরুণদের শত বাধা-বিপত্তির মধ্যেও দ্বীনী কার্যক্রমে স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ কেবল সেই স্বর্ণালী যুগেরই আভাস দেয়।

তরুণদের হাত ধরেই সমাজ পশ্চিমা সংস্কৃতি আর প্রবৃত্তিতাড়িত জীবনের মোহে মোহগ্রস্থ হয়েছিল; আর তাদের হাত ধরেই বিপন্ন মানবতায় নিমজ্জিত সমাজ মুক্তির দিশা খুঁজে পাবে: ইসলামে।

নৈরাশ্যবাদীতা নয় আশার আলোরই সিঞ্চন করি; এই প্রত্যয়ই ক্রমান্বয়ে দৃঢ়তর হচ্ছে নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তা’আলা প্রস্তুত করছেন বিজয়ের ক্ষেত্র ।

সায়্যিদ মাহমূদ গজনবী

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply