সুন্দরী প্রতিযোগিতা, পুুঁজিবাদ ও আমাদের মুসলিম পরিচয়

অতি সম্প্রতি চীনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল মিস ইউনিভার্স বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতা। যেখানে মিস ইউনিভার্সের মুকুট পড়েছে দেড়শ কোটি মানুষের দেশ ভারতের হরিয়ানার মেয়ে মানসী চিল্লার। জনসংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে জেসিয়া ইসলাম এতে অংশগ্রহণ করে। এর কিছু দিন আগে বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণকারী মিস বাংলাদেশ খুজে বের করতে স্থানীয়ভাবে সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। দুই সময়েই বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও সোশ্যাল মিডিয়া সুন্দরীদের নিয়ে বিভিন্ন ইতিবাচক খবর পরিবেশনে ছিল নজিরবিহীন।

মিডিয়া যে ভুল চিন্তাসমূহ দেয়ার চেষ্টা করে:

১. সুন্দরী প্রতিযোগিতা নারী স্বাধীনতা ও ক্ষমতায়নের পরিচায়ক।

২. সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী নারীরা সাহসী ও অনুকরণীয়।

৩. মিস বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে।

সঠিক চিন্তা:

১. নারী স্বাধীনতা বা নারীর ক্ষমতায়নের নামে সুন্দরী প্রতিযোগিতা আয়োজনের পেছনে রয়েছে ঘৃণ্য পুঁজিবাদী স্বার্থ। বহুজাতিক বিউটি ইন্ডাস্ট্রিগুলো তাদের পণ্যের বিপণন বৃদ্ধির করার লক্ষ্যে এ ধরনের সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। ভারত বা চীনের মত জনবহুল দেশকে কখনও বা আয়োজক, আবার কখনও বা সুন্দরী প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করে সেসব দেশের নারীদের মধ্যে বিউটি পণ্য ক্রয়ের মাদকতা তৈরি করা হয়। এটিই হল গ্লোবালাইজশনের ঘৃণ্যতম রূপ।

২. পুঁজিবাদে সবকিছুই বাণিজ্যিক পণ্য, এমনকি নারীর শরীরও। নারী স্বাধীনতা অথবা ক্ষমতায়নের শ্লোগান বাইরের খোলস মাত্র। তথ্য উপাত্ত থেকে দেখা যায়, সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ নারীর সর্বশেষ গন্তব্য হল পতিতালয় বা পর্ণ ইন্ডাস্ট্রী। পতিতালয় বা পর্ণ ইন্ডাস্ট্রীতে কাজ করা যদি নারীর ক্ষমতায়ন হয়, তাহলে তা মানসিক বিকৃতি ছাড়া আর কিছুই নয়।

৩. শরীআহ কতৃক সংজ্ঞায়িত মুসলিম নারীদের আওরা বা সতরের সংরক্ষণ করা ফরয বা অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে মুসলিম বোন ও কন্যাদের শরীরের প্রদর্শনী জঘন্যতম হারাম কাজ। এটি ইসলামি আক্বীদা, শরী’আহ ও মুসলিম পরিচয়ের সাথে সাংঘর্ষিক। 

৪. নারীকে দেখার ক্ষেত্রে পশ্চিমা পুঁজিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। পশ্চিমাদের কাছে নারী শরীরের প্রদর্শন শিল্প হলেও ইসলামে এটি হারাম। পশ্চিমা সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার অগভীর চিন্তার অধিকারী অধপতিত মুসলিম উম্মাহ আজকে এ সত্য উপলদ্ধি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তারা অন্ধভাবে পশ্চিমা কাফেরদের অনুকরণ করছে। যে সর্ম্পকে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,

এমন একটা সময় আসবে যখন আমার উম্মত অন্ধভাবে কাফেরদের অনুসরণ করবে এবং তারা (কাফেররা) টিকটিকির গর্তে প্রবেশ করাকে বুদ্ধিমানের কাজ মনে করলে, উম্মতও তাই করবে...।’ 

৫. নারীর শরীরের উন্মুক্ত প্রদর্শণীতে অংশগ্রহণ সাহসী ও সম্মানজনক কাজ হলে জঙ্গলের সব চতুষ্পদ জন্তুও সাহসী ও সম্মানিত, কেননা তাদেরকে কোন পোশাকই পরতে হয় না। শরীর নিয়ে হীন পুঁজিবাদী ব্যবসার উপকরণ হওয়ার মধ্যে নারীর মুক্তি নিহিত নেই, বরং ইসলামি শরী’আহ’র যথাযথ অনুসরণের মধ্যেই নারীর দুনিয়া ও আখিরাতের মুক্তি নিহিত রয়েছে। একারণে পুরো পৃথিবীব্যাপী প্রচুর অমুসলিম নারী ইসলামের সুশীতল ছায়ায় অনুপ্রবেশ করছে। 

৬. মিস ইউনিভার্স নামক হারাম ও নারী অবমাননাকারী আয়োজনে বাংলাদেশ বা কোন মুসলিম রাষ্ট্রকে প্রতিনিধিত্ব করে কোন মুসলিম নারী সেসব দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেনি। বরং বিশ্বকাপ ফুটবল, ক্রিকেট, অলিম্পিক ও কমনওয়েলথ গেমসের মত এটিও মুসলিম উম্মাহ’র ঐক্য ও সংহতি বিনষ্টকারী কুফরী জাতীয়তাবাদী চিন্তাকে শক্তিশালী করেছে।

রাফীম আহমেদ

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply