রমজান ও ঐক্য

একইদিনে সিয়াম পালন শুরু করা এবং একইদিনে ঈদ উদযাপন করা বিশ্বের সমস্ত মুসলিমের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে প্রদত্ত একটি দায়িত্ব এবং এটি তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকারও বিশেষ একটি দিক। রমযান ও ঈদের দিনকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা স্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্টভাবে শরঈ দলীলসমূহে চিহ্নিত করে দিয়েছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:

فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ

অতএব, যেই এই (রমযান) মাস প্রত্যক্ষ করবে, সে যেন এতে সিয়াম পালন করে। [বাকারা: ১৮৫]

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) এর বরাত দিয়ে বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সা) রমযানের ব্যাপারে বলেন:

لَا تَصُومُوا حَتَّى تَرَوْا الْهِلَالَ وَلَا تُفْطِرُوا حَتَّى تَرَوْهُ فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَاقْدُرُوا لَهُ

“নতুন চাঁদ না দেখা পর্যন্ত তোমরা সিয়াম পালন শুরু করবে না এবং একে না দেখা পর্যন্ত সিয়াম পালন বন্ধও করবে না; আর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে গণণা করে নিবে।”

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) এর বরাত দিয়ে মুসলিম বর্ণনা করেন যে,

الشَّهْرُ هَكَذَا وَهَكَذَا وَهَكَذَا ثُمَّ عَقَدَ إِبْهَامَهُ فِي الثَّالِثَةِ فَصُومُوا لِرُؤْيَتِهِ وَأَفْطِرُوا لِرُؤْيَتِهِ فَإِنْ أُغْمِيَ عَلَيْكُمْ فَاقْدِرُوا لَهُ ثَلَاثِينَ

রাসূল (সা) রমযানের কথা উল্লেখ করে নিজের হাত দিয়ে ইশারা করলেন এবং বললেন: “চাঁদ হচ্ছে এরকম এবং এরকম। (তারপরে তিনি তৃতীয়বারের সময় নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলিকে সরিয়ে নিলেন এবং ২৯-এর ইঙ্গিত করলেন)। তারপর তিনি বললেন: যখন একে দেখবে তখন সিয়াম পালন শুরু করবে এবং আবার যখন একে দেখবে তখন সিয়াম পালন বন্ধ করবে, যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে (শা’বান ও শাওয়্যাল মাস) ত্রিশ (দিন) ধরে নিবে।”

আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের (রা) বরাত দিয়ে বুখারী বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সা) বলেছেন: 

الشَّهْرُ تِسْعٌ وَعِشْرُونَ لَيْلَةً فَلَا تَصُومُوا حَتَّى تَرَوْهُ فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَأَكْمِلُوا الْعِدَّةَ ثَلَاثِينَ

“এই মাসে ২৯ টি রাত (হতে পারে), অতএব একে (নতুন চাঁদ) না দেখা পর্যন্ত সিয়াম পালন শুরু করবে না। আর যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে ত্রিশ (দিনে মাস) পূর্ণ করবে।”

মুসলিম থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সা) বলেছেন: 

إِنَّمَا الشَّهْرُ تِسْعٌ وَعِشْرُونَ فَلَا تَصُومُوا حَتَّى تَرَوْهُ وَلَا تُفْطِرُوا حَتَّى تَرَوْهُ فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَاقْدِرُوا لَهُ

“ঊনত্রিশ দিনেই (রমযান) মাসটি (পূর্ণ হয়ে যেতে পারে)। অতএব একে (নতুন চাঁদ) না দেখা পর্যন্ত সিয়াম পালন শুরু করবে না এবং যতক্ষণ না একে (শাওয়্যালের নতুন চাঁদ) দেখবে সিয়াম পালন বন্ধও করবে না; আর যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে গণণা করে নিবে।”

আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের বরাত দিয়ে মুসলিমে আরো বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সা) বলেছেন:

الشَّهْرُ تِسْعٌ وَعِشْرُونَ فَإِذَا رَأَيْتُمْ الْهِلَالَ فَصُومُوا وَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَأَفْطِرُوا فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَاقْدِرُوا لَهُ

“ঊনত্রিশ দিনেই (রমযান) মাসটি (পূর্ণ হয়ে যেতে পারে); অতএব যখন নতুন চাঁদ দেখবে তখন থেকেই তোমরা সিয়াম পালন শুরু করবে এবং যখন একে (শাওয়্যাল মাসের শুরুতে যে নতুন চাঁদ উঠে) দেখবে তখন তোমরা সিয়াম পালন বন্ধ করবে, যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন পাও তবে গণণা কর (এবং ত্রিশ দিনে মাস পূর্ণ কর)।”

এই হাদীসগুলো খুবই স্পষ্ট এবং সন্দেহমুক্ত। হাদীসগুলোতে রাসূল (সা) আমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন রমযানের নতুন চাঁদ দেখার বিষয়টি নিশ্চিত হলে সিয়াম পালন শুরু করতে এবং শাওয়্যালের নতুন চাঁদ দেখার বিষয়টি নিশ্চিত হলে সিয়াম পালন বন্ধ করতে; এই নির্দেশগুলো আমাদের জন্য বাধ্যবাধকতা এবং অন্য যেকোনো দায়িত্ব পরিত্যাগ করা বা কোনো অপরাধে লিপ্ত হওয়ার মতোই এই নির্দেশগুলোর লঙ্ঘনও গোনাহের কারণ। 

সিয়াম পালন শুরু করা এবং বন্ধ করার নির্দেশটি সার্বজনীন (general): “একে না দেখা পর্যন্ত সিয়াম পালন শুরু করবে না এবং একে না দেখা পর্যন্ত সিয়াম পালন বন্ধও করবে না”, “যখন একে দেখবে তখন সিয়াম পালন শুরু করবে এবং যখন একে দেখবে তখন সিয়াম পালন বন্ধ করবে”_এই নির্দেশগুলো পৃথিবীর সমস্ত মুসলিমের জন্যই প্রযোজ্য। উপরন্তু বর্ণনাতে ‘দেখা’ শব্দটিও সার্বজনীনভাবে এসেছে: “যখন একে দেখবে” অথবা “যতক্ষণ না একে দেখবে” এর মানে হচ্ছে: যে কারো ‘দেখা’ ই অন্যদের জন্য পর্যাপ্ত বলে বিবেচতি হবে। এবং বিষয়টি এমন কিছুনা যে, যে দেখেছে কেবলমাত্র তার জন্যই প্রযোজ্য অথবা কেবলমাত্র তার দেশের লোকজনের জন্যই প্রযোজ্য। সিয়াম পালন শুরু করা এবং বন্ধ করার যে নির্দেশটি বর্ণনাতে এসেছে তার আহ্বান হচ্ছে সার্বজনীন এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ; ‘দেখা’র আহ্বানটিও অনুরূপ। অতএব সন্দেহাতীতভাবেই হুকুমটি সার্বজনীন অর্থাৎ সকলের উপর প্রযোজ্য। 

অতএব, নতুন চাঁদ দেখার সাথে সিয়াম পালন শুরু এবং সিয়াম পালন বন্ধের নির্দেশটি হচ্ছে এমন একটি নির্দেশ যা পৃথিবীর সমস্ত মুসলিমের জন্যই সমভাবে প্রযোজ্য। ফলে যদি শুক্রবার রাতে মরক্কোর রাজধানী রাবাতে রমযানের নতুন চাঁদ দেখা যায় কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় সেটা শুক্রবার রাতের পরিবর্তে শনিবার রাতে দেখা যায় তাহলে ইন্দোনেশিয়ার লোকজনকে এক্ষেত্রে মরক্কোর চাঁদ অনুযায়ীই আমল করতে হবে অর্থাৎ তাদেরকে অবশ্যই শুক্রবার থেকে সিয়াম পালন শুরু করতে হবে। যদি তারা এরূপ না করে তাহলে ঐ দিনের সিয়ামের জন্য তাদেরকে অবশ্যই আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে, কারণ পৃথিবীর যেকোনো জায়গার যেকোনো মুসলিম কর্তৃক চাঁদ দেখার মাধ্যমেই ফরয দায়িত্ব পালনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গেছে। অনুরূপভাবে, শাওয়্যালের নতুন চাঁদ দেখা যাওয়ার খবর যদি তাদের কানে পৌছায় তাহলে নিজেরা চাঁদ না দেখা সত্ত্বেও তাদেরকে অবশ্যই সিয়াম পালন বন্ধ করতে হবে; কারণ যে মুহূর্তে চাঁদ দেখা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে সে মুহূর্তেই সিয়াম পালন থেকে বিরত থাকা বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে এবং তখন সিয়াম অব্যাহত রাখা তাদের জন্য গোনাহের কারণ বলে বিবেচিত হবে। 

অতএব, শরঈ নিয়ম অনুযায়ী যদি কোনো দেশের লোক নতুন চাঁদ দেখে, তাহলে সেটা সমস্ত মুসলিম দেখেছে বলে গণ্য করতে হবে; অতএব নতুন চাঁদটি যদি রমযানের হয় তবে তাদের সবাইকে সিয়াম পালন শুরু করতে হবে এবং নতুন চাঁদটি যদি শাওয়্যালের হয় তবে তাদের সবাইকে সিয়াম পালন বন্ধ করতে হবে। শরঈ দলীল অনুযায়ী এটিই আল্লাহর হুকুম। 

রাসূল (সা)-এর জীবদ্দশায় মুসলিমরা বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করা সত্ত্বেও একই দিনে সিয়াম পালন শুরু করতেন এবং একইদিনে তা বন্ধও করতেন। এই বিষয়টি আমাদের জন্য আরেকটি শরঈ প্রমাণ যে, যেকোনো জায়গায় নতুন চাঁদ দেখা গেলেই এবং তা যদি একজন মুসলিমের সাক্ষ্যেও ভিত্তিতেও হয়, সেক্ষেত্রে সমস্ত মুসলিমরা একইদিনে সিয়াম পালন শুরু করতে এবং একইদিনে সিয়াম পালন বন্ধ করতে বাধ্য। এবং নিম্নোক্ত হাদীসগুলো সেটাই প্রমাণ করে: 

একবার মহানবী (সা) কিংবা তার সাহাবীরা কেউই রমজানের চাঁদ দেখেননি। সেই প্রেক্ষিতে আবু দাউদ শরীফে ইবন আব্বাস হতে বর্ণিত আছে,

جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ إِنِّي رَأَيْتُ الْهِلَالَ قَالَ الْحَسَنُ فِي حَدِيثِهِ يَعْنِي رَمَضَانَ فَقَالَ أَتَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ قَالَ نَعَمْ قَالَ أَتَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ قَالَ نَعَمْ قَالَ يَا بِلَالُ أَذِّنْ فِي النَّاسِ فَلْيَصُومُوا غَدًا

“একজন বেদুইন এসে নবী (সা)-কে বললো, ‘আমি চাঁদ দেখেছি।’ নবী (সা) বেদুঈনটিকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর রাসূল?’ লোকটি বলল, হ্যাঁ। এরপর তিনি (সা) বলেন, হে বিলাল, লোকসকলের মাঝে ঘোষণা দাও যাতে আগামীকাল তারা সিয়াম পালন করে”। অর্থাৎ স্বয়ং আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সা) কেবলমাত্র একজন মুসলিমের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে রোযা রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। 


শাওয়্যাল মাসের চাঁদ অর্থাৎ ঈদের চাঁদ মেঘে ঢাকা থাকায় মদিনার মুসলিমরা পরদিন রোযা রেখে ফেললেন। এই প্রেক্ষিতে আবু দাউদ শরীফে আবু উমাইর বিন আনাস হতে বর্ণিত আছে,

… أَنَّ رَكْبًا جَاءُوا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَشْهَدُونَ أَنَّهُمْ رَأَوْا الْهِلَالَ بِالْأَمْسِ فَأَمَرَهُمْ أَنْ يُفْطِرُوا وَإِذَا أَصْبَحُوا أَنْ يَغْدُوا إِلَى مُصَلَّاهُمْ

(দিনের শেষভাগে) একদল যাত্রী মদিনায় প্রবেশ করলেন। তারা নবী (সা)-কে সাক্ষ্য দিলেন যে, তারা (ভ্রমণরত অবস্থায়) আগের সন্ধ্যায় চাঁদ দেখে এসেছেন। অতঃপর নবী (সা) মদিনার মুসলিমদেরকে রোযা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন এবং পরদিন সকালে (ঈদের নামাজ আদায় করতে) তাদের নামাজের স্থানে যেতে বলেন। 

ইমাম আহমদ-এর মুসনাদ-এর বর্ণনায়, তিনি (সা) নির্দেশ দিলেন,

… أَنْ يُفْطِرُوا مِنْ يَوْمِهِمْ وَأَنْ يَخْرُجُوا لِعِيدِهِمْ مِنْ الْغَدِ

“… সেইদিন রোযা ভেঙ্গে ফেলতে এবং পরদিন তাদের ঈদের জন্য বের হতে।”

যারা দাবী করে সিয়াম শুরুর দিন এবং শেষ হওয়া অর্থাৎ ঈদের দিন ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, সংক্ষেপে তাদের সেসব শুবহাকে (দাবিকৃত বিতর্কিত দলীল) মূলত দুটো ভাগে বিভক্ত করা যায়: 

১) প্রথম শুবহা: তারা দাবী করে যে, সালাতের ওয়াক্তের মতোই কোনো দেশে বসবাসরত লোকজন তাদের নিজেদের চাঁদ দেখাকে অনুসরণ করবে; এজন্যই তারা বলে: মাতালি’ অর্থাৎ (মহাশূন্যের বস্তুসমূহের) উদয়ের সময়ের উপরই আল্লাহর আদেশ নির্ভরশীল। এই দাবিটির জবাবে হচ্ছে এই যে: সালাতের ওয়াক্ত তাদের নির্ধারিত সময়ে আদায় করতে হয় এবং এই সময়টা একই অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে; কারণ সালাতের জন্য শরীয়াহ যেসব আলামতকে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে সেগুলো ভিন্ন ভিন্ন সময়ে হতে পারে। সিয়ামের ক্ষেত্রেও ভোরবেলা ইমসাক (সিয়ামের ওয়াক্ত শুরু)-এর সময় ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে; কারণ শরঈ দলিল থেকেই এরূপ ভিন্নতার নির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে: আল্লাহ (সুবনাহুতা ওয়া তা’আলা) বলেন: 

وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الأبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ

“আর পানাহার করো যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে (ভোরের) শুভ্র রেখা পরিষ্কার হয়ে যায়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত।” [আল কুরআন ২:১৮৭] 

সালাতের ওয়াক্ত যেমন স্থানভেদে ভিন্ন হয়, ইমসাক এবং ইফতারের সময়ও অনুরূপভাবে স্থানভেদে ভিন্ন হয়। তবে এ ভিন্নতা কোনো একটা দিনের মধ্যেই আবর্তিত হয়; যাইহোক, কোনো একটা দিনে একসাথেই সারা পৃথিবীতে রমযান মাস শুরু হবে এবং যেটুকু ভিন্নতা থাকবে তা কোনো একটা নির্দিষ্ট দিনের মধ্যেই আবর্তিত হবে। এই বিষয়টিই পরিষ্কারভাবেই বর্ণিত হয়েছে হাদীসের বর্ণনাগুলোতে এবং এটিই হচ্ছে শরঈ দলিল থেকে বের করা প্রকৃত জ্ঞান। পৃথিবীর সবচেয়ে দূরবর্তী দুটি বিন্দুর মধ্যে নতুন চাঁদ উঠার যে ভিন্নতা সেটা কখনোই বার ঘণ্টার বেশি হয় না; প্রথমযুগের মুজতাহিদগণ এ ব্যাপারে রেহাইপ্রাপ্ত কারণ তারা এই বিষয়টি সঠিকভাবে বুঝতে সক্ষম হন নি; কারণ তখন তারা এমন কোনো সুবিধা পান নি যার ফলে পৃথিবী, সূর্য ও নতুন চাঁদের আবর্তনকে সঠিকভাবে বুঝতে পারবেন। তাই তাদের মধ্যে অল্পসংখ্যক ভিন্নমতে উপনীত হয়েছিলেন। অবশ্য চাঁদের বাস্তবতা না জানতে পারার অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও তাদের অধিকাংশই সঠিক মতের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন কারণ এ ব্যাপারে হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নির্দেশনা অত্যন্ত সুস্পষ্ট। বর্তমানে যেহেতু চাঁদের বাস্তবতা ও দলীল থেকে সঠিক জ্ঞানটি অর্জিত হয়েছে, সেহেতু যারা দাবি করে সময়ের ভিন্নতা একদিনের চেয়ে বেশি হতে পারে তাদের কাছে এখন আর কোনো যুক্তি বা অজুহাত অবশিষ্ট থাকছে না; আর যারা মনে করে এ ভিন্নতা কয়েকদিন পর্যন্ত হতে পারে তাদের কথাতো বলাই বাহুল্য। অতএব, সারা বিশ্বজুড়ে পুরো ইসলামী উম্মতের জন্য রমযান মাস একদিনেই শুরু হয় এবং শেষ হয় অর্থাৎ ঈদ শুরু হয় একইদিনে। 

২) দ্বিতীয় শুবহা: সিয়াম শুরুর দিন এবং শেষ হওয়ার দিন ভিন্ন হতে পারে বলে যারা দাবি করে তাদের দ্বিতীয় শুবহাটির উৎপত্তি হচ্ছে মুসলিম শরীফের এক বর্ণনা থেকে; এতে বর্ণিত আছে: উম্মুল ফাযল বিনতুল হারিছ তাকে (কুরাইব) আশ-শামে মুয়াবিয়ার কাছে প্রেরণ করলেন; তিনি বলেন: আমি আশ-শামে গেলাম এবং তার (উম্মুল ফাযল বিনতুল হারিছ)-এর পক্ষ থেকে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড সম্পাদন করলাম। আশ-শামে তখন রমযান মাস শুরু হয়ে গিয়েছিল। সেখানে আমি শুক্রবারেই রমযানের নতুন চাঁদ দেখেছিলাম। মাসের শেষদিকে আমি তখন মদিনায় ফিরে এলাম, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) আমকে রমযানের নতুন চাঁদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন: “তুমি এটা কখন দেখেছ? আমি বললাম: শুক্রবার রাতে আমরা এটা দেখেছি। তিনি বললেন: তুমি কি এটা নিজে দেখেছ? আমি বললাম: হ্যাঁ, আমি দেখেছি এবং অন্যান্য লোকজনও দেখেছে এবং সিয়াম পালন করেছে, মুয়াবিয়া (রা) ও সিয়াম পালন করেছেন; একথা শুনে তিনি বললেন: কিন্তু আমরা এটা দেখেছি শনিবার রাতে। অতএব আমাদেরকে ত্রিশ পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত অথবা এটি শাওয়্যালের (নতুন চাঁদ) না দেখা পর্যন্ত সিয়াম পালন অব্যাহত রাখতে হবে। আমি বললাম: মুয়াবিয়ার চাঁদ দেখা কি আপনার জন্য যথেষ্ট না? তিনি বললেন: না, কারণ এভাবেই আল্লাহর রাসূল আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন।” 

সিয়াম শুরু হওয়ার দিন এবং শেষ হওয়ার দিন ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে বলে যারা দাবি করে তারা এই বর্ণনাটিকে একটি প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করে থাকে; তারা এরূপ যুক্তি দেখায় যে, ইবন আব্বাস আল-শাম অঞ্চলের লোকদের চাঁদ দেখাকে বিবেচনা করেননি এবং বর্ণনাটির শেষাংশে বলেছেন: এভাবেই আল্লাহর রাসূল আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে ইবন আব্বাস (রা) রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কাছে থেকে শিখেছেন যে, এক অঞ্চলের লোকজন চাঁদ দেখলে অন্যান্য অঞ্চলের লোকজন সে অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য না; এক্ষেত্রে তারা একথাও বলে থাকে যে বর্ণনাটির বক্তব্য সুনির্দিষ্ট এবং চাঁদ দেখার ব্যাপারে এটি একটি ব্যাখ্যাও ধারণ করছে। এজন্য তারা এরূপ দাবি করে যে, কোনো অঞ্চলের লোকজন চাঁদ দেখা অনুযায়ী আমল করতে কেবলমাত্র তখনই বাধ্য যখন তারা নিজেদের এলাকায় নতুন চাঁদ দেখবে, অন্য এলাকায় নয়। ফলে তখন স্থানভেদে এবং উদয় সময় অনুযায়ী সিয়াম শুরু এবং ঈদ শুরুর সময়ে ভিন্নতা আসে। 

এই দাবির জবাব হচ্ছে যে উপরিউক্ত বর্ণনাটি কোনো হাদীস নয় বরং একজন সাহাবীর ইজতিহাদ; আর কোনো সাহাবীর ইজতিহাদ কখনোই রাসূল (সা)-এর হাদীসের সাথে তুলনীয় হতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে, শাম অঞ্চলের লোকজনের চাঁদ দেখা অনুযায়ী ইবন আব্বাস (রা) আমল না করার বিষয়টি একটি ইজতিহাদকে উপস্থাপন করে মাত্র এবং একে কোনো শরঈ দলিল হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। সাধারণ শরঈ দলিলের আলোকে সবসময়ই এধরনের ইজতিহাদ বাতিল বলে গণ্য হয় এবং ইজতিহাদটি পরিত্যাগ করে হাদীস অনুযায়ী আমল করতে হয়। উপরন্তু কোনো হাদীসের সার্বজনীন (general) অর্থে ব্যবহৃত শব্দের সুনির্দিষ্টকরণ (specification) করার জন্য কোনো সাহাবীর ইজতিহাদকে ব্যবহার করার সুযোগ নেই। বর্ণনাটির শেষদিকে ইবন আব্বাস (রা)-এর মন্তব্য: “এভাবে পালন করতেই রাসূল (সা) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন” – এটি কোনো হাদীস নয় বরং রাসূল (সা)-এর হাদীস “যখন একে দেখবে তখন সিয়াম পালন শুরু করবে এবং যখন একে দেখবে তখন সিয়াম পালন বন্ধ করবে” থেকে ইবন আব্বাস (রা) যা বুঝেছিলেন তারই উল্লেখ মাত্র। 

এজন্যই তিনি এরকম বলেন নি যে, রাসূল (সা) এভাবেই বিষয়টি বর্ণনা করেছেন অথবা রাসূল (সা)-এর কাছ থেকে আমরা এরূপই শিখেছি বরং তিনি বলেছেন: এভাবে পালন করতেই রাসূল (সা) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। হাদীসটির ব্যাখায় ইমাম শাওকানী (রহ) তাঁর নাইল উল-আওতার কিতাবে লিখেছেন:

وَاعْلَمْ أَنَّ الْحُجَّةَ إنَّمَا هِيَ فِي الْمَرْفُوعِ مِنْ رِوَايَةِ ابْنِ عَبَّاسٍ لَا فِي اجْتِهَادِهِ الَّذِي فَهِمَ عَنْهُ النَّاسُ وَالْمُشَارُ إلَيْهِ بِقَوْلِهِ : ” هَكَذَا أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ” هُوَ قَوْلُهُ : فَلَا نَزَالُ نَصُومُ حَتَّى نُكْمِلَ ثَلَاثِينَ ، وَالْأَمْرُ الْكَائِنُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ مَا أَخْرَجَهُ الشَّيْخَانِ وَغَيْرُهُمَا بِلَفْظِ : { لَا تَصُومُوا حَتَّى تَرَوْا الْهِلَالَ ، وَلَا تُفْطِرُوا حَتَّى تَرَوْهُ فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَأَكْمِلُوا الْعِدَّةَ ثَلَاثِينَ } وَهَذَا لَا يَخْتَصُّ بِأَهْلِ نَاحِيَةٍ عَلَى جِهَةِ الِانْفِرَادِ بَلْ هُوَ خِطَابٌ لِكُلِّ مَنْ يَصْلُحُ لَهُ مِنْ الْمُسْلِمِينَ

জেনে রাখ, (আমাদের কাছে) হুজ্জত (সুস্পষ্ট প্রমাণ) সাব্যস্ত হয় ইবন আব্বাস (রা)-এর মারফু’ রেওয়ায়াত থেকে, তার ইজতিহাদ থেকে নয় যা লোকজন তার থেকে বুঝেছে এবং তাঁর বর্ণনায় যেটি এসেছে “এভাবে রাসূল (সা) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন” সেটি তারই মন্তব্য; (এজন্যই তিনি বলেছেন): “আমরা সিয়াম পালন করে যাচ্ছি ত্রিশদিন পূর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত”। রাসূল (সা)-এর নির্দেশটি নিহিত রয়েছে সেই হাদীসটিতে যা শায়খাইন (বুখারী ও মুসলিম) ও অন্যান্যদের কর্তৃক সংকলিত হয়েছে: “নতুন চাঁদ না দেখা পর্যন্ত সিয়াম পালন শুরু করবে না এবং তা না দেখা পর্যন্ত সিয়াম পালন বন্ধ করবে না; যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে ত্রিশ দিনে (গণণা) পূর্ণ করবে”; এবং এই বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে কোনো একটি অঞ্চলের লোকজনকে বুঝাচ্ছেন না বরং সমস্ত মুসলিমদেরকেই বুঝাচ্ছে।

ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ তার মাজমু’ আল ফাতওয়া গ্রন্থে বলেন,

مُخَالِفٌ لِلْعَقْلِ وَالشَّرْعِ

“এ বিষয়টি (চাঁদ দেখাকে কোনো একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব বা দেশের মধ্যে সীমিত করাটা) যুক্তি এবং শরীয়ত উভয়েরই পরিপন্থি।”

‘ফতওয়া-ই আলমগিরি’-তে বলা হয়েছে,

لَوْ رَأَى أَهْلُ مَغْرِبٍ هِلَالَ رَمَضَانَ يَجِبُ الصَّوْمُ عَلَى أَهْلِ مَشْرِقٍ

“পৃথিবীর পশ্চিম প্রান্তের অধিবাসীদের কেউ রমজানের চাঁদ দেখলে পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তের অধিবাসীদের ওপরও ওই রোজা ফরজ হবে।”

অতএব, কুরাইব যা বর্ণনা করেছেন সেটি কোনো হাদীস নয় বরং ইবন আব্বাসের মত; এটি দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য না এবং একে দলীল হিসেবে ব্যবহারও করা যাবে না; হাদীসের কোনো সার্বজনীন অর্থকে সুনির্দিষ্ট করার জন্যও একে ব্যবহার করা যাবে না। অতএব, শুবহাটি বাতিল বলে গণ্য হচ্ছে এবং একে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা ভুল হবে। এক্ষেত্রে আরো উল্লেখ্য যে, যারা বর্তমানে অনেকেই যারা ইবন আব্বাসের মতটির বরাত দেন তারা মূল মতটি অনুসরণ করার জন্য তা করেন না। বরং তারা জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট জাতি-রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে দেখা চাঁদকে প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে তা করে থাকেন। কিন্তু আমরা জানি, জাতীয়তাবাদ ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা বলেন,

وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلا تَفَرَّقُوا

তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে শক্ত করে আকড়ে ধর এবং পরস্পর বিভক্ত হয়ো না। [সূরা আলে ইমরান: ১০৩]

রাসূল (সা) বলেন,

لَيْسَ مِنَّا مَنْ دَعَا إلى عَصَبِيةٍ

‘যে জাতীয়তাবাদের দিকে আহ্বান করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়’। [আবু দাউদ]

তিনি (সা) আরো বলেন,

دَعُوْهَا فَإِنَّهَا مُنْتِنَةٌ

‘এটা (জাতীয়তাবাদ) ছেড়ে দাও, নিশ্চয়ই এটা পঁচে গেছে’। [বুখারী] 

সুতরাং, কোনো জাতি-রাষ্ট্রের সীমানা মুসলিম উম্মতের মধ্যে কোনো বিভেদ সৃষ্টি করেনা। শরীয়তের দৃষ্টিতে পৃথিবীর প্রত্যেক মুসলিম পরস্পর ভাই-ভাই এবং তাদের ভুমিগুলো একটি ভুমি হিসেবেই বিবেচিত হয়।

যেহেতু দুটি শুবহার কোনোটিই আর বৈধ বলে বিবেচিত সেহেতু কোনো শুবহাই আর অবশিষ্ট থাকছে না। অতএব, দলিলের প্রকৃত অর্থ থেকে পাওয়া প্রমাণই একমাত্র গ্রহণযোগ্য বিষয় এবং সে অনুযায়ী পৃথিবীর কোনো অংশে নতুন চাঁদ দেখা গেলে সমস্ত মুসলিমকে একইসঙ্গে সিয়াম পালন শুরু করতে হবে; কারণ রাসূলুল্লাহ (সা) এর হাদীসে পরিষ্কারভাবে এই বিষয়টিই বর্ণিত হয়েছে; “যখন তা দেখবে তখন সিয়াম পালন শুরু করবে।”

একইভাবে পৃথিবীর যেকোনো অংশে নতুন চাঁদ দেখা গেলে সমস্ত মুসলিমকে একইসঙ্গে সিয়াম পালন বন্ধ করতে হবে এবং ঐ দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে পালন করতে হবে; কারণ রাসূলুল্লাহ (সা) এর হাদীসে পরিষ্কারভাবে এই বিষয়টিই বর্ণিত হয়েছে: “যখন একে দেখবে তখন সিয়াম পালন বন্ধ করবে।”

এখানে একথা বলা গুরুত্বপূর্ণ যে, রমযান কখন শুরু হবে এবং কখন শেষ হবে তা জ্যোতির্বিদ্যার সাহায্যে গণনার মাধ্যমে অগ্রিম নির্ধারণ করার বিষয়টি কখনোই প্রকৃত চাঁদ দেখার বিকল্প হতে পারে না। কারণ রাসূল (সা) বলেছেন,

… لَا نَحْسُبُ الشَّهْرُ هَكَذَا وَهَكَذَا يَعْنِي مَرَّةً تِسْعَةً وَعِشْرِينَ وَمَرَّةً ثَلَاثِينَ

“আমরা (মাস গণণার ক্ষেত্রে) হিসাব করি না, (বরং) মাস হচ্ছে এরকম এরকম”। অর্থাৎ ২৯ বা ৩০ দিনে। [বুখারী] 

যেসব সরকার চাঁদ দেখার পরিবর্তে এসব গণনাকে ব্যবহার করছে তাদের কর্মকাণ্ড স্পষ্ট দলিলের সাথে সাংঘর্ষিক, এজন্য তাদের কার্যক্রম অবৈধ এবং তাদের ঘোষণার উপর নির্ভর করা মুসলিমদের জন্য হারাম। 

হে মুসলিমগণ! আপনারা যখন শুনবেন পৃথিবীর কোনো মুসলিম প্রান্ত সেটা যে অঞ্চলই হোকনা কেন, আপনাদের যত কাছের হোক অথবা যত দূরের হোক _ রমযানের নতুন চাঁদ দেখার বিষয়টি বৈধ উপায়ে নিশ্চিত করছে, তখনই আমাদেরকে সিয়াম পালন শুরু করতে হবে এবং এক্ষেত্রে সিয়াম পালন শুরু করার জন্য আমাদের অঞ্চলের শাসক বা মুফতির অনুমতির জন্য অপেক্ষা করা হারাম। একইভাবে আপনারা যখন শুনবেন বিশ্বের কোনো মুসলিম প্রান্ত, সেটা যত কাছের হোক অথবা দূরের – শাওয়্যালের নতুন চাঁদ দেখার বিষয়টি শরীয়তসম্মত পদ্ধতির সাহায্যে নিশ্চিত করছে তখনই আমাদেরকে সিয়াম পালন বন্ধ করে ঈদ উদ্যাপন করতে হবে এবং ঈদ উদ্যাপনের ক্ষেত্রে নিজ অঞ্চলের শাসক বা মুফতির অনুমতির জন্য অপেক্ষা করা আমাদের জন্য হারাম। যারা পথভ্রষ্ট যালিম শাসকদের সন্তুষ্ট করতে বেশি উদ্বিগ্ন তাদের নির্দেশে আমাদের সিয়াম পালন এবং সিয়াম পালন বন্ধ করা উচিৎ নয় বরং আমাদের সিয়াম পালন করতে হবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা ও তাঁর রাসূল (সা)-এর নির্দেশেই। এছাড়াও কোনো দেশের অধিকাংশ মানুষ কোন নিয়মে সিয়াম পালন করছে তাও আমাদের জন্য কোনো ভিত্তি হতে পারে না। এ ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

وَإِنْ تُطِعْ أَكْثَرَ مَنْ فِي الأرْضِ يُضِلُّوكَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلا الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلا يَخْرُصُونَ

আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশের অনুসরণ করেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহ পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে। তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পুর্ণ অনুমানভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে। [আন’আম: ১১৬] 

সুতরাং, আল্লাহর বেধে দেয়া সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির মোকাবেলায় অধিকাংশ মানুষকে অনুসরণ করবার কোনো অবকাশ নেই। 

হে মুসলিমগণ! সিয়াম পালন করার দিন এবং সিয়াম পালন বন্ধের সময়ের ব্যপারে ঐক্যবদ্ধ থাকার যে শরঈ বিধান রয়েছে তা বাস্তবায়নের জন্য আমরা আপনাদেরকে আহবান করছি। এই উপলক্ষ্যে আমরা আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি মুসলিম উম্মাহর জন্য খলীফা নিয়োগের দায়িত্বের ব্যাপারে যা আল্লাহ আমাদের উপরে অর্পণ করেছেন; যিনি আমাদের ভিন্নমত এবং ভিন্ন অবস্থানকে এক করবেন, যিনি সমস্ত শরঈ আহকাম বাস্তবায়ন করবেন, ইসলামের আহ্বানকে পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিবেন এবং আল্লাহর বাণীকে সুউচ্চে তুলে ধরবেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَجِيبُوا لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيكُمْ

হে ঈমানদারগণ, যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এমন কোনো কিছুর দিকে তোমাদেরকে আহ্বান করেন যা তোমাদের মধ্যে জীবনের সঞ্চার করে তখন সেই আহ্বানে সাড়া দাও। [আনফাল: ২৪]

Ideology (মতাদর্শ)

Leave a Reply