জন্মলগ থেকেই বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ দ্বারা শাসিত হয়ে আসছে, কখনও আওয়ামী লীগ কর্তৃক তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে, আবার কখনও বিএনপি কিংবা জাতীয় পার্টি কর্তৃক অন্যান্য শ্লোগাণের নামে। তথাপিও মহান ইসলামী উম্মাহ্’র অংশ, এদেশের মুসলিমদেরকে বিশ্বব্যাপী ইসলামী জাগরণ হতে বিচ্ছিন্ন রাখা যায়নি। এবং বিশেষ করে, এই শতাব্দীর শুরু থেকে রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে ইসলামের পক্ষে গণজোয়ার, ব্যাপক প্রসার ও জনসমর্থন, এবং ইসলামী রাজনৈতিক কর্মকান্ড প্রচন্ড গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে; এবং ইসলামী শাসনের (খিলাফত) দাবী একটি গণদাবীতে পরিণত হয়েছে। যা নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী ক্রুসেডার শক্তিসমূহ, মার্কিন ও তার মিত্ররা, এবং তাদের দুর্নীতিগ্রস্ত দালাল শাসকেরা শঙ্কিত; এবং ইসলাম যাতে শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে না পারে সেজন্য তারা একত্রে কাজ করেছে, ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করাসহ কোনো প্রচেষ্টাই বাদ রাখেনি। তারপরও এই গণজোয়ারকে তারা দাবিয়ে রাখতে পারেনি। বরং ইসলামের অগ্রযাত্রা এবং ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার কাজ সকল বাধা পেরিয়ে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। তাই যখন গুলশান হামলা সংঘটিত হলো, তখন ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধকে একটি নতুন গতি প্রদান করতে তারা এটাকে বিশাল সুযোগ হিসেবে লুফে নিল।
প্রথমত, তারা ইসলাম এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠার সত্যনিষ্ঠ ইসলামী রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো আরম্ভ করল; ইসলাম এবং ইসলামী শাসনকে চিন্তাশূণ্য হত্যাকান্ড, সহিংসতা এবং আইএসআইএসের সাথে জড়িয়ে – যে কিনা হিংস্রতা ও নৃসংশতায় বিশ্বব্যাপী কুখ্যাতি অর্জন করেছে। শেখ হাসিনা ইসলামের দিকে ইঙ্গিত করে বলল, “তরুণদের ধর্ম দ্বারা মগজধোলাই করা হয়েছে” এবং তার মার্কিন প্রভুরা বাংলাদেশে আইএসআইএসের উপস্থিতি প্রমাণে তাদের প্রচেষ্টায় একধাপ এগিয়ে গেল। অথচ, বাস্তবতা হচ্ছে গুলশান হামলার সঙ্গে ইসলামের ন্যূনতমও কোনো সম্পর্ক নাই এবং এধরনের হামলা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাছাড়া, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ওয়াকিবহাল সচেতন রাজনীতিক ও নাগরিক মাত্রই বুঝতে সক্ষম যে, আইএসআইএস সংগঠনটি মার্কিনীদের স্বার্থ ও পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছে। ইরাককে জাতিগত ও সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে বিভক্ত করতে মার্কিনীরা মসুলে তাদের উপস্থিতির সুযোগ করে দিয়েছিল। এবং সিরিয়ায় মার্কিন দালাল কসাই বাশার আল আসাদকে সমর্থন এবং সেখানকার বিদ্রোহী জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে তাদেরকে ব্যবহার করছে। সিরিয়ার জনগণ যখন বাশারকে অপসারণ করে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, ঠিক তখনই আইএসআইএসের উত্থান ঘটে; এবং তারপর তারা নিজেদেরকে খিলাফত হিসেবে ঘোষণা দেয়, যদিও তা শারী’আহ্ কর্তৃক গ্রহণযোগ্য কোনো ইসলামী রাষ্ট্র নয়, বরং এটা খিলাফত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, যালিম হাসিনা ও তার সরকার দেশের মুসলিমদের এমনভাবে আতঙ্কিত করা শুরু করে যা নজীরবিহীন। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, বাড়ীওয়ালা, ভাড়াটিয়া, ব্যাচেলর, মহিলা এবং উলামাগণসহ পুরো সমাজ তাদের এই ক্রমবর্ধমান যুলুমের লক্ষ্যবস্তু ও শিকারে পরিণত হয়েছে। জনমনে আতঙ্ক তৈরি ও ভীতি সঞ্চার করতে তারা দমনমূলক আইন প্রয়োগ করছে, যাতে এর মাধ্যমে তারা ইসলামী শাসনের দাবীকে দমন করতে পারে, ইসলামী রাজনৈতিক কর্মকান্ড হতে জনগণকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে এবং ইসলামী রাজনৈতিক আহ্বানের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। এবং এই সরকারের সাম্রাজ্যবাদী প্রভুরা তাদের প্রতি হাসিনার আনুগত্য ও দাসত্ব এবং ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে তার বিদ্বেষী কর্মকান্ডের সন্তুষ্টির স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে বিভিন্ন পুরষ্কারে ভূষিত করছে, যেমন: এজেন্ট অব চেইঞ্জ।
তৃতীয়ত, তারা ধমনিরপেক্ষতাবাদকে সমাজের মধ্যে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে এর পক্ষে আক্রমণাত্মক প্রচারণা চালাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান যুলুমকে জনগণের ঘাড়ের উপর উন্মুক্ত তরবারির মত ধরে রেখে বলা হচ্ছে, “ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে গ্রহণ করো, নতুবা!” সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্র – রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, আইজিপি, র্যাবের ডিজি এবং বিকিয়ে যাওয়া কিছু বুদ্ধিজীবী, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব…সকলেই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের পক্ষে প্রচারণায় নেমেছে, দাবী করছে যে এটাই হচ্ছে শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নতির একমাত্র পথ এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে অবশ্যই এই ভিত্তির উপর দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে হবে। এমনকি তারা জনগণের ব্যক্তি জীবনের সঠিক ইসলামী আচার-আচরণের প্রতি চোখ রাঙিয়েছে, যেগুলো তাদের দৃষ্টিতে একজন ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তির মত নয়। সঠিক আরবী উচ্চারণের সাথে “সালাম” প্রদানকারী ব্যক্তিকে তারা সন্দেহের দৃষ্টিতে রাখতে বলছে। ছেলের গার্লফ্রেন্ড না থাকলে পিতামাতাকে তার কর্মকান্ডের উপর নজর রাখতে বলা হচ্ছে। যারা পূর্বে নামায আদায় ও ইসলাম পালন করতো না কিন্তু হঠাৎ করে নামায আদায় ও ইসলাম পালন শুরু করেছে, তাদের উপর নজর রাখতে বলছে।
أُوْلَئِكَ الَّذِينَ اشْتَرَوْا الضَّلاَلَةَ بِالْهُدَى فَمَا رَبِحَتْ تِجَارَتُهُمْ وَمَا كَانُوا مُهْتَدِينَ
“তারাই সে সমস্ত লোক যারা সঠিক পথের বিনিময়ে ভুল পথকে খরিদ করেছে, সুতরাং তারা তাদের এ ব্যবসায় লাভবান হতে পারেনি। এবং তারা হিদায়াত প্রাপ্ত নয়।” [সূরা আল-বাকারাহ : ১৬]
ধমনিরপেক্ষতাবাদ হচ্ছে পশ্চিমা কুফর আদশের (পুঁজিবাদ) বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি (আক্বীদাহ্)। এই মতবাদ রাষ্ট্র ও জীবনের যাবতীয় বিষয়াবলী তথা শাসনব্যবস্থা, অর্থনীতি, বিচারব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, পররাষ্ট্রনীতি হতে সকল ধর্মের (ইসলামসহ) পৃথকীকরণের কথা বলে। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ অনুযায়ী স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস হচ্ছে একটি ব্যক্তিগত বিষয় এবং এটিকে রাষ্ট্রের বিষয়াদিতে হস্তক্ষেপের সুযোগ দেয়া যাবে না। এটি সম্পূর্ণ একটি ভুল চিন্তা, কারণ হয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র অস্তিত্ব বিদ্যমান অথবা নাই। যদি তাঁর অস্তিত্ব বিদ্যমান না থাকে তাহলে তাঁকে ব্যক্তি জীবনেও বিশ্বাস করা সঠিক হবে না। আর যদি তাঁর অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকে (যা হচ্ছে একটি ধ্রুব সত্য এবং বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে প্রমাণিত) তাহলে জীবনের প্রতিটি বিষয়ে তিনিই বিধান প্রদান করবেন, হোক সেটা ব্যক্তিগত কিংবা রাষ্ট্রীয়। এজন্যই আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,
(أَلاَ لَهُ الْخَلْقُ وَالأَمْرُ)
“নিশ্চয়ই সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা শুধুমাত্র তাঁর কাজ” [সূরা আল-আ’রাফ : ৫৪]।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা হচ্ছেন সৃষ্টিকর্তা অথচ আইনপ্রণেতা অন্যকেউ, ইসলাম এই চিন্তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে,
(إِنِ الْحُكْمُ إِلاَّ لِلَّهِ)
“আল্লাহ ছাড়া আর কারও বিধান দেয়ার ক্ষমতা নেই।” [সূরা ইউসুফ : ৪০]
ইসলামের বক্তব্য হচ্ছে,
(وَلِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ)
“আর আসমান এবং জমিনের যাবতীয় কর্তৃত্ব শুধু আল্লাহ্’র জন্য” [সূরা আলি-ইমরান : ১৮৯]।
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের মত নয় যারা বলে যে, “রাজার যা প্রাপ্য রাজাকে দাও এবং ঈশ্বরের যা প্রাপ্য ঈশ্বরকে দাও।” বরং, রাজা, তার সিংহাসন, তার রাজত্ব এবং এর অন্তর্ভূক্ত সবকিছুই আল্লাহ্’র নিদের্শের আওতাধীন বিষয়। ইসলাম এটা গ্রহণ করে না যে, শুধুমাত্র মসজিদগুলো আল্লাহ্’র জন্য এবং সমগ্র রাষ্ট্র হচ্ছে শেখ হাসিনার জন্য। এটাও গ্রহণ করে না যে, শুধুমাত্র নামায ও রোযা সংক্রান্ত বিষয়ে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা আল্লাহ্’র এবং সরকার, অর্থনীতি, বিচারব্যবস্থা, ইত্যাদি সংক্রান্ত বিষয়ে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা শেখ হাসিনার। এই ধরনের চিন্তাকে গ্রহণ করা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র সাথে শরিক করার শামিল,
أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُمْ مِنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللَّهُ
“তাদের কি আল্লাহ্’র সাথে এমন কোনো শরিক রয়েছে, যারা তাদের জন্য জীবনব্যবস্থা প্রণয়ন করে, যার অনুমতি আল্লাহ্ দেননি?” [সূরা আশ-শুরা : ২১]
আর ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা দাবী করে যে, রাষ্ট্র যদি একটি ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত হয় তবে তা হবে অন্যান্য ধর্মের লোকদের উপর অত্যাচারের কারণ। ইসলামের ক্ষেত্রে সেই দাবী অপ্রযোজ্য ও ভিত্তিহীন। কারণ, সকল ধর্মের জনগণ ইসলামী শাসনের অধীনে একত্রে বসবাস করেছিল এবং করবে, এবং কাউকে তার ধর্মীয় বিশ্বাস ও রীতিনীতি পালনে বাধা প্রদান করা হয়নি এবং হবে না। রাসূলুল্লাহ্ (সা:) বলেন,
اِنَّهُ مَنْ کَانَ عَلَی یَهُودِیَّتِهِ أَوْ نَصْرَانِیَّتِهِ فَاِنَّهُ لَا یُفْتَنُ عَنْهَا
“যে ব্যক্তি ইহুদী ধর্মের উপর রয়েছে এবং যে ব্যক্তি খৃষ্টান ধর্মের উপর রয়েছে, তাদের কাউকেই তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ত্যাগে বাধ্য করা যাবে না।” [আবু উবাইদ. কিতাবুল আমওয়াল]
এবং তিনি (সা:) বলেন,
أَلاَ مَنْ ظَلَمَ مُعَاهِدًا أَوِ انْتَقَصَهُ أَوْ كَلَّفَهُ فَوْقَ طَاقَتِهِ أَوْ أَخَذَ مِنْهُ شَيْئًا بِغَيْرِ طِيبِ نَفْسٍ فَأَنَا حَجِيجُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
“যদি কেউ ইসলামী রাষ্ট্রের নিরাপত্তাপ্রাপ্ত অমুসলিম ব্যক্তির সাথে অন্যায় আচরণ করে অথবা তার কোন অধিকারকে খর্ব করে অথবা তার উপর সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেয় অথবা সম্মতি ছাড়া তার কাছ থেকে কোনো কিছু কেড়ে নেয়, কিয়ামতের দিন আমি তার বিপক্ষে অবস্থান নিব।” [আবু দাউদ, বায়হাকী]
আর ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের সমর্থনে তারা সূরা আল-কাফিরূনের “লাকুম দ্বীনুকুম অলিয়াদ্বীন” অর্থাৎ “তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য এবং আমার ধর্ম আমার জন্য” আয়াতকে উদ্ধৃতি করে, কিন্তু এই আয়াতের অর্থ তারা যা দাবী করে তার বিপরীত। তারা বলে বেড়ায় যে, এই আয়াতের অর্থ “ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার” এবং রাষ্ট্র কোনো ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত হবেনা। এই পবিত্র আয়াতের সঠিক অর্থ হচ্ছে, ইসলাম কাফেরদের ধর্ম বিশ্বাস হতে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ও আলাদা। এই আয়াতটি নাযিল হয় যখন মক্কার গোত্র প্রধানরা ইসলাম এবং তাদের ধর্মের মধ্যে আপোষের প্রস্তাব দেয় তখন কুফরকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান স্বরূপ। তিনি (সা:) তাদের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং ইসলামকে মানবজাতির জন্য একমাত্র সঠিক জীবনব্যবস্থা হিসেবে বিজয়ী করা পযন্ত ইসলামের রাজনৈতিক সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। যেমন তিনি (সা:) বলেছেন,
لو وضعوا الشمس في يميني والقمر في يساري على أن أترك هذا الأمر حتى يظهره الله أو أهلك فيه ما تركته
“আল্লাহ্’র কসম, যদি তারা আমার ডান হাতে সূর্য এবং বাম হাতে চন্দ্র এনে দিত যাতে আমি এই কাজকে পরিত্যাগ করি তবুও আমি তা পরিত্যাগ করতাম না যতক্ষণ না আল্লাহ্ এই দ্বীনকে বিজয়ী করেন অথবা আমি একাজ করতে করতে মৃত্যুবরণ করি।” [সীরাতে ইবন হিশাম, সীরাতে ইবন কাছীর, আর-রাহীকুল মাখতূম]
ইসলাম ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে প্রত্যাখ্যান করেছে, সুতরাং এটাকে রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে কুফর। মুসলিমদের জন্য ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে বিশ্বাস করা, গ্রহণ করা, এর প্রতি আহ্বান করা, এর প্রচার করা, এর দ্বারা জীবন পরিচালনা করা, এর দ্বারা শাসিত হওয়াকে মেনে নেয়া নিষিদ্ধ। ইসলাম মুসলিমদেরকে তাদের বিষয়াদির বিচার-ফয়সালায় ইসলামী শাসন ব্যতীত অন্যকিছুর অবলম্বন করাকে নিষিদ্ধ করেছে।
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ
“আপনি কি তাদেরকে প্রত্যক্ষ করেননি যারা দাবী করে যে, যা আপনার প্রতি এবং যা আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি নাযিল হয়েছে আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান আনলাম, অথচ তারা বিবাদমান বিষয়ে তাগুতের (কুফর শাসনব্যবস্থার বিচারক, শাসক, নেতৃবৃন্দ) শরণাপন্ন হয়, যদিও তাদেরকে তা প্রত্যাখ্যানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।” [সূরা আন-নিসা : ৬০]
ইসলাম, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা হিসেবে খিলাফত ব্যবস্থাকে গ্রহণের জন্য মুসলিমদের নির্দেশ প্রদান করেছে। যেমন হাদীসে বর্ণিত আছে,
كَانَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ تَسُوسُهُمُ الأَنْبِيَاءُ كُلَّمَا هَلَكَ نَبِىٌّ خَلَفَهُ نَبِىٌّ وَإِنَّهُ لاَ نَبِىَّ بَعْدِى وَسَتَكُونُ خُلَفَاءُ فَتَكْثُرُ قَالُوا فَمَا تَأْمُرُنَا قَالَ فُوا بِبَيْعَةِ الأَوَّلِ فَالأَوَّلِ
“বনী ইসরাঈলকে যুগে যুগে নবীগণ শাসন করতেন। যখন একজন নবী মৃত্যুবরণ করতেন তখন অন্য নবী তাঁর স্থলাভিষিক্ত হতেন, কিন্তু আমার পরে আর কোনো নবী নেই। শীঘ্রই খলিফাগণ আসবে এবং তারা সংখ্যায় হবে অনেক।” তাঁরা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন তখন আপনি আমাদের কী করতে আদেশ করেন? তিনি (সা:) বললেন, “তোমরা একজনের পর একজনের প্রতি বাই’আত প্রদান করবে...” [মুত্তাফাকুন আলাইহি]
আমরা আপনাদেরকে আহ্বান জানাচ্ছি, হে মুসলিমগণ! রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে কুফর ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে প্রত্যাখ্যান করুন, এর দ্বারা শাসিত হওয়াকে নীরবে মেনে নিবেন না, বর্তমান সরকারকে অপসারণ করে ইসলামের ভিত্তিতে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করুন, যে রাষ্ট্র আপনাদের সকল বিষয়ে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র বিধান অনুযায়ী বিচার-ফয়সালা করবে, আপনাদের জন্য দুনিয়া এবং আখিরাতে কল্যাণ বয়ে আনবে, ইনশা’আল্লাহ।
وَمَنْ أَحْسَنُ مِنْ اللَّهِ حُكْمًا لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ
“এবং দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপনকারীদের জন্য আল্লাহ্ অপেক্ষা উত্তম ফয়সালাকারী কে?” [সূরা আল-মা’য়িদাহ্ : ৫০]