গত বুধবার ভারতের লোকসভা এবং রাজ্যসভায় স্থলসীমান্ত বিল পাস হয়। ‘৭৪ সালে হওয়া ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির একটি দফা ছিল এই স্থলসীমান্ত নির্ণয় এবং ২০১৫-তে এসে এর বাস্তব রূপ দেখা যায়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, ছিটমহলবাসীর পরিচয়, সমুদ্র জয়ের পরে শেখ হাসিনার ভূমি বিজয় শ্লোগানে জয়জয়কার চারদিক। দাবি করা হচ্ছে, এর ফলে বাংলাদেশ-ভারতের বহুদিনকার সীমান্ত বিরোধের অবসান ঘটবে।
কাঁটাতারে ঘেরা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত জেলখানার নাম বাংলাদেশ। ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানোর নামে স্থলসীমান্ত বিল একটি মেকি নাটক ছাড়া আর কিছুই না।
আমরা দেখি, সেই ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি একটি দাসত্বনামা ছাড়া আর কিছুই নয়। ফারাক্কা মরণবাঁধের দরূন পদ্মার একাংশ আজ মৃত। বছরের পর বছর ধরে, ভারতীয় আগ্রাসন ছাড়া বাংলাদেশ আর কিছুই পায়নি।
সীমান্ত বিরোধ নিরসনের মিথ্যা আশ্বাস কখনোই সীমান্তে হত্যা করা আমাদের ভাইবোনদের রক্ত মুছতে পারবে না।
* ২০১১ সালে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন ৩১ বাংলাদেশী। এর পরের বছর ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সীমান্তে ৩৬ জন বাংলাদেশী নাগরিক হত্যাকান্ডের শিকার হন। এর মধ্যে ৩৪ জনই বিএসএফের হাতে সরাসরি খুন হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৯৮ জন। এই সময়ে ৬৪ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন।
* এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত মোট এক হাজার ৪৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে সীমান্তে। এর মধ্যে ৯৬৭ জনই বিএসএফের হাতে খুন হয়েছেন। ইতিমধ্যে ফেলানীর বিচারের নামে প্রহসন করায় পশ্চিমবঙ্গের মানবাধিকার সংস্থা মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) তিব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।
* গত ১০ বছরে ৯২২ জন ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পূর্ববর্তী ১০ বছরে ৯২২ জন বাংলাদেশীকে বিএসএফ হত্যা করেছে বলে রেকর্ড রয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হাতে।
বিএনপির আমলেও এই সীমান্ত হত্যা উল্লেখযোগ্য:
বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসেছে ২০০১ সালে-
*২০০১ সালে ৯৪ জন বাংলাদেশী নাগরিক সীমান্তে খুন হয়েছে.
*২০০২ সালে ১০৫ জন,
*২০০৩ সালে ৪৩ জন,
*২০০৪ সালে ৭৬ জন
*২০০৫ সলে ১০৪
*২০০৬ সালে ১৪৬ জন,
মোট ৫৭০ জন নিহত হন সীমান্তে বিএনপি-জামাত সরকারের আমলে। এছাড়া গত মাসেই (এপ্রিল ২০১৫) আমরা দেখেছি, ধর্ষণের পর হত্যা করে আমাদের ফেরত দেওয়া হয়েছে আমাদেরই এক বোনের গলিত লাশ।
এই ধরণের চুক্তি কখনোই ছিটমহলবাসীর জীবনে পরিবর্তন আনবে না, নগরজীবনে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ এই গণতান্ত্রিক রাজনীতিবিদেরা শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থের জন্যই রাজনীতি করে। সমুদ্র বিজয়, স্থলসীমান্ত বিজয় ইত্যাদি চটকদার শব্দের আড়ালে আমাদের তারা প্রতিনিয়তই ভারত-আমেরিকার মতো মুশরিক-কাফির রাষ্ট্রের নিকট পরাজিত হয়ে চলেছে। এইসকল কুলাঙ্গারেরা শুধুই তাদের প্রভু আমেরিকা-ভারতের তোষামোদের জন্য নিযুক্ত।
ভারত-আমেরিকার চক্রান্ত নস্যাতে আমদের প্রয়োজন খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা। কারণ খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থাই ভারত আমেরিকার দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে এই উম্মাহকে রক্ষা করবে। মুসলিমদের উপর যুলুম অত্যাচারের জবাব দেবে ভারত বিজয়ের মাধ্যমে।
আমরা দেখেছি, ১৩০০ বছরের খিলাফতের শাসনে কিভাবে খলীফা মুসলিমদের অধিকার সংরক্ষণ করেছিল। মুসলিমদের বোনদের সম্মান রক্ষার্থে কিভাবে জবাব দিয়েছিল মুশরিকদের। অধিকার, চাহিদা, নিরাপত্তা বিধানে খিলাফতের শাসনব্যবস্থা ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ; কারণ এর শাসকেরা দায়বদ্ধ থাকে জবাবদিহিতার এবং আল্লাহ’র দাসত্বে।
সুতরাং, আমাদের জন্য এটাই যথার্থ সময় এইসকল দালাল শাসকদের উৎখাতপূর্বক খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, যা আমাদের পুনরায় এই পৃথিবীতে বিজয়ী উম্মাহ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে, ইন-শা-আল্লাহ!
নাঈম বিন হামমাদ তাঁর আল ফিতানে বর্ননা করেছেন যে, আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত, রাসূল(সা) বলেন,
“তোমাদের মধ্যে একটি দল ভারত বিজয় করবে, আল্লাহ তাদের জন্য একে (ভারত) উন্মুক্ত করে দেবেন এর (ভারত) শাসকদের শৃঙ্খলিত করে আনা পর্যন্ত-আল্লাহ তাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দেবেন, যখন তারা ভারত থেকে ফিরে আসবে এবং তারা সিরিয়াতে মরিয়ম পুত্রের সাথে সাক্ষাৎ করবে।” (কানজুল উম্মাল)