জান্নাত ও জাহান্নামের চিন্তা: একটি জীবন পরিবর্তনকারী চেতনা

জান্নাত জাহান্নামে বিশ্বাস মুসলিমদের আকীদার অংশ। আকীদা হল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী বিশ্বাস যার ভিত্তিতে মানুষ তার জীবন পরিচালনা করে। কিন্তু বর্তমান সমাজে মানুষের কাছে জান্নাত জাহান্নাম অনেকটা তথ্যের মত রয়েছে; এটি জীবন পরিচালনাকারী বোধ বা চেতনা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী বিশ্বাস হিসেবে নেই। এর একটি প্রধান কারণ হল বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থা (এর শাসক, সমাজব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, মিডিয়া, বিচারব্যবস্থা) যা আমাদেরকে প্রতিনিয়ত দুনিয়ার সফলতার কথা মনে করিয়ে দিলেও আখেরাতের বিষয়ে নীরব। কিন্তু একটি সময় ছিল খোলাফায়ে রাশেদীনদের সময় যখন শাসক জনগনকে পরকাল, দুনিয়ার জীবনের তুচ্ছতা মনে করিয়ে দিত।  

উসমান ইবনে আফফান (রা) তার জীবনের শেষ খুতবায় বলেন,

“আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তোমাদেরকে এ দুনিয়া দিয়েছেন যাতে তোমরা আখেরাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পার,একে নিয়ে পড়ে থাকার জন্য নয়,এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী অথচ আখেরাত চিরস্থায়ী। অতএব এমন কোন কিছু নিয়ে ব্যস্ত থেকো না যা তোমাকে অবশেষে অবহেলিত করবে,এমন কোন কিছু নিয়ে ব্যস্ত থেকো না যা ক্ষণস্থায়ী। সেই পথের সন্ধান কর যা চিরস্থায়ী। অবশ্যই আমাদের দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হবে এবং আমাদের আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সাথে মিলিত হতে হবে। মৃত্যু আমাদের আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়,এর চেয়ে ভাল স্মরণ আর কি আছে?”  

ইসলামের ইতিহাসের প্রথম প্রজন্মকে রাসূলুল্লাহ (সা) জান্নাত জাহান্নামের ইয়াকীন বা দৃঢ় বিশ্বাস দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন। তারা জীবনের সব কিছুর সাথে, সব কাজের সাথে জান্নাত-জাহান্নামকে সর্ম্পকযুক্ত করতে পারতেন। সকালবেলার সূর্যরশ্মি যখন উমর (রা) এর চোখে পড়ল এবং এতে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল, তিনি বলে উঠলেন, ‘আল্লাহুম্মা আজির না মিনান নার।’ আফসোস, আমরা আজকে এভাবে জান্নাত জাহান্নামকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্ম্পকিত করতে পারি না।

দুনিয়ার কোন ডিগ্রী অর্জন করা, ভাল চাকুরী বা ব্যবসা করা, বিলিওনিয়ার হওয়া, অঢেল সম্পদের মালিক হওয়া, সুরম্য অট্টালিকার মালিক বনে যাওয়া, বিলাসী জীবন লাভ করা সফলতা নয়, বরং সফলতা হল জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি এবং চিরস্থায়ী জান্নাত লাভ করা।

“জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর কিয়ামতের দিন তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় দেয়া হবে। যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সেই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতিত কিছু নয়।” (সূরা আল ইমরান: ১৮৫)

ইসলাম কুরআন এবং সুন্নাহ’র মাধ্যমে জান্নাতকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যাতে আমরা জান্নাতের ব্যাপারে লালায়িত হই এবং জাহান্নামকে ভয়াবহ আযাবকে ভয় পাই। এটি বান্দার প্রতি আল্লাহ’র মহব্বতের বহিঃপ্রকাশ।

“আর যারা তাদের রবকে ভয় করেছে তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। অবশেষে তারা যখন সেখানে এসে পৌছবে এবং এর দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে তখন জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, ‘তোমাদের প্রতি সালাম,তোমরা ভাল করেছ। অতএব স্থায়ীভাবে থাকার জন্য এখানে প্রবেশ কর।” (সূরা যুমার: ৭৩)

সাহাবা (রা) দের জান্নাতের আকাঙ্খা এত তীব্র ছিল যে, কেউ কেউ হাতে রাখা খেজুর ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলেছে, এগুলো খাওয়া পর্যন্ত অনাকাঙ্খিত দীর্ঘ হায়াত নিয়ে বেচে না থেকে দ্রুত জান্নাতে চলে যাওয়াই উত্তম। তারা জান্নাত জাহান্নামকে অতি নিকট বাস্তবতার মত করে দেখতেন। আবার কেউ বর্শা বিদ্ধ হয়ে আনন্দের আতিশয্যে চিৎকার করে বলে উঠেছে, ‘কাবা’র রবের কসম,আমি সফল হয়ে গেছি।’ মুতার যুদ্ধে জায়েদ বিন হারেসার শাহাদার পর দুই লক্ষ রোমান সৈন্যের বিপরীতে মাত্র তিনহাজার জন মুসলিম সৈন্যের নেতৃত্ব দানকালে জাফর বিন আবু তালিব (রা) আবৃত্তি করছিলেন, “স্বাগতম হে জান্নাত! যার আগমন-শুভলক্ষণ,যার পানি শীতল। রোম তো রোমই-যার শাস্তি ঘনিয়েছে। কাফের-ছিন্ন বিচ্ছিন্ন তাদের বংশ। যদি তাদের সাক্ষাত পাই।” এ কবিতা আবৃত্তি করতে করতে তিনি শহীদ হয়ে যান। জান্নাতে তাকে দেয়া হয়েছে দু’টি ডানা- যা দিয়ে সেখানে তিনি উড়ে বেড়ান।

জাবির বর্নিত মুত্তাফিকুন আলাইহি-এর একটি হাদীসে এসেছে যে,

ওহুদের দিন এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে জিজ্ঞেস করলো, “আজ যদি আমি নিহত হই, তাহলে আমার অবস্থান কোথায় হবে? ”উত্তরে তিনি (সা) বললেন, “জান্নাত। অতঃপর ঐ ব্যক্তি তাঁর হাতের সমস্ত খেজুর ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং ততক্ষন পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে গেলো যতক্ষণ না তিনি শহীদ হন।’’ [মুত্তাফিকুন আলাইহি]

মুসলিম উল্লেখিত হাদীসে আনাস (রা) বর্ণনা করেন যে:

“রাসূলুল্লাহ্ (সা) এবং সাহাবীগণ, মুশরিকদের আগমনের পূর্বেই বদর প্রান্তরে পৌঁছান। যখন মুশরিকরা উপস্থিত হলো তখন তিনি (সা) সাহাবীদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন: চলো এমন এক জান্নাতের দিকে ছুটে যাই যার প্রশস্ততা আসমান ও জমীন পর্যন্ত বিস্তৃত। ‘উমায়ের বিন আল হাম্মাম আল আনসারী অবাক বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল, এমন এক জান্নাত যার প্রশস্ততা আসমান ও জমিন পর্যন্ত বিস্তৃত? তিনি (সা) বললেন: হ্যাঁ। উমায়ের প্রতিক্রিয়া জানালো: আহ্ কী চমৎকার! রাসূল (সা) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: কোন জিনিস তোমাকে এরূপ মন্তব্যে উদ্ধুদ্ধ করলো? জবাবে সে বললো: হে আল্লাহ্’র রাসূল, আল্লাহ্’র কসম, আমি ঐ অধিবাসীদের একজন হবো, এই প্রত্যাশা ছাড়া অন্য কোনো প্রত্যাশা থেকে আমি এ মন্তব্য করিনি। অতঃপর রাসূল (সা) বললেন: ‘নিশ্চয়ই তুমি সেই বাসিন্দাদের একজন’। তখন উমায়ের তার থলে হতে কিছু খেজুর বের করে সেগুলো খাওয়া শুরু করলো। এবং মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো যে, যদি আমি এই খেজুরগুলো শেষ করার অপেক্ষায় থাকি তাহলে তা হবে সময়কে দীর্ঘায়িত করা। অতঃপর তিনি তার হাতের অবশিষ্ট খেজুরগুলোকে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং শহীদ হওয়া পর্যন্ত কাফিরদের সাথে যুদ্ধে করতে থাকেন।”

আনাস (রা) বর্ণিত মুত্তাফিকুন আলাইহির আরেকটি হাদীসে এসেছে:

“আমার চাচা আনাস বিন আন নদর বদরের যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বলতেন, হে আল্লাহ্’র রাসূল (সা)! মুশরিকদের বিরুদ্ধে আপনার প্রথম যুদ্ধে আমি অনুপস্থিত ছিলাম। যদি আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধে অংশগ্রহনের সুযোগ প্রদান করতেন, তবে তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) প্রত্যক্ষ করতেন, কত সাহসিকতার সহিত আমি যুদ্ধে অবতীর্ণ হই।” অতঃপর যখন ওহুদের ময়দান হতে মুসলিমগণ পৃষ্ঠ প্রদর্শন করলো এবং পালাচ্ছিল, তখন তিনি (রা) বললেন, “হে আল্লাহ্, এরা (সাহাবীগণ) আজ যা করছে, তা হতে আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং এই মুশরিকরা যা করছে তাকে আমি তীব্র ভাষায় ধিক্কার জানাই।” অতঃপর তিনি যখন ওহুদের ময়দানের দিকে অগ্রসর হতে লাগলেন, তখন তাঁর সাথে সাদ বিন মু’য়াজ (রা) সাক্ষাৎ হলো। তিনি (নদর) তাকে আহ্বান করে বললেন, “হে সাদ বিন মু’য়াজ! জান্নাত। আন-নদরের রবের কসম! (এই পাহাড়ের পেছন থেকে তথা) ওহুদের ময়দান হতে আমি তার সুভাস পাচ্ছি।” অতঃপর সা’দ বললেন: “হে আল্লাহ্’র রাসূল! আনাস সেই দিন যে দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে আমি তা পারিনি। আমরা তার সমস্ত শরীরে তলোয়ার, বর্শা ও তীরের আঘাতজনিত আশিটিরও অধিক ক্ষতচিহ্ন দেখতে পাই। আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পাই। মুশরিকরা তার সমস্ত শরীরকে এমন নৃশংসভাবে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করেছিল যে, শেষ পর্যন্ত তার বোন আঙুল দেখে তাঁকে সনাক্ত করতে সমর্থ্য হয়।” আনাস (রা) বলেন, “আমরা সবাই ভাবতাম নিম্নোক্ত আয়াতটি হয়তো তাকে (আন-নদর) বা তার মত কাউকে উদ্দেশ্য করে নাযিল হয়েছে; মু’মিনদের মধ্যে কতক ব্যক্তি রয়েছেন যারা আল্লাহ্’র নিকট তাদের কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছেন।” [সূরা আল আহযাব:২৩] 

“জান্নাতে ধনুক পরিমাণ স্থান দুনিয়ার যেসব বস্তুর উপর সূর্য উদিত হয় বা অস্তমিত হয়, তাদের চেয়ে উত্তম।” (বুখারী: ৩২৫০)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন,

“কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্য হতে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে যে দুনিয়ার জীবনে সবচেয়ে সুখী ও বিলাসী ছিল। অতপর তাকে জাহান্নামে একবার মাত্র ঢুকানো হবে এবং বের করার পর তাকে বলা হবে, ‘হে আদম সন্তান,তুমি কি কখনও ভাল জিনিস দেখেছ?তোমার কাছে কি কখনও সুখ সামগ্রী এসেছে?’সে বলবে, ‘না,আল্লাহ’র কসম হে প্রভূ।’ আর জান্নাতীদের মধ্য থেকে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে যে দুনিয়াতে সবচেয়ে দু:খী ও অভাবী ছিল। তাকে জান্নাতে একবার মাত্র ঢুকানো হবে এবং বের করার পর তাকে বলা হবে, ‘হে আদম সন্তান,দুনিয়াতে তুমি কখনও কষ্ট দেখেছ?তোমার উপর কী কখনও বিপদ এসেছে?’সে বলবে ‘না,আল্লাহ’র কসম! আমার উপর কখনও কষ্ট আসেনি,আমি কখনও বিপদেও পতিত হইনি”। (মুসলিম)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন,

“সর্বশেষ যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে বের হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে তার সর্ম্পকে অবশ্যই আমার জানা আছে। এক ব্যক্তি হামাগুড়ি দিয়ে অথবা বুকে ভর দিয়ে জাহান্মাম থেকে বের হবে। তখন আল্লাহ বলবেন, ‘যাও জান্নাতে প্রবেশ কর।’ সুতরাং সে জান্নাতের কাছে এলে তার ধারণা হবে যে,জান্নাত পূর্ণ হয়ে গেছে। ফলে সে ফিরে আসবে এবং বলবে, ‘হে আমার প্রভূ,জান্নাত তো পরিপূর্ণ দেখলাম।’ আল্লাহ আবার বলবেন, ‘যাও,জান্নাতে প্রবেশ কর।’ তাই সে আবার ফিরে আসবে এবং বলবে, ‘হে আমার প্রভূ,জান্নাত তো পরিপূর্ণ দেখলাম।’ তখন আল্লাহ বলবেন, ‘যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। তোমার জন্য থাকল পৃথিবীর সমতুল্য দশটি পৃথিবীর মত বিশাল জান্নাত।’ তখন সে বলবে, ‘হে প্রভূ তুমি কী আমার সাথে ঠাট্টা করছ অথচ তুমি একজন বাদশাহ?” বর্ণণাকারী বলেন, ‘তখন আমি রাসূলুল্লাহ (সা) এমনভাবে হাসতে দেখলাম যে, তাঁর চোয়ালের দাঁতগুলো প্রকাশিত হয়ে গেল।’ তিনি (সা) বললেন, “এ হল সর্বনিম্নমানের জান্নাতী (বুখারী-মুসলিম)  

“এ জান্নাতী যখন জান্নাতে প্রবেশ করবেন তখন তার দু’টি হুরী স্ত্রী কাছে এসে বলবে, ‘সেই আল্লাহ’র প্রশংসা, যিনি তোমাকে আমাদের জন্য এবং আমাদেরকে তোমার জন্য বাচিয়ে রেখেছেন।’ তখন সে বলবে, ‘আমাকে যা দেয়া হয়েছে তা অন্য কাউকে দেয়া হয়নি।”(মুসলিম)

হাদীস থেকে জানা যায়, জান্নাতের রয়েছে আটটি দরজা। এগুলো হল: বাবুস সালাহ, বাবুল জিহাদ, বাবুস সাদাকাহ, বাবুর রাইয়ান, বাবুল হাজ্জ, বাবুল কাজীমিনাল গাইজ ওয়াল আফিনা আনিননাস (রাগ সংবরণকারী ও অন্যদের ক্ষমাকারী), বাবুল আইমান (আল্লাহ’র উপর তাওয়াক্কুলকারী যারা বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে), বাবুস জিকর (যারা ঘন ঘন আল্লাহকে স্মরণ করেছে)।”

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন,

“যে ব্যক্তি আল্লাহ’র রাস্তায় জোড়া বস্তু ব্যয় করে তাকে জান্নাতে দরজাসমূহ থেকে ডাকা হবে, ‘হে আল্লাহ’র বান্দা এ দরজাটি উত্তম। এদিকে এস।’ সুতরাং যে নামাজীদের দলভুক্ত হবে তাকে সালাতের দরজা থেকে ডাকা হবে,যে মুজাহিদদের দলভুক্ত হবে তাকে জিহাদের দরজা থেকে ডাকা হবে,যে রোযাদারদের অর্ন্তভুক্ত হবে তাকে রাইয়ান নামক দরজা থেকে ডাকা হবে। আর দাতাকে দানের দরজা থেকে ডাকা হবে।” এসব শুনে আবু বকর (রা) বললেন, ‘হে আল্লাহ’র রাসূল! আমার মাতা পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক। যাকে ডাকা হবে তার তো ঐসব দরজার প্রয়োজন নেই। এমন কেউ হবে কি! যাকে সব দরজা থেকে ডাকা হবে?’ তিনি (সা) বললেন, “হ্যা,আর আশা করি তুমি তাদের দলভুক্ত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)


হে মুসলিম, হে আল্লাহ’র বান্দা, জান্নাত অন্বেষণকারীরা অন্যদের চেয়ে আলাদা। রাতে মানুষ যখন ঘুমায়, তারা তখন নামাজ পড়ে। মানুষ যখন পানাহার করে, তারা তখন রোযা রাখে। মানুষ যখন জমা করে, তখন তারা সাদাকা করে। মানুষ যখন ভীরুতা প্রদর্শন করে তখন তারা সালফে সালেহীনদের মত জালিম শাসকের সামনে হক্ব কথা বলতে ভয় পায় না। তারা আল্লাহকে ভয় করে গোপনে ও প্রকাশ্যে। তারা কবিরাহ গুনাহ ও অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকে। আল্লাহ’র স্মরণে তাদের হৃদয় কেপে উঠে। কুরআন তেলাওয়াত শুনে তাদের তাকওয়া বৃদ্ধি পায়। তারা আল্লাহ’র উপর তাওয়াক্কুল করে। বেহুদা কথা বার্তা থেকে বিরত থাকে। লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে। আমানত ও ওয়াদা রক্ষা করে। রাগ সংবরণ করে ও লোকদের ক্ষমা করে দেয়। আল্লাহ’র ওয়াস্তে কাউকে ভালবাসে ও আল্লাহ’র ওয়াস্তে তারা শত্রুতা করে। আত্মীয়তার সর্ম্পক বজায় রাখে। তারা হাসি ঠাট্টার ছলে মিথ্যা কথা বলে না, গীবত করে না, নিজের ভাইকে অপদস্ত করে না বা তাকে বিপদের মুখে পরিত্যাগও করে না।

একদিন রাসূলুল্লাহ (সা) মসজিদে নববীর মিম্বারে দাড়িয়ে বারবার বলছিলেন, “আমি তোমাদের জাহান্নাম থেকে সতর্ক করছি। আমি তোমাদের জাহান্নাম থেকে সতর্ক করছি। আমি তোমাদের জাহান্নাম থেকে সতর্ক করছি।” সেদিন পাশের বাজারে দাড়ানো লোকেরাও রাসূলের কন্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছিল। অস্থিরতার দরুণ রাসূলের কাধের চাদর পর্যন্ত পড়ে গিয়েছিল। তিনি আরও বলছিলেন, “আমি জাহান্নামের চেয়ে ভয়ংকর কোন জিনিস কখনও দেখিনি,যার পলায়নকারীরা ঘুমন্ত। আমি জান্নাতের চেয়ে লোভনীয় কিছু দেখিনি,যার সন্ধানকারীরা ঘুমন্ত।” (সহিহ তিরমিযী)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন,

জাহান্নামের ভেতর সবচেয়ে হালকা শাস্তি হবে সে ব্যক্তির,যার দু’টি আগুনের জুতা থাকবে এবং যার কারণে উত্তাপে তার মগজ ফুটতে থাকবে। সে অন্য কাউকে তার চেয়ে বেশী শাস্তি ভোগকারী মনে করবে না,যদিও সেই সর্বনিম্নশাস্তিভোগকারী। (মুসলিম)  

আল্লাহ বলেন, 

“নিশ্চয় যাক্কুম বৃক্ষ পাপীদের খাদ্য। গলিত তন্ত্রের মত পেটের ভেতর ফুটতে থাকবে, যেমন ফুটে গরম পানি।” (দুখান: ৩৫-৩৬)

“যদি যাক্কুমের এক ফোটা দুনিয়ায় টপকে পড়ত, তবে এতে বসবাসকারীদের জীবন উপকরণ ধ্বংস হয়ে যেত। সে ব্যক্তির অবস্থা কেমন হবে যার খাদ্যই হবে যাক্কুম।” (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ)

“নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে এবং তার ব্যাপারে অহঙ্কার করেছে, তাদের জন্য আসমানের দরজাসমূহ খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষন না উট সূচের ছিদ্রতে প্রবেশ না করে। আর এভাবেই আমি অপরাধীদের প্রতিদান দেই।” (সূরা আ’রাফ: ৪০)

আমাদের প্রতিটি কাজে সাহাবা (রা) এর মত জান্নাতের তীব্র আকাঙ্খা ও জাহান্নামের ভয় থাকতে হবে। তবেই আমরা তাকওয়াপূর্ণ জীবনযাপন করে সঠিক গন্তব্যে পৌছতে পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদেরকে আল্লাহ জান্নাত লাভ করা ও জাহান্নামের কঠিন আগুন থেকে মুক্তি দানের মাধ্যমে সফলতা দান করুক, আমীন, সুম্মা আমীন।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply