ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হল গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যা নিয়ে Secularist দের দম্ভের শেষ নেই। তারা দাবী করে Media একটি Shadow Goverment এর মত কাজ করে সরকারকে কঠিন জবাবদিহিতার মধ্য রাখে যেন তারা জনস্বার্থ বিরোধী কোন কাজ করতে না পারে। জনগণের কাছে ফাঁস হয়ে যাবার হুমকির ভয়ে তারা সঠিক কাজটি করবে এটাই আশা। তারা দাবী করে তাদের স্বাধীন গণমাধ্যম একদিকে নানা জনস্বার্থমূলক বিষয়ে জনমত ও সরকারের অবস্থান তুলে ধরে তাদের মধ্যে সেতু হিসাবে কাজ করে, অন্যদিকে এসব বিষয়ে Expert দের মতামত এক করে সরকারকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে জনগণকে দেখভালের কাজে সরকারকে সহায়তা করে। তাই ভিন্ন মত প্রকাশের অন্যতম Platform হল মিডিয়া। এটা নাকি গণতন্ত্রের সৌন্দর্য, এই ব্যবস্থা ছাড়া নাকি অন্য কোন ব্যবস্থা বিশেষ করে ইসলামি ব্যবস্থা গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে দিবে না। তারা প্রচার চালায় যে ইসলামি কট্টর ব্যবস্থা সরকারের সমালচনার সব পথ বন্ধ করে মতপ্রকাশের স্বাধীনটাকে হরণ করে জনস্বার্থ বা ভিন্নমতের মিলন মেলার পথকে রুদ্ধ করে জনগণকে অন্ধকারে ফেলে রাখবে।
ইসলাম প্রসঙ্গে যাবার আগে দেখা দরকার তাদের এসব কিতাবি কথার কোন অস্তিত্ব বাস্তবে আছে কি নেই। বাংলাদেশে যে নেই তা খুব দৃশ্যমান। শেখ হাসিনার আমলে দেশের ১০১টিরও বেশি গণমাধ্যম ফলাও করে সমুদ্র বিজয়ের প্রচার করলেও পরবর্তীতে জানা যায় বাংলাদেশের প্রাপ্ত ৩৫০ নটিকাল মহিসোপানের ২০০ নটিকাল নাকি ভারতের ইকনোমিক জোনে পড়েছে। অর্থাৎ ওই অঞ্চলে আমরা শুধু মাছ ধরতে যেতে পারব, কিন্তু মাটির নিচের তেল, গ্যাস ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের উপর আমাদের কোন অধিকার থাকবে। গণতন্ত্রে গণমাধ্যমের যে ভুমিকা দাবি করা হয় তা সত্য হলে তাদের উচিত ছিল বাস্তব ফ্যাক্টসগুলোকে ভেরিফাই করে মানুষের সামনে সত্যটা তুলে ধরা। বলা যেতে পারে হাসিনা স্বৈরশাসক, কিন্তু জুলাই বিপ্লবের পর যদি গণতন্ত্র মুক্ত হয়, তাহলে এখন গণমাধ্যম কেন এই রমজানের ২য় সপ্তাহে যে বাংলাদেশ ও ভারতীয় নৌবাহিনীর অংশগ্রহনে যৌথ টহল ‘CORPAT’ ও দ্বি-পক্ষিয় মহড়া “বঙ্গোপসাগর” অনুষ্ঠিত হয়ে গেল তা কেন সামনে আনলোনা? আমাদের সেনা অফিসার ও জুলাইতে আমাদের ছাত্র জনতার উপর আক্রমনে অভিযুক্ত ভারত যে নিয়মিত সীমান্তে গুলি করে আমাদের নাগরিক হত্যা করে সে যে আমাদের শত্রু বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়া লাগে না। সেই শত্রুরাষ্ট্র ভারতের সাথে যৌথ মহড়া করে আমাদের নৌবাহিনীর মত গুরুত্বপূর্ণ একটা বাহিনীর কী সক্ষমতা, কী সরঞ্জাম আছে তা জানান দেয়া দেশের জননিরাপত্তা আর সার্বভৌমত্বর জন্য বিরাট বড় হুমকি, তবুও মিডিয়া নীরব। অন্যদিকে খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠা দাবীতে আয়োজিত বিশাল গণ মিছিল দমনে সরকার কেন আরও অনেক কঠোর হল না তার সমালোচনায় এসব মাধ্যম এক যোগে ফেটে পড়ে, তাদের গণতান্ত্রিক জ্ঞান গায়েব হয়ে যায়।
বলা যেতে পারে, তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ভুমিকা সীমিত হলেও উন্নত বিশ্বে ভিন্ন। কিন্তু মুক্ত বিশ্বের নেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমের অবস্থা তো আরও জটিল। আমেরিকার ট্রাম্পপন্থী ফক্স নিউজ একরকম নিউজ করে, আবার ডেমোক্রেটপন্থী এবিসি নিউজ একই বিষয়ে আরেকরকম নিউজ করে। ২০১৭ সালে ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই যখন কর্পোরেট ট্যাক্স কমানোর Law বানায় তখন এই মিডিয়াগুলো কিন্তু বিগত পাঁচটা বছর ধরে জনগণকে এই Narrative গেলায় যে এতে করে বিজনেসে আরও ইনভেস্টমেন্ট বাড়বে, প্রোডাক্টিভিটি বাড়বে। ২০২৪ সালে এসে বাইডেন পন্থী কিছু Capitalist তাদের পন্থী মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করে দেয় যে ট্রাম্প এই Law শুধুমাত্র ক্যাপিটাললিস্টেদের কর ফাঁকি দেওয়ার জন্যই তৈরি করেছে। দুই পন্থী মিডিয়ার দলাদলির কারণে শেষ পর্যন্ত আসলে লাভ কী হল? পাঁচ বছর ধরেই কিন্তু এই ক্যাপিটালিসদের unpaid ট্যাক্সের বোঝা মিডল ও লো ইনকাম ক্লাস ফ্যামিলিগুলো বয়ে বেরায়। তাইতো আমেরিকার জনগনের ৭৭% মনে করে যে তাদের মিডিয়া সোশাল ও পলিটিকাল ইস্যুতে সত্য খবর প্রচার করেনা।
ব্রিটেনেরও একি অবস্থা। British Law মতে, তাদের কোন Talk show তে কেউ সরকারে ঘোষিত Policy এর বিরুদ্ধে কিছু বলতে হলে সেখানে সরকার পক্ষের Defender লাগবে। মানে ফিলিস্থিনের পতাকা উড়ালে প্রয়োজনে গ্রেফতার করা যাবে- সরকারের এই ধরনের ঘোষিত নীতির খোলামেলা সমালোচনা করা যাবে না। মানে হল সরকার ঠিক করে দিবে মিডিয়া কী বলবে। তাই তো কিছুদিন আগে কারিশমা প্যাটেল নামক একজন বি বি সি সাংবাদিক ফিলিস্থিন বিষয়ে অনবরত মিথ্যাচার করতে না পারায় চাকরি ছেড়ে দেয়। এই হল মুক্ত বিশ্বের মুক্ত গণমাধ্যমের ভুমিকা!
প্রশ্ন আসতে পারে কেন গণমাধ্যম তার কাঙ্খিত ভুমিকা পালন করতে পারছে না? উত্তর হল তারা ঠিক সেই ভুমিকা পালন করছে যে জন্যে তাদের বানানো হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বিখ্যাত American Political Analyst Noam Chomsky একটা কথা বলেছিলেন “একটা স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেখানে সিক্রেট পুলিশ ব্যবহার করে জনগণকে কন্ট্রোল করে আর একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তাদের কর্পোরেট মিডিয়া ইউজ করে এই জনগণকে কন্ট্রোল করে।” অর্থাৎ তাদের বানানোই হয়েছে যেন জনগণকে বিভ্রান্ত করে সরকারকে সমর্থন বা চাপে ফেলে পুজিপতিদের স্বার্থ রক্ষা করা। যেমন ২০১০ সালে হাসিনা যখন সমস্ত জবাবদিহিতার রাস্তা বন্ধ করে বিদ্যুতের নতুন আইন বানায় তখন পত্র-পত্রিকাগুলো আমাদেরকে দেখায় হাসিনা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। আর এই সুযোগে Summit, United এর মত পুজিপতিরা জনগণের পকেট থেকে কুইক রেন্টাল এর নামে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা লোপাট করে নেয়। কাজ শেষ হলে মিডিয়ার তর্জন-গর্জন শুরু হয় আর দেখায় তারা সরকারের সমালোচনায় কতটা স্বাধীন! গত ডিসেম্বরেও আমেরিকার দা ফেমাস টাইমস ম্যাগাজিন ক্ষমতা আসার পূর্বে ট্রাম্পের মত একটা আনস্টেবল ক্যারেক্টার কে দ্যা পার্সন অফ দ্যা ইয়ার খেতাব দিয়ে কোটি কোটি মানুষকে ট্রাম্পের Marketing করে। Elon Musk তার X handle এ ট্রাম্পের পক্ষে প্রচারণা চালায়। আজকে ট্রাম্প ক্ষমতায় আর Musk গং বা অলিগারকরা ক্ষমতাধর। এইভাবে মিডিয়া পুজিপতিদের ফুলে ফেপে উঠতে সহায়তা করে, সেই ফান্ড দিয়ে তারা ঠিক করে সরকার কে হবে, আর সেই সরকার তাদের স্বার্থ আরও সুরক্ষিত করে, আর তাদের আরো ক্ষমতাধর বানায়, আর এই কাজে তাদের সহযোগিতা করে তাদেরই মালিকানাধীন মিডিয়া, এই এক অনবদ্য চক্র, অসাধারন টিম ওয়ার্ক। সকলে মিলে জনগণকে লুটাই আসল কাজ। এ ব্যবস্থায় মিডিয়া পুঁজিপতিদের মুখপাত্র, এটাই তাদের প্রকৃত ভুমিকা, বাকিটা ধাপ্পাবাজি।
কিছু কৌশল প্রয়োগ করে এই ব্যবস্থা পুজিপতিদের মিডিয়া নিয়ন্ত্রন করতে দেয়।
প্রথমতঃ মিডিয়া খুলতে ও পুষতে যে পরিমান টাকা লাগে তা কেবল পুজিপতিদের আছে। একটা চ্যানেল ওপেন করতে Studio, Camera, Staff সহ অনেক খরচ আর লাইসেন্স তো লাগেই যা নবায়ন করতে হয়। তাই মিডিয়াতে অনেকে কাজ করলেও মালিক কেবল কয়েকজন হতে পারে।
দ্বিতীয়তঃ ফাঁক ফোকরে কোন তুলনা মূলক ছোট মালিকের কোন চ্যানেল জনপ্রিয় হয়ে গেলে বড়রা তা কিনে ফেলে। যেমন ২০১৩ সালে Jeff Bezos Washington Post ও অন্যান্য Local publications, Websites, and Real estate US $250 Million কিনে ফেলে, Businessman Elon Musk ২০২২ সালে American Social Media Company Twitter Inc. এর বেশির ভাগ শেয়ার কিনে নেয়। Mark Zuckerberg, the CEO of Meta, একই প্রক্রিয়ায় Instagram and WhatsApp এর মালিকানা পায়।
এভাবে সারা দুনিয়ায় কয়েক জন পুঁজিপতি পুরো মিডিয়া সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করে। আমেরিকার 90% মিডিয়া Disney, Comcast, AT&T এর মত মাত্র ছয়টা কোম্পানির মালিকানাধীন! এই ছয়টা কোম্পানি, যাদেরকেবলা হয় ‘The big six’, এরাই ডিসাইড করে আমেরিকার কোটি কোটি মানুষ তাদের টিভিতে কোন নিউজ দেখবে, কোন বয়ান গুলো তাদের গেলানো হবে এবং সর্বোপরি যেকোন বিষয়ে তাদের ভিউপয়েন্টটা কেমন হবে। এর মধ্যে মিডিয়া মুঘল নামে পরিচিত Rupert Murdoch একাই Wall Street Journal, The Times সহ শত শত পত্রিকা এবং Sky News, Fox সহ অনেক টিভি চ্যানেল-এর মালিক। এস আলম গ্রুপই কিন্তু বাংলাদেশের কয়েকটা মিডিয়া নিজেই Run করে। এছারা East West Media ও Transcom Media নামে দুটি প্রকাশনা বসুন্ধরা গ্রুপের মালিক যারা কালের কণ্ঠ ও অন্যটি ট্রান্সকমের মালিক চালায় যেখান থেকে প্রথম আলো, Daily Star ইত্যাদি জনপ্রিয় মিডিয়া বের হয়। সারা দুনিয়ায় একই ব্যবস্থা, একই চিত্র।
অনেকে মনে করে Social Media হয়তো এই প্রক্রিয়ার বাইরে। চ্যানেল খোলা তুলনামুলক সহজ বলে দলছুট সৎ সাংবাদিকরা এখানে মুক্তমনে সংবাদ প্রকাশ করতে পারে যা গণতন্ত্রের দাবির সাথে সংগতিপূর্ণ। এটা ঠিক গত ৭৫ বছর ধরে ফিলিস্থিনে গণহত্যার পক্ষে ইসরাইলের সমর্থনে তথাকথিত Western Free মিডিয়া যে ন্যারেটিভ তৈরি করে আসছিল, যার কারণে তাদের জনগণ মনে করত ফিলিস্তিনের মানুষরাই বেশি একরোখা, মিলেনিশে থাকতে চায় না, ৭ অক্টোবরের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় কল্যাণে প্রথমবার ফিলিস্থিনের নারকীয় পরিস্থিতি তারা জানতে পারে। ফলে মূলধারার মিডিয়াগুলোর আবাধ মিথ্যাচার বাধার মুখে পড়ে। তাই তাদের কাতার ভিত্তিক আলজাজিরার মত Creative হতে হচ্ছে। তারা একদিকে গাজা গণহত্যা বিরোধী জোরালো অবস্থান ধরে রেখেছে অন্যদিকে Two State Solution এর নামে দখলদার ইসরায়েলের উপস্থিতি জায়েজিকরণ, মানবাধিকার সংস্থার ঢাল দিয়ে গণতন্ত্রের ফেরি আর গণহত্যার মদদ কারি কাতারসহ মধ্য প্রাচ্যের শাসকদের বিরুদ্ধে নীরব, তার পক্ষে সাফাই গেয়ে যায় এমনভাবে যেন পাবলিক এই ব্যবস্থায় আশা জিইয়ে রাখে। রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায় আর ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার নিয়ে সংবাদ উপস্থাপনের পার্থক্য কিংবা ফিলিস্তিনির মৃত্যুকে has died আর ইজরাইলি মৃত্যুকে was killed কিংবা ফিলিস্থিনি বন্দিদের prisoner আর ইসরাইলি বন্দীদের hostage বলে সম্বোধন ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের দ্বিচারিতা সাধারনের কাছে উন্মুক্ত করে দেয় এই Social Media ।
কিন্তু সাদা চোখে না দেখা গেলেও এই মিডিয়াও দারুনভাবে নিয়ন্ত্রিত। পুরো সোশ্যাল মিডিয়ার কন্ট্রোল এলন মাস্ক, জাকারবারগ এর মত মাত্র দু-তিন জন পুঁজিপতির হাতে। আর তাদেরই দেওয়া গাইডলাইন মোতাবেক নিউজ হতে হয়। সেখানে ইসলাম ও রাসুল (সা) বিরোধী যা খুশি বলার স্বাধীনতা আছে; খিলাফাহ, ফিলিস্থিন সহ তাদের মানদণ্ডে আপত্তিজনক শব্দ লিখলে ফিল্টার করে আইডিকে রেস্ট্রিক্ট করে দেওয়া সহ এমনকি জঙ্গি সন্দেহে অনলাইন পুলিশিং এর নজরদারিতে পরার হুমকি থাকে। Violent Post এর নামে অধিকাংশ ফিলিস্থিনিদের video আমরা দেখতেই পাইনা, তাদের বিশেষ অ্যালগরিদম সেন্সর অনুযায়ী এসব নিউজ তারা রিচ ই হতে দিবেনা। সালেহ, আবুদ, ইউসুফ, সুবিস দের প্রো-প্যালেস্টিনিয়ান পোস্টের কারণে ১৫ মিলিয়ন ফলোয়ারসহ পুরো ইন্সটা একাউন্টই নাই করে দেয়া হয়েছে!! তাই এখানে কাজ করা দলছুট সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রন করা সহজ। তাদের মধ্যে খালেদ মহিউদ্দিন এর মত কাকে জনগণের সামনে আনবে আর জন অয়েন বা কারিস্মাদের মত কাকে আনবেনা, কোন চ্যানেলের রিচ আপ না ডাউন থাকবে নাকি পুরা পেইজই হাওয়া হয়ে যাবে এটাও ঠিক করে সেই সেকুলার পুজিপতিরাই। সম্প্রতি মার্কিন মন্ত্রনালয় catch and revoke নামে একটি AI app এআই চালু করেছে, যার কাজ ফিলিস্থিনের পক্ষে মন্তব্যকারিকে সনাক্ত করা। এমনকি যারা লাইক দিয়েছে তাদেরকেও ভিসা বাতিল করে দিচ্ছে। এভাবে রিচ কমিয়ে, আইডিকে রেস্ট্রিক্ট করে, বিভিন্ন আইন ও অনলাইন পুলিশিং এর মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়াগুলো নিয়ন্ত্রনে থাকে। এই কারণে ফিলিপাইনের সাংবাদিক মারিয়া রেসা বলছিলেন, “ইলন মাস্ক, মারক জাকারবার্গ এর মতো সোশ্যাল মিডিয়ার কর্তারাই বড় ফ্যাসিস্ট।”
তাই ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গণমাধ্যম আসলে স্বাধীনতার নামে পরাধীন। এরকম কাঁচের ঘরে বসে তারা ইসলামে গণমাধ্যমের ভুমিকাকে আক্রমন করে ঢিল ছুড়ার সাহস কিভাবে পায়? সাহস পায় কারণ ১০১ বছর খিলাফার অনুপস্থিতিতে এই মিডিয়া কাজে লাগিয়েই ইসলামকে তারা কেবল ধর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে আর খিলাফাহ প্রত্যাবর্তনের উপায় রাজনৈতিক ইসলামকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের সাথে যুক্ত করে এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যে সাধারন মানুষ তা ভয়ের চোখে দেখে। তাই পরিপুর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসাবে এখানে গণমাধ্যমের ভুমিকা কী হবে তা নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে সাধারন অজ্ঞতা বিরাজমান। তারা Secular Media এর বাইরে কিছু ভাবতে পারে না। এই সুযোগে এই ব্যবস্থা ইসলামকে কট্টর আখ্যা দিয়ে সাধারন মানুষকে ভয় দেখায় যে ইসলামী ব্যবস্থা আসলে নাকে এই তথাকথিত স্বাধীনতা হারিয়ে যাবে, সমালোচনার সব দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। আর এসব প্রচারনায় আমরা এত লজ্জিত হয়ে পরি যে তাদের উন্মুক্ত ত্রুটি আমরা ধরার চেষ্টাই করি না, ইসলামকে বিকল্প না ধরে এই বাতিল ব্যাবস্থার সংস্কারের চিন্তা করি যা তাদের এই কাঁচের ঘর টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করছে। অথচ একমাত্র ইসলামি জীবন ব্যবস্থা পুঁজিপতিদের জিম্মি দশা থেকে মানবতাকে মুক্ত করার সক্ষমতা রাখে। এর অধীনে গণমাধ্যম মিথ্যাকে সত্য দিয়ে সজোরে আঘাত হানবে যেন মিথ্যার মগজ বের হয়ে যায় এবং মানুষ সত্যটা জানতে পারে।
কেমন হবে ইসলামের মিডিয়া?
রাসুল (সা) এর সময় তার প্রশাসন তখনকার Technology ব্যবহার করে মিডিয়ার কাজ করত। রমজান মাসে চাঁদ দেখা গেলে ঘোড়া ছুটিয়ে যতদুর যেতে পারে খবর পাঠান হতো। আমরা বিদায় হজ্জের ভাসনে দেখেছি বিভিন্ন point এ বার্তা বাহক দাঁড়িয়েছিল, রাসুল (সা) ভাসন মুখে মুখে নির্দিষ্ট দূরত্বে দারিয়ে তারা হুবহু ভিড়ের শেষ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিলেন। সেই সময় যে নীতিমালা দিয়ে মিডিয়া নিয়িন্ত্রিত হতো, একই নীতিমালায় বর্তমানে মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত হবে যদিও Science and Technology এর উৎকর্ষের কারণে Satellite controlled Internet based সোশ্যাল মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ অনেক ধরনের মিডিয়া এখন চালু আছে।
কুরআন ও সুন্নাহ থেকে ভবিষ্যৎ খিলাফাহ রাষ্ট্রের জন্য যে সংবিধান তৈরি করা আছে সেখানে তথ্যনীতির অধীনে ১০৩ ও ১০৪ ধারায় বলা আছে:
অনুচ্ছেদ ১০৩: মিডিয়া অফিস প্রতিষ্ঠানটি রাষ্ট্রের জন্য রাজনৈতিক মিডিয়া কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত, যাতে ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা করা যায়। অভ্যন্তরীণভাবে, এটি একটি শক্তিশালী ও সংহত ইসলামি সমাজ গঠনের জন্য কাজ করে, যা মন্দকে খণ্ডন করে এবং সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে। বাহ্যিক ক্ষেত্রে, এটি শান্তি ও যুদ্ধ উভয় অবস্থাতেই ইসলাম প্রচার করবে, এমনভাবে যে ইসলাম ধর্মের মহত্ব, এর ন্যায়বিচার এবং এর সেনাবাহিনীর শক্তি ব্যাখ্যা করা হবে এবং মানবসৃষ্ট ব্যবস্থার দুর্নীতি ও নিপীড়ন এবং তাদের সেনাবাহিনীর দুর্বলতা প্রকাশ করা হবে।
অনুচ্ছেদ ১০৪: রাষ্ট্রের যে কোনো নাগরিকের মালিকানাধীন মিডিয়ার জন্য কোনো অনুমতির প্রয়োজন নেই; বরং তারা কেবল মিডিয়া অফিসকে অবহিত করবে, যাতে অফিসটি নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া সম্পর্কে জানতে পারে। যে কোনো মিডিয়া মাধ্যমের মালিক ও সম্পাদকরা তাদের প্রকাশিত প্রতিটি নিবন্ধের জন্য দায়ী থাকবে এবং তারা যদি শরীয়াহর বিরোধী কিছু প্রকাশ করে, তবে যে কোনো নাগরিকের মতো তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।
ধারা ১০৩ ১০৪ অনুযায়ী, ইসলামী রাষ্ট্রের গণমাধ্যম বিভাগ দুই ভাগে বিভক্ত:
প্রথম বিভাগ: এমন সংবাদ যা রাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত, যেমন সামরিক বিষয়, সামরিক শিল্প ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য স্পর্শকাতর বিষয় যেমন রাষ্ট্রের ইন্টারনাল সিকিউরিটি বিষয়, সেনাবাহিনীর তথ্য, যুদ্ধের প্ল্যান ও স্ট্রাটেজি, তা তারা খলীফার অনুমতি ছাড়া প্রচার করতে পারবে না। এই বিষয়ে দলিল হল, আল্লাহ্ বলেছেন, “আর যখন তাদের কাছে নিরাপত্তা বা আশঙ্কা সংক্রান্ত কোনো সংবাদ আসে, তখন তারা তা ছড়িয়ে দেয়। অথচ তারা যদি তা রাসুল (সা.) এবং তাদের মধ্যে যারা কর্তৃত্বশীল, তাদের কাছে পৌঁছে দিত, তবে যারা তা থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত বের করতে পারে, তারা তা জানতে পারত” (হুজুরাত:৬)। রাসুল (সা) আয়শা (রা.) কে বলেন, “আমাকে প্রস্তুত করো, এবং কাউকে এ ব্যাপারে কিছু বলো না… তারপর তিনি নির্দেশ দিলেন যেন মহাসড়কগুলোর পথ বন্ধ করা হয়, ফলে মক্কার জনগণ অন্ধকারে রয়ে গেল এবং তাদের কাছে কোনো সংবাদ পৌঁছেনি”। এই কারণে এ ধরনের খবর অনুমতি ছাড়া প্রচার করা যাবে না।
দ্বিতীয় বিভাগ: অন্যান্য সংবাদ যেগুলোর উপর সরাসরি তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন নেই, এসব সংবাদ প্রচারের জন্য রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত গণমাধ্যমের অনুমতির প্রয়োজন নেই।
এই নীতিমালা অনুযায়ী: সরকারি বা বেসরকারি যে কেউ মিডিয়া খুলতে পারবে। এর জন্য কোন বড় বড় ব্যবসায়ীদের দ্বারস্থ হওয়া লাগবে না, কারো সামর্থ্য না থাকলে বায়তুল মাল থেকে সুদবিহীন ঋণ প্রদান করা হবে, মিডিয়ার খোলার ক্ষেত্রে অনুমতিও লাগবেনা। একাধিক মিডিয়া হাউজ থাকবে কিন্তু কোটিপতিদের কন্ট্রোলে না, বরঞ্চ শরিয়ার কন্ট্রোলে। এক্ষেত্রে খলিফা একজন চীফ মিডিয়া অফিসারকে নিযুক্ত করবেন, যেটা হবে centralized. chief officer এর কাজ হবে সাধারণভাবে তদারকি করা, ইসলামের guidance ফলো করছে কিনা। তবে শুধু তদারকি পর্যন্তই, তাদের নিয়ন্ত্রন করার জন্য নয়। এই মিডিয়াগুলো সাধারনভাবে আকিদা ভিত্তিক গভীর আলোচনা ছাড়াও বিশ্বব্যাপী ইসলামী জীবন ব্যবস্থার superiority ও কুফর ব্যবস্থার অসারতা তুলে ধরবে, লাইফের বিভিন্ন aspect ইসলামের সমাধান ও কালচারগুলোকে তুলে ধরবে, অন্যান্য মুসলিম ভূখণ্ডগুলোকে খিলাফতের অধীনে ঐক্যবদ্ধ হতে উদ্বুদ্ধ করবে এবং ইসলামী দাওয়া সারা বিশ্বে পৌঁছে দিবে। এই মিডিয়া আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ রোল হল সৎ কাজে আদেশ অসৎ কাজে নিষেধ করা। সাধারণভাবে,সৎ কাজে আদেশ অসৎ কাজে নিষেধ এবং শাসককে একাউন্ট করা ইসলামে ফরজ। তাই খলিফা, আমিল ও গভর্নর যে কোন পর্যায়ে দুর্নীতির সন্ধান পেলে, কোন গাফিলতি হলে খলিফা এবং সরকারের লোকদের বিরুদ্ধে Investigate ও প্রতিবেদন করবে। এই ব্যাপারে আল্লাহ্ ছাড়া আর কাউকে পরোয়া করতে হবে না। ইবনে আব্বাস বর্ণিত, রাসুল (সা) বলেছেন, “(হাশরের ময়দানে) শহীদদের নেতা হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব এবং সেই ব্যক্তি যে জালিম শাসকের সামনে দাঁড়িয়ে তাকে সৎকাজের আদেশ দিবে এবং অসৎকাজে নিষেধ করবে আর একারণে তাকে হত্যা করা হবে।” এছাড়াও জনগণের চাহিদার কথা হতে পারে কোন প্রত্যন্ত জায়গায় ভাঙ্গা রাস্তার মেরামত বা অন্য কোনো জনদুর্ভোগ, সরকারের কাছে মিডিয়া তুলে ধরবে, এইভাবে জনস্বার্থে মিডিয়া ব্যবহৃত হবে।
যদি ইসলামি বহির্ভূত কালচার, বা মিথ্যা নিউজ, twisted নিউজ, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য না হয় তা প্রচারে সাংবাদিকদের কোন বাঁধা থাকবে না। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: «আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করবো না?” সাহাবিরা বললেন, “অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসূল। “তখন তিনি বললেন: “আল্লাহর সাথে শরিক করা এবং বাবা-মায়ের অবাধ্যতা।” তিনি তখন হেলান দিয়ে ছিলেন, কিন্তু এরপর উঠে বসলেন এবং বললেন: “এবং মিথ্যা কথা ও মিথ্যা সাক্ষ্য।” তিনি এটি বারবার বলতে থাকলেন, যতক্ষণ না তিনি চুপ হয়ে গেলেন। তাই হলুদ সাংবাদিকতা শারিয়ার লঙ্ঘন।
বর্তমান ব্যবস্থায় বাক স্বাধীনতার নামে পুঁজিপতিদের গোলামি চলে। ইসলাম আল্লাহ্ প্রেরিত শাসন ব্যবস্থা, এখানে বাইরে এক আর ভিতরে আরেক ধরনের আলাদা কোন চাতুর্যময় ব্যবস্থা নেই। পুরোটাই উন্মুক্ত। সেই অর্থে ইসলামে কোন স্বাধীনটাই নেই, আছে আল্লাহর অধীনতা যা দুনিয়াকে মানবজাতির জন্য বাসযোগ্য করবে আর আখিরাতে উত্তম প্রতিদান দিবে। সেই আশায় মুসলিমরা journalism practice করবে, এর মাধ্যমে তারা সত্য প্রচার করে ইসলামের নেতৃত্বকে তুলে ধরে নেকি কামাবে। শারিয়ার অধীনে অমুসলিম সত্যবাদি সাংবাদিকরাও নির্ভয়ে সত্য ও তাদের চাওয়া পাওয়া তুলে ধরতে পারবে আর মানুষ জানতে পারবে সত্য, যা আজকে দুস্প্রাপ্য। ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাক স্বাধীনতার নামক প্রহসনের মাধ্যমে মানবজাতিকে মিথ্যার অন্ধকারে নিমজ্জিত করে রেখেছে। খিলাফাহ তার শক্তিশালী মিডিয়া ব্যবহার করে মানবজাতিকে সত্যকার অর্থে মুক্ত করবে, তাদের কাছে সত্য পৌঁছে দিবে ইনশাআল্লাহ।