বিশ্ব ধাবিত হচ্ছে এক সুনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে

কোন কিছু থেমে নেই। পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরে। সূর্য থেমে নেই। মিল্কিওয়ে নামক গ্যালাক্সীতে সূর্য চলমান। গ্যালাক্সীগুলো একে অপরের থেকে ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছে। আধুনিক বিজ্ঞান এসব কথা বলে। সময়ও থেমে নেই। কথায় বলে, সময় ও নদীর ঢেউ কারও জন্য অপেক্ষা করে না। সময় নদীর ঢেউয়ের মত বহমান।

সময় পরিক্রমায় বিগত একশ বছর…

১৯২৪ সালে ৩ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে মুসলিমদের অভিভাবক রাষ্ট্র উসমানীয় খিলাফত ধ্বংস হওয়ার পর প্রায় এক শতাব্দী পার হতে চলেছে। গত একশবছরে পৃথিবী প্রত্যক্ষ করেছে অনেক কিছু, বিশেষত: মুসলিম বিশ্ব। এই একশ বছর ছিল বেশ ঘটনাবহুল। উপনিবেশবাদীরা ইসলামিক ভূমিসমূহে নব্য উপনিবেশবাদ বা Neo-colonialism এর আওতায় বিশ্বাসঘাতক তাবেদার শাসকদের বসিয়েছে। কুফর শাসনব্যবস্থা গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুঁজিবাদ ও নিপীড়নমূলক বৃটিশ বিচার ব্যবস্থা মুসলিমদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের বিতাড়িত করে বেলফার চুক্তির মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের হৃদপিন্ডের ভেতরে ইসরাইল নামক ইহুদীদের অবৈধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। মুসলিম দেশসমূহে পরিকল্পিতাবে বিভাজন ও নৈরাজ্য উসকে দিয়ে তাদের সম্পদসমূহ লুট করা হয়েছে এবং তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থা ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে মুসলিমদের চিন্তা প্রক্রিয়া পরিবর্তন করা হয়েছে এবং সামাজিক জীবনে পশ্চিমীকরণ অনেক দূর এগিয়েছে। কিন্তু বিগত খৃষ্টীয় শতকের শেষের দিকে পুঁজিবাদ মুসলিম বিশ্বসহ পুরো পৃথিবীতে তার বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব হারাতে শুরু করে। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন নামক পুঁজিবাদের অন্তসারশূন্য ফাঁকা বুলি মুসলিমদের আর টানতে পারছিল না। মুসলিম বিশ্ব উপনিবেশবাদী পাশ্চাত্য, প্রতারণাপূর্ণ জীবনব্যবস্থা ও তাদের তাবেদার দালাল শাসকদের ব্যাপারে ফুসে উঠল এবং ইসলামী জীবনব্যবস্থার দাবি ক্রমাগত উচুঁ হতে থাকল। পশ্চিমারা তখন নতুন ফন্দি আটল। নব্য উপনিবেশবাদ থেকে বের হয়ে পুরনো সরাসরি উপনিবেশবাদের দিকে ফিরে আসল। ওয়ার অন টেররের (War on terror) নামে Crusade শুরু হল এবং যার ফলশ্রুতিতে মার্কিনীদের নেতৃত্বে কাফেরচক্র ইরাক, আফগানিস্তান সামরিকভাবে দখল করে নিল। কিন্তু খিলাফত ধ্বংসের সময় থেকেই শরীআহগত দায়িত্বের কারণে মুসলিমদের মধ্যে পূর্নজাগরণের রাজনৈতিক আকাঙ্খা দানা বেধেছিল। যা কালক্রমে বিভিন্ন ইসলামিক রাজনৈতিক দলের কাজের কারণে আরও জনপ্রিয় ও বেগবান হয়েছে। পশ্চিমা উপনিবেশবাদ, তাদের প্রতারণাপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, অন্তসারশূন্য মূল্যবোধ ও তাদের নিযুক্ত স্বৈরশাসকদের জুলুমের বিপরীতে ইসলামের দাবিতে মুসলিম বিশ্ব জেগে উঠে। এরই চূড়ান্ত বহিপ্রকাশ হল চলমান দশকের শুরুর দিকে তিউনিসিয়া, মিশর, ইয়েমেন, সিরিয়া, লিবিয়াসহ আরববিশ্বে সংঘটিত আরব বসন্ত। কিন্তু ধূর্ত উপনিবেশবাদীরা জনগনের এ জাগরণকে ছিনতাই করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে সিরিয়ার মুসলিমদের জাগরণ ছিল ব্যতিক্রম। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের রক্তচক্ষু, হাজার হাজার মুসলিম শিশুর লাশ, বিষাক্ত গ্যাস, তেজষ্ক্রিয় রাসায়নিক বোমা, জঙ্গি বিমানের সদর্প পদচারণা কোনকিছুই এখনও এ দূর্দমনীয় জাগরণকে থামাতে পারেনি। যেন একটি সুনিশ্চিত গন্তব্যের জন্যই এ জাগরণ।

সুনিশ্চিত গন্তব্যের ব্যাপারে উম্মাহ’র ভিন্ন অবস্থান… 

এ ব্যাপারে মুসলিম বিশ্বের সব আলেম ও সাধারণ জনগণ কি ওয়াকিবহাল? আলেম ও সাধারণ জনগণ কি একটি সুনিশ্চিত গন্তব্যের ব্যাপারে একমত নাকি এ ব্যাপারে রয়েছে একাধিক মতামত? মুসলিমদের অভিভাবক রাষ্ট্র খিলাফতের অনুপস্থিতি, বুদ্ধিবৃত্তিক অবনমন ও সঠিক ইসলামি চিন্তাপ্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় মুসলিম বিশ্বের আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত নন। যেমন: অনেক আলেম মনে করেন বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতা অবধারিতভাবে দ্বিতীয় খোলাফায়ে রাশেদার প্রত্যাবর্তনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে একটি ভবিষ্যতবাণীমূলক সহিহ হাদীস খুব উল্লেখযোগ্য:

নূ’মান বিন বশীর (রা) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন: ‘তোমাদের মধ্যে নবুয়্যত ততদিন থাকবে যতদিন আল্লাহ চান, তারপর তিনি তার অবসান ঘটাবেন। তারপর নবুয়্যতের আদলের খেলাফত আসবে। এটাও ততদিন থাকবে যতদিন আল্লাহ চান, তারপর তিনি এরও অবসান ঘটাবেন। এরপর আসবে আঁকড়ে ধরা (বংশের) শাসন। এটাও ততদিন থাকবে যতদিন আল্লাহ চান, তারপর তিনি এরও অবসান ঘটাবেন। অতপর আসবে জুলুমের শাসন আর তা ততদিন বলবৎ থাকবে যতদিন আল্লাহ চান। আল্লাহ্’র ইচ্ছায় একদিন এরও অবসান হবে। তারপর আবার আসবে নবুয়্যতের আদলের খিলাফত। অতপর তিনি (সা) চুপ থাকলেন।’ (মুসনাদে ইমাম আহমদ)

যদিও এ মতের পক্ষালম্বনকারী আলেম ও তাদের প্রতিষ্ঠিত ইসলামি রাজনৈতিক দলসমূহ এ হাদীসের ভিত্তিতে খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য পুরো পৃথিবীব্যাপী কাজ করছে না। বরং তাদের ফিকহভিত্তিক দাবি, ভবিষ্যত বাণীমূলক আহাদ হাদীস থেকে হুকুম শরী’আহ আসে না। ইজতিহাদি প্রক্রিয়ায় তাহকীকুল মানাত (বাস্তবতা পর্যালোচনা) ও তাখরীজুল মানাত (বাস্তবতা আহরণ) ও তানকীহুল মানাত (বাস্তবতার জন্য নির্দিষ্ট হুকম সম্পর্কিত করা)-এর মাধ্যমে উম্মাহ’র বর্তমান সময়ের কর্মপদ্ধতি বা হুকম শরী’আহ নির্ধারিত হবে।

তবে মুসলিমদের মধ্যে যেসব আলেম ও দল রাজনৈতিক ইসলাম নিয়ে কাজ করেন তারা সবাই যে এ গন্তব্য সর্ম্পকে সুনিশ্চিত এমনটা নয়। এ ব্যাপারে সবার সচেতনতাও সমান নয়।

মুসলিম উম্মাহ’র মধ্যে অপর একটি অংশের আলেমগন সচেতনভাবে অথবা কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বলছেন, মুসলিমদের এখন খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা জরুরী নয়। আমরা ক্বিয়ামতের দ্বারপ্রান্তে রয়েছি। ক্বিয়ামতের ছোট নির্দশনসমূহ সুস্পষ্ট। বড় নিদর্শনসমূহ আসন্ন। অনেক আলেম ইমাম মাহদীর জন্ম হয়ে গেছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় চটকদার কথা বলে ঝড় তুলছেন। উম্মাহ’র অবনমন যেহেতু তলানীতে এসে পৌছেছে সেহেতু গোটা উম্মাহকে পূর্ণজাগরিত করার চিন্তা কল্পনাবিলাস মাত্র। জালিম শাসককে জবাবদিহী করা  নয়, বরং ব্যক্তিগত আমলের মাধ্যমে ফিতনার এ সময়ে আত্মশুদ্ধি অর্জন করাই শরী’আহগত প্রাধান্য। ইমাম মাহদী অথবা ঈসা ইবনে মারিয়াম এসে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করে এর ফিতনা থেকে মুসলিমদের সুরক্ষা দিবেন। কিয়ামতের ছোট ও বড় নিদর্শন, ইমাম মাহদী ও ঈসা (আ)-এর আগমন সর্ম্পকিত রাসূল (সা) এর ভবিষ্যতবাণীমূলক আহাদ হাদীসসমূহকে তারা দলিল হিসেবে দেখিয়ে থাকে। অনেক মুসলিম এসব আলেমদের বক্তব্যে প্রভাবিত হয়ে ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবনাদর্শ হিসেবে নেয়ার আকাঙ্ক্ষা হারিয়ে ফেলেছে এবং অন্য সব ধর্মের মত ইসলামকেও তাদের জন্য আচরণ সর্বস্ব ধর্মে পরিণত করেছে। মুসলিমদের জন্য ইসলামকে জীবনাদর্শ থেকে ধর্মে রূপান্তরিত করে দেয়া কাফেরদের সুগভীর ষড়যন্ত্রের সফলতার ঈঙ্গিত বহন করে। আর ফিকহের দৃষ্টিতে ভবিষ্যত বাণীমূলক আহাদ হাদীস থেকে মুসলিমদের হুকুম শরী’আহ আসে না, বরং অণুপ্রেরণা আসতে পারে। এটি ফিকহের বাস্তবতা উপলদ্ধি করার ক্ষেত্রে অপরিপক্কতা অথবা সচেতন অবহেলা।

ইতিহাস স্বাক্ষী উম্মাহ’র এই ভিন্ন অবস্থান ও কর্মপদ্ধতি সুনিশ্চিত গন্তব্য অর্জনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা নয়। এর জন্য ইসলাম ও এর ইতিহাসকে একটি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে হবে। যেমন: নুহ (আ) যখন তার কওমের লোকদের বললেন, অতি দ্রুত একটি বড় প্লাবন হবে এবং আমি একটি বিশাল আকারের কিস্তি (নৌকা) তৈরি করছি এবং লোকদের নির্দিষ্ট দিনে সেই কিস্তিতে উঠে পড়া উচিত। একথা শুনে তার কওমের সব লোকেরা কি বিশ্বাস করেছিল? অবশ্যই না। এমনকি তার পরিবারের লোকেরাই এটি নিয়ে বিদ্রুপ করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হল নুহ (আ) এর কথা অনুযায়ী সুনিশ্চিতভাবে মহাপ্লাবন সংঘটিত হয়েছিল এবং অধিকাংশ লোক নবী নুহ (আ) এর স্রষ্টা প্রদত্ত ভবিষ্যতদ্বাণী উপলদ্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছিল এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। একই কথা মহাবীর সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ূবী (রহ) এর জেরুজালেম পূনরুদ্ধার অভিযানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সেসময় উম্মাহ’র অবনমন এমন এক পর্যায়ে পৌছে গিয়েছিল যে, সাধারণ মুসলিম তো বটেই, আলেমগন পর্যন্ত জেরুজালেম অভিযান নিয়ে প্রকাশ্যে বিদ্রুপ করত। কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা’র ইচ্ছায় মহাবীর সালাহউদ্দিন আইয়ূবী একটি অসম যুদ্ধে Crusade -দের পরাজিত করে জেরুজালেম পূণরুদ্ধার করেছিলেন এবং ইতিহাস এগিয়ে গিয়েছিল এক সুনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে। এভাবে ইসলামের ইতিহাস বার বার Human Perception কে ভুল প্রমাণ করে সুনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে এগিয়ে গিয়েছে। ইতিহাস সেদিকে ধাবিত হবে যেদিকের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা একে পূর্ব নির্ধারিত করে রেখেছেন। Pragmatic Human Perception ইতিহাসের টেকসই ভীত রচনা করে না, বরং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার ইচ্ছা ও পরিকল্পনা এর গন্তব্য ঠিক করে দেয়।

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, 

‘ইসলাম অপরিচিত অবস্থায় শুরু হয়েছিল এবং অচিরেই তা আবার অপরিচিত অবস্থায় ফিরে আসবে, সুতরাং অপরিচিতদের জন্য সুসংবাদ।’ তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, ‘কারা এই অপরিচিত ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা)?’ তিনি (সা) বললেন, ‘ওরা তারা যারা মানুষ আমার সুন্নাহকে নষ্ট করে দিলে সেটাকে বিশুদ্ধ করবে।’ অন্য এক বর্ণণায় আছে, ‘তারা হচ্ছে ওরা যারা মানুষ খারাপ হয়ে যাওয়ার পর তাদেরকে ঠিক করবে।’ (তাবারানী) 

অন্য এক হাদীসে রাসূলুলাহ্ (সা:) বলেন,

“শেষ বিচারের দিন এমন কিছু লোককে উপস্থিত করা হবে যাদের নূর হবে সূর্যের মতো।” আবু বকর (রা) জিজ্ঞেস করলেন, ‘তারা কি আমরা, ইয়া রাসূলুলাহ (সা)?’ তিনি বললেন, “না তোমাদের জন্য বিশাল পুরষ্কার রয়েছে আর তারা হচ্ছে কিছু সংখ্যক দরিদ্র দেশত্যাগী যারা উত্থিত হবে পৃথিবীর সব অঞ্চল থেকে।” তারপর তিনি (সা) বললেন, “কল্যান হোক অপরিচিতদের (তিনবার)।” জিজ্ঞেস করা হলো, ‘কারা সেই অপরিচিতরা?’ তিনি (সা) বললেন, “তারা হবে অনেক খারাপ লোকের মাঝে অল্পসংখ্যক সৎ লোক। তাদের মান্যকারীর চেয়ে তাদের অমান্যকারীদের সংখ্যা বেশী হবে।” (তাবারানী) 

রাসূলুলাহ্ (সা) বলেন,

“আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা আলাহ্’র হুকুমের উপর অটল থাকবে। যারা তাদের সাহায্য করা পরিত্যাগ করবে অথবা তাদের বিরোধীতা করবে তারা তাদের কোনই ক্ষতি করতে পারবেনা। এ অবস্থায় আলাহ্’র নির্দেশ এসে যাবে এবং তারা মানুষের (বিরোধীদের) উপর বিজয়ী হবে।” (মুসলিম)

Clash of Civilization এবং সুনিশ্চিত গন্তব্য…

বিশ্ব এবং মুসলিম উম্মাহ আজকে Clash of Civilization এর যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একদিকে সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রতিপত্তিশালী এবং বৈশ্বিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদ এবং অন্যদিকে রাষ্ট্রবিহীন ইসলামিক জীবনাদর্শ। তাছাড়া তাদের রয়েছে বিশ্বব্যাপী জালের মত ছড়িয়ে থাকা শক্তিশালী প্রচারমাধ্যম- যা মানুষের বেডরুম পর্যন্ত পৌছে গেছে। এসব প্রচারমাধ্যম হল মগজধোলাই ও জনমত গঠনের প্রকৃষ্ট হাতিয়ার। এটি হল দুই সভ্যতার অসম দ্বন্দ। এই অসম দ্বন্দ উম্মাহ’র একাংশের মধ্যে হীনমন্যতার জন্ম দিয়েছে। কিন্তু উম্মাহ’র ধারণা (Perception) যাই হোক অথবা অধ্যাপক হান্টিংটন যাই বলুন না কেন এই দ্বন্দের অবসান হবে একটি সভ্যতার সুনিশ্চিত বিজয় ও অপর সভ্যতার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে। এ যেন কলোসিয়ামে গ্লাডিয়েটরদের নিষ্ঠূর খেলার মত। এখানে বাস্তবতার প্রকৃত উপলদ্ধি ও আলোকিত চিন্তা হল, অসম দ্বন্দে ইসলাম ক্রমশই শক্তিশালী হচ্ছে এবং পুঁজিবাদ তার বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব হারিয়ে উন্মাদের মত শক্তি প্রয়োগ করে টিকে থাকতে চাইছে। ইসলামী জীবনাদর্শের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির ব্যাপারে সাম্রাজ্যবাদী চিন্তক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণা প্রতিবেদনের মাধ্যমে বারবার এই আভাস দিচ্ছে। তাদের শাসকদের কথা থেকেও এ বিষয়টি সুস্পষ্ট। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবলু বুশ জুনিয়র ২০০১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর এক ভাষণে বলে,

“The militants believe that controlling one country will rally the Muslim masses, enabling them to overthrow all moderate governments in the region and establish a radical Islamic empire that spans from Spain to Indonesia.”

কাফেরদের নেতা যাই বলুক না কেন- সহিহ মুসলিম, আবু দাউদ, আত তিরমিযী, ইবনে মাজাহ এবং মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ সুবাহানাহু তা’আলা আমাকে পুরো পৃথিবী এক করে দেখালেন, সুতরাং আমি এর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত দেখতে পেলাম। অবশ্যই আমার উম্মতের কতৃত্ব সেসব জায়গায় পৌছে যাবে যেসব জায়গা আমাকে দেখানো হয়েছে।’

নব্য উপনিবেশবাদ, সাইক পিকো চুক্তি, বেলফার চুক্তির মাধ্যমে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, ব্যাপক প্রভাবশালী পশ্চিমা মিডিয়ার মগজ ধোলাই, শিক্ষাব্যবস্থার ধর্মনিরপেক্ষকীকরণ, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের War on terror নামক Crusade, মুসলিম ভূমিসমূহ জবরদখল করা, তাদের সম্পদ লুট করা, মুসলিমদের উপর ইতিহাসের ভয়াবহতম নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো, আইসিস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে খিলাফতের ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, নিষ্ঠাবান ইসলামিক দলসমূহকে নিষিদ্ধ করা, ইসলামের দাওয়াত বহনকারীদের উপর বর্বর নির্যাতন পরিচালনা ও ক্ষেত্রবিশেষে তাদের হত্যা করা, পর্ণোগ্রাফি, মাদ্রকদ্রব্য প্রভৃতি ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়ে মুসলিম উম্মাহ এগিয়ে চলেছে এক সুনিশ্চিত গন্তব্য- দ্বিতীয় খোলাফায়ে রাশেদাহ প্রতিষ্ঠার দিকে। আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন, 

‘নিশ্চয়ই যারা কাফের তারা মানুষকে আল্লাহ’র পথ থেকে ফিরিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে ধনসম্পদ ব্যয় করে, তারা তাদের ধনসম্পদ ব্যয় করতেই থাকবে, অতপর ওটাই শেষ পর্যন্ত তাদের দুঃখ ও আফসোসের কারণ হবে এবং তারা পরাভূতও হবে। আর যারা কুফরী করে তাদেরকে জাহান্নামে একত্রিত করা হবে।’ (সূরা আনফাল:৩৫) 

লেখক: রাফীম আহমেদ

Leave a Reply