গণতন্ত্র, শূ’রা নয়

নিজেদেরকে জ্ঞানী বলে দাবিকারী কিছু লোক যখন বলে, ইসলামের শুরু গণতন্ত্র দিয়ে আর শেষ একনায়কতন্ত্র দিয়ে, তখন তা শুনে একজন হাসবে না কাঁদবে তা ঠিক করতে পারে না। তারা প্রমাণ হিসেবে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র নিম্নোক্ত আয়াতটি উল্লেখ করে:

“কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র উপর ভরসা করুন।”
(সূরা আলি ইমরান: ১৫৯)

আমাদের আলোচনার সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি চিন্তা নিয়ে এখনও আলোকপাত করা বাকী রয়েছে, আর তা হলো কিছু লোকের দৃষ্টিতে গণতন্ত্র ইসলাম দ্বারা অনুমোদিত যেহেতু কুর’আন ও সুন্নাহ্’তে শূ’রার বিষয়টি পরোক্ষভাবে এসেছে। তারা বলে গণতন্ত্র শূ’রা ছাড়া আর কিছুই নয়। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জনগণের মতামতের উপর এবং ইসলামও আমাদেরকে জনগণের মতামত নিতে বলেছে। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেছেন,

“কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন।”
(সূরা আলি ইমরান: ১৫৯)

এবং তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আরও বলেছেন,

“এবং যারা পার¯পরিক পরামর্শক্রমে কাজ করে।”
[সূরা আশ শূরা: ৩৮]

এবং রাসূলুল্লাহ্ (সা) বিভিন্ন বাস্তবিক, রাজনৈতিক ও সামরিক বিষয়ে প্রতিনিয়ত তাঁর সাহাবীদের সাথে আলোচনা করেছেন এবং তাদের মতামত গ্রহণ করেছন। যেহেতু এটা পবিত্র কুর’আনের নির্দেশনা ও রাসূলুল্লাহ (সা) তা অনুসরণ করেছেন সেহেতু মুসলিমদের এটা অনুসরণ করা উচিত। তারা আরও বলে শূ’রা এবং গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য হল শব্দার্থগত। অর্থ এক হলে ভিন্ন নাম কোন সমস্যা না।

আমরা জানি বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীর লোকজন গণতন্ত্রের আহ্বান জানাচ্ছে। এদের মধ্যে একটি অংশ হচ্ছে জেনে বুঝে প্রতারণাকারী আর আরেকটি নিষ্ঠাবান অংশ কিন্তু অজ্ঞ কারণ তারা না বুঝে গণতন্ত্রের আহ্বান করছে। এসব নিষ্ঠাবান আন্তরিক গোষ্ঠীকে অবশ্যই এসব চিন্তাগুলো থেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে নতুবা তাদের উদাহরণ হবে ঐ ব্যক্তির মতো যে অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহ্’র ইবাদত করে কিন্তু গুনাহ্’র ভাগীদার হয়। অনুতপ্ত হওয়া, নিয়ন্ত্রন বজায় রাখা এবং (বিশ্বাসের) প্রতিফলন ঘটানো, এগুলো নিষ্ঠাবান ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য।

এ ধরণের লোকেরা এক সময় বলেছিল সমাজতন্ত্র ইসলাম থেকে এসেছে এবং মুহম্মদ (সা) তাদের ইমাম। তাহলে সেই দূর্গন্ধময় সমাজতন্ত্র যখন এখন বিলুপ্ত হয়ে গেলো, এখন তাদের উত্তর কী? একইভাবে গণতন্ত্র আজ যখন মৃত্যুর শেষযন্ত্রনায় কাঁতড়াচ্ছে তখন এর আহ্বানকারীদের আর কী আশা আছে? এ ধরণের চিন্তা ইসলাম নয় গণতন্ত্রের কল্যাণের জন্য। তারা এর প্রতারণা উন্মোচনের বদলে একে সর্বোচ্চ চিন্তা হিসেবে গ্রহণ করেছে। পায়ের নীচে দুমড়ে-মুচড়ে ফেলার বদলে একে জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়েছে।

আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র বাণীকে সর্বোচ্চ আসনে স্থান দিয়ে এবং শুধুমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির আলোকে জীবন ব্যবস্থাকে রূপদান করলেই কেবল এটা সুস্পষ্ট হবে যে আমরা তাঁর হুকুমকে সঠিকভাবে অনুবাধন করেছি। এটা এমন একটি দলের মাধ্যমেই অর্জন সম্ভব যারা সঠিক জ্ঞান দ্বারা পরিচালিত এবং প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যের ব্যাপারে সচেতন, এবং বিশ্বাসের দিক থেকে আলোকিত, শারী’আহ্ হুকুমের ব্যাপারে গভীর জ্ঞানসম্পন্ন এবং সকল ভিন্ন প্রকৃতির চিন্তা-চেতনা ও বিজাতীয় ব্যাখ্যাকে সম্পূর্ণ বর্জনকারী। এরা বাস্তবতার কাছে কখনও মাথানত করে না এবং পরিস্থিতির প্রভাবমুক্ত থাকে। 

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply