কর্মের মানদন্ড

অনেকেই উদ্দেশ্যহীনভাবে জীবনে অগ্রসর হতে থাকে। তাই তারা পরিমাপ করার কোনো মানদন্ড ছাড়াই তাদের কার্যাবলী সম্পাদন করে। ফলে, তাদের খারাপ কাজকে ভালো মনে করে তা করতে দেখবেন। তারা ভালো কাজকে খারাপ মনে করে তা হতে বিরত থাকে। বৈরুত, দামেস্ক কিংবা বাগদাদের মতো বৃহৎ ইসলামী শহরগুলোতে একজন মুসলিম নারী তার পা উন্মুক্ত করে, তার সৌন্দর্য ও আকর্ষনীয়তা দেখিয়ে মনে করে যে সে একটি ভালো কাজ করছে। একইভাবে, মসজিদমুখী নেক ব্যাক্তি শাসকের দুর্নীতির ব্যাপারে কথা বলা থেকে বিরত থাকে, কারণ তা রাজনীতি আর রাজনৈতিক কথা বলাই খারাপ। এধরনের নারী ও পুরুষ পাপে নিপতিত। কারণ তারা তাদের কার্যাবলী পরিমাপ করার জন্য কোনো মাপকাঠি গ্রহণ করেনি। যদি তারা একটি মাপকাঠি গ্রহন করতো তবে তারা যে মতাদর্শকে খোলামেলাভাবে গ্রহণ করার দাবি করে, তার পরিপন্থি কার্যাবলী সম্পাদন করতো না। তাই, এটি গুরুত্বপূর্ণ যে মানুষের একটি মানদন্ড থাকবে যা দ্বারা সে তার কার্যাবলী পরিমাপ করবে, যাতে কাজ সম্পাদন করার পূর্বে সে কাজের বাস্তবতা জানতে পারে।
ইসলাম মানুষকে তার কার্যাবলী পরিমাপ করার জন্য একটি মানদন্ড আরোপ করেছে, যাতে সে জানতে পারে এর মধ্যে কোনটি ভালো এবং কোনটি মন্দ। অতঃপর সে মন্দ হতে বিরত থাকে এবং ভালো কাজ সম্পাদন করে। এই মানদন্ড হচ্ছে শরীআহ (ইসলামি আইন)। এভাবেই, শরীআহ যে কাজকে ভালো বলে তা ভালো আর যে কাজকে মন্দ বলে তা মন্দ। এ মানদন্ড স্থির, তাই ভালো মন্দে পরিনত হয় না, এবং মন্দ ভালোতে রূপান্তরিত হয় না। বরং, শরীআহ যাকে ভালো বলে তা ভালোই রয়ে যায়, এবং শরীআহ যা মন্দ হিসেবে দেখে তা মন্দই রয়ে যায়।

তাই মানুষ সচেতনভাবে এক সোজা পথে অগ্রসর হয়, এবং সে বিষয়াদিসমূহ যেরকম সেভাবেই তা বোঝে। যদি সে শরীআহ’কে মানদন্ড হিসেবে তৈরি না করে তবে বিষয়টি ভিন্ন হবে, বরং সেক্ষেত্রে সে তার মস্তিস্কপ্রসুত চিন্তাকে তার মানদন্ড হিসেবে তৈরি করেছে। এধরনের ক্ষেত্রে সে এলোমেলোভাবে অগ্রসর হবে, কারণ কোনো বাস্তবতাভেদে কোনো বিষয় ভালো হতে মন্দে পরিনত হয়, কারণ, মস্তিস্ক আজকের ভালোকে আগামীতে মন্দ হিসেবে দেখতে শুরু করতে পারে। সে এক দেশে তা ভালো হিসেবে আবার অন্য দেশে তা মন্দ হিসেবে বিবেচনা করতে পারে। তাই তার বাছ-বিচার নড়বড়ে হয়ে পড়ে, এবং ভালো-মন্দ তার কাছে পরম বিষয় হতে আপেক্ষিক বিষয়ে পরিনত হয়। তখন সে ভালো করতে যেয়ে মন্দ এবং মন্দ করা থেকে বিরত থাকতে যেয়ে ভালো হতে বিরত থাকার দুর্দশায় নিপতিত হয়।

সুতরাং, কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে শরীআহ’র বরাত দেয়া আবশ্যক, এবং সকল কাজের জন্য একে মানদন্ডরূপে গ্রহণ করতে হবে, এবং (শরীআহ) আইনের দৃষ্টিতে যা ভালো তা ভালো হিসেবে এবং (শরীআহ) আইনের দৃষ্টিতে যা মন্দ তা মন্দ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

Taken from the book ‘Islamic Thought’
Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply