আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির দুই বিবাদমান জোট (A team vs B team) অস্থির সময় পার করছে। আওয়ামী-বিএনপির রাজনীতির মূল কথা ‘যেকোন উপায়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের কল্যাণ সাধন করা’ – এটা জনগণের কাছে পরিস্কার। সচেতন জনগণ পরিবর্তন চায়, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের সরকারী দলের লুটপাট এবং বিরোধী জোটের হরতাল নামক নির্যাতন থেকে গণমানুষ মুক্তি চায়। হরতাল ডেকে গাড়ী ভাংচুর, ককটেল বিষ্ফোরণ, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, বাসে ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দিয়ে জনমনে আতংক তৈরী করা, সাধারণ মানুষের জান-মালের ক্ষতি করা আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি জোটের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। হরতালে সারা দেশে শতশত মানুষ আহত-নিহত হওয়া একটা মামুলি ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্র ক্ষমতায় না থেকেও জনগনকে নির্যাতন করার এই হরতাল নামক হাতিয়ারকে ব্যবহার করাকে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি নিজেদের পবিত্র গণতান্ত্রিক অধিকার মনে করে।
১৯৯১-৯৬ বিএনপি মৌসুমে তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল পালন করে। এখন চলছে ক্ষমতার পালাবদলের মৌসুম। সর্বদলীয় সরকার নাকি নির্দলীয় সরকার- এই ইস্যুতে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি এখন মুখোমুখি অবস্থানে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য কিংবা ক্ষমতা দখলের জন্য সাধারণ জনগণের জান-মালের ক্ষতি সাধন করতে, রাজপথে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে, রুটি-রুজির প্রয়োজনে ঘর ছাড়তে বাধ্য হওয়া মানুষকে আহত-নিহত করতে এই দুই নিপীড়ক দল ও জোট বেশ দক্ষ ও অভিজ্ঞ। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী এ বছর এরই মধ্যে হরতাল ও রাজনতৈকি সহিংসতায় মারা গেছে প্রায় ৪০০ মানুষ। প্রকৃত চিত্রটি আরও ভয়াবহ।
বিগত ২৭, ২৮ ও ২৯ শে অক্টোবরের হরতালের পর বিএনপি জামাত আবার ৪ থেকে ৬ই নভেম্বর হরতাল পালন করেছে। এই মূহুর্তে ১০ থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ৮৪ ঘন্টার হরতাল চলছে। এই ‘হরতাল উৎসবের’ মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের কোন রাজনৈতিক ক্ষতি বিএনপি করতে না পারলেও দেশের খেটে খাওয়া প্রান্তিক জনগণের ক্ষতি করেছে, সাধারণ মানুষের গাড়ী ভাংচুর করেছে, রাজপথে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বিরোধীদলে থাকলে হরতাল, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে জনমনে ত্রাস তৈরি করে তাদের রাজনৈতিক শক্তির জানান দেয়। এই দুই নিপীড়ক দল শুধু সন্ত্রাস ই প্রতিপালন করে না বরং এরা সন্ত্রাসী দল। জনগণকে তারা তাদের ক্রীতদাস মনে করে।
গণতন্ত্র মানেই মানুষ মানুষের জন্য আইন তৈরী করবে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পার্লামেন্ট, কেবিনেট আইন তৈরীর কারখানা। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মানুষকে মানুষের জন্য আইন তৈরীর অধিকার দেয়নি। তাই গণতান্ত্রিক সরকার (হোক আওয়ামী সরকার কিংবা বিএনপি সরকার) অবশ্যই জনগণকে যুলুম করছে এবং তারা যালেম। তাই গণতান্ত্রিক শাসক পরিবর্তন নিয়ে হৈচৈ করে আমরা AL ও BNP-র ক্রীতদাস হতে চাইনা। আমাদের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে প্রত্যাখান করতে হবে। যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের বিগত দুই দশকের শাসনামলে হরতাল ও রাজনৈতিক সহিংসতায় আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষ হত্যা করেছে তাদের প্রতি রাজনৈতিক সমর্থন প্রত্যাহার করতে হবে।
খিলাফত (ইসলামী রাষ্ট্র) পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, রাজনৈতিক সংগ্রাম করতে হবে। খিলাফত রাষ্ট্রই এ দেশের নিপীড়িত, নিগৃহীত, লাঞ্চিত মুসলমানদের মার্কিন-ভারত দালাল আওয়ামী লীগ-বিএনপির দুঃশাসন, নির্যাতন থেকে মুক্তি দিবে এবং ইসলাম বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্বের নেতৃত্বের স্তরে নিয়ে আসবে যেভাবে ‘অধঃপতিত আরব’- বিশ্বের নেতৃত্বশীল পর্যায়ে এসেছিল এবং পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল যে রাষ্ট্রব্যবস্থা তেরশ বছর টিকেছিল। আমাদেরকে আবারো সে ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে এবং আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদেরকে সে রাষ্ট্রের ওয়াদা করেছেন যদি আমরা আল্লাহ্র নির্দেশ অনুসরণ করি এবং মানব রচিত মতবাদ ছুঁড়ে ফেলে ইসলামকে আমাদের জীবন ব্যবস্থা হিসেবে মেনে নেই।
“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে আল্লাহ্ তাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি তাদেরকে পৃথিবীতে খিলাফত দান করবেন, যেমন তিনি খিলাফত দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে…।” [সূরা আন নূর : ৫৫]