“(পুঁজিবাদী ব্যবস্থায়) শিক্ষা ধংসের চাবিকাঠি”

শিক্ষা উন্নয়নের পূর্বশর্ত- এই কথাটি আমাদের সমাজে খুবই প্রচলিত একটি বাক্য। ছোটকাল থেকেই এটা শুনে-বুঝেই বড় হচ্ছে নতুন প্রজন্ম। এরূপ আরও অনেক মন্ত্র মুখস্থ করতে বড় হওয়া শিশুরা জীবনে উন্নয়ন ঘটাতে দৌড়ঝাঁপ-প্রতিযোগিতা শুরু করেন। শিশু অবস্থায় তাদের ওজনের তুলনায় ব্যাগের ওজন বেশি থাকে আর বড় হলে তাদের জ্ঞানের তুলনায় টাকার ওজন বেশি হয়ে যায়।

প্রতিযোগিতামূলক এই ব্যবস্থাতে শিশু অবস্থায় স্কুলে ভর্তির দৌড়ঝাঁপ এস.এস.সির গণ্ডি পেরুনোর পরও থামেনা কলেজে ভর্তির জন্য এবং এরপর ভার্সিটির ভর্তি তো আছে। লক্ষ্য একটাই, কিছু একটা করা; জীবনে উন্নতি সাধন।

শেয়ার বাজারে শেয়ারের দাম নিম্নগতিতে হলেও উর্ধগতিতে বেড়ে চলেছে এসকল প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ফি। একদিকে শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত স্থানের ব্যবস্থা করা হয়না বেসরকারি কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার উদ্দেশ্যে এবং এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের থেকে কচলিয়ে টাকা আদায় করা হয়। আর এখানেই উন্নয়নের স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় অনেকের আর কঠিন এক হতাশা তাকে গ্রাস করে নেয়। আর টাকার দড়িতে ফাঁসিতে ঝুলে যায় বাংলাদেশ নেভি কলেজের মুন অথবা ঢাকা কলেজের শিমুলের মত অনেকেই। (জানুয়ারী ১ এবং ২, ২০১৬)

ধান মাড়ানোর মেশিনের তুলনাধীন এই শিক্ষাজীবন থেকে যারা বেড়িয়ে আসতে সক্ষম হয় তাদের জন্য এই ব্যবস্থা প্রস্তুত রেখেছে বেকারের জীবন। জীবনে উন্নয়নের জন্য বস্তাভর্তি ডিগ্রি অপেক্ষা যখন মোটা অংকের টাকার হিসাব অধিক সহজ এবং শক্তিশালী, তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদালয়ের সুক্তির কাছেও আত্মহত্যায় অধিক যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে। (২৯শে ডিসেম্বর, ২০১৫) 

পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শিক্ষা বর্তমান প্রজন্মের উন্নয়ন নয়, বরং আত্মহত্যার চাবিকাঠিতে পরিণত হয়েছে। মুন, সুক্তি বা শিমুল ছাড়াও অহরহ প্রতিনিয়তই শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা করছে। কারণ পুঁজিবাদী চিন্তাধারা আমাদের চিন্তাকে করে রেখেছে বিষাক্ত। শিক্ষার উদ্দেশ্য হিসেবে আমাদের শেখানো হচ্ছে একটি ভালো চাকরি, কারিকারি টাকা, গাড়ি-বাড়ি ইত্যাদি… যেকারণে জীবনের লক্ষ্য হিসেবে এগুলোকে নির্ধারণ করে যখন কেউ আগাচ্ছে, তা অর্জন করতে না পেরে হতাশাগ্রস্থ এক জীবনের সম্মুখীন হয়ে আত্মহত্যা করছে।

সমাধান:

শিক্ষা হচ্ছে সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি জাতির অন্তরে তাদের নিজ সংস্কৃতির বীজ বপন করা হয়। খিলাফত রাষ্টড়ব্যব্বস্থায় শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো ইসলামী আক্বীদাকে উম্মাহ’র অন্তরে প্রোথিতকরণ এবং এর মাধ্যমে প্রজন্মের সঠিক চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব গঠন। এবং শিক্ষার নিশ্চিতকরণের দায়িত্বে থাকবে রাষ্ট্র নিজের। খিলাফত হতাশাজনিত প্রজন্ম উপহার দেয়না, বরং সত্যিকার অর্থে দুনিয়ার আলোবহনকারীদের জন্ম দেয়। ইমাম শাফী এর মত আইনশাস্ত্রবিদ, আল রাযী এর চিকিৎসাবিদ, আল খোয়ারিজমী-এর মত গণিতবিদ(বীজগণিতের জনক) উওহার দেয়। খিলাফতের শিক্ষাব্যবস্থা উপহার দেয় আবু হানিফা এর মত অর্থনীতি ও সমাজবিদ, আল মাসূদীর মতো ভূগোলবিদ এবং জাফর আস-সাদিকের মতো প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ। ইতিহাসের পাতায় পাতায় খিলাফতের শিক্ষাব্যবস্থার আদলে গড়ে ওঠা এইসকল মুসলিম বিজ্ঞানীদের নাম বারবারই উঠে আসে এবং তাদের কাজসমূহ আজও বিশ্বকে আলো দেখিয়ে চলেছে।

আর এভাবেই খিলাফত মুনাফা বা অর্থকে কেন্দ্র করে নয়, বরং আল্লাহ’র সন্তুষ্টিকে কেন্দ্র করেই তার শিক্ষাব্যবস্থাকে সাজাবে এবং অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসবে এই উম্মাহকে, ইন-শা-আল্লাহ। 

“যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে বহু মর্যাদায় উন্নত করবেন”। (সুরা মুজাদিলা- ১১)

Leave a Reply